মুহূর্তে পর্ব-৫১

0
704

#মুহূর্তে
পর্ব-৫১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

বাংলাদেশের বিখ্যাত হস্ত ও কারুশিল্প ‘কর্থী’ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অধিপতি আবদুর রহমান তীর্থের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু তথ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী। তিনি তার স্ত্রীকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে আঘাত করেছেন। এছাড়া তার অন্য নারীর সাথে বাজে সম্পর্কও ছিলো। আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও তাকে ন্যায়বিচার দেওয়া হয় নি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টা তুলে ধরেছেন। নিম্নে তার প্রকাশ করা ক’টি ছবি দেওয়া হলো।

তীর্থ দেখলো তার ও মৃণার একটি ছবি এবং কবিতা হাতে সিগারেট দিয়ে পুড়ানোর একটি ছবি দেওয়া। রাহাত বলল, “স্যার এটা গতকাল মেডাম সোশ্যাল মিডিয়ার একটি নারী গ্রুপে পোস্ট করেছিলো। সেখান থেকে ভাইরাল হয়ে গেছে। আমাদের ব্যবসার পঁচানব্বই শতাংশ ক্রেতাই মহিলা। সবাই আমাদের ব্রান্ডকে বয়কট করছে। এমনকি ব্যাপারটা নিউজেও আসছে। এমন চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।”

সংবাদটা পড়ে তীর্থের মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে মেঝেতে ছুঁড়ে মারে ফোনটা। সেখান থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়।
রাহাত তো স্বাভাবিক থাকে কিছু মুহূর্ত। কিন্তু যখন তার মনে পড়ে ফোনটা তার তখন দৌড়ে যেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফোর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। সে কাঁদোকাঁদো গলায় নিজেই বলে, “ভাই যা দোষ স্যারের, স্যোশাল মিডিয়াতে দিসে তার বউয়ে, এখানে আমার মাসুম ফোন কী দোষ করল?”
.
.
স্বর্ণালি খেলছিলো কুহুর সাথে। কুহু তাকে ভালোই পছন্দ করে। কবিতা কাজের মাঝে তাদের দেখছিল। স্বর্ণালিকে আগের থেকে খুশি দেখায়। মেয়েটার জন্য মায়া হয় তার, খারাপও লাগলো। এই বয়সে মেয়েরা কলেজের জীবন উপভোগ করে, বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করে, এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখে। অথচ স্বর্ণালি চুপচাপ বসে থাকে এক রুমে। অফিস থেকে বাসায় যেয়ে কয়টা লেডি টিচারের কাছে পড়ে। তার জীবনে কথা বলার লোক খুব কম। এই বিশাল পৃথিবীর মাঝে খুব ছোট তার জগৎ। অবাক লাগে, একটি ঘটনা কিভাবে মানুষের জীবন মুহূর্তেই ওলট-পালট করতে পারে। যেমনটা তার করেছে। তার জীবন পাল্টেছে।

ফোন বেজে উঠে তার। তীর্থের কল। কল দেখে অবাক হয় না সে। সে জানতো তীর্থ কল দিবে। সে এটাও জানে এখন তীর্থ দিশেহারা, রাগান্বিত, আতঙ্কিত। কবিতা আরও কিছু মুহূর্ত এই অনুভূতিগুলো সে অনুভব করুক। টানা পনেরো মিনিট রিং বাজার পর কল।ধরে কবিতা।
“কী সমস্যা?”
“আমার সমস্যা? তোমার কী সমস্যা? তুমি কি আবল-তাবল পোস্ট করেছ সোশ্যাল মিডিয়ায়?”
“আবল তাবল? আমি তো যা সত্য তাই লিখেছ। ইনফ্যাক্ট আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমি এমন কিছু করতে পারি। তাও তুমি নিজের এসব নিচু কাজ বন্ধ করো নি। তোমার কি মনে হয়েছে আমি এতমাসে কিছু করি নি বলে কি সামনে করবো না? না’কি কিছু করতে পারবো না। এ কয়মাস তোমার উপর দয়া মায়া দেখিয়েছি বলে এই ভাববে না আমি দুর্বল। আমার ছেলেকে এইসবের মাঝে এনে তুমি প্রমাণ করে দিলে আমার দয়ারও যোগ্য না তুমি।”
“কাব্য এর মাঝে কোথা থেকে এলো?”
“তুমি এনেছ। কাব্যের ক্লাস টিচারকে কি বলেছ তুমি? তিনি কাব্যকে স্কুল থেকে বের করে দিত।”
“তও আরেক স্কুলে ভর্তি করানো যেত। কোনো বিগ ডিল ছিলো না। তুমি জানো তুমি কি করেছ? এতটুকু বিষয়ের জন্য তুমি আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছ ড্যাম ইট।” চিৎকার করে উঠে তীর্থ।
“খবরদার আমার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলবে না। আমার ছেলের চোখের পানি ছোট বিষয় না। তুমি আমাকে যেভাবে কান্না করিয়েছে সেভাবে আমার বাচ্চাদের সাথে করতে দিব না। আমার বাচ্চাদের সাথে একটা ভুল কিছু করলে তোমার কত বড় ক্ষতি আমি করতে পারি তা তো তুমি দেখেই নিয়েছ। আর গেস হোয়াট এখন আমার এই করণীয় এর পর তোমাকে জেলে পাঠালে তুমি আর টাকা দিয়ে বের হতে পারবে না। তাই তোমার সুবিধার জন্য বলছি ডিভোর্স দিয়ে দেও। তাও আমার শর্তে। তুমি তোমার জীবনে সুখে থাকো আর আমি আমার।”
এতক্ষণ পর তীর্থের কন্ঠ একটু নরম হয়, “ডিভোর্স? তুমি কেন বুঝতে পারছো না আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। আমি যা করেছি বা করছি সব তোমাকে আর আমার বাচ্চাদের ফেরত পাবার জন্য।”
“সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল পথে কাজ করলে উদ্দেশ্যটাও ভুল হয়ে যায়। আমি যা বলছি তা করো।”

পিছন থেকে তীর্থের মা’য়ের কন্ঠ শোনা যায়, “এই মাইয়া ডিভোর্সের লাইগাই এত কাহিনী করসে। তার দেনমোহরের টাকা লাগবো। এই লাইগা যতসব কাহিনী করে।”
“মা একটু চুপ করবে? আমি কথা বলছি তো।”

কবিতার মেজাজ বিগড়ে যায় তীর্থের মায়ের কথা শুনে। সে বলে, “তোমার মা’কে বলো যে আমার টাকার এত লোভ থাকলে প্রথমত তোমার সাথে বিয়ে করতাম না। বিয়ের পর যখন তুমি ধন-সম্পদের মালিক হয়েছিলো তখন বিলাসিতার সাথে রাজত্ব করতাম। আর তোমার পরকীয়ার পর তোমাকে ছেড়ে এসে এত সমস্যার মুখোমুখি হতাম না। তাকে এটাও বলো, যদি আমি টাকার দাবি করি তাহলে তা আমার অধিকার হবে। কারণ আজ তুমি যে পর্যায়ে আছো আমার কারণে আছো। তুমি নিজের পরিশ্রম দিয়ে এত বড় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছ এটা যেমন সত্যি তেমনি আমার উপদেশে তোমার সকল কাজ চলেছে এটাও সত্যি। কর্থী শুরুটা আমার কথায় করেছিলে, ডিজাইন সব আমার ছিলো, সব পণ্য আমি বাছাই করেছিলাম। তোমার মা’কে মনে করিয়ে দিবে কথাগুলো। এতবছর আমি এসব বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। উনি বেশি করলে এই বিষয়েও ছাড়বো না। আজ আমি না থাকলে তুমি আগের জায়গাতেই থাকতে। একচুয়ালি ওটাই ভালো হতো। অন্তত তোমার মাঝে টাকার এত অহংকার আসতো না। আগের তীর্থের মতোই থাকতে যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম।”
“তুমি আজও আমাকে ভালোবাসো কবিতা।”
কথাটা শুনে নিজের উপরই বিরক্ত লাগে কবিতা। কথাটা সত্য এবং এই সত্য কথাটা তার সহ্য হয় না। সে কেবল বলে, “ডিভোর্স পেপারে জলদি সাইন করে দিও।”
“একটা পেপারে সাইন করলেই তোমার মনে আমার জন্য যে ভালোবাসা আছে তা শেষ হয়ে হয়ে যাবে না। আর না আমার হৃদয় থেকে তোমাকে মুছতে পারবে।”
“আমি চাই না তুমি আমাকে হৃদয় থেকে মুছে দেও। তোমারও তো নিজের ভুলে আমাকে হারানোর আফসোস করা প্রয়োজন। তাও সারাজীবনের জন্য।”
বলেই কবিতা ফোন কেটে দেয়।

তীর্থ বিছানায় বসেছিলো। মা কবিতাকে বকতে বকতে সেখান থেকে চলে গেলেন। কবিতার ফোন কাটার পর সে চোখ বন্ধ করে হেলান দেয় দেয়ালে। মাথা ঘুরছে। সবকিছু আবছা দেখছে সে। কি হয়ে গেল তার সাথে? তার এত সুন্দর জীবনটা এমন বিশ্রী হয়ে গেল কীভাবে? তার চোখের সামনে ভেসে উঠে তার জীবনের এক ঘটনা।

তখন নতুন ব্যবসা শুরু করেছিলো সে। কবিতা প্রেগন্যান্ট ছিলো। ঘরে অভাব অনাটনও ছিলো কিছুটা। তবে ব্যবসার শুরুর পর প্রথম লাভ হয় তাদের। সে লাভের তীর্থ তার মা এবং কবিতার জন্য শাড়ি আনে। খুবই সাধারণ শাড়ি। কিন্তু তা দেখে কবিতার খুশির ঠিকানা থাকে না। সে জলদি করে শাড়িটা পড়ে এসে দাঁড়ায় তীর্থের সামনে। অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছিলো তাকে। তীর্থ তাকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে গেল। নিশি রাত ছিলো। চন্দ্রিমা এঁকে ছিলো আকাশের বুকেতে। চারদিকে হাল্কা শীতল হাওয়া। একটি চাদর বিছিয়ে কবিতাকে বুকে ভরে সে বলেছিলো, “জানো আমার কতদিনের স্বপ্ন ছিলো তুমি শাড়ি পরে থাকবে। আর আমি তোমার হাত ধরে পাশে হাঁটবো। অথচ দেখ, আজ তুমি আমার বুকে। কত সুন্দর মুহূর্ত তাই না?”
“খুব।”
“আমি ভেবেছিলাম আল্লাহ সবার স্বপ্ন পূরণ করে, আমার করে না কেন? আজ বুঝলাম, আল্লাহ যখন সময় আসে তখন চাওয়া থেকেও বেশি দেয়।”
কবিতা তার বুকের থেকে উঠে বলে, “কখনও এইসবেত অনাদর করবে না বুঝলে? আল্লাহ প্রথমে দিয়ে পরীক্ষা করে মানুষ সামলাতে পারে না। যদি তার বান্দা এসব সামলাতে না পারে তাহলে তার থেকে সব ছিনিয়ে নিতেও মুহূর্ত লাগে না।”
তীর্থ কবিতার দুইগালে হাত রেখে হাসে, “আমি সবার পূর্বে তোমাকে সামলে রাখবো। তুমি আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।” বলে চুমু খায় সে কবিতার কপালে। আর পরিবর্তে কবিতা মনোহর এক হাসি দেয়। সে হাসিতে আবারও মুগ্ধ হয় তীর্থ। আবারও প্রেমে পড়ে।

মা’য়ের কন্ঠে চোখ খুলে তীর্থ, “এই তীর্থ তোর লগে কেউ দেখা করতে আইসে।”
তীর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বুকের ভেতর ব্যাথা করছে তার। এত পরিবর্তন হয়ে গেছে সে এই ক’টি বছরে? এতটা? তার করা সকল ওয়াদা ভুলে গেছে, হারিয়ে গেছে ভুলের জগতে। এমন তীর্থ হয়ে গেছে যে সে কখনো ছিলো না। না সে কবিতাকে খুশি দিতে পারলো, আর না সে তার যত্ন নিতে পেরেছে। আর না তার প্রাপ্য ভালোবাসা দিয়েছে। দিয়েছে তো শুধু কষ্ট ও বিশ্বাসঘাতকতা।

আবারও ডাক পড়ে তার মা’য়ের। সে উঠে যায় দরজার কাছে। দরজার বাহিরে কথনকে দেখে একটু ধাক্কা খায় সে। কিন্তু রাগও উঠে। আজ এতবছর পরও তার কথনকে সহ্য হয় না। এর সঠিক কারণ সে নিজেও জানে না। কথন কখনো তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি। কিন্তু তা শুরু থেকেই মনে হতো সে কবিতাকে ভালোবাসে। অন্যকেউ কবিতাকে ভালোবাসবে এটা তার কখনোই সহ্য হয় না। সে আজও বিরক্ত হয়ে কথনকে জিজ্ঞেস করে, “কী প্রয়োজনে এসেছেন?”
.
.
কবিতা আজ বেশি কাজ থাকায় একটু দেরি করেই আসতে হলো তার। যেহেতু তাহিরা ঘরে আছে তাই চিন্তাও হয় না তার। অনু এবং কবিতা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তাদের কথা বলতে থাকে, “ওয়াও, বড় মেডাম তোকে স্বর্ণালির জন্য বার্থডে ড্রেস ডিজাইন করতে দিয়েছে? আমি শুনেছি ম্যডাম তার মেয়েকে বড় ডিজাইনারদের ড্রেসই পরায়।”
“ভাবছি আমিও স্বর্ণালিকে একটা ড্রেস উপহার দিব। মেয়েটা এ কয়দিনে আমার খুব কাছের হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে ওর জন্য খারাপও লাগে। এছাড়া বড় ম্যাডাম আমার জন্য এতকিছু করেছে আমি তো এতটুকু করতেই পারি।”
বেডরুমে যেয়ে কবিতা খানিকটা দ্বিধাবোধ করে অনুকে বলে, “আচ্ছা শুন।”
“বল।”
“আমার তো ড্রেসের এখান থেকে ভালো টাকা আসছে। যেখানে আমি ভালো করে সেখানে সময় দেই না, উপযুক্ত সময় দেই না সেখানেই ভালো আয় আসে। যদি সম্পূর্ণ সময়টা….”
“এসব চিন্তা মাথায়ও আনিস না। যে চাকরি করছিস সেখানে মাসশেষে অর্থের নিশ্চয়তা থাকে। ব্যবসায় আজ রাজা কাল ফকির এমন অবস্থায়। আর সেখানে কাজও অনেক। পরে তুই এত কাজ সামলাতে সামলাতে অসুস্থ হয়ে পরবি।”
“তাও ভালো। অফিসের ফাইল দেখলে মাথা ঘুরায় আমার। এর উপর কাজের কচুও বুঝি না। যে কাজের জন্য মেডাম বেতন দেয় তা যখন ঠিক মতো করি না তাহলে বেতন কিসের জন্য নেই? বেতন নেওয়ার সময় মনে হয় এই টাকা আমাকে দয়া করে দেওয়া হচ্ছে। যার আমি যোগ্য না।”
“তোকে আমি কয়টা বই এনে দিব। তা পড়লে কাজ বুঝতে সহজ হবে।”
“বই? জীবনে স্কুল কলেজে বই ধরে পড়তে বসি নি। এখন বসবো? তুই তো জানিস বই দেখলে আমার মাথা ঘুরায়।”

সাথে সাথে পিছন থেকে একজন বলে, “আর প্রেগন্যান্ট প্রেগন্যান্ট লাগে তাই না?”
কবিতা পিছনে তাকিয়ে দেখতে পায় কথনকে। তার মুখে কথাটা শুনে লজ্জা লাগে কবিতা। অতীতের বাচ্চামো কথাবার্তা মনে করে। অনু উঠে দাঁড়ায় কথনকে দেখে, “আরে ভাইয়া আপনি কখন এলেন?”
“এলাম তো অনেকক্ষণ হলো। কাব্যের সাথে খেলছিলাম। তোমাদের কন্ঠ শুনে আসলাম।”

অনু সুযোগ বুঝে দু’জনকে একা ছেড়ে দেবার জন্য কুহুকে কোলে নিয়ে বলে, “ভালো করেছেন। আপনি কবিতার সাথে বলুন আমি চা বানিয়ে আনছি।”
অনু যাবার পর কবিতা হেসে বলে, “এক জীবন কেটে গেল এই মেয়েকে রান্নাঘরের কাজ করতে দেখলাম না। আপনি আসলেই ওর রান্নাঘরের ঠিকানা মনে পড়ে।”
সে কথন এর দিকে তাকাতেই তার চোখ পড়ে কথনের মুখের আঘাতে। তার মাথায়, গালে ও ঠোঁটের নিচে লালচে হয়ে আছে। সে কথনের কাছে যেয়ে চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করে, “আপনার এ অবস্থা কেন?”
কবিতা হাত উঁচু করে কথনের কপাল ছুঁতে নিলেই সে হাত ধরে নেয়। কবিতা অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। কথনের দৃষ্টি শীতল। সে খানিকটা ঝুঁকে আছে কবিতার দিকে। আলতো করে তার ঘাড়ের চুল সরায়।

কবিতা স্তব্ধ হয়ে যায়। চমকে উঠে। কথন আগে কখনো এমন কিছু করে নি। কিছু বুঝে উঠতে পারে না কবিতা। সে এতটা চমকে উঠেছে যে কথনকে সরাবে তাও পারছে না।

কথন কবিতার ঘাড়ে দাগ দেখে সে অংশ ছুঁতেই কবিতা লাফিয়ে উঠে। সাথে সাথে সরে যায়। কিন্তু কথন হাত ধরে রাখায় বেশি দূরে যেতে পারে না, কথন আবার তাকে কাছে টেনে নেয়। কথন কবিতার জামার হাতা কনুই পর্যন্ত নিতে তার হাতও দেখে। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় কবিতার দিকে। কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে, “কবে এমন করেছে?”
“হঁ?”
“জিজ্ঞেস করছি কবে এমন করেছে?”
“দু..দুইমাস আগে।” কবিতা আমতা-আমতা করে বলে।
“তুমি আমাকে বলো নি কেন?”
কবিতা চোখ নামিয়ে নেয়। কথন তার এত কাছে থাকায় কেমন যেন সংকোচন অনুভব হচ্ছে।

“আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।” কথন অনেকটা ধমক দিয়ে বলে। কবিতা খানিকটা কেঁপে উঠে। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উলটে কাঁদোকাঁদো গলায় বলে, “আপনি আমাকে ধমকাচ্ছেন কেন?”
কবিতার এমন ভাবে বলাতেই কথনের রাগ গলে যায়। সে নিজেকে খানিকটা শান্ত করে। কবিতার হাত ছেড়ে বলে, “বলো তাহলে আমাকে এ ব্যাপারে জানাও নি কেন?”
“ভালো হয়েছে জানাই নি, নাহলে তো আপনি তো পরে আরও ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেখাতেন। আর যেয়ে যদি তীর্থকে…”
“তীর্থকে?” কথন চোখজোড়া ছোট করে নেয়। সে কবিতার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, “তীর্থের জন্য তোমার এখনো এত চিন্তা। ও তোমাকে এত আঘাত করেছে তাও?”

কবিতা ভয়ে খানিকটা পিছনে যায়। কিন্তু কথন ঠিকই সামনে এগোয়। পিছনে জায়গা বেশি না থাকায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তার। কথন তার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। সে কবিতার পাশের দেয়ালে হাত রেখে তার দিকে ঝুঁকে বলে, “তোমার মনে হয় না তোমার ওর চিন্তা করা ছাড়া উচিত? ও তোমাকে অনুভূতির দিক থেকে আঘাত করেছে। সাথে মানসিক এবং শারীরিকভাবেও। এরপরও তুমি তার কথা কীভাবে চিন্তা করতে পারো?”
কবিতা তাকায় তার দিকে। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে, “অনুভূতি কি এত সহজেই খাঁচাতে বন্দী করা যায়? আপনিও তো একটি মেয়েকে পাবেন না জেনেও এত বছর থেকে ভালোবেসে এসেছেন। আপনার তো কথাটা বুঝা উচিত। তাই না?”
কথন কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে কবিতার দিকে। কিছুটা রাগ উঠে। খানিকটা অভিমানও হয় তার। কেবল তীর্থের কথাই কী তার মাথায় এলো?
এক ঢোক গিলে সে। বলে, “ডোন্ট ওয়ারি। বেশি হার্ট করি নি। ও ঠিক আছে। ও তোমাকে এত কষ্ট দিয়েছে জেনে নিজেকে সামলাতে পারি নি।”
বলে কথন ফিরে যেতে নেয়। তখনই কবিতা তার হাত ধরে নেয়। চিন্তিত গলায় বলে সে, “আপনার হাত দেখে মনে হচ্ছে রক্ত পরেছে। আপনি ব্যান্ডেজ করেন নি কেন?”
“তোমার কী?” বলেই কবিতার হাত থেকে সে হাত সরিয়ে নেয়।
“আপনার আজ হলো কি? আপনি তো কখনো এমন ব্যবহার করেন নি।”
“আমি তো কখনো ভাবিও নি যে তুমি আমার থেকে এত নিঁখুতভাবে নিজের ক্ষত লুকাবে। ঠিকই তো আমি তোমার কে হই?”
“আপনি এমন বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করছেন কেন? আমি আপনাকে চিন্তায় ফেলতে চাই নি কেবল।”

হঠাৎ করে কাঁচ ভাঙার শব্দ শোনা যায়। সাথে অনুর চিৎকারও। চমকে যায় কবিতা। চিন্তিত সুরে বলে, “অনুর কন্ঠ? কি হলো ওর?”
“এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখতে পারবে না’কি? চলো।”

চলবে…

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=442768897462473&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here