ভোরের_আলো পর্ব-৫১

0
992

#ভোরের_আলো
৫১.

মুক্তার কাছে অর্পিতার প্রেগ্ন্যান্সির কথা শুনেছে বাসার সবাই৷ যদিওবা এই মূহুর্তে ঐ পরিবারের সবার ভীষন খুশি হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু পরিস্থিতিটা ঠিক খুশি হওয়ার মত না৷ খুশি হয়েও কেও খুশিটা প্রকাশ করতে পারছে না৷ মনের এক কোনে তীব্র দ্বিধা নড়েচড়ে উঠছে কিছুক্ষণ পরপর। মুক্তা বাসায় যেয়ে প্রেগ্ন্যান্সির খবরটা জানানোর পর এ্যাবরশনের কথাগুলোও জানালো। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মত পুরো ঘর থমথমে হয়ে ছিলো৷ কেও কোনো কথা বলেনি। কিছুক্ষণ বাদে মুখ খুললেন অর্পিতার মা। বললেন,
– ওদের দুজনের সম্পর্কটা আপাতত যে মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে এমন বাজে অবস্থায় একটা বাচ্চার পৃথিবীতে আসাটা পজিটিভলি নিবো নাকি নেগেটিভলি নিবো বুঝে পাচ্ছি না।
– ভাবী, পজিটিভও হতে পারে নেগেটিভও হতে পারে। অনেক সময় একটা বাচ্চার কারনে বাবা মায়ের সম্পর্ক ভালো হয়ে যায়। আবার কখনো দূরত্বও চলে আসে।
– দূরত্ব তো অলরেডি চলছেই মিনু। এই মূহুর্তে ওরা নিজেরা নিজেদের মত সময় কাঁটালে ভালো হতো। আসলে এটা খুব দরকার ছিলো৷ এখন বাচ্চা,,,,,,, ঠিক বুঝতে পারছি না,,,।
– দেখো আম্মু,,সবই ঠিকাছে। কিন্তু ও বাচ্চা কেনো এ্যাবোর্ট করাতে চাচ্ছে? বাচ্চার তো দোষ নেই।
– তোর বোনের মেন্টাল কন্ডিশনটাও তো তোকে বুঝতে হবে।
– তা আমি বুঝতে পারছি। মেন্টালি স্ট্যাবল হওয়ার মত সময় ও একদমই পাচ্ছে না। একের পর এক ধাক্কা খেয়েই যাচ্ছে৷ কিন্তু বাচ্চাটাকেও তো আমরা ইগনোর করতে পারছি না তাই না?
– বাচ্চাকে ইগনোর কে করছে? আমরা কেউই এ্যাবরশনের ব্যাপারটা সাপোর্ট করছি না। অন্যসময় হলে এতক্ষণে দুই চারটা থাপ্পর ওর গালে বসিয়ে দিতাম। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিই এমন তোর বোনকে কিছু বলাও যাচ্ছে না।
– একটা কাজ করো। তুমি ওর বাসায় যাও। ওকে ভালোমতো বুঝাও। পারলে আশফাক ভাইকে বলে ওকে বাসায় নিয়ে আসো৷ ও এখানেই থাকুক। ঐ বাসায় তো ওকে কেয়ার করার মতো কেও নেই৷ তাছাড়া মানুষও তেমন নেই৷ এখানে থাকলে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলে মাইন্ড ডাইভার্ট করতে পারবে। আশফাক এখানে আসবে মাঝেমধ্যে৷ এসে দু একদিন থেকে যাবে। অসুবিধা নেই তো।
– মিনু, চল তুইও যাবি। যা গিয়ে রেডি হয়ে নে। আবিদ, তোর বাবাকে কল করে বল তোর চাচাকে নিয়ে বাসায় চলে আসতে। ঘন্টাখানেক পর বের হবো।

আশফাকের বাসার ড্রইংরুমে বসে অর্পিতার বাবা আর চাচা আশফাকের সাথে কথা বলছে। গেস্টরুমে বসে আছে অর্পিতার মা আর চাচী। দশ মিনিট হলো উনারা এখানে এসেছেন। খাটে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে অর্পিতা৷ চোখের দুপাশের কোন দিয়ে পানি ঝরছে ওর৷ কিছুক্ষণ পরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।

-খবরটা তো এটলিস্ট আমার সাথে শেয়ার করতে পারতি৷
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,
– মা হিসেবে এতটুক অধিকার তো রাখি।
– জেনেছোই তো। এমন তো না যে এখনও জানতে পারোনি। তোমার আরেক মেয়ে তো বলেছেই।
– হুম বলেছে। আরো কি ঘটিয়েছিস সেগুলোও বলেছে।
– প্লিজ ছোটমা, এই মূহুর্তে জ্ঞান দিতে এসো না প্লিজ। জ্ঞান নেয়ার মুড আপাতত আমার একদম নেই।
– বাসায় যাবি অর্পি?

চোখ মেলে তাকালো অর্পিতা। চোখমুখ মুছতে মুছতে বললো,

– যাবো।
– আচ্ছা তুই বস। আমি আশফাককে জিজ্ঞেস করে আসি।
– ওকে জিজ্ঞেস করার কি আছে? আমি আমার বাবার বাসায় যেতেই পারি।
– হ্যাঁ পারিস। তবু একবার বলে নিতে তো দোষের কিছু নেই তাই না? তাছাড়া তোকে কয়েক মাসের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। জিজ্ঞেস করাটা জরুরী।

ড্রইংরুমে এসে আমজাদ সাহেবের পশে এসে বসলেন লিপি৷ বললেন,

– আশফাক একটু কথা ছিলো,,,,
– জ্বি বলুন।
– তুমি তো অর্পিকে চিনোই। এধরনের স্টেপ নেয়ার মত বাজে মেন্টালিটি কিন্তু ওর একদম নেই। পরিস্থিতিটা আসলে বুঝতেই তো পারছো,,,,,,
– আমাকে বলতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা৷ যা কিছু হচ্ছে পুরোটাতে ভুল তো আমারই ছিলো তাই না?
– ও আসলে কোনো সুযোগই পাচ্ছে না নিজেকে সামলানোর মত৷ একের পর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। খুব দ্রুত হচ্ছে সবকিছু৷ আমি মনে করি ওকে একটু সময় দেয়া উচিত।
– সময় বলতে?
– ওকে আমি নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। দুই চারমাস থেকে আসুক আমার ওখান থেকে।

কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো আশফাকের। বিস্মিত কন্ঠে লিপিকে বললো,

– দুই চারমাস! এতদিন কেনো?
– এখানে তো কেও নেই। সারাদিন একা পড়ে থাকে। আমাদের সাথে থাকলে একটু মন মানসিকতায় পরিবর্তন আসতো।
– একা কোথায়? আমি তো আছি।
– তুমি কতদিন কাজ ফেলে ঘরে পড়ে থাকবে? এখন নাহয় নতুন বিয়ে করেছো। সপ্তাহখানেক কাজ ফেলে পড়ে থাকবে। কিন্তু এভাবে কতদিন। আজ যে ঘটনা ঘটাতে গিয়েছিলো কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে বলা যায় না৷ সর্বক্ষণ ওর সাথে একজন মানুষ দরকার ওকে চোখে চোখে রাখার জন্য৷ তাছাড়া আপাতত ও তোমাকে একদমই সহ্য করতে পারছে না৷ দিনভরে ও শুধু তোমাকেই দেখে। তাহলে সবকিছু এতসহজে ভুলবে কি করে বলো? একটু তো সময় ওকে দেয়া উচিত স্বাভাবিক হওয়ার জন্য তাই না?
– হুম।
– অর্পিতার এটা ফার্স্ট টাইম প্রেগন্যান্সি। ওর আগের কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। তোমারও এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানা নেই। মুরুব্বি কাওকে তো দরকার ওকে গাইড করার জন্য তাই না?
– হুম।
– সব মিলিয়েই বলছি ওকে আমার কাছে দাও। কয়েক মাস আমার ওখানে থেকে আসুক। তুমি যাবে আমার ওখানে৷ যখন খুশি তখন চলে যাবে। এখন রাত দুইটা হোক কিংবা দুপুর দুইটা। ঐটা তো তোমারও বাসা৷ নিজের খুশিমতো আসা যাওয়া করবা৷
– দূরত্ব যদি আরো বেড়ে যায়?
– দেখো আশফাক, ক্ষেত্রবিশেষে একছাদের নিচে বাস করলেই সম্পর্ক ভালো হয়ে যায় না৷ তিক্ততা দূরত্ব বাড়তেই থাকে৷ সেক্ষেত্রে সম্পর্কটা দূর থেকে ঝালাই করে নেয়া ভালো৷ কাছাকাছি থাকলেই সম্পর্ক ভালো হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নেই। দূরত্ব তৈরী করে আগে সম্পর্কের গভীরতাটা ওকে বুঝার মত সময় দাও। নতুন আরেকটা সম্পর্ক তোমাদের তৈরী হতে যাচ্ছে সেটার জন্য ওকে মেন্টালি প্রিপেয়ারড হতে দাও। সবসময় সবকিছুতে জোর করতে নেই আশফাক৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামনের মানুষটাকে একটু স্পেস দেয়া উচিত।
– জোর তো এমনি এমনি করি না। ভয় লাগে আমার। যদি ও চলে যায়?
– কোথায় যাবে? বিয়ে করা বউ তোমার। চাইলেই তো যেতে পারবে না৷ আর তুমি তো যেতে দিবেও না৷
– কবে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন?
– আজকেই।
– আজকেই নিয়ে যাবেন?
– তুমি বললে দুদিন পর এসে নিয়ে যাবো। সমস্যা নেই।
– নাহ্, ঠিকাছে আজই নিয়ে যান। কিন্তু ওকে তো ডক্টরের কাছে চেকআপের জন্য নিয়ে যাওয়া দরকার ছিলো।
– আমি নিয়ে যাবো৷ আজই সন্ধ্যার পর নিয়ে যাবো। নাকি তুমি যেতে চাচ্ছো?
– আমি যাই?
– হুম যাও। সন্ধ্যার দিকে এসে নিয়ে যেও৷
– আচ্ছা।
– এককাজ করো তুমি আমাদের সাথে বাসায় চলো। দুদি৷ থেকে আসবে নাহয়।
– না, আমি পরে যাবো৷ ও থাকুক কিছুদিন ওর মতন করে৷ আমার আসলে কথাগুলো আগে মাথায় আসেনি৷ আসলেই ওকে একটু স্পেস দেয়া উচিত ছিলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here