মেঘপরীর গল্প পর্ব-২

0
532

#মেঘপরীর গল্প
লেখক — মাহমুদ
পার্ট ২


আমিতো ভাবতেই পারছিনা এই এতো সুন্দর পায়েসটা ঔ গোমড়ামুখো লাটসাহেব রান্না করেছে। ও কি জানতো যে পায়েসটা কাকিমা আমার জন্য রান্না করতে যাচ্ছিলো। না জানতো না জানলে কখনই ও রাধতো না। কাকিমাকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখি।
-কাকিমা বলছি যে তোমার ছেলে কি জানতো না যে তুমি পায়েসটা আমার জন্য রান্না করতে যাচ্ছিলে।(আমি)
-হুম। জানবে না কেন?(কাকিমা)
-বলো কি। উনি জানার পরও পায়েসটা রান্না করে দিলো। (আমি)
-নাশু তুই আমার ছেলেকে যেমন ভাবিস ও কিন্তু তেমন নয়।(কাকিমা)
-হুম। তোমার ছেলে কেমন সে আমি খুব ভালো করেই জানি। আমায় চেনাতে এসো না প্লিজ।(আমি)
-নাশু তুই সত্যিই মেঘকে ভুল বুঝছিস। (কাকিমা)
-কাকিমা আমি কাওকে ভুল বুঝছি না। বাদ দাও আমার এখন ওকে নিয়ে কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।(আমি)
তারপর রাগ করে খাবার টেবিল থেকে উঠে এলাম। যদিও পুরো পায়েসটাই খেতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু ওই লাটসাহেবের করা রান্না বলে খেলাম না। মেঘ হচ্ছে মাহাবুব আংকেলের একমাত্র ছেলে। ছোট বেলা থেকে আমরা একসাথেই বড় হয়েছি যদিও ও আমার থেকে চার বছরের বড় তবুও আমরা খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম। কিন্তু ও ইন্টার পাশ করার পর আঙ্কেল ওকে বাইরে পাঠিয়ে দেয় লেখা পড়া করার জন্য। বাবা মারা যাওয়ার পরপরই ও দেশে ফিরে আসে ওর লেখাপড়া শেষ করে। কিন্তু লন্ডন থেকে আসার পর থেকে ও অনেক বদলে গেছে। আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। যেখানে সেখানে অপমান করে। আমিতো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এটা সেই মেঘ যে আমায় সব সময় হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করতো, আমার একটু কিছু হলে ও অস্থির হয়ে যেতো, আমি রাগ করে না খেলে ঔ না খেয়ে থাকতো। আর এখন কতো বদলে গেছে। বিদেশ থেকে বড় ডিগ্রী নিয়ে এসেছে তাই মনে হয় অহংকারে মাটিতে পা পরছে না। লাটসাহেব একটা। যাই হোক এখন ওই বদমেজাজি লাটসাহেবেরর কথা ভেবে মুড নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। শুভ আমার জন্য ওয়েট করবে তারাতাড়ি রেডি হয়ে ক্যাম্পাসে যেতে হবে। কিন্তু কি পরে যাবো সেটাই বুঝতে পারছি না। একটা কাজ করি শুভর কাছ থেকে জেনে নি। কল দিলাম শুভর কাছে।
-হ্যালো
-জ্বি বলুন মেডাম
-একটু হেল্প করো না প্লিজ
-কি হেল্প বলুন মেডাম। আমি আমার মহারানীর জন্য এই জীবন দিতেও প্রস্তুত।
-জীবন দিতে হবে না আপাতত এটা বলো আমি আজ কি পরে আসবো।
-কি পরে আসবে মানে। অবশ্যই শাড়ি পরে আসবে।
-কিন্তু আমিতো শাড়ি পরতে পারি না।(একটু মন খারাপ করে)
-ওয়াও। ভালই হলো। (একটু দুষ্টমি হাসি দিয়ে)
-কেন?
-শোনো তুমি কখনো শাড়ি পরা শিখবা না।
-কিন্তু কেন শিখবো না?
-বিয়ের পর আমি তোমায় শাড়ি পরিয়ে দিবো😜😜
-সব সময়ই দুষ্টাৃমি না? (একটু লজ্জা পেয়ে)
-এই তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?
-আ,,,রে না। লজ্জা পেতে যাবো কেন।
-তোমার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে তুমি লজ্জা পাচ্ছো।
-ধ্যাত।
বলেই ফোন কেটে দিলাম। সব সময় শুধু দুষ্টামি করবে। পাগল একটা। কিন্তু আমি এখন শাড়ি পরবো কিভাবে। আর আমারতো কোনো শাড়িও নেই। কি আর করার এখন আম্মুর কাছে যেতে হবে। তারপর মায়ের রুমে গিয়ে দেখি মা তার রুমে নেই। আমি নিশাতকে ডাক দিলাম।
-নিশাত, নিশাত
-হ্যা বল। ডাকছিস কেনো।
-মা কোথায়রে?
-মা তো একটু মার্কেট এ গেছে।
-এতো সকালে মার্কেট এ গেছে কেনো?
এখনো দোকান সব খুলেছে বলে মনে হয় না।
-হুম। মা বললো মায়ের কি কাজ আছে সেটা সেরে তারপর বাজার করে বাড়ি ফিরবে।
-ও। তুই স্কুলে যাচ্ছিস?
-হুম।
-ওকে সাবধানে যাস।
-ওকে, বাই।
-বাই।
নিশাত চলে গেলো কিন্তু আমি এখন কি করবো। আমি একটা কাজ করি আগে কোন শাড়িটা পরবো সেটা ঠিক করি তারপর দেখা যাবে কি করা যায়। তারপর আলমারি খুলতে গিয়ে দেখি তালা দেওয়া।
এই মাও না😡 জানি না আলমারিতে কি গুপ্তধন রেখেছে যে সবসময় তালা দিয়ে রাখে। আর চাবিটাও সবসময় নিজের কাছে রেখে দিবে। যেন ওই চাবিটা মার সব। কিন্তু আমি কি করবো? এখন একটাই উপায় আছে অনু কাকিমা। কিন্তু ওই লাটসাহেবের সাথে যদি দেখা হয়ে যায় তাহলে আবার কোনো না কোনো ভাবে আমায় অপমান করবে। তবে এতক্ষণে অফিসে চলে যাওয়ার কথা। এত না ভেবে গিয়ে দেখি কিছু বললে কাকিমার কাছে নালিশ দিবো। তারপর কাকিমাদের ফ্লাটে গেলাম। কাকিমা কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। আমায় দেখে ইশারায় বসতে বললো। আমি এই ফাকে দেখে নি লাটসাহেবটা আছে না গেছে।
নাহ্ কোথাও নেই তারমানে হয়তো অফিসে চলে গেছে। ওর রুমে একটু উকি দিয়ে আসবো? না বাবা থাক। যদি থাকে আর আমায় দেখে তাহলেতো আমায় আস্ত চিবিয়ে থাবে। তার চেয়ে বরং আমি যে কাজে এসেছি সেটাই করি। কাকিমার কাছে গেলাম ওনারো কথা বলা শেষ।
-কি রে কিছু বলবি?
-হুম। আসলে আমি আজ ক্যাম্পাসে শাড়ি পরে যাবো ভাবছিলাম কিন্তু মা কি কাজে যেন বাইরে গেছে আর একেবারে বাজার করে বাড়ি ফিরবে। আমার সব ফ্রেন্ডরা বার বার কল করছে। ওরা সবাইও বলছে আমি যেন অবশ্যই শাড়ি পরে যায়। কিন্তু মায়ের সব শাড়ি আলমারিতে আর মা আলমারিতে তালা দিয়ে গেছে, চাবিটাও নিজের সাথে নিয়ে গেছে। মায়ের আসতে অনেক দেরি হবে তায় তোমার কাছে এলাম একটা শাড়ি নিতে। (একদমে কথাগুলো বললাম)
-ওহ্। আচ্ছা চল আমার আলমারিতে যে শাড়িগুলো আছে তার মধ্য তোর যেটা ভালো লাগে সেটা নিস।
-চলো।
তারপর আমরা অনু কাকিমার রুমে গেলাম। অনু কাকিমা আলমারি খুলে এক এক করে শাড়ি বের করে আমায় দেখাতে লাগলো। শাড়িগুলো অনেক দামি আর সুন্দর কিন্তু কিছুটা মহিলা টাইপের। আমাদের এইসব শাড়ি পরলে মানাবে না, বয়স্ক দেখাবে একটু।
তাই কাকিমাকে বললাম
-কাকিমা তোমার কোনো সিল্কের শাড়ি নেই?
-না। আমাদের কি আর এমন শাড়ি পরার বয়স আছে নাকি?
-বলো কি? বয়স নেই মানে। তোমায় দেখলে এখনো আঠারো বছরে যুবতী মনে হয়। মনেই হয় না তোমার এতো বড় একটা ছেলে আছে আর তুমি বলছো বয়স নেই।
-এতো হাওয়া দিতে হবে না। তুই কোন শাড়িটা নিবি দেখতে লাগ আমি একটু রান্নাঘর থেকে আসছি
-ওকে যাও।
তারপর আমি একাই শাড়ি দেখতে লাগলাম।। হঠাৎ করে আলমারিতে একটা প্যাকেট দেখতে পেলাম। প্যাকেট টা খুব যন্ত করে রাখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি প্যাকেটটা হাতে নিলাম। প্যাকেটের ভেতরে কাপড় জাতীয় কিছু আছে। আর প্যাকেটা যেভাবে মোড়ানো তাতে মনে হচ্ছে এখনো খোলা হয়নি,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here