#ভোরের_আলো
পর্ব-১৫
আজকাল মেয়ের আচার আচরন বিশেষ সুবিধাজনক ঠেকছে না লিপির কাছে। সন্দেহ হচ্ছে খুব। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ইঙ্গিতে মেয়েকে তিন চারবার জিজ্ঞেস করেছেন। তেমন কোনো সন্তুষ্টজনক উত্তর তিনি পাননি। অশান্তিতে ভুগছেন দুদিন যাবৎ। বিষয়টা খোলাসা হওয়ার আগ পর্যন্ত শান্তি পাবেনও না। উপায়ন্তর না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন ছোট দেবরের বউয়ের সাথে ব্যাপারটা আলোচনা করবেন৷ মিনু এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে লিপির বান্ধবী মতই আছে। এমন কোনো গোপন কথা বাদ নেই যা দুজন দুজনেরটা জানে না। অর্পিতার এই কথাটাই বলতে একটু দেরী হয়ে গেলো। ড্রইংরুমে টিভি দেখছিলেন লিপি। সিদ্ধান্ত নিলেন এখুনি ছোট জা কে ফোন করবেন। টি টেবিলের উপর থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের রুমে গেলেন৷ রুমের দরজাটা আটকে দিয়ে মিনুর নাম্বারে ডায়াল করলেন লিপি।
আশফাকের বাসায় বসে আছে অর্পিতা আর মুক্তা। ড্রইংরুমে সোফায় বসে হেঁচকি তুলে কাঁদছে অর্পিতা। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
কল রিসিভ করছে না। অপরপাশের সোফায় বসে গাল হাত দিয়ে বসে আছে রিমন।
– আপনি কি এভাবে চুপ করে থাকবেন ভাইয়া?
– আমি কি করতে পারি বলো?
– যুক্তিসঙ্গত কথা বলবেন। অর্পির সাথে আপনার ভাইয়ের সম্পর্ক চলছে চার মাসের উপর হয়ে গেছে। ও আশফাক ভাইকে নিয়ে প্রচন্ড সিরিয়াস। যে ছেলেকে অর্পি বিয়ে করবে তার বাবা মা সম্পর্কে জানতে চাওয়াটা কি অপরাধ?
– উহুম।
– উনার কাছে বাবা মা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে উনি উত্তর দেয়নি। অর্পিতা এরপর তিন চারবার জিজ্ঞেস করেছে। তারপর উনি ক্ষেপে গিয়ে যা তা বলে দিলো ওকে।
-…………………
– তিনদিন হয়ে গেছে উনি অর্পিতার কল রিসিভ করছে না, মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছে না। এই একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে উনি কি বললো? উনি নাকি আর সম্পর্কই রাখবে না। এগুলো কোনো কথা?
-………………..
– ঝগড়ার পর থেকে অর্পিতা ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারছে না। কন্টিনিউ কান্নাকাটি করেই যাচ্ছে। তিনদিনেই বেচারীর চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে। এগুলো তো মামীর নজরের আড়াল হচ্ছে না। মামী তো ঠিকই টের পাচ্ছে অর্পিতার লাইফে কিছু একটা ঘটছে। উনি অর্পিকে জিজ্ঞেসও করেছে। এভাবে আর কতদিন ভাইয়া? আপনার ভাই কি চায়? আমার বোনটা অসুস্থ হয়ে যাক? উনি জানে না অর্পিতা যে উনাকে ছাড়া থাকতে পারে না?
-………………
– কি আশ্চর্য! আপনি চুপ করে আছেন কেনো?
– দেখো মুক্তা, অর্পিতা সেদিন আমাকে ফোন করার পর ভাইয়ার সাথে তিন চারবার কথা বলেছিলাম। ও প্রচুর চেঁচামেচি করে৷ আর কোনো কথাই ও শুনতে চায় না। কেও কথা না শুনতে চাইলে কি তাকে জোর করে কথা শোনানো সম্ভব? আমি ওর ছোট ভাই। বড় হলে নাহয় দুই চারটা চড় থাপ্পর দেয়া যেতো।
– তাহলে সমাধান কি?
– আচ্ছা, আমি কৌশিক ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখি।
অর্পিতা শুনো, তুমি নিজেকে আয়নায় একটাবার দেখেছো? কি হাল করেছো নিজের? এতটা ভেঙে পড়ার কিচ্ছু হয়নি৷ ভাইয়া এমনই। রাগ করে আবার রাগ মিটেও যায়। দুইটা দিন ওয়েট করো। দেখবে ও নিজেই তোমাকে কল করেছে।
– দুইদিন ওয়েট করতে পারবো না। দম আটকে আসছে আমার। প্লিজ ওর সাথে একটু কথা বলিয়ে দিন না।
– ঠান্ডা হও৷ আমি আজকেই কৌশিক ভাইকে বলবো আশফাক ভাইয়ের সাথে কথা বলতে।
– একটা কাজ করি। আমি এখানে আশফি আসা পর্যন্ত ওয়েট করি?
– এই বাসা তো তোমারই অর্পিতা। আজ নাহয় কাল এই ঘরের দায়িত্ব তো তোমার উপরই আসবে। আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো ওয়েট করবে কিনা? তোমার ঘরে তুমি যা খুশি করো।
– অর্পিতা, অলরেডি সাড়ে আটটা বাজে। বাসায় যেতে হবে। এমনিতেই মামী তোকে নিয়ে সন্দেহে আছে। উনার সন্দেহ আর বাড়ানোর দরকার নেই।
– আম্মুকে অন্য কিছু বলে ম্যানেজ করা যাবে না?
– আপাতত খুব সাবধানে থাকতে হবে। ভাইয়া তো বললোই উনি কথা বলবে। তুই চল।
– আপনি ওর সাথে কথা বলবেন তো?
– হ্যাঁ বলবো।
– ওকে বলবেন আমি এভাবে আর নিতে পারছি না৷ ও যদি আমার সাথে কথা না বলে তাহলে আমি বিষ খেয়ে মরবো। পরে কিন্তু হাজার কাঁদলেও কোনো লাভ হবে না।
রাত্রির সাথে সাজেক বেড়াতে এসেছে আশফাক। বেয়াদব মেয়েটা বাপ মায়ের কথা বলে মেজাজ সপ্তম আসমানে তুলে দিয়েছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো মাথায় যে ক’টা রগ আছে সব ছিঁড়ে যাবে। কোনো কাজেই মন বসাতে পারছিলো না। তারউপর ঢাকা থাকলে সামনে এসে হাজির হবে। এই মেয়ে সামনে আসলে কোনো এক অজানা কারণে নিজেকে আটকাতে পারে না আশফাক। ওর মাঝে ডুবে যায়৷ মনে হয় যেনো ওর মুখের প্রতিটা ভালোবাসার কথা সত্য। ওর চোখের চাহনী সত্য। ওর যত্নগুলো সত্য। বাজে রকমের ঘোরের মাঝে পড়ে যায় আশফাক। বোধশক্তিটা অর্পিতা নামক নেশায় অবশ হয়ে যায়। ওর কাছ থেকে দূরে সরতেই সেদিন রাতের বাস ধরে রাত্রিকে নিয়ে সাজেক এসেছে আশফাক।
রাত সাড়ে দশটা। রিসোর্টের অন্ধকার রুমে রাত্রির শরীরের ঘ্রানে বুঁদ হয়ে আছে আশফাক। নয়টার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাইশটা কল এসেছে আশফাকের নাম্বারে। সেদিকে খেয়াল নেই তার। আপাতত সে নিজের জৈবিক চাহিদা মিটানোর মাঝে ব্যস্ত।
নিজের রুমে খাটে হেলান দিয়ে দাঁত কিড়মিড়াচ্ছে রিমন। সে জানে কেনো তার ভাই ফোন রিসিভ করছে না। আশফাককে অন্ধ বললেও ভুল হবে। নয়তো অর্পিতাকে চিনার বাকি থাকতো না। কিভাবে পারে একটা মানুষ এত ভালেবাসা পা দিয়ে পিষে ফেলতে? একজন কান্নাকাটি করে জান প্রান যায় যায় অবস্থা আর আরেকজন পারলে অন্য মেয়ের শরীরের ভিতর ঢুকে যায়। একদিন সে বুঝবে চাঁদ হাতে পেয়েও সে হাত ছাড়া করেছে। সেদিন ওর ঠিক এভাবেই কাঁদতে হবে আজকে অর্পিতা যেভাবে কাঁদছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিমন।
(চলবে)
-মিম