মায়াবতীর_প্রণয়ে পর্বঃ৩

মায়াবতীর_প্রণয়ে পর্বঃ৩
#মম_সাহা

গ্রীষ্ম বিদেয় নিয়ে বর্ষা এসেছে আজ সপ্তাহ খানিক হলো।পরিবেশ,আবহাওয়া দেখলেই বর্ষার উপস্থিতি বোঝা যায়। কেমন শীত শীত আমেজ।কখনো মুশলধারা বৃষ্টি কখনো বা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি।

মিষ্টি ঘরে এসে ভেজা জামাকাপড় পাল্টিয়ে ভেজা কৃষ্ণচূড়াটা ডাইরির ভাজে রেখে দিলো।এ নিয়ে মোট সাতাশটা কৃষ্ণচূড়া সে জমিয়েছে।আজ সাতাশ দিন যাবত মানুষ টার সাথে দেখা হয়। প্রতিদিন এসেই বলবে হঠাৎ দেখা হয়ে গেছে। আচ্ছা হঠাৎ দেখা হলে আগে থাকতে সে কৃষ্ণচূড়া জুগিয়ে রাখে কেনো?

আনমনে হাসে মিষ্টি।হঠাৎ টেবিলে থাকা তার মুঠোফোন টা উচ্চশব্দে বেজে উঠলো।মিষ্টি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে রং নাম্বার।তাই ফোনটা রিসিভ করে না সে। ফোনটা সাইলেন্ট করে বালিশের নিচে চেপে রেখে খাবার খেতে ডাইনিং রুমে চলে গেলো।

মিষ্টিকে আসতে দেখেই রাবেয়া খাতুন মানে মিষ্টির মা খাবার বাড়া শুরু করলো। মিষ্টি খাবার খাওয়া শুরু করলো।রাবেয়া খাতুন নিজের মেয়ের পাশে বসেই বলল
-“মিষ্টি তোদের হোসেনা খালার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

মিষ্টি খেতে খেতেই বলল
-“বাহ্ খুশির খবর তো।কবে বিয়ে সোহা আপুর?”

রাবেয়া খাতুন তাড়াতাড়িই উত্তর দিলেন
-“এই যে এই শুক্রবার।”

মিষ্টি খাবার থামিয়ে অবাক হয়ে বলল
-“এই শুক্রবার মানে? আজ মঙ্গলবার মাঝে দুইদিন নাকি?”

মিষ্টির মা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন।মিষ্টি আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলল
-“আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা কবে যাবে?”

মিষ্টির মা ঝটপট বললেন
-“আমাদের কালই চলে যেতে হবে।তোর খালা যেভাবে আমাদের অনুরোধ করেছে।”

মিষ্টির খাওয়া শেষ।সে হাত ধুঁতে ধুঁতে বলল
-“এটাই ভালো। তোমরা চলে যাও কাল।আমি বৃহস্পতিবার রাতে চলে যাবো।আমার একটা পরীক্ষা আছে ওটা না দিয়ে যেতে পারবো না।”

রাবেয়া খাতুন মেয়ের মুখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন “আচ্ছা।”

সবার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে মিষ্টি রুমে চলে গেলো।

মাঝরাতে ফোনের ভাইব্রেশনে ঘুম ভেঙে গেলো মিষ্টির।ফোন হাতে নিয়ে চোখ চড়কগাছ। পচিঁশটা মিসড কল একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে।নাম্বারটা কার ভাবতে ভাবতে আবারও কল এলো মিষ্টির ফোনে।মিষ্টি সাথে সাথেই কল টা রিসিভ করে বলল
-“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
-“পচিঁশটা কল দেওয়ার পর আপনার কলটা রিসিভ করার ইচ্ছে হলো মেডাম?”

ফোনের বিপরীতে থাকা ব্যাক্তিটাকে চিনতে কষ্ট হলো না মিষ্টির।এই মানুষটা এতক্ষণ কল দিলো আর সে রিসিভ অব্দি করে নি।নিজের মাথায় নিজেই চড় লাগালো তারপর তড়িঘড়ি করে বলল
-“স্যরি আমি আসলে বুঝতে পারি নি আপনি কল করছেন।”

ফোনের বিপরীতে থাকা মানুষটা বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“আপনি এক্ষুনি আপনার বাসার নিচে আসুন।খুব দ্রুত। সময় পাঁচ মিনিট।যদি কথার নড়চড় হয় তবে আমি আসবো।”

মিষ্টি বোকার মতো তাকিয়ে রইল।ততক্ষণে হাতে রাখার মোবাইলে কলটা কেটে গেছে।এত রাতে সে বের হবে কীভাবে চিন্তায় পড়ে গেছে।

মিষ্টি দ্রুত উড়না টা মাথায় জড়িয়ে সাবধানে দরজাটা বাইরে দিয়ে লক করে চাবি হাতে নিচে নেমে গেলো।

পিছনে কারো ছুটে আসার শব্দ শুনে ঘুরে তাকায় আদ্র।তার লীলাবতী সাদা রঙে আবৃত আজ।মেয়েটাকে স্নিগ্ধ লাগছে আজ।সাদা রঙটাও রঙিন মনে হচ্ছে।অপলক তাকিয়ে আছে সে মিষ্টির দিকে।

মিষ্টি হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছে। তাড়াহুড়ো আর একটা উত্তেজনায় শরীর কাঁপছে।ভয়ও হচ্ছে কেউ না দেখে ফেলে আবার।

আদ্র গাড়ি থেকে পানির বোতল এনে মিষ্টির দিকে এগিয়ে দিলো আর বলল
-“নেন পানিটা খান ভয়টা কমবে।”

মিষ্টি বোতলে হাত দিতে গিয়েও থমকে গেলো।সে যে ভয় পাচ্ছে লোকটা বুঝলো কীভাবে?নিজের মনে মনে কথাটা চেঁপে না রেখে বলেই ফেলল
-“আমি যে ভয় পাচ্ছি বুঝলেন কীভাবে?”

আদ্র মুচকি হেসে বলল
-“উহুম বলা যাবে না। এটা ম্যাজিক।”

মিষ্টির জিনিসটার প্রতি কৌতূহল আরও বেড়ে গেলো। যে সে এবার বেশ উৎসাহ নিয়ে বলল
-“প্লিজ প্লিজ বলেন না কীভাবে বুঝলেন?”

আদ্র নিজের ডান হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে বলল
-“আপনি যে এতটা বোকা আমি বুঝি নি লীলাবতী।এত রাতে যেকোনো মেয়েই নিজের বাড়ির সামনে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে চাইবে না।তাদের মনে ধরা খাওয়ার একটা ভয় থাকবেই।”

মিষ্টি নিজের বোকামীতে নিজেই লজ্জা পেলো।আদ্র মিষ্টির অবস্থা বুঝে হেসে দিলো। তারপর বলল
-“চলেন একটু সামনের দিকে হেঁটে যাই।এখানে আপনাদের কেউ আমাদের দেখে ফেললে সমস্যা হবে।”

মিষ্টির এবার হুঁশ ফিরে আসলো।সে যে লুকিয়ে দেখা করতে এসেছে সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছে।মিষ্টি এবার তাড়াতাড়ি করে বলল
-“হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো কথা মনে করেছেন। বলেন কি কারণে এত রাতে এসেছেন?আমাকে ডেকেছেন?তাড়াতাড়ি বলেন।আমি বাসায় যাবো।”

আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল
-“বি কুল লীলাবতী। আপনার সাথে আমার একটু দরকার ছিলো।চলেন সামনে যাবো তারপর বলবো।”

মিষ্টির মত না থাকা স্বত্তেও গেলো আদ্রের সাথে। লোকটার সান্নিধ্যে থাকতে তার বেশ লাগে।

_________
আজ তিনদিন হতে চলল আদ্রের সাথে মিষ্টির দেখা হয়েছে।সেদিন তারা অনেক রাত অব্দি রাস্তায় আড্ডা দিয়েছে।আদ্র কোনো কাজের জন্য একটু শহরের বাহিরে গিয়েছে সেটাই জানাতে এসেছিলো আর মিষ্টিকে দেখে গিয়েছে।

আজ তিনদিন লোকটা নেই কিন্তু প্রতিদিন মিষ্টির দরজার সামনে একটা কৃষ্ণচূড়া রেখে যায় কে জেনো।মিষ্টি জানে আদ্রই পাঠায় কাউকে দিয়ে।

সেদিন রাতের পর দুজনের আর কথা হয় নি।মিষ্টির কাছে আদ্রের নাম্বার থাকা স্বত্তেও মিষ্টি কল দেয় নি ভেবেছে আদ্র দিবে কিন্তু আজ তিনটা দিন পাড় হয়ে যাওয়ার পরও আদ্রের কল আসে নি।মিষ্টিদের বাসায় মিষ্টি একা।সবাই খালামনিদের বাসায় গিয়েছে।মিষ্টি বলেছিলো গাঁয়ের হলুদের দিন যাবে। কিন্তু স্টুডেন্টর পরীক্ষা থাকায় সে যেতে পারে নি।

আজ শুক্রবার।মিষ্টি সাদা আর আকাশী মিশ্রণের একটা শাড়ি পরে রওনা দিয়েছে খালামনির বাসার উদ্দেশ্যে।আজ তার খালাতো বোনের বিয়ে। সে বাসা থেকে প্রথমে সুখদাতার কাছে যাবে৷ কাঠগোলাপ নিয়ে তারপর সেখান থেকে খালামনির বাসায়।

ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে মিষ্টি।তার খুব ইচ্ছে হচ্ছে তার এই সাজ যদি আদ্রকে দেখাতে পারতো।মিষ্টি নিজের মনে মনে আবার অবাক হয় এমন ইচ্ছের জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে মিষ্টির হঠাৎ একজনের উপর চোখ পড়ে। মিষ্টি না চাইতেও দৌড়ে যায় লোকটার দিকে।

“এই যে শুনছেন ভাইয়া।”মিষ্টির ডাকে ফিরে তাকায় ছেলেটি।মিষ্টিকে চিনতে বেশিক্ষণ সময় লাগে না ছেলেটির।সে তড়িঘড়ি করে বলে

-” মেম আপনি এখানে?আর আমাকে ডাকলেন যে কোনো দরকার আছে?”

হ্যাঁ ছেলেটি নীড়।আদ্রের পিএ।মিষ্টি আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করল
-“আসলে আপনার স্যার মানে আদ্র কোথায় গেছে?তার যে কোনো খোঁজ খবর নেই।”

নীড় মিষ্টির প্রশ্ন শুনে মনে মনে হাসল।তবে মেম তার স্যারের প্রেমে পড়ল।নীড় হাসি মুখেই বলল
-“স্যার তো বিয়ে,,

কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই নীড়ের কল আসলো।তাকে জরুরি এক জায়গায় যেতে হবে।কথা অসম্পূর্ণ রেখেই চলে গেলো নীড়।

এই অসম্পূর্ণ কথাই মিষ্টির হাসি কেড়ে নিতে যথেষ্ট।সে নিজের মনকে স্বান্তনা দেয় নানা ভাবে।কিন্তু বারবার খারাপ ভাবনা চলে আসছে।তবে কি আদ্রের বিয়ে?

__________
সন্ধ্যা সাতটা।মিষ্টি তার খালামনির বাসায় এসে পৌঁছায়।সবাই বেশ রাগারাগি করেছে এত দেড়িতে আসায়। কারণ বরযাত্রী চলে এসেছে।মিষ্টির মা রাগারাগি শেষ করে মিষ্টিকে বর দেখতে পাঠান।

মিষ্টি স্টেজে গিয়ে দেখে বরের আসন ফাঁকা।কত গুলো ছেলে হয়তো বরের বন্ধুবান্ধব, তাদের জিজ্ঞেস করল- বর কোথায়?

হঠাৎ পিছে থেকে চেনা পুরুষ নালী কণ্ঠ ভেসে আসলো
-“এই যে বর এখানে।”

মিষ্টির শরীরে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো মনে হয়।সে চাচ্ছে পিছে ফিরে জেনো চেনা মানুষটাকে না দেখে।তাহলে সে সইতে পারবে না।অনেক ভয় নিয়ে পিছে তাকিয়ে মিষ্টি অবাক হয়ে যায়। মুখ থেকে অস্পষ্ট স্বরে বের হলো
-“আদ্র আপনি? ”

চলবে,,,,,

[আমাকে বকা দিও না।আমি জানতাম না আদ্র কোথায় গেছে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here