মেঘবৃত্ত
পর্ব_৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
বৃত্তদের বাসায় এখন জমজমাট অবস্থা। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে, বসার ঘরে বৃত্তের মা উনার ভাই, ভাবীর সাথে জমিয়ে গল্প করছেন। বৃত্ত সেই কখন থেকে নিজের রুমেই গাপটি মেরে বসে আছে। এসব মেহমান-টেহমান তার খুব একটা ভালো লাগে না। আর মামার পরিবার’টাকে বৃত্তের কোনো কালেই পছন্দ না। তার কারণ আছে, অবশ্য। বৃত্তের মামা যখনই তাদের বাসায় আসেন, তখনই তার গল্পের মূল বিষয়বস্তু থাকে’ পড়াশোনা। ‘ তার মতে আমাদের পৃথিবীতে আসার মূল হোতা’ই হলো পড়াশোনা। পড়াশোনা ছাড়া জীবন কতটা বৃথা,তার কথাবার্তায় মূল আকর্ষন এটা। প্রতিবার বৃত্তের ভালো রেজাল্ট শুনেই তিনি অত্যন্ত পুলকিত হয়ে বৃত্তের মোবাইলে কল দেন। বৃত্ত কল রিসিভ করলে, তার কথাবার্তায় শুরুটা খানিক এমন হয় ‘ বৃত্ত, ম্যাই বয়! তুমি আমাদের রত্ন! এভাবেই পড়াশোনা করে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করো। বেস্ট অফ লাক, ম্যাই বয়। ‘
প্রতিবার এই ধরনের কথা শুনে, বৃত্ত ত্যাক্ত, বিরক্ত। বৃত্তের মতে,’ পড়শোনা হলো একটা অপশনাল বিষয়। তিনবেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পড়াশোনার কোনো দরকার নেই। এই পড়াশোনাটা করতে হয়, ভদ্র সমাজে নিজের বুক উচুঁ করার জন্যে। বুক ফুলিয়ে যাতে বলতে পারো, আমি শিক্ষিত। পড়াশোনার মূল কারণ এটাই। ‘
বৃত্ত এসব ভেবেই আনমনে হাসলো কতক্ষণ। বৃত্ত বিছানা ছাড়লো। শরীরে বাদামি রঙের টিশার্ট জড়িয়ে, কাঁধে ঝুলালো গিটার। গিটার ঝুলানোর মানে এই নয় যে, বৃত্ত গানে খুব ভালো। তবুও, গান গাইতে তার ভালো লাগে। নিজের প্রিয় সঙ্গীতশিল্পীর গান কভার করা বৃত্তের অন্যতম পছন্দের কাজ। বৃত্ত ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বসার ঘরের মুখোমুখি হতেই বৃত্ত শুনলো, মামি কথা বলছেন। কথাবার্তার সারমর্ম শুনে এটা বুঝা গেলো, তার মেয়ের জন্যে বৃত্তের বিয়ের আলাপ চলছে। বৃত্তের মা সেই কথার উত্তরে বলছেন, বৃত্তের পড়াশোনা শেষ হলে বিষয়টা ভাবা যাবে। এসব কথা শুনে বৃত্ত থমকালো। হাতের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে এগিয়ে গেলো ওদের দিকে। বৃত্তকে দেখে সবাই মাঝপথে কথা বন্ধ করে দিলেন। বৃত্তের মা বৃত্তের উদ্দেশ্যে বললেন,
— ” কোথাও যাচ্ছিস? ”
বৃত্ত মামির দিকে কড়া নজর রেখে মা’কে উত্তর করলো,
— ” হুম। একটু ক্যাম্পাসে যাবো। ”
— ” তাড়াতাড়ি ফিরিস। ”
বৃত্ত মামীর থেকে নজর সরালো। মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
— ” ঠিক আছে। ”
বৃত্ত চলে গেলো। বৃত্ত চলে যেতেই বৃত্তের মামী যেনো হাফ ছাড়লেন। এতক্ষণ বৃত্তের ওমন শক্ত চাওনি দেখে রীতিমত তার ঘাম ছুটে গেছে। ছেলে তো নয়, পুরো আগুনের গোলা। বৃত্তের মামী বললেন,
— ” আপা, আপনার ছেলের রাগ আছে অনেক। ”
বৃত্তের মা কথাটা কাটানোর জন্যে হেসে বলে উঠলেন,
— ” আরে না ভাবি। ওই মাঝেমধ্যে হালকা-পাতলা রাগ করে। তবে, ততটা রাগ নেই ওর। ”
বৃত্তের মামি জোরপূর্বক হাসলেন। বললেন,
— ” না থাকলেই ভালো। ”
_________________________
ক্যাম্পাসের এক জায়গা জুড়ে বসে আছে, বৃত্তের বন্ধুগোষ্ঠী। তাদের মধ্যে, শিহাব, রাতুল, প্রণয়, সিদ্ধার্থ এ কজন অন্যতম। বৃত্ত গিটার হাতে নিয়ে টুংটাং সুর তুলছে। বন্ধুমহল আবারও সতেজ হয়ে উঠলো। বৃত্তের গিটারের সুরে সবাই গাইতে শুরু করলো,
‘ তোমার ঘরে বাস করে কারা
মন জানোনা
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা
মন জানো না
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা
একজনে ছবি আঁকে একমনে
ও মন
আরেকজনে বসে বসে রং মাখে
ও আবার
সেই ছবিখান নষ্ট করে কোনজনা, কোনজনা
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা.. ‘
বতারপর, কয়েক ঘন্টা কেটে গেলো বন্ধুদের মজা-মাস্তিতে। কারো হাতে সিগারেট, কারো হাতে মোবাইল যন্ত্র আবার কারো হাতে গিটারের তার। সব মিলিয়ে পরিবেশটা হয়ে উঠলো মন্ত্রমুগ্ধ, জাদুকরী।
_____________________________
বৃত্ত সেদিন ঘরে ফিরলো বেশ রাত করে। রাত তখন কয়টা হবে? একটা কিংবা দুইটা? বৃত্ত সদর দরজার লক খুলে পা টিপেটিপে রুমে প্রবেশ করলো। বসার ঘর পেরুতেই বাবার ভরাট কণ্ঠস্বর কানে আসলো।
— ” এত রাতে কোথা থেকে আসছ? ”
বৃত্ত চোখ খিঁচলো। শিট! বাবা জেনে গেছেন। আজ একদম খবর আছে। বৃত্তের বাবা নিজের রুম ছেড়ে বের হলেন। বৃত্তকে আগাগোড়া একবার জরিপ করে থমথমে চোখে বৃত্তের মুখের দিকে তাকালেন। কড়া সুরে বললেন,
— ” আজকাল গানও গাওয়া হচ্ছে? ”
বৃত্ত মাথা নিচু করলো। মিহি সুরে উত্তর দিলো,
— ” তেমন কিছু না। ওই জাস্ট একটু আকটু…! ”
— ” তোমার ঐ একটু আকটু তোমার কাছেই রাখো। এতকিছুর পরেও, ভাগ্যিস রেজাল্ট খারাপ করো না। নাহলে, নিজের ছেলেকেই ঘর থেকে বের করে দেওয়ার মত জঘন্য কাজ করতে হতো আমায়। ছেলে মানুষ বাইরে ছিলে, সেটা ঠিক আছে। তবে, মধ্যরাতে ঘরে ফেরা কোনো ভদ্র ঘরের ছেলের পরিচয় না। ভুলে যেও না, এই সমাজে আমাদের একটা পরিচয় আছে। ”
বৃত্ত এখনো মাথা নিচু করেই বাবার কথা শুনছে। কিন্তু, মনে মনে ঠিকই ফুঁসছে ও। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজ জায়গায়। বৃত্তের বাবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। ক্লান্ত কণ্ঠে বললেন,
— ” ঘরে যাও। নেক্সট টাইম যেনো এসব করতে না দেখি। কথাটা মাথায় থাকে যেনো। ”
বৃত্তের বাবা রুমে চলে গেলেন। বৃত্ত রেগেমেগে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা আটকে দিলো। পেয়েছেন কি ওরা? লাইফ টাকে ইনজয় করতে দিবে না? সবসময় এই করো না, সেই করো না। রিডিকিউলাস!
বৃত্ত গিটারটা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। আজকের দিনটাই জঘন্য ছিলো!
________________________
আজ বৃত্ত একদম আটসাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে। মাকে আজ মেঘার কথা বলবেই ও। বৃত্ত আজ আর ভার্সিটি গেলো না। সকাল থেকে মায়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো। মাকে যত ধরনের মাখন দেওয়া যায়, সবই দিলো। এতে যদি মায়ের মন একটু হলেও গলে!
— ” মা, একটা কথা বলার ছিলো। ”
বৃত্তের মা, ছেলের রুমের বিছানা গুছাচ্ছিলেন। বৃত্তের কথা শুনে তিনি কাঁথা ভাজ করতে করতে জবাব দিলেন,
— ” কি কথা? বল। ”
বৃত্ত দু একবার ঢোক গিললো। মনের মাঝে একে একে সমস্ত কথার পসরা সাজালো। সকল লাজ-লজ্জা ভুলে আকস্মিক বলে উঠলো,
— ” মা, আমি বিয়ে করতে চাই। ”
#চলবে
নোট:১ #মেঘবৃত্ত গল্পটা আমি কোনো গ্রুপে দিচ্ছি না। শুধুমাত্র আমার পেইজে দিচ্ছি। সুতরাং, গল্পটা পড়তে হলে আমার পেজে লাইক, ফলো দিয়ে রাখুন। তাহলে, গল্প পোষ্ট করা হলে, আপনার নিউজফিডে সঙ্গেসঙ্গে পোস্টটা পৌঁছে যাবে।
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/251160076928560/?app=fbl