#মুহূর্তে
পর্ব-৪৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
তীর্থ আবারও তার কানের কাছে মুখ এনে রাগান্বিত স্বরে বলে, “তাহলে কার স্পর্শ ভালো লাগে? সে কথনের? যার সাথে আমাকে ছেড়ে যাবার পরদিন ঘুরে বেড়াচ্ছিলে?”
“আমায় ছাড়ও তীর্থ, ব্যথা লাগছে।” কবিতা গোঙ্গানি দিয়ে উঠে।
তীর্থ কবিতার চুলে নাক ডুবিয়ে বলে, “তুমি আমাকে যত কষ্ট দিয়েছ তার কিছুটা নিজেও অনুভব করো। তোমার জন্য আমি পাগল হয়ে গেছি। আমার সব ছেড়ে তোমাকে মানানোর পিছনে পড়ে আছি। কিন্তু তুমি… তুমি আমার নাকের নিচে অন্য পুরুষের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে? আর আমায় বলছ আমার স্পর্শে ঘৃণা লাগে তোমার? চিন্তা করো, যখন আমি যখন জানলাম যার জন্য আমি আমার সব ছেড়ে পাওয়ার চেষ্টা করছি সে অন্য পুরুষের সাথে ঘুরে বেড়ায় তখন কেমন লাগে আমার?”
“আমাকে নিজের মতো করে ভেবেছ? আমি তো…তোমার মতো চরিত্রহীন নয়।”
তীর্থ কিছুটা ছাড় দিতেই কবিতা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। সে ফিরে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। পেটের পুড়ে যাওয়া অংশে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নেয় মেঝেতে বসে পড়ে। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে সে।
তীর্থ কবিতার সামনে বসে তার মুখে হাত রেখে বলে, “জান তোমার বেশি লেগেছে? তুমি আমার রাগ উঠালে কেন বলোতো? তুমি জানো তোমাকে আমি অন্যকোনো পুরুষের সাথে সহ্য করতে পারি না। বিশেষ করে ওই কথনের সাথে তো একদমই না। আই লাভ ইউ জান।”
তীর্থ চোখে এসে কবিতাকে চুমু খেতে নিলেও কবিতা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। বলে, “খবরদার আমার কাছে আসবে না। তোমার লজ্জা লাগে না নিজের করণীয়র পরেও আমার সামনে ভালোবাসার কথা বলতে? আমি ভেবেছিলাম তুমি অনুতাপ করবে আমায় হারিয়ে। শুধরে যাবে। আমি তোমাকে ক্ষমা না করতে পারলেও তোমার জন্য হৃদয়ের এককোণে ভালোবাসা রেখে জীবন কাটিয়ে দিব। কিন্তু তুমি তো দিন দিন হিংস্র প্রাণী হয়ে যাচ্ছ। তোমাকে আমি ভালবেসেছিলাম ভেবে আমার নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে।”
তীর্থ কবিতার গাল চেপে ধরে। তাকে টেনে উঠায়। ক্রুদ্ধ গলায় বলে, “কেন তুই না চেয়েছিলি আমি ধ্বংস হয়ে যাই? আমি ধ্বংস হচ্ছি তোর ভালোবাসায়। শেষ হয়ে যাচ্ছি। এখন তো খুশি হওয়া উচিত তোর।”
“এখন তুমি নেশায় আছো। কি বলছো নিজেও জানো না। নেশা কাটলে কথা হবে। এমনিতেও আমি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাই।”
কবিতা সেখান থেকে যেতে নিলেই তীর্থ আবার তাকে ধরে নেয়। নেশাগ্রস্ত কন্ঠে বলে, “তুমি কখনো আমার থেকে মুক্তি পাবে না। তুমি আমার সাথে কেন এমন করছ কবিতা? আমি ভুল করেছি। ঠিকাছে করেছি। কিন্তু সে ভুলের কারণ তো তুমিও ছিলে। তুমি আমাকে খুশি রাখতে পারলে কেন বাইরে যে খুশি খুঁজতাম?”
কবিতা তীর্থের সাথে কথা বলায় রুচিতে বাঁধলো না। এই মুহূর্তে সে নেশায়। তাকে কিছু বলা, না বলা এক কথা। যেতে না কিন্তু পারে না। তীর্থ তার সাথে জোর করতে শুরু করে দেয়। কবিতা বলে, “তীর্থ ছাড়ও আমায়, করছটা কি তুমি?”
“আদর করছি। ভালোবাসছি। এমনতো নয় আগে করিনি।”
“আমার এসব সহ্য হচ্ছে না তীর্থ, ছাড়ও। আমরা আগের মতো নেই। আমাদের সম্পর্ক আগের মতো নেই। তুই আমার সাথে জোর জবরদস্তি করতে পারো না। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন করে আমার রেপ করবে তুমি।”
তীর্থ কথাটা শুনে তাকায় কবিতার দিকে। শব্দ করে হাসে, “জান আমি তোমার স্বামী। আর তোমার সাথে কিছু করলে তা আমার ভালোবাসা হবে, রেপ না।”
“তুমি আমার সাথে জানোয়ারের মতন ব্যবহার করছ আমার সাথে।”
তীর্থ তাকে ছাড়ে না। আরও শক্ত করে ধরে। কবিতার অনিচ্ছায় তার দেহের নানান স্থানে ছুঁতে থাকে তাকে। তাকে আঘাতও করে। জ্বলন্ত সিগারেট তার হাতে ও ঘাড়ে লাগায়। এই তীর্থকে তো কবিতা জানে না। কখনো তীর্থের এই রুপের সাথে তার পরিচয় হয় নি। তীর্থ তার সাথে হাজারো দুর্ব্যবহার করুক, কখনো এমন অমানুষের মতো ব্যবহার করে নি।
কবিতা তাকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে। শক্তির সাথে পেরে উঠে না। কথা দিয়েও বুঝে না তীর্থ। তারপর দিশেহারা হয়ে কবিতা তার পাশের টেবিল থেকে একটি কাঠের বাক্স উঠিয়ে তার মাথায় মারে। সাথে সাথে তীর্থ তাকে ছেড়ে পিছিয়ে যায়। তার মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সে মাথায় হাত দিয়ে পিছিয়ে যায়।
রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায় কবিতা। আবার একটু আগের তীর্থের ব্যবহারের কথা মনে করে তার কাছে যেতেই ভয় করছে কবিতার। কিন্তু সে তীর্থকে এই অবস্থাতেও ফেলে যেতে পারে না।
কবিতা আলমারি থেকে একটি কাপড় বের করে তীর্থের মাথায় চেপে ধরে, “তুমি কাপড় মাথায় চেপে ধরো, আমি কারও সাহায্য নিয়ে আসছি। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।”
তীর্থ কবিতার হাতের উপর হাত রাখে। আধবোজা চোখে তাকিয়ে অদ্ভুত হেসে বলে, “দেখলে তুমি আমাকে ঘৃণা করতে পারো না। এই’যে… এই’যে দেখ আমার ব্যাথা দেখে সহ্য হলো না তোমার। তুমি ছুটে এলে আমার কাছে।”
কবিতা বিরক্ত নিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। সে উঠে মেঝের থেকে নিজের ওড়না উঠিয়ে বাহিরের দিকে যায়। দরজা খুলে নিচে নামার পূর্বেই লিফট থেকে বের হয় রহমত এবং কাব্য।
কবিতা তাদের দেখে দৌড়ে যায়। রহমতকে বলে, “ভাই…ভাই ওই তীর্থ…”
কথা শেষ হবার পূর্বেই রহমত তার এই অবস্থা দেখ ঘাবড়ে যায়, “আপা আপনার কি হইসে? এই অবস্থা কেন আপনের?”
“আমার কথা বাদ দিন। ওই ভেতরে তীর্থের মাথা দিয়ে রক্ত পরছে। ওকে হাস্পাতালে নেওয়া লাগবে।”
রহমত দৌড়ে যায় সেদিকে। কবিতা যেতে নিলেই কাব্য তার হাত ধরে নেয়। হাতের পোড়া স্থানে আলতো করে ছুঁয়ে ভেজা চোখে তাকায় কবিতার দিকে। ঠোঁট উলটে জিজ্ঞেস করে, “আম্মু তোমায় কে ব্যাথা দিয়েছে?”
কবিতা তার চোখ মুছে জোর করে হাসার চেষ্টা করে, “কেউ না সোনা। আম্মু হাঁটতে যেয়ে পড়ে গিয়েছিল, ব্যাথা পায় নি। কাঁদে না ঠিকাছে।”
কবিতা কাব্যকে সামলানোর পর ওড়না জড়িয়ে নিয়ে নিজের শরীর ঢেকে নিলো। এরপর রহমতের সাথে তীর্থকে হাস্পাতালে নিয়ে গেছে। তিনটা সেলাই পড়েছে তীর্থের ক্ষত স্থানে। তীর্থকে রুম বের করার পূর্বেই কবিতা কাব্যকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
.
.
মৃণার শরীর আজকাল খুব খারাপ লাগছে। দুপুরে তো তার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তাই আইদের মা তাকে অফিস থেকে কল করে ডাকে, ডাক্তারের কাছে নেওয়ার জন্য। আইদের মন এমনিতেই ভালো ছিলো না। তাহিরা আপু না’কি অফিস ছেড়ে চলে গেছে। তাকে বলেও নি। তাহিরা খুব কাছের ছিলো আইদের। তার বড় বোনের মতো। সবসময় তাকে আদর করতো, তাকে সাহায্য করতো, সঠিক উপদেশ দিতো। যেদিন থেকে আইদ অফিস জয়েন করেছিল সেদিন থেকেই তাহিরাকে অনুসরণ করতো সে। আজ হঠাৎ করে তার কাজ ছেড়ে যাওয়াটা সে মেনে নিতে পারছিলো না।
ডাক্তারের কাছে যেয়ে জানা যায় প্রেগ্ন্যাসির কারণেই তার একটু খারাপ লাগছে। এছাড়া কোনো সমস্যা তার নেই। আইদ হাস্পাতাল থেকে বের হয়ে কিছুই বলে না মৃণাকে। যেহেতু সে গর্ভবতী সেহেতু একটু খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু মৃণা এই চুপিকে তার প্রতি চিন্তা ভেবে নেয়। সে বলে, “তুমি রাগ করো নি তো যে আমার জন্য অকারণে তোমার টাকা নষ্ট হয়েছে?”
“না।”
“আচ্ছা শুনো, আই এম সরি বাবার মৃত্যুর পর আমার মাথা ঠিক ছিলো না। তাই তোমাকে অকারণে দোষ দিয়েছি।”
কোনো উওর দেয় না আইদ। একথা সে আগেও বলেছে। মৃণা আবারও বলে, “আচ্ছা চলো না কোথাও যেয়ে আস্ক্রিম খাই, আমার খুব ক্রেভিং হচ্ছে।”
আইদ কিছু বলে না। পাশের দোকান থেকে দুইটা আইস্ক্রিম কিনে এনে মৃণার হাতে দেয়। সাথে কিছু টাকাও দেয়। বলে, “তুমি রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে যাও।”
মুখ মলিন হয়ে যায় মৃণার, “আমি বলছিলাম আমরা কোথাও যেয়ে বসে একসাথে আইস্ক্রিম খাব। আর আমি চলে যাব মানে? তুমি আসবে না?”
“আমার অফিস আছে। আমি তোমাকে রিকশা ঠিক করে দিচ্ছি।”
আইদ এগিয়ে যেতে নিলে মৃণা তাকে থামিয়ে বলে, “ছুটি তো নিয়েই নিয়েছ। ফুল ডে এর ছুটি নিয়ে নিতে পারো। আমরা একটু ঘুরে আসি।”
আইদ ঝাড়ন দিয়ে মৃণার হাত সরিয়ে দিয়ে রুক্ষ গলায় বলে, “তোমার সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করছি না বলে এমনও না যে আমি তোমাকে আমার জীবনে ফিরে চাই। তুমি কি করেছ মাথায় রাখো। আর নিলজ্জের মতো আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে না যেন ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারো না। তোমার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমার ধারণা আছে।”
মৃণার মেজাজ বিগড়ে যেতে সময় লাগে না। সে আশেপাশে মানুষের কথা চিন্তা না করেই উচ্চস্বরে বলে উঠে, “আমি যখন আগে তোমার সাথে রুক্ষভাবে কথা বলতাম তখন ঠিকই আমার আগেপিছে ঘুরে মধু মিশিয়ে কথা বলতে। আর এখন আমি যখন তোমার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলছি, সব ঠিক করতে চাইছি তখন তুমি আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করছ?”
আশেপাশের লোকেরা তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। লজ্জায় পড়ে আইদ। সে চোখ রাঙিয়ে মৃণাকে বলে, “মৃণা সবাই শুনছে।”
“শুনুক তাহলে। তুমি আমার সাথে এভাবে ওই মেয়ের জন্য কথা বলছ তাই না? ফোনে যে মেয়েটা ছিলো তাই না? ওই মেয়ে কী তোমার অফিসে কাজ করে? এক মিনিট, এটা কী কবিতার ফ্রেন্ড? যে তোমার সাথে ছাদে ছিলো? ওই মেয়ে তোমাকে দিয়ে এমন করাচ্ছে তাই না?”
“চুপ, একদম চুপ।” আইদ মৃণার মুখের সামনে আঙুল তুলে বলে, “খবরদার এরপর একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের করবে না। তুমি যা করেছ তারপরও এমন প্রশ্ন করার সাহস কোথাও পাও তুমি? তুমি আমার কেউ না। তোমাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি বলে আমার উপর নিজের অধিকার দেখানোর চেষ্টা করবে না। ইউ নো হোয়াট, অনেক হয়েছে। আমি আন্টির কথা ভেবে তোমাকে ঘরে রেখেছিলাম। আর না। আমি আজই বাসায় যেয়ে তোমার কথা সবাইকে বলে দিব। এরপর তুমি কোথায় যাবে তা চিন্তা করে নিও।”
আইদ এই বলেই সেখান থেকে চলে গেল। মৃণা পিছন থেকে তাকে ডাকল, চেঁচামেচি করল, সেদিকে ধ্যান দিলো না সে।
আইদ কাজ শেষে সোজা বাসায় যায়। আজ সব নাটক শেষ করবে সে। সে আর পারছে না। আর সহ্য হচ্ছে না তার। তার এখন অনুভূতি হচ্ছে, সে ভালোবাসতো মৃণাকে। অনেক আগের থেকেই হয়তো ভালোবাসতো। এতবছর সে এই অনুভূতি বুঝে নি। আজ যখন বুঝছে তখন এই অনুভূতির প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। সে চাইলেই তার ভালোবাসার মানুষকে কাছে রাখতে পারে। কিন্তু এতে তার কষ্ট মিটবে না, উলটো বাড়বে। যখনই সে মৃণাকে নিজের চোখের সামনে দেখবে তখনই তার বিশ্বাসঘাতকতা মনে পড়বে তার। এতে সে দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। সবার জন্য ভালোবাসা সুখের হয়না, কিছুজনের জন্য ভালোবাসার অপর নাম দুঃখ।
আইদ রাতে বাসায় যেয়ে দেখে ড্রইংরুমে সবাই সমাবেশ বেঁধেছে। টেবিলে মিষ্টির প্যাকেট। তাকে দেখেই তার মা এসে জড়িয়ে ধরলেন। ছেড়ে গালে হাত রেখে বললেন, “মৃণা তোকে খবরটা দিয়েছে?”
রুমের এককোণে দাঁড়িয়ে ছিলো মৃণা। আইদ কপাল কুঁচকে তাকাল মৃণার দিকে। তারপর মা’কে জিজ্ঞেস করল, “কী খবর?”
মা উড়ু উড়ু গলায় বলল, “মৃণা প্রেগন্যান্ট। তুই বাবা হতে চলেছিস এবং আমি দাদী।”
আইদ এক ঢোক গিলে। সে চিন্তিত গলায় বলে, “মা সম্ভবত তোমার ভুল হচ্ছে। গতবারও তুমি…”
“আরে গতবার ভুল ছিলো, এইবার না। বউ’মা নিজে আমায় বলেছে।”
আইদ বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় মৃণায় দিকে। মৃণা নিজ থেকে এমন কেন বলবে?
সে প্রস্তুতি নিলো সত্যটা বলার। কিন্তু পারল না। এর পূর্বেই মৃণার মা তার কাছে এসে হাত ধরে কান্নাভেজা গলায় বলল, “আজ এতদিনের শোকের পর এই ঘরে খুশির মুহূর্ত। অনেক অভিনন্দন বাবা। অনেক অভিনন্দন। আজ মৃণার বাবা জীবিত হলে কত খুশি হতো সংবাদ শুনে। কেন তার এই সুখের সংবাদ যেতে হলো?”
শাড়ির আঁচল মুখে চেপে কান্না শুরু করে দিলেন মৃণার মা। আজ তার স্বামীর কথা খুব মনে পড়ছে তার। আইদের মা সামলালো তাকে।
আইদের বাবা তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি’রে তুই বাপ হবি। তোকে খুশি দেখাচ্ছেনা কেন?”
আইদ চিন্তায় পড়ে যায়। কি করবে সে? কি বলবে? এই মুহূর্তে সত্য বলে তার এতদিন পর ঘরে আসা সুখ হারাতে চায় না। আবার সবার কাছ থেকে সত্য লুকিয়ে এর পরে সবার কষ্ট বাড়াতেও চায়না।
এই মুহূর্তে মৃণার মায়ের কান্না দেখে তা সত্য বলার সাহসটা হলো না।সে বাবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলল, “না বাবা আমি খুশি। একটু ক্লান্ত তাই এমন দেখাচ্ছে।”
.
.
“তোর এই অবস্থা কেন?”
অনু বাসায় এসেই কবিতার এই রূপ দেখে হতবাক হয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত।
কাব্য তার হোমওয়ার্ক করছিলো। অনুর প্রশ্ন শুনে সে উওর দেয়, “অনুমণি… অনুমণি আজ না আমরা আব্বুর বাসায় গিয়েছিলাম সেখানে পড়ে যেয়ে আব্বু ও আম্মু ব্যথা পেয়েছে।”
কথাটা শুনে অনেক জলদি করে কবিতা কোন রুমে নিয়ে গেল, “কি হয়েছে সত্যি করে বল।”
কবি অনুকে সব কথা খুলে বলল। সবটা শুনে অনুর রাগে গা জ্বলে উঠে, “কার এত বড় সাহস? মানুষটার বুকে কি মন নেই? কি অবস্থা করেছে তোর। তুই এখনই আমার সাথে আসবি।”
“কোথায়?”
“পুলিশ থানায় যেয়ে ওকে লকাপে ভরাবো আমি।”
“প্রয়োজন নেই।”
“প্রয়োজন নেই মানে? একশোবার প্রয়োজন আছে। তুই মহান হয়ে ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করবি না। অথবা বলবি না যে তুই তাকে ভালোবাসিস দেখে ক্ষমা করে দিয়েছিস। সে তোর সাথে যা করেছে তা নারী নির্যাতন। আর সে এমন করতে পারেনা। শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”
“না, এখন নয়। আমি একটা পরিকল্পনা করে রেখেছি।”
“কীসের পরিকল্পনা?”
“ডিভোর্সের। তীর্থ আমাকে সহজে তালাক দিবে না।তা আমি জানি। তাই আপাতত এই বিষয়েই একটা পরিকল্পনা করে রেখেছি।”
“তুই কি বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।”
“সময় হলেই বুঝতে পারবি। আর তা খুবই জলদি।”
“ঠিকাছে। তুই যা ভালো বুঝিস।।”
কবিতার ফোনে মেসেজ আসে এমন সময়,
‘কবিতা আমি কি নেশায় তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করেছি? বিশ্বাস করো আমার মাথা ঠিক ছিলো না। কাব্যকে রহমতের সাথে পাঠানোর পরে তোমার অপেক্ষায় আমি কখন যে ড্রিংক করা শুরু করেছি নিজেও বুঝে নি। রহমত বলল তোমার হাতে কতগুলো ক্ষত ছিলো। তার দায়ী কী আমি?’
কবিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। উত্তর দিলো না তীর্থের মেসেজের।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]
সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086