মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৫৩

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৫৩
#আনিশা_সাবিহা

আয়াশকে একের পর এক কল করে যাচ্ছে রুদ্র। সবেমাত্র ওটি থেকে বের হলো সে। ছেলেটাকে আজকাল পাওয়া যায় না। অপারেশন থিয়েটারের ড্রেস পড়ে এখনো চুইংগাম চিবিয়ে যাচ্ছে আর আয়াশকে অনবরত কল করে যাচ্ছে। টিভি আর নিউজপেপারে এসব নিউজ দেখে সে নিজেও শকড! এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ফোনটা পকেটে রেখে দিল রুদ্র।

–“ছেলেটা কখন কি করছে! কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। উফফ…”

–“কার কথা বলছো? আয়াশ?”

সিয়ার কন্ঠে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় রুদ্র। সিয়াও উপস্থিত ছিল অপারেশন থিয়েটারে। তার পরনেও হালকা আকাশি রঙের ড্রেস। যেটা ডক্টর রা অপারেশন করতে পরিধান করে থাকে। মাথাটা কভার দিয়ে ঢাকা। রুদ্র দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
–“হুমম।”

সিয়া হেঁটে এসে রুদ্রের সামনাসামনি দাঁড়ায়। অবাক নয়নে রুদ্রকে পর্যবেক্ষণ করে। সিয়ার এমন চাহনি দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
–“এভাবে কি দেখছো?”

–“তোমাকে। আমি তো আর টেরা নই যে তাকিয়ে আছি মনে হবে একদিকে কিন্তু আসলে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। তোমার দিকেই তাকিয়ে আছি। জাস্ট ভাবছি কোন ধাতু দিয়ে তুমি তৈরি। কি দিয়ে তুমি তৈরি? আনিশার জন্য আমি তোমার চোখে প্রথম সেই অনুভূতি দেখেছি যেটা আমি আমার জন্য দেখতে চেয়েছি। এই অনুভূতি পৃথিবীর সবথেকে দামি। যার প্রতি তোমার এতো সুন্দর অনুভূতি হলো তাকে তুমি পাওয়ার চেষ্টা না করে তার স্বামী মানে তোমার বেস্টফ্রেন্ডের খোঁজ না পেয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছো!”

রুদ্র খানিকটা বিব্রতবোধ করে সিয়ার কথায়। সে নিজের অনুভূতি কখনো প্রকাশ করতে চায় না। এসব কথা বলতে তার একদমই ভালো লাগে না। তবুও সে বলে,

–“প্রথম কথা তো এই যে আনিশা বিবাহিত। তাও আমার বেস্টফ্রেন্ডের স্ত্রী সে। আমার মস্তিষ্ক এখনো এতোটাও শূন্য হয়নি যে আমি একটা মেয়েকে পাওয়ার জন্য পাগলামি করব। শূন্য বললে ভুল। এটাকে হয়ত ভালোবাসার ধরণ বলে। জানো তো, একেকজন একেকভাবে ভালোবাসে। সকলের ভালোবাসার ধরণ আলাদা। যেমন আয়াশের কথায় বলি, ওর থেকে যদি আনিশাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাহলে ও কি করবে জানো? শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে ওকে ফিরিয়ে এনে নিজের কাছে বন্দি করার। যদি সেই পথও বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ও সামনের মানুষটাকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। ইভেন আনিশাকে খুন করতেও ও ভাববে না। ওর মস্তিষ্ক সবসময় একটাই কথা বোঝে সেটা হচ্ছে ও যা ভালোবাসে বা পছন্দ করে সেটা ওরই হতে হবে। অন্যকারো হলে চলবে না। তাতে ও সব ধ্বংস করতেও দুইবারও ভাববে না। কিন্তু আমি সেসব করব না। আমি মনে করি যেটা আমার জন্য নয় সেটা আমার কাছে কখনোই থাকবে না। হয় ফস্কে যাবে নয়ত পালিয়ে যাবে নয়তবা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আয়াশ ছোট থেকে যা দেখেছে তাতে ও ভাগ্যের খেলা মানতে চায় না। আমি আনিশাকে চাই না। ওকে আয়াশের বড্ড ভালো মানায়। যখন ও আয়াশের সঙ্গে থাকে তখন ওর চোখেমুখে অন্যরকম উজ্জ্বলতা বিরাজ করে। তার মুখে অন্যরকম তৃপ্তি থাকে। তাহলে কেনই বা আমি জোর করব? এসব নিয়ে আমাকে আর কোনোদিন প্রশ্ন করবে না। আই রিকুয়েষ্ট ইউ।”

বলেই ফোনটা বের করে রুদ্র। গটগট করে সেখান থেকে চলে যায়। সিয়া তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড়িয়ে বলে,
–“তুমি সবাইকে বোঝো রুদ্র! অথচ আমাকে বুঝলে না।”

অন্ধকার রুম। টিমটিমে আলোতে বোঝা যাচ্ছে একটা ব্যক্তি ঝিমাচ্ছে। হাতে পায়ে দড়ি বাঁধা। কপাল বেয়ে রক্ত শুকিয়ে গেছে। আচমকা তার মুখে কেউ অনেকগুলো পানি ছিটিয়ে দেওয়ায় হকচকিয়ে উঠে সে। বড় নিশ্বাস নিতে নিতে সামনে তাকায়। সামনের সবটা অস্পষ্ট। তবুও নীলাদ্র তাকানোর চেষ্টা করছে। সে বুঝতে পারছে একটা লোক তার সামনে বসে আছে।
–“অনেক ঘুমিয়েছিস। চল এখন ওঠ।”

–“ক…কে? কে তুই?”

–“আরে কানার বাচ্চা, আমাকে কি করে এতো তাড়াতাড়ি ভুলতে পারিস? ভুলে গেলি? সেই রাত ছিল। সেদিন তুই আমার জায়গায় ছিলি আর আমি তোর জায়গায়। আমি বাঁধা ছিলাম তুই আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলি। মনে নেই?”

রাগে হিসহিসিয়ে বলে আয়াশ। চোখ বড় করে তাকানোর চেষ্টা করতেই সামনে আয়াশের চোখমুখ স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে নীলাদ্রের সামনে। সঙ্গে সঙ্গে সে রেগেমেগে বলে ওঠে,
–“এই আমায় ধরে বেঁধেছিস কেন? আমায় ছাড়। আগেরবার তোর মায়ের কথায় তোকে ভালোভাবে মারতে পারিনি রে। আজকে তোকে মেরে ফেলব।”

কথাটুকু শেষ হতে না হতেই নীলাদ্রের গলা চেপে ধরে আয়াশ। চেয়েও নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না সে। হয়ে উঠছে বেসামাল। রাগ তার মস্তিষ্ক বিকৃত করে দিচ্ছে।
–“আমার মা একজনই। শুধু একজনই। ওই মহিলাকে আমার মা বলবি না। মেরে ফেলব তোকে সব ভালো মানুষি ছেড়ে। ওই মহিলাকে কেউ আমার মা বললে রাগ হয়। বলবি না ওকে আমার মা।”

নীলাদ্র পারছে না ছটফট করতে বা দাপাদাপি করতে। তার হাত-পা বাঁধা। গলা কাটা মুরগীর মতো করে যাচ্ছে সে। আয়াশের কোনো হেলদোল নেই। যত পারছে আরো শক্ত করে চেপে ধরছে নীলাদ্রের গলা। ঠিক সেই সময় কোনো স্নিগ্ধমাখা আওয়াজ বলে দিল,
–“উঁহু, আপনি একদম রাগ সামলাতে পারেন না আয়াশ। আমি বলেছিলাম এমন কিছু করবেন না। ওর আর আপনার মধ্যে পার্থক্য কি রইল?”

সেকেন্ডেই নীলাদ্রের গলা থেকে সরে গেল আয়াশের হাত। আশেপাশে তাকালো। কোথায় সেই স্নিগ্ধতায় ভরা কন্ঠটির মালিক? কোথায় সে? নেই তো। তাহলে? আয়াশ হাফ ছাড়ল। হয়ত সে ভুল শুনেছে কিন্তু হয়ত আনিশা থাকলে এই কথায় বলতো!

নীলাদ্রকে কাশতে দেখে ধ্যান ভাঙে আয়াশের। রাগে কটমট করে তাকাতেই কিছু একটা ভেবে শান্ত হয়ে যায়। মুচকি হেঁসে নীলাদ্রের চেয়ারের দুটো হ্যান্ডেল ধরে বলে,
–“আচ্ছা এখন যদি আমি তোকে একটা ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করি তাহলে তোর কেমন লাগবে?”

নীলাদ্র কাশছে। তার জান যায় যায় অবস্থা। সে এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচে। আয়াশের নামে তার সমস্ত হুমকি ফিকে পড়ে গেছে। সব তো ধরা পড়ে গেছে। সে খুব ভালোমতো বুঝে যায় যে আয়াশের সামনে থাকলে তার প্রাণ একদিন ঠিক কেঁড়ে নিয়েই ছাড়বে আয়াশ। তাই সে মিনতি করে বলে,
–“আমায় ছেড়ে দে। আমি পুলিশের কাছে নিজেকে ধরা দেব। আমি মাফ চেয়ে নেব আনিশার কাছ থেকে। তাও আমায় ছেড়ে দে আমায় মারিস না। আমি মরতে চাই না।”

–“তোকে আমি ছেড়ে দেব।”

আয়াশ ফট করতে বলতেই আশার আলো দেখতে পায় নীলাদ্র। চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। অস্ফুটস্বরে বলে,
–“সত্যি?”

–“অফকোর্স। আমি যেই কথা একবার মুখ থেকে বের করি সেটাই করি। একটু পর তোর বাঁধন খুলে দেওয়া হবে। তুই চলে যাস। এই কে আছিস? আমি চলে যাওয়ার পর ওর বাঁধনটা খুলে দিস।”

বলে কোনোরূপ কথা না শুনে উঠে আসে আয়াশ। এটা একটা পুরোনো গোডাউন। বেশি না দুই থেকে তিনটে ঘর আছে ইয়া বড় বড় জিনিসপত্র রাখার জন্য। মজার ব্যাপার হলো এই গোডাউনটা সাহাদ রায়হানেরই ছিল। পাশের বড় ঘরটার দরজা খুলতেই একেবারে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া একটা মহিলার চেহারা দেখতে পায় সে। মনে আসে তার বড্ড আনন্দ। কষ্ট দেওয়া তো খুব সহজ কাজ কিন্তু কষ্ট ভোগ করা কি সহজ? সেটাই মালিহা রায়হানকে বোঝাচ্ছে আয়াশ। নির্জীব শরীরে বাঁধা আছেন মিসেস. মালিহা। কথা বলার শক্তিও পাচ্ছেন না। উনাকে এখানে আনার পর থেকে একটা ফোঁটাও পানি দেওয়া হয়নি।

আয়াশের দরজা খোলার শব্দ শুনে পিটপিট করে কোনোভাবে চোখ খুলে তাকান মিসেস. মালিহা। প্রথম প্রথম হুমকি-ধমকি আর থ্রেট দিলেও পানি না পাওয়াতে একেবারে নির্জীব হয়ে পড়েছেন।

–“সো? ভালো আছেন মিসেস. সাহাদ রায়হান? কেমন ফিল করছেন? ভালো তো না?”

মিসেস. মালিহা কোনোমতে মাথা তুলে তাকাতেই আকুতির সঙ্গে বলে,
–“পা…পানি! দয়া করে পানি দা…দাও আমাকে। এতটুকু দয়া তো ক…করতেই পারো। শত্রু পানি চাইলেও তো তা…তাকে ফেরাতে নেই।”

–“পানি চাইলেই পাবেন। তবে তার আগে আপনাকে আমার কথা মানতে হবে। আমার মায়ের সঙ্গে যেই সত্যি ঘটনা ঘটেছিল সেটা আপনাকে বলতে হবে। নয়ত এই এলিগেশন তো আপনার ওপর আনতে পারব না তাই না? আমার খুনের অভিযোগ দায়ের করতে চাই আমি। অনেক বছর আগের কেস। যুক্তিযুক্ত প্রমাণ না পেলে কেসটা রিওপেন হবে না। ব্যাস… আপনাকে সেদিনের কথা বলতে হবে আর আপনি পানি কেন? এই বাঁধন থেকে মুক্তিও পেয়ে যাবেন।”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মিসেস. মালিহাকে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো আয়াশ। মিসেস. মালিহা যেন তবুও দমলেন না।
–“সেদিন কাজল ভুলবশত রান্নাঘরে এসেছিল। ও তো চোখে দেখতে পেতো না। অসাবধানতায় আগুন লেগে যায়। এতটুকুই তো। আমি তো ওর দিকে এগোতে পারিনি এই ভেবে কারণ আমার নিজেরও প্রাণ সংশয়ের ভয় আছে।”

আচমকা আয়াশ জোরে হেঁসে ওঠে। তারপরই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কাঠের টেবিলে হাত দিয়ে জোরে আঘাত করে বলে,
–“প্রশ্নটা সেখানেই। মা অন্ধ হওয়ার কারণে মাকে রান্নাঘর অবধি যেতেই দেওয়া হতো না। অথচ সেদিন গেলেন এবং আগুনও লেগে গেল। আমি স্কুল থেকে ফিরলাম ততক্ষণে মায়ের চিৎকার পেয়ে ছুটে একবারে কাঁধে ব্যাগ নিয়েই রান্নাঘরে যাই। আর দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল সেখানে। আপনি জাস্ট এক গ্লাস আর দুই গ্লাস পানি ছিটিয়ে মিছিমিছি চিৎকার করে ‘হেল্প হেল্প’ করছিলেন। তখন বুঝিনি ঠিকই আজ তো বুঝি। আপনি সত্যিটা স্বীকার করবেন নাকি এখানে পানির অভাবে মারা যাবেন?”

মিসেস. মালিনা চুপ করে থাকলাম। হয়ত মনে মনে এটাই ভাবছেন সব তো শেষই হয়ে গেছে জারিজুরি! এখন এতটুকু লুকিয়ে কি লাভ। প্রাণ তো বাঁচাতে হবে। আয়াশ উনার নিরবতা দেখে পেছন ফিরে বাইরে যেতে নিতেই মিসেস. মালিহা ডেকে ওঠেন…

–“ওটা আমারই কাজ ছিল। আমিই ওই আগুনটা লাগায়। সে…সেদিন আমি সব ঠিক করেই বাড়ি এসেছিলাম। সাহাদ ছিলনা। আর সার্ভেন্টদের কয়েকদিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। কারণ বাড়িতে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে অনেক ঝামেলা চলছিল। তাই কাজল চায়নি এসব বিষয় বাইরের কেউ জানুক। সেই সময় আমি উপস্থিত হয়েছিলাম ওই বাড়িতে। কাজল আমার ওপর রেগে ছিল। অনেক উল্টোপাল্টা কথা বলেছে কারণ তার কয়েকদিন আগেই যে আমাদ আর সাহাদের সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিল সে। আমি ওর রাগ ভাঙায়। আর বলি ওর জন্য ওর ফেবারিট বিরিয়ানি বানাতে যাচ্ছি। রান্নাঘরে আসি আর কৌশলে হাত পুড়ে যাওয়ার নাটক করে চিৎকার দিই। কাজল অনেক নরম মনের মেয়ে ছিল। তাই এসবের পরেও ও আমায় দেখতে আসে। সেই সুযোগে আমি ওর শাড়ির আঁচল চুলোর ওপর রেখে দিই। ও বুঝতেও পারে না। ও তো দেখতেই পেতো না। যখন বুঝতে পারল তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। আর ও পুড়তে থাকে। আর…”

আর কিছু বলার সুযোগ পায় না মিসেস. মালিহা। আয়াশ পা দিয়ে টেবিলটা লাথি মেরে উনার দিকে তাকায়। ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে যায় মিসেস. মালিহা। কতগুলো বছর পর অশ্রুসিক্ত হয়ে আসে আয়াশের দুটো নয়ন। আবারও যেন মনে হচ্ছে তার মা চোখের সামনে পুড়ে যাচ্ছে আর আর্তনাদ করছে। সে চিৎকার করে বলে,

–“এতোটা যন্ত্রণা না দিলেও পারতেন। যদি সাহাদ রায়হানকে এতোটাই চাইতেন তো বলে দিতেন। মা ছেড়ে দিতো হয়ত উনাকে। মারার কি দরকার ছিল? তাও এতো নিষ্ঠুর ভাবে? আমায় মাতৃহারা করে দিয়ে কি সুখটা পেলেন? ইচ্ছে তো করছে সেইভাবে পুড়িয়ে দিই যেভাবে আপনি আমার মাকে পুড়েছিলেন। কিন্তু আপনার মতো জানোয়ার আমি নই। একটু পর আপনার জন্য পানি আসবে। খেয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাবেন।”

আর এক মূহুর্ত আয়াশ সেখানে দাঁড়ায় না। যদি দাঁড়াতো তাহলে হয়ত ওর হাতে মিসেস. মালিনা খুন হয়েই যেতো।

বাইরে এসে আয়াশ বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল স্তব্ধ হয়ে। দেয়ালের গা ঘেঁষে বসে পড়ল সে। হাঁটুতে দুটো হাত রাখল। কান্না আজ নিবারণ হচ্ছে না ওর দ্বারা। সে কাঁদতে চায় না। দাঁতে দাঁত চেপে সে চাপা আর্তনাদ করে বলে উঠল,

–“আমি ছেলে হিসেবে ব্যর্থ মা। তোমায় বাঁচাতে পারলাম না। আমায় ছেড়ে চলে গেলে। যদি থাকতে! কেউ চলে গেলে ফিরে আসে না তাই না? যদি ফিরে পেতাম তাহলে তোমায় আর নিশাপাখিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতাম। যদি ফিরে পেতাম!”

বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে উঠে দাঁড়ায় আয়াশ। নিজেকে পুনরায় শক্ত করে নেয় সে। ফোনটা বের করে কারোর সঙ্গে কথা বলে নেয়। ফোনটা কেটে দিয়ে সে বলে,
–“এখান থেকে ছাড়া পাচ্ছে ভেবে হয়ত পালিয়ে যাওয়ার কত প্ল্যানিং করছে তারা। কিন্তু এই জায়গাটা যে কোথায় সেটা কি আদোও জানে?”

ঘুমের মধ্যে কারো উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে নড়েচড়ে উঠলাম আমি। ঘুম হালকা হয়ে এলো আমার। হাতাতে থাকলাম উষ্ণ ছোঁয়া দেওয়া সেই ব্যক্তিটিকে। হাতের নাগালে এলো খোঁচা খোঁচা দাড়ির ছোঁয়া। কেঁপে উঠে চোখ মেললাম আমি। ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই বুঝলাম আয়াশ নামক ব্যক্তিটি আমার ওপর উবু হয়ে রয়েছেন। সন্ধ্যের পর থেকে চিন্তা মাথায় না নিতে পেরে শুয়ে পড়েছিলাম আমি। এদিক-ওদিক করতে করতে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই আমি। এখন কয়টা বাজে? নিশ্চয় খুব রাত হয়েছে? মনে তো হচ্ছে আমি অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি।

ঘড়ির দিকে দৃষ্টি যেতেই বড় ঘড়ি জানান দিল ঘড়ির কাটা প্রায় বারো ছুঁইছুঁই। আয়াশের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললাম,
–“এতো রাতে আপনি ফিরেছেন? আপনার গায়ে এখনো বাইরের জামাকাপড়।”

আয়াশ আমার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললেন,
–“এবার ফিরেছি আর যাচ্ছি না।”

এবার উনার দিকে ভালো করে তাকালাম। কেমন জানি মুষড়ে পড়েছেন মনে হচ্ছে। লাল চোখজোড়াতে স্পষ্ট কিছু কষ্ট! ফোলা চোখ দুটো বলে দিচ্ছে উনি কেঁদেছেন? ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে বললাম,
–“আপনি কেঁদেছেন?”

চলবে…

[বি.দ্র. গল্পের অন্তিম নিকটে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কেউ বাস্তবের সঙ্গে তুলনা করবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here