ভোরের_আলো পর্ব-২০

0
810

#ভোরের_আলো
পর্ব-২০

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে অর্পিতা। আজ সকালে মা বলছিলো,
তোকে আজকাল অন্যরকম সুন্দরী দেখায় অর্পি। হুট করেই কেমন একটা পরিবর্তন এসেছে তোর মাঝে।

কতটা সুন্দরী দেখায় সেটাই আয়নার সামনে যাচাই বাছাই করে দেখছে সে। মায়ের কথায় সত্যতা আছে। সত্যিই আজকাল অন্যরকম সুন্দরী দেখায় ওকে। চেহারার গড়নটা ঠিক আগের মতই আছে। তবে নতুনত্বের ছোঁয়া এসেছে চোখে মুখে৷ কারো ভালোবাসার স্পর্শে সিক্ত হয়ে নতুনত্ব পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। শুধু মা না, কমবেশী সবাই আজকাল বলে, বাহ্! তুই তো বেশ সুন্দর হয়ে গিয়েছিস! কি লাগাস মুখে?

অর্পিতার তখন খুব করে উত্তর দিতে ইচ্ছে হয়,

– তার ভালোবাসার উষ্ণতা মাখি।

বিয়ে হয়েছে সবেমাত্র দশদিন হলো, অথচ এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ঝোঁক উঠেছে মাথায়। দুদিন যাবৎ মাথায় একটা কথা ঘুরঘুর করছে। বাবা মা কে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করবে। বাবা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে যদি বলে তার পছন্দের কেও আছে, তাহলে বাবা মা কখনোই না করবে না। অর্পিতা বেশ ভালো করেই জানে তার সিদ্ধান্তের উপর বাবা মায়ের যথেষ্ট বিশ্বাস আছে৷ আজেবাজে কাওকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করার মত মেয়ে সে না। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমিকের সাথে প্রেম করা যায়। হাজবেন্ডের সাথে না। রাস্তাঘাটে নিজের হাজবেন্ডের হাত ধরে হাঁটতে গেলে দশবার চিন্তা করতে হয় কে কখন দেখে ফেলে। এগুলো কোনো কথা! গতকাল আশফাকের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলো। চলে আসার সময় চেহারায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে আশফাক বললো,
– তুমি আসার সঙ্গে সঙ্গেই চলে যাবো-চলে যাবো শুরু করো। সারাদিন সময় নিয়ে আসতে পারো না? তুমি কিন্তু আমাকে আমার পাওনাটুকু থেকে বঞ্চিত করছো অর্পিতা।

একদম ছাড়তে চাচ্ছিলো না মানুষটা। বারবার অর্পিতার কামিজের এক অংশ টেনে ধরছিলো। বহু কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে এরপর ফিরেছে। আর আজ সকাল থেকে তো এক গান বারবার গেয়েই গাচ্ছে,

– আজকে রাতে আমরা একসাথে থাকছি।

কোনোভাবেই আশফাককে আজ মানানো যাচ্ছে না। বলতে গেলে আজ অর্পিতাকে একান্তে পাওয়ার রোখ চেপে গেছে৷ দিনদিন যেনো মানুষটা একদম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্পিতাকে একনজর দেখার জন্য, এক মূহূর্ত্ব কাছে পাওয়ার জন্য জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আশফাকের আচার আচরণে ঠিক এমনটাই মনে হয় অর্পিতার। এভাবে আর কতদিন? তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তল্পিতল্পা গুটিয়ে একেবারে স্বামীর ঘরে চলে যাবে। তাছাড়া বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে অহেতুক বাবার বাড়ি থেকে লাভ কি? বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত হওয়ার নাটক করার মানেই হয় না। আর যাই হোক তার দ্বারা নাটক করা সম্ভব না।

ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা ফোনটা বাজছে। আশফাক ফোন করেছে। বেশ তড়িঘড়ি করে কলটা রিসিভ করলো অর্পিতা।

– হুউউমম….
– বাবা-মা ঘুমিয়েছে?
– ঠিক বলতে পারছি না৷ দেখতে হবে।
– দেখে আসো।
– কেনো?
– যেটা বলছি সেটা করো।
– মুক্তা….
– হুম…
– আব্বু আম্মু ঘুমিয়েছে কিনা একটু দেখ তো।
মুক্তাকে পাঠিয়েছি। এখন বলো কি হয়েছে?
– আগে মুক্তা আসুক। এরপর বলবো। আচ্ছা কি রঙের জামা পড়েছো?
– সবুজ।
– বাসায় পড়ার লাল রঙের জামা আছে?
– হুম আছে।
– ওটা পড়ো।
– কেনো?
– লাল রঙে তোমাকে অন্নেক হট দেখায়।
– তুমি আমার বাসার পিছনে দাঁড়িয়ে আছো তাই না?
– হুম আপাতত দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর তোমার রুমে আসছি।
– কক্ষনো না। তোমাকে আমি বাসায় আসতে দিবো না।
– ছিঃ, হাজবেন্ডকে কেও মুখের উপর এভাবে না করে?
– আমি করি। বাজে আবদার ধরলে আমি এভাবেই না করি৷
– তোমার কাছে আসতে চাওয়াটা কি অপরাধ?
– রাগ করছো কেনো আশফি? আমি কি বলেছি অপরাধ? কিন্তু এভাবে আমার বাসায় আসাটা কি ঠিক হবে?
– তোমাকে তো বলেছিলামই আমার বাসায় আসতে। তুমিই তো রাজি হওনি।
– কেনো রাজি হইনি তুমি খুব ভালো করেই জানো। কোনো বিশেষ দিন ছাড়া বান্ধবীদের বাসায় রাতে থাকা আব্বু আম্মু এলাউ করে না। উনারা খুব ভালো করেই জানে এইমাসে কারও জন্মদিন নেই। এমনকি কারও বিয়ে শাদীও না। আব্বু আম্মুকে কি বলতাম বলো?
– বলাবলির কোনো দরকার নেই। আমিই চলে এসেছি৷

রুমে এসে মুক্তা বললো,
– মামা মামী ঘুমিয়ে গেছে। আশফাক ভাই কি বাসার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে?
– হুম। ও তো বাসায় আসতে চাচ্ছে। কি করবো।
– আসুক৷ সমস্যা কি?
– আব্বু আম্মু যদি উঠে যায়?
– উঠলেও রুমের বাইরে আসবে না। আমি পাশের রুমে যাচ্ছি। উনাকে ভেতরে আসতে বল।
– পাখি যদি দেখে ফেলে?
– দেখে ফেললে বিয়ের কথা জানিয়ে দিবো।
– এখনই জানানো ঠিক হবে?
– তুইই না আজ বিকেলে বললি মামা মামীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবি?
– বলেছি যে আশফাকের সাথে এ্যাফেয়ার চলছে সেটা বলবো। বিয়ে করে ফেলেছি সেটা তো জানাবো না।
– ওহ্। আমি ভাবলাম বিয়ের কথা জানিয়ে দিবি। আচ্ছা, বাদ দে। পাখিকে বললে অসুবিধা নেই। তোরা তোদের মত সময় কাটা।
– আচ্ছা, তুই ঐ রুমে যা৷ আমি যেয়ে গেইটের লক খুলি।
এই শুনো, আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গেছে। তোমার গাড়ীটা লক করে আসো।

খুব দ্রুত পায়ে আশফাকের হাত ধরে ওকে নিজের ঘরে নিয়ে এলো অর্পিতা। ঘরের দরজা আটকাতেই একটানে নিজের দিকে অর্পিতাকে ঘুরিয়ে নিলো আশফাক। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্পিতা। নিঃশ্বাস ক্রমশ গাড়ো হচ্ছে দুজনের। অর্পিতার গায়ের চাদরটা একটানে খুলে ফেললো আশফাক। জামার পিছনের চেইনটা টেনে নিচে নামিয়ে আনলো। আশফাকের একহাত অর্পিতার কোমড় জড়িয়ে রেখেছে। অন্যহাত পিঠে অবাধ্যভাবে বিচরন করে বেড়াচ্ছে। কানের পাশে আশফাকের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছে অর্পিতা। ভালোবাসার উষ্ণতার আবেশে কানের ওপাশটা অবশ হয়ে আসছে অর্পিতার। আশফাকের ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো গভীর ঘোরের মাঝে থেকে শুনতে পাচ্ছে সে।

– তোমার মাঝে কি আছে বলো না? তোমার কথা মনে পড়লেই বারবার কেনো পাগল হয়ে যাই তোমার কাছে ছুটে আসার জন্য। ইচ্ছে হয় সারাটাদিন চোখের সামনে তোমাকে বসিয়ে রাখি। একটু একটু করে কাছে টানি। স্পর্শ করি। ভালোবাসি। কিসের মাঝে আটকে রেখেছো তুমি আমাকে? মায়াজাল নাকি মোহজাল?

(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here