ভোরের_আলো পর্ব-১৮

0
930

#ভোরের_আলো
১৮.

-রাতে কেন থাকবো?

অর্পিতাকে আরও কাছে টেনে বললো,
– কেনো থাকতে বলছি বুঝো না?
– তুমি কি ঐ টাইপ কিছু মিন করছো?
– হুম।
– সিরিয়াসলি বলছো নাকি মজা করছো?
– সিরিয়াসলি বলছি।
– মানে কি এসব কথার?

অর্পিতা রেগে যাচ্ছে দেখে খানিকটা ভড়কে গেলো আশফাক। অর্পিতার কোমড় ছেড়ে দিয়ে বললো,

– অস্বাভাবিক কিছু চেয়ে ফেললাম?
– তোমার কাছে কি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে?
– হ্যাঁ হচ্ছে। তুমি তো ছোট বাচ্চা না যে কিভাবে সেক্স করতে হয় এসব বুঝো না। আমার প্রেমিকা একজন এডাল্ট। সো তার কাছে এমন কিছু ডিমান্ড করাটা তো অন্যায় কিছু দেখছি না।
– কথা বলার আগে বুঝে শুনে কথা বলো। বিয়ের আগে এসব কখনোই আমি করবো না।তুমি কিভাবে এ ধরনের প্রস্তাব দাও?
– এত ন্যাকামীর কারনটা কি বলো তো? যদি আমি তোমার হাত ধরতে পারি, জড়িয়ে ধরতে পারি তাহলে কেনো সেক্স করা যাবে না?
– কিসের সাথে কি মিলাচ্ছো? আমি আসি। মনে হয় তোমার মাথা খারাপ হয়ে আছে৷ তোমার সাথে পরে কথা বলবো।

আশফাককে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আশফাকের বাসা থেকে বেরিয়ে এলো অর্পিতা। একি প্রস্তাব রাখলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না অর্পিতা। এতদিন ধরে আশফাকের সাথে মেলামেশা করছে কোনোদিন তার নজরে কোনো ধরনের কামনা প্রকাশ পায়নি৷ আজ আশফাকের চোখের ভাষা ভিন্ন ছিলো৷ চোখে স্পষ্ট কামনা চিকচিক করছিলো। এই আশফাক যেনো অর্পিতার অচেনা কেও।

মেজাজ খারাপ হচ্ছে আশফাকের। এমন নাটকের মানে কি? বিয়ে ছাড়া কিছু করা যাবে না! এমন একটা ভাব, মনে হচ্ছে যেনো কতবড় সতী মেয়েটা এসেছে। মেয়েটা ওকে কি ভাবে? বোকা-সোকা কোনো লোক? মোটেই না৷ মেয়েটা হয়তো ভাবছে বিয়ে করলে লোকটাকে যেভাবে খুশি নাচানো যাবে।
মনে মনে হাসছে আশফাক। বললেই হলো? আশফাককে নাচানো এতই সহজ? বিয়ে করার শখ হয়েছে তো? ঠিকাছে শখ মিটাবে। ভালোভাবেই মিটাবে৷ নকল বিয়ে হবে। একদম রেজিস্ট্রি করা বিয়ে। এরপর উল্টো অর্পিতাকেই এমনভাবে নাচাবে যেনো ফের কোনো ছেলেকে ঠকানোর দুঃসাহস হবে না।

রিমনের ঘরে বসে আছে আশফাক। ভাইয়ের ফরমায়েশে বেশ বিরক্ত রিমন। এতদিন যেসব নাটক চলছিলো তবুও মেনে নেয়ার মতো ছিলো। এখন যেটা বলছে সেটা একদমই পছন্দ হয়নি রিমনের। আশফাক যদি বয়সে ছোট হতো তাহলে এতক্ষণে দু’গালে কষে থাপ্পর লাগাতো।

– বিয়ে মানে বুঝো?
– নকল বিয়ে।
– বিয়ে কি কোনো ফাইজলামী করার বিষয়?
– এত কথা বুঝি না। তুই কাগজ রেডি করে দিবি কি না বল?
– তোমারটা তুমি করো। আমাকে বলছো কেনো?
– কালকে যশোর যাচ্ছি কাজে। ৩-৪ দিন থাকতে হবে। আমি ঢাকা ফিরেই ওকে বিয়ে করবো।
– তোমার কাগজ তুমিই রেডি করো। এসব বাজে কাজে আমাকে ডাকবা না।

রিমনের রুম থেকে বেরিয়ে এলো আশফাক। এই ছেলের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সে একজন অতি মাত্রার সাধু পুরুষ। আশফাকেরই ভুল হয়েছে ওর সাথে কথা বলা।

পুরো আধাঘন্টা পর আশফাকের রুমে এলো রিমন। আশফাক খাটে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। রিমন খাটের এক কোনায় এসে বসলো৷ বললো,

– কবে বিয়ে করতে চাচ্ছো?
– কেনো?
– তুমিই না বললে কাগজ রেডি করতে!
– কিন্তু তুই তো না করে দিলি।
– তুমি কিছু করতে বলেছো আর আমি করিনি এমন কি কখনো হয়েছে?
– এভাবে মুখ ফুলিয়ে কথা বলছিস কেনো? নরমালি কথা বলা যায় না?
– নরমালি কথা বলার মতো কোনো পথ খোলা রেখেছো?
– শোন, যদি হাসিমুখে কাজ করতে পারিস তো কর, আর নয়তো দরকার নেই। আমি কারো কালো মুখ দেখতে চাই না।
– আজ যদি তুমি সত্যিই ওকে বিয়ে করতে তাহলে আমি হাসিমুখেই থাকতাম। তুমি যেটা করছো সেটা অন্যায়।
– এই অর্পিতার আসল রুপ যেদিন ফাঁস হবে সেদিন টের পাবি সেদিন নিজেই বলবি, ভাইয়া তুমি ঠিক ছিলে।
– আর যেদিন তুমি সত্যিটা জানতে পারবে সেদিন তুমি বুঝবে কতবড় অন্যায়টা তুমি করেছো। তখন হয়তোবা অর্পিকে আর পাশে পাবে না। ও তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে।
– এত কথা বুঝি না। তুই কাগজ আর কাজী রেডি করবি কি না বল?
– বললাম তো করবো।
– তাহলে ৪ দিনের ভিতরে সব রেডি কর। আমি রবিবার সকাল নাগাদ পৌঁছাবো। দুপুর বা বিকালের মধ্যে বিয়ে শেষ করবো।
– অর্পিতা রাজি?
– ও জানেই না।
– ওর অনুমতি ছাড়া কিভাবে সম্ভব?
– ও রাজি হবে কি হবে না সেটা আমি বুঝবো।
– দেখো কথা বলে। তোমার গার্লফ্রেন্ড, তুমি ভালো বুঝবে।

রাত দেড়টা। অর্পিতার বাড়ির পিছনের দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আশফাক। বেডরুমে পায়চারী করছিলো অর্পিতা। আশফাকের হিসাবটা ঠিক মিলাতে পারছিলো না। হিসাবটা মিলানোর জন্য মনে তুফান শুরু হয়ে গেছে। ঠিক তখনই আশফাক ফোন করে বললো,

– বাড়ির পিছনের দরজায় আসো। অপেক্ষা করছি।

মুক্তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বাবা মায়ের রুম পাহারা দিতে বলে এলো। খুব সাবধানে বাড়ির পিছনের দরজাটা খুলে বেরিয়ে এলো অর্পিতা৷ নিশ্চুপ আশফাকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা প্রায়ই মাঝরাতে এখানে আসে ওর সাথে দেখা করতে। সবসময়ই ব্যাপারটা খুব উপভোগ করে অর্পিতা৷ তবে আজ আর ভালো লাগছে না। ওকে দেখে অন্য ধরনের অশান্তি লাগছে৷ কেনো এসেছে মানুষটা? সন্ধ্যা বেলার প্রস্তাবটা আবার দিতে এসেছে নাকি বাস্তবায়ন করতে এসেছে? কি চায় সে? সম্পর্কটাকে নোংরামিতে নামিয়ে নিয়ে আসতে?

– তুমি কি আমার উপর রেগে আছো ঐ ব্যাপারটা নিয়ে?
– সত্যি বলবো?
– অবশ্যই সত্যিটা বলবে।
– হ্যাঁ রেগে আছি। সেইসাথে আজ কেনো যেনো নিজের সিদ্ধান্তে সন্দেহ হচ্ছে।
– কেমন সন্দেহ?
– কোনো ভুল মানুষকে মন দিয়ে বসলাম না তো?
– অর্পি আমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোনো কথা বলবো না। প্রথমত আমি তোমাকে নিয়ে সিরিয়াস। তোমার সাথে টাইম পাস করছি না৷ আমি তোমাকে বিয়ে করবো। এজন্য আমি ভেবে নিয়েছিলাম হয়তোবা তোমার সাথে ইন্টিমেট হতে চাইলে তোমার কোনো আপত্তি থাকবে না৷ এখন দেখছি তুমি আমাকে সেভাবে ট্রাস্ট করতে পারছো না।
– এখানে ট্রাস্টের কথা না। কথা হচ্ছে এখনই কেনো? আমাদের তো বিয়ে হয়নি। বিয়ের আগেই এত ঘনিষ্ঠতা আমার কাছে জাস্ট নোংরামী লাগে৷ হ্যাঁ তুমি আমার হাত ধরো বা কখনো হয়তো জড়িয়ে ধরো। সেই মূহূর্ত্বগুলোতে কখনোই তোমার স্পর্শে আমি নোংরামি পাইনি। আজকে তুমি যখন কোমড়ে হাত দিলে তোমার সেই স্পর্শে নোংরা অনুভূতি হচ্ছিলো। তোমার নজরে আজ নোংরামী দেখেছি যা আজ পর্যন্ত তোমার মাঝে আমি দেখিনি।
– অর্পি আমার বয়স কত?
– ৩২।
– আমার বয়সী একটা ছেলের জৈবিক চাহিদা থাকাটা কি স্বাভাবিক না? আমি তো মানুষ নাকি? ফেরেশতা তো আর না৷ তুমি তো আর ছোট বাচ্চা না যে তুমি এটা বুঝবে না। তোমাকে একা রুমে পেয়ে ফিলিংস কন্ট্রোল করতে পারিনি এজন্য ঐ কথা……….। আমি তোমাকে ভালোবাসি। নিজের বউকে একজন পুরুষ যে নজরে দেখে তোমাকে আমি ঐ নজরেই দেখি। এজন্য তখন ঐ আবদারটা করে ফেলেছি। স্যরি।
– হ্যাঁ তোমার কথা বুঝলাম। কিন্তু বউ হওয়া আর বউয়ের নজরে দেখার মাঝে পার্থক্য আছে।
– এখন থেকে আর থাকবে না।
– মানে?
– আমি তোমাকে বিয়ে করছি রবিবারে।
– বিয়ে মানে?
– বিয়ে মানে বিয়ে।
– আমার প্রথম শর্তই ছিলো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগে বিয়ে করবো না।
– তুমি আজ সন্ধ্যায়ই আমাকে বলেছো আমি যেভাবো চাইবো সেভাবেই হবে৷ আমি চাচ্ছি সম্পর্কটা মজবুত করতে। তাহলে এখন তুমি বাঁধা দিচ্ছো কেনো? তুমি কি চাওনা সম্পর্কটা টিকে থাকুক?
– অবশ্যই চাই। কিন্তু এখনই বিয়ে?
– হ্যাঁ৷ আমরা গোপনে বিয়ে করছি। কাউকে জানাবো না। তোমার গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়া পর্যন্ত বাবার বাড়িই থাকবে৷ তোমার সমস্ত খরচ আমি দিবো৷ প্রেম যেভাবে চলছিলো সেভাবেই চলবে। তুমি মাঝেসাঝে বাসায় একান্তে আমাকে একটু সময় দিও।
-……………..
– চুপ করে আছো কেনো?
– আব্বু আম্মুকে না জানিয়ে বিয়ে করবো?
– প্রেম যে করছো সেটা কি উনাদের অনুমতি নিয়ে করছো?
– আশফি তোমাকে আমি কাল জানাই?
– আজ এবং এক্ষুনি শুনতে চাই। যদি আমাকে বিশ্বাস করো তো হ্যাঁ বলো। আর যদি না বলো তাহলে কাল থেকে আমি আশফাক আর কখনো তোমার সামনে দাঁড়াবো না। চিরতরে তোমার রাস্তা ভুলে যাবো।
– তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছো।
– আর তুমি আমাকে সন্দেহ করে কষ্ট দিচ্ছো।
– আমি তোমাকে সন্দেহ করছি না। বুঝতে পারছো না ব্যাপারটা। বললেই কি এত বড় স্টেপ নেয়া যায়?
– ভালোবাসলে সবই করা যায়।
– আমি তোমাকে অবশ্যই ভালোবাসি৷ বিয়ে আমিও করতে চাই৷ কিন্তু এখন?
– আমি এত কথা শুনতে চাই না। হ্যাঁ বা না বলো?
– মুক্তার সাথে একটু কথা বলে আসি?
– আমার চেয়ে বেশি মুক্তাকে ভালোবাসো তাই না?
– তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো?
– রেগে যাচ্ছি না। কষ্ট পাচ্ছি। যাকে ভালোবাসি সে আমার ভালোবাসা বুঝে না।
– ঠিকাছে। করবো বিয়ে। যেদিন বলবে সেদিনই করবো। তবু প্লিজ তুমি আবার দূরে সরে যেও না৷ এবার দূরে গেলে আমি সত্যিই মরে যাবো।
(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here