মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৫০

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৫০
#আনিশা_সাবিহা

কোর্ট থেকে একপ্রকার রেগেমেগে বের হয় আয়াশ। চোখেমুখে অসংখ্য বিরক্তির ছাপ। নাকের আগায় লালচে ভাব। মৃধা গুটিশুটি মেরে হাঁটছে আয়াশের পিছু পিছু। এক পর্যায়ে প্রচন্ড রাগের মাথায় নিজের হাতের ফাইলগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেয় আয়াশ। মৃধা কিছুটা চমকে উঠে কাঁচুমাচু হয়ে তাকায়।

–“এই লইয়ার খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। নিজেরা মিথ্যে হওয়া সত্ত্বেও এতো এতো ফেক প্রুফ জোগাড় করে এনেছে যে আমার সত্যি কথাগুলো ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। কেসটা হেরে যাচ্ছি আমি। পরের ডেটই লাস্ট ডেট। সেদিন যদি একটা জোরালো প্রমাণ বা সাক্ষী না পাই তাহলে সেদিন সুনামিতে আমি হেরে যাব।”

মৃধা ফাইলপত্র তুলে নেয় হাতে। অসহায় হয়ে বলে,
–“যাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি তারা খুব বড়লোক স্যার। ওরা টাকা দিয়ে সবকিছু করছে। আর এই লইয়ার টাও প্রচন্ড ধূর্ত। তবে চিন্তা করবেন না আমরা ঠিক কোনো না কোনো ভাবে…”

–“চিন্তা করব না? হোয়াট ডু ইউ মিন? আমি আজ পর্যন্ত কেসও হেরে যাইনি। যেই কেস হাতে এসেছি সেই কেসের ভিকটিম ধরেই নিয়েছে সে জিতে গেছে। কিন্তু এটার অন্যথা হলে চলবে না। আমি কেস হারতে পারি না। আমি হারতে শিখিনি। আর যদি হেরে যাই তাহলে তোমার জন্যই হারব। আর তোমার মনে আছে তো? এটাই হবে তোমার ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট কেস আমার সাথে।”

মৃধা কিছুটা ভড়কে যায়। সে খুব করে চায় কেসটা যেন আয়াশ জিতে যায়। নয়ত যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল সেটুকুও হারাবে। ভাবতেই কান্না চলে আসে তার। চোখমুখ লাল হয়ে যায়। আয়াশ কথাগুলো অতিমাত্রায় রেগে বলাতে আরো কান্না পেয়ে যায়। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে থাকে চুপটি করে। আয়াশ এগিয়ে এসে নিজের ফাইল আর দরকারি জিনিসপত্র হাতে নিয়ে হনহনিয়ে নিজের অফিসের কেবিনের দিকে ছুটে যায়।

অফিসে একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে শেষ করে যাচ্ছে আয়াশ। সে জানে না আনিশা জানলে কি হবে! আনিশার সামনে সিগারেট নামক জিনিসটা না স্পর্শ করলেও অফিসে এসে টেনশনে থাকলে আর আটকাতে পারে না নিজেকে। সিগারেট হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগের সহিত আকাশ প্রান্তে তাকিয়ে ছিল আয়াশ। বিকেল পেরিয়ে আকাশে মেঘের ঢল নেমেছে। দুপুরে একবার আনিশার সঙ্গে কথা হলেও ভালোভাবে কথা বলতে পারেনি সে। আয়াশ এবার রিয়েলাইজ করে আনিশাকে একা ওই বাড়ি রাখা সেফ না। কালই কিছু একটা করতে হবে তাকে।

সেই সময় ক্লান্তি ভরা চোখমুখ নিয়ে কেবিনের দরজায় কড়া নাড়ে মৃধা। আয়াশ ‘কাম ইন’ বলতেই ঢুলতে ঢুলতে ভেতরে ঢুকে পড়ে সে। আজ প্রমাণের জন্য ভীষণ খাটতে হয়েছে তাকে। আয়াশ তার থেকেও বেশি খেটেছে। তবুও তার কোনো হেলদোল নেই। শুধু চুলে সীঁথিটুকু এলোমেলো হয়ে গেছে। সেই সাথে শার্টের দুটো বোতাম খোলা রেখেছে।

–“স…স্যার লোকটার সাথে কথা হয়েছে আমার। বলেছে সিসিটিভি ফুটেজটা পাঠাতে দেরি হবে। কাল সকালে মেইল করে দেবে। আর ছবিগুলো নিতে হবে। আর যার থেকে ছবি নেব তার বাড়ি আর আমার বাড়ি একই জায়গায় তাই আমি নিতে পারব স্যার।”

–“মেইল করে দিলে আমাকেও মেইল করে দেবে সাথে সাথে। মনে রেখো, ইটস এ ভেরি ডিফিকাল্ট কেস। একটা সূত্র ছাড়লেও চলবে না। আই এম সিউর মেয়েটাকে মার্ডার করা হয়েছিল সে সুইসাইড করেনি।”

–“স্যার ওই দিন নাইট পার্টির কিছু ছবিও রয়েছে। সেটাও দেবে বলেছে!”

–“তাহলে এক কাজ করো। কালকে আমার বাড়িতে সব ছবিগুলোও পেলে দিয়ে যাবে। আমি আমার বাড়ির এড্রেস মেসেজে দিয়ে দেব। আমি এখন যাচ্ছি। আর একটা কথা! শোনো যার সাথে প্রমাণ নেবে তখন সাবধান থাকবে। কারণ অনেক সময় আক্রমণ করার জন্যও ফাঁদ পাতা হয়। যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। আন্ডারস্ট্যান্ড?”

মৃধার মলিন মুখটা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। আয়াশ তার কথা ভাবছে! তার কথা একটু হলেও চিন্তা করছে। এই ভেবেই দুপুরে যতটুকু মন খারাপ ছিল সেটাও হাওয়ার সঙ্গে উধাও হয়ে গেল। আনন্দের সঙ্গে হেঁসে মাথা দুলায় সে। সেটা দেখে আয়াশের দৃষ্টি সরু হয়ে আসে। মেয়েটা পাগল নাকি? এভাবল কারণেঅকারণে হাসে কেন? কার পাল্লায় পড়েছে কে জানে!

চেয়ারের ওপরে থাকা কালো কোর্ট হাতে নিয়ে বাইরের দিকে যেতে থাকে আয়াশ। মৃধা কিছু একটা ভেবে ভয়ে ভয়ে আয়াশকে ডাকতেই হাঁটা থামিয়ে পিছু ফিরে তাকায় সে। কিছুটা বিরক্ত হয় মৃধার প্রতি।
–“হোয়াট?”

–“স…স্যার আপনাকে একটা প্রশ্ন করার ছিল।”

–“একটা কেন? সারাদিন তো ওই একটা প্রশ্ন করার ছিল বলে বলে পুরো হিস্ট্রি জেনে নাও।”

–“স্যার? আপনি কি আপনার কাজিন মানে আনিশাকে পছন্দ করেন?”
ভয়ে ভয়ে এবার নিজের মনে থাকা প্রশ্নটা করেই ফেলে মৃধা। তার মনে এটা নিয়ে অজস্র দ্বন্দ্ব। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর না জানা পর্যন্ত তার শান্তি নেই। কারণ আয়াশের কর্মকান্ড হসপিটালে দেখেছে সে। আনিশার ভাইয়া বললে রেগে যায়, আনিশার এতোটা কাছাকাছি যাওয়া তাও সকলের সামনে এসব মৃধাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল। এতোদিন ভয়ে ভয়ে প্রশ্নটা ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও সেটা প্রকাশ করেনি।

কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আয়াশ। নিজেকে ধাতস্থ করে গাম্ভীর্য বজায় রেখে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে,
–“কেন বলো তো?”

–“আসলে স্যার এমনি। একটু কৌতূহলের বশে। হসপিটালে….”

–“একটা কথা ভালোভাবে শুনে রাখো। আমি নিজের পারসোনাল কথা বাইরের লোকের সঙ্গে শেয়ার করি না। এসব কৌতূহল মন থেকে বের করে দাও। আর কাজে মন দিলে হয়ত কেসটা জিতে গেলেও জিততে পারি।”

কথাটুকু বলে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে যায় আয়াশ। মৃধা তাকিয়ে থাকে হতাশ চোখে। তার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হলো না!

বাড়িতে এসেই প্রেস ও মিডিয়ায় ভরপুর দেখে তেমন একটা অবাক হয় না আয়াশ। সে জানে মিডিয়া আসবে। এমন দুর্দান্ত খবর পাওয়া গেছে আর মিডিয়ারা আসবে না? এটা হতেই পারে না। কি জানি কি চলছে ভেতরে! কিভাবে মিডিয়ার প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন মিসেস. মালিহা? তা দেখার জন্য বড্ড আগ্রহ জাগে আয়াশের। সেও গাড়ি থেকে নামতেই মিডিয়ার লোক তার দিকে দৌড়ে আসে। আয়াশ তেমন একটা বিরক্ত হয় না তাদের প্রতি। আজ সে ঠিক করেছে মিডিয়ার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে।

–“আমরা ইতিমধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর খবর পেয়েছি আপনাদের সম্মন্ধে। মি. আয়াশ রায়হান, মিসেস. মালিহা আপনার সৎমা এই খবরটা কি সত্যি?”

আয়াশ হাফ ছেড়ে বলে,
–“ইয়েস। সি ইজ মাই স্টেপ মাদার। বাট আমি যা বলব তা ভেতরে গিয়ে। সো লেট মি গো।”

বলেই ভীড় ঠেলে ভেতরে আসে আয়াশ। পিছু পিছু মিডিয়ার লোকজন। ভেতরে আসতেই চোখজোড়া চকচক করে ওঠে তার। মিসেস. মালিহার ছবি তোলা হচ্ছে আর উনি বার বার নিজের মুখ ঢেকে চিৎকার করে বলছেন,
–“আমাকে হ্যারাজ করছেন এভাবে। আমি কিন্তু কাউকে ছাড়ব না। বাইরে বেরিয়ে যান আপনারা।”

–“ম্যাম? প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেই তো আমরা চলে যাব। আপনার মি. সাহাদ রায়হানের সঙ্গে সম্পর্ক কতদিনের? মি. সাহাদের প্রথম স্ত্রী বেঁচে থাকা কালীন থেকেই কি আপনাদের সম্পর্ক?”

সেখানে সাহাদ রায়হানও উপস্থিত আছেন। হয়ত আজই বাইরে থেকে ফিরেছেন। আচ্ছা? বাইরে থেকে ফিরে এতো চমক কি করে সামলাচ্ছেন উনি? সেটা ভেবে হাসে আয়াশ। অনেক দিনের ক্ষোভ মিটছে তার। আজও তার কানে ভাসে তার মায়ের আগুনে পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য। ছোট্ট আয়াশ সেদিন মায়ের কাছে এগিয়ে যেতে চাইলে তার মা আসতে বারণ করে। একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কি নিষ্ঠুর মৃত্যু! সেই মৃত্যু এই মহিলার জন্য। সে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই মহিলাকে ঘৃণা করবে।

চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে ওপরে চোখ যায় তার। করিডোরে আনিশা দাঁড়িয়ে। লুকিয়ে লুকিয়ে সে দেখছে। কিন্তু সামনে আসছে না। আসা উচিতও না। এতে সে হ্যারাজ হতে পারে আগের বারের মতো। তাই আয়াশ ইশারা করে আনিশাকে যেতে বলে। আনিশা ধীরে ধীরে সেখান থেকে সরে যেতেই মিডিয়ার লোক তাকে ঘিরে ধরে। নানানরকম আজেবাজে প্রশ্ন করতে থাকে। আয়াশ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে নিরব হয়ে সব প্রশ্ন শোনে। সবশেষে সে বলে,

–“প্রথম কথা, এইযে আমার সামনে যেই মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি উনার থেকে আর জঘন্য মহিলা আর একটাও নেই। দ্বিতীয় কথা, আমার মাকে ঠকিয়েছে এরা দুজন। আমার মা অন্ধ ছিল সুযোগ নিয়েছে এরা। এদের কর্মফল কথা বলবে। আমি আর কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে চাই না। যা বলেছি তা আপনাদের জন্য যথেষ্ট। নাউ প্লিজ গো। নয়ত অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।”

আয়াশের এই কয়েকটা কথাতেই মিডিয়ার লোক প্রায় সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। সকলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায় মিসেস. মালিহা ও সাহাদ সাহেবকে কথা শুনিয়ে। সকলের মুখে একটাই কথা ছিল, ‘আপনি নারী ও আপনি বাবার নামে কলঙ্ক! এমন জঘন্য কাজ কি করে করতে পারলেন? এতোদিন আপনাদের ভালো মানুষ ভেবে এসেছি। ভাগ্যিস সত্যিটা বেরিয়ে এসেছে। নয়ত মুখোশের আড়ালে থাকা চেহারার হদিস পাওয়ায় যেতো না।’

সব মিডিয়ার লোক ও সাংবাদিক চলে গেলে ঘাড় এদিক ওদিক নাড়ায় আয়াশ। বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার। সে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে লাগলে সাহাদ সাহেব বাঁধা দেন।
–“আয়াশ? মালিহা আমায় সব বলেছে। এসব তোমার কাজ?”

–“তাছাড়া আপনাদের বিরুদ্ধে এতো দুঃসাহস কে-ই বা দেখাতে যাবে বলুন?”

–“কেন করছো এসব? অতীত টেনে এনে কি বোঝাতে চাইছো তুমি? আর তুমি অভিযোগ করছো যে কাজলকে(আয়াশের মা) মালিহা মেরেছে? কেন মিথ্যা অভিযোগ করে সিনক্রিয়েট করছো তুমি? কাজলের মৃত্যু এক্সিডেন্ট ছিল। চুলার আগুন ওর শাড়ির আঁচলে লেগে আগুন লেগেছিল আর মালিহা সেখানল ছিল না।”

–“ওই মহিলা সেখানেই ছিল। মায়ের সামনে। আমি দেখেছি। বন্ধু হয়ে একবারও হাত বাড়ায়নি। ধিক্কার জানায় এমন বন্ধুত্বকে। আর এটা সবে শুরু। অতীত বের করেছি। বর্তমান কুকর্মও বের করে ফেলব। আপনি তো জানেনও না আপনার স্ত্রী আপনার একমাত্র উত্তরাধিকারী মানে আমি। আমাকে মারার চেষ্টা করেছে আমারই শত্রুর সাথে হাত মিলিয়ে। নাকি বলব জানেন? আপনিও কি তাতে যোগ ছিলেন?”

কথাটুকু বলে মৃদু হেঁসে ওপরে উঠে আসে আয়াশ। সাহাদ সাহেব শতবার ডাকা সত্ত্বেও আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি সে।

রুমের এক কোণে বসে থেকে আয়াশের অপেক্ষা করছি আমি। কাঙ্ক্ষিত সময়টি চলেই এলো অবশেষে। উনি রুমে ঢুকলেন নিজের বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে। ক্লান্তি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র তার চেহারায়। চোখ দুটো আমার ওপরে স্থির করে রাখতেই আমি সন্দেহের সঙ্গে বললাম,
–“আজ এক ঘন্টা লেট করেছেন আপনি!”

ঘড়ির দিকে তাকান আয়াশ। সে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলে,
–“বাহ! আজকাল তুমি আমার বাড়ি আসার সময়ও খেয়াল রাখো? আমাকে মিস করছিলে? নাকি আমার সাথে রোমান্স করাকে?”

–“আপনার মতো অসভ্য মন নিয়ে থাকি না। কথার ঘোরাচ্ছেন আপনি। বললেন না লেট কেন হলো? আগে তো পারলে আগে আগে চলে আসতেন। আজ লেট হলো?”

–“কাজের ফাঁকে নিশাপাখি। কেসটা খুব ডিফিকাল্ট আর আমার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

আমি ফিচেল দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি নিজের শার্ট খুলতে খুলতে এগিয়ে আসছেন। নিজের কালো কোর্ট সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আমার পাশে এসে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে নাকে আসে বিদঘুটে গন্ধ। নাক শিটকে চোখ বড় বড় করে তাকায় আমি। বিস্ময়ের সাথে বলি,
–“আপনি সিগারেট খেয়েছেন?”

আয়াশ কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকান। নিজের শার্টের গন্ধ শুঁকতে থাকেন। তারপর বলেন,
–“ওহ হো! আজকেও পারফিউম লাগাতে ভুলে গেছি। সব মৃধার জন্য।”

প্রথমে তো সিগারেটের কথা শুনে আমার মাথা খারাপ করেই দিয়েছেন দ্বিতীয়ত মৃধার কথা শুনে মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল আমার। চোখ রাঙিয়ে বললাম,
–“মৃধা কাছে ছিল তাই ভুলে গেছেন?”

আয়াশ বিস্ময় নিয়ে বলেন,
–“না! ও প্রশ্ন করছিল… ”

–“আসার পর থেকে মৃধা মৃধা বকে যাচ্ছেন। এখন কি মৃধাকে এক বছরের বউ বানানোর প্ল্যানিং করছেন?”

–“তুমিই তো জানতে চাইলে যে…”

আয়াশকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি উঠে চলে এলাম। রাগে – অভিমানে নিজের আর আয়াশের সমস্ত চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে আমার। উনার মুখে নিজের নাম ছাড়া অন্য কারো নাম নিতে পারি না। আমি আয়াশের পিয়ানো যেখানে রাখা থাকে সেখানে চলে এলাম। পিয়ানোর সামনে বসে ইচ্ছেমতো সেটাতে আজেবাজে সুর তুলতে লাগলাম। পিছু পিছু এলেন আয়াশ। খানিকটা নিচু হয়ে আমার হাতে হাত রাখলেন।

–“এতো আমার থেকেও বড় হিংসুটে! আই এম সারপ্রাইজড নিশাপাখি!”

আমি উত্তর দিলাম না। উনি আমার হাত তুলে আমার হাত ধরে সুন্দর করল সুর তুলতে লাগলেন। আমি চোখমুখ লাল করে বসে রয়েছি। আচমকা উনি বললেন,
–“ইউ লুকিং প্রিটি!”

আমি তবুও কিছু বললাম না। আমার কাঁধে এবার একের ওর এক পরশ দিতে থাকলেন ঠোঁট দিয়ে। এবার না পেরে কেঁপে উঠে ঘুরে বসতেই একহাতে আমার মাথা চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলেন উনি। আমি ঢক গিলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–“আচ্ছা আপনার সৎমা…”

–“হুঁশশ! ইটস টাইম টু ডু সামথিং স্পেশাল। ডোন্ট ডিস্টার্ব।”

আমায় কথা পূর্ণ করতে দিলেন না উনি। এগিয়ল এলেন। মিশিয়ে নিলেন নিজেকে আমার সঙ্গে। আয়াশ মুচকি হেঁসে বলেন,
–“আই থিংক এই স্পেশাল কিসের পর রাগ পড়ে যায় আমার নিশাপাখির।”

আমি সরে গেলে আরো এগিয়ে এলেন উনি। মত্ত হয়ে পড়লেন আমাতে। ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলেন সারা মুখে। এমন স্পর্শ যা মনে শিহরণ জাগায় একেই তো বলে ভালোবাসা নামক ভয়াবহ অনুভূতি।

সকাল সকাল প্রমাণ পেয়েই আয়াশের বাড়িতে এসেছে মৃধা। ড্রয়িং রুমে চুপটি করে বসে আয়াশের অপেক্ষা করছে সে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আজ আয়াশের পছন্দের রঙে নিজেকে মুড়িয়ে এসেছে সে। হলুদ রঙের লং ড্রেস আর গলায় হলুদ ওড়না জড়িয়ে নিয়েছে মৃধা। হাতে হলুদ কাঁচের চুড়ি আর হলুদ টিপ। আয়াশ কি দেখবে তাকে? দেখে কি কোনো মন্তব্য করবে? ভেবেই লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে যায় মৃধার। তৎক্ষনাৎ আগমন ঘটে আয়াশের। সিঁড়ি বয়ে নামছে দ্রুত গতিতে। সবেমাত্র হয়ত শাওয়ার নিয়েছে সে। সেকারণে চুলগুলো ভেজা কপালে নিচু হয়ে পড়ে আছে এক সারিতে। কি স্নিগ্ধময় পুরুষ! লজ্জা বিসর্জন দিয়ে তাকিয়ে থাকে সে আয়াশের দিকে। তারপরেই চোখ নামিয়ে নিয়ে নিচে তাকায়।

আয়াশ এসেই সোফায় পায়ে পা তুলে বসে পড়ে। হাতে তার চশমা। সেটা দ্রুত পড়ে নেয় চোখে। এবার তাকে আবার অন্যরকম লাগছে। একজন মানুষের দুরকম সৌন্দর্য! সেটাই উপভোগ করছে মৃধা।

আয়াশ হাত বাড়িয়ে বলে,
–“ছবিগুলো?”

মৃধা কাঁপা কাঁপা হাতে ছবিগুলো দেয়। সেসব মনোযোগের সাথে চেক করতে শুরু করে সে। মৃধার দৃষ্টি আঁটকে থাকে আয়াশের ওপর।

সকালে আয়াশের কড়া কফি খাওয়ার অভ্যেস সেটাই বানিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছিলাম আমি। কিন্তু সেখান থেকে বের হতেই মৃধাকে দেখে পা থামল আমার। সে এই বাড়িতে কি করছে? আয়াশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেজাজটা অজান্তেই বিগড়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে সেখানেই গেলাম। আমায় দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল মৃধা। তারপর বলল,
–“তুমি? এখনো আছো?”

–“হুমম। আমার তো এখানেই থাকার কথা। আয়াশ যেখানে আমি সেখানে।”

আমার কথা শুনে ছবি থেকে মুখ তুলে তাকালেন আয়াশ। আমার হাতে কফি দেখে উনি হাত বাড়িয়ে কফি চাইলেন। আমি কফিতে চুমুক দিয়ে তারপর উনার হাতে ধরিয়ে দিলাম। উনি নির্দ্বিধায় কফিতে চুমুক দিয়ে খাওয়া শুরু করে বললেন,
–“লুক এট দিস পিকচার। এখানে মেয়েটাকে কেমন জানি নার্ভাস লাগছে। মনে হচ্ছে ও খুব ভয়ে আছে।”

মৃধা ছবিটা দেখার জন্য আয়াশের কাছে এগিয়ে যেতেই মাথায় আগুন ধরল আমার। মৃধা ছবিটা দেখে বলল,
–“ইয়েস স্যার। ঠিক বলেছেন।”

আয়াশ আবার ছবিতে মনোযোগ দিলেন। মৃধা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকেই বলল,
–“স্যার কাল যেন আপনি নিজের পছন্দের রঙ কি বলেছিলে?”

–“হলুদ। মনে নেই?”

আমি আরো সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃধাকে লক্ষ্য করলাম। ও আজ হলুদ ড্রেস পড়ে এসেছে। হয়ত আয়াশেরই জন্য। রাগে-দুঃখে ফেটে পড়লাম আমি। মৃধা কেমন জানি হতাশ চোখে তাকাচ্ছে। হয়ত আয়াশ ওর দিকে একবারও চেয়ে দেখেনি তাই। আয়াশ ছবি থেকে মনোযোগ সরিয়ে বলল,
–“ওহ হ্যাঁ। হলুদ রঙটা পছন্দ ঠিকই তবে সেটা একজনের জন্য। তাকেই মানায় হলুদ রঙটা। যেদিন তাকে হলুদ রঙের দেখেছিলাম সেদিন হলুদ রঙটা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর রঙের পরিণত হয়েছিল।”

–“সে কে স্যার?”

উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে মৃধা। আমি আয়াশের পরিবর্তে দম ফেলে বলি,
–“সে আমি। উনি আমার কথা বলছেন। দেখো মৃধা একটা কথা না বললেই নয়। হয়ত তুমি আয়াশকে পছন্দ করো। কিন্তু তোমারও এটা মাথায় রাখতে হবে উনি এখন বিবাহিত। আর আমি উনার বিবাহিত স্ত্রী। তোমায় বলব বলব করে বলা হয়নি। কিন্তু এটাই সত্যি। আমি উনার কাজিন নই। আমি উনার ওয়াইফ। উনি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। আমি আয়াশের ওয়াইফ তাই উনাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা বন্ধ করলে ভালো হয়। ইউ নো দ্যাট, মেয়েরা আর যাই হোক নিজের স্বামীর ভাগ কখনো দিতে পারে না বা তার সাথে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। আমিও পারি না। কারণ একটাই উনি আমার। আমারই প্রেমিক পুরুষ!”

চলবে…

[বি.দ্র. আজ গল্প দিতে দেরি হয়ে গেল। তার জন্য দুঃখিত। আজকে অবশেষে সবটা মৃধা জানতে পারল? কার কেমন অনুভূতি? গল্প সম্মন্ধে দুই লাইন লিখে যাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতা খুঁজবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here