মেঘপরীর গল্প পর্ব-৩

0
464

#মেঘপরীর গল্প
লেখক —- মাহমুদ
পর্ব — ৩

খুলবো কি খুলবো না বুঝতে পারছি না। অন্যের জিনিসে এইভাবে হাত দেওয়া উচিৎ না। কিন্তু ভেতরে কি আছে সেটা জানতেও খুব ইচ্ছা করছে। খুলেই দেখি কি আছে। আর এটাতো অন্যে কারোর নয় অনু কাকিমারই। আমি খুললে কাকিমা কিছু মনে করবে না। আমিতো কাকিমার নিজের মেয়ের মতই। তো আমি খুলতেই পারি। তারপর প্যাকেটটা খুললাম। প্যাকেটটা খুলে একটু অবাক হলাম। কাকিমা যে বললো তার কোনো সিল্কের শাড়ি নেই তাহলে এটা কি? কাকিমার সিল্কের শাড়ি আছে তাহলে আমায় মিথ্যে বললো কেন যে নেই। হয়তো মনে নেই আর তাছাড়া প্যাকেটটা তো এখনো খোলেও নি। কাকিমা হয়তো জানেওনা প্যাকেট এ কি আছে। খুলেই যখন ফেলেছি তখন শাড়িটা ভালো করে দেখি। যেই ভাবা সেই কাজ। শাড়িটা বের করে ভালো করে মেলে দেখলাম। কালো রং আর চিকন করে লাল পাড়ের শাড়িটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আমি আয়নার সামনে গিয়ে শাড়িটা গায়ে ফেলে দেখলাম ভালই লাগছে। আমি একটু এদিক সেদিক ঘুরে স্টাইল দিয়ে দেখছিলাম কেমন লাগে তখনই কাকিমা আসলো
-কিরে শাড়িটা পছন্দ হয়েছে?
-হুম। খুব সুন্দর শাড়িটা। কিন্তু তুমি যে বললে তোমার স্লিকের কোনো শাড়ি নেই?
-না মা,,নে মনে ছি,,লো না।(একটু তুতলিয়ে)
-ওহ্ আচ্ছা। আমিও এটাই ভাবছিলাম যে তোমার হয়তো মনে নেই। যাই হোক আমি এই শাড়িটাই পরবো কাকিমা। প্লিজ!
-আচ্ছা ঠিক আছে পর।
-পর না পরিয়ে দাও।
-ওকে আয়, আজ আমি তোকে নিজের হাতে সাজিয়ে দিবো।
-ঠিক আছে। আমি তাহলে শাড়ির সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি আর মেকাপ কিট টা নিয়ে আসি।
-কিচ্ছু আনা লাগবে না। তুই এইখানে চুপচাপ বসে থাক।
তারপর কাকিমা ওই প্যাকেট থেকে একটা জুয়েলারি বক্স আর কিছু কালো রং এর রেশমি চুরি বের করলো। প্যাকেটের ভেতর যে ওইগুলো আছে আমি খেয়ালই করি নি। তারপর আমায় শাড়িটা পরিয়ে, কানে দুল, হাতে রেশমি চুরি আর একটা বড় আংটি পরিয়ে দিলো। চোখে একটু গাড়ো করে কাজল আর হালকা লাল লিপিস্টিক দিয়ে দিলো। চুল গুলো খোলা। আয়নার সামনে গিয়ে আমিতো নিজেই নিজেকে দেখে ক্রাশ খেয়ে গেলাম। অনেক সুন্দর লাগছে। শুভ হয়তো আজ আমার দিক থেকে চোখই সরাতে পারবে না মনে হয়। ধ্যাত কি সব ভাবছি। আমার কাছেতো ভালই লাগছে কিন্তু বাকি সবার কাছে কেমন লাগবে জানি না। কাকিমা আমায় তার দিকে ফিরিয়ে কপালে একটা চুমু দিলো আর একটু কাজল নিয়ে আমার ঘারে লাগিয়ে দিলো যাতে নজর না লাগে। তারপর কাকিমাকে বাই বলে যখন রুম থেকে বেরবো তখনই কাকিমা আমায় ডাকলো
-নাশু একটু দাড়া।
-ওকে।
কাকিমা আলমারি থেকে একটা জুতার বক্স বের করে আমায় পরতে বললো। এবার আমি একটু অবাকই হলাম কারণ জুতার মাপটা একদম আমার পায়ের মাপে। আংটি আর চুরিগুলোও একদম আমার আঙ্গুলের মাপে। কাকিমা আমার থেকে অনেকটাই মোটা মানে কাকিমার ফিগার বয়স হিসাবে একদম পারফেক্ট আমি একটু বেশিই চিকনা😎😎। তাই কাকিমার জন্যে এইগুলো কিনতে কারোর এতটা ভুল হতে পারে না। কাকিমাকে জিজ্ঞাসা করে দেখি।
-কাকিমা তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?
-হুম বল।
আমি কাকিমাকে যেই বলতে যাবো তখনই মনে হলো রুমে কেউ প্রবেশ করছে। আমি পছেন দিকে ঘুরে তাকালাম দেখার জন্য কিন্তু অদ্ভূদ বেপার হলো মেঘ দাড়িয়ে আছে আর ও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি যখন ছোট বেলায় শাড়ি পরতাম তখন প্রথমে ও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখতো আর তারপর কেমন মায়া মাখা মুখ নিয়ে বলতো
-নাশু তুই এটা কি পরেছিস? আমিতো তোর দিক থেকে চোখই সরাতে পারছিনা।
আর তারপর গন্ডারের মতো হাসি দিয়ে বলতো
-তোকে তো পুরাই পেতনি লাগছে। এমন সং সেজেছিস কেন যা চেন্জ করে একটা ফ্রগ পরে আয়। বাচ্চাদের বাচ্চাদের মতই থাকতে হয় বুঝলি? বলে গাল টেনে দিতো। আর আমি প্রতিবার ওর কথায় কান্না করে দিতাম। ও সব সময় আমার সাথে এমন ফাজলামি করতো। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই হালকা হেসে ফেললাম। হুস ফিরলো ওর চিল্লানিতে।
-তোমার সাহস হয় কি করে তুমি,,, (কাকিমা ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো)
-মেঘ, বাবা তুই শান্ত হ প্লিজ ওর কোনো দোষ নেই, ও তো এমনি এসেছিলো একটু দরকারে। আমিই ওকে,,,
-মা প্লিজ সবসময় ওর হয়ে ওকালতি করতে আসবে না ওকে। আর এই মেয়ে তোমায় না বলেছি আমি যখন বাড়িতে থাকবো তখন তুমি আমাদের বাড়িতে আসবে না। তারপরও কেন এসেছ?(মেঘ)
-মেঘ আমিতো,,,,, (আমি)
-তোমার সাহস হয় কি করে আমার নাম ধরে ডাকার। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই জ্ঞান টুকুও নেই। আসলে ভুলটা আমারই আমি তোমার মতো একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের কাছে এক্সপেট করেছিলাম যে তুমি আমার কথার মানে গুলো বুঝবে। নির্লজ্জ মেয়ে।(মেঘ)
-আমি কি এমন করেছি যে তুমি, মা,,,নে আপনি আমায় এভাবে অপমান করছেন? আমিতো আপনায় কিছু বলিনি। আমিতো শুধু কাকিমার সাথে দেখা করতে এসেছি।
আপনি আমায় এভাবে অপমান করতে পারেন না ওকে? (একটু চিৎকার করে বললালম)
-তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্রস করছো।(মেঘ)
-করছি তো?
-তোহ লিমিট ক্রস করতে আমিও জানি মিস. মেহজাবিন নাশরাহ। সেই লিমিট ক্রস করার আগে Get the hell out of this house.(মঘ)
আমার খুব কান্না পাচ্ছিলো তাই আমি আর কিছু না বলে ওখান থেকে দৌড়ে চলে আসলাম। কি এমন করেছি আমি যে আমায় এতো অপমান করতে হবে। এর আগেও আমায় অপমান করেছে কিন্তু এতটা রাগতে ওকে কখনো দেখিনি। আজ আমার জন্মদিনেও ও আমায় অপমান করতে পারলো। ওর হয়তো মনেও নেই আজ আমার জন্মদিন। অথচ আগে ও আমার জন্মদিনে কত সারপ্রাইজ গিফট দিতো। ওর আজকের অপমানের জন্য আমি ওকে কখনই ক্ষমা করবো না। আমার রুমে এসে কান্না করছিলাম তখনই শুভ কল করলো। ফোনটা বাড়িতেই রেখে গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি কান্না থামিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম।
-হ্যালো
-কখন থেকে কল করছি নাশু। ফোন রিসিভ করছিলানা কেন? কোথায় ছিলে?
-সরি। আসলে রেডি হচ্ছিলাম আর ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিলো।
-ওহ্ আচ্ছ। তাড়াতাড়ি নিচে আসো কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি।
-তুমি দুই মিনিট দাড়াও আমি এখনই আসছি।
-ওকে।
তারপর চোখ মুখ ভালো করে মুছে চোখের কাজলটা ঠিক করে নিলাম। আয়নায় ভালো করে দেখে নিলাম কান্না করেছি সেটা বোঝা যাচ্ছে কিনা। নাহ্ বোঝা যাচ্ছে না। তারপর ব্যাগটা নিয়ে মেইন গেইট এ তালা দিয়ে নিচে নেমে এলাম। শুভ তো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি কাছে যেতেই বললো…….

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here