মেঘকন্যা☁️ Part_11

মেঘকন্যা☁️
Part_11
#Writer_NOVA

রাতে……..

কিচেনে মেঘা লুকিয়ে লুকিয়ে পিরিচ ভর্তি করে চকলেট হরলিক্স নিয়ে চেঁচেপুঁছে খাচ্ছে। কিছু সময় পর পর উঁকি মেরে দেখছে ওর আম্মি আসছে কিনা।এখন যদি জাওদা ইসলাম কোনভাবে মেঘাকে দেখে নেয় তাহলে বাসায় ছোট করে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে।কারণটা হলো তার মেয়ে ঠিকমতো তিন বেলা খাবার তো খায় না সারাক্ষণ এসব হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরে।কিছু সময় পর রাতের খাবার খাবে এখন চকলেট হরলিক্স খাওয়া মানে রাতের খাবার মার দেওয়া।আর মেঘারও খেতে ইচ্ছে করছে তো কি করবে?লুকিয়ে খাওয়া ছাড়াতো গতি নেই। দরজায় হেলান দিয়ে মনোযোগ সহকারে মেঘার খাওয়া দেখছে আবরার।আর এক ধ্যানে মেঘার নাকে থাকা সাদা পাথরের নাকফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।

আবরারঃ দেখো দেখি পাগলীর কান্ডটা।কে বলবে এই মেয়ের ২২ বছর।মাঝে মাঝে ছোট বাচ্চাদেরকেও হার মানিয়ে ফেলে।সারা মুখে, নাকে হরলিক্সের ছড়াছড়ি। এত বড় মেয়ে সে নাকি হরলিক্স দিয়ে মুখ মেখে ফেলছে।দুধের সাথে গুলিয়ে খেতে তার গন্ধ লাগে। কিন্তু এভাবে লুকিয়ে বিড়ালের মতো করে খেতে তার ভীষণ ভালো লাগে। একে দেখে মনে হয় মেঘরাজ্যের কন্যা ও পুত্রবধূ।নিজে দুদিন পর বাচ্চার মা হবে অথচ সে নিজে এখন বাচ্চামি করে। আল্লাহ এটাকে সামলাতে আমার দফা মনে হয় রফা হয়ে যাবে। ওর নাকের এক পাথরের নাকফুলটা কিরকম আলোতে ঝিকমিক করছে।একটা নাকফুলের কারণে ওর মুখের সৌন্দর্যটা হাজার গুন বেড়ে গেছে। ঐ নাকফুলের দিকে তাকালে আমি ঘোরে চলে যায়। ইচ্ছে করছে ফুলটা ছুঁয়ে দিতে।

ঠিক মতো কিছু খেয়েও শান্তি পাই না।চকলেট হরলিক্স আমার এতো প্রিয় তাও আম্মির জন্য শান্তিতে খেতে পারি না।তার ধারণা এসব বাচ্চাদের খাবার।আমি খেতে পারবো না। এই রে আম্মি মনে হচ্ছে আমাকে খুজতে খুঁজতে এদিকেই আসছে।

আম্মিঃ মেঘা এই মেঘা কোথায় গেলি?রাতের খাবার খেতে হবে তো।তুই যদি এখন চকলেট হরলিক্সের বক্স নিয়ে বসে রাতের খাবার মাটি করিস তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।(রেগে)

আমি জলদী করে পিরিচে থাকা সকল হরলিক্স মুখে পুরলাম।তারপর হাতে থাকা পিরিচটা লুকিয়ে মুখটা কোনরকম ঝাড়া দিয়ে আম্মির দিকে তাকালাম।মুখে বোকার মতো একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছি।

আম্মিঃ তুই আবারো হরলিক্স চুরি করছিলি?
আমিঃ উহু।
আম্মিঃ মুখে কি তোর?
আমিঃ উহু।
আম্মিঃ উহু উহু করছিস কেন?আমি কি জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে।হা করতো।
আমিঃ উহু।

আম্মিঃ কষিয়ে একটা চড় মারবো।আজ যদি হরলিক্স খেয়ে ভাত না খেতে চাস তাহলে এই দামড়া বয়সেও দু-চারটা খেতে পারিস।চেহারার অবস্থা কি হচ্ছে? ঠিকমতো খাবার খাবে না কিন্তু এসব অখাদ্য কুখাদ্য ঠিকই গিলতে পারবে।তারপর বলবে আমার ভালো লাগছে না আমি কিছু খাবো না। নিত্যি দিন একেক জায়গায় থেকে অজ্ঞান হয়ে ফিরবে।তখন কোন সমস্যা হবে না। ভাগ্যিস এই দুই দিন আয়িশ ছিলো বলে রক্ষা।অন্য কেউ থাকলে তুই যে কোথায় থাকতি তা একমাত্র আল্লাহ জানে। এভাবে দেশের পরিস্থিতি ভালো না।সবাই কি আয়িশের মতো ভালো নাকি যে তোকে কোলে তুলে বাসায় সহিসালামত পৌঁছে দিয়ে যাবে।আমি খাবার বাড়ছি জলদী চলে আয়।

আমি দুই ধারে মাথা হেলিয়ে বুঝালাম আমি আসছি তুমি যাও।আম্মি যেতেই বাকি হরলিক্সগুলো যেই মুখে পুরতে যাবো অমনি আমার কানে জোরে টান অনুভব করলাম। পেছন ঘুরে দেখি আম্মি আমার কান টেনে ধরেছে।

আমিঃ হে হে হে আম্মি তুমি যাওনি😁?

আম্মিঃ আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো তুই এমন কিছু করছিস তাই তোকে হাতেনাতে ধরার জন্য এখান থেকে চলে গিয়েছি।আমি জানি, আমি চলে গেলে তুই আবার মনের সুখে হরলিক্স গিলবি তাই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।আম্মির সাথে চালাকি করা হচ্ছে। আমিতো প্রথমবার এসেই তোর মুখে হরলিক্স লেগে থাকতে দেখে বুঝে গেছি তুই কি চুরি করতে এখানে এসেছিস।

আমিঃ আম্মি ছাড়ো লাগছে আমার।

আম্মি আমাকে কান ধরে টেনে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলো।সেখানে আব্বি বসে ছিলো।

আব্বিঃ আরে আরে করছোটা কি?মেয়েটার কান ছিঁড়ে ফেলবে নাকি।ছাড়ো বলছি।

আম্মিঃ তোমার জন্য আমি মেয়েটাকে শাসন করতে পারি না।এত বড় ডিঙি মেয়ে আমার কথাকি শুনে?

আমিঃ আব্বি কান ছাড়তে বলো খুব লাগছে।

আব্বিঃ মেঘার মা কানটা ছাড়ো।কান টেনে বড় করে ফেলছো তো।

আম্মি আমার কান ছেড়ে দিয়ে হুংকার দিয়ে বললো।

আম্মিঃ এখন রাতের খাবার না খেলেই চলে।দেখবি তোর কি হাল করি।

আমিঃ আব্বি দেখো কিরকম করে ভয় দেখাচ্ছে 🥺।

আব্বিঃ হয়েছে তো আর কত বকবে।

🌨️🌨️🌨️

আম্মি মুখ ঝামটা মেরে খাবার বারতে লাগলো।হঠাৎ করে আমার গা গুলিয়ে আসলো।উঠে দৌড়ে বেসিনের সামনে গেলাম।মাথাটাও ভন ভন করে ঘুরছে।আম্মি,আব্বি দুজনেই দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো।যদিও বমি হয়নি তবুও ভীষণ খারাপ লাগছে।

মেঘার এই অবস্থা দেখে আবরারের মাথায় হাত।এটা তো ভালো লক্ষ্মণ মনে হচ্ছে না। সোফায় আঙ্গুর নিয়ে বসেছিলো।সবে মাত্র একটা আঙ্গুর মুখে দিয়েছিলো।মেঘার অবস্থা দেখে বিষম খেয়ে কাশতে লাগলো।কিছুটা নিজে নিজেই স্বাভাবিক হলো।

আবরারঃ আমি তো কিছু করিনি।তাহলে প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষ্মণ দেখতে পাচ্ছি কেন?মেয়েটাকে জরিয়ে ধরলেই আমার ঘুম হারাম করে দেয়। আবার অন্য কিছু করবো তার সাহস কোথায়?তাহলে কি— তোওবা তোওবা। ছিঃ আবরার কি ভাবছিস নিজের বউয়ের নামে এসব।মেঘা ওরকম মেয়ে নয়।সেটা তোর থেকে ভালো অন্য কেউ জানে না।ঘুমের ঘোরে আমিই উল্টো পাল্টা কিছু করিনি তো।কিন্তু আমারতো কিছু মনে পরছে না।

মেঘার মাথায় পানি দিচ্ছে ওর মা।অন্য দিকে আবরার নিজের মাথায় পানি দিয়ে তালু ডলছে। ওর মনে হচ্ছে সে ঘুমের ঘোরে মেঘার সাথে কিছু করেছে 😂। মেঘাকে এনে সোফায় বসিয়ে দেওয়া হলো।

আম্মিঃ এখন কেমন লাগছে মেঘা?

আমিঃ একটু ভালো।

আব্বিঃ হঠাৎ কি হলো মা-মণি?

আমিঃ জানি না আব্বি।গা গুলিয়ে এলো।কয়েকদিন ধরে মাথা ঘুরায়,বমি বমি লাগে।

আব্বিঃ ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করলে এমনতো লাগবেই। একবেলাও তুমি ঠিকমতো খাবার খাও না।

আম্মিঃ খাবারের কথা তুমি তোমার মেয়েকে বলো না।কোথাও কোন হাবিজাবি খাবার আছে তা এনে দেও।দেখবে নিশ্চিন্তে গিলবে।কিন্তু খাবার খেতে বললে নাক ছিটকানো শুরু হয়ে যাবে। এটা খাবো না, ঐটা খাবো না।এটা ভালো না, সেটা ভালো না।নানা বাহানা এসে হাজির।আমি বলে শুধু শুধু তোমার মেয়ের সাথে চিল্লাচিল্লি করি।

আব্বিঃ হয়েছে তুমি এবার থামো।মেয়েটাকে একটু বিশ্রাম নিতে দেও।আর আমার কানেরও একটু বিশ্রাম দেও দয়া করে।

আমিঃ অন্য কারো অসেচতন বাবা-মা হলে হয়তো এতক্ষণে আমার কোন কথা না শুনে গালে দুটো চড় বসিয়ে দিতো।আর আমার আব্বি-আম্মিকে দেখো। ঠিক বুঝতে পেরেছে আমার কি সমস্যা হয়েছে।আমার ওপর কোন উল্টো পাল্টা ধারণা করেনি।তাদের আমার ওপর এরকম বিশ্বাস আছে। অথচ আম্মি আমাকে খাবারের জন্য বকা দিচ্ছে। সত্যি আল্লাহর কাছে লাখো কোটি কোটি শুকরিয়া। তিনি আমাকে এমন বাবা-মা গিফট করেছেন বলে।(মনে মনে)

মেঘার কথা শুনে আবরার শান্ত হলো।এতক্ষণ একটা অপরাধবোধ কাজ করছিলো তার মনে।

আবরারঃ যাক বাবা বাঁচা গেল। আমিতো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে তো এমন ঘুম ঘুমাই দ্বীন-দুনিয়া ভুলে যাই।আল্লাহ লাখ লাখ শুকুর। তুমি আজ বাঁচালে আমায়।

অন্য দিকে রিহিস হন্যি হয়ে মেঘকন্যার আশেপাশে আসতে চাইছে।কিন্তু আবরার থাকায় ওর সামনে ঘিরতে পারছে না। তাই সুযোগের সন্ধান করছে।

🌨️🌨️🌨️

আম্মি এক বোল ভাত নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।আমি হাত-পা ছুড়াছুড়ি করেও তার হাত থেকে রেহাই পেলাম না।হঠাৎ করে কোলিং বেল বাজতেই আব্বি গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

আব্বিঃ মেঘা,দেখ কে এসেছে?

আমিঃ কে আব্বি?

আয়িশঃ আসালামু আলাইকুম আম্মি। কেমন আছেন?

আম্মিঃ ওয়ালাইকুম আস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা তুমি?

আয়িশঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কি রে মাল্টি কালার কেমন আছিস?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুই এখানে? তোকে তো আমি আসতে বলিনি।বিনা দাওয়াতে আমাদের বাসায় চলে এসেছিস।একটা কলও তো করে আসলি না।তোর জন্য তাহলে কিছু চাল বেশি দিয়ে দিতে বলতাম আম্মিকে।ঠিক খাবার খাওয়ার সময় আসতে হয়।এতো ছোঁচা কেন তুই? বাসায় কি খাবারের অভাব পরেছে নাকি।

আয়িশ আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। আমি মুখ টিপে হাসছি।একদম ঠিক আছে। কতদিন হলো আমার কোন খোঁজ নেয়নি।আমিও রাগ করে কল করিনি।এখন এসেছে দরদ দেখাতে।হু হু যা তোর সাথে কোন কথা নেই। আয়িশ আমার বাবা-মাকে আমার মতো করে আম্মি আব্বি বলে ডাকে।

আম্মিঃ মেঘা এটা কি ধরনের ব্যবহার?আমি আসতে বলেছি আয়িশকে।রাতের খাবার আজ আমাদের সাথে খাবে ও।তাই আমি ওকে দাওয়াত করে নিয়ে এসেছি। দিনকে দিন এমন হচ্ছিস কেন তুই।

আমিঃ আমার জন্য কিছু আনিসনি।খালি হাতে ড্যাং ড্যাং করে চলে এসেছিস।কারো বাসায় আসলে যে কিছু নিয়ে আসতে হয় সেটা জানিস কি?অন্ততপক্ষে আমার জন্য আইসক্রিম তো আনবি।

আব্বিঃ কত আইসক্রিম খেতে পারিস আমি দেখবো।তিন বক্স আইসক্রিম আনেছে তোর জন্য।

আমিঃ সত্যি। তুই অনেক ভালো আয়িশ।যখন আসবি আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসবি।কি মজা!!! আমি এখন আইসক্রিম খাবো।(খুশি হয়ে)

আম্মিঃ খাবার না খেয়ে এক পা নড়ে দেখ তোর কি অবস্থা করি।এসবের কথা শুনলে তর সয় না।কিন্তু খাবার খেতে যত কষ্ট তোর।(রেগে)

আম্মির কথা শুনে আমি চুপসে গেলাম।চুপচাপ চেয়ারে বসে রইলাম।আয়িশ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আমি মুখ ভেংচি কেটে খাওয়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম।সবাই একসাথে খাবার শেষ করলাম।আয়িশের সাথে যেনো কথা না বলতে হয় তার জন্য আগে আগে নিজের রুমে হাঁটা দিলাম।তখনি মনে হলো আমার পায়ে কিছু একটা লাগলো।নিচ দিকে তাকিয়ে জোরে একটা চিৎকার দিলাম।পা ধরে নিচে বসে আছি। আব্বি,আম্মি ও আয়িশ দৌড়ে আমার কাছে এলো।

আব্বিঃ কি হয়েছে মা-মণি?

আয়িশঃ কি হয়েছে মাল্টি কালার?

আম্মিঃ এই মেঘা কি হয়েছে তোর?এভাবে বসে আছিস কেন?

আমিঃ সাসাসাসাপপপপ!!!(হাত দিয়ে দেখিয়ে)

আব্বিঃ সাপ আসবে কোথা থেকে?

আমিঃ আমাকে সাপে কেটেছে।

আমার হাতের দিকে তাকিয়ে তিনজন দেখতে পেলো একটা কুচকুচে কালো একটা সাপ দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। আয়িশ দৌড়ে গিয়েও সাপের নাগাল পেলো না।আমার শরীর নীল বর্ণ ধারণ করছে। আয়িশ ফিরে এসে আমাকে কোলে তুলে দৌড়ে আমার রুমে নিয়ে এলো।খাটে শুইয়ে দিলো।ধীরে ধীরে আমি অতলে ডুবে যাচ্ছি।চোখের সামনে সব ঘোলাটে দেখছি।আম্মি,আব্বি ও আয়িশ আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরছে।আমার মনে হচ্ছে আমি বোধহয় তাদের আর দেখতে পারবো না। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেলো।

মেঘার এই অবস্থা দেখে আয়িশ পাগল প্রায় হয়ে গেছে। আবিদ ইসলাম, জাওদা ইসলাম মেয়ের জন্য চোখের পানি ফেলছে।সারা শরীর গাঢ় নীলে পরিণত হচ্ছে। আয়িশ তড়িঘড়ি করে পায়ের মধ্যে মুখ লাগিয়ে বিষ টানতে লাগলো।

আবিদঃ আয়িশ করছোটা কি?অনেক বিষাক্ত ছিলো সাপটা।তোমার ক্ষতি হবে।

আয়িশঃ আমার চিন্তা করবেন না আব্বি। আপনারা শান্ত হোন।এমনি মেঘার কিছু হলে আমি বাঁচবো না।

জাওদাঃ বাবা,পাগলামি করো না। তুমি ওর বিষ নিজের শরীরে কেন নিচ্ছো? আমি নিজের মেয়েকে বাঁচানোর জন্য তোমাকে বিপদে ঠেলে দিতে পারি না।

আয়িশঃ আপনারা খামোখা চিন্তা করছেন।আমার কিছু হবে না। আম্মি আপনি একটু দুধ গরম করে নিয়ে আসেন।

🌨️🌨️🌨️

আয়িশ মেঘার পায়ে থেকে বিষ টেনে নিজের শরীরে নিয়ে নিলো।মেঘার শরীরের রং আস্তে আস্তে স্বাভাবিক রঙে আসা শুরু করলো। কিন্তু আয়িশের গায়ের রংটা নীল হতে শুরু করেছে।মুখ বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পরছে।

আবিদঃ আয়িশ তুমি ঠিক আছো?তোমার শরীর নীল হয়ে যাচ্ছে। বাবা, তুমি ওর জন্য নিজের এত বড় ক্ষতি কেন করলে?(চিন্তিত সুরে)

আয়িশঃ আআআআমমমম্মি কে জলদী দুধ আনতে বলুন আব্বি।জলদী জলদী।

জাওদাঃ আমি নিয়ে এসেছি।নেও বাবা।

কোন বিষ মেঘরাজ্যের কারো শরীরে গেলে গরম দুধ খেলে ঠিক হয়ে যায়।আয়িশ বিসমিল্লাহ বলে ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে পুরো গ্লাসের গরম দুধ খেয়ে নিলো।আয়িশ মাথা ধরে খাটে বসে পরলো।জাওদা ইসলাম সামনে এগিয়ে এসে আয়িশকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলেন।কারণ তিনি জানেন তার মেয়ে এখন শঙ্কামুক্ত।দৌড়ে সরিষার তেল এনে আয়িশের হাত-পায়ে ডলতে লাগলেন।আয়িশের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আছে।বেশ কিছু সময় পর আয়িশ অনেকটা সুস্থ হলো।

জাওদাঃ এখন কেমন লাগছে বাবা?

আয়িশঃ অনেকটা ভালো আম্মি।

আবিদঃ বুঝতে পারলাম না আমাদের বাসায় সাপ এলো কোথা থেকে? আমি কালই সাপুড়ে ডেকে সাপ ধরবো।আজ তুমি না থাকলে আমার মেয়েটা মারাই যেতো।আল্লাহ সঠিক সময় তোমাকে পাঠিয়েছে।

আয়িশঃ এটা কারো পোষা সাপ আব্বি। মালিকের হুকুমে এখানে এসেছে। আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে ওযু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করুন।মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আজ আমার ও মেঘার কিছু হয়নি।

জাওদাঃ তুমি ঠিক বলেছো বাবা।আমরা এখনি দুই রাকাআত শুকরিয়া আদায়ের জন্য নফল নামাজ পরবো।তুমি এখানে মেঘার পাশে বসো।

আয়িশঃ মেঘা এখন ঘুমুবে।ওকে নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না।ইনশাল্লাহ সকালের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আজ আসছি।

আবিদঃ সে কি কথা?তুমি এখন কোথাও যাবে না।আজকের রাতটা আমাদের সাথে কাটিয়ে যাও।আল্লাহ না করুক মাঝরাতে যদি কোন সমস্যা হয়ে যায়।তখন কি হবে?

জাওদাঃ না না বাবা তুমি কোথাও যেতে পারবে না।আজকের রাতে আমাদের বাসায় থাকবে।

আয়িশঃ আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।আলহামদুলিল্লাহ আমি ঠিক আছি।আমার একটা জরুরি কাজ আছে।সেটা সেরে আমি ফিরে আসবো।

আবিদঃ কি কাজ?

আয়িশঃ তেমন কিছু না।একজনের হিসাব নিতে হবে।বড্ড বেড়ে গেছে। তাকে একটু কমিয়ে আসি।

জাওদাঃ আয়িশ বাবা শোনো—-

তার আগেই আয়িশ রাগে চোখ মুখ লাল করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

উত্তরের ভয়ানক জঙ্গল………

ইশাল উল্টো দিকে ঘুরে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। তার পরিকল্পনা মাফিক সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিক তখনি ওর পেছনে এসে মেঘপুত্র দাঁড়ালো। পরনে তার হালকা আকাশি কালার রাজকীয় পোশাক। কোমড়ের বন্ধনীতে স্বর্ণের তলোয়ার কোষবদ্ধ। চোখ মুখ তার রাগে লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে সামনে যা পাবে তাই ধ্বংস করে দিবে।

ইশালঃ স্বাগতম মেঘপুত্র আবরার আওসাফ আয়িশ।আমার দুনিয়ায় তোমায় স্বাগতম।

#চলবে

আবরার ও আয়িশ একজনি।এবার আপনারা খুশিতো।যারা আগেই বুঝতে পেরেছেন তাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

#Part_10

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here