ভোরের_আলো পর্ব-১০

0
967

#ভোরের_আলো
পর্ব-১০

আশফাকের বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্পিতা। মুক্তা আছে ওর সাথে। কলিংবেল বাটন প্রেস করবে কি করবে না সেটা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে।
– কি আশ্চর্য! তুই কি হবে না হবে সেসব না ভেবেই ধুম করে উনার বাসায় চলে এলি আর এখন ঢুকতে ভয় পাচ্ছিস?
– আমি ভয় পাচ্ছি না।
– তাহলে কলিংবেল প্রেস কর।

মনে মনে তুমুল ভয় পাচ্ছে অর্পিতা। কিন্তু মুখে কোনোভাবেই প্রকাশ করা যাবে না। জোরে নিঃশ্বাস নিলো সে। কলিংবেল বাজাতে যাবে ঠি সে মূহূর্ত্বে বাসার দরজা খুললো রিমন। উপস্থিত তিনজনই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। কয়েক সেকেন্ড পর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসির রেখা টেনে মুখ খুললো রিমন।

– আপনি এখানে?
রিমনের কথা বলার ভঙ্গিতে অর্পিতার বুঝতে বাকি রইলো না সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা তাকে চিনে।

– আমি অর্পিতা। আশফাকের পরিচিত।
– আমি আপনাকে চিনি। আপনি ভাইয়ার কেমন পরিচিত সেটা আমি জানি।
– উনি কি বাসায় আছেন?
– না ভাইয়া তো বাসায় নেই। বেইলি রোডের দিকে গিয়েছে হয়তো৷ আপনি প্লিজ ঘরে এসে বসুন।

একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে মুক্তা আর অর্পিতা। ভিতরে যাবে কি যাবে না সে ব্যাপারে দুজনের মনের মধ্যে খোঁচাখুঁচি চলছে। দুজনের মুখ দেখে রিমন বুঝে নিয়েছে কি চলছে ওদের মনে।

– আপনারা ভিতরে এসে বসুন৷ আমি ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি।
– না,,, ইয়ে,,, আমরা অন্য আরেকদিন আসবো।
– ভাইয়া রাগ করবে এভাবে আপনাকে দরজা থেকে বিদায় দিয়েছি শুনলে। আপনারা একটু ওয়েট করুন। ভাইয়ার আসতে সময় লাগবে না।
আশফাকের সাথে কথা বলার আগ পর্যন্ত শান্তি মিলবে না অর্পিতার। তাই সিদ্ধান্ত নিলো এই বাসায় অপেক্ষা করবে কিছুক্ষণ আশফাকের জন্য। অর্পিতা ইশারা দিলো ভেতরে যাওয়ার জন্য।
বাসার ড্রইংরুমে বসে আছে ওরা দুজন। রিমন কিচেনে হুমায়ুনকে ডেকে নিয়ে বললো নাস্তা রেডি করার জন্য। আশপাশে চোখ বুলিয়ে ড্রইংরুমটা দেখছে ওরা দুইবোন।

– ভাইয়াকে কল করেছি। ও রিসিভ করেনি। বোধহয় ড্রাইভ করছে। পাঁচ মিনিট পর আবার ট্রাই করবো।

অর্পিতার অপরদিকের সোফাটাতে এসে বসলো রিমন।

– আপনি আশফাকের কি হোন?
– আমি ওর ছোটভাই।
– ওহ্ আচ্ছা। আপনি কি রিমন?
– হ্যাঁ। আমার নামটা কি ভাইয়ার কাছে শুনেছেন?
– হ্যাঁ। একবার বলেছিলো আপনার কথা। তো কি করেন আপনি?
– আমি ইভেন্ট প্ল্যানার। উৎসব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম শুনেছেন?
– হ্যাঁ শুনেছি।
– ওটা আমার।
– ঐটা আপনার!
– হ্যাঁ।
– অনেক ভালো কাজ করেন আপনারা। আমরা তো ভাবছিলাম মুক্তার বিয়েতে আপনাদেরকে দায়িত্ব দিবো। ওর হবু বরের খুব ইচ্ছা আপনাদেরকে দিয়ে কাজ করানোর।
– ইনি কি মুক্তা?
– হ্যাঁ, ও মুক্তা।
– কবে বিয়ে?
– দেরী আছে৷ গ্র্যাজুয়েশনের পর।
– হা হা হা,,,, এখনই সমস্ত প্ল্যানিং সেড়ে নিচ্ছেন?
– হ্যাঁ। আম্মু তো অলরেডি ওর বিয়ের জুয়েলারী বানিয়েও ফেলেছে।
– আমার বিয়ে দেরী তো কি হয়েছে? সামনে তো ভাইয়ার বিয়ে। ভাইয়ার বিয়ের দায়িত্বটাও নাহয় আপনাকেই দিবো।
– সিউর। আমি খুব খুশি হবো। নিজের মানুষদের কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। ঠান্ডা মাথায় একদম নিজের পছন্দ মতো কাজ করতে পারি। বাহিরের ক্লাইন্টদের সাথে কাজ করতে গেলে হাজারো সমস্যা৷ আমি বলি একটা উনারা বলে আরেকটা। ঝামেলা পোহাতে হয় খুব।

রান্নাঘর থেকে হুমায়ুন ডাকলো রিমনকে। রিমন উঠে কিচেনের দিকে গেলো। অর্পিতা সোফা ছেড়ে বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। হাঁটতে হাঁটতে একটা রুমের সামনে যেয়ে পা থমকে গেলো অর্পিতার। ভিতর থেকে চাপা কন্ঠের কথা ভেসে আসছে।
– মেয়েটা তোমার বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে। আর তুমি বলছো আসবে না। এটা কেমন অসভ্যতা? আমি ওকে এখন কি বলবো? আমি অলরেডি ওকে বলে দিয়েছি তুমি বেইলিরোড। দেখো ভাইয়া, বেইলিরোড থেকে বাসা, আসতে সর্বোচ্চ দশ মিনিট লাগবে তোমার। তুমি বাসায় আসো।
-……………..
-সমস্যা কি তোমার? কি এমন করে ফেলেছে মেয়েটা যে তুমি ওর চেহারা দেখতে চাচ্ছো না? বাসায় আসো প্লিজ।

ওপাশ থেকে আশফাক কি বলেছে তা শুনেনি অর্পিতা। তবে রিমনের উত্তরে অর্পিতা বুঝে নিয়েছে আশফাক ওপাশ থেকে কু বলেছে৷ চোখের পানি এই মূহুর্তে আর বাঁধ মানছে না৷ দুগাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। অর্পিতা ঝড়ের গতিতে মুক্তার হাত টানতে টানতে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে।

– কি হয়েছে বলবি তো? রিমন ভাইয়া কিছু বলেছে?
– বারবার এক প্রশ্ন করছিস কেনো?
– কারন তুই উত্তর দিচ্ছিস না।
– রিকশায় উঠে বলছি। রিকশা ঠিক কর।

আশফাকের সাথে তর্ক শেষে ড্রইংরুমে এসে দেখলো অর্পিতা মুক্তা কেউই নেই। চলে গেছে। হুমায়ুন কে জিজ্ঞেস করতেই হুমায়ুন বললো

– আমি নাস্তা দিতে যামু এমন সময় দেখি আরেকটা মাইয়্যা যে আইছিলো তার হাত টানতে টানতে বাসা থেইকা বের হয়া যাইতাসে। মাইয়্যাডা বারবার জিগাইসে চইলা যাইতে চাইতাসে কেন। লম্বা মাইয়্যাডা কোন উত্তর দেয়নাই।
– ও কি এদিকটাতে এসেছিলো?
– হ আমি তো দেখলাম এই রুমের সামনে দিয়ে গেলো।

রিমনের যা বুঝার তা সে বুঝে নিয়েছে৷ এই মেয়ে মনে হয়না আর ওর ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করবে। মেয়ের জন্য তো আর ছেলের অভাব পড়েনি যে এসব শুনে আবার ওর ভাইয়ের পিছু ছুটবে।

– রিকশায় তো উঠেছি অলরেডি পাঁচ মিনিট হয়ে গেলো। এবার কিছু বল।
– উনার ভাইকে বলে দিয়েছেন উনি আসবে না। উনি আমার চেহারা দেখতে চান না।
– সিরিয়াসলি এসব বলেছে?
– রিমন ভাইয়ার কথায় এমনটাই বুঝেছি।
– ঠিক বুঝেছিস তো? ভুল হচ্ছে না তো কোথাও?
– ঠিকই শুনেছি। আসলে আমারই উচিত হয়নি উনার বাসায় যাওয়া৷ এতটা গায়ে পড়ে কথা বলতে যাওয়ার মত সম্পর্ক আমাদের মাঝে হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। তবু কেনো গেলাম বুঝতে পারছি না। নিজেকে ছ্যাচড়া মনে হচ্ছে। নিজের এই ছ্যাচড়ামীর জন্য অপমান হতে হলো।
– আচ্ছা বাদ দে। হতে পারে উনি কোনো কারনে টেনশনে আছেন। নয়তো এমন করার কথা না।
– কি কারনে এমন করেছে আমি জানি না। তবে আমি উনার সাথে আর কথা বলছি না এটা ফাইনাল।
– গরম মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নিস না তো৷ আগে দেখ উনি কোনো সমস্যার মধ্যে আছে কি না।
– এত দেখাদেখির দরকার নেই আমার৷ সেল্ফ রেসপেক্ট খোয়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই।

আশফাককে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে রাত্রি। আজ সে ভীষণ খুশি৷ অতিরিক্ত খুশিতে আহ্লাদে আটখানা হয়ে যাচ্ছে। কারন আশফাক আজ ওকে ৭২০০০ টাকার ডায়মন্ড রিং গিফট করেছে। পুরো আটমাস পর এতদাম দিয়ে কিছু গিফট করলো আশফাক৷ এমনিতে প্রতিমাসে রাত্রির পিছনে সব মিলিয়ে ৩০-৪০ হাজার খরচ হয়। তবে এত টাকার গিফট প্রতিমাসে তো আর পাওয়া যায় না। ইশশ! কি ভুলটাই না হলো ওকে বিয়ে না করে। ওকে বিয়ে করলে তো আশফাকের সমস্ত প্রপার্টি ব্যালেন্স ওর নামে থাকতো।

– এই শুনো না…
– হুম।
– আমাকে বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়?
– তুমি আমার বউয়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা রাখো না। তুমি যতটুক পাওয়ার যোগ্য ততটুক তোমাকে দিচ্ছি। এরচেয়ে বেশি আশা করলে যা পাচ্ছো তাও হারাবে।
– আশরাফকে আমার আর সহ্য হয় না। ও আমার গায়ে হাত দিলে অসহ্য লাগে৷ মনে হয় আমার শরীর থেকে তোমার স্পর্শ মুছে যাচ্ছে।
– এসব ফাউল প্যাচাল পারবা না আমার সঙ্গে৷ তুমি দিনদিন প্রচন্ড ইরিটেটিং হয়ে যাচ্ছো। যখন যা চাচ্ছো তাই দিচ্ছি। ব্যস, এরচেয়ে বেশিকিছু ডিমান্ড করতে আসবে না৷ নূন্যতম রেসপেক্ট পাওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। তুমি শুধু টাকা চিনো৷ টাকা নিয়েই স্যাটিসফাইড থাকো।

চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে গেলো আশফাক৷ “আমাকে বিয়ে করো” এটা নিত্য দিনের গান হয়ে দাঁড়িয়েছে রাত্রির। কথাটা শুনলেই আশফাকের মেজাজের বারোটা বেজে যায়। অতীতগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here