মনের মানুষ❤️পর্ব-১৪

0
621

#মনের_মানুষ ❤️
#চতুর্দশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸

আহেলি একাই চুপচাপ বসে আছে তাছাড়া বাকি সকলেই রঙের খেলায় মেতে উঠেছে……সপ্তক,রিয়া অনুশ্রী সকলে মিলে একে অপরকে আবীর মাখাতে ব্যস্ত।ওদের সাথে ওখানের কয়েকটা ছোট্ট বাচ্ছাও যোগ দিয়েছে।আহেলি সকলকে দেখতে ব্যস্ত……এমন সময় ওর পাশে প্রান্তিক এসে বসলো।আহেলি প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো…..সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে আছে ছেলেটা,ক্যাম্পে থাকার ফলে ক্লান্ত লাগছে….তাও ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।

“আপনি বসে আছেন যে?রঙে এলার্জি নাকি?”

প্রান্তিকের কথায় আহেলি দুদিকে ঘাড় নেড়ে বললো,,,

“না না….এলার্জি হবে কেনো?”

“আমি অনেক মেয়েকেই দেখেছি বলে যে রঙে নাকি এলার্জি আছে….তাই ভাবলাম আপনারও!”

“না সেরকম কিছু নয়…..আসলে সবসময় মন ভালো থাকে না।”

“মন ভালো না থাকলে সেটা ভালো করে নিতে হয়….মনখারাপ বলে বসে থাকলে হবে?”

“মুখেই ওরকম বলা যায়।আপনার মনখারাপ থাকলে আপনি পারতেন হাসি মজা করতে।”

আহেলির কথায় প্রান্তিক মুচকি হেসে বললো,,,,

“সামনে তাকিয়ে একবার দেখুন আহেলি….যেসব বাচ্ছারা এখানে খেলছে ওরা সকলেই এখানকার বাসিন্দা।ওদের সকলেরই বাড়িতে ভীষণ অভাব…সকলের বাড়িতে কোনো না কোনো সমস্যা আছে।তাও ওরা আনন্দে মেতে উঠেছে….কারণ আনন্দ মজাই পারে আমাদের দুঃখের স্মৃতিগুলো ভুলিয়ে দিতে।”

“সবার সমস্যা কি এক প্রান্তিক?আমি আর সব্বার মতো পারিনা সবটা এতো তাড়াতাড়ি ভুলতে।”

“আপনার কি সমস্যা জানেন আহেলি?আপনি নিজের দুঃখটা খুব বড়ো করে দেখছেন…..আপনার চেয়েও অনেকে আরো বেশি কষ্টে আছে এটা জানেন কি?তাও তারা জীবনে হেরে যায়নি….প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।আর আপনি!সামান্য একটা কারণে নিজের জীবনটা বিসর্জন দিতে গেছিলেন…..একবারও সেই মুহূর্তে আপনার বাবা-মায়ের কথা মনে পড়েনি?আপনি না থাকলে কি অবস্থা হতো ওইদুটো মানুষের?যারা আপনাকে সেই ছোট্ট থেকে এতো বড়ো করলো…মানুষের মতো মানুষ তৈরি করলো তাদেরকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার আগে একবারও আপনার বুক কাপেনি?আপনার ওই প্রেমিক আপনার কাছে বড়ো হলো?কাকে আপনি প্রায়োরিটি দিলেন?যে আপনাকে ভালোইবাসেনা…..হসপিটালে রোজ কতজন রক্তের জন্য কান্নাকাটি করে।আর আপনার মতো মানুষেরা আবেগের বশে এসব কাজ করেন।”

প্রান্তিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই আহেলি কেঁদে উঠলো…..ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করেও পারলো না শেষ অব্দি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।প্রান্তিক আহেলির কাছে সরে এসে সান্ত্বনার সুরে বললো,,,,,

“একই কাঁদছেন কেনো?আমার কথায় কি খুব খারাপ লাগলো?আই এম এক্সট্রিমলি সরি আহেলি…..প্লিস কাঁদবেন না।এতো সুন্দর একটা অনুষ্ঠানে এসে এভাবে।আমারই দোষ….আসলে আপনাকে এখানে বসে থাকতে দেখে রাগ হয়েছিলো তাই…..প্লিস আমার কথায় কিচ্ছু মনে করবেন না।”

“আপনি কিছু ভুল বলেননি প্রান্তিক…..সত্যিই আমি ভীষণ বোকা।নাহলে ওই প্রতারকের জন্য নিজের বাবা মাকে এতটা কষ্ট দিই!!আমি খুব খারাপ…..”

“আপনি মোটেই খারাপ নন….খুব ভালো মনের মেয়ে।শুধু নিজের ইমোশনটা কন্ট্রোল করতে পারেন না এই যা।যাক সেসব বাদ দিন….এখন চোখটা মুছুন।”

আহেলি দুহাতে চোখ মুছলো….জড়ানো গলায় বললো,,,

“আমার নয় মনখারাপ…..কিন্তু আপনার কি সমস্যা?আপনি কেনো রঙ খেলেননি?খালি কয়েকটা ছবি ক্লিক করলেন তো।”

“”যার জন্য এলাম সেই যদি মুখটা গোমড়া করে বসে থাকে তাহলে আর হোলি খেলা যায়?”

“আমার জন্য আপনি পার্টিসিপেট করেননি?”

“নাহ….আমি তো এই সাদা শার্টে যাতে রঙ না লাগে তার জন্য দূর থেকেই দেখছি সবটা।”

প্রান্তিকের কথায় আহেলি অল্প হেসে বললো,,,
“আপনি যদি ইচ্ছে করে আজকের দিনে এরকম সাদা শার্ট পরে আসেন তাহলে আর কিই বা করার আছে?আপনাকে তো রঙ দেবেই।”

“অতই সহজ নাকি সবটা?আমি একজন ডক্টর….সকলে শ্রদ্ধা করে আমায় তাই আমার অনুমতি না নিয়ে কেউই এ কাজ করবে না।নাহলে এতক্ষন আমার শার্টটা আর সাদা থাকতো না।”

“ওহ আচ্ছা….এই ব্যাপার।কিন্তু বাকিদের কাছে আপনি ডক্টর হলেও আমার কাছে তো আর নয়।তাই আমি দিতেই পারি।”

আহেলির কথায় প্রান্তিক ভ্রূ কুঁচকে অবাক হয়ে তাকাতেই আহেলি অল্প হেসে উঠে গেলো।অনুশ্রীর থেকে লাল আবীর এনে প্রান্তিকের সামনে দাঁড়ালো…..আহেলির হাতের মুঠোয় রঙ দেখে প্রান্তিক দাঁড়িয়ে নাসূচক ইশারা করলো।প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে আহেলি হাসলো তারপরই হাতের মুঠো আলগা করে রঙটা ছুড়ে দিলো প্রান্তিকের দিকে।সাথে সাথে প্রান্তিকের শার্ট থেকে শুরু করে মুখ অব্দি লাল আবীর ভর্তি হয়ে গেলো।প্রান্তিক চোখ কুঁচকে আহেলির দিকে তাকাতেই আহেলি জিভ কেটে বললো,,,,

“বুড়া না মানো হোলি হে…….”

“তাই না?তবে টিট ফর ট্যাট এটা জানেন তো?”

বলে প্রান্তিক এগিয়ে গেলো আহেলির দিকে।আহেলি তৎক্ষনাৎ ওখান থেকে সরে যেতে গেলো তবে তার আগেই আহেলির একটা হাত ধরে নিলো প্রান্তিক।আহেলি কোনোরকমে বললো,,,,

“এভাবে ধরে কোনো লাভ নেই।আপনার কাছে রঙ কোথায়?”

আহেলির কথায় প্রান্তিক বাঁকা হেসে নিজের গালে হাত দিলো….হাতটা একটু ঘষে সেটা আহেলির দিকে দেখিয়ে ভ্রূ নাচালো।আহেলি দুদিকে ঘাড় নাড়তে আবারো হাসলো প্রান্তিক…..তারপর আহেলির গালে নিজের হাতটা ছুইয়ে দিলো।

ওদিকে তখন মন্দিরের পাশে একটা সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে…..

রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে–
তোমার আপন রাগে, তোমার গোপন রাগে,
তোমার তরুণ হাসির অরুণ রাগে
অশ্রুজলের করুণ রাগে॥
রঙ যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে…..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here