মায়ায় ভরা সেই দিনে পর্ব ২

মায়ায় ভরা সেই দিনে
পর্ব ২

আছরের আজান দিয়েছে। রোমেল দেওয়ান সব মেহমানদের নিয়ে মসজিদে গেলেন নামাজ আদায় করার জন‍্য। এলাকার লোকজন এখনও যায়নি। আর তার ছেলে মহাশয় ও এখনও আসেনি। আজ ছেলেকে কিছু কড়া কথা শুনানোর জন‍্য মনস্থির করেছেন তিনি।

আফিয়া বেগম তার ছেলে আর তার বন্ধুদের জন‍্য আলাদা করে বেড়ে রাখা খাবার এখন গরম করছেন। রাজবীর ফোন করেছিলো তারা বাড়ি আসছে। দুপুরে সবার মেহমানদারি করা হয়েছে আর তারা দুপুরের খাবার এখন খাবে ইতরের দল। রাগে গজগজ করছেন তিনি। তিনি জানেন তার ছেলে লোকসমাজে যতই ভদ্র লোকের আড়ালে ততই ফাজিল। আর বন্ধুদের পেয়ে এখন আরো এক কাঁঠি উপরে উঠেছে।
রোমেল দেওয়ানের বাসাটা ডুপ্লেক্স বিল্ডিং। তিন তলা বিল্ডিংটা সাদা অার ছাই রঙ্গের ডেকোরেশনে ঝকমক করে। বিল্ডিংয়ের সামনে বড় উঠোন। উঠোনের ডানপাশে ফুলের বাগান। আর বা পাশে ফলের বড় বড় গাছ। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল , লেবু, মাল্টা, আনার, আরো কত নানান ফলের বাহারি গাছে ভরে যায়গাটা। দুই ফল ফুলের বাগানের মধ‍্যখানেই উঠোন যা বাড়ির ভিতর পর্যন্ত গিয়ে উঠেছে। গ্রাম দেশে এরকম একটা বাড়ি থাকা ভাগ্যই বটে। রাজবীর রা এসেছে।এসেই সবগুলো ওয়াশরুমে ঢুকেছে। রাজবীর সাদা পাঞ্জাবী সাদা পায়জামা আর পাঞ্জাবীর উপরে কালো কলার দেয়া কটি জড়িয়েছে গায়ে। দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসলো ও তড়িঘড়ি করে বললো আম্মা খাবার রেডি? আফিয়া হক ছেলের দিকে হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো মনে মনে বিড়বিড় করলো মাশাল্লাহ্। খোদা কারো যেন নজর না লাগে। ফর্সা গায়ে সাদা কালো রঙ কি শোভন লাগছে দেখতে। তার গর্ভে এই রকম সুদর্শন ছেলে হয়েছে ভাবতেই কেমন গর্ব বোধ হচ্ছে। রাগ সেই কখন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
হ‍্যা আব্বা রেডি তো। জলদি আসো তোমরা।
ঠিক আছে আম্মা
বন্ধুদের দলটা ডাইনিংয়ে আসলো। টেবিলে বসে সুস্বাদু হরেক রকমের খাবারে হামলে পড়লো। সাড়া ডাইনিংয়ে পোলা মাংসের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে।

ডাইনিং রুমটা বিশাল বড়। এক পাশে বিরাট বড় ডাইনিং টেবিল। অন‍্য পাশে ওয়াল কেবিনেটে কাঁচের আসবাবপত্র‍ে ভরপুর তা। পাশে দামি কাঁঠের রেকে ওভেন, কফি মেকার, স‍্যান্ডউইচ ম‍েকার, টোস্টার সাথে আরও নানান ধরনের ইলেকট্রিক জিনিস পত্র রাখা। খুবই রুচিশীল ভাবে সব সাজানো গুছানো।
খাবার শেষে সবগুলো ছুটলো মসজিদ পানে। রাজবীর ছাড়া সবার গায়ে ক্রীম কালারের পাঞ্জাবী। সুন্দর লাগছে দেখতে সবগুলো কে। রোমেল দেওয়ান নামাজ শেষে মসজিদে বসে এলাকায় কার কি সমস্যা সেসব নিয়ে আলোচনা করছিলেন সবার সাথে। মজলিস শেষে সবাই একে একে বের হলো। বের হবার সাথে সাথেই রাজবীর এগিয়ে আসলো বিনীত ভঙ্গিতে সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে র্কদমন করলো। ফর্সা মুখের সরু নাকের ঠোঁট ভাঙ্গিয়ে বাঁকা হাসিটা কি যে ধারালো সুন্দর। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখলো তাকে। কয়েক জন উল্লাসে বললো এই তো রাজবীর এসে পড়েছে। রোমেল দেওয়ান এগিয়ে আসলো থমথমে মুখে বললো কোথায় ছিলা তুমি??
আব্বা আপনাকে আর আংকেলদের একটু আলাপচারিতার জন‍্য সময় দিলাম। তাই এই সময় টা বন্ধুদের নিয়ে কাটালাম। রোমেল দেওয়ানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো। ছেলের উত্তরে সে সন্তুষ্ট। সে এতো বয়স্ক হয়েও বন্ধুদের ছাড়া চলতে পারেন না। আর ছেলে তো মাত্র তরুণ‍্য কাটিয়ে যুবকে পা দিয়েছে। এই বয়সে তো এমন একটু আধটু হবেই। এ আর এমন কি?
তার ছেলের প্রশংসা সুধু তার সামনেই না তার অগোচরে ও অনেকে করে। এই যে এখন দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের মধ্যে অনেকেই ইর্ষনীয় চোখে তার ছেলে কে দেখছে এটাই যে কত আনন্দের। তা কি সবাই বুঝে। টাকা পয়সায় বিলাসিতার মধ্যে একজন আদর্শিক ভাবে ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করা কি কম কথা?
রোমেল দেওয়ান আর তার সাথে থাকা লোকজনেরা আবারো কথায় ব‍্যাস্ত হয়ে পড়লো। পিছনে থাকা বন্ধুরা চোখা চোখে রাজবীর কে দেখছে। আর নিজেদের ভিতর ফিসফিস করছে। রাজবীর বাবার পাশে ভদ্র লক্ষী ছেলের মতো মনযোগী শ‍্রোতা হয়ে তাদের কথা শুনছে। মাঝেমধ্যে হেসে বা মাথা নাড়িয়ে তাদের কথার সমর্থন করছে। ভ্রু চুলকিয়ে চোরা চোখে বন্ধুদের দিকে চাইলো। তাদের দৃষ্টি দেখে বিখ্যাত ভ্রু উচিয়ে বাাঁকা হাসিটা হাসলো। আড়চোখে বাবাকে দেখে নিয়ে বন্ধুদের একটা চোখ মেরে দিলো। জিসান বিড়বিড়িয়ে বললো। হালায় বহুুত বড় জিনিয়াস।
______________________________
আসাদ হক একটু পর পর তাড়া দিচ্ছে রাবেয়া হক আর ইশিতাকে। তার বন্ধুর বাসায় যাবে সকাল সকাল রওনা না দিলে রাস্তায় পরে বিপাকে পড়তে হবে। যদিও অত সমস্যা হবে না তার ভাই পুলিশের চাকুরী করে। তবু দুর‍ের রাস্তা একটু জলদি বের হওয়াই ভালো। ছেলে ইশতিয়াক আর বৌমা বাড়িতেই থাকবে। ছেলের অফিস বন্ধ তবে বাড়ি বসে ল‍্যাপটপে কাজ করে সে। এবার তাদের বাসায়ই রেখে যাচ্ছে পরেবার আবার যাবে।

রাবেয়া হক ব‍্যাগ হাতে নিচে আসলেন বললেন হয়ে গেছে।

আসাদ হক উপরে তাকালেন বললেন ইশিতা কই?

ও আসছে তুমি ব‍্যাগ গাড়িতে তোলো

ইশিতা নিচে নামলো ইশতিয়াক বোনের ব‍্যাগ নিজের হাতে নিলো। বাহিরে এসে প্রাইভেট কারে ব‍্যাগ তোলে দিলো।

সাবধানে যাবে বাবা গাড়ি জোড়ে চালানোর দরকার নাই।

রাবেয়া হক ছেলের গালে হাত বুলালেন বললেন তোমরা সাবধানে থাইকো আব্বু

জি আম্মু। তুমি টেনশন নিও না

বোনের কপালে আদর দিলো ইশতিয়াক। বললো দোয়া করি খুব সুন্দর নতুন একটা জীবনের স্বাদ খোঁজে পাও যেন গ্রামে গিয়ে।

ইশিতা হাসলো খাঁজ যুক্ত মিষ্টি হাসিটা বললো। কি বলো ভাই এসব?

ইশিতা বুঝতে পারলো না তার ভাইয়ের সুক্ষ্ম ইঙ্গিতপূর্ণ কথাটা। কথাটায় নিশ্চিত কোন গুরুত্বপূর্ণ আভাস ছিল তাইনা??
ভাই ভাবি কে বিদায় দিয়ে আম্মু আব্বুর সাথে রওনা হলো তারা মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্য।
◆◆ ◆◆
দেওয়ান বাড়িতে আজ খুব ধোঁয়া মোছার কাজ চলছে। বাড়ির প্রতি কোনায় কোনায় সাফাই কজ করছে কাজের লোকেরা অলক ছাড়া ও আরও চার জন মহিলা আছে কাজের এদের মধ্যে অলক আর সোমা বুয়াই থেকে কাজ করে বাকি তিনজন বিকেলেই চলে যায়।

রোমেল দেওয়ান হাঁক ছাড়লেন বললেন কি আশার মা মেহমান কামরা কি গুছানো হইছে??

আফিয়া বেগম ব‍্যাস্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো হ‍্যা সব গুছানোই আছে চিন্তিত হয়ো না।

আচ্ছা তাহলে অলকরে তো এখনই কাচারি পাঠিয়ে দেওয়া উচিত মুক্তার পুর ব্রিজে নাকি আছে।
হ‍্যা হ‍্যা পাঠিয়ে দিন নয়তো পরে দেরি হয়ে যাবে।
রোমেল দেওয়ানের ডাকে অলক দৌড়ে আসলো । বুঝিয়ে মুন্সীগঞ্জ টাউন কাচারি পাঠালো। সাথে বাটন সেট ফোনটাও দিয়ে দিলো আসাদ কে এই নাম্বার দিয়ে দিয়েছেন। ফোন করে যেন নিজ অবস্থানের কথা জানাতে পারেন সে।
অলক তটস্থ পায়ে মেইন গেইট পেরিয়ে বেরিয়ে গেলো। রোমেল দেওয়ান সস্তির নিশ্বাস ছাড়লেন অলক ভীষণ কাজের ছেলে। যেই কাজ তাকে দেয়া হয় তা সে নিষ্ঠার সাথে পালন করে।
___________________
দু তলায় বড় বড় ছয়টা বেডরুম। সাথে এটাচড্ ওয়াশরুম। দুই পাশে রুম মধ‍্যখানে বড় লম্বা করিডোর। ছা দে কুঁড়ে ঘরের ন‍্যায় ডুপ্লেক্স দু চালা ঘরের ন‍্যায় দুটো ঘর। যেটা রাজবীরের পছন্দ মতো তৈরী করা হয়েছে। আর রাজবীর এখানেই থাকে। তার তার দুটো ঘরের মাঝখানে কাঁচের দেয়াল দেয়া। একরুমে বড় কিং সাইজের বেড আর কার্বাড সাথে কম্পিউটার ল‍্যাপটপ। অন‍্য রুমটায় ফার্নিচারে ভরপুর। সাদা টাইলস্ এ ঝকঝকে তকতকে খুব সুন্দর রুম দুটো।
বন্ধুদের দলটা খাটের বিছানার বেহাল দশা করে রেখেছে। বালিশ বিছানার চাদর কিছুরই ঠিক নেই। সবগুলো পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফোন ল‍্যাপটটে ঘাটাঘাটি করছে। জিসান জিহাদ কম্পিউটারে গেমস্ খেলছে। বাকির ফোন গুতাচ্ছে। সাথে আছে মজাদার মাসালা আলুর চিপস্ যেটা আফিয়া বেগমের স্পেশাল একটা রেসিপি। ওনি নিজ হাতে বানান যা রাজবীরের ভিষণ পছন্দের। এখন অবশ‍্য বন্ধুরাও বাহ্ বাহ্ তারিফ করছে।
মুন্না রাজবীর কে বললো তা আজ কোথায় বের হবো??
রোহান উঠে বসলো বললো আজকের প্ল‍্যান কি দোস্ত?
জিসান জিহাদ সিরিয়াস হয়ে চাইলো।
রাজবীর ফোন থেকে নজর সড়ালো ভ্রু উচালো গম্ভীর স্বরে বললো আজ আর ঘুরতে যাওয়া হবে না গাইস। আজ বাবার বন্ধু আসবে বাসায় তাই বাড়ি থাকা লাগবে।
রাতুল অবাক হয়ে চাইলো বললো সেকি তাতে কি? তাই বলে আমরা ঘুরবো না?
রাজবীর ঠোঁট ভাঙ্গিয়ে বাকা হাসলো বললো এতো লাফাইওনা। মাম্মা….
পাখি আসতাছে শহরের পাখি…… সবাই ক‍্যারেন্ট শক খাওয়ার মতো লাফিয়ে এক যায়গায় জড়ো হলো। উৎসাহ্ নিয়ে রুমঝুম কন্ঠে বললো কও কি দোস্ত .. তাই নাকি তা কতজন তারা।
রাজবীর আফসোসের ভঙ্গিতে চু চু শব্দ করলো বললো ইস্ রে তোদের ভাগ‍্য খারাপ ইয়ার। একমাত্র বাপের একমাত্র মেয়ে সে। যাকে বলে আদরের দুলালী।
আরে শোন শোন মেয়েটার নাম শুনবি না?
রাজবীরের কথায় উৎসাহ বাড়লো ওদের সবার। খুশিতে ডগমগিয়ে উঠে বললো হ‍্যা হ‍্যা বল শুনি।
রাজবীর তার ফর্সা মুখের তীক্ষ্ম সরু নাক অদ্ভুত ভঙ্গিতে কুঁচকালো। কপালের চামড়ার ভাজ স্পস্ট। বললো নামটা বোধহয় ইশিতা হক
শব্দটা ঘরে বোমা ফাটালো। নিশ্চুপ কাটলো কয়েক মুহুর্ত। মুন্না জিসান জিহাদ রোহান রাতুল একজন আর একজনের দিকে তাকা তাকি করলো চোখের ভাষায় গোপন কথা সাড়লো সবাই।
রাজবীর তখন পায়ের উপর পা তুলে দিয়েছে। মুখে এখনও ইতরের বাকা হাসিটা। হঠাৎ পুরো ঘরে হইহই করে উঠলো। শালাকে ধর শালাকে মার বলে লংকা কান্ড বাধালো সব। রাজবীরের পিঠে যখন দুমদাম শব্দে কিল ঘুসি পড়ছে। তখন সে ইতরের শেষ অধ‍্যায় পার করে হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়ছে। মার খাওয়ার মধ্যেই চেঁচিয়ে বলছে সে কেমন দিলাম দোস্তরা?? বলে আবারো সেই হো হো হাসি
এতে করে মারের ধাপ বাড়লো। ক্লান্ত হয়ে বন্ধুরা সবাই ফ্লোরে শরীর বিছিয়ে দিলো। রাজবীর অভিযোগের ন‍্যায় বললো ইস আমার জীম করা বডি আজ শেষ করে দিলো বাঁদর গুলা।
ঐ ফাজিল ঐ মেয়েটা তোর ইয়ে না? রোহান ভাঙা স্বরে বললো।
রাজবীর ভ্রু চুলকালো বললো কিয়ে??
জিসান চেতে গিয়ে বললো তুমি মামা বহুুত শেয়ানা আছো।
রোহান রাতুল গলা মিলালো বললো একদম ঠিক বলছোত। নইলে নিজের বউ নিয়া মাইনষে এমন তামাশা করে নি শালা বাটপার।
রাজবীর চমকে গেলো বললো ওহ মাই গড আমার বউ অথচ আমি জানিনা কি সর্বনাশা কথাবার্তা।
মুন্না দাাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো রাজবীইরা তোরে আমি কি যে করমু। তুই আমাদের সকলের মন ভাঙ্গছোছ তোরে তো…
রাজবীর হতবাক হলো শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে গেলো আফসোস করে বললো সেকিরে তোদের মন ভাঙলো অথচ আমি দেখলাম না। কাজ টা বহুত খারাপ হইছে বহুত খারাপ। রাজবীরের অসহায় মুখভঙ্গি দেখলে যে কারো মনে হবে ইস রাজবীরকে মন ভাঙা না দেখতে দিয়ে কতবড় অন‍্যায়ই না করেছে এই ছেলেরা।
এবার আর থামায় কে সবগুলো বদবখত আরেক দফা হো হো হাসিতে পরিবেশে ঝংকার তোলতে লাগলো। আহা কি নয়নভিরাম সেই দৃশ্য।
________________________
আসাদ হক,রাবেয়া হক ইশিতাকে নিয়ে অলক বাড়ি পৌঁছলো। রোমেল দেওয়ান উঠোনে চেয়ার পেতে বসে আছেন অপেক্ষা করছে বন্ধুর জন‍্য। গাড়ির শব্দ শুনে চালু পায়ে হেঁটে আসলো গেইট খুলে দিলো। গাড়ি বাড়িতে প্রবেশ করলো। আসাদ হক ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে আসলেন। রোমেল দেওয়ানের সারা চোখমুখ জুড়ে আনন্দের লকলকে আভাস।
বন্ধু কতদিন পর দেখা সেই কবে শেষবার দেখেছি তোকে।
রোমেল দেওয়ান হাত বাড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে গলা মিলালেন। কিছু আবেগি মুহূর্ত পার করলো দুই বন্ধু।
ততক্ষনে রাবেয়া হক ইশিতা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে।
অলক গাড়ির পিছন থেকে ব‍্যাগপত্র নামানোর কাজে ব‍্যাস্ত হয়ে পড়েছে।
রাবেয়া হক সালাম দিলেন রোমেল দেওয়ান কে বললেন।ভাইজান ভালো আছেন?
রোমেল দেওয়ান সচকিত হলেন চোখের কোনের জলটা চট করে মুছে নিলেন।
হ‍্যা বোন আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ ভালোই রাখছে। তুমি ভালো আছো??
জি ভাই ভালো আছি।
ইশিতা পুরোটা সময় বাবা আর আংকেলকে দেখলো কি টান একজনের প্রতি অন‍্যজনের। খাঁটি বন্ধুত্ব আসল মায়া তো এটাই তাই না…..? রোমেল দেওয়ানের দিকে এগিয়ে আসলো ইশিতা সালাম দিলো বললো আংকেল আমায় তুমি ভুলে গেছো?
রোমেল দেওয়ান হেসে ফেললেন বললেন তুমি তো আমার মা মাকে কি ভুলা যায়?
আফিয়া বেগম ততক্ষণে যায়গায় উপস্থিত হয়েছেন। হাসি হাসি মুখে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলেন। ইশিতার দিকে চেয়ে মনে মনে সুবাহানাল্লাহ্ পড়লেন মেয়েটা আগের থেকে অনেক বেশি রূপবতী হয়েছে শহরে থাকে কি না। ইশিতাকে বললো আম্মু ভালো আছো তুমি।
ইশিতা তাকালো আফিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে থেকে জড়িয়ে ধরলো বললো হ‍্যা ভালো আছি তুমি কেমন আছো আন্টি?আফিয়া বেগম ইশিতার মাথায় হাত বুলালেন বললেন আল্লাহ্ দীর্ঘ আয়ূ দিক তোমায়।
রোমেল দেওয়ান তাড়া লাগালেন বললেন সেকি কান্ড বাহিরেই থাকবে নাকি?বাসায় ঢুকো।যাও যাও বাসার ভিতর যাও। সবাই হাঁটা লাগালো। ইশিতা চার পাশের পরিবেশ দেখতে দেখতে চলতে লাগলো। এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশ মনটা প্রশান্ত হয়ে গেছে। ছাদের দিকে চোখ গেল তার মনে হলো কিছু একটা সরে গেলো। কি জানি নাকি দৃষ্টিভ্রম। ইশিতার মাথায় হঠাৎ করেই আরো তিন বছর পূর্বের কথা মনে হলো। এই বাড়ির ছেলে রাজবীরের সাথে তার শেষ দেখা ছিলো। এখন চেহারা অত মনে নেই। কেন এই বিষয় টা মাথায় আসলো। ইশিতা জানেনা। হয়তো রাজবীর ছাদের ঘরে থাকে বলে। রাজবীর কি ওদের দেখছিলো নাকি? লোকটা কেমন যেনো কেমন ধারালো দৃষ্টি তে তাকায়। ইশিতা চিন্তা বাদ দিলো বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো সে।
☆☆☆☆
রাজবীর পুরো টা সময় ছাদ থেকে নিচের ঘটনা টা অবলোকন করলো। ছাদের খালি যায়গাটায় বড় একটা ছাতা আর তার নীচে গোল স্টাইলে সাত আটটা চেয়ার রাখা। আর ছাদের রেলিং ঘেসে গোলাপ গাছ আর বেলী গাছের বাগান। রাজবীরের প্রিয় ফুল গাছ এই দুটো। নানান ধরনের হাজারী গোলাপ গাছ আর বেলী।রাই বেলী হাজারী বেলীর সমাহার। ফুলের মিষ্টি গন্ধে ছাদটা সারাক্ষণ মোহিত থাকে। দেখতে কি যে সুন্দর লাগে। হুুট করে কেউ এই বাড়ির ছাদে আসলে তার মনে হবে সে বিদেশি কোন পর্যটক কেন্দ্রে এসেছে। নিঃসন্দেহে ছাদটা মন ভালো করার একটা যায়গা। তবে সচারাচর সবার এখানে আসা হয় না রাজবীরে পছন্দ না সেটা।
রাজবীর চেয়ার পেতে বসলো পুরানো কষ্টটা একটু মনে পড়ে গেল বোধহয়। রোহান লাল চুল হাত দিয়ে পিছনে ফিরালো আকাশের দিকে চেয়ে বললো মামা বৃষ্টি হয় না কেন? রাজবীর ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো বললো শোন কালকে একটা বিচিত্র এলাকায় ঘুরতে যাবো বুঝলি?
সবাই একসঙ্গে লাফিয়ে উঠে বললো কোথায় কোথায়?
রাজবীর মুখ বাঁকালো বললো আগে বল তো মেয়েরা কালো চামড়া ধলা করে কেম্বাই?(কিভাবে)
দোস্ত কি কইতাছোছ? তুই কিসের ভিতর কি বলতাছোত?
রাজবীর সবার দিকে তাকালো বললো পাখি দোস্ত পাখি
সবগুলা ইতর মনে হয় গোপন রহস‍্য জেনে গেছে। দুনিয়া কাঁপিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার যোগাড় তাও হাসি থামে না ফাজিলদের। ইস্ বন্ধু তুমি কি চমৎকার এক সম্পর্কের বন্ধন। যেথায় হাসি খুশি আর আনন্দ।

চলবে
জান্নাত রেশমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here