#মুহূর্তে
পর্ব-৮
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
ধ্রুব আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাহিরাকে। তাহিরার চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে। ধ্রুবর নাকের, ঠোঁটের ছোঁয়া এসে লাগছে তাহিরার গলায়। কুঁকড়ে উঠে সে। চেপে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। নিজেকে জামাটা শক্ত করে চেপে ধরে। তার বুকের ভেতরের ধুকপুকানি বাড়ে। ঘন হয় তার নিশ্বাস। এই নিরবতার মুহূর্তে ধ্রুবর ছোঁয়া তাকে মাতোয়ারা করে তুলে।
তবুও বহু কষ্টে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে সে। পিছনে ফিরে ধ্রুবকে সরিয়ে বলে, “তোর সমস্যা কী? আমি তোকে এতবার বলছি কাছে আসতে না, কথাটা তোর মাথায় ঢুকে না?”
ধ্রুব আবারও এসে তাহিরার হাত ধরে নিলো, “তুই কখনো আমাকে ছেড়ে যাবি না প্রমিজ কর। ওই তোর আবির ভাই যেখানে তোর বিয়ের কথা চালাচ্ছে সেখানে বিয়ে করবি না তুই প্লিজ। তুই অন্যকাউকে বিয়ে করলে তার খুন করে ফেলব আমি। তুই অন্যকাওকে বিয়ে করতে পারবি না। তোর আবির ভাই গতকালের থেকে কানের নিচে ঘ্যানঘ্যান করতেছে। বিশ্বাস কর, আমার রাগ নিজের কন্ট্রোলের বাহিরে গেলে তার অস্তিত্ব খুঁজেও পাবি না আর। আর তোকে কে বলেছে তুই অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবি? আমি তোকে কোথাও যেতে দিব না। কোথাও না। তুই শুধু আমার কাছে থাকবি বুঝলি?” ধ্রুবর নরম স্বর হঠাৎ রাগী হয়ে আসে।
তাহিরা কি করবে এই ছেলের সাথে সে বুঝতে পারে না। না এই ছেলেটা তাকে আপন করে নেয় আর না দূরে যেতে দেয়। ধ্রুব সবার সাথে হাসি মজা করে দিন কাটায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মেয়েদের সাথে তার অহেতুক ফ্লাটিং, নিজের মা ও তার দাদীকে হাসানোর মাঝেই তার দিন কাটে। কিন্তু তাহিরার কাছে সে অন্যরকম। তার মাঝেই ধ্রুবর সকল আবদার। তার সকল চোখের জলও তাহিরার কোলে মাথা রেখেই ভেসেছে। এই পৃথিবী তাকে হাসতে দেখলেও তার কান্নাটা কেবল তাহিরার পৃথিবীটুকু জুড়ে। তাহিরা জানে ধ্রুবর কাছে সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ধ্রুবর অজানা অনুভূতি তাকে কতটা কষ্ট দেয় তা ধ্রুবর জানা নেই।
তাহিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি অন্যকাওকে বিয়ে করলে তোর কি? তুই যে দিনে পাঁচ ছয়টা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াস তাদের থাকতে তোর একা তো ফিল হবে না। আর আমার উপর তোর কোনো অধিকার নেই। আমি যাকে ইচ্ছা তাকে বিয়ে করব।”
ধ্রুব শক্ত করে তাহিরার বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে টান দেয়। তার চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। তাহিরা ধ্রুবর দৃষ্টি দেখেই ভয়ে ঢোক গিলল। যেহেতু ধ্রুব বেপরোয়া ছেলে। হাসি মজাতেই তার দিন কাটে। তাকে রাগে খুব কম দেখা যায়। খুব বড় বিষয় ছাড়া সে রাগ হয় না। তাহিরা তা ভালোমতো জানে। কিন্তু আজ ধ্রুবকে শান্ত করার কোনো ইচ্ছা নেই তার।
ধ্রুব তাহিরাকে খুব কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে , “তোর উপর আমার অধিকার না থাকলে কার আছে শুনি?”
“কী অধিকার আছে তোর আমার উপর?”
“আমি তোর ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ড।”
“তো ফ্রেন্ডের মতো থাক না, প্রেমিকের মতো অধিকার জমাতে চাচ্ছিস কেন? আমার বিয়ে হলে কি আমরা আর দেখা করতে পারব না? আগের মতো দেখা হবে, কথা হবে, সব আগের মতো থাকবে। তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?”
“অন্যকোনো পুরুষ তোকে ছোঁবে। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকে তোর আশেপাশে আসতে দেই নি সেখানে অন্যকেউ কীভাবে তোকে ছুঁতে পারে?”
“আজব তো, তখন সে আমার স্বামী হবে। পরপুরুষ তো নয়। আমার দেহ, মন সবকিছুর উপর তার অধিকার থাকবে। এতে সমস্যা কোথায়?” শান্ত গলাতেই উওর দিলো তাহিরা। ধ্রুবর দৃষ্টি আগের মতো জ্বলন্ত। কিন্তু তার গলা কাঁপানো, “অন্যপুরুষ তোকে ছুঁলে বা ভালোবাসলে তোর সমস্যা হবে না?”
“আমার কেন সমস্যা হবে?”
ধ্রুব মুহূর্তে তাকে রাখা সব থালাবাসনই ছুঁড়ে মেঝেতে ফেলে দেয় আর আর্তনাদ করে উঠে, “তোর সাহস কি করে হয় এই কথা বলার?”
তাহিরা কেঁপে উঠে ধ্রুব উচ্চস্বর শুনে। সে কি ভুল কিছু বলে ফেললো।
মুহূর্ত না গড়াতেই সে তাহিরাকে নিজের বাহুডোরে শক্ত করে আবদ্ধ করে তার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
তাহিরা হতবাক। সে বুঝতেও পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে? ধ্রুব এমন কিছু করতে পারে সে কল্পনাও করতে পারে নি। ধ্রুব রুক্ষ ভাবে চুমু খাচ্ছে তাকে। অন্যদিকে সে এত শক্ত করে তাকে ধরে রেখেছে যে কোমরেও ব্যাথা লাগছে তার। সে ধ্রুবকে হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ধ্রুবর রুক্ষতা কমে আসে। সে একবার মুখ তুলে তাহিরার দিকে তাকায়। তাহিরার মুখ লালচে হয়ে আছে, তার নিশ্বাস গভীর, তার চোখদুটোও আজ অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে তার চোখদুটোয় একধরনের নেশা ভর করেছে। একটু আগে রাগের বশে তাহিরাকে চুমু খেলেও এই মুহূর্তে তার মুখখানি দেখে ধ্রুব মাতোয়ারা হয়ে উঠে। তাহিরা যখন চোখ নামিয়ে তাকে আলতো করে ঠেলে দূরে সরাতে চায় তখন সে আবারও তাহিরাকে কাছে টেনে নেয়। তার গালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আলতো করে চুমু খায় তার ঠোঁটে। সে কেন এমন করছে নিজেও বুঝতে পারছে না। তাহিরার সাথে এমনটা করার কথা সে কল্পনাও করে নি। সে তো কেবল চেয়েছিলো তাহিরাকে সবসময় সে অন্যের খারাপ নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। তার তাহিরা সবসময় পবিত্র থাকবে অথচ আজ নিজেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আজ তাহিরার এত কাছে এসে সে ইচ্ছা করেও নিজেকে সামলাতে পারছে না।
তাহিরা প্রথমে ধ্রুবকে সরাতে চাইলেও কিছুক্ষণ পর সে থেমে যায়। একটু পর সে চেপে ধরে ধ্রুবর শার্ট। চোখ বন্ধ করে ধ্রুবর স্পর্শ অনুভব করতে শুরু করে। শার্ট ছেড়ে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ধ্রুবর গলা।
ধ্রুব একই অবস্থায় তাহিরাকে কোলে তুলে রান্নাঘরের তাকে বসায়। তাহিরাকে ঠোঁটজোড়া ছেড়ে তার দুইগালে হাত রেখে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, “তোর উপর কোনো অধিকার না থাকলে দূরে সরালি না কেন?”
“স..সরিয়েছিলাম তো। তুই সরতে চাস নি।” তাহিরা চোখ দুটো নিচে নামিয়ে উওর দেয়।
ধ্রুব এইবার তাহিরার গলায় ডুব দেয়। চুমু খেতে শুরু করে তার গলায় ও কাঁধে। কেঁপে উঠে সে। অশান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, “কেন করছিস এইসব?”
প্রশ্ন শুনে তাকায় ধ্রুব তাহিরার দিকে, “জানি না। তবে অন্যকেউ তোকে ছোঁবে অথবা ভালোবাসতে পারবে ভেবেই আমার মাথা ঠিক ছিলো না। আমি শুধু তোকে নিজের করে রাখতে চাইছিলাম তা যেভাবেই হোক। আমার মনে হচ্ছিলো আমি ছাড়া অন্যকেউ তোকে ছুঁতে পারবে না, তোর কোলে মাথা রাখতে পারবে না, তোর হাত থেকে খেতে পারবে না, তোকে ভালোবাস…..” এতটুকু বলে থেমে যায় ধ্রুব। শেষের বাক্যটা বলতে নিয়ে নিজেই থমকে যায়। আবার তাহিরার গালে হাত দিয়ে গালে আঙুল বুলিয়ে বলে, “আমি চাই তোর উপর কেবল আমার অধিকার হোক। আর কারও অধিকার হয়ে পারবে না। তুই অন্যকারো হতে পারবি না।” আবারও সে চোখ বন্ধ করে তাহিরার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়। সাথে সাথে কেঁপে উঠে তাহিরা। হঠাৎ তার চোখদুটোয় জল ভরে আসে।
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠে। তাহিরার বুক কেঁপে উঠে কলিংবেলের শব্দটা শুনে। সে ব্যস্ত হয়ে হয়ে বলে, “নিশ্চিত দাদী এসেছে। তুই আমার রুমে যা, দাদী তার রুমে গেলে আমি দরজা খুলব আর তুই বের হয়ে যাবি।”
এমন নয় যে ধ্রুব আগে তার বাসায় আসে নি। প্রায় প্রতিদিনই ধ্রুবর তার বাসায় আসা যাওয়া। ধ্রুবর মা এবং দাদী তাদের বিয়েও ঠিক করে রেখেছে। তবুও আজ কেন যেন ভয় লাগছে তাহিরার। লুকোচুরি লুকোচুরি ভাব। এই ভয়ের অনুভূতিটাও তার কাছে ভালো লাগছে।
তাহিরা দ্রুত নেমে দরজা খুলতে যেতে নিলেই ধ্রুব আবার তাকে ধরে নেয়। তার গভীর উষ্ণ নিশ্বাসের স্পর্শ তাহিরার মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। সে কিছু মুহূর্ত গভীর দৃষ্টিতে তাহিরার দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে ছেড়ে দেয়।
.
.
একদিন পর, কবিতা তার বেস্ট ফ্রেন্ড অনুর সাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। আজ তাদের ভার্সিটির প্রথম দিন। অনু কবিতার ছোট বেলার বান্ধবী। যখন কবিতা ঢাকায় ছিলো তখন সারাক্ষণ দুইজন একসাথে থাকতো। কুমিল্লা শিফট হবার পরও দুইজনের বন্ধুত্বে প্রভাব পড়ে না। কবিতার ঢাকায় আসার অন্যতম কারণ হলো অনু।
ভার্সিটির রাস্তায় অনেক কথা হয় দুইজনের মাঝে। বেশিরভাগই তীর্থ, ধ্রুব এবং কথনকে নিয়ে। এই কয়দিনের সব খুঁটিনাটি কবিতা অনুকে জানায়।
অনু বলল, “তুই কথন নামক ছেলেটার নামে গতকাল থেকে দুর্নাম করেই যাচ্ছিস। আরে ভাই রাগ হবার আগে ছেলের সাথে কথা বলে দেখ। তুই দুই ভাইয়ের আদরের বোন। তারা কি তোকে খারাপ কারও কাছে দিবে? তাহিরা আপু বলল তোকে তাদের সাথে দেখা করানোর আগে ভাইয়া নিজে যেয়ে ওই ছেলের এলাকায় খোঁজ নিয়েছে। প্রশংসা ছাড়া কিছু শুনে নি সে। একটা খারাপ কথাও না।”
“বাহ এখন তুইও তাদের সাইড নিচ্ছিস। লেডি মীরজাফর।”
“দেখ তুই জানিস আমি পরিষ্কারভাবে সব কথা বলি। ছেলের ফ্যামিলি ভালো, ছেলে ভালো, ছেলের ফিউচারও উজ্জ্বল আছে। তাহলে অকারণে একদিনের ঝগড়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া তো অনুচিত। ছেলের সাথে একদিন শান্ত ভাবে কথা বলে দেখ।”
“আজকে ভার্সিটি শেষে যাব তার সাথে ক্যাফেতে দেখা করতে। দেখি কি হয়।”
ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে কথা বলছিলো দুইজন। তাদের রুম নাম্বার জিজ্ঞেস করে উপরে যাওয়ার সময় সিঁড়ির কাছে বসে থাকা কয়টা ছেলে তাদের ডাকল। দুইজনে পাত্তা না দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে চাইলে একটা ছেলে এসে বলে, “এই’যে নিউ স্টুডেন্ট না?”
“হ্যাঁ, কেন?”
“তোমার সিনিয়ররা ডাকছে শোনো না? অকারণে ঝামেলা করতে না চাইলে আমার সাথে আসো।”
কবিতা একটা বকা দিয়ে এইখান থেকে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সে দেখলো তীর্থ ছেলেগুলোর মাঝে বসা। কবিতা অনুর হাত ধরে বলে, “চল তো যেয়ে দেখি কি হইতেছে।”
“দরকার কি? আমিও দেখি এরা কি ঝামেলা করতে পারে।”
“উফফ আয় তো, মজা কাহিনী দেখাব তোকে।”
কবিতা ও অনু সেদিকে যেয়ে দেখে আগের থেকে কয়েকজন একপাশে কান ধরে উঠবস করছে। আবার কয়েকজন একটানা লিখেই যাচ্ছে। আর একপাশে বেঞ্চের উপর বসে আসে চারটি ছেলে। তারা সবাই সিগারেট খেতে ব্যস্ত। তাদের দেখেই বখাটে লাগছে। এর মধ্যে একজন তীর্থও। এর মাঝে একটি ছেলে বলল, “তখন ডেকেছিলাম কানে শুনো না?”
আরেকটা ছেলে বলে, “ভাই মাইয়া দুইটা সুন্দরী তো এইজন্য ভাউ খাইতে চাইছিলো। ভয় পাইয়া আইসা পড়সে।”
“মেয়ে দেখেই মাফ করলাম কিন্তু নতুন এডমিশন নেওয়া কিছু নিয়ম পূরণ করতে হয়। এইটা আমাদের রীতি। যেহেতু তোমরা মেয়ে সেহেতু তোমাদের একটা সহজ কাজ দেই। কী বলে তীর্থ ভাই?”
তীর্থ তার ফোনে ব্যস্ত। সে রুক্ষ গলায় উওর দিলো, “যা করার কর, আমাকে ডিস্টার্ব করিস না।”
কবিতা হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে তীর্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। অনু বলল, “এইটাকে রীতি না র্যাগিং বলে। টিচারদের বললে র্যাগিং এর মজা বের হয়ে যাবে। কবিতা চল তো এইখান থেমে। যত্তসব ফালতু ছেলে।”
কবিতার নাম শুনতেই চমকে মুখ তুলে তাকায় তীর্থ। কবিতাকে দেখে হড়বড়িয়ে নিজের সিগারেট ফেলে দেয়। কবিতা তীর্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “র্যাগিং কবে থেকে রীতি হয়ে গেল? আপনি জানেন অনেক দেশে র্যাগিং আইনগত অপরাধ।”
এরই মধ্যে তীর্থর এক সাথী বলল, “এই মাইয়া তোর মুখ বেশি চলে তাই…..” কবিতার সাথে এমনভাবে কথা বলতে শুনে তীর্থ রাগী দৃষ্টিতে তাকায় ছেলেটার দিকে। তীর্থের অগ্নিদৃষ্টি দেখে সাথে সাথে সে চুপ করে যায় ছেলেটা। চুপসে গিয়ে বলে, “ভাই আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলো…. সরি ভাই।”
তীর্থ আবার নরম দৃষ্টিতে তাকায় কবিতা দিকে। বলে, তোমরা যেতে পারো। আমি ওদেরও যেতে দিচ্ছি।”
কবিতা মৃদু হেসে অনুর সাথে নিজের ক্লাসের জন্য রওনা দেয়। কবিতা যাওয়ার সময় তীর্থের দৃষ্টি আটকে ছিলো কবিতার উপর।
তীর্থের সাথে বসা ছিলো রতন, মনা এবং পলাশ। সে তিনজনকে আদেশের সুরে বলে, “ওদের যেতে দে।”
“ভাই আপনে মাইয়ার কথা শুনতাছেন কেন?” রতন জিজ্ঞেস করে। রতনের কথা শুনে পলাশও বলে, “ভাইয়ে আমার দিকে যেমনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাইসে মনে হইলো হাত ভইরা আমার জান বাইর কইরা নিব।”
“ও ধ্রুবর পরিচিত তাই।”
“এমন তো কত পরিচিতই আইলো গেল আপনে তো কখনো কারও কথা শুনেন নাই। আপনে ধ্রুব ভাইয়ের কথায় পাত্তা দেন না আর তার পরিচিত এর। ভাই আপনে কি মাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছেন?”
তীর্থ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় পলাশের দিকে, “আজেবাজে কথা বলবি না। মেয়েটা ভুল বলে নি তাই ওর কথায় একমত হয়েছি ওদের ছেড়ে দে।”
“আপনার তাকানো দেখে তো এমন মনে হচ্ছে না।”
তীর্থ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকাতেই তারা হড়বড়ে উঠে যায়। সবাইকে যেতে বলে সাথে সাথে।
এর মধ্যে একটা ছেলে বলে, “যাক বাঁচলাম এত সুন্দরী মেয়ের সামনে কান ধরে উঠবস করতে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম। ওই কমলা রঙের মেয়েটাকে ভালো লাগছে। যেয়ে খুঁজব নে।”
কথাটা কানে গেল তীর্থের। কমলা রঙের পোশাক পরা মেয়েটি কবিতা। সে পলাশকে জিজ্ঞেস করে, “সবারকে কয়বার কান ধরে উঠবস করার কথা বলেছিলি?”
“ভাই পঞ্চাশবার।”
“নীল টি-শার্টকে আরও দুইশোবার কান ধরে উঠবস করাবি আর সবাইকে যেতে দে।” আদেশের সুরে বলে তীর্থ। তার সানগ্লাসটা চোখ পরে একটি সিগারেট জ্বালিয়ে উঠে যায় সেখান থেকে। ছেলেটা পিছন থেকে অনেকবার ডাকে কিন্তু সে না শোনার মতো চলে যায়।
.
.
কবিতা বসে আছে ক্যাফেতে। ভার্সিটি শেষে কথনের সাথে আজ দেখা করার কথা তার। তার ক্লাস হয় নি আজ। শিক্ষকরা কিছু কথা বলেই ছেড়ে দিয়েছে তাই জলদিই এসে পড়েছ সে। অপেক্ষা না করে নিজের জন্য একটা আইস্ক্রিম সানডে অর্ডার দিয়ে তা খাওয়াও শুরু করে সে। প্রায় পনেরো মিনিট পর আসে কথন। কথনকে দেখে কবিতা উঠতে নিলেই সে দূরে সরে যায় এবং কবিতাকে ইশারায় দূরে থাকতে বলে। সে নিজের সামনের চেয়ারে বসে বুকে হাত রেখে গভীর নিশ্বাস ফেলে।
কবিতার তার এই কান্ড দেখে বলে, “আমার মনেই হচ্ছিলো আপনার মাথায় সমস্যা আছে।”
“ও হ্যালো মেডাম, গতকাল আপনি যতবার আমার শার্ট নষ্ট করেছেন না আমার মাথা খারাপ হয় নি আমি আপনার কাছেও আসব।”
কবিতা বিরক্তি নিয়ে বসে নিজের চেয়ারে, “তাহলে এখানে আসলেন কোন দুঃখে?”
“মা’য়ের ইমোশনাল ব্লাকমেইলে। দেখ আমি ত্যাঁড়া ব্যাঁকা কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা বলি আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমি জানি আমাকে দেখে তুমি নিশ্চয়ই বিয়ের হাজারো স্বপ্ন সাজিয়েছ কিন্তু আমি প্রেম, ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। তাই বিয়ে করারও আমার কোনো ইচ্ছা নেই।”
চলবে….
[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]
সকল পর্ব-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086