মেঘকন্যা☁️ Part_13

মেঘকন্যা☁️
Part_13
#Writer_NOVA

আধাঘন্টা ধরে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে বসে আছি।আয়িশ বাচ্চাদের মতো চোখ মুখ কুঁচকে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।কারণ সে স্যুপ খাবে না।ওর কাছে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম খাবার।এটা নাকি বাচ্চাদের লেইয়ের মতো দেখতে।স্যুপ কোন এঙ্গেল থেকে যে ওর কাছে লেইয়ের মতো লাগে, আল্লাহ জানে। ওর কান্ড দেখে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু হাত ব্যাথা প্লাস বিরক্তি নিয়ে বসে আছি।

আমিঃ চুপচাপ স্যুপটুকু খেয়ে নে আয়িশ।

আয়িশঃ ওয়াক ছিঃ। আমি খাবো না। কিরকম বিচ্ছিরি দেখতে। এর স্বাদও বিচ্ছিরি।

আমিঃ তোকে কে বলেছে? আমি নিজ হাতে সবজি ও চিকেন দিয়ে তৈরি করে এনেছি। তুই নাকি সকালে ভাত খাবি না। আম্মি রুটি বানিয়ে দিতে চাইলো তাও মানা করলি।এখন স্যুপ না খেলে আমি কি তোকে খালি পেটে ঔষধ খাওাবো?মর্জি না করে খেয়ে নে।

আয়িশঃ একদম জোর করবি না।টিকটিকি এনে তোর গায়ে ছেড়ে দিবো।

আমিঃ একদম ভয় দেখাবি না।তুই খাট থেকে নেমে তো দেখ।তোর পায়ের মধ্যে আমি বারি দিবো।আমি তাকে খেতে বলছি আর সে আমায় ভয় দেখাচ্ছে। তুই যে পায়ে বেশি ব্যাথা পেয়েছিস সেটাই চিমটি মারবো এখন।মুখ বন্ধ করে খেয়ে নে।

আয়িশঃ নে আমি মুখ বন্ধ করে আছি।খাইয়ে দে।

আমিঃ তোকে আমি কথার জন্য মুখ বন্ধ করতে বলেছি খাওয়ার জন্য নয়।(রেগে)

মেঘার কথায় চোখ বন্ধ করে মুখটাকে সাত রং করে একিয়ে বেঁকিয়ে আয়িশ এক চামচ স্যুপ মুখে নিলো।মুখটাকে এমন করলো যেনো মেঘা ওকে জোর করে করলার জুস খাইয়ে দিয়েছে।তারপর থু করে মুখের পুরো স্যুপটুকু মেঘার কোলের ওপর ফেলে দিলো।

আয়িশঃ কি বাজে খেতে?আমি কিছুতেই খাবো না।তুই আমার সামনে থেকে এই স্যুপের বাটি নিয়ে সর।এই বিচ্ছিরি খাবারটার গন্ধও আমি সহ্য করতে পারছি না।আবার দেখতে হবে তো কে বানিয়েছে?ঠিকমতো হাত ধুয়ে বানিয়ে ছিলি তো।সবজি ধুয়ে কেটেছিস? নাকি ওড়না দিয়ে মুছে কাজ চালিয়েছিস।মুরগির গোশতের কাঁচা গন্ধ পাচ্ছি। সাথে ডিমের বাজে ফ্লেভার।জলদী এটা নিয়ে সর।নয়তো আমি তোর ওপর বমি করে দিবো।

আমিঃ কানের নিচে একটা মারবো হারামজাদা।মাছের আঁইশ। তোকে অনেক দিন ধরে এই মাছের আঁইশ নামে ডাকা হয় না।তুই যে আঁইশ তাই গন্ধ পাস।ফাজিল ব্যাটা।আমার কোলের ওপর তোর স্যুপটুকু ফেলতে হলো।খাচ্চোর ছেমড়া।আবার বলে আমার ওপর বমি করবে? ঐ তোর মুখে কি কিছু আটকায় না।আমার তো গা গুলিয়ে আসছে।আবার জীবনে আমার হাতে কিছু খেতে চাস।তোকে ভালো করে রান্না করে খাওয়াবো।শয়তান,বাঁন্দর, কুমিড়।তুই জীবনেও ভালো হবি না।আমার পুরো জামাটা নষ্ট করে দিলো।এখন আবার সব পাল্টাতে হবে।এত ভেজাল ভালো লাগে না।তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।মাছের আঁইশটা।(রেগে)

আমি এতকিছু বলার পরেও আয়িশের মাঝে কোন পরিবর্তন দেখতে পেলাম না।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাই তুলছে।সাথে খুব মনোযোগ সহকারে নখ খুটছে।ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই গতকাল ওর এমন একটা অবস্থা গেছে।

আয়িশঃ ভালো চাস এখান থেকে ভাগ।নয়তো পুরো স্যুপ তোর মাথায় ঢেলে দিবো।সারা শরীর আঠালো প্লাস বিচ্ছিরি গন্ধে তোর অবস্থা নাজেহাল।আমার আশেপাশে এরকম আঠার মতো লেগে থাকিস কেন?তোর নিজের কোন কাজ নেই। যখন থেকে চোখ খুলছি তখন থেকে আমার রুমে ঘুরঘুর করছিস।তোর লক্ষ্মণ আমার কাছে ভালো ঠেকছে না।

আমি রেগে দুই হাত কোমড়ে রেখে ঝাঁঝালো গলায় উত্তর দিলাম।শয়তানটা নিশ্চয়ই আজ ফন্দি এঁটেছে আমাকে জ্বালাবে।নয়তো এমন করার তো কোন প্রশ্নই উঠে না।

আমিঃ দেখ আঁইশ একটুও ভালো হবে না কিন্তু। আমি যেচে এসে তোর রুমে বসে আছি না।আম্মি কিচেনে রান্না করছে।আমাকে তোর রুম থেকে বের হতে মানা করছে।নয়তো তোর এই বাঁদর চেহারা দেখার কোন ইচ্ছে নেই আমার।আমি এখনি আম্মিকে বলছি তোর এখানে আমি একটুও থাকবো না।আমাকে একবার ডেকে দেখিস খালি তুই। তোর নাক ভাঙ্গবো তাহলে।

আম্মিঃ কার নাক ভাঙ্গবি তুই মেঘা?

🌨️🌨️🌨️

আম্মি ডিমের প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।এবার আগে পরে কি হয়েছে তা না শুনেই ইচ্ছে মতো আমাকে বিনা ডিটারজেন্টে ধুয়ে দিলো।

আয়িশঃ দেখেন না আম্মি। মাল্টি কালার আমার নাকি নাক ভেঙে দিবে।আমি স্যুপটুকু খেতে চাইছি না বলে আমাকে কি বকা দিচ্ছে তা কি আপনি জানেন আম্মি?আমার মতো একটা ছোট বাচ্চা ওর কথা শুনে ভয় পাই তো বলেন?আপনি নেই বলে আমাকে যে কি শাসালো।আমার বাঁদর চেহারা নাকি ও দেখবে না।আপনার কারণে আমার রুমে আছে নয়তো একটু উঁকি মারতেও আসতো না।এগুলো কি সহ্য করা যায় বলুন।আমি আজই বাসায় চলে যাবো।মাল্টি কালার আমাকে একটুও দেখতে পারে না।আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে🥺।(ন্যাকামো করে)

আমিঃ 😳😲

আম্মিঃ মেঘা সত্যি? তুই ছেলেটার সাথে এমনটা করতে পারলি।তুই ভুলে গেলি কি করে? আয়িশের কারণে তোকে আল্লাহ বিপদমুক্ত করে দিয়েছে।এখনি ছেলেটার সাথে এমন করিস।আরো তো দিন পরেই আছে।তুই কবে বদলাবি?

আমিঃ আম্মি তুমি আমার কথা না শুনে রায় দেওয়া শুরু করলে।তুমি জানো আয়িশ কি করেছে? ও আমার জামার মধ্যে সসস—

আমাকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে ধমকে উঠলো আম্মি।এখন সব দোষ আমার।

আম্মিঃ চুপ কর তুই। ছেলেদটার সাথে তুই কি কি করতে পারিস তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। এই জন্য রাতের বেলা ওর সাথে হিংসা করছিলি।

আয়িশঃ ঠিক বলেছেন আম্মি। আমার সাথে কিরকম ব্যবহার যে করলো।চোখ দুটো পেত্নীর মতো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলো।

আমিঃ তোকে তো আমি—(রেগে তেড়ে এসে)

আয়িশঃ আম্মি দেখছেন🥺।

আম্মিঃ একদম ওর ধারের কাছে আসবি না।

আমিঃ মাছের আঁইশ, তোর কপালে মার আছে। আমকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে, জামায় স্যুপ ফেলে দিয়ে আম্মির কাছে ভালো সাজছিস।আমার নামে আম্মির কানে বিষ দিচ্ছিস।শোধটা তোলা রইলো।সুদ সহ আসল ফেরত দিবো।

আম্মিঃ পরে শোধ নিস।এখন কিচেনে গিয়ে তরকারি নাড়া দিয়ে আয়।নয়তো পুরে যাবে। আর তরকারি যদি পোরে তাহলে তোর খবর আছে। আয়িশ বাবা,হা করো তো দেখি।আমি তোমাকে ডিম দুটো খাইয়ে দেই।চুপচাপ খেয়ে নিবে।

আমিঃ হুম যত পারো খাইয়ে দেও।এখন তোমার ছেলেকে পেয়েছো না।আমি তো আর কেউ না।সব তোমার ছেলে।থাকো তুমি তোমার ছেলে নিয়ে। আমি এ বাড়ি থাকছি না। আব্বি আজ আসুক অফিস থেকে। তোমার নামে আমি নালিশ করবোই করবো।মা-ছেলে মিলে সারাদিন ন্যাকামো করে আমার মেজাজ গরম করে দিবে।ধূর ভালো লাগে না কিছু। ব্যাঙের মাথা।থাকবো না আর এখানে।

জোরে জোরে পা ফেলে নিজের রুমে চলে এলাম।অনেক কান্না পাচ্ছে। আয়িশ থাকলেই আম্মি আমার সাথে এমন করে।আমার কথা ভুলেই যায়।দরজা আটকে রুমের মধ্যে থুম ধরে বসে আছি। আজ সারাদিন রুম থেকে বের হবো না।থাকুক সে তার ছেলেকে নিয়ে। আমার কি?

অন্যদিকে আয়িশ মুখটাকে গোমড়া করে ফেললো।মেঘা ওর জ্বালাতনগুলো মিস করছিলো বলে আয়িশ ওকে এভাবে জ্বালালো।কিন্তু মেঘা যে এতটা মন খারাপ করবে তা ও ভাবতে পারেনি।টেবিলে তাকিয়ে দেখতে পেলো স্যুপের বাটিটা সেখানে।

আয়িশঃ আমার বউয়ের সাথে এমনটা করা ঠিক হয়নি।আজ একটু বেশি হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই অনেক মন খারাপ করেছে।মনে মনে বিরবির করে আমাকে বকছে আর চোখের পানি মুছছে।আমি স্পষ্ট ওর নাক টানার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। বাড়াবাড়িটা অনেক হয়ে গেলো।এবার আমার বউয়ের রাগ ভাঙাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে।তারপরেও ওর রাগ ভাঙে কিনা সন্দেহ আছে। চুপচাপ স্যুপটুকু খেয়ে নিলে এতো কিছু হতো না।কিন্তু আমারতো স্যুপ একটুও পছন্দ না।সেটা জেনেও মেঘা কেন স্যুপ করে আনলো।তাইতো আমিও এরকম করলাম।ধূর,এখন আফসোস করা ছাড়া অন্য কোন উপায় খুঁজতে হবে। (কিছু সময় ভেবে) পেয়ে গেছি!!! আমার বউ টিকটিকি ভয় পাই।আর এই টিকটিকি নিয়েই আমি ভয় দেখিয়ে রাগ ভাঙাবো।শয়তানি বুদ্ধিতো কম নেই আমার মাথায়।বউ আমার আরো জ্বালাতন সহ্য করার জন্য রেডি হও।😁😁
(মনে মনে)

জাওদাঃ কি হয়েছে বাবা?মিটমিট করে হাসছো যে?

আয়িশঃ কিছু না আম্মি।মেঘা যে রাগ করলো।

জাওদাঃ ওর রাগ!!! এই আছে এই নেই। তা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।একটু পর সব ভুলে দেখবে চলে এসেছে। তোমার কিছু লাগলে আমাকে ডেকো।কোন সংকোচ করবে না।যা লাগবে বা যা খেতে মন চাইবে নিজের আম্মি মনে করে বলে দিবে।আমাকে যেতে হবে।নিশ্চয়ই রাগ করে গাল ফুলিয়ে নিজের রুমের দরজা আটকে বসে আছে।ঐ দিকে তরকারি বোধহয় পুরোটা পুরে গেলো।আমি আসছি।কিছু লাগলে বলো।

আয়িশঃ আচ্ছা আম্মি।

জাওদা ইসলাম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আয়িশকে জোর করে ডিম খাইয়ে দিয়ে গেছেন।
ডিমের গন্ধ ওর নাক, মুখ সিটকে আসছে।ডিম খেতে পারে না।তারপরেও ভদ্র ছেলের মতো শাশুড়ী মায়ের কথা রাখতে নাক বন্ধ করে খেয়ে নিয়েছে। তবে এখন মনে হচ্ছে ভেতর থেকে সব বের হয়ে আসবে।আয়িশ মাথাটা খাটের সাথে হেলিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।ওর ভীষণ খুশি লাগছে। কিছু দিন মেঘার সামনে সশরীরে থাকবে তাই।

🌨️🌨️🌨️

অঙ্গরাজ্য………

ইশালের ডান কাঁধের নিচের কিছুটা অংশে বিশাল বড় একটা ক্ষত।তলোয়ারের ধারালো মাথা ঢুকে অনেকখানি মাংস উঠে গর্ত হয়ে আছে।সেই ক্ষতস্থান রাজা নিজ হাতে পরিষ্কার করে দিচ্ছে। টেবিলের আশেপাশে বিভিন্ন গাছ-গাছালির শিকড়,বাকল ও বিভিন্ন রঙের কাচের শিশি।
শয়তান তাড়াতাড়ি মরে না।তাহলে ইশাল কেন এতো তাড়াতাড়ি মরবে বলুন?কৌশল করে, কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আয়িশকে আঘাত করেছে।যাতে করে আয়িশ আঘাতটা বেশি পেয়েছে।আয়িশ শুধু ওর বুকে একটা তলোয়ার দিয়ে খোঁচা মারতে পেরেছে।

ইশাল রাগে ফুঁসছে। এই ছেমড়া হেরে এসে শুধু সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করতে পারে।আর কিছু নয়।কাটা জায়গায় ছোট একটা সুই গেঁথে রয়েছে। রাজা সেটা হাত দিয়ে টেনে তুললো।ইশাল ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো।তারপর তার পিতার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।

রাজাঃ পারো তো এই একটা কাজই।কথায় কথায় সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করতে। আর আমার সাথে বেয়াদবি করতে।কাজের কাজ একটাও তোমার দ্বারা সম্ভব নয়।তোমার হাতের ফাঁক দিয়ে কতবড় একটা সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেলো। তুমি কি তা জানো?তোমার বোকামীর কারণে এবারও জানে বেঁচে গেলো মেঘপুত্র। একটা কাজও মনোযোগ দিয়ে করতে পারো না।কাজে সফল হওয়ার আগেই ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো লাফাও।যেই কাজে লাফাও সেই কাজে হেরে বসে থাকো।চোখ গরম করে লাভ নেই। তোমাকে আমি ভয় পাই না।

ইশালঃ আবরার আওসাফ আয়িশ। ওকে আমি ছাড়বো না।ও এবারো আমার চোখে ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে গেলো।এর ফল খুব বাজেভাবে দিতে হবে ওকে।আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারবো না।এবার কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীতে যাবো না।বরং কয়েক মাসের জন্য যাবো।স্থায়ী একটা পরিচয় ও জায়গা খুঁজতে হবে।কোন বড়লোকের আদরের দুলালকে সরিয়ে তার জায়গা নিবো।

রাজাঃ তোমার বারবার হেরেও লজ্জা করে না পুত্র?তুমি আবারো পরিকল্পনা করছো?তোমার ঐ গোবর মাথায় বুদ্ধি কবে খুলবে?নিজেকে যে কি মনে করো তুমি? আমার নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করে। প্রতিবার এত ভালো ভালো সুযোগগুলো তুমি নষ্ট করে আসো।তুৃমি যদি আমার পুত্র না হতে তাহলে এতদিন তোমাকে শূলে চড়াতাম।

ইশালঃ মুখ সামলে কথা বলুন।নয়তো আমি ভুলে যাবো আপনি আমার পিতা।এত বড় বড় কথা না বলে নিজে পারেন না পৃথিবীর বুকে পা ফেলতে।সেই সাহস তো নেই। পারেন শুধু আমার উৎসাহ দমিয়ে দিতে। মাঝে মাঝে মনে হয় আয়িশের বদলে আপনাকে প্রথমে মারতে পারতাম।তাহলে নিজের মাথা ও মনটাতে কোন বুড়োর চাপ থাকতো না।একবার শুধু পুরো মেঘরাজ্য ও কন্যাকে আমার হতে দিন।তারপর আপনার হিসাব আমি একে একে নিবো।(দাঁতে দাঁত চেপে)

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী তাদের পিতা-পুত্রের মনমালিন্য দেখছিলো।মাঝে মাঝে মন্ত্রী আসলেই বুঝতে পারে না এরা সত্যি কি বাবা-ছেলে?নিজেদের মধ্যে একদম বনে না।একে অপরের সাথে কথা কাটাকাটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একজন অপরকে পিনিক না মেরে কোন কথা বলতেই পারে না।কিন্তু মূর্খরা জানে না নিজেদের মধ্যে ঝামেলা নিয়ে কেউ পরিকল্পনায় সফল হতে পারে না।

মন্ত্রীঃ শান্ত হও পুত্র। শান্ত হোন মহারাজ। আপনারা কোন কারণ ছাড়াই নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করেন।যার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু নিজেদের মধ্যে মনমালিন্য ছাড়া অন্য কিছু তৈরি করে না।

রাজাঃ বেয়াদব ও অকর্মা পুত্র থাকলে কি অন্য কোন চিন্তা করতে পারি মন্ত্রী?ঝামেলা করবো না কেন?সব ঝামেলার উৎপত্তি তো আমার একমাত্র পুত্র। ছোট থেকে দু-চারটা কষিয়ে গালে মারতে পারতাম।তাহলে আজ আমার কথা শুনতো।নিজে নিজে কোন পাকামো করতো না।এই ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার জন্য সব পরিকল্পনায় পানি পরে যায়।

ইশালঃ মুখ বন্ধ করুন পিতা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।মন্ত্রী মশাই আপনার রাজাকে মুখ বন্ধ করতে বলুন।নয়তো আমি যে তাকে কি করবো আমি নিজেও জানি না

রাজাঃ এতক্ষণ তোমার প্রয়োজন ছিলো তাই চুপ হয়ে ছিলে।যেই ঔষধ লাগানো শেষ করলাম ওমনি চটাস চটাস মুখের বুলি বের হয়ে গেলো।কি ভাবো তুমি নিজেকে?আমি তোমর সব কথা শুনবো।কিছুতেই নয়।আমি অঙ্গরাজ্যের রাজা।কারো কথামতো সে চলে না।নিজের যথেষ্ট বুদ্ধি আছে তার।তোমার কোন কথা মানতে বা শুনতে আমি বাধ্য নই।

ইশাল অনেক সময় সহ্য করলেও এখন আর পারলো না।চোখের ইশারায় রাজাকে শূন্যে তুলে দূরে ছুড়ে মারলো।তারপর রাগে চোখ থেকে আগুন ছুঁড়ে মারলো রাজার দিকে।রাজার পোশাকে আগুন ধরে গেলো।মন্ত্রী শত চেষ্টা করেও রাজার পোশাকের আগুন নিভাতে পারলো না।ইশাল তখন রাজাকে রাজবারান্দা দিয়ে নিচের ছোট জল দীঘিতে ফেলে দিলো।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরের দিকে চলে গেল।

পানি থেকে উঠে একটা শয়তানি হাসি দিলো মেঘরাজ্যের সেনাপতি রাকিন।কারণ এতক্ষণ রাজার রূপে সে ছিলো।মনে মনে খুব খুশি হয়ে নিজের রাজ্যের দিকে পারি দিলো।খুব সাবধানে
অঙ্গরাজ্যের রাজ্যে ঢুকে রাজাকে কিছু সময়ের জন্য ঘুম পারিয়ে নিজে রাজার রূপ নিয়ে গিয়েছিল ইশালের কাছে।বাপ-বেটার মধ্যে বেশ মজবুত এক দ্বন্দ্ব বাজিয়ে এসেছে সে।অথচ যেখানে রাজা কিছুই করেনি।অদৃশ্য হয়ে জলদী অঙ্গরাজ্য ছারলো রাকিন।মেঘপুত্রকে তো সুখবরটা দিতে হবে।কারণ পুরো পরিকল্পনাটাই ছিলো আবরার আওসাফ আয়িশের।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here