মায়ায় ভরা সেই দিনে পর্ব ৮

মায়ায় ভরা সেই দিনে
পর্ব ৮

সকালে নাস্তার টেবিলে রমরমা খবর সবার কানে তুলে দিলো অলক। তাদের বিদেশী সুদর্শন দেখতে রাজবীর ভাইয়ের বিয়ে শহরের আপার লগে। বন্ধুদের দলটা প্রথমে বোকা বনে যায় পড়ে রাজবীরের ঠোঁটে ইতরের ন‍্যায় বাঁকা হাসি দেখে তাদের বোধগম্য হয় যে আসলেই রাজবীরের বিয়ে। নাস্তার টেবিলে সবার সেকি উল্লাস। রাতুল জোড়ে জোড়ে কয়েকটা বিয়ের গীত গেয়ে ফেললো। উপস্থিত সবাই হেসে গড়াগড়ি খাবার যোগাড়। ইশিতার হুুট করে লজ্জায় পেয়ে বসলো। রাজবীর আড়চোখে তা দেখে গেলো। মেয়েটাকে সব রূপেই মিষ্টি দেখায়। বন্ধুদের দলটার অতিরিক্ত আনন্দ রাজবীরের সহ‍্য হলো না। সে তীর্যক দৃষ্টি তে ওদের দেখতে লাগলো ফের ফিসফিসিয়ে বললো তোরা মৃগি রোগীর ন‍্যায় করতাছিস কেন? এটা তো জানা কথাই তাইনা
বন্ধুদের সবাই হুু হা করে হাসতেই থাকলো তাদের আনন্দ যেন ধরে না। বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা।
বড়রা কথা বলে বিয়ের ডেইট ফাইনাল করেছেন। এই মাসের তের তারিখ রোজ শুক্রবার পবিত্র জুম্মার দিন বিবাহ্ সম্পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ। ইশিতারা কাল ঢাকা ফিরে যাবে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে আসাদ হকের কোন কিছুতে কোন কমতি রাখবেননা তিনি। হাতে সময় কেবল এক সপ্তাহ বিয়ের জন‍্য গোছগাছ করা আত্বীয় স্বজন দাওয়াত করা অনেক কাজের বিষয়।
রাজবীর নাস্তা শেষ করে ছাদে উঠে আসলো। এখানে থাকলে লজ্জায় পড়তে হবে। ছাদের ফুল গাছগুলো তে কয়েকটা গাছে সারা বছরি ফুল ফোঁটে। ছাদটা সারাক্ষণ গোলাপ বেলীর ফুলে মৌ মৌ করে। বাতাসের দোলায় যখন মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগে কি যে ভালো লাগে রাজবীরের। ছাতার নিচে একটা চেয়ার টেনে বসলো রাজবীর। উদাস হয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকলো সে। চারপাশে নজর বুলাতে গিয়ে ইশিতাকে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে বসলো রাজবীর। ভ্রু নাঁচিয়ে বললো কি সমস্যা যখন তখন সামনে পিছনে এসে দাড়াও আবার চোরের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো মতলব কি?
ইশিতা রাজবীরের রসিকতা পাত্তা দিলো না উল্টো সে মুখ কালো করে বললো
আপনার সাথে কথা নেই আপনি কথা দিয়ে কথা রাখেননি।
ওওও তাই। তা কি কথা রাখিনি শুনিতো রাজবীর গালের নিচে হাত রেখে ইশিতার দিকে চাইলো।
ইশিতা রাজবীরের মেয়েলি ভঙ্গি দেখে ফিক করে হেসে ফেললো। বললো নদীতে ঘুরতে নিয়ে যাবেন বলেছিলেন কিন্তু নেননি। কাল সকালে বাসায় চলে যাচ্ছি তো আর কবে নিয়ে যাবেন শুনি
রাজবীর মুগ্ধ চোখে মেয়েটার আদুরে অভিমান দেখলো। তার ভালো লাগলো খুব। মুখে বললো তো যাচ্ছো কেন? আমরা তো ঘুরতে যাবো। এখন তুমি যদি বাসায় ফিরে যাও তো সেটা তোমার দোষ আমাদের নয়।
ইশিতার চেহারা কাঁদোকাঁদো হয়ে এলো।চোখমুখ খিঁচে বললো আপনি এতো বখাটে কেন?
রাজবীর হাত ঘড়িতে চোখ বুলাচ্ছিলো। ইশিতার কথাটা কানে যেতেই বিস্ফোরিত নয়নে ইশিতার দিকে তাকালো সে। কথাটার অর্থ উদ্ধার হতেই বখাটের ন‍্যায় বাঁকা হাসলো সে। উঠে এসে ইশিতার কাছে আসার আগে মৃদু চিৎকারে নিজ যায়গা থেকে প্রস্থান করলো ইশিতা। নিচে নামার সিঁড়িতে অবস্থান এখন তার।
রাজবীর হটকারিতা করলো তা এখন পালাচ্ছো কেন? সাহস থাকে তো সামনে দাঁড়াও।
ইশিতা মুখ বাঁকালো বললো এতো সহজে ধরা দিচ্ছি না হুুহ্।
রাজবীর চোখ রাঙ্গালো বললো আজ সুধু হাতের কাছে পাই তারপর বুঝাবো বখাটে কাকে বলে।
ইশিতা আবারো ভেংচি কাটলো বললো আজ আর সারাদিনও আমার দেখা পাবেন না আপনি।
রাজবীর তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার চঞ্চলতা। গতবার মেয়েটা ওকে দেখলে ভয় পেতো। আর এইবার বিন্দুমাত্র ভয়তো পাচ্ছেইনা উল্টো ভেংচি কাটা হচ্ছে। দুষ্ট রাণী একটা।
____________________
ইশিতা থেমে থাকলো না তার কষ্ট লেগেছে রাজবীর কি করে বললো ওকে ছাড়া নদীতে ঘুরতে যাবে। সে রোমেল দেওয়ানের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে ঐ কথা তুললো। রোমেল দেওয়ান ইশিতার বাচ্চামি দেখে হেসে ফেললেন সাথে ওকে আশ্বস্ত করলেন ওকে ছাড়া রাজবীরদের কোথাও ঘুরতে যেতে দিবেননা। ইশিতা বিজয়ী হাসলো। তার প্ল‍্যান কাজে লেগেছে।
বিকালের নাস্তা ইশিতা নিজে বানালো নুডুলস সাথে চিকেন রোল আর কফি। আফিয়া বেগম খুব খুশি হলেন। রাজবীর আর তার বন্ধুদের নাস্তা কফি ট্রে তে সাজিয়ে ইশিতা নিজেই ছাদে ঊঠে আসলো। সবাইকে এক সাথে ছাতার নিচে বসে থাকতে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললো সে। গোল টেবিলটায় ট্রে রেখে কুটিল হাসি দিলো। বন্ধুদের দলটা রুমঝুম খুশীতে খাবারের উপর হামলে পড়লো। রাজবীর সুধু তাকিয়ে তাকিয়ে ইশিতার উদ্ভট কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। ছাদে আসার পর থেকেই মুখ থেকে তার টলটলে হাসি সড়ছেই না। রাজবীর আর ওর বন্ধুরা মোবাইলে লুডু খেলছিলো। রাজবীর সন্দেহের দ‍ৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো কি? ইশিতা মুখ খুললো
তখনতো খুব বড় গলায় বলেছিলেন আমাকে রেখে ঘুরতে যাবেন। তো দেখি এবার কিভাবে যান।
রাজবীর বেকুবের মতো ইশিতার দিকে তাকিয়েই রইলো। বন্ধুদের সবাই খাবার রেখে ওদের দিকে দৃষ্টি পাত করেছে। ইশিতা তার কুটিল হাসি দিয়েই বললো আমি আংকেলের কাছে বিচার দিয়েছি। আংকেল বলেছে কোথাও ঘুরাঘুরি হবেনা সব বন্ধ।
এবার রাজবীরের বোধগম্য হলো বিষয়টা। ততক্ষণে ইশিতা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ছাদ ছেড়েছে।
বন্ধুদের দলটা রাজবীরকে ঝাপটে ধরলো বললো কাহিনি কি মামা?
রাজবীর রোল চিবোতে চিবোতে সকালবেলায় ইশিতার আর তার কথপকোথন বন্ধুদের নিকট তুলে ধরলো। ইতরের দলটা সব শুনে গান ধরলো।

কি মায়া লাগাইয়া গেলি গো আমার মন শিকারি বন্ধে……. জাদু জানে জাদু জানে গো ঐ না কালাচাঁন্দে………
রাজবীর আপ্রাণ চেষ্টা করলো ঠিক থাকার তবে লাভ অত হলো না। হাসিটা ঠেলে বেরিয়ে আসলো। ওর হাসির অপেক্ষায় ছিলো বোধহয় ইতরের দলটা। হো হো করে দম ফাটানো হাসি হাসতে লাগলো তারা।হাসির শব্দে গাছে থাকা পাখিগুলো চমকে গেলো। ডানা ঝাপটে তারা তাদের নীড়ে ফিরার প্রয়াস চালাতে লাগলো।।
_____________________
ফজরের পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে আফিয়া বেগম কাজের মেয়ে সোমা হাতে হাতে সাহায্য করছে। আসাদ হক রাবেয়া হক ইশিতা ওনাদের ব‍্যাগ গোছগাছ শেষ। নাস্তা করেই বেরিয়ে পরবে তারা। রোমেল দেওয়ান আসাদ হক বসে বসে প্রয়োজনীয় আলোচনা সেড়ে নিচ্ছে। বিয়েতে বরযাত্রী কম যাবে। শহরের বাড়ি অত মানুষ যেয়ে ঝামেলার দরকার নেই। তাই রোমেল দেওয়ানের ইচ্ছে বড় অনুষ্ঠান বৌ ভাতে করবেন তারা। পুরো গ্রামের লোকদের খাওয়াবে সে বিনে পয়সায়। এটা তার বহু দিনের ইচ্ছা। গ্রামের দরিদ্র লোকদের তো সামর্থ‍্য নেই টাকা পয়সা খরচা করে দাওয়াত খাওয়ার তাই তাদের জন‍্যই কোন টাকা নেবার জন‍্য লোক শিউলি লেখতে বসানো হবে না। আর তাছাড়া গরীব মানুষদের পেট পুরে খাওয়ানো টা একটা পূন‍্যের কাজই তো বটে।
রাজবীর দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসলো। আফিয়া বেগম টেবিল সাজিয়ে ফেলেছেন। হাঁক ছাড়লেন তিনি একে একে সবাই টেবিলে বসলো। রোমেল দেওয়ান আর আসাদ হকের গুরুগম্ভীর কথাবার্তা চলতেই থাকলো। রাজবীর মনযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনে গেলেন।
আফিয়া বেগম পিঠা পুলি তৈরী করে রেখেছে শহরে পাঠাবে ইশতিয়াক আর তার বউয়ের জন‍্য। সব কিছু ওনি দক্ষ হাতে গুছিয়ে ব‍্যাগে ভরে দিলেন।
আসাদ হক রাবেয়া হক সবার সাথে আন্তরিক ভাবে বিদায় পর্ব সাড়লেন। ইশিতা দু তলা থেক নেমে আসলো। তার পড়নে সাদা রঙের থ্রি পিস। শুভ্র রঙে চন্দন রঙটা স্নিগ্ধতায় ভরে গেছে। রাজবীর আবিষ্ট ভাবে চেয়ে থাকলো কতক্ষন।
রাজবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো ইশিতা মৃদু হেসে বললো আসছি ভালো থাকবেন। রাজবীর বিনিময়ে হাসি ফিরিয়ে দিলো বললো।
তুমি ও ভালো থেকো। নিজের খেয়াল রেখো। খুব শীঘ্রই দেখা হবে।
ইশিতা মাথা নেড়ে সায় জানালো। সামনের দিকে পা বাড়লে হাতে টান পড়ায় চমকে পিছু ফিরলো। রাজবীর তার হাতের আঙ্গুল গুলো ধরে আছে।
পকেট থেকে এক গুচ্ছ তাজা গোলাপ বের করে তা ইশিতার হাতে গুজে দিলো রাজবীর।
ইশিতার ভীষণ ভালো লাগলো সে খুশিতে রুমঝুম করা কন্ঠে বললো
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
রাজবীর ইশিতার খুশিটা টের পেলো। তবুও কেবল হাসলো সে। বললো আল্লাহ্ হাফেজ
আল্লাহ্ হাফেজ। ইশিতা পা বাড়ায় গাড়ির দিকে। আসাদ হক গাড়ি স্ট্রাট দিলো। তাদের মাইক্রো দেওয়ান বাড়ির গেইট ছেড়ে মেইন রাস্তায় উঠে আসলো।

চলবে
জান্নাত রেশমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here