মেঘদিঘির পাড়ে পর্ব – ১০

0
359

মেঘদিঘির পাড়ে – ১০
মালিহা খান

১৯.
সায়ন চলে গেলো। বরফের ন্যায় ঠান্ডা শরীর নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে, দু’হাতে বুক চেপে, ঘনঘন নি:শ্বাস নিয়ে দাড়িয়ে রইলো ইভা। এই কয়েকমূহুর্তের সাক্ষাত, ধারালো শাসন, নামমাত্র দুরত্ব আর ফিসফিসানি বাক্যে, নিরবে সমস্ত উথালপাথাল হয়ে গেলো। খানিকবাদে হতভম্বতা কাটিয়ে মৃদুপায়ে বিছানায় যেয়ে বসলো সে। চোখ বুজে, চাদর খামছে ধরে রইলো। মাথায় ভর করলো অর্থহীন সহস্র দুশ্চিন্তা। ঘুম এলোনা চোখের পাতায়। ভাবনাচ্ছেদ ঘটলো বাহাদুরের অস্পষ্ট ডাকে,”বুবু? আ্যাই বুবু? অন্ধকারে কই গেলে তুমি?”
ইভার ধ্যান ভাঙলো। নরম গলায় ‘এইতো, এইতো’ বলতে বলতে দ্রুত বাহাদুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সে।

২০.
দু’দিকে আলমারির পাল্লা মেলে ঝুলিয়ে রাখা পান্জাবির সারিতে হাত বাড়ালো তন্দ্রা। হ্যাঙ্গার সরিয়ে সরিয়ে বেশ মন দিয়ে দেখে মাঝ থেকে একটা নামিয়ে হাতে নিলো। পান্জাবির বুকের সুতোর কাজে এলোমেলো হাত বুলালো কতক্ষণ। মনটা খারাপ হয়ে আছে তার। ঠোঁটে হাসি নেই।
ঘরের নিরবতা কাটলো দরজা খেলার শব্দে। তন্দ্রা ঘাড় ফিরালো। সরফরাজের গায়ে স্যান্ডোগেন্জি। বাবার কাছে গিয়েছিলো কি কথা বলতে!
সরফরাজ ঢুকলো হনহন করে। হাতের কাগজগুলো বিছানায় রেখে ব্যস্ত কন্ঠে বললো,

-বের করেছো তনু?”

তন্দ্রা মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে কাপড় বের করে না দিলে সরফরাজ পরেনা। আলমারি বন্ধ করে পেছনে ফিরে পান্জাবিটা এগিয়ে বললো,

-“এইযে, এটা পরুন।”

সরফরাজ ভ্রু কুঁচকালো। পান্জাবিটা তাড়াতাড়ি গায়ে চড়িয়ে বোতাম আটকাতে আটকাতে বললো,

-“মন খারাপ কেনো?”

তন্দ্রা একবার চাইলো। ধীরগতিতে দু”পাশে মাথা নাড়িয়ে বিছানায় বসলো।

সরফরাজ মলিন হাসে। তন্দ্রার নিচু করে রাখা গালটায় আহ্লাদ করে হাত রাখে। হাঁটুতে একহাত রেখে মুখ বরাবর ঝুঁকে বলে,

-“মন খারাপ করোনা তন্দ্রাবতী।”

তন্দ্রা মাথাটা আরো নামিয়ে নেয়। সরফরাজ নিচু স্বরে ডাকে,”তন্দ্রাবতী?”

তন্দ্রা ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে। হঠাৎই ভরা চোখে চেয়ে বলে,

-“আপনি যেয়েন না।”

তার টলমলে আবদারে পরিপূর্ণ চাহনীতে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো সরফরাজ। কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল,

-“এমন আবদার কেনো করো পাগলি? কাজ আছে তো।”

২১.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। নীল নীলিমায় কালোর আবরণ পড়লো। সারাবিকেলেও ঘরের দরজা খুললোনা ইভা। ছিঁটকিনি তুলে কাঁথামুড়িয়ে শুয়ে রইলো। বাহাদুর এসময় ঘরে থাকেনা। তাকে বিকেলে ঘুম পাড়ানো যায়না কখনো। খেলাধুলা করে, নয়তো বিভার কাছে পড়তে যায়। জাহানারা কিজন্য যেনো ডাকতে এসেছিলেন। ইভা জেগে থেকেও জবাব দেয়নি। মনে হচ্ছিলো, উনি নিশ্চিত দিঘির পাড়ে অপেক্ষা করছেন, বারান্দায় গেলেই দেখে ফেলবেন। ইভা ঘুমিয়ে আছে ভেবে জাহানারাও বারদুয়েক ডেকেই চলে গিয়েছেন।
ইভা চুপচাপ শুয়ে রইলো। বদ্ধ ঘরে। দুরুদুরু মনে।
তার কোনোকালেই এত সাহস হয়নি। এক অচেনা পুরুষ বললেই সে একা একা চলে যাবে। তার এতো সাহস নেই। কোনোকালেই ছিলোনা।

সন্ধ্যার পর আর শুয়ে থাকতে পারলোনা ইভা। উঠে বসলো। জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টেনে নিজেকে সামলালো। ভয় পাওয়ার কি আছে?
দরজা খুললো কাঁপা কাঁপা হাতে। এদিক ওদিক চোখ না বুলিয়েই সোজা নেমে গেলো নিচে।
কেবলই মনে হলো এই বুঝি বারান্দার কোথাও দিয়ে সায়ন দেখে ফেললো তাকে। রক্তচোখে চেয়ে রইলো অপলক।

ইভা রান্নাঘরের দরজায় যেয়ে দাড়ায়। জমিলার মা চা বানাচ্ছে। ইভা মৃদুকন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-“চাচি কোথায় খালা?”

জমিলার মা ফিরে তাকান। পান খাওয়া দাঁতগুলো বের করে হেসে বলেন,

-“হ্যায় তো বড় বউয়ের ঘরে গেলো।”

ইভা ‘ওহ’ বলে সরে আসে। জাহানারা কিজন্য ডাকতে এসেছিলেন জানা দরকার। তন্দ্রার ঘরে যেতে হলে আবার বারান্দা দিয়েই যেতে হবে। ইভার মন মিঁইয়ে আসে। চতুর্দিকে বারবার একটা কথাই ঘুরপাক খায়,

-“বিকেলে আপনাকে দিঘির পাড়ে না পেলে কাল সত্যি সত্যি অনর্থ হয়ে যাবে ইভা। মনে রেখেন।”

~চলবে~

[এত ছোট হবার জন্য সত্যি দু:খিত। খেলা দেখতে দেখতে লিখছিলাম। মাত্র যে এতোটুকু লিখেছি বুঝতেই পারিনি। কাল বিকেলেই এই পর্বের বর্ধিতাংশ দিয়ে দিব।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here