ভোরের_আলো পর্ব-৯

0
883

#ভোরের_আলো
পর্ব-৯

দুপুরে গোসল সেড়ে মাত্রই বেরিয়েছে অর্পিতা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে৷ নিজেকে আজকাল নতুন মনে হয়। আগের অর্পিতাটা কোথায় যেনো খোয়া গেছে। হয়তোবা আশফাকের মাঝে। আপন মনেই খানিকটা মুখ টিপে হাসলো অর্পিতা।

রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাত্রির মাঝে বুদ থেকে সকাল ছয়টার দিকে ঘুমিয়েছিলো আশফাক৷ ঘুম থেকে উঠেছে মাত্রই। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দুপুর সোয়া একটা বাজে। বিছানা ছেড়ে আড়মোড়া দিয়ে ঘুমের নেশাটা কাটালো ও। মাথাব্যাথা করছে। অবেলায় ঘুম থেকে উঠার এই এক সমস্যা। মাথায় চিনচিন ব্যাথা হতে থাকে আশফাকের৷ আজ সারাদিন বেঁধে এই ব্যাথা চলতেই থাকবে। গোসলটা সেড়ে সোজা ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো আশফাক। পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। চুলের পানি ঠিকমতো না মুছেই খেতে বসে গেছে। বাসার কাজের লোক হুমায়ুন খুব ভালো করেই জানে আশফাক যেদিন বেলা করে ঘুম থেকে উঠে সেদিন গোসল সেড়ে সোজা টেবিলে বসে পড়বে খেতে৷ তাই আশফাক আসার আগেই হুমায়ুন টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখে দেয়৷ আজ বাসায় সবজি ভাজি, কালোজিরা ভর্তা, শিংমাছ দিয়ে ফুলকপির ঝোল, পাঁচফোড়নের ডাল রান্না হয়েছে। এমনিতে আশফাক পরিমিত খায়। কিন্তু আজ অসম্ভব ক্ষুধা লেগেছে ওর। তাই পরিমানে একটু বেশিই খাচ্ছে।

সকাল থেকেই বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে অর্পিতা। মানুষটা আজ একবারও ফোন করলো না। অন্তত একটা ফোন তো দেয়ার কথা ছিলো। হতে পারে ব্যস্ত। আবার নাও হতে পারে। অথবা মানুষটা হয়তো আশায় বসে আছে অর্পিতার একটা কলের আশায়। মেয়েটা ফোন করে বলবে
” এই যে শুনছেন? ঐ যে গতকাল বললেন না উত্তরটা আজই শুনতে চান? উত্তর জানানোর জন্য ফোন করলাম। উমমম…. ভালোবাসি আপনাকে।”

হয়তো এটা শোনার জন্যই অধীর আগ্রহে বসে আছে মানুষটা। ভিতরে খানিকটা মোচড় কাটলো অর্পিতার। বাজে একটা পরিস্থিতিতে আটকে আছে ও। ভালোবাসে মানুষটাকে তবুও জানাতে পারছে না। মানুষটাকে আপন করে নিতে পারছে না। একটা মানুষকে এভাবে অপেক্ষা করাতে হচ্ছে। মানুষটাকে একটা কল করা উচিত। উত্তর না হয় অন্য কখনো দেয়া যাবে। কিন্তু এখন অন্তত একটা ফোন তো দেয়া যায়। আশফাকের নাম্বারে ডায়াল করলো অর্পিতা। সবেমাত্র প্লেটের ডালটা চুমুক দিয়ে শেষ করলো, ঠিক তখনই মোবাইলের রিংটোন টা বেজে উঠলো৷ স্ক্রিনে অর্পিতা নামটা ভেসে উঠছে। দেরী না করে খুব দ্রুত ফোনটা রিসিভ করলো আশফাক।

– ফাইনালি আপনি কল করলেন ম্যাম।
– আপনি সত্যি আমার কলের জন্য ওয়েট করছিলেন?
– হুম করছিলাম। গতকাল রাত থেকে। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। গলা দিয়ে একটা দানাও ঢুকাতে পারছি না। বড় কিছু পাওয়ার আগ মূহুর্তের অপেক্ষাগুলো খুব খারাপ হয়৷ শান্তিতে থাকতে দেয় না। ঘুম খাওয়া কাজ সব শেষ করে দেয়৷ গতরাত থেকে কিছুই খাইনি শুধু পানি ছাড়া।

হুমায়ুন চোখ বড় বড় করে ভাতের বোলের দিকে তাকিয়ে আছে। বলে কি ব্যাটা? খেতে পারছে না? তাহলে বোলের ভাতগুলো সাবাড় করলো কে? পাতিলের অর্ধেক ভাত তো আজ এই ব্যাটাই শেষ করলো। কার সাথে এমন ডাহা মিথ্যা কথা বলছে কে জানে? নিজের অজান্তেই ডানে বায়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে রান্নাঘরে চলে গেলো হুমায়ুন৷ আশফাকের এই মেয়েলোকের চক্কর তার খুবই অসহ্য লাগে। তবে আশফাকের জন্য তার খুবই টান। মানুষটা বড্ড ভালো। তবে এই মেয়েদের পাল্লায় পড়ে লোকটা নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে হয় আশফাককে একটা ফুটফুটে পরীর সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে। পরীর মুখটা দেখে আশফাক সব বাজে নেশা ছেড়ে পরীর পিছনে ছুটে বেড়াবে। ওর জীবন গুছিয়ে দিবে পরীটা। ওকে পরম যত্নে আগলে রাখবে।

– প্লিজ… আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করুন। আমি একটু সময় চাচ্ছি।
– গতরাত থেকে উত্তরের অপেক্ষায় বসে আছি। মজা পাচ্ছো খুব তাই না৷ কাউকে অপেক্ষা করাতে খুব ভালো লাগে। আসলে তোমরা সব মেয়েরাই একরকম৷ ফিলিংসের কোনো মূল্য নেই তোমাদের কাছে৷ সবার ভাগ্যে ভালোবাসা থাকে না। যদি কেও তোমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটার ক্বদর করতে শেখো।
– আপনি ব্যাপারটা অন্যভাবে নিবেন না প্লিজ। আসলে আমি আপনাকে বুঝাতে পারছি না।
– আমি আর বুঝতে চাইও না। আসলে তুমি আমার ফিলিংসকে সিরিয়াসলি নিচ্ছো না। যেদিন সিরিয়াসলি নিবে সেদিন আমাকে বুঝাতে এসো। আমি বুঝে নিবো। আর আই এ্যাম এক্সট্রিমলি সরি তোমাকে বিরক্ত করেছি তাই।
– শুনুন আমি……

অর্পিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই কল কেটে দিলো আশফাক৷ ওর নাম্বারটা ব্লক লিস্টে রেখে দিলো। মেয়েটার উপর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো। একে তো মাথাব্যাথা তার উপর এই মেয়ের বিশ্রি ন্যাকামী, উত্তর এখন দিতে পারবো না আরও পরে দিবো। দুটো মিলে মগজে বিস্ফোরণ ঘটেছে আশফাকের।
পাগলের মতো আশফাকের নাম্বারে কল করছে অর্পিতা। বাবা, মা, মুক্তা, পাখি সবার নাম্বার থেকে কল করলো। যে নাম্বার থেকে কল করে সেই নাম্বারটাই ব্লক করে দেয় আশফাক৷ মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে অর্পিতার৷ সেই সাথে কান্নাও পাচ্ছে খুব।
(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here