ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️পর্ব – ১৫

0
1270

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৫

পূর্ণতা ভিতরে ঢুকে এক সাইডে বসার জায়গা খুঁজে সেখানে বসে পড়ল । কারন , এই ভাড়ি শাড়ি ওর জন্য সহনীয় নয় । তার উপর এত্ত লোকের ভিড় ।
আশে পাশে তাকিয়ে লোকজনের ভিড়ের মাঝেই চোখে পড়ল ওর অপর পাশের দেয়ালে বিশাল বড় বড় করে ডেকোরেশন করে লেখা হয়েছে “Happy Birthday To Our Beauty Queen Jol ”

এই টুকু পড়তেই পূর্ণতা যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খেল । তারপর ওর টনক নড়ল যে প্রেনা সহ বাকি সবাই মিলে ওর সাথে বিরাট বড় এক ধরনের ট্রল করেছে । রেগে মেগে পূর্ণতা বসা থেকে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে প্রেনা সহ বাকি সকলকে খুঁজতে শুরু করল ।

প্রেনা আর আয়মান একসাথে দাঁড়িয়ে ছিল হলের এক কোনায় । ফাহিম আর রুহি ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল আর পার্টি এনজয় করছিল । আর তাসিন আর নীরা পূর্ণতার থেকে ৫-৬ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল আর মাঝে মাঝে পূর্ণতার দিকেও নজর রাখছিল ।

নীরা তাসিনের সাথে কথা বলতে বলতেই দেখল পূর্ণতা রেগে দক্ষিন দিকের দেয়ালে তাকিয়ে আছে , আর এর কিছুক্ষণ পর‌ই আশে পাশে তাকাচ্ছে ।

নীরা তাসিনকে বলল ,

– তাসিন , পূর্ণতা বোধহয় সত্যিটা জেনে গিয়েছে । জলদি চলো এখান থেকে ।

ওরা কিছুটা ছুটেই ভিরের মধ্যে একটু পেছনে যেতেই ফাহিম , রুহি , আয়মান , প্রেনা সবাইকে পেয়ে গেল ।

নীরা আর তাসিনের কথা শুনে বাকিরা ভয়ে চুপসে গেল । আয়মান বলল ,

– আমি আবরনকে কল দিই । আমরা পূর্ণতা কে বোঝাতে পারবো না । ও রাগ করে চলেই যাবে ।

সবাই আয়মানের কথায় সায় দিল ।

আয়মান আবরনকে কল করে বলল ,

– দোস্ত , কোথায় তুই ?

আবরন জলের সাথে ছিল । আয়মানের ফোন দেখে এক সাইডে গিয়ে রিসিভ করে কানে দিতেই আয়মানের প্রশ্ন ভেসে আসলো । আবরন বলল ,

– কেন ? কি হয়েছে ?

– পূর্ণতাকে মিথ্যা বলে তো পার্টিতে নিয়ে এসেছি ঠিক‌ই , কিন্তু এখন তো ও সত্যিটা জেনে গিয়ে আমাদের কে খুঁজছে ! আমরা তো ভয়ে ওর থেকে ঠিক অপর পাশে চলে এসেছি ।

– ও এখন কোথায় ?

– স্টেজের কাছাকাছি আছে ।

– ওকে , আমি দেখছি ।

আবরন ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে যেই স্টেজের দিকে পূর্ণতা কে খুঁজতে পা বাড়ালো অমনি দেখল পূর্ণতা ওর থেকে ৫-৬ ফুট দূরে রাগি রাগি ফেস করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।

আবরন গালে বাঁকা হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগল । পূর্ণতা তা দেখে ভাবতে লাগল ,

– উনি না আমার সাথে কথা বলবেন না , ঢং দেখালো তখন সবার সামনে !! এখন আবার এদিকে কেন আসছে ??
কি মতলব ঘুর ঘুর করছে উনার মাথায় কে জানে !! হুহ !!

এই ভেবে ভেংচি কেটে আবরনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো ।

অনেক্ষন হয়ে গেলেও আবরন যখন ওর সামনে আসলো না তখন পূর্ণতা যেদিকে আবরন ছিল সেইদিক টায় লক্ষ্য করতেই দেখল আবরন সেখানে নেই । ওর রাগি রাগি ফেসটা এখন আবরনকে না দেখতে পেয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো ধারন করলো ।
আশেপাশে তাকিয়ে আবরনকে খুঁজতে খুঁজতে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখল আবরন জলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তাও আবার হেসে হেসে । পূর্ণতার নিজের অজান্তেই মনে মনে একরাশ রাগ আর অভিমান এসে জমা হলো । তাই চুপচাপ গিয়ে যেখানে বসেছিল আগে , সেখানেই বসে পড়ল ।

বেলা বাড়তেই লোকজনের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেল । টেবিলে প্রচুর খাবার আর ড্রিংকস সার্ভ করা । যার যেটা ইচ্ছে খাচ্ছে আর পার্টি এনজয় করছে । এই পার্টিতে কোনো লাঞ্চ ডিনার নেই ।

দুপুর থেকে বিকেল হতে যাচ্ছে , আর পূর্ণতার ও খুব ক্ষুধা লেগেছে । মনে মনে ভাবছে ,

– এই জন্যই বড়লোকদের পার্টি আমার ভালো লাগে না । বাসায় থাকলে আম্মু খাইয়ে দিত , আর আমি টিভি দেখতে দেখতে খেয়ে নিতাম সেটাই ভালো ছিল । সবাই আমাকে মিথ্যা বলে এখানে নিয়ে আসলো । ভালোই লাগছে না ।

ওর ভাবনার মাঝেই ওয়েটার এক থালা ভর্তি ড্রিংকস নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল ,

– Mam , need some drinks ??

পূর্ণতা ওয়েটারের থালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে ,

– সব সময় টিভি শো তে দেখেছি রাগ বা অভিমান হলে সবাই ড্রিংক করে রাগকে কন্ট্রোল করে । আজ আমিও ট্রাই করবো !! আমি জাষ্ট আর নিতে পারছি না !!

এসব ভেবেই মুচকি হেসে ওয়েটারকে বলল ,

– জুস ছাড়া পিনিক হ‌ওয়ার মতো কিছু থাকলে দিয়ে যান !!

ওয়েটার একটা গ্লাস বাড়িয়ে দিল পূর্ণতার দিকে । পূর্ণতা গ্লাসটা হাতে নিয়ে গ্লাসে নাক দিয়ে শুকে দেখতেই ওর মাথা কেমন যেন করে উঠল । তারপর মনে মনে ভাবছে ,

– ইয়াক , এসব ছাইপাঁশ মানুষ কি করে খায় !! 🤢

তারপর ভেবে নাক টিপে ঢকঢক করে খেয়ে নিল । খেয়ে ঢেকুর তুলে ভাবছে ,

– স্মেলটা বাজে হলেও টেস্ট তো সেইই !!

পূর্ণতা উঠে গিয়ে আবারো সেই ওয়েটারকে ডেকে বলল ,

– আমাকে একটু আগে যে ড্রিংকস টা দিয়েছেন সেটা আপনার কাছে যতগুলো আছে সব দিয়ে যান ।

ওয়েটার বলল ,

– ম্যাম , আপনি বরং বারের কাছে গিয়ে একটা বোতল নিয়ে নেন । ঐ যে ঐদিকে বার ।

পূর্ণতা খুশি হয়ে বারের কাছে গিয়ে একটা বোতল নিয়ে আবার জায়গায় গিয়ে বসল ।

তারপর আশেপাশের সবাইকে দেখতে দেখতে অল্প অল্প করে গ্লাসে ঢেলে খেতে লাগল ।

বিকেল ৫:৩০ মিনিটে স্টেজের দিক থেকে সাউন্ড আসতে লাগল ,

– ladies and gentlemen !! Attention please !!

সকলে স্টেজের দিকে লক্ষ‍্য করল । পূর্ণতাও স্টেজের দিকে লক্ষ‍্য করতেই একজন স্যুট টাই পড়া মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক কে চোখে পড়ল ।

– আমি শাদমান চৌধুরী ,সকলকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ আজকের পার্টিতে উপস্থিত হ‌ওয়ার জন্য । যার জন্য আজকের এই পার্টি সে হচ্ছে আমার একমাত্র ভাগ্নি “রুদাইফা জল ” । তো সবাই একসাথে বলি ” Happy Birthday To Our Beauty Queen Jol ”

পার্টিতে উপস্থিত সবাই জলকে একসাথে উইশ করলো ।

শাদামান চৌধুরী বললেন ,

– জল মামনি ! তোমাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করছি ।

জল আবরনের সাথেই ছিল । খুশি হয়ে এক দৌড়ে স্টেজে গিয়ে দাঁড়ালো ।

তারপর মাইক হাতে নিয়ে বলল ,

– Thank you , Thank you so much all of you … আজকের এইদিনে সবার কাছে আমার শুধু একটাই চাওয়া আমার জীবনের সকল ইচ্ছা গুলো যেন পূর্ণ হয় । Thank you again .

এই বলে শাদমান চৌধুরী কে জল জড়িয়ে ধরল ।

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– এখন আমি আমার মামনির জন্য রাখা একটা সারপ্রাইজ সবার সামনে তুলে ধরবো , এর পর কেক কাটার পর্ব শুরু করবো । তবে এখন আমি আরেকজনকে এই স্টেজে ডাকতে চাই , সে হচ্ছে আমার একমাত্র ছেলে আবরন চৌধুরী !!
সবাই হাত তালি দিচ্ছে ।

আবরন স্টেজে গেল । স্টেজে গিয়ে দাড়াতেই শাদমান চৌধুরী নিজের দুপাশে দুজনকে অর্থাৎ জল এবং আবরনকে দাঁড় করিয়ে বলতে শুরু করল ,

– আমার ছেলে আবরন একজন মেডিক্যালে পড়ুয়া ছাত্র । ও বর্তমানে মেডিসিন বিষয়ে ইন্টার্নি করছে । আর আমার জল মামনি এক‌ই মেডিক্যালের
৩য় বর্ষের গাইনি বিভাগে পড়ুয়া ছাত্রি । আমি আগেই ঠিক করে রেখেছি আমার মামনির জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে কিন্তু সারপ্রাইজ এমনি এমনি দিতে চাই নি । ভাবলাম ওর একটা বিশেষ দিনেই ওকে সারপ্রাইজ টা দিই । তো আজকে আমি সবার সামনে সকলকে সাক্ষী রেখে আমার ছেলে আবরন চৌধুরীর সাথে আমার একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়ে রুদাইফা জলের বিবাহের বাগদান ঘোষিত করলাম ।

পার্টিতে উপস্থিত সকলে এই ঘোষনায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে হাততালি দিলেও আবরনের মনে যেন হাজার লক্ষ তীর এসে বিধলো ।

প্রেনা – আয়মান , রুহি – ফাহিম , নীরা – তাসিন সবাই অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল ।

বাকি র‌ইল পূর্ণতা । সে তো রাগে অভিমানে ড্রিংক করতে করতে তাল হারিয়ে ফেলেছিল , কিন্তু শাদমান চৌধুরীর কথা শুনে কেন যেন সেই জমে থাকা অভিমান গুলো পানির স্রোত হয়ে চোখের কোনা থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল । পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়েই নিঃশব্দে
চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দাঁত বের করে হাসতে লাগল ।

ভীরের মাঝে আবরন‌ও স্তব্ধ হয়ে স্টেজে দাঁড়িয়েই পূর্ণতাকে খুঁজতে লাগল । তখন জল খুশি হয়ে আবরনকে জড়িয়ে ধরল , কিন্তু আবরনের চোখ কান খোলা থাকলেও হুশ নেই । অন্যসময় হলে জলের থেকে ছিটকে দূরে সরে যেত কিন্তু আজ বিষয়টা ভিন্ন ।

আয়মান , প্রেনা , ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা সবাই দোতলা থেকে দাঁড়িয়ে এতক্ষন সব দেখছিল এবং শুনছিল । প্রেনা উপর থেকেই পূর্ণতা কে খুঁজে বের করে ওর অবস্থা দেখে দৌড়ে নিচে যেতে লাগল । ওর পেছন পেছন বাকিরাও গেল ।

একদল ছেলে মেয়ে উপর থেকে নিচে নামতে খেয়াল করলো আবরন । ওদের লক্ষ্য করতে করতেই দৃষ্টি গিয়ে পৌঁছালো পূর্ণতার দিকে । ওর অবস্থা দেখে মন চাইছিল ছুটে ওর কাছে যেতে কিন্তু ও শরীরে কোনো বল খুঁজে পেল না । চুপচাপ স্থির হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে র‌ইল ।

আধিরা আনজুম ও পার্টিতে উপস্থিত শত শত লোকের ভিড় ঠেলে ছেলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল । তার মনে একটাই ভয় , তার একমাত্র ছেলে বাবার দেওয়া এই আঘাত সামলে উঠতে পারবে তো ??

প্রেনা পূর্ণতাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে ওকে বলল ,

– কিচ্ছু হবে না পূর্ণ , আমরা সব ঠিক করে দেব ।

কিন্তু পূর্ণতার কানে প্রেনার কোনো কথাই পৌঁছালো না । ও জ্ঞান হারিয়ে প্রেনার কাধেই পড়ে র‌ইল আর শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিল । প্রেনা ওর ভর ধরে রাখতে পারছিল না । রুহি আর নীরা মিলে পূর্ণতা কে ধরে নিচের কোনার একটা রুমে নিয়ে গেল । তারপর বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল ।

প্রেনা কাদছে স্বজোরে । আয়মান , নীরা , রুহি ওকে মিলে শ্বান্তনা দিচ্ছে ,

– এভাবে কেদো না প্রেনা !! পূর্ণ খুব বেশি ড্রিংক করেছে তাই জ্ঞান হারিয়েছে । ঠিক হয়ে যাবে ।

প্রেনা কাদতে কাদতে বলল ,

– তোমরা খেয়াল করো নি । পূর্ণ আঙ্কেলের ঘোষনা শোনার পর কাদছিল । আমি ওকে হাসির সাথে কাদতেও দেখেছি , বিলিভ মি !!

ফাহিম বলল ,

– পূর্ণতার তো আবরনের প্রতি কোনো ফিলিংস ই ছিল না , তাহলে কেন কাদবে ?? কাদবে তো আবরন !!

তাসিন বলল ,

– আসলেই চল তো , গিয়ে দেখি , আবরন কোথায় ?

ফাহিম বলল ,

– চল ।

আয়মান বলল ,

– আমি যাবো না । ওর উচিত ছিল এখানে আসা । আর ওর সাথে এটাই হ‌ওয়ার ছিল । পার্টিতে সারা সময় তো আমি ওকে জলের সাথেই দেখলাম । তোরা যা , দেখ গিয়ে সে এখন কেক কেটে জলকে খাওয়াচ্ছে আর এরপর আংটি পড়াবে ।

ফাহিম বলল ,

– সেটা তো আবরন ইচ্ছা করেই পূর্ণতা কে জেলাস করতে করেছে !!

আয়মান বলল ,

– ও যদি জেলাস করাতেই তখন এমন করে থাকে তাহলে যখন আঙ্কেল স্টেজে ঘোষনা দিল তখন ও কেন কোনো প্রতিবাদ করলো না ?

তাসিন বলল ,

– সেটা তো আবরন‌ই ভালো বলতে পারবে !

এই বলে ফাহিম আর তাসিন চুপ চাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল আবরনকে খুঁজতে ।

………………………………………………..

আধিরা আনজুম স্টেজে গিয়ে আবরনের কাছ থেকে জলকে সরিয়ে আবরনের হাত ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে ওকে টেনে টেনে দোতলায় একটা রুমে নিয়ে গেল । শাদমান চৌধুরী গেষ্টদের সাথে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টা লক্ষ‍্য করেননি । কিন্তু জল আর শাকিলা ইয়াসমিন বিষয়টা লক্ষ্য করেছে । তারপর শাকিলা ইয়াসমিন জলকে আস্তে করে বলল ,

– এই যে , এই মহিলা যে এখন আবরনের ব্রেইন ওয়াশ করতে নিয়ে যাচ্ছে তা আমি ভালোই বুঝতে পারছি ।

জল বলল ,

– তুমি চিন্তা করো না । মামা আমাদের পক্ষে আছে ।

– তা অবশ্য ঠিক ।

……………………………………………….

আধিরা আনজুম রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে কান্না করে ছেলেকে প্রশ্ন করল ,

– তোর বাবা তোকে – আমাকে কিছু না জানিয়ে একা এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল আর তুইও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলি ?? এর প্রতিবাদ করলি না ।

আবরন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,

– এত লোকের সামনে বাবাকে অপমানিত করার শিক্ষা তুমি আমাকে দাও নি আম্মু !! আমার ঐ মূহুর্তে কিছুই করার ছিল না , বিশ্বাস করো ।

আধিরা আনজুম ছেলের উত্তর শুনে রেগে বললেন ,

– তাহলে তুই কি ডিসিশন নিয়েছিস ?? তোর বাবার পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করবি বাবার সম্মান বাঁচাতে ??

আবরন বলল ,

– আমি সেটা করতে পারবো না আম্মু !! কারনটা তুমি ভালো করেই জানো !!

আধিরা আনজুম বললেন ,

– তোর বাবাকে গিয়ে এক্ষুনি সত্যিটা বল !

– সেটা কি ক‍রে বলবো ? আর তোমার মনে হয় যে বাবা আমার কথা মেনে নিয়ে তার ডিসিশন বদলে ফেলবে ?

– বলেই দেখ । যদি ডিসিশন না বদলায় তখন অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে !

এর‌ই মধ্যে আবরনের ফোন বেজে উঠলো । ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখল তাসিন কল দিচ্ছে । কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই তাসিন বলল ,

– কোথায় তুই ? তোকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ।

– তোরা কোথায় ?

– আমরা মেইন হলে আছি ।

– পূর্ণতা কোথায় ?

-সেটা জেনে তুই কি করবি ?তোর তো ওর প্রতি কোনো খেয়াল‌ই দেখলাম না ।

– এমনি মাথা গরম , রাগাস না আমাকে !! উল্টো পাল্টা কিছু করতে বাধ্য করিস না । আমি দোতলায় আছি । সিড়ির সামনে দাঁড়া , আসছি ।

– ওকে ।

আবরন ফোনটা পকেটে ভরে আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– চিন্তা করো না , বাবা যখন এত বড় একটা সারপ্রাইজ দিল , সামনে বাবার জন্য ও অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে । সে যদি চলে ডালে ডালে আমি শাহরিদ আহনাফ আবরন চলবো পাতায় পাতায় । জাষ্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ !

এই বলে রুমের দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে গেল ।

নিচে যেতেই ফাহিম আর তাসিনের সাথে দেখা হ‌ওয়ার পর একসাথে বাকিরা যেরুমে আছে সেদিকে যেতে লাগল ।

আয়মান , রুহি , নীরা , প্রেনা সবার মন খারাপ । হঠাৎ রুমে ফাহিম , তাসিন আর আবরনকে একসাথে প্রবেশ করতে দেখে সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ।

আবরন পূর্ণতাকে শোয়া অবস্থায় দেখে সবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল ,

– কি হয়েছে ওর !

নীরা বলল ,

– ভাইয়া , ড্রিং…….

কথা বলে শেষ করার আগেই প্রেনা বলল ,

– আঙ্কেলের ঘোষনা শুনে অচেতন হয়ে গিয়েছে !!

আবরন যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খেল ।
তারপর বলল ,

– ওর তো আমার প্রতি কোনো ফিলিংস কাজ করে না , তো ম্যাডাম এভাবে অচেতন কেন হয়ে গেল ?

সবাই মুচকি হাসল ।

আবরন পূর্ণতার কাছে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গালে হাত রাখতেই দেখল ওর গা অনেক গরম । তারপর কপালে হাত রেখেই বুঝলো ওর জ্বর এসেছে । তারপর রুমে উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– তোরা খেয়াল করিস নি ওর জ্বর এসেছে !!

সবাই বলল ,

– না ।

– ওকে , আমি গিয়ে কিছু মেডিসিন নিয়ে আসছি ।

আবরন চলে যেতেই প্রেনা আয়মানকে বলল ,

– জলদি জলদি লেবু পানির ব্যবস্থা করো !!

আয়মান গেল লেবু পানি আনতে ।

৫ মিনিটের মধ্যে আয়মান লেবু পানি নিয়ে আসতেই প্রেনা পূর্ণতার গাল চাপ দিয়ে ধরে মুখ ফাকা করে অল্প অল্প করে লেবু পানি মুখে দিতে লাগল । কিছুক্ষণের মধ্যেই পূর্ণতা হঠাৎ চোখ খুলে বসে গিয়ে মুখ ভরে বমি করে দিল ।

প্রেনা বলল ,

– হায়রে আল্লাহ !! আমিও বলদ !! একটা বাটি আগে এনে রাখলে এখন শরীর মাখতো না ।

আয়মান প্রেনাকে বলল ,

– আকাম যে করলা !! এখন আবরন এসে যদি দেখে , তোমার খবর আছে !!

এর‌ই মধ্যে আবরন রুমে প্রবেশ করল মেডিসিনের প্যাকেট হাতে নিয়ে । সবাই ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো । আবরন পূর্ণতা কে দেখে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পূর্ণতা ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাকি সবার দিকে তাকালো । আবরন ধমকের সুরে বলল ,

– ও বমি করেছে কেন ?

ফাহিম বলেই দিল যে ,

– পূর্ণতা তখন ড্রিংক করে অচেতন হয়ে পড়েছিল ।

আবরন ফাহিমের মুখে এই কথা শুনেই রাগ সামলাতে না পেরে পূর্ণতার গালে স্বজোরে একটা থাপ্পড় মারল । রুমে উপস্থিত সবাই থাপ্পড়ের শব্দে কেপে উঠল । পূর্ণতার চোখ দিয়ে গড় গড়িয়ে পানি বেরিয়ে এলো । আবরন রেগে বলল ,

– যেটার অভ্যাস নেই সেটা করতে গিয়েছো কেন ? এমনি মাথা আমার জ্যাম হয়ে আছে । তার উপর তুমি আবার এমন হাল করে রেখেছো নিজের !! কেন ড্রিংক করেছো ?? ডাক্তার হবে ভবিষ্যতে আর এইটুকু জ্ঞান নেই তোমার মধ্যে যে এসব খেলে কি কি ক্ষতি হয় ?

পূর্ণতা আবরনের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে প্রেনার দিকে তাকিয়ে বলল ,

– দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? কিছু একটা নিয়ে আয় আমাকে চেঞ্জ করতে হবে তো !!

প্রেনা কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

-কি আনবো ? কিছু তো নিয়ে আসি নি সাথে করে !

পূর্ণতার এমন বিহেইভ দেখে আবরন ওকে বলল ,

– একটা থাপ্পড় তোমার জন‍্য যথেষ্ট নয় তাই না ?? তোমার সাহস কি করে হয় আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে অন্য জনের সাথে অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার ??

পূর্ণতাও এবার রেগে বলল ,

– ওও হ্যালো মিস্টার চৌধুরী !! আপনি কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুলেছেন ?? আপনার কিছুক্ষণ পর আরেকজনের সাথে বাগদান , আপনি গিয়ে আপনার হবুর উপর অধিকার খাটান । দয়া করে আর আমার কোনো ব্যাপারে নাক গলাবেন না ।

আসলে আমার‌ই ভুল হয়েছে । আপনার সাথে এত ফ্রি-লি কথা বলাটাই আমার ঠিক হয় নি । যেই সুযোগ পেয়েছেন অমনি অধিকার খাটাচ্ছেন !! কি মনে করেন কি নিজেকে ?? নিজের যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াবেন !! আরেকজনের মতামতের দাম নেই না ?

প্রেনা পূর্ণতা কে এসে মুখ চেপে ধরে থামালো । তারপর কিছু টিস্যু দিয়ে ওকে পরিষ্কার করতে করতে বলল ,

– তখন থেকে যা-তা বলছিস ! চুপ করে থাক তো ।

আবরন কিছু না বলে সুর সুর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল । তারপর দোতলায় গিয়ে আধিরা আনজুমের বেড রুমে গিয়ে আলমারি থেকে একটা সুতি শাড়ি বের করে আনলো । এই বাসায় ওরা থাকে না বলে আলমারিতে তেমন কোনো ভালো শাড়ি নেই । তবে আগের কিছু জিনিস আলমারিতে রাখা ছিল । সেখান থেকেই একটা শাড়ি আবরন নিয়ে আবার সেই রুমে গেল । তারপর প্রেনার হাতে শাড়িটা দিয়ে বলল ,

– এটা জলদি ওকে পড়িয়ে দাও ।

এই বলে আবরন আবার চলে গেল । প্রেনা বাদে বাকি সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল । প্রেনা পূর্ণতা কে শাড়ি চেঞ্জ করে দিতে দিতে বলল ,

– জানিস , অনেক কিছু আশা করেছিলাম , কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব আশাগুলোই মিথ্যা !!

পূর্ণতা চুপ চাপ দাঁড়িয়ে কাদছে । মনে মনে ভাবছে ,

– আমার এতো কেন কষ্ট হচ্ছে উনার জন্য ! কেন মনে হচ্ছে উনার বিয়ে অন্য কারো সাথে হয়ে গেলে আমার জীবনটা অগোছালো হয়ে যাবে ?? কেন ?? কেন এতো গুলো কথা উনাকে শোনাতে গেলাম !! মনটা চাইছে নিজের চুলগুলো নিজেই ছিড়ে ফেলি ।

এইসব ভেবে পূর্ণতা এবার জোড়ে জোড়ে কাদতে কাদতে প্রেনা কে বলল ,

– আমার জাস্ট দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রেনা । আমাকে বাসায় নিয়ে চল ।

প্রেনা ওকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল ,

– কাদিস না প্লিজ । আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তোর জন্য ।

আবরন গিয়ে শাদমান চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,

– বাবা , তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে !!

শাকিলা ইয়াসমিন আবরনকে শাদমান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে দেখে নিজের মেয়ে জলকে বলল ,

– দাঁড়িয়ে দেখছিস কি ! যা গিয়ে আবরনের সাথে দাঁড়া ।

জল দৌড়ে গিয়ে আবরনের হাত ধরে দাঁড়াতেই আবরন বলল ,

– হাত টা ছাড়ো । আমার বাবার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে ।

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– আবরন তুমি জল মাকে এভাবে কেন বলছো ? ও তো এখন আমাদের পরিবারের‌ই একজন সদস্য । বলো তুমি কি বলবে ?

– ওকে , যেমন তোমার ইচ্ছা । তাহলে জলের সামনেই বলছি । তুমি চাইলে আমি গিয়ে স্টেজে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে নিয়েও কথাটা বলতে পারি !

– আহ , বলবে তো কি কথা !

– বাবা , জলকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না !

– আরে বোকা ছেলে , জল মাকে কি আমরা তোর বৌ করে এখনি নিয়ে যাচ্ছি নাকি ? তোদের আজকে একটু পর শুধু engagement এর এরেঞ্জ করেছি । এরপর তোদের পড়াশোনার চাপ গেলে সুবিধা মতো বিয়ের এরেঞ্জ করবো ।

– সরি বাবা , আমি জলকে আমার হবু স্ত্রী বলো বা যাই বলো , আমি ওর সাথে জীবনে জড়াতে চাই না । কারন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি ।

জল এই কথা শুনে কাদতে শুরু করলো । শাদমান চৌধুরী তা দেখে রেগে বলল ,

– তুমি জানো আমি যেটা ডিসিশন নেই সেটা করেই ছাড়ি । আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এত এত মানুষের সামনে আমি তোমাদের engagement ঘোষনা করেছি , আর তুমি আমার মান সম্মান শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছো ??

– এখানেই তোমার ব্যর্থতা বাবা !! তুমি একজন ছেলের বাবা হয়ে নিজের ছেলেকে একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করো নি যে তোমার ছেলে কি চায় ? আমি আগেও তোমাকে বলেছি জলকে আমার পছন্দ না ।

– হ্যা , আর কেন পছন্দ না সেটাও বলেছিলে !! কারনটা ছিল জলের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও জল তোমাকে ভার্সিটিতে যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধরে । তাই আমি তোমার সমস্যাও সমাধান করে দিলাম এইভাবে যে জল তোমার ফিওন্সে হলে ও তোমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার রাখবে আর জল মামনির তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট অর্থাৎ ভালোবাসা টাও আমি সারাজীবনের জন্য পূর্ণ করে দিলাম ।

আবরন মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল ,

– দুঃখিত বাবা ! তুমি আমার জন্য অনেক করেছো , এই ঋণ আমি কোনো কিছুর বিনিময়ে শোধ করতে পারবো না , আর তোমার কথাও রাখতে পারবো না । তুমি আমাকে মাফ করে দিও ।

এই বলে সেখান থেকে চলে এসে আধিরা আনজুমের কাছে গিয়ে বলল ,

– আম্মু , বাবা আজ তার মান সম্মানের কাছে আমার ভালোবাসা কিছুই না তা বুঝিয়ে দিল । আসল কাজটা করার জন্য এখন শুধু তোমার পার্মিশন চাই ।

আধিরা আনজুম ছেলের গালে হাত রেখে কান্না করে বললেন ,

– আমি তোকে বলছি , এই কষ্টের তুই একটা সমাধান কর ।

– তাহলে চলো আমার সাথে ।

এই বলে হাত ধরে আধিরা আনজুমকে টেনে নিয়ে গেল পূর্ণতা যেখানে ছিল সেখানে ।

পূর্ণতা আর প্রেনা রুম থেকে সব গুছিয়ে বের হচ্ছিল ঠিক তখন আবরন আর আধিরা আনজুম ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো । পূর্ণতা আবরনের দিকে একবার তাকিয়ে আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আসসালামু আলাইকুম আন্টি ।

– ওয়াকুমুসসালাম মা । তুমি কি কোথাও যাচ্ছিলে ?

পূর্ণতা নিজেকে কন্ট্রোল করে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আমরা সবাই বাসায় যাচ্ছি ।

– ঠিক আছে । চলো আমরা সবাই একসাথে যাবো !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে তাকাতেই আবরন ওর আরেক হাত দিয়ে পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে যেতে যেতে সকলকে বলল ,

– তোরা যাবি নাকি এখানেই থাকবি ?

ফাহিম, তাসিন , আয়মান , রুহি , নীরা , প্রেনা সবাই অবাক হয়ে আবরনের পিছু পিছু গেল ।

আবরন ওদের গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আধিরা আনজুম আর পূর্ণতার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল ,

– আম্মু , তুমি সামনে বসো । আর তোরা সবাই পেছনে উঠে বস । একটু চাপাচাপি করে বসতে হবে ।

একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসে শেষে প্রেনা ওর পাশে টেনে পূর্ণতা কে বসাতেই আবরন গাড়ি স্টার্ট করতেই শাদমান চৌধুরী , শাকিলা ইয়াসমিন আর জল ওদের পথ রুখে দাঁড়ালো ।

আবরন গাড়ির ভেতরে বসেই গ্লাস ওপেন করে বলল ,

– সরি , আমার যা যা বলার আমি তোমাকে বলেছি বাবা । আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও ।

শাকিলা ইয়াসমিন রেগে বললেন ,

– তুই আমাদের এভাবে ধোকা দিতে পারিস না !! আমার মেয়ের বিয়ে আমি তোর সাথেই দিয়ে ছাড়বো ।

আবরন হেসে বলল ,

– সেটা কখনো পসিবল না ফুপি । আগে নিজের মেয়েকে গিয়ে ম্যানারস শেখাও । তারপর দেখো অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে পারো কিনা !!

জল কাদতে কাদতে বলল ,

– আই লাভ ইউ , প্লিজ স্টে উইথ মি !!

– সরি ডিয়ার , আই ক্যান্ট স্টে !!

শাদমান চৌধুরী বলল ,

– তুমি অনেক বড় ভুল করছো আবরন !! আমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার উন্নতি হবে না কখনো !! তুমি এভাবে আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারো না !!

– সরি বাবা । আমি তোমাকে সময় হলে আমার বিষয়টা নিজেই জানাতাম । কিন্তু তুমি আমাকে কোনো সুযোগ‌ই দাও নি । আমি অন্তত দুঃখিত । আর বাকি র‌ইল তোমার কষ্টের কথা ! আমার জানা মতে তোমার আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে না , কষ্ট হচ্ছে তোমার বোন আর ভাগ্নির জন্ত । কারন জলের মতো ম্যানালেস একটা মেয়েকে তোমরা কারো গলায় ঝুলাতে পারবে না , তাই আমার কাছে এসেছিলে । হ্যা ওকে তোমরা বরং ওর‌ই মতো ম্যানারলেসের সাথে বিয়ে দিতে পারো । নাউ বায় বায় এভরিওয়ান !!

এই বলে আবরন গ্লাস লাগিয়ে দিয়ে গাড়ি টান দিল ।

গাড়ি গেইট থেকে বেরিয়ে রোডে যেতেই ফাহিম বলল ,

– তুই এসব কি বললি আঙ্কেলকে ?

তাসিন বলল ,

– তুই কি জলকে বিয়ে করবি না ?

আয়মান বলল ,

– একা একা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস ? সব ভেবে করছিস তো ?

আবরন শুধু এইটুকু বলল ,

– সব উত্তর পাবি । আপাদত সবাই শান্তি করে বসে থাক ।

পূর্ণতা চুপচাপ এতক্ষন সব শুনছিল । ও কারো কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । তাই আধিরা আনজুম কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো ,

– আন্টি , আমি জানি আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন ! সত্যি করে বলুন তো আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ?

আধিরা আনজুম বললেন ,

– এর উত্তর আমাদের কারোর‌ই জানা নেই মা । আবরন‌ই ভালো বলতে পারবে !

পূর্ণতা গাড়ির ভিতরে থাকা মিররে আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন ওর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিল ।

পূর্ণতা তা দেখে থ হয়ে বসে র‌ইল ।

#চলবে♥️

বিঃদ্রঃ এখন থেকে একদিন পর পর গল্প দিব । একটু বড় করেই পার্টগুলো দিব । কারন , এখন একটু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত আছি । কেউ মন খারাপ করবেন না প্লিজ !! কারন , আপনাদের সাপোর্ট পেয়েই গল্পটা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি , আশা করি এভাবেই সাপোর্ট করে যাবেন । আর ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here