ভোরের_আলো পর্ব-১৬

0
813

#ভোরের_আলো
১৬.

রাত দেড়টা। রাত্রির নেশা কেটেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। ফ্রেশ হয়ে রিসোর্টের বাহিরে পায়চারী করছে আশফাক। ভিতরে রাত্রি ঘুমুচ্ছে। পকেটে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে। অর্পিতা একের পর এক কল করেই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত রিমন ফোন করেছে আঠারোবার আর কৌশিক ফোন করেছে ছয়বার। কারো কল রিসিভ করবে না সে। অর্পিতার একের পর এক ফোন পেয়ে এক ধরনের আনন্দ পাচ্ছে আশফাক। মহানন্দে সিগারেট ফুঁকছে সে। ধোঁয়াগুলো খুব ধীরে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।

– লোকটা তোকে ভালোইবাসে না অর্পিতা।
– আজাইরা কথা কম বলবি।
– তোর এসব কান্নাকাটি কিন্তু আমার আর ভালো লাগছে না।
-………………
– উনি যদি তোকে ভালোবাসতো তাহলে এ ধরনের আচরন কখনোই করতে পারতো না।
– তোর কি এই মূহূর্ত্বে আমাকে এসব বলা উচিত হচ্ছে মুক্তা?
– তাহলে আমার কি বলা উচিত?
– আশফির বিরুদ্ধে একটা কথা শুনতে চাই না আমি। ভুল তো আমারই ছিলো। আমার বুঝা উচিত ছিলো ও ওর বাবা মায়ের কথা শুনলে কষ্ট পায়। হয়তোবা খুব খারাপ কোনো ঘটনা আছে যেটা ও মনে করতে চায় না। কেনো বুঝলাম না আমি? না বুঝে ওকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। খুব কষ্ট পেয়েছে আমি জানি। এজন্যই তো তিনদিন হয়ে গেলো আমার সাথে কথা বলছে না। আর নয়তো ও কি আমার সাথে কথা না বলে থাকার মানুষ? যেখানে আমার সাথে কথা না বলে ও তিনঘন্টাই থাকতেই পারে না সেখানে মানুষটা তিনদিন ধরে কথা বলছে না।

অর্পিতা কে কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না মুক্তা। অর্পিতার মনের অবস্থা কতটা খারাপ সেটা ও ভালো করেই টের পাচ্ছে। তবে এই মূহূর্ত্বে মনে হচ্ছে সত্যিই আশফাক ওকে ভালোবাসে না। আর নয়তো ভালোবাসার মানুষটাকে একজন লোক এতটা ইগনোর কিভাবে করতে পারে?

দুই ছেলে সায়েম আর সিফাতকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে বেরিয়েছেন মিনু৷ লেকসাইডে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে ওরা। আজ কথা হয়েছিলো বড়ভাবীর সাথে। মেয়েটা কে নিয়ে ভাবী সত্যিই খুব চিন্তিত। অর্পিতার সমস্ত কথা সায়েম জানে৷ উনি জানেন ছেলেকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের হবে না ওর৷ তবুও অর্পিতার ব্যাপারে কিছু জানার আশায় কথার ছলে প্রসঙ্গ তুললেন তিনি।

– ভাবছি আগামী মাসে সিফাতের পরীক্ষা শেষ হলে দেশে যাবো।
– হ্যাঁ, আমরা তো এই সময়ে প্রতিবছরই দেশে যাই।
– আজকে তোর বড়মা কল করেছিলো।
– বড়মা তো প্রতিদিনই কল করে।
– অর্পির কি হয়েছে কিছু জানিস?
– অর্পির? ওর আবার কি হবে!
– কারো সাথে কি ওর কিছু চলছে নাকি?
– প্রেম?
– হুম।
– নাহ্। ও কারো সাথে প্রেম টেম করে না।
– করে না নাকি তুই সত্যিটা বলবি না?
– শুনো আম্মু, তুমি খুব ভালো করেই জানো অর্পিতা যদি কারো সাথে প্রেম করেও থাকে তাহলে আমি কখনোই তোমাকে বলবো না। আর ও সত্যিই প্রেম করে না।
– ভাবী ফোন দিয়ে বললো ও নাকি তিনদিন ধরে খাচ্ছে না। মন নাকি খুব খারাপ। কান্নাকাটিও করে লুকিয়ে। ভাবীকে দেখলেই খুব দ্রুত চোখের পানি মুছে ফেলে। শুকিয়ে গেছে বেশ।
– কেনো?
– ভাবী সন্দেহ করছে ও কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। তুই জেনে থাকলে সত্যিটা বলে দে। অর্পি তোরই বোন। ও কষ্ট পাচ্ছে এটা কি তোর ভালো লাগছে?
– আমি তো জানিই না ওর মন খারাপ। ওর সাথে তিন চারদিন যাবৎ কথা হয়নি আমার। মুক্তার সাথে কথা হয়েছিলো। ও তো কিছু বললো না আমাকে।
– মিথ্যা কথা। তুই সব জানিস।
– কি আশ্চর্য! আমি মিথ্যা বলবো কেনো?
– বল না ছেলেটা কে? আমরা খোঁজ খবর নেই। দেখি কোনো সুরাহা করতে পারি কিনা।
– এবার কিন্তু আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। জানোই যেহেতু আমি মিথ্যা কথা বলি তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছো কেনো?
– আচ্ছা, আচ্ছা,,,,, বুঝলাম। তুই জানিস না কিছু। অর্পিকে আজই ফোন করবি। ওর কি হয়েছে জেনে আমাকে জানাবি। ঠিকাছে?

উত্তর দিচ্ছে না সায়েম। ভ্রুঁ কুঁচকে অন্যদিক তাকিয়ে আছে। অর্পিতার কি হয়েছে সবই জানে সে৷ সত্যিটা খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছে মা কে। মেয়েটা সত্যিই ঐ মানুষটাকে ভালোবাসে। এভাবে আর দূরে থাকতে পারছে না। ধরে বেঁধে একটা বিয়ের বন্দোবস্ত করতে পারলে বেশ হতো। প্রেমিকা বলে আজ দূরে থাকতে পারছে। বউ হলে নিশ্চয়ই এভাবে অন্য কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারতো না। তবে লোকটা অহেতুক রাগ করে। খুবই খারাপ। এ ধরনের মানুষের সাথে বাস করা খুবই পীড়াদায়ক। এরা কিসে রাগ করে কিসে খুশি হয় বুঝা দায়। তবে হুট করে রেগে যাওয়া মানুষের মনও ভালো থাকে। জাগতিক মারপ্যাঁচ এরা বুঝে কম।

রিসোর্টে রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আশফাক। ফোনটা রাত্রির মাথার কাছে রেখে ওয়াশরুমে গেলো। আশফাকের ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। ঘুম ভেঙে গেলো রাত্রির। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলো স্ক্রিনে অর্পিতা নামটা ভেসে উঠেছে। কলটা একবার রিসিভ করতে ইচ্ছে হয়েছিলো রাত্রির। পরক্ষনেই মাথা থেকে ইচ্ছেটা বাতিল করে দিলে। আশফাক প্রচন্ড ক্ষেপে যাবে সে ভয়ে। আশফাক ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই একরাশ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– অর্পিতা কি নতুন গার্লফ্রেন্ড?
– হুম।
– কেমন দেখতে?
– সেইই।
– হট?
– প্রচ্চুর।
– ওর সাথে শুয়েছো নাকি?
– নাহ্। নতুন জিনিস।
– কতদিন?
– এইতো চারমাস।
– চারমাস! তোমার তো এতদিন সময় লাগে না। দুইমাসেই তো শোয়াশুয়ি শেষ।
– আসলে এটার সাথে তেমন করে আগাতে পারছি না। সামনে গেলে কি জানি হয়। ঐ প্রস্তাব রাখতে মন সায় দেয় না।
– এত সাধু হলে কবে থেকে আশফাক?
– সাধুই তো ছিলাম। নষ্ট তো তুমি করেছো।

রাত্রির উপর শুয়ে পড়লো আশফাক। গলায় একের পর এক চুমু খাচ্ছে। ফের মেয়েটার শরীরের ঘ্রানে বুঁদ হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা জেগেছে।

(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here