মেঘবৃত্ত পর্ব_৪১

মেঘবৃত্ত
পর্ব_৪১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

জড়তার সুতো কেটে গেলো। পবিত্রতা ঘিরে ধরলো পৃথিবীর এই মেঘবৃত্তকে। আকাশ ঢেকে গেলো মেঘের স্তরে। মেঘ নিংড়ে নামলো অজস্র বৃত্ত। সম্পূর্ণ ধরণী যেনো একজোট হয়েছে, পৃথিবীর এক মেঘবৃত্তকে এক করার জন্যে। বৃত্ত মেঘাকে কোলে তুলে নিল। মেঘা নখের ধারালো আঘাতে খামচে ধরলো, বৃত্তের টিশার্টের কলার। বৃত্ত চেয়ে রইলো মেঘার মুখের পানে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ঘরের দিকে।

মেঘাকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই, মেঘা লজ্জায় ওপাশ ফিরে গেলো। বৃত্ত মুচকি হাসলো। মেঘার কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে মুখ ডুবালো, মেঘার ঘাড়ে। মেঘা শিউরে উঠলো। লোমে লোমে কাঁপন ধরলো তার। শরীর শিরশির করে উঠলো। বৃত্ত মেঘার ঘাড়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে ডাক দিল,
— মেঘ?
মেঘা তখন দু চোখ বুজে। বৃত্তের কথা কানে যেতেই সে সম্বিত ফিরে পেলো। তবে, চোখ খুললো না। বুজে রাখা চোখেই জবাব দিলো,
— হু?
বৃত্ত মিহি কণ্ঠে বললো,
— তুই কি আমার মেঘ হবি? পূর্ণ করবি আমাদের? হবি কি সম্পূর্ণ ভাবে আমার? তোর অনুমতি ছাড়া তোকে ছুঁবো না আমি, প্রমিজ।

মেঘা কাঁপলো খানিক। বৃত্ত মেঘার দিকে চেয়ে আছে, বুকভরা আশা নিয়ে। মেঘা ঘুরে গেলো। বৃত্তের কলার ধরলো শক্ত করে। বৃত্ত তখনো স্বাভাবিক। মেঘা বৃত্তের মাথাটা তার দিকে নিচু করলো। আলতো করে বৃত্তের গালে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
— পেয়ে গেছিস অনুমতি?

ঠোঁট টিপে হেসে উঠলো বৃত্ত। অতঃপর, বাতি নিভে গেলো। পর্দা সরে গেলো। মেঘবৃত্তকে জড়িয়ে ধরলো, এক মুঠো পূর্ণতার রশ্মি! ইশ, আজ চাঁদও এই পূর্ণতায় মুখ লুকালো মেঘেদের আড়ালে। আজ বৃত্ত আর মেঘ মিলেমিশে সত্যিকার অর্থে ‘মেঘবৃত্ত’-এ পরিণত হলো।
_____________________________
কটা দিন পরের কথা। কাজ শেষ হওয়ায়, বৃত্ত আজ একটু জলদিই বাসায় ফিরেছে। মেঘা তখন শাশুড়ির সাথে বসে গল্প করছিল। আজকাল, বৃত্তের মা মেঘার প্রতি খানিক নরম হয়ে এসেছেন। মেঘার প্রতি জন্মানো তার অযথা ক্ষোভ এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। বিষয়টা মেঘাকে বেশ স্বস্থি দিচ্ছে। দরজায় কলিং বেল বাজতেই মেঘা একপ্রকার ছুঁটে গেলো দরজা খুলতে। বৃত্ত এসেছে, জানে মেঘা। বৃত্ত আসার আগে ফোন করে জানিয়েছে। মেঘা দরজা খুলতেই বৃত্তের ক্লান্ত দেহ নজরে পড়লো তার। বৃত্তের কপালে ঘাম, শার্টটাও ঘামে ভিজে শরীরের সাথে একদম মিশে গেছে। বৃত্তের এরূপ পরিশ্রম দেখে মেঘার মনে কষ্ট উদয় হলো। মেঘা বৃত্তের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিল। ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
— সোফায় বস। আমি লেবু পানি আনছি।

বৃত্ত ক্লান্ত হেসে ভেতরে এসে বসলো। মেঘা ড্রইং রুমের ফ্যানটা বাড়িয়ে দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। খানিক পর হাতে ঠান্ডা পানির শরবত বৃত্তের সামনে ধরলো। বৃত্ত শরবত খেতে খেতে প্রশ্ন করলো,
— মা রাতের খাবার খেয়েছে?
— হুম।
— আর তুই?
মেঘা উত্তর দিলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো বৃত্তের পাশে। বৃত্ত বুঝে গেলো, প্রতিদিনকার মত মেঘা আজও খায় নি। বৃত্তের অপেক্ষায় এতক্ষণ বসে ছিলো। বৃত্ত শার্টের টাই ঢিলে করে বললো,
— অযথা অপেক্ষা না করে, খেয়ে নিলেই পারতি। কি লাভ হয় এভাবে প্রতিদিন আমার জন্যে অপেক্ষা করে বসে থাকতে। সেদিন দেখলি না, মাথা ব্যথা উঠে যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়ে গেছিলো। তাও, শুধরাস না তুই।

বৃত্ত নিজের মতোই বকতে লাগলো মেঘাকে। মেঘা চুপটি করে বসে রইলো। একসময় বৃত্ত থামলো। হতাশ চোখে মেঘার দিকে তাকালো সে। সে জানে, এই যে মেঘাকে এত এত বকা দিল সে! এসব মেঘার কোনো কাজেই আসবে না। মেঘা একই ভুল আবার করবে। তারপর, মাথা ব্যথায় চিৎকার করে কান্না করবে। এ আর নতুন কি? বৃত্তকে থামতে দেখে মেঘা মুখ খুললো। মিনমিনিয়ে বললো,
— বকিস কেনো? আমার তোর জন্যে অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। তাই করি। আরে, কিছু হবে না আমার। চিন্তা করিস না তো। এখন যা, ফ্রেস হয়ে আয়। ভাত বাড়ছি আমি।

বৃত্ত হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। মেঘার দিকে তীক্ষ্ম এক চাওনি
নিক্ষেপ করে মায়ের সাথে দেখা করতে চলে গেলো।
__________________________
কদিন ধরেই মেঘার শরীর ভালো যাচ্ছে না। হুটহাট বমি, মাথা ঘোরানো এসব যেনো মেঘার পিছই ছাড়ছে না। শরীরটাও সারাক্ষণ যেনো ম্যাজম্যাজ করতে থাকে। মেঘার যা সন্দেহ হচ্ছে, তা যদি সঠিক হয়? ইশ, মেঘা তো খুশির চোটে পাগলই হয়ে যাবে।

রাতে ঘুমানোর সময়, মেঘা বৃত্তের বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। বৃত্ত ধীরে হাতে মেঘার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আজকাল বৃত্তের চিন্তার শেষ নেই। কদিন হলো, মেঘার মাথা ব্যথা বেশ বেড়েছে। সারাদিন ব্যথা করলেই, মেঘা তা কাউকে বলে না। কিন্তু, রাত হলে আর সহ্য হয়না এই মাথা ব্যথা। শুধু মাথা দুহাতে খামচে ধরে, কাঁদতে থাকে। বৃত্ত অনেকবার মাথার টেস্ট করিয়েছে। কিন্তু, লাভ হয়নি। কেউ রোগ ধরতে পারছে না। এ নিয়ে বৃত্তের রাতের ঘুম প্রায় হারাম হয়ে গেছে।

— বৃত্ত?
মেঘার ডাকে বৃত্তের ধ্যান ভঙ্গ হলো। সে বেখেয়ালিতে জবাব দিলো,
— হু?
মেঘা বৃত্তের বুকের আরো গভীরে মাথা গুজলো। বৃত্তও সুন্দর করে আগলে নিল তাকে। মেঘা মিনমিনিয়ে বললো,
— বৃত্ত, আই থিঙ্ক আই অ্যাম প্রেগন্যান্ট।

বৃত্তের হাত থেমে গেলো। চুলে বিলি কাটা বন্ধ হয়ে গেলো। এ কি বললো মেঘা? তার কান ধপধপ করছে। সে কি ঠিক শুনলো?

#চলবে
অনুগ্রপূর্বক, গল্প সম্বন্ধে দু লাইন গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। এতে আমার গল্পকে আর সুন্দর করে সাজাতে সুবিধা হবে। ভালোবাসা সকলকে।

লেখিকার পাঠকমহল(গল্প সম্বন্ধে সমস্ত আপডেট আমার গ্রুপে পাবেন)
গ্রুপ লিংক,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri
আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/100063985747587/posts/278559730953550/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here