#মেঘবৃত্ত
পর্ব_৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
— এখন কি করবো, মেঘ? তোর হিটলার বাবা এমন একটা গাঁজাখুরি প্রস্তাব তুলে ধরবে, সেটা জানলে তোর বাপের মুখে ফেবিকল আটকে দিতাম আমি। ড্যাম!
বৃত্তের মুখে নিজের বাবার নামে এসব কথা শুনে মেঘা ফুলে-ফেঁপে ঢোল হয়ে গেলো। আগুন চোখে তেড়ে গেলো বৃত্তের দিকে। বৃত্তের দিকে নিজের তর্জনী উঁচিয়ে বললো,
— বাবার নামে একটা বাজে কথা বলবি তো এখানেই তোর মাথা ফাটিয়ে ফেলবো আমি। তাই নো সাউন্ড, ওকে?
বৃত্ত মেঘার এমন রণমূর্তি ভাবখানা দেখে এক বিন্দুও বিচলিত হলো না। বরং, খুব ধীরে সুস্থে মেঘার আঙ্গুল হাত দিয়ে নিচে নামিয়ে বলে উঠলো,
— একশোবার বলবো। কি করবি তাহলে?
— ভালো হবে না কিন্তু! বাবার নামে একটাও বাজে কথা আমি বরদাস্ত করবো না। বুঝলি?
— তোর হিটলার বাপরে হিটলার বলবো না তো কি বলবো? সন্ন্যাসী?
— বৃত্তের বাচ্চা!
মেঘা রেগে মেগে ধমকে উঠলো বৃত্তকে। বৃত্ত বাঁকা হেসে মেঘাকে রাগানোর জন্যে বললো,
— যেমন বাপ তেমন তার মেয়ে! দুজনের ভিতরেই জিলাপির প্যাচ।
ব্যাস! এটুকুই কথাই মেঘাকে রাগানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল। মেঘা তুমুল রাগ নিয়ে বৃত্তের পুরুষালি বাহুতে জোরেসোরে একের পর এক ঘুষি দিতে লাগলো। মেঘার চুড়ুইপাখির মত হাতে বৃত্তের ব্যথা না লাগলেও বৃত্ত চোখ মুখ খিঁচে ব্যথা পাওয়ার ভান ধরলো। হাত দিয়ে মেঘাকে আটকানোর চেষ্টা করে বললো,
— আরে! ব্যথা পাচ্ছি তো। সর! সর বলছি। আর একটা মারবি তো খবর আছে তোর। সর!
মেঘা সরলো না। বরং, হাতের তৃষ্ণা মিটিয়ে তারপরই ক্ষান্ত হলো। অতঃপর, ক্লান্ত শরীরে বিছানায় বসে পড়লো। হাঁপাতে লাগলো অবিরত। হাত ব্যথা হয়ে গেছে পুরো। মেঘা দুবার হাত ঝাড়া দিলো। বৃত্ত মেঘার এমন কাণ্ড দেখে শব্দ করে হেসে ফেললো। বৃত্তের সেই হাসি মেঘার নিভে যাওয়া রাগকে মুহূর্তের মধ্যে আবারও জ্বালিয়ে দিলো। মেঘা রাগ নিয়ে তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্ত সেসব পাত্তা না দিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
— জান নাই এটুকু। আর আমার সাথে লাগতে আসিস? আজ পর্যন্ত কখনো পেরেছিস আমার সাথে? হুঁ?
এটা সত্য কথা! বৃত্তের কথা, যুক্তি, কাজের সাথে কখনোই মেঘা পেরে উঠে না। বৃত্ত সবসময় মেঘার থেকে তিন কদম এগিয়ে থাকে। তবে, মেঘা সেই সত্য স্বীকার করলো না। মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— হুহ, আসছে! তোর মতন চিটিং করলে আমিও তোর থেকে সবসময় এগিয়ে থাকতাম। বুঝেছিস?
বৃত্ত মুচকি হেসে মেঘার পাশে এসে বসলো। বললো,
— হুম,বুঝলাম। বুঝলাম যে, আমরা নিজেদের প্রবলেম মেটানোর বদলে নিজেরাই ঝগড়া করছি। সো লেইম!
মেঘা হেসে ফেললো। আসলেই তো? ওরা কেনো ঝগড়া করছে? ওদের তো এখন প্ল্যান করার কথা ছিল। তবে, মেঘা কি এটা জানে? এই ছোট খাটো ঝগড়াই তাদের বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন? এক মিষ্টি বন্ধুত্বের পরিচয়?
— এখন কি করা যায়, মেঘ?
— হুম, তাইতো! আমি জানি না। তুই ভাব!
— আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না, বাল!
— এই তুই আবার স্ল্যাং ইউজ করছিস? মানা করেছিলাম না আমি?
মেঘা আবারও তেঁতে উঠলো। বৃত্ত মেঘার রাগকে তুচ্ছ করে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বললো,
— তো? ফ্রেন্ড ছিলি যখন তখন মেনেছি। এখন তুই আমার বউ! তো এখন আমি যা বলব তোর তাই মানতে হবে। ওকে?
‘তুই আমার বউ’ কথাটা শুনে মেঘার মনে প্রশান্তি ছেয়ে গেল। এত কেনো ভালো লাগলো কথাটা? মনে হচ্ছে, বৃত্তের মুখে এই বাক্যটা শোনার জন্যেই তার জন্ম হয়েছে! ইশ!এই তো! এখনো কানে বাজছে সেই কথাটা! কানে মিষ্টি এক ঝঙ্কার তুলে দিয়েছে এই মধুর বাক্য। মেঘা চুপটি মেরে বসে রইলো। অনুভব করতে লাগলো সেই মিষ্টি অনুভূতি!
— ওই, কই হারালি?
বৃত্তের ডাকে মেঘার হুশ ফিরলো। মেঘা নিজেকে ধাতস্থ করে তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্ত কিছু একটা চিন্তা করে বললো,
— এক কাজ কর, তুই অসুস্থ হয়ে যা।
মেঘা হতবাক হয়ে গেলো। কিছুই বুঝলো না। বোকার মত প্রশ্ন করলো,
— মানে?
— মানে হলো তুই আজকে মিথ্যে মিথ্যে অসুস্থ হয়ে যা। সবচেয়ে ভালো হয় জ্বর হলে। হাউ’জ দ্যাট আইডিয়া?
মেঘা ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো,
— কিন্তু, হুট করে অসুস্থ হবো কি করে?
বৃত্তের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বললো,
— জাস্ট ওয়ান সেকেন্ড। আই অ্যাম কামিং।
বৃত্ত রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। মেঘা বোকার মত বসে ভাবতে লাগলো, ‘বৃত্তের প্ল্যানটা কি?’
খানিক পর বৃত্ত রুমে এলো। হাতে একটা পিঁয়াজ। বৃত্ত মেঘার পাশে এসে বসলো। বললো,
— মনে আছে মেঘ? আমি যেদিন স্কুলে যেতে চাইতাম না, সেদিন এই পিয়াজ ব্যাবহার করে জ্বরের অভিনয় করতাম। কেউ সেটা না বুঝলেও তুই ঠিক বুঝে যেতি? আজ ঠিক এই ট্রিকসটাই অ্যাপ্লাই করবো আমরা। সো, রেডি?
মেঘা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো বৃত্তের দিকে। বৃত্তের মাথায় কি চোরা বুদ্ধি! মেঘা মনে মনে বৃত্তের বুদ্ধির তারিফ করে নিলো। সামনা সামনি করলে আবার ভাব বেড়ে যাবে।
____________________________
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ। মেঘার বাবা-মা চলে যাবেন এখন। কিন্তু আশেপাশে মেঘাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না? কোথায় গেলো ও? মেঘার বাবা বৃত্তযে জিজ্ঞেস করলেন,
— বৃত্ত? মেঘা কোথায়?
বৃত্ত নিচু সুরে বললো,
— জ্বি, আমি দেখছি।
বৃত্ত সম্পূর্ণ ঘর খুঁজে প্ল্যানমাফিক নিজের মায়ের ঘরে গেল। মেঘাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে পিছন ফিরে চেচিয়ে বললো,
— আঙ্কেল, মেঘা এখানে।
মেঘার বাবা সেই রুমের দিকে এগিয়ে এলেন। বিছানায় মেঘাজে শুয়ে শুয়ে কাতরাতে দেখে মেঘার বাবা হতভম্ব হয়ে গেলেন। তাড়াহুড়ো করে মেঘার পাশে এসে বসলেন। ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
— কি হয়েছে তোর?
মেঘা আস্তে করে বলল,
— মনে হচ্ছে, গা পুড়ে যাচ্ছে। সারা শরীরে কি ব্যথা! আমি কি মারা যাচ্ছি বাবা?
মরার কথা শুনে মেঘার বাবার মুখখানা পাংশুটে হয়ে গেলো। তিনি মেঘার কপালে হাত ছুঁলেন। ওরে বাবা! কি জ্বর! মেঘার বাবা অসহায় চোখে মেঘার দিকে তাকালেন। বললেন,
— হঠাৎ করে জ্বর এলো কেমন করে? একটু আগে তো ভালোই ছিলি।
মেঘা উত্তর করলো না। বিছানায় এপাশ হতে ওপাশ ফিরে কাতরাতে লাগলো। অস্ফুটসুরে জ্বরের প্রলাপ বকতে লাগলো।
#চলবে
রবিবারে গল্প দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু, ছোট করে আজ দিলাম। রাগ করবেন না, প্লিজ। ভালোবাসা!
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/256856913025543/?app=fbl