মেঘবৃত্ত পর্ব_৩৭

মেঘবৃত্ত
পর্ব_৩৭ ( ধামাকা ৩)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

মেঘা নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। হুট করেই বৃত্তকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— হুম, হবো এমন মেঘ। বৃত্তের মেঘ হবো আমি। তোর মেঘ হবো আমি। তুই যা বলবি তাই হবো আমি, তাই-ই হবো।

বৃত্ত হাসলো। বুকের সাথে লেপ্টে থাকা প্রিয়তমাকে আঁকড়ে ধরলো শক্ত করে। নাক ডুবালো মেঘার ঘাড়ে। মেঘার নিজস্ব ঘ্রাণ নিল প্রানভরে। বৃত্তের অধর ছুঁলো মেঘার ঘাড়ের আশপাশ। মেঘা আবেশে চোখ বুজে ফেললো। কান্না থেকে গেলো চকিতেই। মুচড়ে ধরলো বৃত্তের পিঠের পাঞ্জাবি।

— মেঘ?
এতক্ষণ মেঘা আরামে বৃত্তের ঘাড়ে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। বৃত্ত যেমন আদর করছিল তাকে, মেঘার মনে হচ্ছিল সে মরেই যাচ্ছে। বৃত্তের নরম কণ্ঠের নিজ নাম শুনে মেঘা চোখ খুললো। বৃত্তের পিঠের পাঞ্জাবি আরো একটু শক্ত করে খামচে ধরে মিহি সুরে জবাব দিলো,
— হু?
— একটা গিফট আছে তোর জন্যে! দেখবি?

মেঘা হাসলো খানিক। বৃত্তের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে সুধালো,
— উহু! এভাবেই বেশি ভালো লাগছে!
বৃত্ত মানলো না। জোরপূর্বক মেঘাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
— আরে বাবা, আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না।

মেঘার মুখের রং হুট করেই পাল্টে গেলো। হঠাৎ করেই জ্বলন্ত ক্রোধ নিয়ে বৃত্তের কলার খামচে ধরে বললো,
— পালানোর কথা মাথায়ও আনবি না। আমি সত্যিই মরে যাবো তাহলে। বুঝলি?

বৃত্ত একটুখানি অবাক হলো। কিন্তু পরক্ষণেই মেঘার ভালোবাসার পরিমাপ করতে পেরে ফিক করে হেসে ফেললো। মেঘার ললাটে অধর ছুঁইয়ে হেসে বললো,
— আমার পথের শেষটায় শুধু তোর অস্তিত্ব রে মেঘ! তোকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি, পাগল!

মেঘা তখনো নাক ফুলিয়ে আছে। বৃত্ত মুচকি হেসে মেঘার নাক টিপে দিলো। মেঘা রাগ ভাঙলো নিমিষেই। বৃত্ত বললো,
— হয়েছে, আর নাক ফুলাতে হবে না। চল এখন।

মেঘবৃত্ত এসে দাঁড়ালো নৌকার ইঞ্জিনের সামনে। বৃত্ত নৌকার চাবিটা খুলে মেঘার দিকে বাড়িয়ে দিলো। মেঘা তখনো অবাক চোখে চেয়ে। বৃত্ত বললো,
— এই নৌকা আজ থেকে এই মেঘের। সে যখন নদীতে ভাসতে চাইবে, তখন এই নৌকা তার খেদমতে হাজির হবে। সে যখন মেঘ থেকে বৃত্ত হতে চাইবে, এই নৌকা সর্বদা হাজির থাকবে তখন।

মেঘা তখনো স্থির, শান্ত। বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। একদিনে এত সুখ সহ্য হচ্ছে না তার। মনে হচ্ছে, ঘুম ভাঙলেই সব ফুড়ুৎ! হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে এত সুখ, এত ভালোবাসা! ঘুম ভাঙলেই বৃত্ত প্রেমিক থেকে আবারও সেই বন্ধু হয়ে যাবে। মেঘা মনে মনে দোয়া করতে লাগলো, এই ঘুম যেনো সারা জনমে না ভাঙ্গে। বৃত্ত মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। মেঘার হাত ধরে জোরপূর্বক চাবিটা মেঘার মুঠোয় পুড়ে দিলো। মেঘা সম্ভিত ফিরে পেলো। চোখ নরম করে নিজ হাতের দিকে তাকালো। বৃত্ত মেঘার অভিপ্রায় বুঝতে পারলো। মেঘা যে এখনো এসব কিছু বিশ্বাস করতে পারছে না, সে বেশ বুঝতে পারছে সে। সে এগিয়ে আসলো। চোখ বন্ধ করে মেঘার ললাটে অধর ছোঁয়ালো। বেশ সময় নিয়ে, ধীর গতিতে। মেঘা চোখ খিচে ফেললো। চোখের কোণা বেয়ে গড়ালো এক ফোঁটা জল। বৃত্ত মেঘার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে সুধালো,
— এসব কিছু সত্য, তোর ভ্রম নয়। ডাফার বৃত্ত তার ইন্টেলিজেন্ট মেঘকে ভীষন, ভীষন ভালোবাসে!
____________________________
রাত হয়ে গেছে। মেঘবৃত্ত একটু আগেই বাসায় ফিরলো। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে বৃত্ত ঘরে এলো। মেঘা রান্নাঘর গোছাচ্ছে। আজ যেনো মেঘার কাজ ফুরাচ্ছেই না। কবে বৃত্তের কাছে যাবে, তর সইছে না মেঘার। মেঘা জলদি জলদি হাত চালিয়ে সব কাজ শেষ করলো।
বৃত্ত নিজের ঘরে বসে ফাইল ঘাটছে আর বারবার চোখ তুলে দরজার দিকে তাকাচ্ছে। মেঘ এখনো কেনো আসছে না? এত দেরি হয় আসতে? সে কি জানেন, তার বৃত্ত তড়পাচ্ছে তার জন্যে?

একটু পর মেঘা ঘরে এলো। বিছানায় বসে থাকা বৃত্তের দিকে একপলক চেয়ে লজ্জা পেয়ে গেলো সে। আজ হুট করেই তার খুব লজ্জা লাগছে। মনে চাচ্ছে, পায়ের নিচের মাটি ফাঁক হোক, সে মাটির গভীরে মুখ লুকাক। ইশ, বৃত্তের মেঘ হওয়া এত সুখের কেনো?

বৃত্ত মেঘাকে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই মেঘা বাথরুমের ঢুকে গেলো। দরজা-টাও আটকে ফেললো। বৃত্ত মেঘার এই আচরণে হতবম্ব হয়ে গেলো। মেঘার এই অদ্ভুদ আচরনের কারণ তার বোধগম্য হলো না। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই বৃত্ত বুঝতে পারলো, তার মেঘ লজ্জা পাচ্ছে! বৃত্ত হাসলো খুব। এই মেয়েটার একেক সময় একেক রূপ! আজকের দিন না আসলে মেঘার এই লজ্জার রূপ বৃত্তের অজানাই থেকে যেত। আর কে কত রূপ দেখতে হবে এই মেয়েটার!

দশ মিনিট পর মেঘ বাথরুম থেকে বের হলো। ঘরের বাতি নেভানো দেখে মেঘার ভ্রু কুঁচকে গেলো। সে কি ঘুমিয়ে গেছে তবে? মেঘার মনটা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গেলো। আজকের এই বিশেষ দিনে বৃত্ত এভাবে ঘুমিয়ে যেতে পারলো? সত্যিই একটা ডাফার সে!
মেঘা মুখটা ভার করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বৃত্তের দিকে মুখ ফিরে তার দিকে চেয়ে রইল অপলক! আজ থেকে এই মানুষটা তার! ইশ, মেঘার এত সুখ সুখ অনভুব হচ্ছে কেনো?

ভাবনার মধ্যে আচমকা বৃত্ত হাত বাড়িয়ে মেঘাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো। মেঘা মুহূর্তেই যেনো জমে গেলো! চোখ বড়বড় করে তাকালো বৃত্তের মুখের পানে। বৃত্ত মেঘার নাকে নাক ঘষে মিহি সুরে বললো,
— তোর ধারনা ভুল, ঘুমাই নি আমি। কিন্তু, এখন ঘুমাবো। আজ দুজন একসাথে সুখ ঘুম ঘুমাবো।

মেঘা মুচকি হেসে বৃত্তের বুকে মুখ গুজলো। বৃত্ত পরম আদরে মেঘাকে জড়িয়ে ধরলো। নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো তার প্রিয়তমাকে।

#চলবে
নোট ১- যাদের কাছে পোস্টটা পৌঁছাবে রিয়েক্ট করার অনুরোধ। পেজের রিচ অনেক কমে গেছে। পেজের রিচ বাড়াতে আপনাদের এই ছোট্ট রিয়েক্টই সহায়ক। আশা করি, আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। ভালোবাসা।

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri
আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/100063985747587/posts/274891191320404/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here