মন_বাড়িয়ে_ছুঁই পর্ব-২

মন_বাড়িয়ে_ছুঁই
পর্ব-২
লেখা: ফারজানা ফাইরুজ তানিশা

পৃথুলাকে বাসায় ড্রপ করে দিল বিভোর। পৃথুলা গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে যেতে নিলে পেছন থেকে বিভোরের ডাক পড়লো।
“পৃথুলা..”
পৃথুলা পেছন ফিরে তাকালো।
বলল,
“কিছু বলবে?”
বিভোরের খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একবার পৃথুলাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পৃথুলা যেই টাইপের মেয়ে, জড়িয়ে ধরতে চাইলে বলবে, ‘বিয়ের আগে জড়িয়ে ধরাটাও অশোভনীয় লাগে।’
ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো বিভোর। বলল,
“নাহ৷ কিছু না৷ বাসায় যাও। রাতে ফোন দেব।”
গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল বিভোর। মিনিট না গড়াতেই গাড়িটা অদৃশ্য হয়ে গেল। যতক্ষন বিভোরের গাড়িটা দেখা যাচ্ছিল ততক্ষন ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল পৃথুলা।

সব প্রেমিকই ই এক্সপেক্ট করে তার প্রেমিকা তাকে সময় দেবে, তার সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাবে, ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেমালাপ করবে, জড়িয়ে ধরবে, চুমু খাবে ইত্যাদি। কিন্তু এর কোনোটাই কখনো পায়নি বিভোর পৃথুলার কাছ থেকে। এজন্য হয়তো মাঝে মাঝে রেগে যায় বিভোর। কিন্তু ছেলেটা তাকে খুব ভালবাসে। পৃথুলার খুব কেয়ার করে। পৃথুলা প্রতিজ্ঞা করল, বিয়ের পর সে তার সবটা উজার করে ভালবাসবে বিভোরকে। বিভোরের কোনো চাহিদা সে অপূর্ণ রাখবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে বাসার ভেতরে ঢুকল পৃথুলা।

সন্ধ্যের একটু পরেই বাসায় ফেরে পৃথুলার বাবা, মা আর প্রত্যাশা। প্রত্যাশা বেশ খোশ মেজাজে আছে। ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুলের ক্লিপগুলো খুলতে খুলতে বলল,
“বিয়েতে যা আনন্দ হয়েছে না আপি! দারুন এনজয় করেছি। তুই থাকলে আরো মজা করতাম৷ জানিস, সবাই তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিল। মামা, মামী, তিয়াস ভাইয়া সবাই তোর খোঁজ করছিল। কিন্তু তুই তো গেলি না। একা একা বাসায় পড়ে রইলি। কি হতো গেলে? একা বাসায় কি আনন্দ পেলি বলতো? আমরা সবাই কত্ত মজা করেছি। কনেপক্ষ কি করেছে জানিস? গেটের সামনে…”
পৃথুলা বইয়ের থেকে মুখ তুলে প্রত্যাশার দিকে তাকাল। প্রত্যাশাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“প্যানপ্যান না করে ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বোস৷ সামনে পরীক্ষা। সে খেয়াল তো নেই৷ নাচতে নাচতে বিয়েতে চলে গেছিস। এখন আবার বিয়ের কাহিনি শোনাইতে আসছিস। আমি তোর কাছে কিছু জানতে চাইছি?”
প্রত্যাশা চোখমুখে বিরক্তিভাব ফুটিয়ে বলল,
“বা*! তুই একটা বিরক্তিকর মানুষ। তোর মত রষকষহীন একটা প্রাণীর সাথে বিভোর ভাইয়া কি করে যে এতদিন ধরে প্রেম করছে আল্লাহ জানে।”
বলে পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দিকে।

পৃথুলা ঠোঁট টিপে হাসল৷ তৎক্ষণাৎ ওর ফোন বেজে উঠল। ফোন হাতে নিয়ে দেখল বিভোর ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো।”
“কী করছো?”
“পড়ছি। তুমি?”
“তোমার কথা ভাবছি।”
পৃথুলা কিছু বলল না। বিভোর বলল,
“স্যরি!”
“কেন?”
“আজকের আচরণের জন্য। আসলে আমি কণ্ট্রোল রাখতে পারিনি নিজের উপর। তাই..”
“তোমার চাওয়াগুলো স্বাভাবিক বিভোর। কিন্তু আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা সম্পূর্ণ পবিত্র থাকুক। আমি কথা দিচ্ছি, বিয়ের পর তোমার কোনো চাহিদা আমি অপূর্ণ রাখব না। আমার সব উজার করে তোমাকে ভালবাসব। কিন্তু বিয়ের আগে আমার কাছে কিছু চেয়োনা বিভোর। আমি দিতে পারব না।”
বিভোর আক্ষেপের সুরে বলল,
“ইশ্ কবে যে বিয়েটা হবে!”
“অপেক্ষা করো। অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়।”
“চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
“করব। তবে সময় হলে।”
“ভালবাসি পৃথা।”
“আমিও। আচ্ছা শোনো, আমার অনেক পড়া আছে৷ এখন রাখছি।”
“সারাক্ষণ তো পড়াশুনা নিয়েই থাক৷ আরেকটু কথা বলি প্লিজ।”
“যতক্ষণ কথা বলব ততক্ষণ পড়লে লাভ হবে।”
“উফ্ বাদ দিয়ে দাও তো লেখাপড়া। তোমার ডাক্তার হওয়া লাগবে না। আমার বাপের অঢেল টাকা আছে। ওই টাকা দিয়েই আমাদের দুই প্রজন্মের জীবন কেটে যাবে।”
“বলছো কি তুমি! আমি টাকার জন্য ডাক্তারি পড়ছি! তুমি জানো আমার ডাক্তার হওয়ার কত ইচ্ছা! এ দেশের মানুষের সেবা করব, রুগ্ন ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলব৷ ভাবতেই ভালো লাগছে। আচ্ছা এখন রাখছি।”
“আরেকটু কথা বলি প্লিজ।”
“না, রাখো।”
কল ডিসকানেক্ট করে বইয়ে মুখ ডুবাল পৃথুলা।

আসাদ হক, দেশের শীর্ষ শিল্পপতিদের মধ্যে একজন। দেশের বাইরেও তার বেশ ক’টি বিজনেস রয়েছে। আগামিকাল তার একমাত্র পুত্রের জন্মদিন৷ বেশ তোড়জোর আয়োজন চলছে। ফোন করে আত্মীয়, পরিচিতদের নেমন্তন্ন করলেন। বিভোর এসে বসল সোফায়। বাবার মুখোমুখি। আসাদ হক কান থেকে মোবাইল নামিয়ে বললেন,
“কিছু বলবে বিভোর?”
“হুম। তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।”
“কি কথা?”
বিভোর কোনো ইতস্তত ছাড়াই সরাসরি বলল,
“আসলে, আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি।”
মোবাইলের স্ক্রীণ থেকে চোখ তুলে বিভোরের দিকে তাকালেন আসাদ হক।
জিজ্ঞেস করলেন,
“তাই নাকি? নাম কি মেয়েটার?”
“পৃথুলা। ও খুব লক্ষী মেয়ে, আব্বু। আর খুব সুন্দরীও। তুমি ওকে দেখলে নিশ্চয়ই পছন্দ করবে।”
“তা তো করতেই হবে। আমার ছেলের পছন্দ কি আমার অপছন্দ হতে পারে? তো কাল তো তোমার জন্মদিন। কাল মেয়েটিকে বাসায় আসতে বলো।”
“হুম। আমিও ভাবছিলাম কাল ওর সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব। সে কারণেই আজ ওর কথা তোমাকে জানালাম৷”
“ঠিকাছে। কাল বাসায় আসতে বলো।”

বাবার সাথে কথা শেষ করে নিজের বেডরুমে এলো বিভোর। ফোন হাতে নিয়ে পৃথুলাকে কল দিল৷ পৃথুলা কল রিসিভ করল না। বিভোর পর পর দু বার ফোন করল। কিন্তু লাভ হলো না। খানিকবাদে পৃথুলা নিজেই ফোন দিল৷ বিভোর কল কেটে কলব্যাক করল। পৃথুলা ফোন রিসিভ করতেই বিভোর বলল,
“এতক্ষণ ফোন ধরোনি কেন?”
“রান্নাঘরে ছিলাম। আম্মুকে রান্নায় সাহায্য করছিলাম।”
বিভোর আয়েশী ভঙ্গিতে সোফায় হেলান দিয়ে আহ্লাদী সুরে বলল,
“আহারে আমার জানটা কত কষ্ট করছে। একবার বিয়ে করে আমার বাসায় এসো। কোনো কাজ তোমাকে দিয়ে করাব না। একদম মাথায় তুলে রাখব।”
পৃথুলা ফিক করে হেসে ফেলল বিভোরের কথায়। হাসি থামিয়ে বলল,
“থাক! এক আদর দেখাতে হবে না। বিয়ের পর তো ওই পরিবারের সব দায়িত্ব আমার হবে। আমার সংসারে আমি কাজ করব না তো কে করবে! আচ্ছা আর কিছু বলবে? কাজ আছে অনেক।”
“কাল কি দিন মনে আছে?”
“থাকবে না আবার! ওই দিনেই যে আমার ভালবাসার মানুষটার জন্ম হয়েছে৷ দিনটার কথা ভুলব কি করে!”
“শোনো, কাল সন্ধ্যেবেলা আমাদের বাসায় বার্থডে পার্টি হবে। তোমাকে পার্টিতে অবশ্যই থাকতেই হবে।”
“কিন্তু..”
“হুশ! নো এক্সকিউজ প্লিজ। কাল তোমাকে থাকতেই হবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”
“বলো শুনি।”
“আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। বড়জোর দুই ঘণ্টা। তার বেশি নয়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হবে। আর শোনো, কাল আব্বুর সাথে তোমাকে ইনট্রোডিউস করিয়ে দেব।”
“কালই?”
“হ্যাঁ কাল। এরপর আব্বুকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠাব তোমাদের বাড়িতে। খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করব।”
“পাগল তুমি! আমার সবেমাত্র সেকেণ্ড প্রুফ শেষ হয়েছে। এখনই বিয়ে টিয়ে করব না।”
“আচ্ছা পরেই করব। কিন্তু কাল আব্বুর সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব।”
পৃথুলা কিছু বলল না। বিভোর বলল,
“চুপ কেন? কিছু বলো।”
“আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে। আঙ্কেল যদি আমাকে পছন্দ না করেন?”
“আলবাৎ করবে। আমি কিছুক্ষণ আগেই আব্বুকে তোমার ব্যাপারে বলেছি। আব্বু নিজেই বলেছে তোমাকে বাসায় আসতে বলতে৷ তাছাড়া, আমার পছন্দই আব্বুর ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আব্বু কখনো আমার কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি। মা নেই এই অভাবটা আব্বু কখনোই আমাকে বুঝতে দেয়নি। তবুও যদি আব্বু তোমাকে মেনে না নেয় তাহলেও কিছু পাল্টাবে না। তিনি তোমাকে পছন্দ করুক বা না করুক বিয়ে আমি তোমাকেই করব। আই ডোন্ট লিভ উইদআউট ইউ।”
“না, না। আঙ্কেলের অমতে আমরা বিয়ে করব না।”
“সেটা ডিপেন্ড করে আব্বুর উপর। তিনি যদি তোমাকে পছন্দ করে তাহলে তার সম্মতিতে বিয়ে হবে। আর পছন্দ না করলে বিয়েটা তার বিনা অনুমতিতেই হবে।”
পৃথুলা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু বিভোর তাকে থামিয়ে দেয়।
“আমার তোমাকে চাই, চাই ই চাই৷ এ নিয়ে আর কথা বাড়িয়ো না তো!”
পৃৃথুলা চুপ মেরে গেল। বিভোর বলল,
“তোমার নীল শাড়ি আছে?”
“কেন?”
“কাল আমার জন্মদিনে তুমি নীল শাড়ি পরবে। আছে কিনা বলো? নয়তো আমি কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
“না না লাগবে না। শাড়ি আছে। কিন্তু..।”
“প্লিজ না করো না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“আর একটু সেজেগুজে এসো। সবসময় তো সাদামাটা ভাবেই চলো।”
“আচ্ছা এখন রাখছি। রান্নাঘরে কাজ পড়ে আছে।”
বিভোর বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আমি কথা বলতে নিলেই কাজ শুরু হয়। আজ যা ইচ্ছে করো। কাল দেখা হচ্ছে। লাভ ইউ।”
.
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here