#মুহূর্তে
পর্ব-১১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
কথন চোখ সরিয়ে নেয়। কবিতার সিটবেল্ট লাগিয়ে আবার নিজের সিটে বসে উওর দেয়, “সিটবেল্ট লাগাচ্ছিলাম। শুনো, বিয়ে ক্যান্সেলের ব্যাপারটা কি কয়েকমাস পরে বললে ভালো হয়?”
“হঠাৎ?”
“আমি চারমাস পর আমেরিকা যাচ্ছি আগের ইন্টারশিপ করার জন্য। আবার আমার ছোট বোনের বিয়ে। এর আগে অন্যকোথাও মেয়ে না দেখতে পারে এইজন্যই বলা। আমার বিয়ে করার মোটেও ইচ্ছা নেই।”
“আমার সমস্যা নেই। আমার জন্যও ভালো হবে। আচ্ছা আপনার বাসায় যেতে কতক্ষণ?”
“আধাঘন্টা।”
“তাহলে আপনার প্রেমকাহিনীটা শুনা যায়। ওদিন বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমার মুড ছিলো না। আজ সময় আছে। আপনি বলুন আমি খেতে থাকি।”
কথনের আজ কবিতাকে তার অতীত শোনাতে মোটেও মন চাইলো না। কারণটা না জানায় সে জোর করেই কবিতাকে বলে গল্পটা তবে ছোট করে, “ওর নাম উর্মি ছিলো। কলেজে একসাথে পড়তাম। ও একদিন আমাকে প্রেমপত্র দেয়। উর্মি দেখতে খুব সুন্দর ছিলো। আমাদের কলেজের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে ছিলো। তাই আমিও এক্সেপ্ট করে নিলাম। তারপর কথা বলতে বলতে আমারও ভালো লেগে যায়।”
কবিতা মুখে খাবার রেখেই বলে, “সুন্দর দেখে প্রেম করলেন? জানেন এমন রূপ দেখে প্রেম করলে প্রেম টিকে না। রুপ দেখে তো আর ভালোবাসা হয় না।”
কথন হাসে, “তাহলে প্রেমগুরু আপনি বলেন কীভাবে ভালোবাসা হয়?”
“আসলেই তো ভালোবাসা কীভাবে হয়?” ভীষণ চিন্তায় পড়ল কবিতা। তারপর হঠাৎ তার মনে হল তীর্থের গভীর চাহনির কথা। তার ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি এঁকে উঠে। সে বলে, “হয়তো কারও গভীর দৃষ্টি যখন অন্তরে যেয়ে গেঁথে যায় তখন তার ভালোবাসায় ডুবে যেতে ইচ্ছে হয়।”
কথন আড়চোখে কবিতার দিকে তাকালো। তাকে এভাবে হারিয়ে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কাউকে ভালোবাসো না’কি?”
কবিতা অপ্রস্তুত হয়ে নড়েচড়ে বসল। মাথা নিচু করে বলল, “এমন কিছু নয়।”
কথোপকথন বাড়ায় না কথন। কবিতার সাথে তার আসলে বিয়ে করার তো কোনো ইচ্ছা নেই। তাহলে অকারণে কারও ব্যক্তিগত জীবনে ঘাটাঘাটি করার মানে হয় না।
কবিতা এক চামচ পেস্ট্রি এগিয়ে দিয়ে বলে, “আমি খাইয়ে দেই নিন। কেকটা অনেক মজার।”
“এটাকে কেক বলে না।”
“কেক বলে না?” বিস্মিত গলায় বলে কবিতা, “আমি তো জানতাম কেক-ই বলে। কেক না বললে কি বলে?”
“ডায়বেটিস।”
কথনের কথা শুনে মুখ বানায় কবিতা। কথন আবারও বলে, “কত মিষ্টি এইখানে জানো?”
“আপনাকে বিয়ে না করার জন্য আরেকটা বাহানা পেলাম অনুকে দেবার জন্য। আপনার সাথে বিয়ে করানোর জন্য ও পাগল হয়ে গেছে। আপনি তো ডাক্তার। আপনার সাথে বিয়ে করলে কিছু খেতে নিলেই মানা করবেন। আর আমার খাবার অনেক পছন্দ। বিশেষ করে মিষ্টি খাবার।”
সম্পূর্ণ রাস্তায় কোনো প্রকার নিরবতা ছিলো না। দুইজনের মাঝে অনেক কথা হয়। সব অহেতুক কথা-বার্তা। কিন্তু বাসায় যেয়ে দুইজন কোনো কথাই বলতে পারে না। কবিতাকে কথনের মা এবং বোনেরা ছাড়েই না। মেয়েটা এমনিতেই বাঁচাল। নিজের কথার মাঝে তিনজনকে বেঁধে রাখে। কথন তার মা এবং ছোটবোনকে কবিতার সাথে মিশতে দেখে বেশি অবাক না হলেও তার বড় বোনকে যখন দেখে কবিতার সাথে হেসে হেসে আলাপ করছে তখন সে অবাক না হয়ে থাকতে পারে না। তার বড়বোন গম্ভীর ও শক্ত ধরনের মেয়ে। কথন এবং কথনের ছোট বোন জবার সাথে সে কবে এমন হেসে কথা বলেছিলো তার মনে পড়ে না। তবে তাকে দেখে মনে হলো সে কবিতার সাথে কথা বলে ভীষণ খুশি। কথন সেখানে বেশিরক্ষণ বসে না। ভোরে কাজে হাস্পাতালে গিয়েছিল সে। এখন সে ক্লান্ত। তাই নিজের রুমে যেয়ে ঝটপট করে শাওয়ার নিয়ে নিলো।
কবিতা কথনের বাসায় এসে অবাক হয়ে যায়। এত সুন্দর পরিপাটি বাসা সে আগে দেখে নি। বাসাটা একদম সাধারণ রাখা। বেশি আসবাবপত্র দিয়ে ভরা না। কিন্তু অন্যরকম মাধুর্যে ভরা। সাধারণের মাঝেও অসাধারণ। বাসাটার প্রতিটি রুমে কথনের মা’য়ের হাতে গড়া জিনিস। মাটির জিনিসপত্র, শপিজগুলোতেও বাংলাদেশের গ্রামীণ ছোঁয়া আছে, আর প্রতিটি রুমে রয়েছে অসংখ্য ফটোফ্রেম। ফটোফ্রেমে কথনের মা’য়ের হাতে করা সুতোর কাজের পেইন্টিং। তা দেখে ভীষণ উৎসুক হয় কবিতা। এমনটা সে আগে দেখে নি। কিছু সময়ের মধ্যেই কবিতা সবার সাথে মিশে যায়। অনেক কথা বলে সকলের সাথে। পরে নাস্তা বানানোর কথা বলে কথনের মা এবং বড় বোন উঠে যায়। তার ছোট বোন পড়ার বাহানা ধরে তাকে দিয়ে যায় কথনের রুমে। সে ভালোমতো জানে তাদের উদ্দেশ্যটা কি। কিন্তু এতে বিশেষ কিছু বলে না। কেন যেন, সে কথনের সাথে মোটেও অস্বস্তিবোধ করে না। বিষয়টা অবাক করার মতো। এর পূর্বে কেবল দুইদিন দেখা হয়েছে কথনের সাথে কিন্তু তার সাথে স্বস্তিবোধ করে কবিতা।
কবিতা কথনের রুমে এসে তাকে পায় না। কথন বলেছিলো সে গোসল করতে গেছে। সম্ভবত বের হয় নি। পায়চারি করছিলো কবিতা রুমটায়। কথনের রুমটা সম্পূর্ণ ঘর থেকে একদম ভিন্ন। এইখানে গ্রামীণ কোনো জিনিসপত্র নেই। সবটা মর্ডান ধাঁচের। রুমের রঙটা হাল্কা ধূসর রঙের এবং আসবাবপত্র সব সাদা-কালো। রুমের এককোণে বুকশেলফ রাখা। সেখানে যেয়ে দাঁড়ায় কবিতা। পড়ার বইয়ে সবটা ভরা। এত্ত পড়াশোনা করে কথন! এর মাঝে দশ পনেরোটা উপন্যাসের বই পেল কবিতা। সবগুলো প্রেমের উপন্যাস। একটি বই বের করে খুলল। প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা,
‘এই হৃদয়ের আনাচে-কানাচেতে
তোমার দেখা পাই,
মন ভোলানো রূপকথায়
তুমি বিহীন কেউ নাই।”
লেখাটা দেখেই মৃদু হাসে কবিতা। ডাক্তারবাবু কবিতা লিখতে জানে এই ধারণা তার মোটেও ছিলো না। উপন্যাসের বইয়ের দুই পৃষ্ঠা উল্টে সে দেখতে পায় একই হাতের লেখায় দুটো লাইন লেখা,
‘হৃদয়হরণের এক গল্পকথন
তোমার সে দৃষ্টিতে লেখা আমার মরণ।”
কথন বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে কবিতা তার বুকশেলফের সামনে দাঁড়ানো তার হাতে একটা উপন্যাসের বই এবং তার ঠোঁটের কোণে গাঢ় হাসি।
“কী করছ?” কথনের কন্ঠে পিছনে ফিরে কবিতা। সাথে সাথে প্রশ্ন করে, “আপনি কাব্য লিখতে পারেন?”
“না।”
“তাহলে এগুলো কে লিখেছে?”
“এগুলো তো কাব্য না। কলেজের দিনে উপন্যাস পড়ার সময় কিছু লাইন মাথায় আসতো তাই লিখে রাখতাম। কলেজের পর থেকে আর উপন্যাস পড়া হয় নি তাই লাইনগুলোও লেখা হয় নি। উর্মির লেখাগুলো পছন্দ ছিলো তাই পড়ে লিখে রাখতে হতো। ওকে প্রেমপত্র দিতে হতো, নাহয় মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো। প্রেমপত্র লেখা এক জ্বালা এবং প্রেম করা আরেক জ্বালা।”
“জ্বালা কেন?”
“বলে বুঝাতে পারব না। অভিমান সহ্য করো, রাগ ভাঙাও, কান্নাকাটি সহ্য করো, সকল আবদার পূরণ করা।প্রথম প্রথম সব ভালো লাগলেও একসময় সবটা বিরক্ত লাগতে শুরু করে। এইসবের কারণে তোমার স্বপ্নের পথ থেকে সরে যাও। মানসিক চাও পড়ে। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা কমতে থাকে। এই কারণেই আমি মনে করি প্রেম ভালোবাসা কেবল ভ্রম। ভ্রম ছাড়া কিছুই নয়।”
“কাওকে সত্যি ভালোবাসলে কি এ কাজগুলো করতে ভালো লাগে না? ভালোবাসলে তো এইসব বোঝা হয়ে দাঁড়ায় না। কুমিল্লায় আমাদের পাশের বাসায় একটি আপু থাকতো। তার বিয়ের চৌদ্দ বছর হলো। পাঁচ বছর প্রেম করে বিয়ে করেছিলো। অথচ তাদের মাঝে কখনো এমন বিরক্তি দেখতে পাই নি। এমন না তাদের মধ্যে ঝাগড়া হয় না। তিনবেলা খাবার থেকে তাদের মনে হয় ঝগড়া বেশি প্রয়োজন। ছোট ছোট ব্যাপারে ঝগড়া করে অথচ তাদের ভালোবাসা যেন প্রতিদিন বাড়ে। প্রতিদিন দেখে মনে হয় নতুনভাবে প্রেম করছে। আমারও না এমন কাউকে লাগবে, যে আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে এবং সারাজীবন ভালোবেসেই যাবে।”
কথন চেয়ারের উপর তোয়ালে রেখে কবিতার কাছে যেয়ে দাঁড়ায়। তার হাত থেকে উপন্যাসের বইটি নিয়ে একটিবার চোখ বুলায় বইয়ে, “প্রেমের গল্পকথা উপন্যাসে মানায়, জীবন কয়েক পৃষ্ঠায় শেষ হয়ে যায় না। আর বাস্তবে কেবল ভালোবেসে জীবন কাটে না।”
“আপনাদের ব্রেকাপ কেন হয়েছিলো?”
“আমার মনে হচ্ছিলো ওর কারণে আমার পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে। সারাদিন ওর এটেনশন লাগবে। কথা না বললে অভিমান করে বসে থাকতো। এমনকি আমার পরিবারের সাথে সময় কাটানোটাও ওর ভালো লাগতো না। তারপর না পেরে আমি বলেছি কয়েকবছরের জন্য ব্রেক নেই। আমি নিজের ক্যারিয়ার গড়ার পর তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব। সেদিন অনেক চিল্লাচিল্লি করেছিলো। তারপর অভিমান করলো। সে অভিমানেই বিয়ে করে নিলো।”
“মনে পড়ে তার কথা?”
“মাঝেমধ্যে মনে পড়ে। অনেক সময় জুড়ে জীবনের অংশ ছিলো মনে পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু কষ্ট হয় না। বিয়ের পর কয়েকদিন খারাপ লেগেছিল কিন্তু একসময় মনে হলো এটাই ভাগ্যে ছিলো। আর যা হয়েছে এতটাও খারাপ হয় নি।”
“আপনি আমার জন্য একটা কবিতা লিখবেন? আমার কবিতা বেশ পছন্দ।” কবিতার কথায় কথন তাকায় তার দিকে। কবিতাকে উৎসুক দেখাচ্ছে। উৎসুক হবার পর তার চোখেমুখে বাচ্চামো ভাবটা এসেছে। অথচ খানিকক্ষণ পূর্বেও গম্ভীর কথাগুলো বলার সময় তাকে পূর্ণবধিত দেখাচ্ছিলো। কথন হাসলো তাকে দেখে, “বললাম তো, আজকাল এইসবের চর্চা নেই। সময় পাই না।”
“ওহ।” নিরাশ দেখায় কবিতা। কথন জিজ্ঞেস করে, “তোমার কবিতা কেন পছন্দ? তোমার নাম কবিতা বলে?”
“আপনি কীভাবে জানলেন? আমার আম্মু আব্বু আমার নাম কবিতা রেখে দিলো অথচ আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লেখে নি। আর আমার তেমন কোনো গুণ নেই। কিন্তু আমার প্রেমের গল্প কবিতা পড়া, সিনেমা দেখা ভীষণ পছন্দের। আপনি প্লিজ আমার জন্য একটা কবিতা লিখবেন? প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
কথন হেসে বলে, “ঠিকাছে সময় পেলে লিখব।”
কবিতা লাফিয়ে উঠে। তাকে অতিরিক্ত খুশি দেখাল। সে বলল, “কি নিয়ে লিখবেন?”
“তুমি যে বিনা মগজের মেয়ে তা নিয়ে।”
কবিতার উৎসুকভাব নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়, “আপনি তো বেশ বাজে। আপনার কি আমার এমন কোনো কিছু ভালো লাগে নি যে আমার প্রশংসনীয় একটি কাব্য লিখবেন।”
কথনকে হাসতে দেখে কবিতা তার শার্টের হাতা ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে, “কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি।” তারপর অহেতুক ক্রোধ দেখানোর জন্য তার ঠোঁট উল্টে নেয়।
কথনের ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি হাসি। কবিতা বুকশেলফের পাশে দাঁড়ানো। সে কবিতার দুই কাঁধের দুইপাশে হাত দিয়ে তার দিকে একটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। সম্মোহনী কন্ঠে বলে, “লাগে তো। তোমার ঠোঁটজোড়া অতিরিক্ত সুন্দর। আমি নিশ্চিত যেকোনো ছেলে একবার তাকালে তাকিয়ে থাকতে চাইবে। এমনকি অনেকে চুমুও খাইতে চাইবে। যেমন আমার ইচ্ছা করছে তোমার নিখুঁত ঠোঁটজোড়ায় চুমু খেতে।”
কবিতার নিশ্বাস সেখানেই আটকে গেল। সে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো কথনের দিকে। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে।
কবিতার ভীত দৃষ্টি দেখে ফিক করে হেসে দেয় কথন। কবিতার কাছ থেকে সরে যেয়ে বলে, “চিন্তা করো না আমি তোমাকে চুমু খাচ্ছি না। চুমু খাবার জন্য আমার দুইটা জিনিস নিয়ে বিশেষ কারণ লাগে। এক, আমি তাকে ভালোবাসি কি’না? দুই, সে আমাকে ভালোবাসে না’কি? আর এই দুটো কারণের একটি কারণও আমাদের মাঝে নেউ। তবে হ্যাঁ, তোমার ঠোঁটজোড়া বেশ সুন্দর তা সত্যি। অন্য বিশেষ কিছু তেমন গভীরভাবে লক্ষ্য করি নি।”
“আপনি তো বেশ লুচ্চা। আপনাকে আমি মোটেও এমন ভাবি নি। আপনি আমার ঠোঁট খেয়াল করলেন তাও….” কবিতা সামনের কথাটুকু বলতে পারলো না। সেখান থেকে রাগে মুখ ফুলিয়ে চলে গেল।
কবিতার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে কথনের আরও বেশি হাসি পায়। এতটুকু কথা মেয়েটা এত বড় ভাবে নিবে সে মোটেও তা ভাবে নি।
সারাদিন সবার সাথে ভালোই দিন কাটে কবিতার। সবাইকে দেখে তার আফসোসও লাগছিলো আসলে এইটা তার শশুড়বাড়ি হবে না কিন্তু কথন তার স্বামী হবে না এই স্বস্তিও তার ছিলো। সারাদিন কাটিয়ে রাতে বাড়িতে যায় কবিতা। কিন্তু এর পূর্বে জেবা জোর করে কবিতার নবীনবরণে সে নিজের হাতে তাকে সাজিয়ে দিবে। কবিতা প্রথমে মানা করে, সে ভালো করে জানে যে তারা সবাই মিলে কথন ও কবিতাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য চেষ্টা করছে। তার মধ্যেই কোনো এক পরিকল্পনায় তাকে ডাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেবার জোর করায় কবিতা আর না করতে পারলো না।
.
.
পাঁচদিন পর,
কবিতাকে ভীষণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। একটি সাদা রঙের জামদানি পড়েছে সে। সাদা জমিনে সোনালী কাজ। তার চুলগুলো পিঠ ছড়ানো। দুইহাত ভর্তি চুড়ি। চোখে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপ্সটিক। তাকে ভীষণ সুন্দর করে সাজায় জেবা। কবিতা আয়নাতে নিজেকে দেখে তো প্রথমে চিনলোই না। কিছু মুহূর্ত অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে আয়নায়। এর পূর্বে সে কখনো এত সাজে নি। তারপর জেবাকে বলে, “আপু এটা আমি? সত্যি আমি?”
জেবা কবিতার গাল টেনে বলে, “আসলেই তুমি।”
কবিতা খুশি মনে লাফিয়ে লাফিয়ে বিছানার কাছে যায়। সেখানে বসা তাহিরা এবং কথনের মা।
“আপি, আন্টি দেখেন আমার কত সুন্দর করে সাজিয়েছে জেবা আপু।”
কথনের মুগ্ধ হয়ে বললেন, “সাজের কারণে না। মাশাল্লাহ দিলে তুমি এমনিতেই দেখতে খুবই সুন্দর।”
প্রশংসা শুনে একগাল হাসে কবিতা। তাকায় তাহিরার দিকে। তাহিরাও বলে, “অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোকে।”
“আপু তোমাকেও আজ একদম পরীর মতো লাগছে।”
তাহিরাকেও জেবা সাজিয়ে দিয়েছে। সে পরেছে কমলা রঙের একটি জামদানি। তার চুলে খোঁপা করা। খোঁপায় বাঁধা বেলিফুল। সকাল সকাল ধ্রুব ফুল নিয়ে এসে তাহিরাকে দিয়ে আবদার করেছিলো খোঁপা করে বেলিফুলের মালা মাথায় গুঁজতে। ধ্রুবর আবদার ফেলতে পারে নি সে।
কথন ভীষণ বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করছিল কবিতা ও তাহিরার। এমনিই তাদের জন্য আজ দেরি করে হাস্পাতালে যাচ্ছে সে। কিন্তু এত দেরি কে করে? অবশেষে না পেরে নিজেই তাদের ডাকতে এলো।
“মা আর কতক্ষণ আমার দেরি হয়ে যা….” দরজা দিয়ে ঢুকতেই তার দৃষ্টি পড়ে এক শুভ্রপরীর উপর। সে কথা বলতে ভুলে যায় কিছু মুহূর্তের জন্য। দৃষ্টি আটকে পড়ে তার সামনে দাঁড়ানো শুভ্রপরীর উপর। তার মনে হলো হার্টবিটও এক মুহূর্তের জন্য মিস হয়ে গেছে।
কবিতা উৎসুক গলায় কথনকে জিজ্ঞেস করে, “দেখুন আজ আমি প্রথম শাড়ি পরলাম। আর জেবা আপু কত সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে আমাকে। কেমন লাগছে?”
কথন বলতে চাইল, “স্নিগ্ধ, পবিত্র এবং আসমান থেকে নেমে আসা হুরপরীর মতো লাগছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত তোমার হাসি দেখে পরীও লজ্জা পাবে।”
কিন্তু তা সে বলল না। চোখ নামিয়ে নিলো সে। কেবল বলল, “সুন্দর লাগছে। তৈরি হলে নিচে এসো। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।”
এই বলেই সে বের হয়ে যায়। বের হয়ে বহু কষ্টে সে নিশ্বাস ফেলে। তারপর নিজেই অবাক হয় নিজের উপর। সে তো এমন না। আজ পর্যন্ত তার মনের কথা কখনো মনে রাখে নি সে। যা মুখে এসেছে তা বলে দিয়েছে। তাহলে আজ কেন সে তার মনের কথা বলতে পারে নি?
চলবে….
[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]
সকল পর্ব-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086