মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৩২
#আনিশা_সাবিহা,
স্পর্শের গভীরতা যখন বাড়তে শুরু করল তখনই মুখ ফিরিয়ে তাকাতেই আকস্মিকভাবে আয়াশ আমার বেশ কাছে অবস্থান করায় উনার ঠোঁটের সঙ্গে আমার ঠোঁটের স্পর্শ লেগে যায়। চোখ কপালে উঠে যায় আমার। তৎক্ষনাৎ ঘাড় বাঁকিয়ে সরে আসতেই উনার হাসি হাসি মুখ আমার চোখে পড়ে। হাসিটা অন্যরকম। দুষ্টুমি মিশে রয়েছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে গালে চুমু খেয়ে বলেন,
–“চলো! নিজ ইচ্ছেতে না হক আচমকা নিজের অজান্তে তো কিস করে ফেলেছো। দ্যাটস ইনাফ ফর মি।”
–“এটা কি করে কিস হলো? আমায় বুঝিয়ে বলুন। আমি তো জানতাম না আপনি আমার কাছে থাকবেন। সরুন।”
চোখ রাঙিয়ে বললাম আমি। আয়াশ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে হাসিটা প্রসারিত করে আমার হাত নিয়ে গিয়ে উনার বুকে লাগিয়ে বললেন,
–“এভাবে চোখ রাঙিয়ো না নিশাপাখি। বুকে গিয়ে লেগে যায় সরাসরি।”
আমি সোজা হয়ে তাকালাম বাইরের দিকে। কাঁচ ভেদ করে বাইরের পরিবেশ স্পষ্ট! অসংখ্য তাঁরা জ্বলজ্বল করছে। তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে একফালি চাঁদ। একটা মুগ্ধ করা দৃশ্য। আমি নিচে বসে আছি কাঁচের আবরণ ঘেঁষে সেই সঙ্গে আয়াশও বসে রয়েছেন আমাকে পেছন থেকে একবারে নিজের হাত দিয়ে আগলে রেখে। অনেকের নিজের প্রিয় মানুষকে নিয়ে অনেক ইচ্ছে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রিয় মানুষটার সঙ্গে রাতের আকাশ দেখা! এটা সবচেয়ে সুন্দর একটি স্বপ্নের মধ্যে একটি। যেটা অজান্তেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার মনে মধ্যে জমে রয়েছে এক পাহাড় সমান অভিমান। তাই একটা কথাও বলছি না আমি।
–“বন্ধ বন্ধ লাগছে না জায়গাটা? হাওয়া দরকার। ওয়েট আমি সামনের কাঁচ খুলে দিচ্ছি।”
বলেই হাত বাড়িয়ে সামনের কাঁচের জানালা খুলে ফেললেন আয়াশ। সাথে সাথেই ঠান্ডা হাওয়া ছুঁয়ে গেল আমাদেরকে। চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। আবারও আমাকে একইরকম ভাবে ধরে রাখেন আয়াশ। ওপরে লাল রঙের একটা সফট লাইট জ্বলছে। সেই আলোতে উনার লোমশ হাত আমার হাতের ওপর দেখতে পাচ্ছি।
–“আরেকবার একটু চোখ রাঙিয়ে তাকাও তো। একটু ভালো করে দেখি। আফটার অল একারণেই তো তোমার চোখের অপারেশন করানো! রিমেম্বার, আই এম বিগ সেলফিশ ম্যান।”
–“আমার চোখ রাঙানোতে যদি আপনার কিছু হয়ে যায় তখন দোষারোপ তো আমার ওপর করবেন। বলবেন আমও প্লান করে আপনাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি। তারপর আবার সেই চলে যাবেন আপনার বন্ধু আকাশের কাছে। তাই চোখ না রাঙানোই শ্রেয়।”
কথাগুলো একরাশ অভিমানের সঙ্গে বললাম আমি। আরো বেশ কিছু কথা শোনাতে ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু কান্নায় গলা ধরে আসছে। তাই সেখানেই থামলাম আমি। আমার কথা যেন শুনেও না শোনার ভান করলেন আয়াশ। আমার ঘাড়ে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে শুরু করলেন। কেঁপে কেঁপে উঠলাম আমি। অভিমানের পাল্লা ভারিয়ে হয়ে আসায় দূরে সরে আসার চেষ্টা করলাম। ক্রুদ্ধ হয়ে বললাম,
–“কি সমস্যা? এমন আচরণ করছেন কেন? আমার কাছেই বা কেন এসেছেন? যান না আকাশের কাছে। আপনার সব সমস্যার সমাধান! যার কারণে আপনি আমাকে অবিশ্বাস করলেন।”
–“উপপস…এতো রাগ তো আমি কখনো দেখিনি তোমার। নাকি অভিমান হলো?”
–“অভিমান হবে কেন? আমি আপনার কে?”
আমার প্রশ্নে গাল টিপে ধরলেন আয়াশ। ঝাঁকিয়ে বললেন,
–“এভরিথিং! ইউ আর মাই এভরিথিং।”
একটু থামলেন উনি। আমিও কোনো জবাব দিলাম না। বিষণ্ণ মুখে অন্যদিকে চেয়ে রইলাম। আয়াশ আবারও থমথমে কন্ঠে বলে উঠলেন,
–“আমি আর ইনজেকশন নেব না নিশাপাখি। আই ট্রাস্ট ইউ। আর তখনকার ব্যবহার মাথাব্যথার জন্য ছিল। কীসব আজেবাজে বলছিলাম আমি জানি না। তুমি তো জানো আমি একটু পাগল। একটু তো মানিয়ে নিতে পারো নাকি? একটু থামিয়ে দিতে পারতে আমাকে।”
–“কি করে থামাতাম?”
–“যে করেই হোক। ধমক দিয়ে, মেরে যা ইচ্ছে করে চুপ করাতে। এভাবে চলে আসার কি দরকার ছিল? তুমি জানো না আমার তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই? তাহলে কেন ছেড়ে চলে আসো বার বার? তুমি যদি মায়ের মতো ছেড়ে চলে যাও তাহলে বেঁচে থাকার কোনো মানে থাকবে না আমার কাছে। তুমি সে যাকে আঁকড়ে ধরে আমি নিজের জীবন উপভোগ করতে চাই। তুমি সে যার ছোঁয়াতে আমার মন, মাথা, মস্তিষ্ক সব শান্ত হয়। তুমি হারিয়ে যেও না।”
আমার আমার কাছে নিচু করে মাথা রাখলেন। উনার চুল আমার ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছেন। উনার কন্ঠে আমি অসহায়তা অনেকাংশে অনুভব করে ফেলেছি। লোকটার তো সত্যিই কেউ নেই। একটা মানুষ তো সারাজীবন একা বাঁচতে পারে না। সেকারণেই তো সৃষ্টিকর্তা আমাদের জীবনসঙ্গী দিয়েছেন। আয়াশ এবার মাথা তুললেন। আমার গাল চেপে উনার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
–“কিন্তু হ্যাঁ! জোর করে আঁটকেও রাখব না তোমায়। তবে একটা বছর না চাইলেও আমার সঙ্গে থাকতে হবে তোমায়। তারপর যদি তুমি সত্যিই চলে যেতে চাও বা আমার মতো জঘন্য লোককে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে না পারো তাহলে স্বইচ্ছায় আমি তোমায় বন্দি খাঁচা থেকে পাখিকে যেভাবে মুক্ত করে ঠিক সেভাবেই আমি তোমাকে মুক্ত করে দেব। কিন্তু এই এক বছর শুধু আমার সময় থাকবে। এই সময় একান্ত আমার।”
না চাইতেও ভেতরে যেন একটা চাপা দুঃখ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম আমার ভেতরটা কাঁপছে। অদ্ভুত লাগছে! মনে হচ্ছে ভেতরে ভেতরে পুড়ে যাচ্ছি উনার কথায়। কেন এতো অনুভূতি? কেন এতো বিরহ মনের অন্তরে? একি তবে সংকেত দিচ্ছে যে মন আয়াশের থেকে দূরে যেতে চায় না?
কানের লতিতে ঠোঁটের স্পর্শে ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায়। হাতে থাকা ইনজেকশনের ব্যাগটা ধরে ছিলাম সেটা পড়ে যায়। আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন আয়াশ। আমি লজ্জায় ইতিমধ্যে নুইয়ে ফেলেছি নিজের মাথা। কান গরম হয়ে গিয়েছে। আমি সরে যেতে চাইলেই কাঁচে দুটো হাত দিয়ে আমায় নিজের হাতের বন্ধনে আঁটকে ফেলেন। ফিসফিসিয়ে বলেন,
–“ইটস টাইম টু ডু সামথিং স্পেশাল মাই লাভ!”
বলেই আমার দিকে এগিয়ে এলেন উনি। গরম নিঃশ্বাসের উত্তাপ ছুঁইয়ে দিচ্ছে আমার গলা। রগে রগে শিরশিরি করে উঠছে। ঠোঁটে ঠোঁটজোড়া ছোঁয়াতে যাবেন তৎক্ষনাৎ একটা বিদঘুটে গন্ধে নাক কুঁচকে এলো আমার। মুখ অন্যদিকে সরিয়ে ফেলতেই আমার গালেই চুমু খেয়ে বসলেন উনি। অতঃপর বিরক্ত হয়ে বললেন,
–“এটা কি হলো?”
–“সিগারেটের গন্ধ বের হচ্ছে না? আপনি সিগারেট খেয়েছেন?”
আক্রোশ নিয়ে বলে উঠলাম আমি। আয়াশ। সোজা হয়ে বসলেন। স্বাভাবিক ভাবে বললেন,
–“ওইতো খেয়েছি বেশি না ৮-১০ টার মতো। তবুও গন্ধ বের হচ্ছে?”
চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো আমার। লোকটাকে এলোপাথাড়ি কিল দিতে দিতে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
–“ছি ওই ঠোঁট দিয়ে আমি কিস করতে দেব না দূরে সরুন। গেঞ্জি থেকেও গন্ধ বেরিয়ে আসছে। দূরে সরে থাকুন।”
–“এর আগেও খেয়েছি। তখন তো দূরে সরতে বলো নি।”
এবার চক্ষু চরকগাছ আমার। নাক শিটকে এলো।
–“অবশ্য পারফিউম লাগিয়ে আসতাম। আজ মনে নেই।”
এবার দুটো হাত ধরে বুকে ধরে উনাকে সরিয়ে দিলাম আমি।
–“ছি। বাজে লোক। সিগারেট খোর লোক। স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি।”
–“তোমার কি মনে হয় না? তুমি টিপিক্যাল বউ হয়ে যাচ্ছো? আমার বউ হওয়ার ইচ্ছে কি জাগছে মনে মনে?”
এবার থেমে গেলাম আমি। অবাক চোখে তাকালাম আয়াশের দিকে। থতমত খেয়ে বললাম,
–“না আ…আসলে আমি সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি না। আর সেই ঠোঁটে সিগারেট ধরে আমায় টাচ করেছেন তো ভালো হবে না। দূরে থাকুন।”
–“সিগারেট টাচ না করলে তুমি আমাকে নির্দ্বিধায় টাচ করতে দেবে বলো?”
ভ্রু নাচিয়ে বাঁকা হেঁসে বললেন আয়াশ। নাক ফুলিয়ে বললাম,
–“আপনি জেনেশুনে অদ্ভুত কন্ডিশন দেন তাই না? যাতে আমি মানতে না পারি?”
–“হ্যাঁ। সেটা বলতেই পারো। আমি একটু এক্সট্রা এডভান্টেজ নিতে পছন্দ করি।”
–“কিন্তু আমি আপনাকে এডভান্টেজ দেব না। গেঞ্জি পাল্টে আসুন নয়ত সরুন।”
আমার কথা কানে না নিয়ে আমার কোলে শুয়ে পড়লেন আয়াশ। আমি রাগি চোখে তাকাতেই উনি চোখ বন্ধ করে বললেন,
–“এভাবে তোমাকে ছোটখাটো বাঘিনী লাগে নিশাপাখি।”
চোখমুখ আবার স্বাভাবিক করে ফেললাম আমি। আয়াশ সঙ্গে সঙ্গে নিস্তেজ হয়ে এলেন। আর আমায় উপুড় হয়ে শুয়ে আমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলেন। বিড়বিড় করে বললেন,
–“আমার মাথা যন্ত্রণা এখনো থামেনি। শুধু তোমার কথায় ইনজেকশন ছাড়া রয়েছি। আর ইনজেকশন নেব না আমি। বিলিভ মি! শুধু তুমি আমার কাছে থাকবে। আমার একেবারে কাছে। এক ইঞ্চিও দূরে সরবে না। পাগলামি করলে মারবে ঠিক আছে?”
বলেই চুপ করে গেলেন উনি। আবার আমার হাত ধরে নিজের মাথার ওপর রেখে নীরব হয়ে গেলেন। আমি ধীরে ধীরে উনার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। মাথার চুলে কোনো কালার করা নেই। আর বেশ সিল্কি! নিজের চুলেরও যথেষ্ট যত্ন করেন সেটা দেখেই বোঝা যায়। একটা সময় ঘুমে তলিয়ে গেলেন উনি। বাচ্চাদের মতো আমার ওড়না নিজের হাতের সঙ্গে বেঁধে ঘুমাচ্ছেন। যেন আমি দূরে চলে যাচ্ছি। এমন অদ্ভুত কর্মকান্ডে আমার সত্যিই হাসি পায়।
ঠোঁটে ঠোঁট টিপে হেঁসে আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। একটুখানি চাঁদের আলো আয়াশের মুখে পড়ছে। চেহারায় উজ্জ্বলতা বেড়েছে উনার। কি সুন্দর একটি মুখ। এই মুখের আড়ালে রাগ, পাগলামি, উন্মাদনা, জেদে ভর্তি সেটা কি বোঝার দায় আছে? মুচকি হাসি বেরিয়ে এলো আপনা-আপনি। চাঁদের দিকে তাকিয়ে আপনা-আপনি বলে উঠলাম,
–“জীবনটা কোন গন্তব্যে ছুটে চলেছে আমার? এমন একটা লোকের ভালোবাসা পেয়ে বসলাম যার সঙ্গে আমার আকাশ-পাতাল ব্যবধান। যার সঙ্গে আমার মিলিত হবার কোনো সম্ভাবনায় ছিল না কি করে তার সঙ্গে আমার ভাগ্য জুড়ে গেল? আর এক বছর পরই বা কি হবে আমার জীবনের উদ্দেশ্য? নীলাদ্রকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আজ ওর জন্য কেন বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না? সেটা কি ছিল আমার কিশোরী জীবনের আবেগ?”
চাঁদের থেকে চোখ সরিয়ে এপার্টমেন্টের নিচে নানারকম বড় বড় পাতাবাহার গাছের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। রাতের পরিবেশ বেশ স্নিগ্ধময় হয়। এই গাছ ও লতাপাতার কাছেই আচমকা কারো অবয়ব দেখে মনোযোগ দিলাম সেখানে। প্রথমে বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে মিলেও কয়েক মূহুর্তে বুঝতে পারলাম সেখানে থাকা লোকটি আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছুটা আঁতকে উঠে আয়াশের দিকে তাকালাম। কে ওই লোক? কেমন যেন চেনা চেনাও লাগছে। আমাদের ফ্লাট প্রায় ৭ তালায় হওয়ার কারণে কিছুই স্পষ্ট না। মনে মনে ভীতি সৃষ্টি হলো। আয়াশকে ডাকতে গিয়েও ডাকলাম না। উনার নাকি মাথা যন্ত্রণা করছিল? এখন ডাকলে যদি সমস্যা হয়?
লোকটার থেকে নজর সরিয়ে আয়াশের দিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করেও পারলাম না। ভয় আর কৌতূহল দুটো একসঙ্গে কাজ করছে। দেখার আগ্রহ বাড়ছে! কে ওই লোক?
নিজেকে দমিয়ে না রাখতে পেরে আয়াশকে সাবধানে শুইয়ে দিলাম আমি। বেলকনিতেও বেডের মতো কভার থাকায় সমস্যা হলো না। কুশনে উনার মাথা রেখে আস্তে করে নিজের ওড়না ছাড়িয়ে হাঁটা দিলাম বাইরের দিকে।
দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম। সিঁড়ি দিয়েই নামলাম। আস্তে-ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামছি আর ধাপে ধাপে প্রতিটা ফ্লোরে থাকা জানালা দিয়ে অজানা লোকটার দিকে তাকাচ্ছি। দুই নম্বর ফ্লোরে এসে লোকটার ওপর নজর দিতেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো আমার। নীলাদ্রকে দেখে ঘামতে শুরু করলাম। গতবার সে মৌখিক তালাক দিতে বলেছিল। আজ কি বলার জন্য এসেছে আর কি করে জানল আমি এখানে থাকি? সে ইশারায় আমায় ডাকছে। মনে হলো তার সঙ্গে কথা বলে সব মিটিয়ে নেওয়া দরকার তাই নিচে নেমে এলাম। নিচে নামতেই এপার্টমেন্টের পেছনের দিকে টেনে নিয়ে এলো নীলাদ্র।
আমার কেমন জানি বিব্রত লাগলো ওর স্পর্শ। সঙ্গে সঙ্গে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
–“তুমি এখানে কেন? কেন এসেছো? তুমি জানো আয়াশ এখন ঘুমাচ্ছেন? যদি না ঘুমিয়ে তোমায় দেখে ফেললে কি অবস্থা হতো জানো?”
নীলাদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি হেঁসে বলল,
–“সবসময় আজকাল আয়াশ আয়াশ করো কেন বলো তো? ওকে নিয়েই তোমার যত চিন্তাভাবনা না? এখন আমি কিছু নই।”
বলেই থামলো সে। আমাকে ভালোভাবে দেখে নিল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
–“হেই ওয়েট, তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছো?”
–“হ্যাঁ। কয়েকদিন আগে আমার অপারেশন হয়েছে।”
–“গ্রেট। চোখও ফিরে পেলে, বড়লোক স্বামী পেলে, সুখ পেলে, টাকা পেলে। আর কি চাই?”
–“এসব কেমন কথা নীলাদ্র? আয়াশ এমন নন যেমনটা আমরা ভাবছিলাম।”
নীলাদ্র অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,
–“এখন ও ভালো? হবে না-ই বা কেন? রোমান্সে কমতি তো রাখছে না।”
চোখমুখ জড়িয়ে এলো ওর কথা শুনে। তার কথার ধরণ ভালো নয়। সেটা দেখে নীলাদ্র আবারও হাসলো।
–“খারাপ লাগছে নাকি? নিচ থেকে সব দেখা যাচ্ছিল। তাছাড়া তোমার গলার দাগ অনেক কিছু প্রমাণ করে।”
–“হোয়াট দ্যা হেল নীলাদ্র? আমার গলার দিকে কেন নজর দিচ্ছো তুমি? যা ভাবছো তা নয়। তাছাড়া তুমি কক্সবাজার ফিরে যাও। এভাবে আমার পিছু নিও না। লাভ নেই।”
–“এতোদিন পর এসে আমাকে এটা শুনতে হবে? হাস্যকর! যে তোমার অন্ধ হওয়ার পর পাশে থাকল, তোমার সঙ্গী হলো দুঃখের তাকে হেয় করছো।”
আমি জোরে চেঁচিয়ে বললাম,
–“করছি না আমি হেয়। আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো।”
–“আচ্ছা করছি। তুমি আয়াশকে মৌখিক তালাক কবে দিচ্ছো? তুমি তো বলেছিলে তোমার সময় লাগবে। অনেক সময় দিলাম। রেজাল্ট কি? তালাক কবে দিচ্ছো?”
চমকে তাকালাম আমি। কি বলব সেটা ভাবতে থাকলাম। আসলেই আমি গতবার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছি নীলাদ্রকে। আয়াশকে দূরে কি করে সরাবো আমি? কি বলব নীলাদ্রকে?
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পরের পর্বে মোড় পাল্টে যাবে গল্পের।]