মনের মানুষ❤️পর্ব-৬

0
720

#মনের_মানুষ ❤️
#ষষ্ঠ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸

ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগমন হয় ষরঋতুর শেষ ঋতু বসন্তের…..বসন্তের আগমনে ধরিত্রী হয়ে ওঠে আরো সুন্দর আর সজীব।পাতাঝরার মরশুমের শেষে প্রকৃতি সেজে ওঠে নতুন করে…..আর শান্তিনিকেতন এসময় হয়ে ওঠে আরো অপরূপ।আহেলি এরআগে শান্তিনিকেতনের সৌন্দর্যের কথা বইয়ের পাতায় পড়েছিলো আর আজ চোখের সামনে দেখে মুগ্ধ।কয়েকদিন পরেই দোল…..এসময়টা শান্তিনিকেতনে চলে বসন্ত উৎসব।চারদিকে সেসবের প্রস্তুতি চলছে।যদিও আহেলিরা দোলের আগেই ফিরে যাবে বলে ঠিক ছিলো কিন্তু প্রান্তিকের কথায় দোলের সময় শান্তিনিকেতনে না থাকলে জীবনটা আসলেই বৃথা……আহেলি যদিও বলেই দিয়েছে ওর পক্ষে একটাদিনও বেশি থাকা সম্ভব নয়।এখনো তাই কিছু ঠিকঠাক হয়নি।

বহু দিন ভাব তরঙ্গে ভেসেছি কতই রঙ্গে,
বহু দিন ভাব তরঙ্গে ভেসেছি কতই রঙ্গে,
সুজনের সঙ্গে হবে দেখা শুনা।
তারে আমার আমার মনে করি,
আমার হয়ে আর হইলো না
আমার আমার মনে করি,
আমার হয়ে আর হইলো না
দেখেছি,
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা।

কয়েকজন বাউলের দল মিলে বাজনা বাজিয়ে গান গাইছিলো…..তাদেরকে ঘিরে রয়েছে উৎসুক শ্রোতাগন।আহেলি এবং বাকি সকলে রয়েছে….প্রান্তিক ওদেরকে এনেছে এখানে।রিসোর্ট থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা জায়গায় সন্ধ্যের সময় নাকি বাউল গানের আসর বসে…..কথাটা শুনেই সকলে উৎসাহিত হয়ে পরে আসার জন্য।তখন প্রান্তিক বলে ও নিজেই নিয়ে যাবে সকলকে…….সেইমতো ওরা একটা বাউলগানের আসরে বসে আছে।এসময়টা শান্তিনিকেতন প্রচুর লোক সমাগম হয়……যদিও ওরা যেখানে এসেছে সেখানে খুব একটা ভিড় নয়।আহেলি খুব মন দিয়ে শুনছিলো গানটা……গানের প্রতিটা কথাই যেনো ওর আর ঋষভের সম্পর্ককে স্পষ্ট করছিলো।আহেলির মাঝেমধ্যে মনেহয় ও একাই এই সম্পর্ক বয়ে নিয়ে চলেছে…..এতো কিসের ব্যস্ততা ঋষভের যেখানে ওর জন্য একটুও সময় নেই।অনুশ্রীর কথায় আহেলি ফোনের সুইচ ওন করেনি…..হয়তো ঋষভ মামনির কথায় ফোন করবে।কাউকে দিয়ে তো জোর করে আর কিছু করানো যায় না….

“কি ব্যাপার ম্যাডাম? এতো কি ভাবছেন মনদিয়ে?সামনে এতো সুন্দর গান আর আপনার মন কোথায়?”

প্রান্তিকের কথায় চমকে পাশে তাকালো আহেলি……ছেলেটা কখন ওর পাশে বসেছে সেটা খেয়াল করেইনি।আশেপাশে তাকাতে দেখলো ওর বাকি বন্ধুরা উঠে যে যার মতো ছবি তুলছে।

“কি এতো ভাবেন সারাদিন?রাজ্যের চিন্তা ভাবনার দায়িত্ব কি আপনার কাঁধে?”

“আপনি ছেলে হয়ে এতো বকবক করেন কিকরে?,আর আমার প্রতি এতো নজরদারি বা কখন করলেন?”

“বারে সারাদিন যে একসাথে ঘুরে বেড়ালাম…..তাতে খেয়াল হবে না।আর বকবক করার অধিকার কি শুধু মেয়েদের?”

প্রান্তিকের প্রশ্নের উত্তরে আহেলি কিছু বলার আগেই অনুশ্রী ডাকলো আহেলির নাম ধরে…..কাঁধের ব্যাগটা ঠিক করে নিয়ে আহেলি উঠে সেদিকে এগিয়ে গেলো।

সকলে মিলে মেঠো রাস্তা দিয়ে হেঁটে ফিরছিলো রিসোর্টে…..রিয়া আর সপ্তক ওদের থেকে একটু পেছনে নিজেদের মতো গল্প করতে করতে আসছে।সৌমিলি এখন ফোনের মধ্যে মাকে আজকের সারাদিনের গল্প শোনাতে ব্যস্ত।অনুশ্রী আহেলি আর প্রান্তিক একমাত্র চুপচাপ এগিয়ে চলেছে…..এরিমাঝে নিস্তব্ধতা ভেঙে অনুশ্রী বললো,,,,

“আজকে যে ফটোগুলো তুললে প্রান্তিকদা সেগুলো কি এক্সিবিশনে দেবে?”

অনুশ্রীর কথায় আহেলি অবাক হয়ে তাকাতেই অনুশ্রী হেসে বললো,,,,

“প্রান্তিকদা একজন ওয়াল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার।প্রতিটা সেমিনারে ওর ফটোর যা চাহিদা কি বলবো ভাই…..আর প্রান্তিকদা তো বছরের বেশিরভাগ সময় বাইরেই কাটায় এই করে।”

“থাক অনু!তোকে আর আমার গুণাবলী শোনাতে হবে না…আর যার কাছে শোনাচ্ছিস সে শুনে আদেও খুশি হবে বলে মনেহয় না।”

আহেলি প্রান্তিকের দিকে সরুচোখে তাকিয়ে বললো,,,,
“আপনি কি সেই প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছেন যখনই আমার সাথে দেখা হবে তখনই ঝগড়া করবেন?”

“ঝগড়া কোথায় করলাম আমি?আপনি তো মুখে সাইলেন্সার লাগিয়ে ঘোরেন…..তাই বললাম এরকম মানুষকে এসব বলে লাভ নেই।আসলে আপনি আমার গুণের কথা শুনে তো আর প্রশংসা করবেন না….তাই বেকার সময় নষ্ট করে কি লাভ?”

“আপনি নিজের প্রশংসা শুনে খুব খুশি হন বুঝি?”

“তা আর হবো না?কেউ যখন বলে প্রান্ত তুই দারুন ফটো তুলিস তখন আমার বুকটা জুড়িয়ে যায় একদম।”

আহেলি আর প্রান্তিকের কথা শুনে তো অনুশ্রী অবাক….একবার প্রান্তিকের দিকে আরেকবার আহেলির দিকে তাকিয়ে সবটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো।অনুশ্রীকে ওমন করে দেখতে দেখে প্রান্তিক হেসে বললো,,,
“আরে বাবা তোর প্রিয় বান্ধবীর সাথে ট্রেনের ওঠার আগেই আলাপ হয়েছে…..যদিও আলাপ নয় বরং ঝগড়া বলা যায়।”

“সেকি আহেলি?কৈ কিছুই তো বললি না আমায় তুই….”

“তোকে আর কি বলবে?আমার সানগ্লাস ভেঙে আবার আমাকেই কতো কথা শোনালো!”

“আপনি আবার আপনার ওই সানগ্লাস নিয়ে শুরু করলেন?”

“এইইই তোরা দুজনই থাম……কিভাবে বাচ্ছাদের মতো ঝগড়া করছে দেখো দুটোতে”

কথায় কথায় ওরা রিসোর্টে এসে পৌঁছায়…..খাওয়া দাওয়া সেরে সকলেই তাড়াতাড়ি শুয়ে পরে যাতে কাল তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারে।আহেলি আর অনুশ্রী পাশাপাশি শুয়ে ছিলো…..তখনই অনুশ্রী বললো,,,

“এইই তুই কৈ ঋষভদার সাথে কথা বললি না তো?”

“সারাদিনের ঘোরাঘুরির মধ্যে সময় হয়নি রে….আর অনেকটা রাত হয়ে গেছে।এখন আর কথা বলতে ভালো লাগছে না।”

আহেলির কথায় অবাক হয়ে যায় অনুশ্রী।যে মেয়েটা নিজে থেকে ঋষভের সাথে কথা বলার জন্য উতলা হয়ে ওঠে সে ঋষভ কল করবে জেনেও ফোনের সুইচ ওন করেনি……

“কি হয়েছে আহেলি?রাগ করে আছিস ঋষভদার ওপরে?”

“ধুর!! তুই যে কি বলিস না অনু…..আমি ঋষিদার ওপর রাগ করার কে?আর ওর সময় মতো আমায় চলতে হ নাকি?”

“এটা তুই ঠিকই বলেছিস….যাক অনেক রাত হলো।ঘুম তুই…..কাল আবার ঘুরতে বেরোবো।সঙ্গে যদিও প্রান্তিকদা আছে।”

“তুই ওই ছেলেটার নামে দুঘটি জল বেশিই খাস অনু…..সঙ্গে থাকলে সারাক্ষণ বকবক করে।ভালো লাগে না।”

“আরে কি বলছিস ভাই?,তুই জানিস প্রান্তিকদা একজন ডক্টর….সারাক্ষণ তো হসপিটাল নিয়েই পরে থাকে।তবে যখনই ফাঁকা সময় পায় তখনই কোথাও না কোথাও ঘুরতে চলে যায়।”

অনুশ্রী কিছু বলার আগেই ওর ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো…..হাতে ফোন নিয়ে অনুশ্রী বললো,,,

“ঋষভদার কল!!ভাই তুই রিসিভ কর….সেই তো তোকেই চাইবে।”

আর কথা বাড়ায় না আহেলি।অনুশ্রীর হাত থেকে ফোন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়…..রিসোর্টএ আলো জ্বললেও চারপাশটা অন্ধকার।ফোন কানে দেওয়া মাত্রই ওপাশ থেকে ঋষভ গম্ভীর গলায় বললো,,,,

“ফোনটা একটু আহেলি কে দাও তো।”

“বলো কি বলবে।এতো রাতে কল কেনো করলে?”

“আমি এতবার বলে দেওয়ার পরেও ফোন ওন করিস নি কেনো?”

“ভালো লাগেনি তাই।এখানে তো কটাদিন ঘুরতে এসেছি….একটু নিজের মতো সময় কাটাতে চাই”

“যাওয়ার আগে একবার বলে যাওয়ার দরকার বলে মনেহলো না তোর?”

“আমার কথা শোনার জন্য সময় আছে তোমার?বাদ দাও এসব…..তা হটাৎ আমার খোঁজ করছো কেনো ঋষিদা?”

“আহেলি আমি জানি তোর খারাপ লেগেছে সেদিন….আমারও মাথা গরম ছিলো।প্লিস রাগ করিস না….তুই জানিস না আমার ওপর এখন কি পরিমান চাপ।তারমধ্যে যদি তুই রাগ করিস তাহলে কি চলে বল?”

“আমার রাগ নিয়ে তোমায় এতো ভাবতে হবে না ঋষিদা।তুমি থাকো তোমার পার্টির কাজ,বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে।”

“সকলের মতো যদি তুইও আমায় ভুল বুঝিস তাহলে আমি কার কাছে যাবো আহেলি?তুই তো জানিস আমি বাকি সবার মতো নয়।আমি পারিনা সবটা একসাথে সামলাতে…..হ্যাঁ আমি পার্টিতে বেশি সময় দিই তারমানে এই নয় যে তোর কোনো ইম্পর্টেন্স নেই আমার কাছে।”

“মাঝেমধ্যে একটু বুঝিয়ে দিতে হয় ঋষিদা।তুমি বাকি সবকিছুতে সময় দিতে পারো আমায় ছাড়া”

দুজনেই কিছুক্ষন নীরব থাকার পর ঋষভ ওপাশ থেকে বললো,,,,,

“তুই ভাবলি তোর রান্নাটা হয়তো আমি খেয়েই দেখিনি….একবার তোর মামনি কে জিজ্ঞেস করিস রাত্রে খাওয়ার সময় কতটা তৃপ্তি সহকারে আমি খেয়েছি,ইভেন মাকে অব্দি একটুও ভাগ দিইনি।আর তোর গিফটগুলো কিভাবে অযত্নে আছে আমার ঘরে সেটা নাহয় নিজের চোখেই দেখবি ফিরে এসে।ভেবে রেখেছিলাম আজকে তোকে নিয়ে একটু বেরোবো….কিন্তু তুই তো নিজেই চলে গেছিস দূরে।”

“বেশ করেছি এসেছি…..তুমি আমার সাথে এরকম করলে একেবারে সারাজীবনের জন্য দূরে চলে যাবো।তখন বুঝবে কেমন লাগে!”

আর ভুল করেও কোনোদিন এই কথাটা বলবি না আহেলি……দূরে যাবি মানেটা কি?তুই সারাজীবন আমার থাকবি……আর যাই হয়ে যাক তোর মনে শুধু আমি থাকবো।”

ঋষভের কথায় আহেলির চোখ দিয়ে টপ করে একফোটা জল গড়িয়ে পরলো।আজ আহেলি অনেকদিন পর খুশি হয়েছে…..এভাবেই তো ঋষভ এর থেকে সময় চায়।সারাদিনের মধ্যে একটু হলেও।চোখের জলটা মুছে আহেলি ধীর গলায় বললো,,,,

“আই লাভ ইউ ঋষিদা…..এভাবে একটু হলেও সময় দিও আমায়।আমি আর কোনো অভিযোগ করবো না…..”

“কাঁদছিস আহেলি?তবে ঋষির সাথে এই দা শব্দটা কবে বাদ দিবি?ইলেকশন শেষ হলেই বিয়ে করবো তোকে….তখন আমার সব সময় হবে তোর জন্য।আর কথা হোক বা না হোক….এই ঋষভ এর সমস্ত ভালোবাসা শুধুই তোর।”

(গল্প দেওয়া নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে জানি….কিন্তু আমিও নিরুপায়।পরের পর্ব কালকেই পাবেন।)

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here