মুহূর্তে পর্ব-৩৮

0
680

#মুহূর্তে
পর্ব-৩৮
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

কবিতার দিকে একপলক তাকাল কথন। দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললো। হলো নয়নবন্ধন। সে চোখে এক মুহূর্তের জন্য ডুবেও তুফান উঠলো কথনের বুকের মাঝারে।

কথন সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অস্থিরতা বিরাজ করল তার মাঝে। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে নিজের মনকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা জুড়িয়ে গেল সে। তারপর হেসে বলল, “আচ্ছা একটা কথা বলি রাগ করো না কেমন?”
“বলুন।”
“তুমি কিন্তু আজও তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারো। আমি জানি তুমি বলেছিলে এখন তোমার ছেলে মেয়েকে ঘিরেই তোমার স্বপ্ন। তোমার পরিবারে তোমার সবকিছু। আমার মনে আছে। কিন্তু সবার একটাই একটা আকাঙ্খা থাকে। তুমি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে কত পেসোনেট ছিলে আমি জানি। এসবে কত খুশি পেতে তুমি। ইনফ্যাক্ট এসবে কত ভালো ছিলে তুমি? জবা আপু এখনো তোমার ডিজাইন করা জামা ও শাড়ি রেখে দিয়েছে। এক জামা নষ্ট হলে সেম ডিজাইনে আবার বানায়। স্বপ্ন ও শিক্ষার জন্য কখনো বেশি দেরি হয় না কবিতা।”

কবিতার মন ভালো নেই। তার মন, মানসিকতা, মেজাজ কোনটাই না। সে এখনও নিজেকে কিভাবে সামনে রেখে এসেছে সে নিজেও জানে না। গত কাল যখন সত্যিটা জেনেছিলো সে মুহুর্তে সে ভেবেছিল সে ভেঙে পড়বে। কিন্তু এখনো সে শক্ত আছে। তবে এসব শোনার মতো ইচ্ছা তার হচ্ছে না। বিরক্ত লাগছে। ভীষণ বিরক্ত। এতক্ষণ সে সুন্দরভাবেই কথা বলেছ কথন এর সাথে। কিন্তু এখন আর ভালো লাগছে না। তাই সে রুক্ষ করে বলে ফেলল, “আজব তো আপনি একই কথা এতবার তুলছেন কেন? আমার স্বপ্ন পূরণ হোক বা না হোক তা-তে আপনার কি?”
বলে কবিতা বিরক্তি নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় জানালার দিকে।

কথন একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় কবিতার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে। তবুও সে শান্ত গলায় উওর দেয়, “কারণ আমি তোমাকে পৃথিবীর সব সুখ পেতে দেখতে চাই এবং আমি জানি তোমার পরিবার ও ভালোবাসার সাথে এতেও তোমার সুখ আছে।”

কবিতা একটুখানি চমকে উঠে। সে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকায় কথনের দিকে। চোখ বন্ধ করে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “সরি আমার এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। মাথা ঠিক ছিল না। সরি।”
কথন চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, “ওহ মাই আল্লাহ, তুমি আমাকে একসময় হার্ট অ্যাটাক দিয়ে দিবে।”
“আমি?”
“হ্যাঁ তুমি। তুমি যেভাবে বাক্যে বাক্যে সরি বলছো, আমার ফিল হচ্ছে আমি যে কবিতাকে চিনি তাকে তুমি কিডন্যাপ করে রেখে নিজে তার জায়গায় এসে পড়েছ। আমি যে কবিতাকে চিনতাম সে নিজের দোষেও আমাকে সরি বলাতো।”
“আমি তো আগের কবিতা না। মানুষ পরিবর্তন হয়। সময় মানুষকে পরিবর্তন হতে বাধ্য করে।”
কথন আড়চোখে তাকায় কবিতার দিকে, “কবিতা, তুমি সত্যি ঠিক আছো তো?”

কবিতা দেখতে পায় কথন তীর্থের বাসার দিকে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কথনকে অনুর বাসা ঠিকানা বলতে ভুলে গিয়েছিল। কিছুই বলা হয় নি কথনকে। সে ছটফট করে উঠে, “আপনি রাস্তা পাল্টান। গাড়ি ঘুরান।”
“গাড়ি ঘোরাবো? বাসায় যাবে না।”
“অনুর বাসায় যাব। বাচ্চারা ওখানে।”
“ওহ তুমি বাচ্চাদের নিয়ে আসবে? আচ্ছা আমিই নিয়ে আসব নে।”

কবিতা পড়ে যায় আরেক দ্বিধায়। কী বলবে সে কথনকে? কোন মুখে বলবে? যার জন্য সে তার কাছে বিনুতি করে, নিজের পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছিলো সে তাকে ধোঁকা দিয়েছে এই কারণে সে বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে, এই বলবে সে?
কবিতা শেষ মুহূর্তে এক বাহানা বানায়, “তীর্থ ঢাকার বাহিরে তাই ওর বাসায় যেয়ে থাকছি।”
“ওহ আচ্ছা তাই বলো। আমি এই অল্প সময়ের জন্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
কথন গাড়ি ঘুরিয়ে কবিতার কথা মতো অনুর বাসার সামনে নামিয়ে দেয় তাকে। কবিতা যেতে নিলেই গাড়ির ভেতর থেকে আরেকবার ডাক দেয়। কবিতা একটু ঝুঁকে গাড়ির জানালা দিয়ে প্রথম কে দেখে জিজ্ঞেস করে, “কিছু বলবেন?”

কথন ইতস্তত বোধ করে। তবুও বলে, “তুমি জিজ্ঞেস করছিলে না আমি এই রাস্তায় কি করছি। আসলে মা আমাকে না বলে একটি মেয়ের সাথে দেখা করাতে নিয়ে গিয়েছিলো। বিয়ের জন্য। আমি বুঝতে পারছিনা কি করবো। আমি জানি মা তার জায়গায় ভুল নয়, কিন্তু আমি মেয়েটাকে ভালবাসতে পারব কিনা তাও নিশ্চিত নয়। অন্য কাউকে মনে রেখে তাকে বিয়ে করাটা তো ওর প্রতি অন্যায় হবে তাই না?”
কথন নিজেও জানেনা সে প্রশ্নটা সবাইকে রেখে কবিতাকে কেন করল। এই আট বছরে তাদের এই দ্বিতীয় দেখা। তাই জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা কবিতাকে জিজ্ঞেস করায় তার নিজেরও অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবুও কেন জানি ওর কাছে প্রশ্নটা করা উচিত মনে হলো কথনের।

কথন ভেবেছিল কবিতা একটু অস্বস্তিকর বোধ করবে। কিন্তু এমন কিছু হলো না। সে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো, “আপনি মেয়েটার সাথে সরাসরি বলুন যে আপনি অন্যকাওকে ভালোবাসেন। এরপর মেয়েটা নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিক কি করতে চায় সে। আর বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলার পূর্বে একে অপরের সাথে কথা বলে নিবেন। বুঝে নিবেন। তা জরুরী।”
“আমি এমন-ই করব।”
“আমি গেলাম।”
কবিতা একটু সামনে এগোতেই থেমে গেল। তার নিজের ওপর হাসতে মন চাচ্ছে, সে নিজের বিয়ে টিকিয়ে রাখতে পাড়ল না আর অন্যকে বিয়ে নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে? হাস্যকর ব্যাপার। কবিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একপলক পিছনে তাকিয়ে দেখে এখনো কথন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে আছে। কবিতাকে দেখে এসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো।

বাসায় ঢুকে সোজা অনুর রুমে যায় কবিতা। যেয়ে ছেলেমেয়ের কাছে বসে। কুহু মেঝেতে বসে খেলনা দিয়ে খেলছিলো এবং কাব্য পড়ছিলো। এমন সময় বাহির থেকে শব্দ শুনতে পেল কবিতা। অনুর ভাবির কণ্ঠ, “তুই তো বলছিলি যে তোর বান্ধবীর জামাই তাকে ধোঁকা দিয়েছে বলে মেয়েটা বাসা ছেড়ে এসেছে। এইখানে তো দেখি অন্য কান্ড। আমি বারান্দা থেকে কাপড় চোপড় আনতে ছিলাম, দেখে মাইয়া বিরাট বড় একটা গাড়ি থেকে নামতেছে। সত্যি করে কো তো, এই মেয়ে অন্য জায়গা ঘুরে বেড়ায় বলে ওর জামাই ওকে ছাইড়া দিসে তাই না?”
এর পরপরই অনুর আর্তনাদ শোনা গেল, “ভাবি তুমি কবিতা কে চিনো না? তুমি ওর ব্যাপারে এসব কিভাবে বলতে পারো?”
“এখন আমি চোখে যা দেখি তাই তো কইতাছি।”
“না, তুমি ওর ব্যাপারে এসব বলতে পারো না।”
“আমার মুখ, আমি কমু। তোর কি? তুই কি করবি কইলে? এমনিতেই নিজে আমার ঘরে বসে বসে খাইতেসোস, এর উপর নিজের বান্ধবী আর বাচ্চাদেরও তুলে নিয়ে এলি। কয়দিন থাকবো ওরা এখানে?”
“ভাবি আস্তে বলো। আর ও আমার বান্ধবী যতদিন থাকুক তোমার সমস্যা কী? আমার রুমে তো থাকতেছে। আমি তোমার বাসায় ফ্রী-তে থাকতেছি না। আমিও প্রতিমাসে টাকা দেই। আর ওদের খাবারের টাকাও আমি দিব।”
“ওই টাকা গুলো এদের পিছে না উড়াইয়া আমাকে দিস। জমাইয়া রাখলে বিয়েতে কাজে লাগবো। তোর ভাইয়ের তো টাকার গাছ নেই যে ওর বিয়াতে উড়াইতে থাকবো। এমনিতেই বুইড়া হয়ে যাইতেছিস। দুই এক বছর পর টাকা ছাড়া কোনো পোলা বিয়ে করবো না।”
“আমার ও আমার বিয়ের কথা তোমাকে চিন্তা করার দরকার নেই। আর না আমার বান্ধবীর। আর খবরদার ওর সামনে কিছু বলবা না। তোমার এত অশান্তি হলে আমি ওর সাথে ঘর পাল্টে নিব।”
“হ্যাঁ তো যা, কে মানা করসে তোকে? তুই গেলে মনে হয় আমার কত আসে যায়।”
“তো গেলে কী তোমাকে আর টাকা দিব না’কি আমি? ভাইবো না আম্মাকে ফোন দিয়ে কান্দন গাইবা আর আমি হাত ভইরা ভইরা টাকা দিব। আমি গাঁধা না যে তোমার এসব কান্ড বুঝি না। তোমার বাসায় থাকি বলে কিছু বলি না। এইখান থেকে একবার গেলে আমার টাকার চেহেরাও দেখবা না তুমি।”
এর প্রতিক্রিয়ার অনুর ভাবির কোনো উওর শোনা গেল না।

কবিতার এসব শুনে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো। এমন পরিস্থিতিতে আগে সে কখনো পড়ে নি। সে কখনো ভাবে নি অনুর ভাবি তাকে নিয়ে এমন কথা বলবে। আগে আসলে কত সুন্দর ভাবে কথা বলতেছ। আর আজ একদিনেই এমন রূপ পরিবর্তন তার!

অনু রুমে ঢুকার কারণে সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। অনু সামনে বুঝতে দেওয়া যাবে না সে এমন কিছু শুনেছে। অনু ও নিজেও নাটক চালিয়ে গেল। বাহিরে এতকিছু হওয়া সত্ত্বেও সে কবিতার বুঝতে দিলো না। একগাল হেসে রুমে ঢুকলো হাসে একটি চকলেট কেক নিয়ে। তার পিছনে তার ভাতিজাও ঢুকলো। সে কবিতার সামনে কেকটি নিয়ে বসে বলল, “দেখ দেখ আমি প্রথম কিছু বানিয়েছি। দেখে বলতো কেমন হয়েছে?”
কবিতা বুঝতে পাড়লো কেকটা কেবল বানানো তার মন ভালো করার জন্য। তাই সে জোরপূর্বক হাসলো। ওড়না দিয়ে প্রথমে অনুর মুখে লাগা ময়দা পরিষ্কার করে দিলো। তারপর একচামচ কেক খেয়ে বলল, “মজা হয়েছে।”
অনু হাফ ছাড়ে, “যাক আমার দুইঘন্টার পরিশ্রম কাজে এলো। এটা বানাতে বানাতেই মনে হয় আমার পাঁচ কেজি ওজন কমে গেছে।”
কবিতা আবারো মিথ্যা হাসে অনুর কথায়।
অনু জিজ্ঞেস করে, “তাহিরা আপুকে বলেছিস?”
“বলেছে কিন্তু লাভ হয়নি।”
অনু বাচ্চাদের প্লেটে কেক ভাগ করে দিয়ে কবিতাকে নিয়ে গেল বারান্দার।
“এবার বল কি হয়েছে।”
কবিতা সবটা শুনালো অনুকে। অনু বলল, “দেখ কবিতা, এখানে তাহিরা আপুর কোন দোষ নেই।”
“কিন্তু আপুর আমার কথা তো বুঝা উচিত ছিলো। আমি তো কোনদিনও খারাপ চাইবো না।”
“হ্যাঁ, চাইবি না। তুই বলতো, প্রমাণ ছাড়া কি তুই তীর্থের উপর এত বড় আরোপ বিশ্বাস করতি? কখনো করতি না। তীর্থের হাজারো পরিবর্তন, অবহেলা, অপরাধ এতকিছুর পরও না। সেদিকে ধ্রুব তো এমন কিছু করে না, তাহলে কীভাবে সন্দেহ করবে আপু? এছাড়া তোর আট বছরের বিয়ে, অনেক লম্বা সময়। আর আপুর বলতে গেলে সম্পূর্ণ জীবন সে লোকটার সাথে কাটিয়েছি। তাকেই ভালোবেসেছে, সবচেয়ে ভালো বন্ধু মেনেছে, তাকেই পরিবার মনেছে। তার মা বাবা আগে ছিলো না। এখন দাদীও নেই। আজ তার কাছে পরিবার বলতেই কেবল ধ্রুব। তোর থেকে সব দিকে সে আপন। আর এমন তো না আপু তোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। কিন্তু তার বিশ্বাস না করাটা একদম স্বাভাবিক।”
“কিন্তু আমি তো তাকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। যেখানে আমি জানি ধ্রুব আমার বোনের জীবনের সাথে খেলা করছে।”
“আমি ছেড়ে দিতে বলছি না। বলছি, আপুর সাথে যোগাযোগ রাখ এবং প্রমাণ বের কর। আপুকে সে প্রমাণ দেখা। আর আমি তো আছি তোর সাহায্যের জন্য।”
“হুম, কিন্তু প্রমাণ জোগাড় কঠিন হবে। ধ্রুব ভাইয়া অনেক চালাক। বলার বাহিরে। উনি যেভাবে পরিস্থিতি ঘোরায়, আমি নিজেই আজ নিজের উপর সন্দেহ করছিলাম বিশ্বাস কর।”

অনুর হঠাৎ মনে পড়ল আবিরের কথা, “তুই ফোন রেখে গিয়েছিলি। আবির ভাইয়া কল করেছিলো।”
আঁতকে উঠে কবিতা, “উনাকে বলিস নি তো আমার সাথে কী হয়েছে?”
“তোর থেকে না জিজ্ঞেস করে কিভাবে বলি?”
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কবিতা, “ভালো করেছিস। ভুলেও বলা যাবে না তাকে?”
“কিন্তু তোর মনে হয় না। তোর পরিবারকে একবার জানানো উচিত।”
“না, তারা আমার সাথে যা করেছে, তা আমি ভুলবো না। আর এখন তাদের কাছে ফিরে গেলেও অনেক কথা শুনতে হবে আমার। আর আবির ভাইয়াকে জানাতে চাচ্ছি না কারণ উনি এখন সে দেশে সেটেল্ড। সত্যিটা বলে যেন ছুটে আসবে আমার কাছে। আমি চাই না আমার কারণে আবারও উনার জীবনে সমস্যা হোক।” গম্ভীরমুখে বলে কবিতা। আবার হঠাৎ তার মনে পড়ে আইদের কথা। সে অনুকে বলে, “শুন আইদ চিনিস তুই? তোদের অফিসেই। তাহিরা আপুর আন্ডারে যে কাজ করে।”
“সে তো একাউন্টটিং ডিপার্টমেন্টে আর আমি মার্কেটিং। তোর সাথে যে দুইবার কথা হয়েছিলো এতটুকুই।”
কবিতা অনুর হাত ধরে নম্র চোখে তাকায় তার দিকে, “তুই একটু ওর খবর নিস। আমার সাথে তো তাও তুই আছিস। ও কেমন আছে আমি জানিও না। আমরা দুইজনের এখন একই পথের পথিক। আমাদের জীবনসঙ্গী এভাবে আমাদের সর্বনাশ করে দিলো। ওর পরিবারে কি চলছে আমি ভাবতেও পারছি না। আমার ভয়ও হচ্ছে তীর্থ ওর সাথে বাজে কিছু না করে।”
“আচ্ছা আমি আগামীকালই খবর নিব।” অনু শক্ত করে চেপে ধরে কবিতার হাত। বলে, “তুই কেঁদে মন হাল্কা করতে পারিস।”
কবিতা হাসে, “আমি ঠিক আছি। চিন্তা করিস না।”
“ঠিক থাকা এবং ঠিক থাকার অভিনয় করায় অনেক পার্থক্য। তুই যে নিজের সাথে কত লড়াই করছিস তা দেখতে পারছি আমি। তুই আমার সামনে কাঁদতে পারিস।”
“কান্না আসছে না। তুই চিন্তা করিস না আমার।” কবিতা তার হাসিটা দীর্ঘ করলো।

মধ্য রাত। সকলে শুয়ে আছে বিছানায়। অনু একপাশে ঘুমাচ্ছে। মাঝে কুহু এবং কাব্য। অন্যপাশে কবিতা। বাহিরে চন্দ্রিমার আলোয় কবিতা অপলক তাকিয়ে ছিল তোর বাচ্চাদের দিকে। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না।কিভাবে সামলাবে সে একা তার দুটো বাচ্চাদের? কীভাবে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দিবে? কী করবে সে? কীভাবে করবে? তীর্থ কী ঠিক বলছিলো? আবার কী তীর্থের কাছেই ফিরে যেতে হবে তাকে?
অসম্ভব।

এমন একটা মানুষের সাথে সে সংসার করতে পারে না যে তার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে নি। তার মর্যাদা রাখে নি। কিন্তু সে তো তার বাচ্চাদের জন্যই বেঁচে আছে। তাদের কী?
তীর্থের কাছে ফিরে গেলে কী তার বাচ্চারা সুখে থাকবে?
এমন সংসারে কিভাবে সুখে থাকবে তারা, যেখানে মা বাবার মাঝে বিশ্বাস, সম্মান ও মর্যাদা থাকবে না। তীর্থের কাছে গেলেও হয়তো প্রতিটাদিন ঝগড়া হবে। এমন সংসারে থেকে মানসিক চাপ পড়বে না তার সন্তানদের উপর? তারা সুখে থাকবে কী করে? বুঝ হবার পর বাবার সত্য জানার পর হয়তো তার বাচ্চারা তার উপরই প্রশ্ন তুলবে। প্রশ্ন করবে, কেন তাদের মা নিজের আত্নসম্মান বেছে নেয় নি।
হয়তো…
হয়তো…
হয়তো…
হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কবিতার মাথায়। এমন এক পরিকল্পনার মাঝে তার চোখের সামনে ভেসে উঠে তীর্থের বাহুডোরে আবদ্ধ এক মেয়ের ছবি। বুকটা কেঁপে উঠলো তার চোখের কোণে দিয়ে বয়ে গেল ফোঁটা দুঃখ।
তার কান্না বাড়লো। এই নিরব মহলে সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পাড়লো না। সকলের শক্ত হবার নাটক করতে করতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বেড়ে উঠছে তার বুকের ব্যাথা। কেঁপে উঠলো তার নিশ্বাস। ওড়না দাঁতে চেপে কাঁদতে থাকলো সে। যে কেউ না শুনে। কেউ না জানে। বুকের ভেতর বন্দী থাকুক এই এই দুঃখ।

একজন স্ত্রী, নারী, প্রেমিকা দুর্বল পড়তে পারে, মা নয়।
.
.
এক সাপ্তাহ কেটে গেল। কবিতা দুটো চাকরি খুঁজতে গিয়েছিলো পায় নি। এখনো চাকরি খুঁজছে সে। এখনো থাকছে অনুর বাসায়। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই যে তার। আরেকটা চাকরি খুঁজতে আজ যাবার কথা। সেখানে আগে ইন্টারভিউ দিয়েছে সে। একটি কাপড়ের স্টোরে সেলসগার্লের কাজ। আজ ফাইনাল করার জন্য ডাকছে। কবিতা যেতে নিলেই অনুর ভাবি থামায় তাকে,
“আজ কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“ভাবি একটা কাজের ইন্টারভিউ দিতে যেতাম?”
“আজ? আজ তো ঘরে কেউ-ই নেই৷ আর আমি এখন একটু বাহিরে যাব। তুমি যদি একটু থাকতে।”
“কিন্তু ভাবি আমার ইন্টারভিউ…. ”
“এমন তো না তুমি গেলে তোমার চেহারা দেখে দিয়ে দিবে। অন্য একদিন যাও। এখন আমার বাসায় থাকো। আমার জন্য এতটুকু তো করতে পারো। আর প্লিজ আজ রান্না করে রেখো একটু। আসতে দেরি হবে আমার।”
কবিতার কিছু বলতে পাড়লো না। আধাঘন্টার মাঝে সে চলে যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই দরজায় কলিংবেল বাজে। কবিতা রান্না করছিলো। কলিংবেলের শব্দ শুনে চুলা বন্ধ করে গেল সেখানে। গাফলতি করে দরজার ছিদ্রে না দেখেই খুলে নেয় দরজাটা। চমকে উঠে সে। সাথে সাথে দরজা লাগাতে নিলেই লোকটা হাত দিয়ে দরজা ধরে নেয়। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে তীর্থ।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here