মন_গহীনের_গল্প
পর্ব-২৮
রূবাইবা_মেহউইশ
💞
সন্ধ্যা থেকেই পেটের ব্যথায় ছটফট করছে মেহউইশ । কখনো বিছানায়, কখনো বেলকোনিতে যাচ্ছে পায়চারী করছে। স্থির হয়ে বসলেই যেন ব্যথা বাড়ছে। রিশাদ দুপুরে খাওয়ার পর আর রুমে আসেনি। নির্জনকে নিয়েই বেরিয়েছিলো প্রথমে পরে কোন কাজে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার প্রয়োজন হওয়ায় স্টাফকে দিয়ে ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছে। রেহনুমা মাগরিবের নামাজের পর বসে তসবীহ জপছিলেন। এখানে এসে করার মত কোন কাজই খুঁজে পাননি তিনি আজকে। রুম দুটো আগেই হোটেল স্টাফ দ্বারা পরিষ্কার করিয়ে সাজানো ছিলো। তারা এসে শুধু যার যার আলমারি গুছিয়ে নেওয়ার ছিলো। রেহনুমা তার নিজেরটা বিকেলেই গুছিয়েছে আর মেহউইশ নিজেরটা গোছানোর অবস্থায় নেই। নির্জন আজকাল হাত,পা খুব নাড়ায়, অনেকরকম কথাবার্তা বলে যদিও তার কোন শব্দই স্পষ্ট নয়। আজও মেহউইশ যখন বিছানায় ছটফট করেছে বাচ্চাটা তখন তারই পাশে শুয়ে ছোট ছোট হাতে তার গাল ছুঁয়ে দিচ্ছিলো, চিবুক ধরছিলো। কোমল সেই ছোঁয়া যেন অলৌকিক ভাবেই মেহউইশের ব্যথা উপশম করছিলো অথবা তার মস্তিষ্ক কিছু সময়ের জন্য ব্যথা ভুলে সেই স্পর্শ অনুভব৷ করছিলো। সেও একটু ঝুঁকে নির্জনের চোখে,মুখে আদুরে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছিলো। কি এক যাদু আশ্চর্যজনকভাবেই তার মনে মায়ার সৃষ্টি করে দিয়েছে এই বাচ্চাটার প্রতি। রিশাদের প্রতি ভালোলাগা বিন্দু পরিমাণও জন্মায়নি। তবুও রাত বিরাতে দেহের ভেতর তার অবাধ স্পর্শ যেমন কাঁপিয়ে দেয় তার তরুণী দেহটাকে ঠিক তেমনি দিনের আলোয় ঘৃণার সমুদ্র এক ঝটকায় রিশাদকে তার নজরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জঘন্য ব্যক্তিও বানিয়ে দেয়। এই ঘৃণা আর নিষিদ্ধ সেই শিহরণে জীবনটা কেমন কাটবে দুজনের তা জানা নেই মেহউইশের আদৌও সারাটা জীবন একসাথে কাটবে কিনা তাও জানে না। শুধু এইটুকু জানা, এই ছোট্ট নির্জনটার মায়ায় সে ফেঁসে যাবে খুব বাজেভাবে। ‘মমতা’ বড্ড কঠিন এক বাঁধন যার বন্ধনে আটকা পড়লে ছেড়ে যাওয়া মুশকিল। মেহউইশ ধীরে ধীরে সেই বাঁধনেই বাঁধা পড়ছে তা সে নিজেও বুঝতে পারছে না।
সারাটাদিন কাটলো বাড়ির প্রতিটি ঘরের কোণায় কোণায় তল্লাশি চালিয়ে তবুও রাইমার হাতে লাগলো না কিছুই। কিছুই কি নেই এমন যা দিয়ে কিছু মানুষের জীবনের গোপন রহস্যগুলো জানা যাবে! বাবা আর মায়ের মধ্যকার সম্পর্ক কি করলে ঠিক করা যাবে তা সেই রহস্যের জাল খুললেই জানা যাবে। মনে মনে একবার রিশাদের কাছে হেল্প চাইবে বলে সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা বাতিল করা হলো৷ দাদাভাই নিশ্চিত জানে সব আর লুকানোর মত বলেই দাদাভাইও খুব সুক্ষ্মভাবে কিছু জিনিস সবসময়ই লুকিয়ে যায়। যেমনটা লুকিয়েছে তাদের একমাত্র ফুপির কথা৷ফুপি আছে সেও জীবিত অথচ রিহান আর সে জানেই না কথাটা কিন্তু দাদাভাই ফুপির বাড়িতে গিয়ে থাকছে! মা ফুপিকে সহ্য করতে পারে না আবার আব্বু বলেছে ফুপির স্বামীর মৃত্যুর জন্য মা দ্বায়ী! অন্যমনস্ক হয়ে রাইমা নিচ তলায় তার দাদার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলো। বেখেয়ালে তার ধাক্কা লাগে বাড়ির সবচেয়ে পুরাতন আর বয়স্ক কাজের লোক মালা কাকীর সাথে। নিঃশব্দে হাঁটাচলা করা এই মহিলাটির বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি । কাজের দিকেও খুব পটু কিন্তু জেবুন্নেসার খিটখিটে মেজাজের কারণে মহিলাটি সবসময় থাকেন না এখানে আবার অভাবের তাড়নায় কাজও ছাড়েননি। রিশাদের বাবাকে বলেই তিনি রয়ে গেছেন এখানে। রিশাদের বাবা যখন খুব ছোট তখন থেকেই এই মহিলা এই বাড়িতে। কাজ বলতেও তেমন কিছু করা লাগে না তার তবে শক্তিবল এখনো ভালো থাকায় বাড়ির মাছ কাটার কাজটা তিনি অনায়েসেই করেন। কাজেও খুব পরিচ্ছন্ন হওয়ায় জেবুন্নেসাও তাকে তাড়ানোর পায়তারা করেনি কখনও।
‘এরুম করে হাঁটতেছো ক্যা।অহনই তো চোট লাগতো নাহে,মুহে (নাকে,মুখে)’
‘স্যরি কাকী খেয়াল করিনি।’
‘এ্যাই মাইয়া আবার কাকী কইতাছো! কইছি না কয়দিন দাদী কইয়া ডাকবা তোমার বাপ আমারে কাকী কয়।’
‘আচ্ছা স্যরি, আমার মনে থাকে না৷’ রাইমা চলে যাচ্ছিলো দোতলার দিকে আর বৃদ্ধা কাজ শেষ বলে নিজের বাড়ির যাবেন বলেই বেরুচ্ছিলেন। রাইমা হঠাৎ মাঝ সিঁড়িতে থেমে গিয়ে পেছন ফিরলো৷ মহিলাটি সদর দরজা ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। তার কি মনে হলো সে জানে না। হুট করেই সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বাইরের দিকে দৌঁড় লাগালো।
‘মালা কাকী দাঁড়ান, একটু শুনুন আমার কথা।’ রাইমার ডাকে গেইটের কাছাকাছি যাওয়া বৃদ্ধা থেমে গেলেন৷ পেছন ফিরে রাইমার দিকে বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে তাকালেন।
‘কত দিন বুঝাইছি আমি তোমার কাকী না তোমার বাপের কাকী।’
‘স্যরি স্যরি, আমার মনে থাকে না বাড়িতে তো সবাই আপনাকে কাকীই বলে।’
‘সবাই কয় কারণ হেরাও তোমার বাপ, মার বয়েসি তুমি তো আর তেমন না।’
‘আচ্ছা আর ভুল হবে না। আপনি কি এখন বাড়ি যাচ্ছেন?’ রাইমা বিনয়ের সুরে জানতে চাইলো। বৃদ্ধা মাথার আঁচল আরেকটু টেনে কপালে তুললেন, ‘ তয় আর কি করমু৷ আজকা এমনই অনেক দেরি অইছে কামে৷ দুইফরে( দুপুরে) যাওনের কথা আইজকা মাগরিবের সমায় অইয়া গেছে। বাগানের কামও আমারে দিয়া করাইছে তোমগো হেই মেনেজারে।’ বৃদ্ধার কথা শুনে খারাপ লাগলো রাইমার। সেও জানে এই বৃদ্ধাকে তার বাবা কাজের নামে রাখলেও আসলে তাকে এমনিতেই রাখা হয়েছে। মায়া পড়ে গেছে অনেকটা বছরে আর বৃদ্ধা কাজ ছাড়া পয়সা নিবেন না তাই কাটাকুটির বাহানায় রাখা হয়েছে। সন্তান সন্ততিহীন এই বৃদ্ধার স্বামী আর একটি ঘর ছাড়া নিজের বলতে কিছুই নেই তার স্বামী মানুষটাও অচল অনেকবছর ধরে। রাইমা বৃদ্ধাকে বলতে চেয়েও বলল না। আজ যাক কাল না হয় সুযোগ বুঝে কথা বলা যাবে।
-আচ্ছা, আপনি আজ যান।
বৃদ্ধার আর অপেক্ষা না করে চলে গেছেন নিজের গন্তব্যে। রাইমাও বাড়ির ভেতর পা ফেলতেই দেখলো তার বাবা রাশেদ খান। পঞ্চান্ন পেরিয়ে ছাপান্ন ছুঁই ছুঁই বয়সেও অনেক শক্ত সামর্থ্য মানুষ রাশেদ খান৷ গায়ের রং ফর্সা হলেও তা এখন আর বোঝা যায় না তেমন।
-বাইরে কি করছিলে মা! রাশেদ মেয়েকে প্রশ্ন করলেন।
-কিছু না আব্বু। একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম।
-‘সন্ধ্যের পর বাইরে না যাওয়াই ভালো মা। ভেতরে এসো’ বলেই রাশেদ খান নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। রাইমাও আর দেরি না করে চলে গেল নিজের ঘরে।রাশেদ খান আজ আর বাড়ির বাইরে যাবেন না তাই কাজের লোককে ডেকে চা চাইলেন এক কাপ।
কূটবুদ্ধিসম্পন্ন একজন চতুর মানুষ এই লোকটা জীবনের প্রথম দিকে যথেষ্ট সৎ ছিলেন। টাকার পাহাড় গড়ার নেশায় পড়ে সততা বিসর্জন দিয়েছেন অনেক বছর হলো। রাগ আর ক্রোধ হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছিলেন তিনি আর তা ভুল কাজেই বেশি লাগাচ্ছেন আজকাল। আর এই উত্তরাধিকার সূত্রে রাগটা রিশাদ এবং রিহান দুজনেই পেয়েছে। তবে আরও একটা জিনিস তারা পেয়েছে রক্তসূত্রেই তা হলো, নিজের মেয়ে কিংবা বোনের জন্য অন্যকে কষ্ট দেওয়া৷ যা কোন একসময় করেছিলো রাশেদ খান এবং বর্তমানে করছে রিশাদ।
চট্টগ্রাম থেকে কাজ শেষ করে কক্সবাজার পৌঁছুতে বেশ রাত হয়েছে রিশাদের। ততক্ষণে মেহউইশ নির্জনকে নিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছিলো। ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকায় রেহনুমা নিজে হোটেল থেকে বেরিয়ে মেডিসিন এনেছে মেহউইশের জন্য আর তা দেখে ম্যানেজার বারবার করে বলে গেছে যেন প্রয়োজন পড়লেই তাকে ডাকে। রিশাদ হোটেলে পৌঁছেই বলেছিলো আজ থেকে তাদের সংসার এই হোটেলের দু’কামরা আর বিশাল আকৃতির কাঁচঘেরা বেলকোনিতেই। শুধু সিজনাল কাজের কারণেই এখানে থাকা তার। সত্যি বলতে পিঠ পিছে তার বাবা অনেক লোক লাগিয়ে রেখেছেন তার এই হোটেলের ক্ষতি করতে হয়তো এই ক্ষতির পরই সে বাবার কাছে ফিরে যাবে। বাবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতেই সে এখানে সজাগ দৃষ্টি রাখতে চব্বিশঘন্টা এখন হোটেলেই কাটাবে। হয়তো এটা সমস্যার সমাধান নয় তবুও সে তার পরিশ্রম নষ্ট করতে দেবে না এমনটাই চেষ্টা । আজ চট্টগ্রাম যাওয়ার পেছনে প্রথম কারণ ছিলো লোনের জন্য ব্যাংকে যাওয়া, দ্বিতীয় কারণ তার উকিল আজ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলো কোন কাজে। তাই ফাঁক বুঝে সে উকিলের সাথেও দেখা করে এসেছে। একটা কিছু সে করতে যাচ্ছে খুব গোপনে হয়তো এটা করার পরই জেবুন্নেসা কিংবা রাশেদ খান দুজনেই তার ওপর চড়াও হবে কিন্তু কিছুই করার নেই। সে ঠিক ততটুকুই করবে যতটুকু তার সাধ্যে আছে৷
হোটেলে ফিরে নিজের রুমে নক করলে সে ভেতর থেকে কোন সাড়া পেলো না। হাতের ঘড়িটাতে তাকিয়ে দেখলো রাত এগারোটা পেরিয়ে গেছে। এতোটা লেট হবে ফিরতে ফিরতে তা বুঝতে পারেনি সে। পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে চেক করলে। নাহ, এই রুমের চাবি তার কাছে নেই। আগে সে যে ঘরে থাকতো সে ঘরের চাবিটা পকেটে আছে। মনে পড়লো এ ঘরের দু’টো চাবি আর দুটোই সে মেহউইশের সামনে রেখেছিলো সকালে যাওয়ার আগে। ভুলে গেছে ওয়ালেটে ঢুকিয়ে নিতে। উপায়ন্তর না পেয়ে মেহউইশের নাম্বারে কল দিলে সে প্রথম দু বারে উঠলো না। তৃতীয়বার কল করতেই মেহউইশ কল রিসিভ না করে সোজা এসে দরজা খুলে দিলো। ভেতরে সে ঘরের বাতিটাও জ্বালায়নি। অবাকের চেয়ে রাগটাই যেন বেশি হলো রিশাদ। মেহউইশ আবার গিয়ে বিছানায় শুতেই বাহু ধরে হ্যাচকা টানে রিশাদ তাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো। আকস্মিক আক্রমণে ঘুমের ঘোর কেটে ভয়ার্ত চোখে তাকালো মেহউইশ। থরথর করে কাঁপছে তার শরীর হয়তো আধঘুমে এমন ঝটকা খেয়েই তার এমন হাল। রিশাদ চোখ,মুখ শক্ত করে জানতে চাইলো, ‘ফোন রিসিভ না করে কেন সে দরজা খুলল!’
মেহউইশ মুখ খুলবে কি খুলবে না করেই বলল, ‘ আপনি দরজা ধাক্কাচ্ছিলেন তাই।’
‘আমি ধাক্কিয়েছি কে বলল? আমি কি একবারও নাম ধরে ডেকেছি?’
‘ডাকা লাগবে কেন? কল দিচ্ছেন আপনি আবার দরজায় ধাক্কা। আপনি ছাড়া আর কে এ দরজায় ধাক্কা দেবে এমন করে? বাকিরা তো আপনার মত জংলী নয় তারা অবশ্যই আগে সুন্দর করে ডেকে তবেই ধাক্কা দেবে’ বলেই মেহউইশ নিজের বাহু রিশাদের হাত ছাড়িয়ে নিলো। রিশাদ আবারও মেহউইশের হাত ধরতে গেলে মেহউইশ ধমকে উঠলো, ‘ খবরদার, একদম ধরবেন না। কি পেয়েছেন কি আপনি! টাকা আছে বলেই যা খুশি করবেন? যখন যা মর্জি তাই বলবেন! নিজের কেনা গোলাম মনে হয় সবাইকে? বিয়ে করেছেন জোর করে, মা আর ভাইয়ের দ্বায়িত্ব আমি দেইনি আপনার কাঁধে আপনি নিজের করা অন্যায়ের মাশুল হিসেবেই তাদের জন্য করছেন সবটা। আপনি আমায় বিয়ে না করলেও তারা জলে ভাসতো না আল্লাহ্ আমায় তৌফিক দিয়েছেন তাদের খরচ বহন করার। আমি চুপ করে থাকি বলে গায়ে লাগে না আপনার করা অন্যায়গুলো তাই না?’ এক নাগাড়ে এইটুকু বলেই হাঁপাতে লাগলো মেহউইশ । তার শরীরে শক্তি বলতে কিছুই যেন নেই। সারাদিনের ব্যথায় আর না খাওয়া শরীরটা বড্ড দূর্বল থাকায় এখন ঘুম ভাঙতেই তার কষ্ট হচ্ছিলো খুব। তারওপর রিশাদের আচরণ তাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে বলেই এখন দিক দিশা ভুলে ধমকে উঠেছে। পরে কি হবে তা পরে দেখা যাবে আপাতত মেজাজ যা তিরিক্ষি হয়ে আছে এতে সে রিশাদের অগ্নিমূর্তি চেহারাকেও ভয় পাচ্ছে না আর। রিশাদেরও কি হলো কে জানে সেও আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ মেহউইশের সামনে থেকে সরে গেল। ভেবেছিলো হোটেলে ফিরেই রাতের খাবার খাবে তা আর হলো না। চুপচাপ বেলকোনিতে গিয়ে সেখানে রাখা একটি কাউচে বসে পড়লো। গা থেকে কোট টা খুলে পাশেই ফেলে রাখলো৷ বাইরে চাঁদটা আবছা ঢাকা মেঘের আড়ালে। কোন তারা চোখে পড়ছে না। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন আর বাতাসের শো শো শব্দ কানে প্রচণ্ড লাগছে তার। সারাদিনের ক্লান্তি এই মুহূর্তে দুটো কাঁধেই যেন এসে ভর করলো তার। সমস্ত সত্তা জুড়ে যে ক্রোধ তার অবিরত বইতে থাকে সে সত্তা এই মুহূর্তে নির্লিপ্ত। বড্ড অসহায় সে এই দুনিয়ায় আর নিজের অসহায়ত্ব লুকাতেই হয়তো দূর্বলের প্রতি কঠোরতা প্রয়োগ করে। কিছু মানুষ বাস্তব জীবনে এমনই হয় নিজের অসহায়ত্বকে ঢাকতে অন্যের দূর্বলতাতে আঘাত করে।
খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে মেহউইশের । নির্জন আজ এখনও উঠেনি দেখে মেহউইশ অবাক হলো। বাচ্চাটা কি দিনকে দিন অলস হয়ে যাচ্ছে! মা বলে অলস ব্যক্তিরাই নাকি দেরি করে ঘুম থেকে উঠে এসব ভেবেই হাসি পাচ্ছিলো তার অমনি মনে পড়লো কাল রাতের ঘটনা। রিশাদকে সে ধমকেছে! প্রথমেই চোখ পড়লো দরজায়। ভেতর থেকে লাগানো দরজা তারমানে সে ঘরের ভেতরেই আছে। বিছানায় নেই, বাথরুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।
কোথায় গেল জংলীটা? বেলকোনির পর্দা সরানো বলে কাঁচ গলে সূর্যের আলো ফ্লোর ছুয়ে মেহউইশের পায়ে পড়ছে। সেই আলোর রশ্মি ধরে বাইরে তাকাতেই কাউচে থাকা ঘুমন্ত রিশাদকে দেখতে পেল সে। জেগে থাকা ব্যক্তিটা যতোটা দানব ঠিক ততোটাই শান্ত,কোমল আর মায়াবী সে ঘুমন্ত অবস্থায়।
চলবে
(গতকালকের পর্বে অসংখ্য ভুলত্রুটি দেখে আমারই মাথা ঘুরাচ্ছে আপনারা এত চুপ ছিলেন কি করে! আজকেও এডিট করিনি 😑। মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম)