#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৬
রাত ৮:৩০ টা ,
আবরন গাড়ি থামালো পূর্ণতাদের গেইটের সামনে গিয়ে । সবাই খুব অবাক হলো , এমনকি আধিরা আনজুম জায়গাটা চিনতে না পেরে আবরনকে প্রশ্ন করলেন ,
– এটা কোথায় নিয়ে এলি ?
আবরন কিছু না বলে ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে নেমে দাঁড়িয়ে বলল ,
– সারপ্রাইজ ফর ইউ । ভেতরে গেলেই বুঝবে ।
আর তোরা কি নামবি নাকি গাড়িতেই থাকার শখ আছে ??
একে একে সবাই নেমে দাঁড়ালো । পূর্ণতা প্রথমেই নেমে গেইট দিয়ে সোজা ভেতরে চলে গেল । আধিরা আনজুম আস্তে করে ফাহিমকে জিজ্ঞেস করল ,
– এটা তোর বন্ধুর হবু শশুড় বাড়ি নাকি রে ??
ফাহিম দাঁত কেলিয়ে আধিরা আনজুম কে বলল ,
– ঠিক ধরেছো আন্টি !!
আধিরা আনজুম বললেন ,
– আল্লাহ ই জানে ছেলেটার মাথায় কি বুদ্ধি চলছে !
আবরন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এখানেই দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাবি নাকি ভেতরে ও যাবি !!
তারপর আধিরা আনজুমের হাত ধরে বলল ,
– চলো তো আম্মু ।
সবাই গেইট দিয়ে প্রবেশ করে উপরে যেতে লাগল ।
পূর্ণতা বাসার গেইটে নক করতেই মিলি রহমান দরজা খুলে পূর্ণতা কে বলল ,
– চলে এসেছিস !
পূর্ণতা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল ,
– শুধু আমি না , সবাই এসেছে । আমি আর এই শাড়ি পড়ে থাকতে পারছি না । আমি গেলাম আমার রুমে ফ্রেশ হতে । তুমি এদিকটা সামলাও ।
মিলি রহমান বললেন ,
– আচ্ছা , তুই যা ।
পূর্ণতা দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল ।
মিলি রহমান সিঁড়িতে আগত সবাইকে দেখে খুশি হলেন , আর আবরনের সাথে থাকা মধ্য বয়স্ক মহিলাকে দেখে মিলি রহমান চমকে গিয়ে বলে উঠল ,
– আধিরা তুই ???
আধিরা আনজুম সিড়ি দিয়ে উঠে দরজার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল ,
– আরে মিলি !! তুই এখানে ??
আধিরা আনজুম মিলি রহমানকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– কতদিন পর দেখা !!
মিলি রহমান বলল ,
– হ্যা , তুই জানিস আমি তোকে কত জায়গায় খুঁজেছি ।
– আমিও তোকে অনেক খুঁজেছি মিলি ।
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি সবাই ৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে একজায়গায় ই থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
আধিরা আনজুম মিলি রহমান কে আবরনকে দেখিয়ে বলল ,
– ঐটা আমার ছেলে ।
মিলি রহমান বললেন ,
– আমি চিনি আবরন বাবাকে , কিন্তু তুই ই যে ওর মা সেটা যদি আগে জানতাম !!
আধিরা আনজুম ভ্রু কুচকে বললেন ,
– পূর্ণতাকে কি তোর মেয়ে ??
মিলি রহমান বলল ,
– হ্যা , আমার মেয়ে ।
আধিরা আনজুম খুশি হয়ে আবারো মিলি রহমানকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– তাহলে তো অনেক বেশি ভালো !!
মিলি রহমান বললেন ,
– বাহিরে কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবি । চল চল , ভিতরে চল ।
আর তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন ?? এসো এসো , ভিতরে এসো !!
সবাই আস্তে আস্তে ভিতরে প্রবেশ করল ।
এরই মধ্যে জিব্রান এসে খুশি হয়ে আবরনকে বলল ,
– আরে ছোট ভাই !! কখন এলি ??
আবরন জিব্রান কে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– এই তো ভাইয়া , মাত্র ই । কেমন আছো বলো ??
জিব্রান আবরনের গলায় ধরে বলল ,
– অনেক ভালো ।
ওদের দুইজনের এতো মিল মোহাব্বত দেখে আধিরা আনজুম মিলি রহামান কে বললেন ,
– ভালোই তো তোদের পটিয়েছে আমার ছেলে !!
মিলি রহমান বললেন ,
– ছেলেকে তো যেন তেন বানাসনি । এত সুন্দর ব্যবহার আর ভদ্রতা যে কোনো মানুষকে মুগ্ধ করবে ।
ফাহিম বলল ,
– এহ আন্টি , আপনাদের সাথেই উত্তম ব্যবহার করছে , আর আমাদের সাথে যে অধম আচরন করে সেটা কেউ দেখেই না ।
আবরন ফাহিমের দিকে রাগি রাগি চোখে তাকাতেই তাসিন বলল ,
– দেখেছেন আন্টি , চোখ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে । ওর এই চোখের ভাষা আমাদের বলছে , ” তোদের পরে কেলাবো । ”
নীরা বলল ,
– হ্যা , আবরন ভাইয়া কত ভদ্র !! তোমরাই অভদ্রের দল । আকাম করো তারপর ভাইয়ার কাছে বকা খাও ।
রুহি বলল ,
– ঠিক ই , এতে ভাইয়ার তো কোনো দোষ দেখছি না !!
আয়মান বলল ,
– বন্ধু মানেই এমন । আমার তো ভালোই লাগে আবরনের হাতে মার খেতে । আর হয়তো এইজন্যই আমি ওর হাতে কম মার খাই , আর তোরা দুইজন বেশি খাস !!
প্রেনা বলল ,
– তুমি ওদের এভাবে কেন বলছো বলো তো !! সবাই ই ভালো ।
মিলি রহমান বললেন ,
– বাবা রে বাবা , তুই আবার আয়মান কে “তুমি” করেও বলিস !!
সবাই হাসতে শুরু করলো আর প্রেনা জিব্হে কামড় দিয়ে বলল ,
– ইয়ে মানে আন্টি !!
আধিরা আনজুম বললেন ,
– হয়েছে , আর বলতে হবে না । আমরা বুঝি সবই ।
জিব্রান বলল ,
– ওয়াও , সবাই এখন ইন এ রিলেশন শিপ । শুধু আমি আর আবরন ছাড়া !!
আবরন সবার দিকে তাকিয়ে কিছুই বোঝে না এমন ভাব করে উত্তর দিল ,
– হ্যা , ভাইয়া , তুমি আর আমিই সিংগেল ।
আবরন বলল ,
-তাহলে চলো , এক কাজ করি ! সবাই তো প্রেম করে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আমরা বরং বিয়ে করে ঘুরে বেড়াই ??
জিব্রান হুহা করে হেসে উঠল । তারপর বলল ,
– আইডিয়াটা কিন্তু খারাপ না !!
প্রেনা বলল ,
– ওয়েট ওয়েট !! তাহলে পূর্ণতার কি হবে ?
সবাই একসাথে বলল ,
– পূর্ণতা ?? আসলেই তো পূর্ণতা কোথায় ? আসার পর তো একবারো দেখলাম না ।
মিলি রহমান বললেন ,
– ও ফ্রেশ হচ্ছে ।
আবরন বলল ,
– সবাই সব টপিক বাদ দাও । আম্মু আর আন্টি আগে তোমরা বলো , তোমরা দুজন একে অপরকে আগে থেকে কি করে জানো ??
সবাই বলল ,
– আসলেই । বলুন তো !! কি করে জানেন ?
আধিরা আনজুম হেসে বললেন ,
– আমরা দুজন সেই ছোট্ট বেলার বান্ধবী । কিন্তু কলেজ পর্যন্ত একসাথে পড়ার পর আমরা দুজন আলাদা হয়ে যাই । আমার বাবা আমাকে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় নিয়ে এলেন । আর মিলি তখন ময়মনসিংহে ই ছিল । ঢাকায় এসে আমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেয় । তখন তো এত ফোন ছিল না যে কল দিয়ে জানাবো । তবুও আমি চিঠি লিখতাম মিলির কাছে । মিলিও জবাব দিত চিঠির মাধ্যমে । কিন্তু একবার চিঠি দেওয়ার পর ৩-৪ মাস হয়ে গেল কিন্তু মিলির রিপ্লাই পাই নি । এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ । আমারও ময়মনসিংহে আর কখনো যাওয়া হয় নি । এর পর তো বাবা আমাকে শাদমান চৌধুরীর সাথে বিয়েই দিয়ে দিল ।
মিলি রহমান বললেন ,
– আমি কি করে জবাব দিতাম । তোকে তো ভার্সিটিতে তোর বাবা ভর্তি করিয়েছিল কিন্তু আমাকে তো হঠাৎ করে বিয়ে দিয়ে ফ্রান্স পাঠিয়ে দিল হাজবেন্ডের সাথে । তারপর জিব্রান পেটে আসার পর তো আবার বিডিতে ব্যাক করলাম । আমিও আর তোর খোঁজ পাই নি । আজ এত বছর পর যে আবার দেখা হবে তা ভাবতেও পারি নি ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– আজ আমরা তোর বাসায় থাকলে কোনো সমস্যা আছে মিলি ?
– হ্যা , আছে তো সমস্যা । তোরা থাকতেই পারবি না , এক্ষুনি চলে যা !!
– সত্যি বলছিস ??
– তাহলে প্রশ্ন করলি কেন বোকার মতো ??
নীরা বলল ,
– কিন্তু আমাকে চলে যেতে হবে !! আমি তো আম্মুকে বলি নি যে রাতে ফিরবো না !!
রুহি বলল ,
– হ্যা , আর আমার আম্মুও আমাকে থাকতে দেবে না ।
মিলি রহমান বললেন ,
– ফোন করে জানিয়ে দাও !
ওরা বলল ,
– লাভ নেই আন্টি । উল্টো বকা খাবো ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তাহলে তোমরা এক কাজ করো । আজকে বাসায় চলে যাও । কালকে সকাল সকাল চলে এসো । আমরা এখানেই আছি !
ওরা খুশি হয়ে আধিরা আনজুমের কথায় সায় জানালো ।
মিলি রহমান প্রেনাকে বলল ,
– আর তোর আম্মুকে আমি বলে দিচ্ছি । তুই থাক , সমস্যা হবে না ।
প্রেনা খুশি হয়ে গেল ।
আবরন বলল ,
– ফাহিম , তাসিন , আয়মান তোরা থাকবি না যাবি ??
জিব্রান বলল ,
– থেকে যাও । ছাদে বারবিকিউ পার্টি করবো ।
সবাই বলল ,
– তাহলে আমরা থাকবো ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– মিলি শোন ! আমি আর আবরন মিষ্টার চৌধুরীর সাথে রাগ করে এসেছি , তাই আজকের রাতটা তোর বাসায় থাকছি ।
মিলি রহমান বললেন ,
– শুধু আজকের রাত কেন ?? তোর যে কয়দিন ইচ্ছা থাকবি । এমনিতেও সারাদিন বাসায় একা একা থাকি । তুই থাকলে অন্তত তোর সাথে গল্প করতে পারবো !!
– আমারো একই অবস্থা জানিস !
জিব্রান বলল ,
– listen adults !! এই দুই ব্যক্তির এত বছরের জমানো গল্প সহজে শেষ হবার নয় । So ,চলো , আমরা সবাই ছাদে যাই ।
প্রেনা বলল ,
– ভাইয়া , তোমরা যাও । আমি একটু ফ্রেশ হয়ে পূর্ণ কে নিয়ে আসছি ।
– ওকে ।
জিব্রান , আবরন , ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা , আয়মান গেল ছাদের দিকে ।
এদিকে মিলি রহমান আধিরা আনজুমকে নিয়ে গেলেন নিজের রুমে । একটা সুতি শাড়ি বের করে দিলেন ফ্রেশ হয়ে পড়ার জন্য ।
আর প্রেনা গেল পূর্ণতার রুমে ।
পূর্ণতা শাড়ি চেঞ্জ করে , ফ্রেশ হয়ে একটা লং স্কার্ট আর টি শার্ট পড়ে গলায় ওরনা পেচিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে চুলে খোপা করছিল । এরমধ্যে প্রেনা রুমে ঢুকে বলল ,
– আমাকে জলদি একটা সুতি জামা কাপড় দে তো তোর ।
পূর্ণতা একটা প্লাজো আর লং টপস এর সাথে ম্যাচিং ওরনা দিয়ে বলল ,
– তুই আজকে আমাদের বাসায় থাকবি ??
প্রেনা বলল ,
– হ্যা ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,
– ইয়েএএএএএ !!
প্রেনা ওকে আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল ।
পূর্ণতা ফোনটা চার্জে লাগিয়ে খাটে বসতেই ম্যাসেঞ্জারে অনেকগুলো ম্যাসেজ টুংটাং করে আসতে লাগল ।
পূর্ণতা চুপ চাপ খাটে বসে প্রেনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল ।
প্রায় ২০ মিনিট পর প্রেনা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই পূর্ণতা বলল ,
– এতক্ষন লাগে কারো ফ্রেশ হতে ।
– লাগবে না ?? কত মেইক আপ দিয়েছি হিসাব আছে , এগুলো ঘষে তুলতে একটু দেড়ি হলো । এখন কথা না বাড়িয়ে চল ।
– কোথায় যাবো ??
– ও তুই তো জানিস না ।
– কি জানি না !
– চল আমার সাথে গেলেই দেখবি ।
প্রেনা পূর্ণতার হাত ধরে সবেই রুম থেকে বের হচ্ছিল এরই মধ্যে প্রেনার ফোন বেজে উঠল । ফোনে তাকিয়ে দেখল , আয়মানের কল । কল রিসিভ করে কানে দিতেই আয়মান বলল ,
– প্রেনা , মুরগি কিনে এনেছি আর মশলা আর সস নাকি রান্না ঘরে আছে । একটু নিয়ে এসো তো ।
– ওকে । আনছি ।
প্রেনা কল কেটে পূর্ণতা কে নিয়ে মিলি রহমানের রুমে গিয়ে মিলি রহমানকে বলল ,
– আন্টি , বারবিকিউ মশলা আর সসটা দাও ।
মিলি রহমান বলল ,
– রান্নাঘরের তাকে আছে । গিয়ে দেখ ।
প্রেনা রান্না ঘরে গেল আর পূর্ণতা আধিরা আনজুমকে মিলি রহমানের সাথে গল্প করতে দেখে অবাক হয়ে বলল ,
– তোমরা একজন আরেকজনকে তুই তোকারি কেন করছো ??
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তখন এত বড় গল্প সবাইকে শোনালাম , তুই ছিলি না । সংক্ষেপে বলি , আমরা বেষ্ট ফ্রেন্ড !!
প্রেনা এসে দেখল পূর্ণতা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে । আর মিলি রহমান আর আধিরা আনজুম তা দেখে হাসছে । প্রেনা বলল ,
– কি হয়েছে ??
মিলি রহমান বললেন ,
– আমার আর আধিরার বন্ধুত্ব পূর্ণ কথা শুনে বোকা বনে গিয়েছে । এখন যা তো তোরা ছাদে ।
প্রেনা পূর্ণতা কে নিয়ে ছাদে যেতেই পূর্ণতা সবাইকে একসাথে দেখে আরো একবার বোকা বনে গেল ।
সবাই স্বজোরে হাসাহাসি করছে । সেখানে জিব্রান কে দেখে পূর্ণতা বলল ,
– ভাইয়া , কি হচ্ছেটা কি এখানে আমাকে একটু বলবে ??
সবাই হাসি থামিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকালো । জিব্রান বলল ,
– আরে পুচকি , দেখছিস ই তো পার্টি হচ্ছে ।
– কিসের পার্টি ?
আবরন বলল ,
– পার্টি করতে আবার কারন লাগে নাকি !! এখানে সবাই কাপল আমি , তুমি আর ভাইয়া বাদে , তাই এনজয় করছি ।
দাঁড়িয়ে না থেকে এসে বসে পড়ো ।
পূর্ণতা গিয়ে প্রেনাকে নিয়ে ওর সাথে বসল । আবরন ঠিক ওর বরবার মুখোমুখি বসেছে ।
জিব্রান আগুন জ্বালিয়ে বাটিতে মাংস মেরিনেট করতে করতে বলল ,
– আজকে কিন্তু সবাইকে গান গাইতে হবে ।
আবরন বলল ,
– আইডিয়াটা ভালো । ইশশ , আগে জানলে গিটার টা নিয়ে আসতাম ।
আয়মান বলল ,
– সমস্যা নেই । গিটার ছাড়াই সবাই গাইবো ।
তাসিন বলল ,
– না , বোতল স্পিনিং করে খেলতে মজা লাগবে । আমি নিয়ে আসছি ওয়েট ।
এরপর একটা বোতল এনে তাসিন বলল ,
– বোতলের মাথা ঘুরে যার দিকে পড়বে তাকে একটা ট্রুথ বলতে হবে আর সাথে একটা গান গাইতে হবে !! আর ট্রুথের প্রশ্ন কি সেটা ডিসাইড করবে যার দিকে বোতলের পেছন পড়বে সে ।
সবাই বলল ,
– ওকে ।
জিব্রান বারবিকিউ ট্রে তে মুরগির পিস গুলো দিয়ে তারপর হাত ধুয়ে বসলো ।
সবাই পাটি বিছিয়ে তার উপর গোল হয়ে বসেছে । সব মেয়েরা একসাথে বসেছে আর সব ছেলেরা একসাথে ।
খেলা শুরু করলো প্রথমে ফাহিম বোতল ঘুরিয়ে । বোতল ঘুরে আবার ওর দিকেই ফেরত আসলো আর বোতলের পেছন দিকে পড়েছে প্রেনার দিকে । প্রেনা দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– ফাহিম ভাইয়া , আপনাকে এখন ট্রুথ বলতে হবে !
ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– আমার মান সম্মান রাখিস ছোট বোন !
সবাই হুহা করে হেসে উঠল ।
প্রেনা হাসি থামিয়ে বলল ,
– আচ্ছা , ভাইয়া বলেন তো আপনি রুহি আপুকে আজ পর্যন্ত কিছু কেন গিফট করেন নি ??
ফাহিম প্রেনার প্রশ্ন শুনে যতটুকু না অবাক হলো তার চেয়ে বেশি অবাক হলো আবরন ,আয়মান আর তাসিন । কারন , আবরন এই প্রশ্ন শাড়ি কিনতে গিয়ে তাসিন , আয়মান আর ফাহিমকে জিজ্ঞেস করেছিল । আর তখন ফাহিম বলেছিল যে , ” ওর এতো টাকার গাছ নেই যে জি এফ কে গিফট করবে কিনে কিনে । ” ওদের বুঝতে বাকি রইল না প্রেনা সেদিন ওদের কথা শুনেছে ।
ফাহিম রুহির দিকে তাকিয়ে দেখল রুহি চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । তাই চোখ বন্ধ করে উত্তর দিল ,
– আমার তো টাকার গাছ নাই , তাই গিফট কিনে দিতে পারি না । যেদিন ইনকাম কর টাকার গাছ হবো , সেদিন দিব !!
ওর উত্তর দেওয়ার রিয়েকশন দেখেই সবাই হেসে দিল । প্রেনা রুহিকে বলল ,
– আপু , দেখছো , সত্যি কথা কি সুন্দর বলে দিল ! তুমি কিন্তু আবার রাগ করো না !!
রুহি হেসে বলল ,
– আমার গিফটের দরকার নেই । আমার সারাজীবনের চলার পথে ফাহিমকে পাশে পেলেই চলবে ।
আবরন , আয়মান আর তাসিন একসাথে বলে উঠল ,
– oyeee hoyeee….
জিব্রান বলল ,
– কি ভালোবাসা !! আহা !!
প্রেনা ফাহিমকে বলল ,
– ওকে এখন রুহি আপুর জন্য একটা গান গাও ।
ফাহিম রুহির দিকে তাকিয়ে হেসে গাইতে লাগল ,
Chu le na hath tera
Kar le na baat tera
Hay ye bas teri ada
Ye na samajh paye ga
Khamakha kahi iss dil ko peyar ho jayega
Khamakha kahi iss dil ka chan kho jayega
Aise na mujhe tum dekho
Peyar ho jayega ♥️
ফাহিম গান গাইতেই রুহির লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেল । পূর্ণতা রুহির গাল টিপে দিয়ে বলল ,
– আহহা , কিউট লাল টমেটো আপু ।
আবরন ওর বাচ্চামো দেখে এক গাল হাসল ।
এবার বোতল স্পিন করলো আয়মান ।
বোতল ঘুরে জিব্রানের দিকে পড়ল আর পেছন দিক পড়ল পূর্ণতার দিকে ।
সবাই চেচিয়ে উঠল বলল ,
– ভাই বোন একসাথে পড়ল ।
পূর্ণতা দাঁত কেলিয়ে জিব্রানকে বলল ,
– ভাইয়া , এখন এমন একটা প্রশ্ন করবো , যেটা করতে এর আগে কখনো সাহস পাই নি ।
সবাই এক্সাইটেড হয়ে পূর্ণতার দিকে তাকালো ।
পূর্ণতা বলল ,
– তুমি রেডি ভাইয়া ?
জিব্রান বলল ,
– বল বল , বলে ফেল । আমার ভয় লাগছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি জানি আমার জন্য তুমি ভাবি খুঁজে ফেলেছো , এখন প্লিজ বলে ফেলো সে কে ??
জিব্রান অবাক হয়ে বলল ,
– তুই কি করে জানলি ??
আবরন বলল ,
– এই প্রশ্ন তুমি এখন করতে পারবে না ভাইয়া !! তুমি ট্রুথ বলো আগে !!
জিব্রান বলল ,
– ইয়ে মানে , ওর নাম নাদিরা । ঢাকা ভার্সিটিতে অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ছে । আমি যে অফিসে জব করি ও সেখানে পার্ট টাইম জব করে । তো সেখান থেকেই পরিচয় ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,
– ওকে তো নাদিরা ভাবির জন্য একটা গান হয়ে যাক । তুমি ধরে নাও ভাবি এখন বাতাসের স্রোতে আছে ।
আবরন পূর্ণতার কথা শুনে মনে মনে ভাবছে ,
– আরেব্বাস , এই মিসেস জামান তো দেখছি ভালোবাসার মানুষ সাথে না থাকলে কিভাবে তাকে ফিল করতে হয় তা ভালোই জানে , তাহলে এটা কেন বুঝে না যে আমি ওকে কেন এত ইম্পরট্যান্স দেই ??
জিব্রান চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাইতে শুরু করলো ,
Hue bechain pehleli bar
Humne raj ye jana
Mohabbat mei koyi ashique kyu ban jate hai deewana ..
Agar ekrar ho jaye , kisi se peyara ho jaye bada mushkil hota hai dil ko samjhanaaa…
Hue bechain pehleli bar
Humne raj ye jana
Mohabbat mei koyi ashique kyu ban jate hai deewana ..?? ♥️
সবাই জোড়ে হাত তালি দিল । এবার এলো নীরার পালা । নীরা বোতল স্পিন করতেই সেটা ঘুরে তাসিনের কাছে গেল আর উল্টো সাইডটা ওর দিকে এলো । নীরা তাসিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,
– কি মহাশয় ! আপনি আমার প্রশ্নের সাথে মোকাবেলা করতে রেডি আছেন তো ?
তাসিন ভয়ে ঢোক গিলে শুকনো হাসি দিল । সবাই ওর রিয়েকশন দেখে হাসল । নীরা তাসিনকে বলল ,
– আমার আগে জীবনে কয়টা রিলেশন করেছো এবং কেন ?
তাসিন চোখ বন্ধ করে বলল ,
– যাহা বলিবো সত্য বলিবো , সত্য বলি মিথ্যা বলিবো না ।
আয়মান বলল ,
– বাপরে বাপ , ওভার কনফিডেন্স দেখাচ্ছিস এতো ! বলেই ফেল তাহলে !
তাসিন বলল ,
– লেংটা কালে পাশের বাসার সুমাইয়ার সাথে পুতুল খেলতে যেতাম । তারপর পুতুলের বিয়ে দিয়ে আমি আর সুমাইয়া পুতুলের বাপ মা সাজতাম । আমি বাজার করতাম , সুমাইয়া রান্না বান্না করে জামাইরে খাওয়াতো ।
আর আরেকটা কাহিনী হলো ক্লাস এইটে থাকতে এক সিক্সে পড়ুয়া মেয়েকে প্রোপোজ করছিলাম । ঐটার নাম ছিল তানিয়া । ঐ মেয়ে আমার প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করছে তাই আমি বাসায় গিয়ে ঐদিন রাতে ঘুমাই নি । পরের দিন সেজে গুজে ঐ মেয়ের স্কুলের সামনে চকোলেট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম । কিন্তু পরে দেখা গেল ঐ মেয়ে আরেক টা ছেলের সাথে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে । আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম , এসব কি হচ্ছে ! তুমি তো আমার গার্লফ্রেন্ড !!
ঐমেয়ে উত্তর দিল , “সরি , ভাইয়া । একচুয়ালি আমি আমার বয়ফ্রেন্ড কে জেলাস করাতে আপনার প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করেছিলাম ।
তারপর আর কি সেই কষ্টে আমি আমার চকোলেট নিয়ে বাসায় ফ্রিজে রেখে দিছিলাম । কাউকে খাইতে দেই নাই আর নিজেও খাই নাই । তারপর নীরার সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর ঐ চকোলেট ওরে খাওয়াইছি ।
নীরা এই কথা শুনে ,
– ছি , ওয়াক ওয়াক 🤢
করতে করতে শেষ ।
বাকিরা সবাই হুহা করে হেসে উঠল ।
ফাহিম বলল ,
– শালা , তুই এত্ত কিপ্টা !! কেমনে সম্ভব !!
তাসিন হেসে বলল ,
– সরি ট্রুথে একটা ফলস্ বলে ফেলছি নীরার সাথে দুষ্টুমি করতে । ঐ চকলেট বাসায় গিয়ে আমার ছোট বোনকে দিয়ে দিছিলাম । হা হা হা ।
নীরা ওকে ধুম ধাম কিল ঘুষি দিতে দিতে বলল ,
– ফাজিল ছেলে । দুই মিনিটের জন্য আমি ভেবেই বসেছিলাম যে আমার এক্সপেয়ারডেট ওভার হওয়া চকোলেট খেয়ে ঐদিন বদহজম হয় নাই কেন !!
সবাই হাসল । তারপর বলল ,
– এখন গান গা নীরার জন্য !!
তাসিন একটু ভাবনা চিন্তা করে তারপর গাইতে লাগল ,
Itni mohabbat karta hu ke lafz bhi na keh paye
Tum mile mujhe yu lage jaise koyi dua mil jaye
Mujhe jeena tera banale
Kiya khud ko tere hawalee
Sochu tujhe sham se subha tak har lamha
Ke shab tum ho
Tum he din ho
সবাই একসাথে হাত তালি দিল ।
তারপর এলো প্রেনার পালা । প্রেনা বোতল স্পিন করতেই সেটা ঘুরে গিয়ে পূর্ণতার দিকে থামল আর এর পেছনের দিকটা পড়ল আবরনের দিকে । জিব্রান বাদে বাকি সবাই বলে উঠল ,
– oyee hoyeee….
পূর্ণতা বোতলের দিকে তাকিয়ে আবরনের দিকে তাকালো । আবরন মুচকি হেসে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল ।
পূর্ণতার হঠাৎ করে হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করতে লাগল । ওর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে যেতে লাগল । বাতাস শরীরে এসে লাগতেই কাটা দিতে লাগল শরীরে । আবরন ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে পাশ থেকে তাসিন ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল ,
– কিরে তাকিয়েই থাকবি নাকি প্রশ্ন টাও করবি ??
সবাই হেসে উঠলো । জিব্রান ওদের বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করতে লাগল ।
আবরন পূর্ণতা কে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ,
– সত্যি করে বলো তো আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে তোমার কাছে কাউয়্যা মনে হয় ??
ওর প্রশ্ন শুনে সবাই হুহা করে হাসতে লাগল । পূর্ণতা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচল । এক মিনিটের জন্য ওর মনে হয়েছিল এই বুঝি আবরন ওকে বলবে ,
– তোমার কি কোনো ছেলেকে ভালো লাগে যাকে তুমি তোমার লাইফ পার্টনার বানাতে চাও ??
এইসব ভেবে আবরনের প্রশ্ন শুনে মনে মনে ভাবল ,
– ধুর , কি সব উলোট পালোট ভাবছিলাম !! আমি আসলেই একটা গাধা !
সবাই পূর্ণতা কে চুপ করে থাকতে দেখে বলল ,
– পূর্ণতা !! বলো !! কোন দিক থেকে আবরনকে “কাউয়্যা” মনে হয় তোমার ??
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল ,
– সব দিক থেকেই । কিন্তু উনি সাদা কাউয়্যা ,অন্যান্য কাউয়্যার থেকে একটু ইউনিক !! যার উপর সবাই ক্রাশিত এবং বিমোহিত ।
আবরন দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ,
– ওও , আমি এখন প্রোমোশন পেয়ে সাদা কাউয়্যার পদবি পেলাম । তা সবাই ক্রাশিত বলতে তো তার মধ্যে তুমিও আছো কি বলো ??
পূর্ণতা বলল ,
– হুহ , আমার এত কাউয়্যার উপর ক্রাশ খাওয়ার ইচ্ছা নাই ।
আবরন বলল ,
– ওকে ফাইন । এখন গান গাও ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি গান পারি না । আমার জায়গায় গানটা বরং আপনি গেয়ে দিন যদি কারো আপত্তি না থাকে ।
সবাই বলল ,
– না না , কোনো আপত্তি নেই ।
আবরন বলল ,
– ওকে , তাহলে আমিই গাইছি ।
পূর্ণতা চুপ করে রইল আবরনের গান শুনবে বলে ।
আবরন ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে গান গাইতে শুরু করলো ,
Shayad kabhi na keh saku mai tumko !!
Kahe bina samjh lo tum shayad !!
ওর গান শুনে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো । পূর্ণতার আবারো মনে হচ্ছে গানটা বুঝি আবরন ওকে উদ্দেশ্য করেই গাইছে । তাই আবার গান শোনায় মনোযোগ দিল । আবরন এবার পূর্ণতার দিকে তাকিয়েই গাইতে লাগল ,
Shayad mere khayal mei tum ek din …
Milo mujhe kahi pe gum shayad
Jo tum na hoo ….
Rahenge hum nhi …
Jo tum na hoo..
Rahenge …Hum nhi
Na chahiye kuch tum se jeyada
Tumse kam nhi …
…………….🎶🎶🎶🎶……………
……..🎵🎵🎵🎵……….
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ আবরন পূর্ণতাকে মাইক🔊🎤 নিয়ে কবে সত্যি সত্যি বলে দেবে যে ও পূর্ণতা কে ভালোবাসে ???? 😍😍
কেমন লাগলো আজকের পর্ব ??
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
ধন্যবাদ । ♥️’;(৳