মুহূর্তে পর্ব-২৪

0
633

#মুহূর্তে
পর্ব-২৪
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

তাহিরার কণ্ঠ শুনেই বুক কেঁপে উঠলো ধ্রুবর।
তীর্থ ধ্রুবকে ছেড়ে বলে, “দাঁড়া আমি এখনই তোর কাণ্ডকারখানা সবকিছু তাহিরাকে বলছি। তুই যে ওর ওয়াদা ভেঙে রূপার সাথে এত সুন্দরভাবে কথা বলছিলি তাও বলব। তার সাথে ঘুরছিলি তাও বলব। তারপর দেখব নিজের সম্পর্ক কীভাবে বাঁচাতে পারিস তুই।”

ধ্রুব তীর্থের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়, “তুই আমার বন্ধু হয়ে এমনটা বলতে পারিস না।”
“আর তুই আমার বন্ধু হয়ে আমার সংসার ভাঙতে গিয়েছিলি তার কি?”
“আমি যাস্ট তোকে…..” ধ্রুব কথাটা বলতে যেয়েও থেমে গেল। বিরক্ত নিয়ে তাকাল তীর্থের দিকে। তাহিরার দূরত্ব তাদের থেকে বেশি, এমন সময় সে তীর্থকে বুঝাতে বসতে পারে না। তাই সে বলল, “তুই যদি তাহিরাকে কিছু বলিস তাহলে আমিও কবিতাকে জানিয়ে দিব যে মৃণা একরাত তোর রুমে কাটিয়েছে।”
কথাটা শুনে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তীর্থের মাথায়। ধ্রুব এই কথা জানলো কীভাবে?
ধ্রুব আবারও বলল, “রূপা আমাকে বলেছে মৃণা এবং তুই তোর রুমে ঢুকেছিস। সেরাতে মৃণা আর নিজের রুমে ফিরে নি। আমিও তো সাহস করে এমন কিছু করতে পারলাম না। আর তুই আমাকে হুমকি দিচ্ছিস? আমি তাহিরাকে বুঝাতে পারব যে রুপা আমার বন্ধুর মতো। তাই কথা বলি। তোর কান্ডের পর তুই কী বলবি?”
তীর্থ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় ধ্রুবর দিকে, “সেদিন তুই আমাকে জোর করে আরও বিয়ার খাইয়েছিলি তাই আমার হুঁশ ছিলো না।”
“এই কথা কবিতা বিশ্বাস করবে?” ধ্রুব তাচ্ছিল্য হাসে।

এতক্ষণে তাহিরা রুমে এসে বলে, “তোমরা দুইজন কী কুস্তি খেলছ না’কি? ঘরে এই অবস্থা কেন?”
ধ্রুব তীর্থকে ছেড়ে তাহিরার পাশে যেয়ে দাঁড়ায়, “আরে জান কোম্পানির বড় প্রজেক্টে একটা ভুল করে ফেলেছিলাম তাই তীর্থ চেতে গিয়েছিলো। তাই না তীর্থ?”
তীর্থ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে কি বলবে প্রথমে বুঝতে পারে না। কিন্তু সে ভুলেও কবিতাকে এই ব্যাপারটা জানতে দিতে পারে না তাই সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় ধ্রুবর কথায়।

তাহিরা মাথা নাড়িয়ে বলে, “দুইটাই পাগল। তোমরা বসো, আমি ঘরটা পরিষ্কার করে নেই।”
“না, তীর্থ এখন চলে যাচ্ছে। ওর কাজ আছে। এগিয়ে দিয়ে আসি। তারপর তোর সাথে টাইম স্পেন্ড করব।”
ধ্রুব তীর্থের কাঁধে হাত রেখে তাকে বাহিরে নিয়ে আসে। বাহিরে নিয়ে আসতেই তার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়। তারপর ক্রোধিত গলায় বলে, “তোর লজ্জা করে নাই আমার সাথে এমন করতে? দশ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। কলেজ, ভার্সিটি, ব্যবসা সব একসাথে করলাম আর তুই….” ধ্রুব তীর্থকে থামিয়ে বলে, “আহা, সেন্টি খাচ্ছিস কেন ভাই? আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি। আমি বুঝতে পারছি না তোর সমস্যাটা কোথায়? কী নিয়ে এত ভয় পাচ্ছিস? তোর জীবনটা একঘেমিয়ে হয়ে গেছে। সংসার এবং বিজনেস নিয়ে থেকে নিজের জীবনই ইনজয় করতে পারলি না। তোকে দেখে মাঝেমধ্যে আমারই আফসোস হয়, সারাক্ষণ মন মরা হয়ে থাকতে হয় তোর। সারাদিন অফিসে কাজ করে বাসায় যেয়েও একটু শান্তি পাস না। আমি বলছি জীবন একটু নতুনত্ব এনে দেখ, ভালো লাগতে শুরু করবে। এমন তো না যে, মৃণাকে ভালোবাসতে বলছি তোকে। যাস্ট কথা-বার্তা বলে দেখ। ভালো লাগবে। আর ভাই ভয়ের কি আছে, কবিতা সংসার এবং তোর বাচ্চাদের থেকে সময় পাইলেই না কিছু জানবে। আর জানতে পারলে কি দিবে না’কি? নিজের সংসার কোন মেয়ে ছেড়ে যায়?নিজের জন্য না ভাবলেও নিজের বাচ্চাদের জন্য তো ভাববে। তোকে ছেড়ে দিয়ে নিজের বাচ্চাদের জীবন নষ্ট করবে না’কি? এর উপর কবিতা যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই বাবার বাড়ি থেকে তো ওর সম্পর্ক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তুই ছাড়া ওর আছে কে? আর সবচেয়ে বড় কথা ও তোকে ভালোবাসে, দুই একদিন থাকলেও পরে তোর কাছে ফিরে আসবে। এই’যে আমার দ্বারা যে ভুল হলো কিন্তু তাহিরাকে আমার থেকে দূরে থাকতে পেড়েছে? না। শুধু একটু সাবধানে থাকলেই ধরা পড়বি না। ভালো উপদেশ দিচ্ছি। চেষ্টা করে দেখতে পারিস। না করলেও তোর ইচ্ছা।”
কথাগুলো একরাশ বিরক্তি নিয়ে শুনলো তীর্থ কিন্তু কিছু বলল না। রাগে হনহনিয়ে সে বেরিয়ে গেলে সেখান থেকে।

অবশ্যই এতে ধ্রুবর কিছু আসলো গেল না। সে স্বাভাবিকভাবেই বাসায় যেয়ে তাহিরা কে খুঁজতে থাকে। সারা বাড়ি খুঁজে তাকে পায় রান্নাঘরে। চুলায় কিছু করছিল তাহিরা। ধ্রুব যে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ গুঁজে বলে, “আমাকে মিস করেছিস?”
ধ্রুবর স্পর্শে কেঁপে উঠে তাহিরা, “এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে হঠাৎ করে? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো। আর চুলায় রান্না বসিয়ে তোরা বক্সিং খেলছিলি তাই না? রান্না তো জ্বলে গেল।”
“আসতে না আসতেই বকা শুরু করে দিলি, একটু আদর করে কথা বললেও তো হয়।” কেমন বাচ্চাদের মত করে বলল ধ্রুব।
তাহিরা হেসে ধ্রুবর দিকে ফিরে তাকায়। তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে, “আমাকে ছেড়ে এত ঘুরে এসে এখন আমাকে বলা হচ্ছে এসব?”
ধ্রুব তাহিরার কোমরে হাত রেখে একটানে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,”আর দশদিন পর আমাদের বিয়ে। এরপর কোথাও তোকে ছেড়ে যেতে তো বুক জ্বলবে তাই আগেই শখ মিটিয়ে নিলাম।”
“তাই না?”
“একদম। না আমি কোথাও যাব, না তোকে কোথাও যেতে দিব। শুধু বুকে জড়িয়ে ধরে রাখব তোকে। আর আদর করবো।”
মুচকি হাসে তাহিরা। লজ্জায় সে চোখ নামিয়ে নিলো। গালদুটো ভারী হয়ে এলো তার। সে লজ্জামাখা গলায় জিজ্ঞেস করে, “তাহলে আমার কাজ আর তোর কাজ কে করবে শুনি?”
“জাহান্নামে যাক সব। তুই শুধু আমার কাছে থাকলেই হবে।”
তাহিরা হেসে নিজের হাত উঁচু করে ধ্রুবর চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। বলল, “এত পাগলামি কোথায় পাস তুই?”
“তোর প্রশ্ন আসলে পাগলামি করতে মন চায়।”
তাহিরা কিছু বলে না, জড়িয়ে ধরে ধ্রুবকে। এত সুন্দর মুহূর্ত হাতছাড়া করবে না’কি ধ্রুব? সুযোগ পেয়েই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার তাহিরাকে।
.
.
তীর্থ রাতে বাসায় যেয়ে দেখে বাচ্চারা এখনও ঘুমায়নি। কবিতাকে শাড়ি পড়তে বলেছিলো সে, তাও পারিনি। তাকে দেখতেই কবিতা বাহানা দিল, “সরি ওরা ঘুমাচ্ছিলোই না। আমি ওদের ঘুম পাড়িয়ে পছন্দের একটা শাড়ি পরে আসবো।”
“প্রয়োজন নেই। আজ আর ভালো লাগছে না।”
বলেই তীর্থ চলে গেল তার রুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে দাঁড়াল একটু বারান্দায়। আজকের সকাল থেকে মৃণার কথাগুলো তার মাথায় ঘুরঘুর করছে। তার বিশ্বাস হচ্ছেনা সে একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারে। আর কবিতা কথাটা জানলে? না অসম্ভব, কবিতা এই ব্যাপারে কিছুই জানতে পারে না। কোনমতে জানতে পারেনা।

ভাবতে ভাবতেই হাতে কবিতার স্পর্শ পায় সে। কবিতা তার হাতটা আলতো করে ধরে পিঠে মাথা রাখে। আলতো সুরে জিজ্ঞেস করে, “কোন কিছুর চিন্তায় আছো?”
“এমনিতেই মাথা ব্যথা করছে।”
“সরি তোমার কথা রাখতে পারলাম না ওরা….” তীর্থ কবিতার কথা কেটে বলে, “এটা তো নতুন কিছু না। আমার জন্য তোমার সময়ই হয় না।”
পরের মুহূর্তেই সে বুঝতে পারে তার কথা বলার ধরণ টা রুক্ষ হয়ে গেছে। আবার মৃণার কথাটা তার মাথায় আসে। ভয় পেয়ে যায় সে। কবিতা আলতো করে তার যে হাত ছুঁয়েছিল সে হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরল সে। বলল, “অসুবিধা নেই একদিন ওদেরকে কারও কাছে রেখে আমরা দুজন ঘুরতে যাব ঠিক আছে?”
কবিতাকে খুশি মনে হলো। সে বলল, “আমি ভেবেছিলাম তুমি রাগ করেছ। কুহু একটু বড় হোক, তারপরেই যাব। আজ অনুর কাছে শুধু একঘন্টা রেখে গিয়েছিলাম আমার যেন জান চলে যাচ্ছিল। এবার আসো, খাবার খেয়ে নাও।”

তীর্থ কবিতার সাথে যাবার পূর্বে কবিতাকে কিছু কাপড়ের নমুনা ও ডিজাইন দিয়ে গেল। কবিতার এইসব বিষয়ে ভালো রুচি আছে। আজও তীর্থ বেশিরভাগ কবিতা থেকে পরামর্শ নিয়ে বাজারে নতুন পণ্য বের করে। কেননা, কবিতার অন্যরকম ডিজাইনের কারণেই তাদের ব্যবসার উন্নতি হয়েছে প্রথম দিকে।
তারপর সে খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ বসে টিভি দেখে কাব্যের সাথে। কুহু ঘুমিয়ে ছিলো, তার মাথায় আলতো করে চুমু খেয়ে যায় বাহিরে। দোকানে যেয়ে একটি সিগারেট ও চুইঙ্গাম নেয়। আজ বহুবছর পর সে সিগারেট খেল।
কবিতাকে ওয়াদা করার পর সিগারেট ধরেও নি।
কিন্তু আজ তার সিগারেটটা প্রয়োজন। একটি সিগারেট খেলে কিছু হয় না। চিন্তায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ তার জীবন এমন ওলট-পালট হয়ে গেল কেন সে বুঝতে পারছে না।
.
.
সকাল সকাল মৃণাকে অফিসে দেখে একটু একটু হকচকিয়ে যায় তীর্থ একটু হকচকিয়ে যায়। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। মৃণা দ্রুত এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে বলে, “আপনি গতকাল কোথায় চলে গিয়েছিলেন হঠাৎ করে? আপনি কী আমার উপর রাগ করেছেন? আমি কী আপনাকে ক্রোধিত করেছি?”
তীর্থ একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে মৃণাকে রুমে নিয়ে এসে তাকে অসহায় গলায় বলে, “না, ভুল আমারও ছিলো। এমন সিচুয়েশনে কখনো পড়তে হবে আমি কল্পনাও করি নি। দেখো মৃণা, আমি আমার পরিবারকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আমার স্ত্রী আমার জন্য কি তা তোমাকে আমি শব্দে বুঝাতে পারব না। তুমি যা চাইবে আমি দিব, কিন্তু প্লিজ এই কথা কাওকে জানিও না। আমার পরিবার, সংসার সম্মান সব নষ্ট হয়ে যাবে।”
“আমি আপনাকে কোনোভাবে কষ্ট দেবার কথা ভাবতেও পারি না। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই করব। আপনার কাছে সেরাতটা কেবল একটি ভুল হতে পারে কিন্তু আমি কি হারিয়েছি তা আপনি বুঝবেন না। একটি মেয়ের জন্য তার সম্মান কতটুকু তা আপনার কল্পনার বাহিরে।” মৃণার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করে। সে কাঁপানো গলায় বলে, “তবে আপনার কথামতো আমি সব করতে রাজি। তবে আমার কেবল একটা শর্ত আছে। প্লিজ আপনি না করবেন না। আমি কেবল যখন আপনাকে দেখতে চাইব অথবা কথা বলতে চাইব আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। আমি আপনাকে নিজের করে পেতে পারব না আমি জানি কিন্তু আপনাকে দেখেই শান্ত করতে পারব আমার মন। আমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।”

তীর্থের বেশ মায়া হলো মৃণার জন্য। তার মনে পড়ে গেল অতীতের স্মৃতি, যখন সে ভালোবেসেছিল কবিতাকে। কবিতার জন্য তার বুক ব্যাথা করতো, তাকে বারবার দেখতে ভালো লাগতো, তার কন্ঠ শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে যেত তীর্থ, সারাক্ষণ এই মন কেবল কবিতা কবিতা করতো। তার হৃদয় কেবল খুঁজতো কবিতাকে।
এই অনুভূতি সে ভালো করেই জানে।

তীর্থের ভাগ্য ভালো, সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েছে। সকলের ভাগ্য এতটা ভালো হয় না। সে জানে ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়ার পীড়ন। এই অনুভূতিতে পুড়েছে সে। কিন্তু তার ও মৃণার অবস্থা এক নয়। সে বিবাহিত। তাকে ভালোবাসলেও তাকে পাবার কোনো সুযোগ নেই মৃণার। তাই সে মৃণাকে বুঝিয়ে বলে, “এমনটা হয় না মৃণা, তুমি আমাকে যত দেখবে ততই কষ্টে ভুগবে।”
“আমি রাজি। তবুও আমাকে দূরে থাকতে বলবেন না। আপনি যা বলবেন আমি সব করব। তবুও আমাকে দূরে ঠেলে দিবেন না প্লিজ।”
অপরাধবোধ, বিরক্তি ও মায়ার দ্বিধায় ফেঁসে যায় তীর্থ। সে কি করবে বুঝতে পারে না। অবশেষে সে কোনো উওরই দেয় না মৃণাকে। যা হবে দেখা যাবে।
.
.
নয়দিন পর,
কবিতা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তাহিরার দিকে। বধূবেশে তাকে অপ্সরীদের থেকে কম লাগছে না। আজ তাহিরা ও ধ্রুবর বিয়ে। একটিমাত্র অনুষ্ঠান হচ্ছে তাদের। কবিতার ইচ্ছা ছিল যেহেতু তার বিয়েতে কোন অনুষ্ঠান হয়নি, তাই তোর বোনের বিয়েতে সব শখ মিটাবে সে। কিন্তু তাহিরা নাছরবান্দা। সবার বলার পরও সে একটির বেশি অনুষ্ঠানে রাজি হয় নি।

তাহিরা ও অনু পার্লার থেকে সেন্টারে এসেছিলো। কবিতা খবর পেতেই দৌড়ে আসে। এসে তাহিরাকে দেখেই সে লাফিয়ে উঁচু কন্ঠে বলে উঠে, “আপু ধ্রুব ভাইয়া তো পাগল হয়ে যাবে তোমাকে দেখে। এত সুন্দর লাগছে কেন তোমাকে?”
তাহিরা ফিক করে হেসে দেয় কবিতার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে। পরের মুহূর্তেই বিয়ের আয়োজন দেখে তার ফুরফুরে মনটা ঢেকে যায় কালো মেঘেতে। তার বিশেষ কোনো আয়োজন করার মোটেও ইচ্ছা ছিল না। তার দাদী বলতো, তাহিরার মা বাবা অনেক স্বপ্ন দেখতো তার বিয়ে নিয়ে। বিশেষ করে তার মা। হাজারো চিন্তা করে রেখেছিলো তাহিরার বিয়ে নিয়ে। অনেক কিছু বানানোর চিন্তা ছিলো তাদের। আর আজ তারা কেউ-ই নেই তার সাথে। তাদের স্বপ্নগুলো অসমাপ্ত থেকে। আজ তাদের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। বউ সেজেছে আজ তাহিরা অথচ তার পাশে নেই তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো মানুষ। তার মা-বাবা। এত মানুষের মাঝেও তার একাকী অনুভব হচ্ছে। খুব কান্না আসছে তার। কিন্তু সে সকলের সামনে এভাবে কান্নায় ভেঙে পড়তে চায় না। আজ তার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন হবার কথা তবে এত কষ্ট অনুভব হচ্ছে কেন তার?

তাহিরার পলকে এসে জমলো জল। চারপাশের আনন্দময় হৈ-হুল্লোড় শুনে তার মনে হলো দম বন্ধ হয়ে আসবে তার এই মহলে। এমন সময় তার হাতে কারও হাতের স্পর্শ পেল সে।

ধ্রুব তাহিরার পিছনে এসে দাঁড়ায়। তাহিরাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তাহিরার আঁখিতে আঁখি মিলালো। দুইহাত তাহিরার গালে রেখে বলে, “তোর এবং আমার দুইজনের মা বাবা আমাদের দূর থেকে দেখছে। তারা তোকে এত সুন্দর দিনে কাঁদতে দেখলে খুশি হবে না’কি? এত সুন্দর বউয়ের চোখে জল মানায় না’কি? আমার বউয়ের চোখের জল আমি সহ্য করতে পারি না, কথাটা জানিস না?”
তাহিরার কান্না আরও বাড়ে। সে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করে এইবার। ঝাপিয়ে পড়ে ধ্রুবর বুকেতে। এই বুকের ভেতর এই পৃথিবীর সকল শান্তি সে খুঁজে পায়। একই সাথে সুখ এবং কষ্টের অনুভূতি হলো তাহিরার। আজ তার মা বাবার জন্য যেমন তীব্র কষ্ট হচ্ছে তার, তেমন ধ্রুবকে পাওয়ার সুখও হচ্ছে তার। আজ সে সম্পূর্ণভাবে ধ্রুবর হতে যাচ্ছে এবং ধ্রুব তার। ধ্রুবর উপর অনুভূতির অধিকার তো তার আগের থেকেই ছিলো। আজ আইনগত এবং ধর্মগত ভাবেও সে সকল অধিকার পাবে। আজকের পর থেকে সে বলতে পারবে, তার এমন কেউ আছে যে সম্পূর্ণভাবে তার। কেবল তার।

চলবে….

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here