ভালোবেসে মরেছি পর্ব-৬

1
2141

#পর্ব_৬
#ভালোবেসে_মরেছি🍂❣
writer: #Ashura_Akter_Anu
_____________________
মুখের বালিশটি সরিয়ে তিথি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মিহুর দিকে।বালিশটি দিয়ে মিহুর গায়ে আচ্ছামতো মারা শুরু করলো সে। যদিও মারগুলো লাগছে না, তাও তিথি ওমন করছে। কারন বালিশটি সোজা ওর নাকে লাগায় অনেকটা ব্যাথা পেয়েছে। আর বারবার শুধু হাঁচি হচ্ছে।

মিহু এবার তিথির হাত থেকে বালিশটা কেড়ে নিয়ে রাগী গলায় বলে,
-হ্যা রে, সাত-সকালে কি পেয়েছিশ?আমায় ঘুমোতে দিবি না নাকি?

-সাত সকাল তাইনা?ঘড়িতে দেখ কয়টা বাজে।
মিহু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ন’টা বাজে। ক্লাস এগারোটায় আজকে। তাই খুব আরাম করে ঘুমোচ্ছিল সে। আর তিথি এসে ওর ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিল। রাগে জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখে তিথির দিকে তাকিয়ে বলে,
-তোর কি চোখ কানা হয়ে গেছে?বাজে সকাল ন’টা আর তুই এসেছিস আমায় জাগাতে?

-ওহ তাই না?আচ্ছা তোর ফোন চেক কর তো।

-ফোন চেক করে কি হবে?(কপালে ভাজ পড়ে)

-কি আবার হবে?অর্নব স্যার কল দিয়েছিল ধরিস নি কেন?(কোমরে হাত রেখে বলল)

মিহুর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।

-এ্যা????

-এ্যা নয় হ্যা।তোর ফোন চেক কর।

তিথির কতা শুনে মিহু তার পোন চেক করতে যাবে কিন্তু পোন খুজে পায়না ওদিকে তিথি দেখলো মেঝেতে মিহুর ফোন ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে আছে।
মিহুর মাথায় পেছন থেকে হালকা একটা বারি মেরে তিথি বলে,

-ওই হারামী, এখানে নিজের ফোন ভেঙ্গে আবার কোথায় খুজছিস?

-ও আল্লাহ,মোবাইল ভাঙ্গলো কিভাবে?(বলেই বাচ্চাদের মতো করে কান্না শুরু করে দিল)

-হয়েছে হয়েছে,এতো ন্যাকামি করতে হবে না।নিজেই ভেঙে এখন নিজেই কান্না করছে,আজব মাইরি।

-তুই বেশি কথা বলিস না। হুহ(বলেই একটা ভেংচি কেটে দেয় মিহু)

-আচ্ছা শোন বসন্তের ইভেন্টটার সমস্ত আয়োজন শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্যার তোকে সহ আমাদের চারজনকে সকাল সকাল ভার্সিটি পৌঁছাতে বলেছে।

-কেন কেন?এত সকাল সকাল কি করতে যাবো রে?ইটিস পিটিস নাকি?(একটা দুষ্টু হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে)

-আরে ধুর,এসব দায়িত্ব পালন তো করতেি হবে তারওপর স্যারের কড়া নির্দেশ আমাদের একটা ক্লাসও মিস করা যাবে না। তাই সকাল সকাল সব কাজ শেষ করে ক্লাস এ্যাটেন্ড করতে হবে সকলকে।

-ওওওওও, বুঝলাম।

-কিচ্ছু বুঝিসনি।যা গিয়ে রেডি হ।

-ওহ হ্যা।আচ্ছা তুই দুই মিনিট ওয়েট কর আমি দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি কেমন?(দাত কেলিয়ে বলল মিহু)

তিথি মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।
__________________
একটা হোয়াইট লং কুর্তি, ব্লু জিন্স ও ব্লু কালারের ওরনা, সাথে গোল্ডেন কালারের ফিতার ঘড়ি। চুলগুলো বিনুনি করা।
কপালের সামনে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো খুব সুন্দরভবে হাটার তালে তালে উড়ছে। নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে হাটার গতি অনুসরন করছে মিহু। তিথি ওর হাত ধরে থাকায় উপরে না তাকিয়েও হাটতে পারছে সে। সামনে স্যারকে দাড়িয়ে থাকা দেখে মিহুর হাতটা ছেড়ে দেয় তিথি। মিহুর তো সেদিকে খেয়াল নেই। সে তার পায়ের দিকে তাকিয়ে হেটেই চলেছে। ওদিকে যে সামনে একজনের সাথে ধাক্কা খেতে চলেছে তা ওকে কে বলবে। বলতে বলতেই ধাক্কা খেল সামনে থাকা ব্যক্তিটির সাথে৷ মিহু পরে যেতে নিলেই ধরে নেয় সে৷ তিনি অন্য কেউ নন,আসলে সে যে অর্নব এটা তো জানা কথা তাইনা। আচ্ছা যাক গে এখন বলি,
মিহুকে ধরে ফেলে অর্নব। মিহুও নিজের হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে আছে অর্নবকে। একটুপর নিজের থেকে আালাদা করে মিহুর দু বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। চোখমুখ শক্ত করে মিহুর দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে অর্নব বলে ওঠে,

-মাথা নিচু করে হাটার কি দরকার? চোখে কাপড় বেধে হাটলেই তো পারো। যত্তসব।তোমার হেল্প লাগবে জন্য আজকের মতো সহ্য করলাম। নইলে…নাও গো ফ্রম হিয়ার।

কথাগুলো এত জোড়েই বলে যে মিহুর চোখ বেয়ে টুপ টাপ বৃষ্টি শুরু হয়। অর্নবের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায় গার্লস কমন রুমে।
মিহুর চোখে জল দেখে অর্নবের মনে কিছুটা খারাপ লাগলেও এই খারাপ লাগাটাকে মনের মাঝে ছাপ ফেলতে দেয়না সে। তাই ঘড়িটা একবার দেখে নিয়ে নিজের কাজের জন্য অন্যদিকে হাটা দেয় সে।
জামার ডান হাতের কাধের অংশটুকু অনেকটা ছিড়ে গেছে। কাঁধের ওই জায়গাটুকু লালও হয়ে গেছে কিছুটা।এটাই খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে মিহু,পাশে বসে ওকে ওর বেস্টুরা সান্তনা দিচ্ছে।
মিহু কাঁদতে কাঁদতে বলছে,

-এ কেমন টিচার রে?এভাবে আমায় কেউ কোনদিন বকে নি আর এই শালা স্যার আমায় এইভাবে ধুয়ে দিল?এ্যাএ্যাএ্যা….

বিপুল বলে,
-তোরও কি কম দোষ আছে নাকি?ওভাবে নিচে তাকিয়ে কেউ হাটে?

মিহু কিছুটা অপরাধী সুরে মুং গোমড়া করে বলল,
মিহুঃহুম তাও ঠিক। আচ্ছা চল এখন স্যারের কাছে যাই।

চৈতিঃহ্যা রে? ধমক খেয়ে মন ভরেনি? আবারও যেতে চাচ্ছিস স্যারের কাছে?

বিপুলঃতুই কি মনে করেছিস স্যার তোকে খুব ভালো ভাববে?

মিহুঃতোরা গেলে আয় আমি চললাম।

বলেই উঠে যায় মিহু। বাকিরা কোন উপায় না পেয়ে মিহুর পিছু পিছু চলে যায়।
____________________
অডিটোরিয়ামের মাঝখানে কোমরে দু হাত দিয়ে চারপাশে দেখছে মিহু। কোনকিছু সাজানো গোছানোর আগে সবকিছু পরখ করে নেওয়াটা ওর অভ্যাস। ইম্যাজিনেশন এর পাওয়ারটা নাকি অনেক বেশি, আর মিহু ওর কাজের আগে সবসময় এই ইম্যাজিনেশন অ্যাপ্লাই করে। এতে ওর কাজগুলো খুব গোছানো হয়। অডিটোরিয়ামের গ্যালারিতে বসে অর্ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। অর্নবের মনে মনে এটাই ভাবছে, এই মেয়েটা কেন সব বিষয়ে এত বেশি বেশি করে। এতটা চঞ্চল কেউ হতে পারে তা মিহুকে দেখলে বোঝা যায়৷ একবার ঘড়ি দেখছ একবার মিহুর দিকে তাকাচ্ছে। মিহু তার ওই একই ঢঙ্গে দাড়িয়ে আছে। এভাবে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে যখন প্রায় ক্লাস টাইম চলে এলো তখন অর্ণবের রাগ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল৷ এভাবে শুধু দাড়িয়ে থেকে মিহু কি পাচ্ছে সে যানেনা তবে মিহুকে এখন আচ্ছামতো মার দিলে অর্নবের গায়ের জ্বালা মিটতো। সে ভাবছে পাগল নাকি মেয়েটা?
·
হঠাৎ অর্নব স্টেজে উঠে মিহুকে টান দিয়ে নিজের একদম কাছে টেনে নেয়।

অর্নবের যখন রাগ অনেকটা বেড়ে যায় সে তখন কাঁপা কাঁপা সুরে কথা বলে। নিজের রাগকে অর্নব কখনো কখনো কন্ট্রোল করতে পারে না। এবং এরই মাঝে কোন কোন সময় ভুল করে বসে।
মিহু অর্নবের এতটা কাছাকাছি আসায় ভয় পেয়ে যায়। নিজের ভয়ের ছাপ মুখে প্রকাশ করে না সে।
অর্ণবঃতোমার জন্য আজকে এতটা টাইম খরচ করে এখানে বসে আছি। আর তুমি কিনা কাজ করা বাদ রেখে দারিয়ে দাড়িয়ে দেখছ। আসলে তোমার থেকে হেল্পের কথা বলাই উচিত হয়নি আমার।
রাগে কটমট করতে করতে বলল।
মিহুঃস্যার আপনি আমায় ভুল বুঝছন, আমি তো…(থামিয়ে দিয়ে)

অর্নবঃআর একটা কথাও নয়। এখন যা করার আমিই করবো। আমার কারও হেল্পের কেন প্রয়োজন নেই গট ইট?নাও গেট লস্ট।

নিজের থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল মিহুকে। মিহু খানিকটা মন খারাপ করলেও কিছু একটা ভেবে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল।

অর্নবের মনে হলো মিহুর এই মুচকি হাসির মাঝে এমন অনেক কথা আছে যা ও এই হাসওটা দিয়ে বলে গেল। তবে নিজের কাজ নিৈ টেনশন থাকায় এসব নিয়ে আর অতো মাথা ঘামালো না সে।

অর্নব ভাবলে আজ কোনমতেই এসব কাজ করা সম্ভব নয়। যা করার কাল সকালে করতে হবে আবার। এরপর সে অডিটোরিয়াম ছেড়ে চলে আসলো।
.
.
.
#চলবে____
.
.

★কমেন্টস?😒★
হ্যাপি রিডিং☺

1 COMMENT

Leave a Reply to Amir & Jannat Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here