“আপনারে দেখলে আমার ভীষণ প্রেম প্রেম কেন পায়, মাস্টারমশাই?”
এমন এক বাক্য, শুভ্রা রাঙা ছোট্ট কাগজে কেউ লিখে একটা নীল রাঙা টিপসহ রেখে দিয়ে গিয়েছে প্লাবনের টেবিলটা’র উপরে। মধ্যাহ্নে প্রাইভেট পড়তে আসা এক ঝাঁক কিশোর কিশোরী তখন বেশ হাসাহাসি করলো মাস্টারমশাই’র টেবিলের উপর থাকা চিরকুট খানা দেখে। হাসাহাসি’র শব্দ শুনে যখন তাদের গম্ভীরমুখো মাস্টারমশাই পাশের রুম থেকে ছুটে আসলো এক রাম ধমক দেওয়ার উদ্দেশ্যে তখন এই চিরকুট দেখে তার শরীর কাঁপিয়ে কাশি শুরু হলো। ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে লজ্জায় জেনো মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো।
চিরকুট খানা নিজের ঢোলা ফতুয়াটা’র পকেটের ভাজে খুব বিরক্তে ছুঁড়ে ফেলে চোখ রাঙিয়ে উঠে মাস্টারমশাই। শ্যামবর্ণা, চাপদাড়ি ওয়ালা এই পঁচিশের যুবকের চোখ রাঙানিতে চুপ হয়ে যায় ভীষণ হাসাহাসি। থেমে যায় কৌতুক মাখানো মজা। সবাই নিজেদের আসনে চুপটি করে বসে পরে।
মাস্টারমশাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কালোরঙের শক্ত বোর্ডে সাদা চকের আচড় কাটতেই হুড়মুড় করে পাঠশালার দরজায় হাজির হলো,পাঠশালার অতি জনপ্রিয়, চঞ্চল, সপ্তদশী কিশোরী, উড়নচণ্ডী ওরফে তিস্তা।
পাঠশালা’র মধ্যিখানে অবস্থানরত ছাত্রী ভ্রমরী উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো,
-‘তিস্তা, পঁচা বস্তা আসছে মাস্টারমশাইইইই।’
মাস্টারমশাই এর হাতের চক খানা মাটিতে পড়ে যায়। বিরাট চিৎকারে আর কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া কান্ডে’র ভাবনায় একটু অন্যমনস্ক ছিলো বিধায় চকের এ দশা।
তিস্তা মাস্টারমশাই এর হতভম্ব অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দেয়। মাঝ সিঁথিকাটা মাথার দু’টা ছোট ছোট ঘাঁড় অব্দি ঝুলে থাকা বেনী ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
-‘মাস্টারমশাই’র দাঁতে পোকা,
মাস্টারমশাই বড্ড বোকা।’
তিস্তা’র এই নির্বোধ ছন্দখানি কারো কান অব্দি পৌঁছায় নি। তিস্তা’র কান’ই নিজেকে ধন্য মনে করলো এত সুন্দর ছন্দখানা শুনে। তাছাড়া মাস্টারমশাই’র কান অব্দি ছন্দটা গেলে উড়নচণ্ডী’র গাল দুটো চড়িয়ে ছাল তুলে দিতো। এ জন্য নিজের কন্ঠস্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিস্তা। সে ধীর শব্দ প্রদান করে ছন্দখানি বের করেছে বলেই তার গাল দুটো আজ বেঁচে গেলো।
এতক্ষণ অব্দি ঘটে যাওয়া সবটা বিব্রতকর পরিস্থিতি’র রাগ তিস্তা’র উপর গিয়ে পড়লো। চিকন বেতের লাঠিটা দিয়ে তিস্তার বা’হাতের বাহুতে আঘাত করে মাস্টারমশাই। শাসানি’র স্বরে বলে,
-‘তুই রোজ রোজ পড়তে আসিস দেড়ি করে। বাড়িতে কী কাজ করিস রে? তোর বাবা রে আমার কাছে আসতে বলবি। তোর আর পড়াশোনা হবে না। এতটুকুতেই থামাতে বলবো। বিয়ে করে সংসার ঠেলবি সেটাই ভালো।’
তিস্তা মাথা নিচু করে পায়ের নখ দিয়ে মাটির মাঝে আচর কাটে। রোজ রোজ মাস্টারমশাই একই কথা বলে, নতুন কিছু বুঝি বলা যায় না? বিয়ে করলে কী আর সে অত দুষ্টুমি করতে পারবে? মাস্টারমশাই টা বড্ড বোকা। বুঝে কম।
তিস্তা’র প্রাণপ্রিয় সই নিজের কণ্ঠটা সাধারনের থেকে একটু উঁচু করে বললো,
-‘মাস্টারমশাই, উড়নচণ্ডী তো আজ অনেক আগে পাঠশালাতে আসবো বইল্যা ঘর থেইকা বের হইছে। তবুও ও অত দেরি করলো ক্যান? কোথায় ছিলো জিজ্ঞেস করেন।’
ভ্রমরীর কথা শুনে প্লাবনের ভ্রু খানিকটা কুঁচকে আসে। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলে,
-“কার বাড়িতে আম,জাম,কাঁঠাল এসব চুরি করতে গিয়েছিলি? নাকি বেলীফুল কুড়াতে গিয়েছিলি?’
তিস্তা নিজের সই’র পানে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে। সঠিক সময়, সঠিক বাঁশটা খাওয়াতে মেয়েটা উস্তাদ।
প্লাবন তিস্তা’র কান টেনে দিয়ে বলে,
-‘আর যদি কখনো দেরি হয়,তবে এ’মুখো হবি না। মুখে কী কুলুপ এঁটেছিস? কথা বলিস না কেনো?’
-‘কথা বললেই তো আপনি মারবেন মাস্টারমশাই।’
তিস্তা’র সহজ সরল কথাটাতে তার কানে টান খাওয়ার পরিমাণ বাড়লো, সাথে বাড়লো মাস্টারমশাই এর কণ্ঠের তেজ, চেঁচিয়ে বললেন,
-‘প্রশ্নের আগে তোর জবাব তৈরী কিন্তু কাজের বেলা কাঁচকলা। যা টেবিলে গিয়ে বস। আর বিরক্ত করবি না কেমন? যা।’
তিস্তা মাথা নাড়িয়ে ধপ করে ভ্রমরী’র পাশে গিয়ে বসলো। তাল মাটিতে পড়ার মতন শব্দ করে মার বসালো সই এর পিঠে। ভ্রমরী ব্যাথাতুর কণ্ঠে ‘আহ্’ করে উঠলো।
ভেসে এলো মাস্টারমশাই’র আরেক দফা রামধমক। অতঃপর কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখলো পুরোটা সময়। কখনো একে,কখনো ওকে বিরক্ত করে গেলো পড়ার সময় টুকু। মাঝে মাঝে পিঠে বেতের আঘাতও খেলো। এ আর নতুন কী! প্রতিদিনে’র পুরাতন রুটিন।
পড়া প্রায় শেষের দিকে। ভ্রমরী এতক্ষণে পেটে জমিয়ে রাখা কথাটা আর জমিয়ে রাখতে না পেরে বলেই ফেললো,
-‘জানিস তিস্তা, মাস্টারমশাই’কে কে জেনো চিরকুট দিয়েছে। তাও আবার প্রেম প্রেম চিরকুট। তুই দেরিতে এলি বলে মজা টা পেলি না। এজন্যেই বলি তোর তাড়াতাড়ি আসার অভ্যাস করা উচিত। কী ভয়ঙ্কর মজা টা থেকে বঞ্চিত হলি।’
তিস্তা মুখ ভেংচি দিয়ে উঠে। ফিসফিস করে বলে,
-‘তুই আর তোর মাস্টারমশাই মিলে প্রেম প্রেম চিরকুট পড় আর মজা নে। আমার কী! দাঁড়া, তুই আমায় মার খাইয়েছিস না ডাই’নী? এবার দেখ তোর কী করি।’
তিস্তার এহেন হুমকিময় কণ্ঠে ভড়কে যায় ভ্রমরী। ভয়ভয় কণ্ঠে কিছু বলার আগেই তিস্তা চওড়া কণ্ঠে বলে উঠলো,
-‘মাস্টারমশাই, আপনারে নাকি কেউ চিরকুট দিয়েছে? আমাদের মিষ্টি খাওয়াইবেন না? চিরকুট পাইলে মিষ্টি খাওয়াইতে হয়।’
প্লাবন সবে বোর্ডের শেষ লেখা টুকু সম্পূর্ণ করেছে। তিস্তার দুষ্টুমি মাখা কণ্ঠে সে মনে মনে কিছুটা হোঁচট খায়। নিজেকে ধাতস্থ করে সেকেন্ড বিশের মাঝেই। হাতের মাঝে লিখে ক্ষয় হওয়া অর্ধেক চক টুকুন ছুঁড়ে মারে তিস্তার বরাবর। তর্জনী আঙুলটা উচিয়ে ধমকের স্বরে বলে,
-‘এতটুকু একটা মেয়ে,কী বুজিস চিরকুটের? দিন দিন যে গোল্লায় যাচ্ছিস বাড়ির মানুষ জানে? নাকি জানানোর ব্যবস্থা করবো?’
তিস্তা যতটুকু পারে নিজের মুখ-মন্ডলে নিষ্পাপের ছোঁয়া এনে অসহায় কণ্ঠে বলে,
-‘মাস্টারমশাই আমি তো জানতাম না এসব। এই ভ্রমরী বলেছে সব।’
ভ্রমরীর পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় প্লাবন। রাশভারী কণ্ঠে বলে,
-‘বোর্ডে করানো অংক টা তুমি কাল পাঁচবার করে আনবে ভ্রমরী। মনে থাকবে?’
ভ্রমরী কেবল অসহায়দের মতন মাথা নাড়িয়ে বলে,
-‘আইচ্ছা মাস্টারমশাই।’
-‘এই আইচ্ছা কী? আচ্ছা বলবা। কেমন?’
ভ্রমরী আবার পুতুলের ন্যায় মাথা নাড়ায়। প্লাবন এবার সবার উদ্দেশ্যে বলে,
-‘যাও আজ সবার ছুটি। বিকেল তো হয়েছে। মনে হয় পাঁচ টা বাজে। যাও সবাই। কাল ঠিক সময়ে চলে আসবে। আর হ্যাঁ, এই চিরকুট নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা যদি আমায় নিয়ে ছড়িয়েছে তবে খবর আছে।’
সবাই যার যার মতন মাথা নাড়িয়ে দ্রুত বই খাতা নিয়ে ছুট লাগায় নিজেদের গন্তব্যে। তাদের সাথে তিস্তাও যোগ দিতে নিলে প্লাবন গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-‘তিস্তা,তুই কোথায় যাচ্ছিস? আজ তুই দেরি করে এসেছিস। তাই তোর শাস্তি হলো সন্ধ্যা অব্দি এখানে পড়বি। আমি একটু বাজারে যাবো, তোর বাবাকে বলবো যাওয়ার সময় জেনো তোকে নিয়ে যায়। তুই তো ছাড়া গরু,একা ছাড়া যায় না আবার।’
তিস্তা তেতে উঠে। কিন্তু কে পরোয়া করে তার তেজ? ভ্রমরী হাসতে হাসতে “ঠিক হয়েছে” বলে বেরিয়ে যায়। তিস্তা মুখ ভেংচি দিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ে। পুরো রুমটাতে সে একা। টিনের চালের ঘর। মাস্টারমশাইও তাদের বাড়ির জন্য বাজার করতে গ্রামের হাঁটে চলে গিয়েছে। মাস্টারমশাই এর অসুস্থ মা ছাড়া পুরো বাড়িটাতে আর কেউ নেই। মানুষটা প্রায় শয্যাশায়ী। মাঝেমাঝে একটু হাঁটাহাঁটি করে। কোনো কাজ করতে পারে না। তারা আগে শহরে থাকলেও মাস্টারমশাই একটু নিবিড়ভাবে বাস করার জন্য এই গ্রামে খুঁটি গেড়েছে। শিক্ষিত হওয়ায় গ্রামের স্কুলে পাঠদান করায় সাথে বাড়িতে প্রাইভেট পড়ায় মধ্যাহ্নের দিকে। তাদের বাড়ির কিছু কাজ গ্রামের এক চাচী করে দেয়। মাস্টারমশাই তার বিনিময়ে বেশ কিছু টাকাকড়ি দেয় অবশ্য। আর বাদবাকি গুলো মাস্টারমশাই করে।
বেশখানিকটা সময় নিজের মাধ্যমিকের বইটা নেড়েচেড়ে সরু টেবিলটার উপর গভীর নিদ্রায় চলে যায় তিস্তা। সারাদিনের দৌড়ঝাঁপে দেহটা বেশ ক্লান্ত। এবার একটু স্বস্তি মিলুক তারও।
গ্রামের পথ ধরে বাড়ি ফিরছে প্লাবন। এক হাতে তার বাজারের জিনিসপত্র। ঠিক বাড়ির কাছাকাছি আসার পর তার মনে পড়লো পকেটে থাকা ভীষণ অযত্নের চিরকুট খানার কথা। যা একজন ভীষণ দুষ্টুমি বুদ্ধি দিয়ে লিখেছে। আদৌও চিরকুটে লিখা ভাষা গুলোর গভীরতা হয়তো তার জানা নেই, তবুও মাস্টারমশাই’কে বিব্রত অবস্থাতে ফেলার জন্য এই কু ব্যবস্থা। প্লাবন চিরকুটটা তে বেশখানিকটা সময় হাত বুলাই। লেখা গুলোর মাঝে তিস্তার ছোট গোলগাল মিষ্টি মুখখানা ভেসে আসে। মেয়েটা চিরকুট লিখেছে মজা করার জন্য কিন্তু সে ভুলেই গেছে মাস্টারমশাই প্রতিনিয়ত তার খাতা দেখে, তার হাতের লেখা চিনে। এমনকি পায়ের নখ হতে মাথার চুল অব্দি সব মাস্টারমশাই জানে। আনমনেই হাসে মাস্টারমশাই। পথিমধ্যে বাড়ির পাশে মতিন চাচা’র সাথে দেখা হলো। মাস্টারের থেকে দ্বিগুণ বয়সী লোকটা মাস্টারকে দেখার সাথে সাথে সম্মানের সহিতে বললো,
-‘আসসালামু ওয়ালাইকুম মাস্টারমশাই। কেমন আছেন বাবা?’
প্লাবনও সালামের উত্তর দিয়ে শ্রদ্ধার সাথে বললো,
-‘এই তো চাচা ভালো। আপনি?’
-‘আমিও ম্যালা ভালো আছি বাবা। কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন। আপনি আসার পর থেইকা গ্রামের ছেলেপেলে ইস্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখায়। আপনার প্রতি আমাগো কৃতজ্ঞতা রইলো।’
প্লাবন কেবল মুচকি হাসে। দু’বছর যাবত সবার মুখে একই কথা শুনে আসছে। বেশ শান্ত স্বভাবের হওয়াতে রাতারাতি গ্রামের সবার পছন্দের তালিকায় পড়ে গেছে।
প্রায় বছর দুই আগেই এ গ্রামে এসেছিল তারা। এরপর থেকেই গ্রামের সবার কাছে মাস্টারমশাই হয়ে গেছে। ছোট বড় সবার সম্মানের পাত্র। কেউ তার মুখের উপর কথা বলে না কেবল একজন ছাড়া। প্লাবন আবারও মুচকি হাসে।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় আট টা বাজলো প্লাবনের। পড়ার ঘরে আলো জ্বলছে দেখে অবাক হলো। ঘরটার ভিতর গিয়ে সে অবাকে হা হয়ে গেলো। তিস্তা মেয়েটা এখনো বাড়ি যায় নি। বরং নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। অন্যান্য দিন হাজার বলে গেলেও মেয়েটা থাকে না আর আজ এত রাত অব্দি এখানে!
প্লাবন হালকা হাসে। ঘুমিয়ে থাকা নিষ্পাপ মুখখানার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা বেশ আদুরে। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতন তাকে ভাবতে পারে না প্লাবন। মেয়েটার অপ্রস্তুতময় দুষ্টুমি টা নজর কাড়ে যে তার।
নিজের মুগ্ধতা নিজের মাঝে চেপে রাশভারী কণ্ঠে ডেকে তুললো তিস্তা’কে। তিস্তা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরক্ষণেই এত রাত অব্দি ঘুমিয়ে থাকার জন্য কতক্ষণ হা হুতাশ করলো। একা একা চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই প্লাবন নিজের টর্চ লাইট টা নিয়ে বের হয়ে এলো৷ একা রাতে কোনো মতেই ছাড়া যাবে না যে।
___
খুব দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য বাগানের পথ ধরে বাড়ি ফিরছে প্লাবন আর তিস্তা। প্লাবনের বড় বড় স্যান্ডেল জোড়া তিস্তার পায়ে শোভিত আছে। মেয়েটা জুতো পড়ে আসে নি। আধাঁর রাস্তায় কিছু পায়ে বিঁধলে কেঁদেকেটে হয়রান করবে। বেশ আহ্লাদী তো। তাই প্লাবনের জুতো তাকে দিয়েছে।
বুকের মাঝে বই দুখানা চেপে সাবধানে পা ফেলে চলছে তিস্তা। কেমন গা ছমছমে রাস্তা। তার ভীষণ ভয় করছে। তাই, দ্রুত গিয়ে মাস্টারমশাইয়ের হাতটা চেপে ধরলো সে।
প্লাবন সাবধানে পা ফেলতে ফেলতে বলল,
-‘কিরে, ভয় পাচ্ছিস?’
তিস্তা ভীত স্বরে বললো,
-‘হ্যাঁ।’
প্লাবন আর কিছু না বলে তিস্তার হাতটা ধরে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ বাগানের অপরপাশ থেকে কিছু একটার শব্দে ভয় পেয়ে যায় তিস্তা। ধীর গতিতে বলে উঠে,
-‘আম্মা গো ভূত।’
প্লবন দ্রুত তিস্তার মুখ চেপে ধরে। হুশিয়ারী কণ্ঠে বলে,
-‘চুপ কর। ভূত না। কোনো মানুষ। চুপ কর।’
তিস্তা তবুও ভয়ে কেঁপে উঠে। প্লাবন গাছের পাতা গুলো একটু সরাতেই দেখে মোড়লের বাড়িতে চকচকে ঝকঝকে জামা পড়া কতগুলো মেয়ে ঢুকছে। তিস্তা কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে থাকলেও প্লাবনের যা বুঝা তা বুঝা হয়ে যায়। সে তিস্তার হাত ধরে ব্যতিব্যস্ত স্বরে বলে,
-‘চল তিস্তা, দেরি হচ্ছে৷’
তিস্তা তখনও কৌতূহল চোখে তাকিয়ে প্লাবনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘এই মেয়ে গুলো মোড়ল চাচার বাড়িতে কেনো? এরা কারা মাস্টারমশাই? আমাদের গ্রামের তো না।’
প্লাবন উত্তর দেয় না। কেবল রাশভারী কণ্ঠে বলে,
-‘যেখানে সেখানে প্রশ্ন করতে নেই তিস্তা। তাড়াতাড়ি চল এখান থেকে। কেউ দেখতে পেলে সর্বনাশ হবে।’
তিস্তার কৌতূহল তবুও মিটে না। এ ব্যাপারে তার জানতে হবে যে। মাস্টারমশাই এর মনে ভয় ঢুকে। মেয়েটা যা কৌতূহল প্রবণ এত দ্রুত ওর কৌতূহল মিটবে না। ওর ঝোঁক না আবার কোনো সর্বনাশ ডাকে।
চলবে?
#সূচনা_পর্ব
#মধ্যাহ্নে_মাস্টারমশাই
#মম_সাহা