মুহূর্তে পর্ব-৪২

0
653

#মুহূর্তে
পর্ব-৪২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

কথন তার এই অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সে অশান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? কি হয়েছে আমায় বলো।”

কান্নার কারণে কবিতা কথা বলতে পারছিলো না। কথনকে দেখে সে কিছু বলতে যেয়েও পারে না। তার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথন একজন সিকিউরিটির লোককে বলে, “জলদি পানি নিয়ে আসো।”
কথন কবিতার গালের জল মুছে দেয়। তখনই তার চোখ পড়ে কবিতার গালের থাপ্পড়ের চিহ্নের। সে চমকে উঠে। কিন্তু কবিতার এ অবস্থা দেখে তাকে কোন প্রশ্ন করা উচিত মনে করে না।

তাকে পানির বোতল এনে দেবার পর সে জলদি করে পানি খাওয়ায় কবিতাকে। কথন হাত দিয়ে তার চুল ঠিক করে তার হাত ধরে বলে,”গভীর নিশ্বাস ফেলো।”
কবিতা বড় বড় নিশ্বাস ফেলে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, “কাব্য…”
“কি হয়েছে কাব্যের? ও ঠিক আছে তো?”
“ও অনেক অসুস্থ। স্যালাইন… আর ঔষধ লাগবে কিন্তু অনু আর তাহিরা ফোন ধরছে না। উনারা আমাকে তা দিচ্ছেও না। আমি বলেছি যে পরে টা..টাকা দিয়ে দিব তাও দিচ্ছে না।”

কথাটা শুনে রক্ত উঠে যায় কথনের মাথায়। সে দাঁড়িয়ে পাশের ঔষধ কাউন্টারের ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, “কি বলছে ও?”
“স্যার আমি জানতাম না উনি আপনার পরিচিত, সরি।”
“সরি? কারও অবস্থা এত খারাপ হলে তুমি টাকার জন্য তাকে ঔষধ দিবে না? পরিস্থিতি দেখে তো একটু মনুষ্যত্ব দেখাবে তাই না? তোমরা দেখি হাস্পাতালকে সেবা নামে ব্যবসা বানিয়ে রেখেছ। উনি যে যে ঔষধ বলেছে জলদি আমাকে দেও। টাকা আমি পরে দিয়ে দিব।”
“এখনো দিচ্ছি স্যার।” ছেলেটা কথনকে ঔষধের প্যাকেট দিতে বলল, “আবারও সরি স্যার।”

কবিতা কথনের পিছনে একটি মধ্যবয়স্ক নার্স দাঁড়ানো। তার কোলে কুহু। কাব্যের চিকিৎসা জন্য এখানে প্রায়ই আসার কারণে তাকে একটু চেনা হয়েছে কবিতার। কব্যের ঔষধ নিতে আসার সময় কুহুকে তার কাছে দিয়ে এসেছিলো কবিতা। সম্ভবত এই নার্সই কথনকে তার কথা বলে এনেছে। ভাগ্যিস এনেছে, নাহলে কী হতো আজ তার সাথে? ভাবতে ভাবতেই তার ফোন বাজলো। তীর্থের কল। তীর্থের কল দেখেই তার গা জ্বলে উঠে। সে সাথে সাথে কেটে দেয় তার কল।
কথন বলে, “কেবিন নং কত?”
“৩০২”
“আসো।”

কথন নিজেই কাব্যের চিকিৎসা করে। কাব্যের অবস্থাও আগের থেকে ভালো হয়। সে একটু ভালো অনুভব করতেই কবিতাকে ডাকে, “আম্মু…”
কবিতা তার পাশে দাঁড়িয়েছিলো। কাব্যের ডাক শুনে সে তো চোখ মুখ মুছে কাব্যের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “এই যে বাবা আম্মু পাশে আছি।”
কাব্য আশেপাশে চোখ বুলায়। মুখ মলিন করে জিজ্ঞেস করে, “আব্বু কি আজও আমাকে দেখতে আসবে না?”
কবিতা কি উত্তর দিবে বুঝতে পারে না। সে তীর্থকে স্বামী হিসেবে না মানলেও সে কখনো চাইনি তোর ছেলে মেয়েরা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হোক। যে কখনো তোর ছেলে মেয়েকে তীর্থের সাথে দেখা করার জন্য মানাও করতো না। কিন্তু একটু আগে তীর্থের কথা শোনার পরে কিভাবে দেখা করা সে কাব্যকে এমন এক ব্যক্তির সাথে যে তার অসুস্থতার মধ্যেও লেনদেন করার চিন্তা রাখে। সে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে, “আব্বু তো ঢাকার বাহিরে। আসলে সবার পূর্বে কাব্যের সাথে দেখা করবে।”
কবিতা আড়চোখে তাকায় কথনের দিকে। কথন তার দিকে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু কবিতাকে সে কিছু জিজ্ঞেস করল না। সে যেয়ে কথা বলতে শুরু করল কাব্যের সাথে। কথন এর মাঝে এমন একটা কিছু আছে যার কারণে কেউ-ই তার সাথে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে না। আর কাব্য তো কথনকে পেয়ে মহাখুশি। এত জ্বরের মাঝেও সে কথনের সাথে কথা বলা থামাতেই চাইছে না। কিন্তু একসময় ঔষধের কারণে সে গভীর ঘুমে চলে যায়। কুহুকেও খাবারের পর সে ঘুমের রাজ্যে চলে যায়। কথন কুহুকে নার্সের কাছে রেখ কবিতাকে নিজের সাথে নিয়ে যায় তার কেবিনে। কবিতাও কিছু বলে না। সে ভাবে কথন ঔষধের টাকার কথা অথবা তার এভাবে বাহিরে সিন ক্রিয়েট করা নিয়ে কিছু বলবে। কিন্তু কেবিনে ঢুকতেই তার প্রথম প্রশ্ন ছিলো, “কে তোমার উপর হাত তুলেছে?”
কথনের কন্ঠ দৃঢ়, শক্ত।
কবিতা হকচকিয়ে যায় এই প্রশ্নে। সে আমতা-আমতা করে বলে, “কী? কী বলছেন আপনি? আমাকে কে মারবে। ”
কথন সামনে যেয়ে দাঁড়ায় কবিতার। তার বামগালে আলতো করে আঙুল ছোঁয়ায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় কবিতার দিকে, “স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।”

কবিতা চোখ সরিয়ে নেয়। উওর দেয় না। এই ব্যাপারে রাগ উঠে যায় কথনের। সে উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কতদিন আগেও আমায় বলেছ তীর্থ ঢাকার বাহিরে গেছে, এখনো আসে নি? তার ছেলেরে অসুখেও না? এর উপর দিয়ে তোমার গালে থাপ্পড়ের দাগ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কিন্তু তুমি তা মানতে রাজি না। এমন কেন করছো তুমি? নিশ্চয়ই কোনো বড় কারণ আছে। আমার উওর লাগবে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি কবিতা।”
কথনের এই কথার আন্দাজে তার তীর্থের কথা বলার ধরণ ভেসে উঠে কানে। তার বুকে ব্যাথা হয়। মাথা ধরে যায়। এলোমেলো হয়ে যায় সে। মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার। সে কথনের হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলে, “আপনাকে কেন আমার বলতে হবে? আপনি কে হন আমার?” বলে নিজেই বেকুব হয়ে গেল। সে বুঝতে পারলো এই কথাটা তার বলাটা উচিত হয় নি।

কথনের বুকের ভেতর কামড়ে উঠে কবিতার কথায়। সত্যিই তো কে হয় সে কবিতার? কেউ না। কোনো সম্পর্ক নেই তাদের। সে এক ঢোক গিলে। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় কবিতার কথায়, “সত্যিই আমি তোমার কেউ না। আমার এই প্রশ্ন করাটাও অনুচিত।”
কবিতা প্রভাবিতভাবে বলে, “ক্ষমা করবেন। আমি ইচ্ছা করে বলি নি। আমার মাথা ঠিক ….”
কথন তার কথা সম্পূর্ণ হতে দেয় না। সে পিছনে ফিরে নিজের চেয়ারের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে, “তুমি যা বলেছ ভুল বলো নি। তাই তোমার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

কবিতা কিছুই বুঝতে পারছে না। এমন ভাবে কেন কথা বলল সে কথনের সাথে? সে নিজেও ভালোমতো জানে কথন প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে তার অনেক সাহায্য করেছে। তাই উনার সাথে এমন ভাবে কথা বলায় কবিতার নিজের উপরই রাগ উঠছে। সে লজ্জার কারণে কথনকে তার এবং তীর্থের ব্যাপারটা বলতে চাইছিলো না। কিন্তু এই মুহূর্তে তার বলাটাই উচিত মনে হলো, “আমি তীর্থকে ছেড়ে এসেছি।”

থেমে গেল কথন। নিথর হয়ে দাঁড়ালো সে। নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না। সে ফিরে তাকালো কবিতার দিকে, “কী…কী বললে তুমি?”
“যা শুনেছেন। আমি তীর্থকে ছেড়ে দিয়েছি। সত্যি বলত্র ও ঢাকাতেই আছে।”
“কিন্তু কেন?”
উত্তর দেওয়ার পূর্বে কিছুক্ষণ সময় নিলো কবিতা। কাঁপানো গলায় বলল, “ও অন্য একটা মেয়ের সাথে…” এতটুকুতেই দম বন্ধ হয়ে এলো তার। সে গভীর নিঃশ্বাস ফেলে, “তার অন্য এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো।”
“হোয়াট? ওয়েট, তোমাদের লাভ ম্যারেজ। তোমাকে ভালবাসতো তাই না?”
“হয়তো। এখনো তো বলো ভালোবাসে। ভালোবাসলে মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দিতে ভালোবাসে একথা তো আমার জানা ছিলো না। সত্যি বলতে, এখন আমার সন্দেহ হয় সে কি কখনো আমাকে ভালবেসেছিলো? হয়তো বেসেছিলো। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা শেষ হয় কি’না আমি জানি না।”
কবিতার চোখ নম্র হয়ে এলো। সে বহু কষ্টে নিজের চোখের জল আটকাচ্ছে।

কথন কিছু সময় নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। তারপর এগিয়ে রলো কবিতার কাছে। কবিতা সামনে দাঁড়িয়ে আলতো করে ছুঁল তার গাল। বুক কেঁপে উঠল তার। সে প্রশ্ন করল, “এটাও কি সে করেছে?”
কবিতা একপলক চোখ তুলে তাকায় কথনের দিকে। মাথা নাড়ায়।

কথনের মাথায় ছিলো রক্ত ঝরে যায়। সে গর্জে উঠে, “ও তোমাকে হার্ট করলো কোন সাহসে? আমি ওকে ছাড়ব না। খুন করে ফেলব ওর।”
কবিতা চমকে উঠে কথনের এমন বাক্যে। কথনের এই প্রতিক্রিয়া সে আশা করেনি।
কথনকে এভাবে ক্রোধে কক্ষ থেকে বের হতে দেখে ঘাবড়ে যায় কবিতা । ছুটে যেয়ে কথনকে আটকায়, “কি করার চিন্তা করছেন আপনি?”
“ওই লোকের সাহস কী করে হলো তোমাকে কষ্ট দেওয়ার? আমি ওকে ছাড়বো না।”
কথন দরজা খুলতে যাওয়ার পূর্বে কবিতা যেয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। কথন দরজার লকে হাত রেখে কঠিন গলায় বলে, “কবিতা সরো এখান থেকে।”
“আপনি প্লিজ শান্ত হন। এখানে আপনার এমন ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই।”

কথন ঝুঁকে কবিতার মুখোমুখি হয়। কথন তার চোখে চোখ রেখে বলে, “আমার এমন ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই? ওর কারণে তুমি কষ্ট পেয়েছে, ও তোমার উপর হাত তুলেছে, আমি নিশ্চিত আজ ওর কারণে তুমি এভাবে কাঁদছিলে। আমি ভাবতেও পারছি না তুমি তাহলে সে ধোঁকার পর কত কেঁদেছ। তোমার প্রতিটি অশ্রুর হিসাব ওকে দিতে হবে। আমি ওর উপর ভরসা করে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম, নাহলে আমি কখনো….” এতটুকু বলেই থেমে গেল কথন। সামনে বলাটা উচিত মনে হলো না তার। সে রাগে গভীর নিশ্বাস ফেলতে থাকে। ঠোঁট কাঁপতে থাকে তার।

কবিতা একটুখানি কেঁপে উঠে কথনের শীতল দৃষ্টির দর্শনে। সাথে অস্বস্তিও লাগে তার কথনের এমন কাছে থাকায়। এমন না যে কথন তাকে কোনো খারাপ নজরে দেখছে, তবুও বিয়ের এত বছরে তীর্থ ছাড়া কোনো পুরুষের স্পর্শও সে লাগতে দেয় নি। এত কাছে আসা তো দূরের কথা। চোখ নামিয়ে কাঁচুমাচু হয়ে মৃদুস্বরে বলে, “আপনি শান্ত হন। আপনার কিছু করতে হবে না। উনাকে যে শাস্তি দেবার তা আল্লাহ দিবে। উনি আমার সাথে যা করেছে তার পরিণতি উনি পাবেই।”
“তুমি সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে বলছো?” কথন গর্জে উঠে। কবিতার কাঁধের পাশে জোরে এক ঘুষি মেরে আবারও বলে, “ওর সাহস কী করে হয়েছে তোমাকে কান্না করানোর? তোমার বিশ্বাস ভাঙার? তোমাকে কষ্ট দেওয়ার?”
কথাগুলো বলার সময় কথনের গলা কেঁপে উঠে। অবাক হয় কবিতা। কিন্তু ব্যাপারটাকে শুধু কল্পনায় ভেবে নেয় সে। সে চোখ তুলে তাকে কথনের দিকে, “আমি নিজেকে প্রমাণ করে দেখাব। আমার সাফল্য ওর পরাজয় হবে এবং আমাকে না পাওয়া ওর শাস্তি। কিন্তু আমি চাইনা আপনি আমার জন্য কিছু করেন।”

কথন কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কবিতা দিকে। সরে গেল তার কাছ থেকে। সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করল,
“তালাক নিয়েছ?”
তালাকের কথা শুনে কেমন কেঁপে উঠে কবিতা। সে জানে তার এবং তীর্থের মাঝে এখন আর কোনো কিছু সঠিক হওয়া সম্ভব নয়। তবুও তালাক অনেক বড় একটি শব্দ। ইহকালের জন্য যাকে আপন মেনে নিয়েছিলো তাকে ছেড়ে দেওয়াটা কষ্টকর। এমন না যে কবিতা এ ব্যাপারে আগে চিন্তা করেনি। করেছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস হয়নি তার।

কথন কবিতা দ্বিধায় স্পষ্ট তার মুখের দেখতে পারছিলো। সে তার উত্তর পেল। কবিতা এখনো তীর্থকে দেয় নি। সে শান্ত গলায় বলল, “যে সম্পর্ক নেই সে সম্পর্কের নাম রাখার মানে হয় না কবিতা। এই সম্পর্ক না ভাঙলে, সম্পর্কটা তোমার কাছে দায় হয়ে থেকে যাবে সারাজীবন।”
.
.
“জানো আমি যাকে প্রথম ভালোবেসেছিলাম সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম আমি। আমার হুঁশ ছিল না কি করছিলাম। না ঠিকমতো খেতাম, না পড়াশোনা করতাম। জীবনটা কেমন যেন শূন্য হয়ে গেছিলো। তার কাছে বারবার ফিরে যাওয়ার দোহাই চেয়েছিলাম আমি।” কথাগুলো বলতে বলতে রুপার দম বন্ধ হয়ে আসলো। কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে আবারো বলল, “সে আমায় ফিরিয়ে নেয় নি। আর আমার উপর ইন্টারেস্ট শেষ হয়ে গিয়েছিলো। অন্যমেয়ের উপর তার ভালবাসার বর্ষণ হচ্ছিল। এরপর আমি ভাবলাম, ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। যদি ভালোবাসা ছাড়াই সম্পর্ক করা যায় তাহলে অযথা নিজেকে এই কষ্ট দেবার মানে হয় না। এরপর বিভিন্ন ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি আমি। একসাথে অনেকগুলো ছেলের সাথে কথা বলতাম, টাইমপাস করতাম। যাদের ভালো লাগতো তাদের সাথে কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তও কাটাতাম। ভালোই ছিলো দিনগুলো। না কোন দুঃখ, আর না কোন দুঃখে মেশানো অনুভূতি। তারপর আমার জীবনে তুষার এলো। সে কেবল আমার বন্ধু ছিলো। সে কখনো আমার উপর লাইন মারার চেষ্টা করে নি। এই কারণের ওপর মন দিয়ে দিলাম আমি। কিন্তু কখনো বলি নি। সে সবসময়ই ছিলো নিখাদ চরিত্রের। কখনো কোন মেয়ের দিকে খারাপ নজরে তাকাতে দেখে নি আমি ওকে। আর আমি বিপরীত। ছয় বছরের বন্ধুত্ব কাটে আমাদের। আমাদের গ্রাজুয়েশনের দিন ও আমাকে সোজা বিয়ের দিনের জন্যও প্রপোজ করে বসে। এমন না যে আমার চরিত্রের সম্পর্কে অবগত ছিলো না। ভার্সিটির সকালেই জানতো। আর ও তো সব গভীরভাবে জানতো। সেদিন আমার কাছে একটাই ওয়াদা চেয়েছিল, আমি এসব খারাপ কাজ বন্ধ করে কেবল তার হয়ে থাকব। আশ্চর্যজনক ব্যাপার জানো কী? ও না এর পরও আমাকে কখনো সন্দেহ করে নি। আমার অতীত জানা সত্ত্বেও।”

তাচ্ছিল্য হাসে ধ্রুব। তার নিরাভরণ দেহে হাত বুলিয়ে গালে চুমু খেয়ে বলল, “অথচ এই’যে তুমি আমার সাথে।”
“কি করবো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। অনেক ছাড়ার চেষ্টা করেছে পারি নি। আর আজই তো শেষ দিন, এই শুক্রবার আমার বিয়ে। এই আমাদের শেষ দেখা।”
“আমাকে ভুলে যাবে না কিন্তু।”
“তোমাকে ভুলে যাব? তোমার মত মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। তোমাকে ভুলে যাওয়া তো অসম্ভব।”
ধ্রুব আবার ডুব দেয় রূপার মাঝে। বলে, “যখনই প্রয়োজন হবে একবার মনে করবে আমি হাজির হয়ে যাব।”
কলিংবেল বাজলো এরমধ্যেই। ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলল, “এইসময় কে আসতে পারে?”
“খাবার অর্ডার দিয়েছিলে না? হয়তো তাই এসেছে।”
একটি হোটেলে ছিলো রূপা ও ধ্রুব। সেখানে বিশেষ কিছু মুহূর্ত কাটাচ্ছিলো দু’জন। কিন্তু কলিংবেল শুনে না চাওয়া সত্ত্বেও উঠতে হলো তার। পোশাক পরতে পরতে দরজা খুলে সে। দরজা খুলেই স্থির হয়ে যায় সে।অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তারা সামনে দাঁড়ানো তাহিরার দিকে।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here