মনের মানুষ ❤️ পর্ব-২৬

0
718

#মনের_মানুষ ❤️
#ষটবিংশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸

“হাউ ফানি ঋষভ…….তুমি এই পার্টি ছেড়ে চলে যেতে চাইছো?লেটস এনজয়।তুমি কিন্তু কথা দিয়েছো,পুজোর চারটে দিন আমার।”

সারার কথায় হালকা হাসলো ঋষভ।একবার চারপাশটা দেখলো…. অষ্টমীর সন্ধের সময় এই মুহূর্তে এখানে থ
ভেতরের আমেজ আলাদা।সারার নিজস্ব ফ্ল্যাটের মধ্যে এই মুহূর্তে উচ্চস্বরে গান বাজছে সাথে সারার বন্ধুরা নাচানাচি করছে….সকলের হাতেই ড্রিংক্সের গ্লাস।সারা ঋষভ এর দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বললো,,,,

“বেব প্লিস..তুমি সবসময় এরকম ব্যস্ততা দেখাতে পারো না।এ-কদিন তো তোমার ছুটি তাই না?”

“সারা ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড…..পার্টি থেকে ছুটি পেলেও এইসময় আমাদের অনেক কাজ থাকে।একটা দুর্গাপুজোর ফাংশন এটেন্ড করতে হবে আমায়।প্লিস যেতে দাও।”

“হ্যাঁ তো যাও…..তবে তার আগে জাস্ট একটু এনজয় তো করো।”

বলে সারা একটা ড্রিংক্সের গ্লাস এগিয়ে দিলো।ঋষভ নাকে হাত দিয়ে মুখ বিকৃত করে বললো,,,

“সারা তুমি ভালো করেই জানো আমি ড্রিংক করি না….তাই প্লিস এটা নিয়ে কোনো জোর করো না।”

“ওহ কাম ওন ঋষভ…..সবসময় এরকম করলে ভালোলাগে না কিন্তু।”

“কেনো জোর করছো সারা?আজকে দুর্গাপুজোর অষ্টমী।তুমি চাইলে আমরা অন্যভাবে সময় কাটাতে পারতাম।”

“লাইক সিরিয়াসলি ঋষভ?আমার তোমাকে আর পাঁচটা টিপিক্যাল মেয়ের মতো মনেহয় তোমার?যে কিনা নিজের বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে ঠাকুর দেখে বেড়াবে,আইস্ক্রিম খাবে….একসাথে অঞ্জলী দেবে।এসবই এক্সপেক্ট করো?দেন আই এম সরি ঋষভ….আমার থেকে তুমি এসব আর কখনো আশা করো না।আমি এভাবে এনজয় করতে পছন্দ করি।আর তোমাকেও এটাই করতে হবে।”

“আমি তো তোমায় বারন করিনি সারা….জাস্ট আমায় জড়িও না।আমার ভালোলাগে না এসব।একটা আদর্শ নিয়ে থাকি আমি।সো প্লিস ডোন্ট ডু দিস টু মি।”

ঋষভ এর কথায় সারা হাসলো….সারা বেশ অনেকক্ষণ ধরেই ড্রিংক করছে তাই ওর নেশাটাও বেশ ভালোমতো হয়েছে।হেসে সারা বললো,,,,

“আমার ফ্রেন্ডরা তোমায় দেখলে হাসবে ঋষভ…..সারার পেছনে যেসব ছেলেরা ঘুরতো তাদের সাথে তোমার কোনো তুলনা চলে না।সবসময় খালি নিজের আদর্শ….আর কি আদর্শ?অন্যের পা চেটে চলা।না মানে তোমার নিজের কোনো লাইফ নেই?নিজস্ব কোনো মতামত নেই?জ্যেঠুমনির কথায় ওঠবস করতে লজ্জ্বা হয় না তোমার?সারাক্ষণ খালি সভায় গিয়ে চিৎকার আর মিথ্যে প্রতিশ্রুতি…..এইইই তোমার কোনো ফিউচার আছে আদেও?কাল যদি তোমার পার্টি ক্ষমতা হারায় তখন তোমার কি হবে?মিডিলক্লাস ছেলে একটা….আর জ্যেঠুমনি তোমার মতো একটা ছেলের সাথে আমার। জীবনটা জুড়ে দিলো।নেহাত জেঠুমনি আমার সমস্ত খরচ প্রোভাইড করে নাতো তোমার মতো ছেলের কোনো যোগ্যতা নেই আমার সাথে চলার।ডু ইউ নো ক্রিস্টোফার?হি ইস মাই বয়ফ্রেন্ড…ওর সাথে তোমার তুলনা করলে ওকে ছোটো করা হবে।তু-তুমি জাস্ট বোরিং একটা ছেলে….যাও তো আমার সামনে থেকে।জাস্ট বিরক্ত লাগছে আমার তোমাকে দেখে।”

সারার কথা শুনে আর একদন্ড দাঁড়াতে পারলো না ঋষভ।কোনোরকমে বেরিয়ে এলো….সারার সমস্ত বন্ধু ঋষভ এরদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।ঋষভ বেরিয়ে যেতেই সারা বললো,,,,

“আর তোমার সাথে থাকা যায় না….জেঠুমনির কথায় রাজি হওয়াই আমার ভুল হয়েছে।এবার তুমি দেখো ঋষভ তোমার এই গুডবয়মার্কা ইমেজের আমি কি হাল করি।নিজের হাতে এই বিয়েটা ভাঙবে জেঠুমনি সাথে পার্টি থেকে অব্দি বের করে দেবে।”
🌸🌸🌸🌸🌸

প্রান্তিক আহেলি প্রান্তিকের মা সুব্রত বাবু সকলেই দর্শকের চেয়ারে বসে….ওনাদের পুজোর মন্ডপে ফাংশন আজ,সৌরিক তো পারফরমেন্স করবেই সাথে প্রান্তিককে বলা হয়েছে আজ এখানে থাকতে।ওরা সকলেই সামনের সারিতে বসে…..এমন সময় সঞ্চালক উঠলো স্টেজে।আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে সাংসদ ঋষভ এর নাম ঘোষণা করতেই চমকে উঠলো আহেলি।স্টেজে উঠলো ঋষভ…..দুজন মেয়ে এসে ঋষভ এর হাতে ফুলের তোড়া আর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিলো।ঋষভ বরাবরের মতোই মাইক হাতে কিছুক্ষন বক্তৃতা দেওয়ার পর নিজের আসনে বসলো…..

প্রান্তিক ঋষভ এর নামের সাথে সাথে ওর ছবিও দেখেছে তাই চিনতে অসুবিধে হলো না।প্রান্তিক আহেলির দিকে তাকাতেই দেখলো আহেলি অবাক হয়ে একদৃষ্টে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে…..দর্শকের জায়গাটা অন্ধকার তাই তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না।প্রান্তিক আহেলির একটা হাত চেপে ধরতেই ওরদিকে ফিরলো আহেলি,অবাক হয়ে তাকাতে প্রান্তিক নিচু গলায় বললো,,,,

“যার নাম শুনলেই নাকি তোমার রাগ হয় তাকে এতো দেখার কি আছে?”

“আমি এটাই দেখছিলাম যে সারার মতো গার্লফ্রেন্ড থাকার সত্বেও ঋষভ বাবুর এরকম দশা কেনো?”

“কিরকম দশা?”

“তুমি তো একজন ডক্টর….তাহলে বুঝতে পারছো না?একবার দেখো চোখ-মুখের অবস্থা।মনে হচ্ছে যেনো বিশাল মনকষ্টে আছে।খুব মনের জোর দিয়ে ফাংশন এটেন্ড করতে এসেছে।”

“অন্যের মনোকষ্ট না দেখে আমায় দেখো…..ওর সারা জারা যে ইচ্ছে থাক।আর ওর সমস্যা ওই বুঝুক।তুমিই বলেছো শাস্তি ও নিজেই পাবে তাহলে ওর কথা এতো ভাবার কি আছে?এখানে আমায় ছাড়লেই কিন্তু আমরা বেরোবো…..ওদিকে সৌমাল্য আর রিমিকা ওয়েট করছে।”

“আচ্ছা তাই হবে….এখন অনুষ্ঠানে মনোযোগ দাও।সৌরিক এখনই হয়তো আবৃত্তি করতে উঠবে।”

আহেলির কথা মতোই প্রথমে উদ্বোধনী সঙ্গীত আর নৃত্য হওয়ার পর সৌরিক আবৃত্তি করলো।আর তারপর শুরু হলো এলাকার সমস্ত মেধাবী স্টুডেন্টদের সংবর্ধনা দেওয়ার পালা।প্রান্তিকের কাছে যখন এই ক্লাব থেকে সাহায্য চায় ফাংশন নিয়ে তখন প্রান্তিক নিজে থেকেই এই বিষয়টা প্রস্তাব দেয় যে যারা মেধাবী অথচ অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে পারে না তাদের কোনো একটা ব্যবস্থা করা।সেইমতো হয়েছে….সকল স্টুডেন্টকে কিছু টাকা দেওয়া হচ্ছে।এই কাজটা করার জন্য সঞ্চালক প্রান্তিককে ডাকলো…..প্রথমে রাজি না হওয়ায় সকলের অনুরোধে যেতে রাজি হলো প্রান্তিক।সব স্টুডেন্টের হাতে শংসাপত্রসহ একটা করে খাম ধরিয়ে দিলো…..সকলেই খুশি।সঞ্চালক প্রান্তিককে কিছু বলতে বললে প্রান্তিক বললো,,,

“আমি যখন এইচ এসের পর মেডিক্যাল নিয়ে পড়তে শুরু করি,তখন দেখেছিলাম মা কতটা কষ্টে টাকা জোগাড় করতো আমার জন্য…সবটা তো আর স্কলারশিপে পসিবল ছিলো না।আমার এইসব ভাইবোনরা হয়তো ভবিষ্যতে অনেক ভালো জায়গায় পৌঁছাবে,অনেকদূর যাবে কিন্তু তার সুযোগ হয় না সবসময়।বাড়ির পরিস্থিতি হয়তো ওদেরকে এগোতে দেয় না…তাই আমি সকলকে অনুরোধ করেছি ওদের পাশে থাকার জন্য আর সকলে সাড়া দিয়েছে আমার ডাকে।আমি আপনাদেরকে বলবো আপনারাও এইভাবে কাউকে একটা সাহায্য করুন….আপনার অল্প সাহায্য আরেকজনকে এগিয়ে দিতে পারে।”

প্রান্তিকের কথায় সকলেই হাততালি দিয়ে উঠলো।আহেলি আর প্রান্তিকের মা দুজনই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে….ঋষভ একদৃষ্টে চেয়ে আছে প্রান্তিকের দিকে।এরআগে ছেলেটাকে দূর থেকে দেখেছে তাই প্রথমটায় সমস্যা হচ্ছিলো চিনতে….তারপর বুঝতে পেরেছে।এদিকে প্রধান অতিথির চেয়ারে বসেও নিজেকে কেমন একটা লাগছে।বারবার সারার কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে….প্রান্তিক স্টেজ থেকে নামার পর আবার নাচের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।ঋষভ এদিক ওদিক তাকাতে হঠাৎই এক জায়গায় ওর দৃষ্টি থামলো।স্টেজের পাশে আর প্যান্ডেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো ছেলেমেয়ে…একজন প্রান্তিক আর অপরজন আহেলি।দুজনই এমনভাবে কথা বলছে দেখেই বোঝা যাবে একে অপরের সাথে ওদের কি সম্পর্ক।কথা থামিয়ে দুজনই সামনে এগিয়ে গেলো….আর রাস্তার ওপারে যাওয়ার আগে প্রান্তিক শক্ত করে ধরে নিলো আহেলির হাতটা।আর ঋষভ ওদের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো একদৃষ্টে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here