#মেঘপরীর গল্প
লেখক — মাহমুদ
পর্ব — ৪
।
।
You are looking so hot,,,,
ওর কথায় আমি লজ্জায় নীল হয়ে গেলাম। ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলাম। আর ও পরে যাচ্ছে এমন অভিনয় করে বললো
-আহ্ এই হাসিতো আমায় পুরো মাতাল করে দিবে। প্লিজ এভাবে হেসোনা। আমি নিজেকে কান্ট্রল করতে পারবো না।
-অনেক হাওয়া দিয়েছো এবার অফ যাও।
-হাওয়া?তোমার মনে হলো আমি তোমায় হাওয়া দিচ্ছি?
-হুম দিচ্ছোই তো।
-তুমি জানো আজ তোমায় দেখে সবাই ক্রাশ খাবে।
-তাই নাকি?
-হুম। আর সবাই আমাকে হিংসে করবে আর আমার অহংকার হবে।
-কেন?
-কেন আবার? ভার্সিটির সব থেকে সুন্দর, স্মার্ট, হট আর সেক্সি মেয়েটাই আমার গফ। সো সবাই আমায় হিংসে করবে এটাতো স্বাভাবিক। তাই না।
-ছিঃ শুভ এগুলো তুমি কি বলছো? তোমার শরীর ঠিক আছে তো? তুমিতো আগে কখনো এমন কথা বলো নি।
-সরি মজা করলাম
-ওকে। কিন্তু আমায় কি এই শাড়িতে সত্যি সত্যি এমন হট আর সেক্সি দেখাচ্ছে? সত্যি আমায় এমন শাড়ি পরে বাইরে আসা ঠিক হয়নি। তুমি ৫ মিনিট ওয়েট করো আমি চেন্জ করেই চলে আসছি।
-আরে আরে দাড়াও। কি খারাপ আছে এই শাড়িতে? তোমায় কত মিষ্টি দেখাচ্ছে তুমি জানো? আর তুমিতো শালীনতা বজায় রেখেই শাড়িটা পড়েছো। ব্লাউজটাতো হাতা লম্বা আর কোমড় পর্যন্ত ডাকা। তাহলে সমস্যা কোথায়?
-তুমিই তো বললে আমায় নাকি,,
-আরে বাবা আমিতো একটু মজা করছিলাম। আমি কি আমার জি এফ এর সাথে একটু মজাও করতে পারি না।
-সত্যি তো?
-হুম। ১০০% সত্যি।
-ওকে চলো তাহলে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-চলো।
তারপর আমি ওর বাইক এ উঠে ক্যাম্পাসে এলাম। ক্যান্টিনের ঢোকার সাথে সাথেই আমার মাথার একটু উপরে একটা বেলুন ফুটলো আর বেলুনের ভেতরে থাকা জরি গুলো আমার গায়ে পড়লো। আচমকা বেলুনটা ফাটায় একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। কিন্তু বোঝার পরে খুব ভালো লাগছিলো। একে একে সবাই উইস করলো।
-দোস্ত তোকে তো একদম পরীর মতো লাগছে।(অনিক)
-ওই গাধা। পরীরাতো সাদা ড্রেস পরে কালো না ওকে? (জয়া)
-কেন তুই কি পরী দেখেছিস নাকি যে বলছিস?( নিয়ন)
-নাহ্। কিন্তু শুনেছি পরীরা সাদা ড্রেসই পরে।(জয়া)
-আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম পরীরা শুধু সাদা ড্রেসই পড়ে। কিন্তু নাশুকে আমরা তাও পরী বলেই ডাকবো।
-কেন?(তুবা)
-কেন মানে? ওহ্ বুঝেছি তোর হিংসে হচ্ছে তাই না রে। কারন তুইতো দেখতে কাওয়া। হা হা হা।(অনিক)
-উফ তোরা কি থামবি কি শুরু করেছিস?(আমি)
-দেখ নাশু আমরা তোকে পরী বলেই ডাকবো। কিন্তু তুই কি পরী বলতো?(অনিক)
-মেঘ পরী।
কে যেন পেছন থেকে কথাটা বললো। আমরা সবাই পেছন ফিরে তাকালাম কথাটা কে বললো সেটা দেখার জন্য। কিন্তু আমি কল্পনাও করিনি আমার জন্য এতো বড় একটা সারপ্রাইজ ওয়েট করছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললাম। এতোদিন পর ওকে এইভাবে দেখবো আমি ভাবতেই পারি নি। আমিও কাদছি আর ওই কাদছে। আমরা দুজন যে এইভাবে কতসময় ধরে কাদলাম জানি না। আজ আমি সত্যি খুব খুশী। আমার জন্মদিনে এটাই সব থেকে উপহার আমার কাছে। আজ আবার তন্নিকে দেখে আমারতো বেলি ডান্স দিতে ইচ্ছা করছে। নাহ শুধু বেলি নয় সাথে নাগিন ডান্সও দিতে মন চাইছে। আজ আমি খুব খুব খুশি।
-আই এম সরি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে। বিশ্বাস কর সেদিন আমি তোকে ওই কথা গুলো বলতে চাইনি কিন্তু আমার মাথা ঠিক ছিলো না তাই বলে ফেলেছি। প্লিজ তুই আমায় ক্ষমা করে দে। জানিস সেদিন এর পর থেকে আমি কতটা অপরাধ বোদে ভুগেছি। অনু কাকিমার কাছে কতবার তোর নাম্বার চেয়েছি, তোর ঠিকানা চেয়েছি কিন্তু তুই নাকি এই দুই বছরে কাকিমার সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখিস নি। এমন কি তোর মাকেও নিষেধ করে দিয়েছিলি কাওকে তোর ঠিকানা দিতে। জানিস কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম আমি। কি করে এতটা স্বার্থপর হলি। তুই আমার জন্য কাকিমাকে কেন কষ্ট দিলি। কাকিমাতো তোকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো সেই মানুষটাকে এতটা কষ্ট কিভাবে দিলি। আচ্ছা আমাদের বন্ধুত্ব কি এতটাই ঠুনকো ছিলো যে আমার কথায় তুই এইভাবে চলে গিয়েছিলি? নিজেদের মধ্য কথা বলেতো সব ঠিক করা যেত তাই না? কিন্তু না আমি অপমান করেছি বলে তুই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলি। কারোর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখলি না। আমার ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ দিলি না। কিভাবে পারলি তুই থাকতে? এই দুই বছরে একবারও কি আমার কথা তোর মনে পড়ে নি? আচ্ছা এতোদিন কোথায় ছিলি তুই? তুই ঠিক আছিস তো?(একদমে কথা গুলো বললাম)
-উফ। তুই সেই আগের মতই বাচাল আছিস। একটুও বদলাস নি?(তন্নি)
-কথা ঘোরানোর চেষ্টা করিস না। আমার প্রশ্নের উত্তর দে।(আমি)
-তুই এতো প্রশ্ন করেছিস যে আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু শুধু একটা বলি পুরনো সব কথা আমি ভুলে গেছি। আর প্লিজ তুইও সব ভুলে যা।
-কিন্তু তুই আমায় ক্ষমা করেছিস তো? প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে। (ওর হাত ধরে বললাম)
-তুই কেন ক্ষমা চাইছিস। ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিৎ কারণ ভুলটাতো আমারই ছিলো তাই না।(তন্নি)
-দেখ ভুল যার থাকুক না কেন আমায় সেদিন সবার সামনে তোকে চড় মারা উচিৎ হয় নি
-আচ্ছা তুই এইসব কথা এখন বন্ধ করবি নাকি আমি আবার চলে যাবো?(তন্নি)
-এই না না। আমি আর কখনো ওইসব কথা বলবো না। তুই প্লিজ আবার আমায় ছেড়ে চলে যাস না।(আমি)
-দেখ যেতে তো আমায় হবেই। (তন্নি)
-আবার কোথায় যাবি তুই।(আমি)
-আরে বাবা আর মাত্র কয়টা দিন পরেইতো আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। ভুলে গেলি?(তন্নি)
-নাহ ভুলি নি। কিন্তু তুই চলে যাবি কেন?(আমি)
-তোর মাথাটা পুরো গেছে। আমি পরীক্ষা দিবো না বুঝি। (তন্নি)
-ওহ্ তাই তো। কিন্তু যেদিন পরীক্ষা শেষ হবে সেদিনি তুই চলে আসবি বলে দিলাম।
-সেটা সম্ভব না রে।
-কেন? সম্ভব না কেন? তার মানে তুই এখনো আমার উপর অভিমান করে আছিস তাই না?
-সেটা নয়।
-তাহলে কি?
-আসলে কথাটা তোকে কিভাবে যে বলবো সেটা বুঝতে পারছি না।
-কেন কি হয়েছে। তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?
-না মনে,,,(তন্নি একটু মন খারাপ করে)
-কি হয়েছে বলবি। তুই এমন ভাবে বলছিস কেন? আমার কিন্তু এবার টেনশন হচ্ছে।
-নাশু,,,পরীক্ষার পর আমার,,,,
-পরীক্ষার পরে কি তন্নি।
-(মাথা নিচু করে চুপ করে আছে)
-পরীক্ষার পরে কি বলবি তুই?
-আসলে পরীক্ষার পরে আমার বিয়ে।(তন্নি)
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। একটার পর একটা সারপ্রাইজ।
-তুই পাগল না কি হুম।(একটু রাগ দেখিয়ে) তুইতো আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। এমন একটা সু-খবর কেউ এইভাবে দেয় নাকি?)(বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম)
-সবাইকে বোকা তুই একাই বানাতে পারিস নাকি? আমরাও পারি বুঝলি।(তন্নি)
-হুম বুজলাম। কিন্তু তোমার এযি ওযি কি করে শুনি?(আমি)
-এযি ওযি মানে?
-আরে এযি ওযি মানে হলো আমাদের দুলাভাই।(জয়া)
-ওহ্। ও একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে বড় পোস্ট এ চাকরি করে।
-ও। দোস্ত তোর ও,,,,,র নাম কি রে?(নিয়ন)
-ওই তুই এমন তো,,,,ত,,লাচ্ছি,,স কেন হুম?(তন্নি)
ওর কথায় আমরা সবাই হেসে দিলাম। কিন্তু শুভ কেমন মন মরা হয়ে আছে। তন্নির ফিরে আসাটা কি ও মেনে নিতে পারি নি। ও কি এখনো পুরনো কথা মনে করে আছে। ওর সাথে এই ব্যাপারে পরে কথা বলতে হবে।
-ওর নাম তপন আহমেদ। (তন্নি)
-তপন আহমেদ? এই তপন নামে তোর এক চাচাতো ভাই ছিলো না?(আমি)
-ছিলো না আছে। কিন্তু কিছুদিন পর আর থাকবে না।(তন্নি)
-থাকবে না মানে?(তুবা)
-থাকবে না মানে, কিছুদিন পর আমার বর হয়েছে যাবে তখন তো আর ভাইয়া তাকবে না তাই না?(তন্নি)
-তার মানে তোর সাথে তোর চাচাতো ভাইয়ার বিয়ে হচ্ছে। আচ্ছা বিয়ের পর কি ভাইয়া বলে ডাকবি নাকি,,,হি হি হি?(আমি)
-উফ তোরা থামবি।(তন্নি)
-তুই লজ্জা পাচ্ছিস? (জয়া)
-নাহ্। কিন্তু আমরা যদি এইভাবেই আড্ডা দিতে থাকি তাহলে নাশু কেক কাটবে কখন শুনি?(তন্নি)
-হুম তাও ঠিক। কেক কাটার পরে নাহয় আড্ডা দেওয়া যাবে। কিন্তু নাশু তুই কি জানিস আজ তোর এই বার্থডে পার্টি টা কে এরেন্জমেন্ট করেছে?(অনিক)
-কে আবার শুভই করেছে।(আমি)
-জ্বী না। এটা শুভ করেনি। এটাতো তন্নি করেছে।(অনিক)
-কিহ্। তন্নি করেছে। তার মানে তোরা সবাই জানতিস তন্নি ফিরে এসেছে। অথচ আমায় কেউ একবার বললি না(আমি)
-আরে তুই যা ভাবছিস না নয়। আমরা আগে থেকে কিছু জানতাম না। সকালে ক্যাম্পাসে আসার পর সবাই মিলে যখন ক্যান্টিনে ঢুকলাম তখন দেখলাম পুরো ক্যান্টিন. ঢুকলা
তখন দেখলাম পুরো ক্যান্টিনটা সাজানো। আমরাও এটাই ভেবেছিলাম যে এটা শুভ করেছে কারণ ও আমাদের সবাইকে ক্যান্টিনে বসতে বলেছিলো কিন্তু পরে তন্নির সাথে দেখা হলো আর ওর কাছ থেকে তখনই জানতে পারলাম যে ওই এইসব করেছে। আর আমাদের সবাইকে তোকে জানাতে বারন করেছিলো তোকে সারপ্রাইজ দেবে বলে। শুভও জানতো না যে এখানে এইসব হচ্ছে।(জয়া)
-তুই এতো কিছু কেন করতে গেলি বলতো?(আমি)
-আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের এর বার্থডে আর আমি এইটুকু করতে পারবো না। আচ্ছা এবার কেক কাটবি চল। (তন্নি)
-হুম চল।(আমি)
তারপর আমরা সবাই মিলে কেকের ওখানে গেলাম।
-ও মাই গড। এতো বড় কেক?(আমি)
-হুম। তোর পছন্দ হয় নি?(তন্নি)
-আরে পছন্দ হবে না কেন। খুব পছন্দ হয়েছে।(আমি)
তারপর সবাই মিলে কেক কাটলাম। আমি প্রথমে তন্নি কে কেক খাওয়ালাম তারপর শুভকে। কিন্তু শুভকে খাওয়ানোর সময় বুঝতে পারলাম শুভ কিছু একটা নিয়ে ভয় পাচ্ছে। ও কি তন্নিকে ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে যে তন্নি আবার আমাদের দু জনের মাঝে চলে আসবে কিনা? কিন্তু তন্নির তো সামনে বিয়ে তাহলে ও ভয় পাচ্ছে কেন। নাহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুভর সাথে কথা বলতেই হবে। আমরা সবাই মিলে খুব মজা করলাম। নাচ, গানও হলো। তন্নি গান গাইলো ও খুব ভালো গান গাইতে পারে আর তুবা নাচলো। সবাই মিলে ক্যান্টিনে খাওয়া দাওয়া করলাম। বিলটা তন্নি দিলো। তন্নির একটা কল এলো তাই ও বাইরে গেলো কথা বলতে আর একটু পর শুভও বাইরে গেলো।
চলবে,,,,,