#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_২০_এবং_শেষ
#নিশাত_জাহান_নিশি
—–“অন্তর…..আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
অন্তরের কোনো রেসপন্স না পেয়ে মল্লিকা ঠিক বুঝেছে অন্তর গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। মল্লিকা বাঁকা হেসে অন্তরের কানের লতিতে আস্তে করে এক্টা বাইট দিয়ে আবারো অন্তরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,
—-“অন্তর….. আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
সাথে সাথে অন্তর নড়ে চড়ে উঠল। বাবা হওয়ার কথাটা অন্তরের কানে যাওয়ার সাথে সাথেই অন্তর শোয়া থেকে হুড়মুড়িয়ে উঠে মল্লিকার মুখোমুখি বসে বেশ জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
—-“সত্যি বলছ মল্লিকা? আমি বাবা হতে চলেছি?”
মল্লিকা অন্তরের নাক টেনে বলল,,,,,
—-“হুম অন্তর আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
অাচমকাই অন্তর বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো। মল্লিকা বেশ অবাক হয়ে অন্তরের দিকে ঝুঁকে বলল,,,,,
—-“অন্তর কি হয়েছে আপনার? আপনি হঠাৎ কাঁদছেন কেনো? আচ্ছা অন্তর…. আপনি কি খুশি হন নি?”
অন্তর ছলছল চোখে মল্লিকাকে ওর বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,
—-“মল্লিকা….. আমি এতোটাই খুশি হয়েছি যে নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছি না। আমার শরীরটা অনেক কাঁপছে মল্লিকা। বুকের ভেতর এক্টা সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। বাবা হওয়ার এতো আনন্দ আমার আগে জানা ছিলো না। খুশিতে আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে মল্লিকা, খুব।”
অন্তরের কথাগুলো শুনে মল্লিকা চোখের জল ছেড়ে দিলো। সন্তানের প্রতি অন্তর এতোটা টান অনুভব করবে মল্লিকা বুঝতে পারে নি। মল্লিকা অন্তরকে ঝাপটে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অন্তর মল্লিকাকে ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে চোখের জল গুলো মুছে এক গাল হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“বাড়ির সবাইকে খুশির খবরটা দিয়ে আসি। সবাই খুব খুশি হবে মল্লিকা।”
অন্তর আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়াল না। রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো। মল্লিকা মৃদ্যু হেসে চুল থেকে টাওয়ালটা সরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাঁড়তে শুরু লাগল। ঐ দিকে অন্তর পুরো বাড়িতে দৌঁড়ে দৌঁড়ে খুশির খবরটা বলে বেড়াচ্ছে। মিসেস অরুনীমা আর অনন্যা খুশিতে দৌঁড়ে এসে মল্লিকার রুমে ঢুকে গেলো। মল্লিকাকে দুজনই ঝাপটে ধরল। মিসেস অরুনীমা খিলখিল হেসে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“মল্লিকা….. এতোদিন ধরে এই খুশির খবরটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। তুমি আমাদের ধন্য করলে মল্লিকা।”
অন্তর আর সারফারাজ চৌধুরী এতক্ষনে মিষ্টির দোকানে ফোন করে কেজি কেজি মিষ্টির অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। পুরো বাড়িতে খুশি আর খুশি। সব কিছুতেই এক্সট্রা খুশি। নুসবাইবা এসে ও মল্লিকাকে ঝাপটে ধরল। অন্তর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মল্লিকাকে নিয়ে চলে গেলো। ব্রেকফাস্ট টেবিলে হরেক পদের খাবার সাজানো আছে। অন্তর মল্লিকাকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মল্লিকা খাচ্ছে আর মুগ্ধ নয়নে অন্তরকে দেখছে। মনে মনে সে উপর ওয়ালার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছে। সাথে ওর আম্মু, আব্বুকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছে। মিসেস অরুনীমা ফোন করে মল্লিকার আম্মু, আব্বুর কাছে খুশির খবরটা পৌঁছে দিলো। ওরা এমনিতে ও আজ বিকেলে অনন্যার হলুদ অনুষ্ঠানে আসত। কিন্তু খুশির খবরটা পেয়ে ওরা এখনই রওনা হয়ে গেলো অন্তরদের বাড়ি আসতে। মল্লরের কানে ও খুশির খবরটা পৌঁছে গেছে। মল্লর বিকেলের মধ্যেই ওর হাজবেন্ড কে অন্তরদের বাড়িতে চলে আসবে।
এভাবেই হাসি, খুশিতে সকাল গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে রাত নেমে এলো। মিসেস লিজা আর মল্লর ও চলে এলো। বাড়ির সবাই মল্লিকাকে ঘিরে রেখেছে। বাড়ির ছেলেরা বেশ ব্যস্ত হলুদের প্যান্ডেল সাজাতে। এক্টু পরেই অনন্যার হলুদ, মেহেদীর প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে। বাড়ির সব মহিলারা এবার সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তন্ময় খুব ভালো একজন মেকাপ আর্টিস্টকে অনন্যার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে অনন্যাকে সাজানের জন্য। অনন্যা খুশি খুশি মনে সেজে ও নিচ্ছে। নুসাইবা, মল্লিকা আর মল্লর ও নিজেদের মতো করে সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অন্তর হলুদ পান্জ্ঞাবী পড়ে অলরেডি স্ট্যাইজে চলে গেছে।
প্রায় দুই ঘন্টা পর। ঘড়িতে রাত ৯:৩০। অনন্যার সাজ কমপ্লিট। হলুদ লেহেঙ্গাতে অনন্যাকে ভারী মিষ্টি লাগছে। সাথে ভারী অরনামেন্টস তো আছেই। মল্লিকা, মল্লর আর নুসাইবা হলুদ কাপড় পড়ে রেডি হয়ে গেলো। এবার স্ট্যাইজে যাওয়ার পালা। মল্লিকা এক হাত দিয়ে অনন্যাকে আষ্টেপিষ্টে ধরে স্ট্যাজের দিকে এগুচ্ছে। সাথে মল্লর আর নুসাইবা ও আছে।
অন্তর মল্লিকাকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মল্লিকার দিকে। মল্লিকা বাঁকা হেসে অন্তরকে ধাক্কা দিয়ে অনন্যাকে নিয়ে স্টেইজে বসে পড়ল। অন্তর হাসতে হাসতে অনন্যার অন্য পাশে বসল। দুজনই অনন্যাকে হলুদ মেখে ভূত বানিয়ে দিয়েছে। অনন্যা ও কম যায় না। সে ও মল্লিকা আর অন্তরকে হলুদ দিয়ে চুপচুপ করে ফেলেছে। এবার সবাই এক এক করে পালাক্রমে অনন্যাকে হলুদ পড়াতে লাগল। ঐ দিকে তন্ময়ের বাড়িতে ও খুব জোরচে হলুদ অনুষ্ঠান চলছে। তন্ময়ের ফ্রেন্ডসরা ও তন্ময়কে হলুদ ভূত বানিয়ে দিয়েছে। প্রায় দুই ঘন্টা পর অনন্যার হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো। সবাই এক এক করে নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। অন্তর মল্লিকার পেটের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। কিছুক্ষন পর মল্লিকা নিজে ও ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন। সকাল দশটা। অন্তরদের পুরো বাড়িতে রান্নার সুঘ্রাণ ম ম করছে। বাড়ির সবাই ব্যস্ত কাজে কাজে। কাজের ফাঁকে ও অন্তর মল্লিকার খুব খেয়াল রাখছে। মল্লিকাকে সাবধানে চলাচল করতে বলছে। অনন্যা সাজতে বসে গেছে। মেকাপ আর্টিস্ট এসে অনন্যাকে সাজাচ্ছে। এভাবেই কেটে গেলো দুই ঘন্টা। ঘড়িতে দুপুর বারোটা। তন্ময় লাল শেরোয়ানী পড়ে রেডি হয়ে গেছে। এবার শুধু অনন্যাদের বাড়ি আসার পালা। তন্ময়ের যেনো আর তর সইছে না, কখন সে অনন্যাকে দেখবে তার জন্য আনচান আনচান করছে।
মল্লিকা লাল শাড়ি পড়ে হালকা সাজে রেডি হয়ে গেছে। মল্লিকার সাথে সাথে মল্লর আর নুসাইবা ও লাল শাড়ী পড়েছে। তিনজনই হালকা ভাবে সেজেছে। তাছাড়া মল্লিকার এখন সাজ গোজে তেমন মন নেই। সে কেবল ওর বেবিকে নিয়ে ব্যস্ত। সারাক্ষন বেবিকে নিয়ে ভাবে। অন্তর লাল পান্জ্ঞাবী পড়ে গেইটের আশে পাশে ঘুড়াঘুড়ি করছে কখন তন্ময়রা আসবে। অন্তর ও কেমন উদাসীন হয়ে গেছে। সারাক্ষন শুধু ওর বেবিকে নিয়ে চিন্তা করে।
প্রায় এক ঘন্টা পর। ঘড়িতে দুপুর এক্টা। তন্ময়ের গাড়ি এসে অনন্যার বাড়ির গেইটের সামনে থামল। অন্তর, সাহেদ, সাহেল, সারফারাজ চৌধুরী খুব হাসি মুখে তন্ময় এবং ওর পরিবারকে বাড়ির ভিতর ঢুকালো। স্ট্যাইজে বসে আছে তন্ময়। তন্ময়ের পাশেই কাজী সাহেব বসে আছে। অনন্যাকে এখন স্ট্যাইজে আনা হবে। মল্লিকা আর নুসাইবা অনন্যার দুই হাতে ধরে অনন্যাকে স্ট্যাইজে নিয়ে আসছে। তন্ময়ের দৃষ্টি অনন্যাতে স্থির হয়ে গেলো। লাল লেহেঙ্গাতে অনন্যাকে লাল পরী লাগছে। অন্তর ও ড্যাব ড্যাব করে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা লাজুক হাসি দিয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা অন্তরকে ক্রস করে অনন্যাকে নিয়ে তন্ময়ের পাশে বসিয়ে দিলো। তন্ময় আর অনন্যা দুজন দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাজী সাহেব এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করল। তিন কবুলের মাধ্যমে দুজনের বিয়ে পড়ানো শেষ হয়ে গেলো। দুই পরিবারের সবাই বেশ খুশি। সবাই খুশিতে মিষ্টিমুখ করছে।
প্রায় তিনঘন্টা পর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমে এসেছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এবার এলো বিদায়ের পর্ব। সবাই খুব কেঁদে কেটে অনন্যাকে বিদেয় দিলো। অনন্যা ও খুব কেঁদেছে। কাঁদতে কাঁদতে ভাসিয়ে দিয়েছে। অন্তর আর সারফারাজ চৌধুরী খুব কষ্টে ওদের চোখের জল আটকে রেখেছে। মিসেস অরুনীমা কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে। মল্লিকা খুব কষ্টে মিসেস অরুনীমাকে সামলাচ্ছে। তন্ময় আর অনন্যা সবার থেকে বিদেয় নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল। অন্তররা সবাই এবার বাড়িতে ঢুকে ড্রইং রুমে গোল হয়ে বসে পড়ল। সবার চোখেই চল গড়াগড়ি করছে। বাড়ির সব গেস্টরা এতক্ষনে চলে গেছে। রজনী অনন্যার বিয়েতে আসতে পারে নি। কিছু পার্সোনাল প্রবলেমের কারণে। মল্লিকা ও রজনীকে তেমন ফোর্স করে নি।
রাত দশটা। অনন্যা নীল রঙ্গের শাড়ী পড়ে ফুলসজ্জার খাটে বসে আছে। তন্ময় নীল পান্জ্ঞাবী পড়ে রুমের দরজা ঠেলে রুমের ভিতর ঢুকল। অনন্যা লজ্জায় মুখটা শাড়ীর আঁচল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। তন্ময় বাঁকা হেসে অনন্যার মুখোমুখি বেডের উপর বসে পড়ল। অনন্যা লজ্জা কাটিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকালো। তন্ময় মুচকি হেসে অনন্যার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। আস্তে আস্তে তন্ময়ের ভালোবাসার গভীরতা বাড়তে লাগল।
অন্তর আর মল্লিকা দুজন দুজনকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। অন্তর কিছক্ষন পর পর নড়ে চড়ে উঠে মল্লিকার পেটে হাত রাখছে। অন্তরের জ্বালায় মল্লিকা ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারছে না। বার বার ওর ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকক্ষন জ্বালানোর পর অন্তর নিজেই ঘুমিয়ে গেলো। মল্লিকা ও আরামচে ঘুম দিলো।
এভাবেই কেটে গেলো পাঁচ পাঁচটে মাস। এই পাঁচ মাসে মল্লিকার পেটটা এক্টু বড় হয়েছে। এক্টু না অনেকটাই বড় হয়েছে। মল্লিকার ছেলে বাবু হবে। আলট্রাসনো করে জানা গেছে। অন্তর এবং ওর পরিবার মল্লিকার খুব যত্ন নিচ্ছে। মল্লিকার কাজ করা টোটালী বারণ। মিসেস অরুনীমা কোনো কাজ করতে দেয় না মল্লিকাকে। এর মাঝেই অন্তর আর মল্লিকা গিয়ে রজনীর বিয়ের দাওয়াত ও খেয়ে এসেছে। অন্তর বেশির ভাগ সময় ই এখন বাড়িতে কাটায়। মল্লিকাকে সে খুব চোখে চোখে হারায়। অনন্যা তো সুযোগ পেলেই মল্লিকার কাছে চলে আসে। মল্লিকার পেটে হাত দিয়ে ওর ভাইয়ের ছেলের সাথে নানা রকম কথা বলে আর খিলখিল করে হাসে। মল্লিকা অনন্যার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। মিসেস অরুনীমা তো তেড়ে এসে অনন্যার মাথায় গাড্ডা মারে। অনন্যা না কেঁদে উল্টো খিলখিল করে হাসে।
বাবুরা পাঁচ মাসে পড়লেই পাঁচ ফল খাওয়ানো হয়। তাই মিসেস অরুনীমা আজ বাড়িতে পাঁচ ফলের অনুষ্ঠান রেখেছে। ছোট খাটো করেই অনুষ্ঠানটা করা হবে। মল্লিকার পরিবার আর তন্ময়ের পরিবার থাকবে। ছেলেদের এই অনুষ্ঠানে থাকা এলাউড না। তাই অন্তর, তন্ময়, সারফারাজ চৌধুরী, মল্লিকার বাবা, তন্ময়ের বাবা মিলে বাড়ির ছাঁদে বসে খুব আড্ডা দিচ্ছে। মল্লিকাকে ব্ল্যাক কালার কাপড় পড়িয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে বসানো হলো। নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ ফলের অনুষ্ঠান করা হলো। মল্লিকার পরিবার কেজি কেজি করে পাঁচ পাঁচটে ফল মিলিয়ে এনেছে। অনুষ্ঠান শেষে অনেক রিলেটিভসদের বাড়ি পাঁচ ফল পাঠানো হলো। মল্লিকার পরিবার আর তন্ময়ের পরিবার খাওয়া দাওয়া করে নিজেদের বাড়ি চলে গেলো। অনন্যা অবশ্য যেতে চায় নি। তন্ময় জোর করে অনন্যাকে বাড়ি নিয়ে গেছে।
মল্লিকা রুমে গিয়ে শাড়ী পাল্টে নিলো। অন্তরের সাহায্যে মল্লিকা শাড়ী পাল্টেছে। আজ রাতের আকাশে অগনিত তাঁরা আর মস্ত বড় এক চাঁদের মেলা। খোলা জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলো অন্তরের রুমটাকে আলোয় আলোকিত করে রেখেছে। অন্তর মুচকি হেসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“মল্লিকা….. ব্যালকনীতে চলো। আজ আমরা দুজন একসাথে বসে চন্দ্রবিলাস করব। সাথে আমাদের ছেলে ও থাকবে।”
মল্লিকা অন্তরের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,
—-“চলুন অন্তর।”
অন্তর পিছু ফিরে মল্লিকার হাত ধরে আস্তে করে মল্লিকার সাথে ব্যালকনিতে পাতা ছোট্ট টুলটায় বসে পড়ল। মল্লিকা অন্তরের কাঁধে মাথা রেখে থালার মতো গোল চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মল্লিকার মাথায় মাথা ঠেকিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“মল্লিকা…. আজ আমি পূর্ণ। আমার মন যাকে চেয়েছে আমি তাকেই পেয়েছি। সারাজীবন আমার #মন_চায়_তোকে। সাথে আমার সন্তানকে ও। আমি দুজনকেই চাই মল্লিকা। দারুনভাবে চাই।”
—-“অন্তর….. আজ আমি ও পূর্ণ। আপনার মতো একজন বেস্ট বেটার হাফ পেয়ে। আপনি ও সারাজীবন আমার মনে থাকবেন অন্তর। আমাদের সন্তান আর কিছু মাস পরেই এই পৃথিবীতে আসবে। তখন নিজেকে আরো বেশি পূর্ণ মনে হবে।”
অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকাকে ঝাপটে ধরল। এভাবেই অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে কেটে গেলো প্রায় এক বছর। মল্লিকার কোল আলো করে এক্টা ছোট্ট প্রানের জন্ম হয়েছে। ছেলে হয়েছে মল্লিকার। আট বয়সে পড়ছে মল্লিকার
সন্তান। সুস্থ ভাবেই মল্লিকার ডেলিভারী হয়েছে। অন্তর সারাক্ষন ওর ছেলেকে নিয়ে মেতে থাকে। অফিসে যাওয়া টোটালী ছেড়ে দিয়েছে। মল্লিকা হাজার জোর করে ও অন্তরকে অফিসে পাঠাতে পারে না। অনন্যা দিনে দুইবার করে ওর ভাইয়ের ছেলেকে দেখতে আসে। মল্লিকার আম্মু, আব্বু ও দুইদিন পরে পরে চলে আসে উনাদের নানুভাইকে দেখতে। মিসেস অরুনীমা আর সারফারাজ চৌধূরী উনার নাতিকে কোলে নিয়ে মেলা হাসাহাসি আর গল্প জুড়ে দেয়। অনন্যা দুইমাসের প্রেগন্যান্ট। এর পরে ও সে দৌঁড় ঝাপ কমায় না। এই নিয়ে অনন্যার সাথে তন্ময়ের রোজই ঝগড়া হয়।
অন্তর ওর ছেলের নাম রেখেছে “আফনান চৌধুরী আদ্র।” অন্তরের ছেলে দেখতে একদম অন্তরের মতো হয়েছে। মল্লিকা তো এই হিংসেয় সারাক্ষন জ্বলে। আদ্র আধো আধো বুলিতে মল্লিকাকে মা মা করে ডাকে। অন্তরকে ও বা বা করে ডাকে। অন্তর তো খুশিতে ওর ছেলেকে বুকে পুড়ে নেয়। মাঝে মাঝে খুশিতে কান্না ও করে দেয়। মল্লিকা আড়ালে দাঁড়িয়ে এসব দেখে আর মুচকি হাসে।
এভাবেই ওদের সংসার জীবন চলতে থাকে। অন্তর আর মল্লিকা ওদের বিবাহিত জীবনে খুব খুশি। মা-বাবার ঠিক করা এ্যারেন্জ্ঞ ম্যারেজে হয়তো সুখ মিলে নয়তো দুখ। সবটা ডিপেন্ড করে ভাগ্যের উপর। মল্লিকা আর অন্তরের ভাগ্য ভালো ছিলো বলে ওরা বিবাহিত জীবনে খুব খুশে হয়েছে। দুজন দুজনকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে পেরেছে। ওদের ভালোবাসাকে খুব সুন্দর এক্টা রূপ দিয়েছে ওদের সন্তান।
—————–সমাপ্ত—————–
(সাইলেন্ট রিডার্সরা গল্পটা সম্পর্কে দু, এক লাইন বলে যাবেন। যদি ও জানি গল্পটা খুব বাজে হয়েছে। অনেকে অনেক সমালোচনা ও করেছেন। যাই হোক, গল্পটার শেষে অন্তত দু, এক লাইন ভালো কথা বলে যাবেন। এন্ডিং টা ও হয়তো তেমন ভালো হয় নি।)