ভুলের মাশুল পর্ব: ১৯ শেষ পর্ব

0
5119

গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ১৯/শেষ পর্ব
লেখক: হানিফ আহমেদ

অর্ণব: হানিফ একটা কথা জানিস?

কিছু ভুলে মানুষ হারায়,
কিছু ভুলে মানুষ জন্মায়,
কিছু ভুলে কাওকে কাঁদায়,
কিছু ভুলে কাওকে হাসায়,
কিছু ভুলে অভিমান জন্মায়,
কিছু ভুলে অভিমান ভাঙায়,
কিছু ভুল জন্ম দেয় শত্রুতা,
কিছু ভুল জন্ম দেয় বন্ধুত্বের।

(বিঃদ্রঃ কথা গুলোর ব্যাখ্যা চাইলে ইনশাআল্লাহ দিতে পারবো)

তুই তেমন করেছিস, তোর করা একটা ভুলের জন্য আজ মৌ মরতে বসেছে।
শুধু তোর ওই একটা ছোট্ট ভুল/মজার জন্যে।
কি দরকার ছিলো এমন করার?

হানিফ নীরবে চোখেত পানি ফেলছে, সত্যিই কি প্রয়োজন ছিলো এমন করার। যদি জানতো এর পরিণাম ভয়াবহ হবে।
কিন্তু কেউ কি ভবিষ্যৎ জানতে পারে আগে?

হানিফের চুপ থাকাটা অর্ণবের কাছে ভালো লাগছে না।
চলে যায় ওর কাছ থেকে।

ইশিতা: হানিফ চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

হানিফ শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে।
কি বলার আছে ওর।

ইশিতা: হানিফ বলছিনা কান্না থামাতে?
জানিস তো মানুষ মাত্রই ভুল এর কারিগর।
মানুষ যদি ভুল না করে তাহলে সঠিক কি তার মূল্য বুঝা যায় না।
হয়তো তোর ভাগ্যে ছিলো এসব।
কাঁদিস না রে।

এখনো চুপ করে আছে হানিফ।

~কারো সমাপ্তি ছোট্ট ভুলে,
অন্যের সূচনা আবার সেখান থেকে।~

রাত ১২টা বেজে ২২ মিনিট ডক্টর ক্লান্তো শরীর নিয়ে বের হলো।
দৌড়ে যায় সবাই ডক্টরের কাছে।
ডক্টর এর ক্লান্তি শরীর আর মন খারাপের আভাসটা অর্ণবের কাছে কেমন জানি লাগলো।
হানিফ এসে মৌ এর মা’য়ের কাছে দাঁড়ালো।

অর্ণব: মৌ’র খবর কি এখন ডক্টর?
ডক্টর: আমরা অনেক চেষ্টা করেছি।
কিন্তু,
অর্ণব: কিন্তু কি ডক্টর?
ডক্টর: আপনাদের রোগির আঘাত গুলো অনেক, আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও রোগিকে বাঁচাতে পারি নি, সরি!
হয়তো আল্লাহ্‌ সহায় ছিলেন না।
ডক্টর এই কথা বলে চলে যায়।

মৌ এর মা ডক্টর এর কথাটা শুনেই চিৎকার দিয়ে মাটিতে পরে যেতে নিলে দিপু ধরে নেয়।
মৌ’র মা অজ্ঞান হয়ে যান।
এই দিকে মৌ মারা গেছে খবরটা শুনেই হানিফ চিৎকার দিয়ে মাটিতে পরে যায় অর্ণব দৌড়ে গিয়ে হানিফকে ধরে কিন্তু এর আগেই হানিফ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ওদের দু’জনকে দুইটা কেবিনে নেওয়া হয়।

হসপিটালে যেন এক কান্নার হাহাজারি পরেছে, সবার প্রিয় মুখ আর এই পৃথিবীতে নেই।
ওদের কান্নায় ভেঙে পরেছে হসপিটালে থাকা আরো শতশত মানুষের চোখের পানি।

অর্ণব চেয়ে আছে মৌ এর ঘুমন্ত চেহারার দিকে, কালকেও হৈচৈ ছিলো যার চেহারায়। আজ সে গভীর ঘুমে মগ্ন।
অর্ণব হাজারো চেষ্টা করে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না

তার কলিজাটা যেন কেউ ছিঁড়ে নিয়েছে।
অর্ণব শুধু চেয়ে আছে মৌ’এর তেতলে যাওয়া মুখের দিকে।

মৌ’র বাবা পাথর হয়ে বসে আছেন মৌ’র লাশের পাশে, কান্না করছেন আর মৌ’এর ওই রক্ত মাখা মুখে চুমু একে দিচ্ছেন।

সত্যিই আজ হয়তো মৌ’র বন্ধুত্ব, ফ্যামিলির মায়া, ভালোবাসা সব সার্থক হলো, তার অনুপস্থিতি তে কতশত মানুষের কান্না, হয়তো মৌ হাসছে এসব দেখে,

আজকের খুশির আমেজে ভরপুর হতো।
কিন্তু সব পালটে কান্নার সাগরে সব পরিণত হয়েছে।
যে সাগরের একটা নৌকা ডুবে যাওয়ায় সবার এতো হাহাজারি।

ভোর ৫টার সময় মৌ’ এর লাশ ওদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মৌ’র মায়ের জ্ঞান আসলেও, হানিফের এখনো জ্ঞান আসেনি।
সবাই মৌ’ কে নিয়ে ভেস্ত।
অর্ণবের আর হানিফের মা বাবা, বুঝাচ্ছে মৌর মা আর বাবা কে কান্না না করতে।
কিন্তু ওরা কি কান্না থামাবে।
সন্তান হারানোর ব্যথা প্রতিটা মা বাবাকেই কান্না করায় আজীবন।
আর মৌ তো ওদের একমাত্র সন্তান ছিলো।

বিকেল ৩ টা বাজে।
অর্ণব হানিফের জ্ঞান ফিরার জন্য অপেক্ষা করেছে এতক্ষণ।
কিন্তু ওর জ্ঞান ফিরেনি।

সবাই মৌ’কে শেষ দেখা দেখে যাচ্ছে।
মৌ’র মা চিৎকার করে কান্না করছেন আর বলছেন আমার মৌকে তোমরা নিয়ে যেও না। ও ঘুমিয়েছে একটু পরেই সে উঠে যাবে।
মৌ’এর মায়ের কান্নায় আর এসব কথায় বাসায় উপস্থিত সবার চোখে পানি।
অর্ণি আর ইশিতা মৌ’র মাকে উনার রুমে নিয়ে যায়।

মৌ’র লাশ তার বাবা আর ফ্রেন্ডসদের কাদে।
হয়তো এটাই ছেয়েছিলো মৌ।
পেয়েছিলো অর্ণবদের মতো বন্ধু নামক কয়েকট ভাই। আর,,?

মৌ’কে শেষবারের মতো ওর বাবা দেখে নিলো। কান্না ভরা চোখে চেয়ে আছে মৌ এর মায়াবী চেহারার দিকে, এই চেহারাটা যে আর কখনো উনাকে বাবা বলে ডাকবে না। চাইবে না আর কোনো কিছু। করবে না আর কোনো আবদার।
মেয়েদের লাশ দেখা নাকি ছেলেদের জন্য ঠিক না। তাই অর্ণবরা আর শেষ দেখা দেখতে পারে নি মৌ’কে।
অর্ণব মৌ এর জানাজা পড়ালো।
বারবার জানাজা পড়ানোর সময় ভেঙে আসছিলো গলা। চোখে আসছিলো ঝর্ণার গতিভেগে বেয়ে আসা পানি।

মৌকে ওদের বাসার এক পাশে মাটি দেওয়া হয়।

সত্যিই কেউ কখনো ভাবেনি। এভাবে মৌ সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে।

অর্ণব বসে আছে মৌ এর রুমে, খুব সুন্দর করে ওর রুমটা সাজানো গুছানো।
কিন্তু মানুষটাই তো নেই।

অর্ণব মৌ এর সাথে করা খুনসুটি এর কথা ভাবছে আর নীরবে চোখের পানি ফেলছে।

ইশিতা: অর্ণব এভাবে কান্না করলে ভেঙে পড়বে তো?
অর্ণব: আচ্ছা বলতো আমার সাথেই কেন এসব হয়, তোকে এতোদিনে খুঁজে পেলাম।
কিন্তু দেখ দিব্বি আরেকজনকে হারিয়ে ফেললাম
এটা কি নিয়তি নাকি অন্য কিছু।
ইশিতা: কান্না করবে না।
তোমার চেয়ে আমার বেশি কষ্ট হচ্ছে।
এতোদিন পর দেখা হলো।কিন্তু মৌকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারলাম না।
আমার নিজের বোনের মতোই ভাবতাম।
অর্ণব: মৌ তো চলে গেলো আমাদের কাঁদিয়ে।
কিন্তু হানিফ, ওর তো এখনো জ্ঞান ফিরে নি।
ও যদি মৌ’র মতো চলে যায়। (কান্না করছে পিচ্চিদের মতো)

ইশিতা চলে যায়।
ইশিতা: আপনি অর্ণি তাই তো?
অর্ণি: হুম, আমি তোমায় চিনি ইশিতা।
ইশিতা: পরে কথা বলবো, যাও অর্ণবকে কান্না করতে মানা করো
শান্তনা দাও।
অর্ণি: হুম।

অর্ণি: অর্ণব,
অর্ণব উপরে তাকিয়ে চোখ মুছে,
অর্ণব: বলো
অর্ণি: কান্না করে কি হবে, এতে মৌ’র আত্মা আরো কষ্ট পাবে।
ওর জন্য দোয়া করো।
আল্লাহ যেনো ওরে জান্নাত দান করেন।
আর মৌ এর মা বাবা কে শান্তনা দাও।
অর্ণব কিছুই বললো না, শুধু একবার তাকিয়ে।
বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।

অর্ণি: কি করবে এখন?
অর্ণব: হসপিটাল যাবো

অর্ণি: রাত হয়ে গেলো ত।
অর্ণব: তুমি থাকো ওদের পাশে, আমি হানিফের কাছে যাচ্ছি।
রাতে আর আসবো না।
অর্ণি: হুম।

অর্ণব: ডক্টর হানিফের কি জ্ঞান এসেছে?
ডক্টর: না, আমরা অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু জ্ঞান আসছে না উনার।
অর্ণব: যেভাবেই হোক আপনি ওর জ্ঞান ফিরিয়ে দিন,
ডক্টর: কান্না করবে না, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
বাকিটা আল্লাহ এর হাতে।
অর্ণব: আমি কি ভিতরে যেতে পারি?
ডক্টর: হুম,

কেবিনের বাহিরে হানিফের মাবাবা আর ওর আপু বসে আছে।
অর্ণব সব কিছু ওর আপুকে বলে।
আপু: সত্যিই হানিফ অনেক বড় ভুল করেছে, যার মাশুল মৌ কে পেতে হয়েছে।
সত্যিই ক্ষমার অযোগ্য।
অর্ণব: কান্না করবে না আপু, তুমি আম্মু আব্বুকে বুঝাও।
আমি ভিতরে যাচ্ছি।

অর্ণব ভিতরে যায়।
হানিফ শুয়ে আছে কতো নিষ্পাপ লাগছে। মুখে, শরীরে এখনো মৌ এর রক্ত লেগে আছে।
মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।
কতো সুন্দর ঘুমিয়ে আছে হানিফ।

অর্ণবের চোখ বেয়ে পানি পরছে।
আমি থাকতে তোর কোনো ক্ষতি হতে দেবো না অর্ণব।
এসব হাজারো কথা ভাবছে আর কান্না করছে অর্ণব,
মৌ এর পরেই অর্ণবের পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়েছে, অর্ণব এর একটা সাহস ছিলো হানিফ, সত্যিই কি থেকে কি হয়ে গেলো।
একজনকে হারিয়েছি আর কাওকে হারাতে চাই না।।

মৌ মরেছে আজ ১১ দিন।
সবার জীবন থেকে সুখ নামক শব্দটা পালিয়ে গেছে।
অর্ণব সহ ওর সব ফ্রেন্ড মনমরা হয়ে থাকে।
হানিফের এই ১১দিনে মাত্র ৪বার জ্ঞান ফিরেছে।
তাও ক্ষণস্থায়ী সেটা।
হানিফকে খাবার লাইনের মাধযমেই দেওয়া হচ্ছে।
সব যেনো শেষ হয়ে গেলো।

অর্ণব সহ সবাই বসে আছে মৌ এর বাসায়।
এতো বড় বাসায় মাত্র দুজন, খুব কষ্টই হচ্ছে হয়তো মা বাবার।

অর্ণব: আন্টি একটা কথা বলবো?
মৌ’র মা: বলো বাবা,
অর্ণব: মৌ কে তো হারালাম, এখন হানিফকেও হারানোর ভয়।
ওরে ক্ষমা করে দেওয়া যায় কি?
মৌ’র মা: আমি ওরে ক্ষমা করেই দিয়েছি। কিছু ভুলের জন্য ওরা দু’জনার এমন অবস্থা হলো।
অর্ণব: হুম,
কিছু ভুল অনিচ্ছাকৃত হয়ে যায়। যার মাশুল একজন না শতশত মানুষকে কাঁদায়।

মৌ’র মা চোখ দুটু মুছে, ঝাপসা ছায়ায় চশমার আলোয়।
আন্টি: বাবা তোমরা বসো আমি চা করে নিয়ে আসি।
অর্ণব: না আন্টি আপনি বসেন।
অর্ণি যাও সবার জন্য চা করে আনো।
অর্ণি যায়।
অর্ণব: আন্টি একটা আবদার করবো রাখবেন?
মৌ’র মা: বলো বাবা আমি যেকোনো আবদার রাখবো।

অর্ণব: মৌ তো নাই আমাদের মাঝে, কিন্তু ইশিতা আছে, যার স্বামী আর শাশুড়ি ছাড়া আর কেউ নাই। প্রিয়জন থাকতে আমরাই আছি।
আমি চাই ইশিতা আপনাদের সাথেই থাকবে, তবে ইশিতা নামে না, মৌ নামে ও আপনাদের কাছে থাকবে।
(অর্ণব ইশিতাকে আগেই ফোন করে এসব বলেছে, ইশিতাও খুশি।)
মৌ’র মা: ইশিতা মা কি থাকবে আমাদের সাথে।
অর্ণব: হুম থাকবে।
ইশিতা থাকবি তো,
ইশিতা: হুম থাকবো,
আমি মৌ এর কথা মনেই করতে দেবো না আম্মু আব্বু কে।

হয়তো ওরা ইশিতাকে পেয়ে কিছুটাও শান্তি পাবে, ইশিতাও হয়তো কিছুটা ভালো থাকবে, মা বাবা পেয়ে।
দুনিয়ার নিয়ম, খুব অদ্ভুত, কিছুই বুঝা যায় না কি হবে বা কি হবে না।
কেউ কিছু হারিয়ে কাঁদে আবার কেউ নতুন কিছু পেয়ে কাঁদে।

১৩ দিনের মাথায় হানিফ সুস্থ হয়।
এতো বড় ধাক্কা খেয়েছিলো যে, এমন অবস্থা হয়েছে।
শেষ দেখাটাও দেখতে পারলো না মৌ কে।
সামান্য #ভুলের মাশুল এমন হবে হানিফের তা অজানা ছিলো।

অর্ণব: হানিফ মন খারাপ নাকি?
হানিফ: না’রে।
শুধু ভাবছি আমার জন্য একটা হাসিখুশি প্রাণ নিভে গেলো।
অর্ণব: এসব ভুলার চেষ্টা কর।
আজ ১মাস হলো মৌ আমাদের মাঝে নাই।
কিন্তু তুই তো আছিস, ইশিতা আছে, বাকি ফ্রেন্ডস গুলোও আছে, আমি মৌ কে সবার মধ্যে দেখতে পাই।

হানিফ: তুই সত্যিই অনেক ভালোরে।
সেদিন যদি থাপ্পড় না দিয়ে আমায় গুলিও করতি সত্যি আমি একটু কষ্ট পেতাম না।
অর্ণব: আবার থাপ্পড় দেবো যদি এসব ভেবে মন খারাপ করিস।
মৌ এর মা বাবাও কষ্ট গুলো নিজের মধ্যে রেখে ইশিতাকে আপন করে নিয়েছে।
হানিফ: খুব ভালোবাসতাম যে, ভালোবাসার কথাটা মুখ ফুটে বলতেও পারিনি।
অর্ণব: আবার,
শুন।
কিছু মজা আছে মানুষ সত্যি সত্যি ভেবে নেয়,
মজাটা যে করে সে ভাবে না কখনো মজার পরিণতি কি হবে।
তুইও তেমন করেছিস।
হানিফ: হুম,
অর্ণব: আয় বাহিরে যাবি,
হানিফ: না রে আর বাহিরে যেতে মন চায় না।
অর্ণব: আয় তো, আজ অনেক দিন হলো বাহিরে যাস না, আয় আয়।

হানিফ আর অর্ণব আজ কিছুটা সময় নিজেদের করে নিয়েছে।
অর্ণব হানিফকে চায় সব সময় হাসি খুশি রাখতে।
কারণ সে জানে, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা।
যা তলোয়ার এর আঘাত এর চেয়েও বেশি কষ্ট দায়ক।

অর্ণব হানিফকে অনেকটাই আগের মতো করে এনেছে।
হানিফ তার কষ্ট গুলো নিজের মধ্যে রেখে দিয়েছে। চায় না প্রকাশ করতে।

আজ আকাশটা মেঘলা, হালকা বৃষ্টি হচ্ছে।
রাতটাও যেনো আজকের কেমন লাগছে।
অর্ণি আজ সেজেছে, খুব করে সেজেছে।
আজ সে অর্ণবের কাছে অনেক কিছু চাইবে।
নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কথা গুলো আজ অর্ণবকে বলবে।

রাত ৯টা,
বাহিরে ঝুম ঝুম বৃষ্টি পড়ছে।
মাঝেমধ্যে আকাশটাও গর্জে উঠছে।
অর্ণি বসে আছে অর্ণবের অপেক্ষায়।
অর্ণব কি একটা কাজে বাহিরে গিয়েছে।
অর্ণব রাত ১০টায় বাসায় আসে।
অর্ণির অপেক্ষার অবসান ঘটে।
বাহিরে এখনো ঝুম বৃষ্টি দিচ্ছে, মাঝারী হালকা বাতাসও বইছে। সব মিলিয়ে আজকের রাতটা অর্ণির কাছে এক স্বপ্নের রাত মনে হচ্ছে।

অর্ণব রুমে বসে বসে ফোন টিপছে অর্ণিও পাশে বসা।

অর্ণি: এই চলো ছাদে যাই?
অর্ণব অবাক হয়ে,
অর্ণব: এতো রাতে ছাদে, তাও এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যে। আর এতো সেজেছো কেন?
অর্ণি: কচু এতো রাত, তোমায় যেটা বলছি সেটা করো।
সেজেছি আমার ইচ্ছায়। আমার শরীর আমার মুখ, আমি কি করবো না করবো তোমাকে বলতে হবে? (রেগে বললো)
অর্ণব: ভালোভাবে বললেই তো পারো, আমি না করছি না কি ছাদে যাবো না। কিন্তু বৃষ্টি যে।
অর্ণি: উঁহু, আজ তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।
অর্ণব: আমার ঠাণ্ডা লাগছে।
অর্ণি: ছাদ থেকে রুমে আসার পর আবার গরম হয়ে যাবে।
এখন চলো।
অর্ণব আর কিছু না বলে অর্ণির সাথে ছাদে যাচ্ছে।
কি চাচ্ছে মেয়েটা? রাত ১১টা হয়ে যাচ্ছে তাও আবার এমন আবদার। এতো সাজ, আল্লাহ বাহিরে থাকা ভূত গুলো যদি ওরে ধরে।
আমি তো দৌড়ে চলে আসবো।

অর্ণব আর অর্ণি ছাদে যায়।
ঝিম ধরা বাতাসে, খুব ভালোই লাগছে অর্ণবের,
অর্ণি গিয়েই বৃষ্টিতে হাত পা নাচতে লাগলো।
অনেক ভালো লাগছে। ওদের পেয়ে বৃষ্টি যেন খুশি হলো। চোখে থাকা সব পানি এই সুন্দর ভবে বর্ষণ করতে শুরু করলো।

অর্ণি:
আকাশ কেঁদে কেঁদে পানি ঝরাচ্ছে এই ভবে।
আমরা দুজন ভিজতেছি একে ওপরের চোখে চোখ রেখে।
কিছুটা অভিমানে আবার অনেকটা ভালোবেসে।

অর্ণব: লোমান্তিক বউ আমার এবার যায় ৫ মিনিট হয়ে গেলো তো।
অর্ণি: না, আজ।সারা রাত ভিজবো।
অর্ণব: পাগলী একটা।

অর্ণি: চোখ বন্ধ করো,
অর্ণব: কেন কেন কেন? চোখ বন্ধ করবো কেন?
অর্ণি: তুমি চোখ বন্ধ করবে, আর আমি তোমায় ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো, ভালো হবে তাই না?
[রেগে বললো]
অর্ণব: ভালোবেসে বললেই তো চোখ বন্ধ করে নেই। এতো ভয় দেখাও কেন? আমার বুঝি ভয় করে না? (বাচ্চামো সুরে)
অর্ণি: ওলে ওলে আমার বাচ্চা বর। এবার চোখ অফ করো ত?

অর্ণব অর্ণির কথা মতো চোখ অফ করে,
১মিনিট হয়ে যায় কিন্তু অর্ণির কোনো রেসপন্স নাই।
অর্ণব: অর্ণি চোখ খুলবো কি?
অর্ণি: হুম খুলো,
অর্ণব মিটিমিটি চোখ দুটু খুলে অর্ণব।

অর্ণি হাটু ঘেরে বসে আছে অর্ণবের ঠিক এক হাত দূরে।
বৃষ্টি পরছে,
আকাশের আবছা আলো আর ছাদে থাকা লাইটের আলোয় একে ওপরকে খুব সহজেই দেখতে পারছে।

অর্ণির হাতে সদ্য ফুটা বেলিফুল,
এমনিতেই ছাদ বেলিফুলের ঘ্রাণে শুভাশিতো হয়ে আছে।
অর্ণব কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্ণি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বললো।

অর্ণি:
প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পরে যাই।
আমার ফ্রেন্ডসরা বলতো আমি নাকি খারাপ মেয়ে, তাই কোনো ছেলের প্রেমে পরেছি।
সত্যিই খুব খারাপ সেটা তোমার অজানা না?
অর্ণব জানো আমার ভালোবাসাটা সত্য। কখনো ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি ছিলো না।
অর্ণব আমি হয়তো ভুল করেছি জেনেই বা না জেনেই।
কিন্তু সত্যি আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত।
অর্ণব আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি।
,
আমার করা প্রতিটা ভুলের শাস্তি দেওয়ার জন্য নাও না আপন করে প্রিয়।
মাশুল হিসেবে দিয়ো তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া।
আমার চোখের কালো কাজলে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ো।
দু’চোখের ঠিক মধ্যে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ো।
নরম মাংসের সেই নরম গালে তোমার হাতের পরশ এঁকে দিয়ো।
একটু ভালোবাসা দিও প্রিয়।
তোমার শহরে একটা ছোট্ট ঘর বাঁধতে দিবা, আমি সেখানে আমার প্রেম রাখবো।

ভালোবাসি অর্ণব, অনেক ভালোবাসি, একটু ঠাঁই দেও তোমার ওই অন্ধকার হৃদয় নামক ঘরে।

অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি অর্ণব।

অর্ণব অর্ণিকে কাদ ধরে তুললু।
অর্ণবের চোখে পানি।

অর্ণব: তোমায় আমি অনেক আগেই ভালোবেসে ফেলছি।
কিন্তু ভয়ে বলতে পারছিলাম না। আমিও সত্যিই তোমায় অনেক ভালোবাসি।
অর্ণি অর্ণবকে জড়িয়ে ধরলো।
কান্না করছে কিন্তু এটা কোনো কষ্টের কান্না না, সুখের কান্না।
অর্ণি আজ এক পশলা বৃষ্টি পেয়েছে। অনেক অপেক্ষার পর সে সুখের বৃষ্টি ছুঁতে পেরেছে।

অর্ণব: যদিও আমি তোমায় কোনো ভুলে পেয়েছি। ভুলটাও হয়তো ছিলো তোমার ভাগ্যে, এভাবেই হয়তো ছিলো আমাদের মিলন হওয়ার।
অর্ণি: কিছু কিছু ভুল মানুষকে সুখী করে।
আবার কিছু কিছু কিছু ভুল মানুষকে সারাজীবন কাঁদায়।
ভুলের মাশুল হিসেবে তুমি আমায় বিয়ে করেছিলে। এটাই আমার কাছে সব চেয়ে সুখের মুহূর্ত।
অর্ণব: আসো অনেক রাত হয়েছে। রুমে যাই।
অর্ণি: উঁহু আরেকটু।
অর্ণব: এভাবেই কি জড়িয়ে থাকবে।
অর্ণি: উঁহু।
অর্ণব তোমায় কখনো বৃষ্টি ছুঁতে দেবো না।
রোধে কখনো হাটতে দেবো না।
এই শাড়ির আচল দিয়ে ঢেকে রাখবো তোমায় আজীবন।
অর্ণব হু হু করে হেসে দেয়।
অর্ণি রেগে হাসছো কেন?

অর্ণব: ১ঘন্টা ধরে বৃষ্টিতে ভিজাচ্ছো আর বলছো আমায় বৃষ্টি ছুঁতে দিবে না।
অর্ণি: হি হি হি ভালো করছি।

অর্ণব আর অর্ণি রুমে যায়।
ইটে পাথরে ঘেরা এই শহরটা এখন নীরব। কিছু মানুষ জেগে আছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দুনিয়াতে আনতে।

অর্ণি আর অর্ণব রুমে এসে দুজন গোসল করে নেয়।
দুজন একসাথেই গোসল করেছে। কিছুটা রোমান্টিক মুহূর্ত কাটালো দুজন মিলে।

অর্ণি কান্না করছে গোসল থেকে এসে।
অর্ণব কান্না করছো কেন
প্রশ্ন করলো।

অর্ণি: মৌ এর কথা আজ বেশি মনে পরছে।
জানো মৌ বিয়ের দিন বলেছিলো।
অর্ণি কষ্ট নামক শব্দটা যেদিন শেষ হয়ে যাবে, আর যখন সুখ নামক শব্দটা আসবে,
তখন প্রথম আমার নামটাই মনে আসবে অর্ণি।

সত্যিই অর্ণব আজ মৌ এর কথা বেশি মনে পরছে অথচ ওরে ধন্যবাদ দেওয়ার সময়টাও আজ নেই।

অর্ণব: কান্না করবে না, আমাদের কপালটাই এমন।
অনেককেই হারিয়ে ফেলছি আমরা, শুধু কষ্ট হচ্ছে না মৌ এর জন্য, প্রতিটা রাত এখনো কান্নায় কাটে আমার।

অর্ণি: এই সুখের দুনে, তার দেখা নাই।
যে কিনা আমাদের দুজনকে এক করলো।
অর্ণব: হুম।

কিছুটা সময় নীরবতা।

অর্ণব: আমি কি বাবা হওয়ার স্বপ্ন এখন দেখতে পারি।
অর্ণি: তোমার প্রোপার্টি, তোমার ইচ্ছা।

অর্ণব আর কিছু না বলে অর্ণির ওই চার আঙুলের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে, মিশে যায় দুজন এক পবিত্র ভালোবাসার সাগড়ে।

আজ দুজনের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।
আবার কারো ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যায়।

হানিফ সারাক্ষণ ঘরেই থাকে।
শুধু ছোট্ট একটা ভুল করেছিলো। যার মাশুল পেয়েছে সে, মৌ তো ভুল করেছিলো, যদি পিছন ফিরে তাকাতো, তাহলে হয়তো ওরাও অর্ণব অর্ণির মতো পবিত্র ভালোবাসায় মগ্ন থাকতো।
কিন্তু প্রকৃতি কি সব ভালোবাসা জয় করতে দেয়।
কিছু ভালোভাসা প্রকৃতি কেড়ে নেয়।
আবার কিছু ভালোবাসা প্রকৃতি পেয়ে দেয়।

কেউ পূর্ণতায় সুখী, আবার কেউ অপূর্ণতায় সুখী। সব প্রকৃতির কাজ। আবার কিছু নিজ থেকেই হয়ে যায়।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,

(আমাদের জীবনে ছোট বড় অনেক ভুল করে থাকি।
কিছু ভুল ইচ্ছাকৃত আবার কিছু ভুল অনিচ্ছাকৃত।
কখনো কখনো মজার ছলে অনেক বড় ভুল করি যা আমাদের কাছে খুব সামান্য মনে হয়।
একটা উদাহরণ দেই।

এক মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, কিন্তু মেয়েটি বিয়ের আগের দিন রাত মেয়েটি মজার ছলে নিজের মাথার চুল কেটে দেয় সব।
আচ্ছা এইটা মেয়েটার কাছে মজাই।
কিন্তু আশেপাশে থাকা সবার কাছেই এটা অনেক বড় ভুল।


আমরা অনেক মজা করি অনেকের সাথে।
এই মজা থেকেই অনেক শত্রু জন্ম নেয়)

{গল্পের সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা।
আমার আনাড়ি হাতের লেখা গল্প যারা পড়েছেন সবাইকে হৃদয়ের গভীর গভীর থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা।

লেখার দুনিয়ায় আমি নতুন এক হাত।
জানি না গল্পের নামের সাথে কতো টুকু মিল রাখতে পেরেছি।

আমার এই লেখা গল্পটা প্রায় অনেক আপুদের জীবনের সাথে মিলে গেছে। কিছুটা হলেও ভালো লাগা কাজ করছে আমার মনে।
অনেক আপুই তাদের কষ্টের কথা শেয়ার করেছে আমার সাথে।
যারা এমন ছোট ছোট ভুল করেছে, যার মাশুল অনেক বড় দিয়েছে।

গল্পের ভুল গুলো ক্ষমা করে দিবেন।
গল্পটা ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য আবার সবাইকে অনেক ভালোবাসা।)

খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের মাঝে নতুন গল্প নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।

ভালো থাকবেন।
ঘরেই থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here