মুহূর্তে পর্ব-৩৪

0
601

#মুহূর্তে
পর্ব-৩৪
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“আমার তোমার থেকে বেশি নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে। এই ভেবে যে আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।”

তীর্থ অস্থির হয়ে বলল, “আমার সত্যি ভুল হয়ে গেছে কবিতা। আমি ইচ্ছা করে কিছু করি নি। আমি সাজেকে গিয়েছিলাম মনে আছে? ধ্রুব জোর করে নেশা করালো আমায়। সেদিন ভুলে…ভুলে আমি মৃণার সাথে…”
কথাটা সেখানেই থামিয়ে দেয় কবিতা, “সিরিয়াসলি আমাকে এতটা বোকা মনে হয় তোমার? তুমি সাজেক গেছো প্রায় দুইবছর হবে। তুমি আমাকে বলতে চাইছো তোমার দুই বছর আগে হওয়া ভুলে এখন মৃণা প্রেগন্যান্ট?”

তীর্থ আবারও কাঁপানো গলায় বলে “না… না। আমি ওটা বলতে চাইছি না। এরপর থেকে ওর জন্য খারাপ লাগতো এই ভেবে যে ওর জীবন আমি নষ্ট করে দিয়েছি। এর উপর ঘরের এত অশান্তি আমার সহ্য হচ্ছিলো না। আমার দম আটকে আসছিলো। তাই ধ্রুবর কথায় এসে পড়েছিলাম আমি। ও বলেছিলো বাহিরে অন্যমেয়ের সাথে সম্পর্ক করলে এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। বিশ্বাস করো আমি ওর কথা কানে নেই নি। তারপর আমার সিলেটে ধ্রুবর সাথে যাবার কথা ছিলো সেখানে ধ্রুব মৃণাকে পাঠিয়ে দেয় নিজের জায়গায়। আর সেখানে এক রাতে মৃণা আমার কাছে আসে….কবিতা সেরাতে ওকে অনেকটা ওকে তোমার মতো দেখাচ্ছিলো। ঠিক তোমাকে আমি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম। আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম।” তীর্থ কবিতার গালে হাত রেখে বলল, ” বিশ্বাস করো, যতবার আমি ওর কাছে গিয়েছি কেবল তোমাকেই মনে করেছি।”

কবিতার শরীর ঘিনঘিন করে উঠে। সে পিছিয়ে যায় সাথে সাথে। চিৎকার করে বলে, “আমাকে স্পর্শ করবে না খবরদার। তোমার ছোঁয়াতেও আমার ঘৃণা পায়। তুমি আমাকে মনে করে ওই মেয়ের কাছে যেতে? আর ইউ ফাকিং কিডিং মি? আমি তো মরে গিয়েছিলাম তাই না তাই তুই আমাকে মনে করে ওই মেয়ের কাছে যাইতি। এইখানে আমাকে কষ্ট দিয়ে ওর কাছ থেকে শান্তি খুঁজছিলি তুই?” রাগে, ক্ষোভে কবিতার শরীর কাঁপছিলো কবিতার। সে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তারপর বলে, “কত সুন্দর বাহানা তাই না? তুমি এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরকীয়া করেছ। সে হিসেবে তো আমার দশটা পুরুষের সাথে শোয়া উচিত ছিলো।”
“কবিতা!” চিৎকার করে উঠে তীর্থ। কথাটা যেন তার শরীরে সূঁচের মতো লাগলো।

কবিতা তিথির মুখের সামনে আঙুল তুলে কঠিন গলায় বলে, “চুপ। আমার সামনে উঁচু গলায় কথা বলার চেষ্টাও করবে না। তোমার কথাটা শুনে খারাপ লাগছে, যখন নিজে করেছিল তখন কি? আমার থেকে বেশি অশান্তিতে ছিলে তুমি? আমি তো ঘর থেকে বের হলেই অশান্তি থেকে দূরে চলে যেতে। কিন্তু আমি? আমার সারাক্ষণ এই ঘরে বন্দী হয়ে অশান্তি সহ্য করতে হতো। তারপরও তো আমার মাথায় এসব খেয়ালও আসে নি। কোন ঘরে অশান্তি হয় না? সবাই কি তোমার মত শান্তি খুঁজতে অন্য মেয়ের পিছনে চলে যায়? এটা নিয়তের বিষয়। বিশ্বাসের বিষয়। ভালোবাসার বিষয়। তোমার নিয়তে নিয়তে খোঁট ছিলো তাই তুমি ওই মেয়ের কাছে গেছ। এখনও ওর কাছেই যাও। আজ, এইখানেই আমাদের মাঝের সকল সম্পর্কের অবসান ঘটালাম আমি।”
“কবিতা তোমার মাথা এখন ঠিক নেই। রুমে যাও, আমরা পরে কথা বলব এ বিষয়ে।”
“তোমার মনে হয় এখনো কথা বলার কিছু বাকি আছে? তুমি কী করেছ তুমি বুঝতে পাড়ছো?”
“আমি জানি আমি ভুল করেছি, আমি মানছি। কিন্তু এই বলে তুমি আমাদের সম্পর্ক শেষ করতে পাড়ো না।”
“আমি এই সম্পর্ক শেষ করছি? তুমি করেছ। তুমি যেই মুহূর্তে ওই মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করেছ সেই মুহূর্তেই আমাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে তীর্থ। তখনই শেষ হয়ে গেছে। আমার অন্যপুরুষের সাথে আমার কথা বলাতেই তুমি রাগে ফেটে পড়লে। এন্ড ইউ স্লেপ্টড ইউথ হার। আর তোমার ইচ্ছা আমি সব ভুলে যাব? ভুলে যাব যে তুমি আমার বিশ্বাস কীভাবে ভেঙেছ? তুমি চাইছ আমি তোমার মতো একটা মানুষের সাথে জীবন কাটাই? তোমার মতো একটা কাপুরুষের সাথে?”

তীর্থ কর্কশ গলায় বলল, “কাটাতে হবে কবিতা, কাটাতে হবে । কারণ এছাড়া তোমার কাছে কোনো উপায় নেই। তোমার পরিবার তোমাকে আপন করে নিবে না, তোমার এমন যোগ্যতা নেই যে তুমি কাজ করে নিজের এবং আমার বাচ্চাদের সামলাবে। আর তোমার বান্ধবী কয়দিন পালবে তোমায়? শেষ পর্যন্ত তোমার আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।”

কবিতার বুক চিরে বেরিয়ে আসে আফসোসের দীর্ঘশ্বাস, “তোমার বাচ্চা বলছো? টাকা দেওয়া ছাড়া কোন দায়িত্ব পালন করেছ বাবার? আমি তোমার কাছ থেকে ওদের নিয়ে গেলেও হয়তো তারা তোমার কথা মনেও করবে না। তোমার নিজের টাকার উপর খুব অহংকার তাই না? একদিন তোমার এই অহংকারের পতন ঘটবে।” কবিতা সামনে যেয়ে দাঁড়ায় তীর্থের। চোখে চোখ রাখে। তার চোখ নম্র কিন্তু কন্ঠ দৃঢ়, “তোমার মধ্যে তোমার করণীয় আফসোস নেই। তোমার জন্য আমি সব ছেড়ে এসেছিলাম, অথচ তুমি আজ মুহূর্তে আমার ভেতরের সবটা শূন্য করে দিলে। আজ আমি তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমি তোমাকে ওয়াদা করছি তোমার ভবিষ্যতে আফসোস হবে। এই আফসোস তোমার ভেতরটা শেষ করে দিবে।”
“অভিশাপ দিচ্ছো?”
“সত্য বলছি।”
“তোমার মনে হয় তুমি আমাকে ধ্বংস করতে পারবে?”

কবিতা হাসে, “আমি কিছু করব না। আমার আল্লাহ করবে। তুমি আমাকে যত কষ্ট দিয়েছ, যত আঘাত দিয়েছ তার সব হিসাব তোমাকে দিতে হবে।” বলে কবিতা যেতে নিলেই তীর্থ বলে, “তুমি আজ যাচ্ছো। দুইদিন পর আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে তোমার।”
“তোমার মতো মানুষের সাথে থাকার চেয়ে আমি মৃত্যু স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করব।”
তীর্থ চমকে তাকায় কবিতার দিকে। কবিতা আসলেই চলে যাচ্ছে। সে একবার ফিরেও তাকাল না তার দিকে। একবারও না। শরীর কাঁপছে তীর্থের। সে তার পাশে থাকা কাঁচের টেবিলটা লাত্থি মেরে ভেঙে ফেলে।
না, কবিতা এভাবে তাকে ছেড়ে যেয়ে পারে না। যেভাবেই হোক কবিতাকে সে ফিরিয়েই আনবে।

বুকের ভেতর তীব্র জ্বালাতন করতে শুরু করে তীর্থের। ভীষণ। তার চোখে ভেসে আসে কবিতার সাথে কতগুলো স্মৃতি, তার হাসিমাখা চেহেরা। সে হঠাৎ খেয়াল করব তার চোখ ভিজে গেছে। কাঁপতে থাকে সে। সে নিজেকেই বলল, “তোমাকে আমার কাছে ফিরে আসতেই হবে। যেমন করেই হোক। তোমাকে না দেখে আমি বাঁচতে পারবো না। তুমি বুঝতে পারছো না কেন আমি কতটা ভালোবাসি তোমাকে? আমি ভুল করেছি। তাই বলে কী আমি দ্বিতীয় সুযোগ পেতে পারি না? তুমি আমার এবং তুমি আমার কাছেই থাকবে। আমাকে ভালোবেসেই তোমার জীবন কাটাতে হবে।”
.
.
আইদ বাসায় এসে দেখে মৃণা তার মা’য়ের সাথে গল্প করছে। দৃশ্যটা দেখেই তার ভ্রু কুঁচকে গেল। গত এক মাসের মৃণা তার পরিবারের সাথে ঠিকমতো কোনো কথা বলে না। হঠাৎ যখন দুইদিন ধরে মৃণাকে এত সুন্দর করে তার মায়ের সাথে গল্প করত দেখেছিল, তখন সে ভেবেছিলো হয়তো সে এতদিনে তাদের বিয়ে মেনে নিতে পেড়েছে। এই ঘরের সকলকে আপন করে নিতে চাইছে।
কত ভুল ভাবনা ছিল তার!
মৃণা তোকে বল নিজের স্বার্থের জন্য সব করেছিল। যেন কেউ তার উপর সন্দেহ না করে। প্রেগন্যান্সির খবর জানার পরই হয়তো তার এই নাটক শুরু হয়েছে। এত মিথ্যা, এত অভিনয় করতে পারে মানুষ সাধারণ জীবনে?

দীর্ঘশ্বাস ফেলল আইদ। সে মৃণাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “একটু রুমে আসো, কথা আছে।”
“এখন তোমার সাথে গল্প করছি। একটু পড়ে আসি?”
মৃণার অভিনয় দেখে গা জ্বলে উঠলো আইদের।
সে কিছু বলার পূর্বেই মা বলল, “আরে গল্প তো পরেও হতে পাড়বে। তুমি যাও, একটু সময় কাটাও একসাথে দুইজন মিলে।”
“আচ্ছা মা।”

আইদের পিছনে এলো মৃণা। রুমের দরজা বন্ধ করে আইদ একটি প্যাকেট এগিয়ে দিলো মৃণার দিকে। প্যাকেটটা দেখেই মৃণা জিজ্ঞেস করে, “এখানে কী?”
“বিয়ের দিনে তোমাকে কি উপহার দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন তৈরি না হওয়ার কারণে আজ দিচ্ছি।”
মৃণা জোরপূর্বক হেসে উপহারটি হাতে নিলো। মনে মনে ভাবলো, “স্বর্ণ, হীরা তো দেবার সামর্থ্য নেই। দিবে কোনো কমদামী একটি শাড়ি অথবা সিটি গোল্ডের হয়না।”
ভাবনাটি সে মুখে আনলো না। প্যাকেটটা খুলে দেখে একটি গয়নার বাক্স। সে অবাক হয়। বাক্সতে ছিলো একটি হীরার ছোট পেইডেন্ট এবং কানেরদুল। আর একটি ছোট নাকের ফুল। উপহার পেয়ে তার চোখেমুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠে। সে উৎসুক গলায় বলে, “এটা…এটা তো অনেক সুন্দর। অনেক বেশি। আমার উপর অনেক ভালো লাগবে।”
“তুমি আমাদের বাগদানে এটা কিনতে চেয়েছিলে। কিন্তু আংকেল আন্টি তোমাকে কিনে দিতে পারে নি বলে অনেক ঝগড়া করে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলে মনে আছে? আমি তিনবছর ধরে টাকা জমিয়ে তোমার জন্য কিনেছি।”
“সত্যি?”

মৃণা খুশিতে জড়িয়ে ধরল আইদকে। বলল, “আমি অনেক খুশি। অনেক পছন্দ হয়েছে আমার।”
আইদ তখনই বলল, “কিন্তু ভাবছি এটা এখন মা’কে দিয়ে দিব। উনি পেলে খুশি হবে তাই না? ”

মৃণা একটু চমকে উঠে। তার হাসিটি সাথে সাথে মুখ থেকে উড়ে যায়। সে আইদকে ছেড়ে মলিন মুখে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে দেওয়া উপহার তুমি তোমার মা’কে কেন দিবে?”
“একটু আগে না তুমি উনার কাছ থেকে আসতে চাইছিলে না। আমিতো ভেবেছি উনাকে দিললে তুমি আরও বেশি খুশি হবে।”
মৃণা আমতা আমতা করে বলল, “না মানে তুমি আমার জন্য উপহার এনেছিলে তো তাই বললাম আর কি।”
আইদ হাসে। মৃণার হাত থেকে উপহারটি নিয়ে আরেকটি প্যাকেট উপহার দেয়। বলে, “তোমার জন্য এখানে আরও বড় উপহার আছে।”
প্যাকেটে আগের থেকে বেশি বড় গহনার বাক্স। তা দেখে মৃণা আরও উৎসুক হয়ে যায়। সে মনে মনে ভাবল, আগের মত একটি ছোটো হীরার পেন্ডেন্ট ছিল, এটায় নিশ্চিত হীরার হার হবে।

সে খুশিমনে গয়নার বাক্সটা খুলে। বড়সড় একটা ঝটকা খায় সে। বাক্সতে তার প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট। প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট দেখেই কেঁপে উঠে সে। চমকে চোখ তুলে তাকায় আইদের দিকে।
আইদ বল, “কী হলো? ভালো লাগে নি উপহার?”
“আ…আইদ এটা… ”
“এটাও তোমার বান্ধবী রূপার তাইতো? অবশ্যই ওরই হবে। তুমি তো দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা। তুমি তো এমন কিছু করতে পারো না তাই না? তোমার হাস্পাতালের গ্যারেজেও তো মনে হয় রূপা জাদু করে তোমার রূপ ধারণ তীর্থকে জড়িয়ে ধরেছিলো। বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার? দাঁড়াও দেখাচ্ছি।”
আইদ তার ফোনটা বের করে তীর্থের আর মৃণার ছবি দেখাতেই মৃণা জলদি করে ফোনটা আইদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু পাড়লো না। আইদ ফোনটা তার পকেটে ঢুকিয়ে ক্রুদ্ধ গলায় বলে, “তোমার কী মনে হয় এই ছবি ডিলিট করলে তোমার নোংরামির প্রমাণ শেষ হয়ে যাবে?”
“দেখ আইদ তোমার সাথে এই বিয়ে…বিয়েটা আমার ইচ্ছায় হয় নি। আমি আগের থেকে তীর্থকে ভালোবাসতাম। ”

মৃণার মুখে কথাটা শুনে আইদের চোখ কুঁচকে গেল। যেন ঘিনঘিন করে উঠেছে তার সারা দেহ, “তুমি? তুমি কাউকে ভালোবেসেছ? মজা করছো তুমি আমার সাথে?”
মৃণা জোর গলায় বলল, “মজা করছি না। তোমার কী মনে হয় আমাকে জোর না করলে আমি তোমার মতো একজনকে বিয়ে করতাম? তুমি বুঝো না? কোন দিক থেকে তোমার আমার সাথে যায়?”
আইদ এবার শক্ত করে মৃণার এক বাহু ধরে শীতল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রুক্ষ গলায় জিজ্ঞেস করে, “তাহলে আমাকে বলো নি কেন তুমি? আমাকে বললে আমি তোমার সাথে বিয়ে করতাম? আমি কখনো তোমার সাথে কোনো কিছু নিয়ে জোর করি নি। আমি ভেবেছিলাম তোমার শুধু মুখ দিকে কটু কথা বের হয়, কিন্তু তোমার মন ভীষণ ভালো। তোমার আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু না, যার মন কালো তার থেকে আর কি আশা করা যায়। আর তোমার সাথে আমার যায় না’কি? তোমার মতো একটি চরিত্রহীন মেয়ের সাথে আমার যায়?”
“মুখ সামলে কথা বলবে আইদ নিজের সীমানা পাড় করলে তোমাকে আমি….”
মৃণাকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দেয় না আইদ, “কী করবে তুমি? কী করবে শুনি? আমি যদি এই মুহূর্তে এই রিপোর্ট যেয়ে সবাইকে দেখাই তাহলে তুমি কী করতে পারবে?”
কথাটা শুনে ঘাবড়ে যায় মৃণা। আসলেই তো আইদ চাইলেই সবাইকে সত্য জানাতে পারে। ভয়ে এক ঢোক গিলে। সে কাঁপানো গলায় বলে, “তুমি এমন করতে পাড়বে না।”
“একশোবার পাড়বো।”
“দেখ আইদ, আমি আগের থেকে তীর্থকে ভালোবাসতাম। মা বাবার খাতিরে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর আর তার সাথে আমার সম্পর্কও নেই। অর্থাৎ আমি তোমার সাথে কোনো ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করি নি। আমি যা করেছি নিজের মা বাবার জন্য করেছি। তাদের ভালোবাসি তাই।”
“তোমার মা-বাবার জন্য করেছ? তাদের ভালোবাসো তাই?”
“হ্যাঁ।”
“মিথ্যা কথা,” আইদের কথায় বিস্ময় নিয়ে মৃণা তাকিয়ে রয় তার দিকে। আইদ তার কথা সম্পূর্ণ করে, “যে নারীর হৃদয়ে তার সন্তানের জন্য মমতা নেই সে কখনোই অন্যকাওকে ভালোবাসতে পারে না। একটি নারীর সম্মান কোন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা পায় জানো? মাতৃত্বে
অনেকে একটি সন্তানের জন্য কত দোয়া করে, কত কাঁদে এবং অন্যদিকে তোমার এই সন্তান মারার সিদ্ধান্ত নেবার পূর্বে একটিবার বুক কাঁপে নি। আমি শুনেছি মা থেকে বেশি একটি মানুষকে কেউ ভালোবাসতে পারে না। অথচ তুমি দুইদিন হলো জানতে পাড়লে তোমার গর্ভে একটি অস্তিত্ব আছে আর তুমি তাকে মারার জন্য ছুটে পড়লে? তোমার হৃদয় আছে কি’না?
“তো কী করার ছিলো আমার? তুমি মেনে নিতে আমায় এই অবস্থায়? বলো আইদ মেনে নিতে?”

চলবে…

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here