মন চায় তোকে পর্ব-১৯

0
1953

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১৯
#নিশাত_জাহান_নিশি

মল্লিকা মাথা নাঁড়িয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিল থেকে উঠে রুমে গিয়ে কালো বোরখা সাথে কালো হিজাব পড়ে রেডি হয়ে নিলো।

আয়নায় আরেক দফা নিজেকে দেখে মল্লিকা সাইড ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। অন্তর ব্রেকফাস্ট শেষ করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে মল্লিকার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে বসে পড়ল। মল্লিকার দিকে একবার তাকিয়ে অন্তর মৃদু হেসে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। পুরো রাস্তায় মল্লিকা চুপচাপ ছিলো। অন্তর ও তেমন কথা বলে নি। প্রায় পনেরো মিনিট পর ভার্সিটির সামনে পৌঁছে অন্তর মল্লিকার সিট বেল্ট টা খুলে দিয়ে আচমকাই মল্লিকার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মল্লিকা চোখ বন্ধ করে অন্তরের শার্ট চেঁপে ধরল। প্রায় দশ মিনিট পর অন্তর মল্লিকাকে ছেড়ে মল্লিকার ঠোঁট জোড়া মুছে দিলো। মল্লিকা এক দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“ম্যাম আপনার নিশ্চয়ই পোষায় নি। তাই এমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।”

মল্লিকা তাড়াতাড়ি করে অন্তরের থেকে চোখ সরিয়ে সোজা গাড়ি থেকে নেমে সামনে হাঁটা ধরল। পেছন থেকে অন্তর জোরে চেঁচিয়ে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মল্লিকা…. ছুটির পর গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। ওসমান কাকা এসে তোমাকে পিক করবে।”

মল্লিকা পিছু ঘুরে অন্তরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাঁড়ালো। অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকার দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারল। মল্লিকা ভেংচি কেটে দৌঁড়ে ভার্সিটির ভিতর ঢুকে গেলো। অন্তর অট্ট হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো।

প্রায় আধ ঘন্টা পর অন্তর গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গেলো ওর অফিসে। অফিসে পৌঁছেই সে কাজে মনযোগ বসিয়ে দিলো।
মল্লিকা ক্লাসরুমে ঢুকেই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড রজনীকে দেখতে পেলো। মল্লিকাকে দেখেই রজনী মুখটা গোমড়া করে ফেলল। মল্লিকা অসহায়ের মতো মুখ করে রজনীর পাশে বসে রজনীকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,

—“স্যরি রজনী। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমি নীলের সত্যিটা জানতে পেরেছি। নীল তার উপযুক্ত শাস্তি ও পেয়েছে। সে এখন সিঙ্গাপুর জেলখানায় আটক। এক বছরের আগে ছাড়া পাবে না। আমার বর ওকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। তোকে অবিশ্বাস করে আমি মস্ত বড় ভুল করেছি রজনী। এই ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না। এরপরে ও আমি তোরর কাছে ক্ষমা চাইছি। বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে আমার ভুলটাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে নে প্লিজ।”

রজনী মলিন হেসে বলল,,,,,

—-“যাক বাবা শান্তি হলাম। তুই অন্তত তোর ভুলটা বুঝতে পেরেছিস। বিবাহীত জীবনে তুই সুখি আছিস এটা ভেবেই খুব ভাল্লাগছে। তোকে আমি মাফ করে দিয়েছি মল্লিকা। আর স্যরি বলতে হবে না। এবার থেকে দুজন আবারো আগের মতো মিলে মিশে থাকব।”

—-“থ্যাংকস থ্যাংকস থ্যাংকস রজনী। তুই এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ক্ষমা করে দিবি আমি ভাবতেই পারি নি। জানিস তুই আমাকে কওোগুলা হ্যাপি করেছিস?”

রজনী কিছু বলার আগেই মল্লিকা আবার বলে উঠল,,,,,

—-“আচ্ছা রজনী শুন না…. পিয়াস ভাইয়া কেমন আছে? অনেক দিন হলো পিয়াস ভাইয়াকে দেখি না।”

—-“ভালো আছে পিয়াস। আগামী মাসেই আমাদের বিয়ে। খুব বড় করে প্রোগ্রাম করা হবে। তোকে ও ইনভাইট করব।”

—-“ইয়েসসস আমি তো খুব রাজি। অন্তর আর আমি অবশ্যই তোর বিয়েতে যাবো।”

এর মাঝেই ক্লাসরুমে টিচার চলে এলো। মল্লিকা আর রজনী নিজেদের ছেড়ে ক্লাসে মনযোগ দিলো। দুজনই বেশ খুশি।

এই ভাবেই হাসি খুশিতে প্রায় পাঁচ দিন কেটে গেলো। মল্লিকার প্রতি অন্তরের ভালোবাসা দিন দিন বাড়ছিলো। অন্তর যখনই সুযোগ পেতো তখনই মল্লিকাকে আপন করে নিতো। মল্লিকা ও হাসি মুখে সব মেনে নিতো। এই পাঁচ দিনে অনন্যার বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে গেছে প্লাস সব রিলেটিভসদের বাড়ি বাড়ি ইনভিটেশান কার্ড বিলি করা ও হয়ে গেছে। অন্তর আর সারফারাজ চৌধুরী মিলে ইনভিটেশানের পালা সেরে ফেলেছে। মল্লিকা রজনীকে ও ইনভাইট করেছে অনন্যার বিয়েতে। রজনী অলরেডি রাজী ও হয়ে গেছে পিয়াসকে নিয়ে অনন্যার বিয়েতে আসার জন্য।

পাঁচ দিন পর। অন্তর আবার নিয়ম করে মল্লিকাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে গেলো। আজই দুজনের ভার্সিটি এবং অফিস যাওয়ার শেষ দিন। অনন্যার বিয়ের আগে ওরা কেউ আর ভার্সিটি বা অফিস যাবে না। অন্তরদের পুরো বাড়িতে রমরমে ভাব। অন্তরের ফুফুর বাড়ির সবাই আজ বিকেলের মধ্যে চলে আসবে। অনন্যার বিয়ের আর মাএ একদিন বাকি আছে। আগামীকাল হলুদ আর এর পরের দিন বিয়ে। আজ বিকেলে সবাই শপিং এর উদ্দেশ্যে বের হবে। মল্লিকা আজ ভার্সিটি আসতে চায় নি। অন্তর জোর করে মল্লিকাকে ভার্সিটি নিয়ে এসেছে।

মল্লিকা বেশ মন মরা হয়ে ক্লাস করছে। আজ রজনী ও কলেজে আসে নি। তাই সে টোটালী আপসেট। এক্টা ক্লাস করার পর দ্বিতীয় ক্লাসে আচমকাই মল্লিকার শরীর খারাপ হয়ে গেলো। কেমন বমি বমি পাচ্ছে আর অস্বস্তি লাগছে। মল্লিকা তাড়াতাড়ি ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে মল্লিকা ওয়াক ওয়াক করছে। প্রায় পাঁচ মিনিট যাবত মল্লিকা ওয়াক ওয়াক করেই যাচ্ছে। অন্য ওয়াশরুম থেকে এক্টা মেয়ে মল্লিকার বমির শব্দ পেয়ে মল্লিকার ওয়াশ রুমের দরজা ধাক্কাতে লাগল। মল্লিকা খুব কষ্টে দরজাটা খুলে দিলো। মেয়েটা বেশ পেরেশান হয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“এমা তুমি তো বমি করে সব ভাসিয়ে দিচ্ছ! তোমার শরীর কি খারাপ লাগছে?”

মল্লিকা মাথায় হাত দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ কর নাক, মুখ খিঁচে বলল,,,,,

—-“হুম খুব খারাপ লাগছে। মাথাটা ও কেমন ঘুড়ছে!”

—-“আই থিংক তোমার বাড়ি চলে যাওয়া উচিত। তোমার বাড়ির কারো নাম্বার মুখস্ত থাকলে আমাকে বলো আমি কল করে দিচ্ছি।”

মল্লিকা এক নিশ্বাসে অন্তরের নাম্বারটা বলে ফেলল। মেয়েটা অন্তরের নাম্বারটা ডায়াল করে চট জলদি অন্তরের নাম্বারে কল লাগালো। অন্তর কাজের ফাঁকে কলটা রিসিভ করে বেশ ব্যস্ত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“হ্যালো।”

মেয়েটি মল্লিকার কানে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“তুমিই কথা বলো। তোমার হাজবেন্ডকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো।”

মল্লিকা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অন্তরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“অঅন্তর আমি মমল্লিকা বলছি। প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি কলেজে এসে আমাকে নিয়ে যান। আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে। দাঁড়াতে ও পারছি না।”

অন্তর যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,,

—-“এসব কি বলছ মল্লিকা? হঠাৎ করে এতোটা অসুস্থ হলে কিভাবে?”

—-“আমি জানি না অন্তর। প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।”

—-“ওয়েট মল্লিকা। আমাকে পনেরো মিনিট সময় দাও আমি আসছি।”

অন্তর অফিস রুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে গাড়িতে উঠে খুব স্পীডে গাড়ি ছেড়ে দিলো। অন্তরের গাঁ থেকে ঘাম ঝড়ছে। ভয়ে, টেনশানে সে নাজেহাল। মল্লিকার হাত ধরে মেয়েটি মল্লিকাকে অফিস রুমে নিয়ে বসিয়ে দিলো। মল্লিকা দেয়ালের সাথে ড্যাশ দিয়ে বসে আছে।

প্রায় পনেরো মিনিট পর অন্তর বেশ হম্বিতম্বি হয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভার্সিটির ভিতর ঢুকে গেলো। মল্লিকার ক্লাস রুমে ঢুকে অন্তর মল্লিকাকে পাগলের মতো খুঁজছে। মল্লিকাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে অন্তর ক্লাসের এক্টি মেয়েকে জিগ্যেস করল,,,,,

—-“তোমাদের ক্লাসমিট মল্লিকা কোথায়?”

—-“মল্লিকা তো অফিসরুমে ভাইয়া। ওর শরীর খুব খারাপ।”

অন্তর আর দেরি না করে ছুটে গেলো অফিস রুমে। মল্লিকা টেবিলে মাথা ঠেঁকিয়ে বসে আছে। অন্তর দ্রুত পায়ে হেঁটে মল্লিকার পাশে বসল। মল্লিকার মাথাটা টেবিল থেকে উঠিয়ে অন্তর মল্লিকাকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,

—-“মল্লিকা আমি এসে গেছি। তোমাকে আর কষ্ট পেতে হবে না। এক্ষুনি তোমাকে আমি ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।”

মল্লিকা কাঁপা কাঁপা চোখে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর আর দেরি না করে মল্লিকাকে কোলে তুলে নিলো। মল্লিকা অন্তরকে দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে রেখেছে। অন্তর দ্রুত পায়ে হেঁটে ভার্সিটির গেইট ক্রস করে গেইটের সামনে পার্ক করা গাড়িটাতে মল্লিকাকে বসিয়ে দিলো। অন্তর ঘুড়ে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল। অন্তর গাড়ি স্টার্ট করার সাথে সাথেই মল্লিকা অন্তরকে উদ্দেশ্য করে মিনমিন করে বলে উঠল,,,,,

—-“অন্তর এখন কোথায় যাবেন?”

—-“হসপিটাল যাবো মল্লিকা!”

—“না না অন্তর হসপিটাল যেতে হবে না। ফার্মেসী থেকে কেবল এক্টা প্রেগনেন্সি কিট নিলেই হবে।”

কথাটা শোনার সাথে সাথেই অন্তর মুখে হাসি ফুটিয়ে মল্লিকাকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,

—-“তার মানে তুমি কনসিভ করেছ?”

—-“আমি সিউর না অন্তর। তবে এই মাসে আমার পিরিয়ড মিস হয়েছে। তাই আন্দাজ করে বললাম। কাল সকালেই টেস্ট করব। তাই বলছি প্রেগনেন্সি কিট টা নিয়ে নিতে।”

—-“তুমি জানো না মল্লিকা আমার ঠিক কতোটা খুশি লাগছে। খুশিতে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। পজেটিভ যেনো আসে। আমি সত্যি সত্যি বাবা হতে চাই মল্লিকা।”

মল্লিকা মলিন হেসে অন্তরকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,

—-“আমি ও মা হতে চাই অন্তর। প্রবলভাবে চাই।”

এভাবেই কিছুক্ষন জড়িয়ে থেকে অন্তর মল্লিকাকে ছেড়ে হাসি মুখে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। মল্লিকা সিটে মাথা এলিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে। মাথাটা ঘুড়ছে ওর। অন্তর কিছুক্ষন পর পর মল্লিকার দিকে তাকাচ্ছে আর মৃদ্যু হাসছে।

প্রায় পনেরো মিনিট পর অন্তর এক্টা ফার্মেসীর সামনে গাড়িটা থামিয়ে দুটো প্রেগনেন্সি কিট নিয়ে গাড়িতে বসে আবার গাড়িটা স্টার্ট দিলো। এক্টু পরেই ওরা বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে অন্তর মল্লিকাকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতর ঢুকে সোজা রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো। অনন্যা আর মিসেম অরুনীমা কিচেন রুমে তাই ওরা কিছু আঁচ করতে পারে নি। মল্লিকাকে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে অন্তর মল্লিকার কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি এখন আসছি মল্লিকা। অফিসে অনেক কাজ জমে আছে। সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়িতে ফিরব। ডেকোরেটিং এর কাজ আছে। তুমি নিজের যত্ন নিও। দুপুরে লাঞ্চ করে নিও কেমন? এখন এক্টু রেস্ট নাও।”

মল্লিকা মৃদ্যু হেসে মাথা নাঁড়াল। অন্তর রুম থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে সোজা অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

প্রায় একঘন্টা পর শোয়া থেকে উঠে মল্লিকা কিচেন রুমে চলে গেলো। মিসেস অরুনীমা মল্লিকাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,,,,

—–“কি রে মল্লিকা। এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?”

—-“এমনি আম্মু। শরীরটা ভালো লাগছিলো না। তাই দুটো ক্লাস করেই চলে এলাম।”

—-“ভালোই হয়েছে চলে এসেছিস। দেখ আমি কিভাবে মুরগির কোরমা রান্না করি। নেক্সট টাইম কিন্তু তোকে রান্না করতে হবে।”

মল্লিকা হি হি করে হেসে খুব মনযোগ দিয়ে মিসেস অরুনীমার রান্না দেখছে। অনন্যা এতক্ষনে রুমে গিয়ে তন্ময়ের সাথে মুঠোফোনে প্রেম জুড়ে দিয়েছে।

প্রায় তিনঘন্টা পর। ঘড়িতে দুপুর দুইটা। রান্না বান্না শেষে সবাই শাওয়ার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে গেছে। মল্লিকা মিসেস অরুনীমা আর অনন্যাকে সার্ভ করে খাওয়াচ্ছে। কিছুক্ষন পর সে নিজে ও খেতে বসে গেছে। আধ ঘন্টা পর সবাই লাঞ্চ শেষ করে নিজেদের রুমে চলে গেলো রেস্ট নিতে।

বিকেল চারটা। অন্তরের ফুফু আম্মুর পুরো পরিবার এসে অন্তরদের বাড়িতে হাজির হয়ে গেলো। অনন্যা, মল্লিকা আর মিসেস অরুনীমা উনাদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠল। নুসাইবা তো মল্লিকা আর অনন্যাকে পেয়ে খুশিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাহেদ অন্তরকে বাড়িতে না পেয়ে সোজা অফিসে চলে গেলো। অন্তর সাহেদকে পেয়ে দারুন খুশি। অনন্যা খুব আনচান আনচান করছে শপিং এ যাওয়ার জন্য। ওর যেনো আর তর সইছে না। মল্লিকা বেশ বুঝতে পেরেছে অনন্যার বর্তমান অবস্থা। তাই সে আর দেরি না করে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে অনন্যা, নুসাইবা আর অনন্যার উড বি তন্ময়কে নিয়ে শপিং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। তন্ময় গাড়ি নিয়ে বাড়ির গার্ডেনে ওয়েট করছিলো। শপিং এ গিয়ে বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করে সন্ধ্যার পরে সবাই বাড়ি ফিরল। অনন্যা খুব এক্সপেনসিভ লেহেঙ্গা আর অরনামেন্টস কিনেছে বিয়ের জন্য। মল্লিকা আর নুসাইবা একই কালারের দুটো করে খুব গর্জিয়াস শাড়ী কিনেছে। তাছাড়া বাড়ির সবার জন্য তো শাড়ি আর অরনামেন্টস আছেই।

ঘড়িতে রাত আটটা। অন্তর সাহেদকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। দুজনই ফ্রেশ হয়ে ডেকোরেটিং এর কাজে লেগে গেলো। ভালো দেখে একজন ডেকোরেটিং ডিজাইনার কল করেছে অন্তর। পুরো বাড়িটা আলো আর ফুলে ফুলে সাজাবে বলে। বাড়ির সবাই খুব ব্যস্ত। ব্যস্ততার কারণে অন্তর মল্লিকার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছে না। মল্লিকা ও সুযোগ করে উঠতে পারছে না অন্তরের সাথে আলাদা করে কথা বলার।

রাত এগারোটা। সবাই ডিনার টেবিলে এসে হাজির হয়ে গেলো। সবার পেটে প্রচন্ড ক্ষিদে। দুপুরের পরে কারোর পেটেই কিছু পড়ে নি। মল্লিকা আর অরুনীমা মিলে সবাইকে সার্ভ করে খাওয়াচ্ছে। অন্তর মল্লিকাকে টেনে ওর পাশের চেয়ারটাতে বসিয়ে দিলো। সবার সামনে অন্তর মল্লিকাকে লোকমা তুলে খাওয়াচ্ছে। মল্লিকা মাথাটা নিচু করে চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে। সারফারাজ চৌধুরী অন্তরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই নিজেদের রুমে চলে গেলো। রুমের লাইট অফ করে অন্তর মল্লিকাকে নিয়ে শুয়ে পড়ল। আবারো অন্তর মল্লিকাকে নিজের করে নিলো।

পরের দিন,,,,,

সকাল আটটা। মল্লিকা বিছানা ছেড়ে উঠেই প্রেগনেন্সি কিটটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ইউরেন নিয়ে মল্লিকা চেইক করে দেখল রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। খুশিতে মল্লিকার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ওয়াশরুমের দরজা খুলে মল্লিকা রুমে ঢুকে কাবার্ড থেকে শাড়ী বের করে আবারো ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর মল্লিকা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে টাওয়ালটা চুলে পেঁচিয়ে বেডে বসে অন্তরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,

—–“অন্তর…..আপনি বাবা হতে চলেছেন।”

#চলবে,,,,,,,,,

(দুঃখিক ব্যস্ততার জন্য পার্টটা ছোট হয়ে গেলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here