মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৬

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৬
#আনিশা_সাবিহা

বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি। রাতের খাবার খেয়ে মনটা শান্তি হয়নি মোটেও। কাঁচা কাঁচা খাওয়ার মতো সবজি খেয়ে থাকা যায় নাকি? কয়টা বাজে তাও জানি না। হয়তবা রাতটা একটু বেশিই হয়েছে। একা একা সময়টাও কাটতে চাইছে না কিছুতেই। কথা বলার মতো কেউ থাকলে তো সময় কাটবে? আগে তো হোটেলে কাজ আর সমুদ্রের ধারে হাঁটতে সেই সঙ্গে আমার টিয়াপাখি পিহুর সঙ্গে কথা বলতেই সময় কেটে যেত। পিহু ছিল আমার খুব কাছের। পাখিটা আমায় গিফট করেছিল মামা। মামার কথাও খুব মনে পড়ছে।

–“নিশাপাখি? তোমার কালকের বিয়ের জন্য বেনারসি আর নতুন গয়না কিনে এনেছি। দেখো তো ভালো লাগে কিনা!”

আচমকা ঘরে আমি ব্যতীত আয়াশের কন্ঠ পেয়ে চমকে মাথা নাড়ালাম। মুখ ফসকে বলে ফেললাম….
–“বিয়ে? কোন বিয়ে? আমি বিয়ে করব না।”

বলেই নিজের মুখটা চেপে ধরলাম আমি। বাঘের সামনে পড়েছি মনে হচ্ছে। আয়াশের এগিয়ে আসার শব্দ পেয়ে পা তুলে বিছানায় পিছিয়ে গিয়ে বসলাম। আয়াশের থমথমে কন্ঠ ভেসে এলো।

–“একই জেদ বার বার না করলেই নয়? নাকি আমার রাগ দেখতে চাইছো? আমি মোটেও চাই না আমায় কোনোরকম জোড়াজুড়ি করতে হক বিয়ের জন্য। আমি চাই তুমি খুশিমনে আনন্দের সঙ্গে বিয়েটা করে নাও।”

–“বিয়ে মানে কি জানেন? আমার বয়সটা আপনার থেকে অনেকটা কম। তবুও আমি জানি বিয়ে হলে দুটো মানুষের মনের মিল থাকা খুবই প্রয়োজন। যেকোনো একজনের ভালোলাগা দিয়ে সংসার টিকে না।”

কথাগুলো আনমনেই বলে ফেললাম আমি। আমার মাথাতেই নেই আয়াশ আমার কথায় কতটা পরিমাণ রেগে যেতে পারেন। শুধু মনে হলো আর বলে ফেললাম। আয়াশ রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠলেন…..

–“তোমার কাছে যথেষ্ট টাইম আছে তোমার মনে ভালোবাসা তৈরির জন্য। তুমিই তো নিজের ছোট্ট মনে আমায় ঢুকতে দাও না। ইটস ইউর ফল্ট। নট মাইন। আমি তো বলিনি তোমায় যে আমায় ভালোবেসো না। আমি তো খুব করে চাই আমায় কেউ ভালোবাসবে। কিন্তু কেউ বাসলো না জানো তো? ছোট থেকে শুধু হেয় করে গেছে সবাই। এই সমাজ, এই পরিবার সকলে শুধু আমাকে হেলা করেই গেছে। তাই আমিও বুঝে গিয়েছি, কখনো অন্যকেউ নিজে থেকে কিছু দিয়ে যাবে না। এমনকি নিজে থেকে কেউ সম্মানও দিয়ে যায় না। সবটা ছিনিয়ে নিতে হয়। কেঁড়ে নিতে হয়।”

থম মেরে বসে রইলাম উনার উদ্ভট কথায়। কি বলছেন উনি? এতোসব ভুল ধারণা কি করে এলো উনার মাথায়? পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বলি…..
–“কিছু কিছু জিনিস কেঁড়ে নেওয়া যায় না। আমার মা বলে বিশ্বাস, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান এসব নিজে থেকে আসে। আর সত্যি বলতে কি জানেন? আপনার প্রতি আমার কোনোটাই নেই।”

কথাটা শেষ হতে না হতেই ফোনের রিংটোন সজোরে বাজতে শুরু করে। আয়াশ ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

–“আমি আপনাকে একবার বলেছি আবারও বলছি, আমি আপনার কেস নিতে রাজি নই। আগে ছিলাম এখন ডিসমিস করছি। বাট ইয়েস! আপনার সঙ্গে আমার কোর্টে দেখা নিশ্চয় হবে। এতে গ্যারান্টি দিচ্ছি।”

আয়াশের জোরে জোরে কড়া গলায় কথাগুলো শুনতে পাচ্ছি। আস্তে আস্তে উনার কন্ঠস্বরে রাগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আবারও মনোযোগ দিই উনার কথায়।

–“লক্ষ লক্ষ কেন কোটি কোটি টাকা দিলেও আমি এই কাজ করছি না। ভাগ্য যদি ভালো হয় অন্য কোনো লইয়ার কে অ্যাপোয়েন্ট করে নেবেন। কিন্তু বেচারা জিততে পারবে না।”

বলেই রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে চুপ হয়ে গেলেন আয়াশ। কলটা কেটে দিয়েছেন উনি। বিড়বিড়িয়ে অস্থিরতার সঙ্গে বলে চলেছেন…..
–“আমাকে টাকার লোভ দেখিয়ে কাজ করাতে চাওয়া? এর শোধ আমি তুলব। তুমি কি যেন বলছিলে? আমার প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস কি সব যেন নেই।”

আয়াশের রাগের পরিমাণ বুঝে থতমত খেয়ে গেলাম আমি। এখন যদি উনাকে এসব বলতে যাই নির্ঘাত আমাকে মেরে ফেলবেন। যেই ছেলে নিজেকে আঘাত করতে দুইবার ভাবে না সেই ছেলে আমাকে মেরে গুম করে দিতেও ভাববে না। মুখে একটা হাসি লটকে মোলায়েম গলায় বললাম….
–“না মানে আমার খিদে পেয়েছে।”

–“হোয়াট? একটু আগেই না খেলে?”

মেজাজ গেল চড়ে। ফট করে বললাম…..
–“আপনি আমায় খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছেন? এটা আমার কাছে অপমানজনক। ঠিক আছে আপনি আমার জন্য পানি নিয়ে আসুন। পানি খেয়েই থাকব। তাছাড়া আপনার ওইসব কাঁচা কাঁচা ফল আর সবজি খাওয়ার থেকে না খাওয়ায় ভালো।”

মুখ ফুলিয়ে ফেললাম। সত্যি আমার খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু এবাড়িতে কি মনমতো খাবার পাওয়া যাবে? রাগে-দুঃখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলাম। আয়াশের অস্তিত্ব নিজের সামনে এবং অনেকটাই কাছে অনুভব করলাম। ঢক গিলে ঘাড় ঘুড়িয়ে অন্যদিকে করতেই আমার দুটো গাল চেপে ধরেন আয়াশ। বেশ ব্যথিত সুরে বলেন….
–“আমি সত্যি ওভাবে বলতে চাইনি। তুমি ভুল ভাবছো। তোমার যত ইচ্ছে খেতে পারো। আমি এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসছি। আর এবার স্যালাদ আনবো না। প্রমিস।”

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সেভাবেই বসে রইলাম। গাল ছেড়ে এবার আমার হাত ধরলেন আয়াশ। হাতের পিঠে আলতোভাবে চুমু খেতেই হাতটা ছিটকে সরিয়ে নেয় আমি। ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করে। হার্টবিট নিজের গতিটা যেন দ্বিগুন বাড়িয়ে গিয়েছে। কারো এতো গভীর ঠোঁটের ছোঁয়া আমি পাইনি কখনো। আয়াশ স্তম্ভিত কন্ঠে বললেন…..
–“আই এম সরি।”

তবুও একটাও শব্দ করলাম না আমি। মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলাম।

–“সরি বললাম তো! কথা বলছো না কেন? হ্যাঁ? কথা বলো? সরি এক্সেপ্ট করো? করবে না এক্সেপ্ট? করতেই হবে। আমি এতো বছর পর কাউকে সরি বলেছি। তুমি এক্সেপ্ট করবে না?” (ধমকে)

–“আমি আপনার সরি এক্সেপ্ট করেছি তো। করেছি এক্সেপ্ট।”

আয়াশের ধমকানিতে তাড়াহুড়োতে কাঁপা গলায় বললাম। সরি এক্সেপ্ট না করলে কেউ জোর করেও সরি এক্সেপ্ট করায় সেটা আমার জানা ছিল না। আয়াশ খাবার নিতে চলে গেলেন। জানি না আবার কি আনবেন!

একটা শব্দে নড়েচড়ে দাঁড়ালাম আমি। খুব ভুল না হলে এটা ফোনের মেসেজের টোন হওয়ার কথা। এই ঘরে ফোনও আছে জানা ছিল না। তড়িঘড়ি করে খুঁজতে লাগলাম ফোন। চেয়ারের ওপরে ফোনটা পেলাম ঠিকই কিন্তু হতাশও হলাম সেইসঙ্গে। ফোনটা তো বাটন ফোন নয়। এটা স্মার্টফোন! যতটুকু আশা পেয়েছিলাম সবটাই মাটি হয়ে গেল এক নিমিষে। তবুও ফোনটা নিয়ে বৃথা চেষ্টা করলাম আমি। দরজা খোলার শব্দ পেয়েই হকচকিয়ে ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল। তীব্র ভয় নিয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম।

–“কি করছিলে ফোন নিয়ে? সুযোগ পেয়েছো আর সুযোগের ব্যবহার করতে শুরু করেছো?”

দৃঢ় কন্ঠ আয়াশের। চোখমুখ শুকিয়ে গেল আমার। আমি ঘটনা সামলাতে বলে ফেললাম…..
–“না। আপনার ফোনে মেসেজ এসেছিল আমি তো শুধু চেক…..”

–“হুঁশশ! মিথ্যে বলবে না। আই হেট লায়িং। কাকে ফোন করতে যাচ্ছিলে? নীলাদ্রকে? হ্যাঁ বলো? ওকে কল করতে যাচ্ছিলে তুমি?”

উনার হুংকারে কানে হাত দিয়ে চেপে ধরলাম আমি। অনবরত কাঁপছি আমি। হঠাৎ করেই খুব জোরালো শব্দ হলো। আমার পায়ে ছিটকে এলো তরল গরম পদার্থ। পায়ে লাগতেই সরে এলাম আমি। পা যেন পুড়ে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা হলো আমার। বিছানায় পা ধরে বসে পড়লাম। আমার বাহু উনি চেপে ধরতেই ঘাবড়ে গেলাম। চোখমুখ জড়িয়ে এলো ব্যাথায়। আমাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে শক্ত কন্ঠে বললেন…..

–“আমার #মনের_অন্দমহল আর আমার বাড়ির অন্দরমহল কোনোটা থেকে বের হতে পারবে না। আর যদি তুমি কোনোক্রমে বের হওয়ার চেষ্টা করেছো তাহলে তোমায় খুন করে তোমার লাশের সঙ্গে থাকব আমি। কথাটা মাথায় ভালোভাবে ঢুকিয়ে নাও।” (আমার মাথার পাশে টোকা দিয়ে)

চোখে পানি টলমল করে উঠল আমার। আমায় ছেড়ে দিলেন আয়াশ। পায়ের জোড়ালো আওয়াজ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল। দরজা জোরে লক করার শব্দও পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম। এটা কোথায় এসে ফাঁসলাম? কান্নারত কন্ঠে নিজে নিজেকে বললাম….

–“এই লোকের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া অসম্ভব! আমি থাকব না এখানে। কিন্তু কি করে যাব? কে বের করবে আমায় এই বিপদ থেকে?”

প্রায় আধঘন্টা একইভাবে পায়ে হাত দিয়ে বসে আছি। অসহ্য লাগছে আশপাশটা। বাতাসের কণায় কণায় যেন বিষাদ মেখে আছে। একটা সুখপাখি চাই! যেই সুখপাখি একটুখানি সুখ দেবে। বিষাদময় বাতাসে যে শান্তির হাওয়া বইয়ে দেবে!

ফুলকির মৃদু গলায় মুখ তুললাম।
–“ম্যাম, ছোট স্যার বললেন ঘরটা পরিষ্কার করে দিতে। আপনার পায়ে কি লেগেছে? আমি ঔষুধ লাগিয়ে দেব?”

–“তোমার স্যার আমার মনকে যেভাবে বিষিয়ে দিচ্ছে আমার বাইরের ব্যাথাটা কমই মনে হচ্ছে ফুলকি! আর উনি যদি জানতে পারেন তুমি উনার অনুমতি না নিয়েই আমায় ঔষুধ লাগিয়ে দিয়েছো হতে পারে তোমার ওপরেও রাগ দেখাবেন।”

–“আমি জানি আপনার মন খারাপ। আমি সবসময় ভাবতাম স্যারের জীবনে যে আসবে তার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। হচ্ছেও তাই। আপনি চোখে দেখতে পেলেও একটা কথা ছিল!”

আমি শুধু মলিন হাসি দিলাম। ফুলকি কে জিজ্ঞেস করলাম….
–“সেটাই! দুনিয়ায় এতো মেয়ে ছিল। শেষমেশ আমার মতো অন্ধ মেয়েকে কেন বাছলেন জানি না। কোনো স্বাভাবিক বড়লোক মানুষ অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করার জন্য জোর করে না। আমিও একজনকে ভালোবাসি। সে রাজি থাকলেও আমায় বলে, নিজের চোখ সারালে তবেই ওর পরিবার আমায় মেনে নেবে। হয়ত এটা শুধু নীলাদ্রের পরিবার নয় নীলাদ্রেরও কথা!”

ফুলকি একটু ভেবে বলে উঠল…..
–“আমি একটা কথা শুনেছি। এই বাড়িতে আগে থেকে যারা কাজ করে তাদের থেকে। ছোট স্যারের আসল মা নাকি অন্ধ ছিলেন। তবুও বড় স্যার উনাকে বিয়ে করেন।”

–“তারপর?”

বাকিটা হয়ত ফুলকি বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু বাঁধ সাধলো একটা অদ্ভুত সুন্দর ভেসে আসা সুর। ফুলকি তৎক্ষনাৎ বলে ওঠে…..
–“ওইযে স্যার হারমোনিয়ামে সুর তুলতে লেগেছেন!”

–“উনি হারমোনিয়াম বাজাতে জানেন?”

–“হ্যাঁ জানেন তো। ছোট থেকে বাজান। মন খারাপ বা কিছু হলে হারমোনিয়ামে সুর তুলতে থাকেন। স্যারের ঘরের সঙ্গে আরেকটা আলাদা ঘর আছে। নানারকম কৃত্রিম গাছপালা আর সবুজে ভর্তি। সেখানেই রাখা হারমোনিয়াম। আচ্ছা আমি আসছি।”

আমি মাথা নাড়াতেই চলে গেল ফুলকি। কিন্তু একটু পরই ফিরেও এলো। এসে বলল…..
–“স্যার আপনাকে ডাকলেন। উনার ঘরে যেতে বললেন।”

–“আমাকে ডাকলেন? কেন?”
একটু ভয়ে ভয়ে বললাম আমি। আমার অবস্থা বুঝে ফুলকি হেসে দিয়ে বলল…..

–“ভয় পাবেন না। এখন স্যার ভালো মুডে আছেন। না গেলে রেগে যেতে পারেন।”

–“উনার মন কখন কি অবস্থায় থাকে উনি নিজেও জানেন না। একসময় খুবই ভালো আচরণ করবেন আবার সেকেন্ডেই পাল্টে যাবেন। পৃথিবীতে এজন্যই গিরগিটির কম পড়ছে মনে হয়। এখন মানুষ গিরগিটির চেয়ে বেশি রঙ পাল্টায় কিনা!”

আপনমনে বিছানার নিচে নামতে নামতে বললাম আমি। ফুলকি সেসব স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে প্রশ্ন করল…..
–“কিছু বললেন?”

–“কই না তো। আমায় নিয়ে চলো।”

আমায় আয়াশের ঘরে নিয়ে এলো ফুলকি। খোঁড়াতে খোঁড়াতে এলাম। পায়ে জ্বালাপড়া করছে খুব। এখন উনার কথা অনুযায়ী চলতে পারলে হয়ত উনার বিশ্বাসটুকু অর্জন করা যেতে পারে। ইচ্ছে করছে যদি আয়াশের মুখে গরম কিছু মারতে পারতাম….!
ঘরে ঢুকতেই হারমোনিয়ামের সুর আরো জোরালো হয়ে এলো। উনার তোলা সুর সত্যিই মোহনীয় বলা যায়। মুগ্ধ করে ফেলছেন সুর দ্বারা। একসময় সুর বন্ধ হয়ে গেল। শুনতে পেলাম আয়াশের কন্ঠ।

–“চলে এসেছো? এসো এসো।”

আয়াশ আমার হাত ধরলেন। নিজের দিকে টেনে নিয়ে এলেন। এই কয়েকদিনে উনার স্পর্শ খুব ভালোভাবে চিনেছি আমি। উত্তেজনার সঙ্গে প্রশ্ন করলেন…..
–“একি! তোমার পায়ে এমন হলো কখন? কি করে?”

আমি বিস্ময়ে চোখ বড় করে ফেললাম। নিজে আঘাত দিয়ে আমায় ভুলেও গেছেন! অবশ্য মনে রেখেই বা কি? এখন তো শুধু ওপরে মলম লাগিয়ে দিতে পারবেন আর কি কিছু করতে পারবেন?

–“ওহ নো! আমার হাতেই তো সব হয়েছে। ড্যাট ইট! আই এম সাচ এ ইরেসপন্সিবল।”

আমায় পাজকোলে তুলে বসিয়ে কোথাও একটা বসিয়ে দিলেন উনি। মাটিতে পা ঠেকছে না। আমাকে কতটা ওপরে তুলেছেন? বিষয়টা হয়ত খেয়াল করলেন আয়াশ। তাই বললেন…..
–“তুমি হারমোনিয়ামের ওপর বসে আছো। আমার প্রিয় জিনিস। কাউকে ছুঁতে দিইনি। এই প্রথম তুমি স্পর্শ করলে।”

হা হয়ে বসে রইলাম। অনুভব করলাম আমার পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন উনি। আমি রাগে পা সরিয়ে নিতে চাইলে পা শক্ত করে ধরেন। থমথমে গলায় বলেন…..
–“এর পর থেকে জিনিসপত্র ছুঁড়তে খেয়াল রাখব।”

আমি শ্বাস ছেড়ে বসে রইলাম। উনার কাজ শেষ হলে আবারও আগের মতো হারমোনিয়াম বাজাতে লাগলেন। যাই হোক না কেন! এই সুর মনে দোলা দিচ্ছে আমার। মন খারাপেরা পালিয়ে যাচ্ছে। ভার মাথা হালকা হয়ে যাচ্ছে।

–“জানো, আমার মা তোমার মতো অন্ধ ছিলেন। কিন্তু প্রতিটা মানুষের একটা শখ থাকে। মায়ের হারমোনিয়াম বাজানোর ইচ্ছে ছিল খুব। বাজাতেন মাঝে মাঝে। কিন্তু সুর মিলাতে পারতেন না। আমাকেও হারমোনিয়াম বাজানো শেখান মা। তারপর থেকে মায়ের কথা মনে পড়লেই এখানে সুর তুলি। আমি ছাড়া এটা কেউ টাচ করে না।”

আয়াশের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি আমি। একটু থেমে উনি স্নিগ্ধমাখা গলায় বললেন…..
–“মায়ের পর আমার বুকে তোমার স্থান নিশাপাখি!!”

চলবে…..

[বি.দ্র. গল্পের মূল থিম শুরু হয়নি এখনো। ধৈর্য রাখুন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here