মেঘভেলায় প্রেমচিঠি” পর্ব ২৩

0
388

“মেঘভেলায় প্রেমচিঠি ”

২৩.

সোহার ডাকে পেছনে ফিরে এক ঝলক হাসি দিয়ে তাকালো রোদসী। দুপুরের কটকটে তাপ থেকে নিজেকে আড়াল করতে হাত মাথার উপরে রাখলো। টিংটিংএ শরীরটা নিয়ে দৌড়ে এলো। সোহার কাছে এসে দাঁড়াতেই সোহা ঝাড়ি দিয়ে বলল,

‘রোদের বাচ্চা! সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি আমি তোর জন্য, এই সময় হলো আসার! ‘

রোদসী জিহ্বা কাটে, ফিক করে হেসে বলে,

‘সরি সরি, তুই সকালে হঠাৎ করেই বললি মার্কেট যাবি আমি তাড়াতাড়ি করেই সব কাজ শেষ করলাম কিন্তু শেষ টাইমে আরুকে খাইয়ে দিতে গিয়ে লেট হলো। ‘

‘হুহ! ‘

‘আচ্ছা, এখন তোর দেরি হচ্ছে না? ‘

‘ওহ হ্যা হ্যা, চল। আমার বড় বোনের জন্মদিন দুইদিন পর। কেনাকাটা করতে হবে। তুইও আসবি কিন্তু। ‘

রোদসী আর সোহা নানান কথা বলতে বলতে মার্কেটে ঢুকলো। শাড়ির দোকানে গিয়ে শাড়ি দেখতে দেখতে দরদাম করছে রোদসী। সোহা বা রিম্মি দুজনেই কেনাকাটার সময় রোদসীকে সঙ্গে নিয়ে আসে। কারণ সে ভালো দরদাম করে। বাজেটের ভেতরেই সব কিনতে পারে। সব কিছু টিপটিপ ফিটফাট রাখতে রোদসীর হাত দুটো বেশি চলে ৷ জহুরির চোখের মতো ভালো সুন্দর জিনিস গুলোই কিনে। পড়াশোনায় এভারেজ, তবে অন্য জিনিস গুলোতে বেশ রুচিশীল। তাই কেনাকাটার কথা মাথায় এলেই সবার আগে রোদসীর কথা মনে পড়ে। রোদসী জলপাই সবুজ রঙের একটি শাড়ি হাতে নিয়ে দেখছিলো পছন্দ হতেই নিয়ে নিলো নিজের জন্য। তারপর সোহার সাথে যাবতীয় জিনিস পত্র নিয়ে মার্কেট থেকে বের হলো।
কপালে ওড়না দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই পেছনে থেকে এক গুরুগম্ভীর কন্ঠ শুনে থেমে গেলো। সোহার কর্ণকুহর হতেই পেছনে ফিরে দেখে সূর্য স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। সোহা ভ্রু উঁচিয়ে রোদসীকে ফিসফিস করে বলল,

‘এই রোদ, দেখতো এটা সূর্য স্যার না! ‘

রোদসী পেছনে তাকিয়ে দেখলো সত্যিকারেই সূর্য স্যার দাঁড়িয়ে আছে। গোছানো ইন করা শার্ট আর হাত দুটো পকেটে ঢুকানো। সূর্য দেখতে অনেকটাই সুদর্শন।
রোদসীর দেখা মাত্রই এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে এলো সূর্য। হাসিমুখে বলল,

‘তোমরা এখানে যে, কেনাকাটা করতে এসেছো! ‘

সোহা হাসি দিয়ে কিছু বলার আগেই রোদসী বলল,

‘এমা! মার্কেটে কী কেউ ঘুমাতে আসে নাকি! ‘

রোদসীর এই মুখের উপর বলে দেয়ার স্বভাবের কারণে অনেকেই তাঁকে ঠোঁটকাটা বলে ডাকে। রোদসীর একপ্রকার অভ্যাস, কেউ অযৌক্তিক কথা বললে সাথে সাথে ধরিয়ে দেয়া। এই যেমন, সূর্য স্যারের সামনে বললো। মার্কেটে যে সবাই কেনাকাটার জন্যই আসে, এটাই স্বাভাবিক। অহেতুক কথার প্রতিত্তুর করায় সূর্য একটু লজ্জা পেয়ে বলল,

‘উহ! রোদসী, তোমার এই স্বভাব কবে বদলাবে! ‘

তিনজন কথা বলতে বলতে বাইরে এসে দাঁড়ালো।
হঠাৎ-ই সোহার ইমারজেন্সি কল আসে বাসা থেকে।সোহা রোদসীকে বলল,

‘দোস্ত, আমার এখনই যেতে হবে। ‘

‘আচ্ছা, আমিও যাবো তোর সাথে। আমাদের বাসা তো কাছাকাছি। ‘

‘না না থাক, তুই বরং সূর্য স্যারের সঙ্গে আসিস। আমার পার্লারে একটা কাজ আছে। ‘

সোহা বলেই একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলো। এমন আচরণের মানে খুঁজে পেলো না রোদসী। রাগ উঠে গেলো প্রায়। যার জন্য সাত সকালে ঘুম ভেঙে এলো, সে কিনা ওকে ফেলেই চলে যায়। রোদসী বিরবির করে গালি দেয় সোহাকে। আজ ওর জন্য এতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। জীবনেও একা সূর্য স্যারের সঙ্গে যাবে না রোদসী৷ ভেবে সূর্য স্যারকে বলল,

‘আমি আসি স্যার। ভালো থাকবেন। ‘

সূর্য উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,

‘কেনো! একা যেতে হবে না। চলো আমি দিয়ে আসি তোমাকে। ‘

রোদসী বেজায় বিরক্ত হয় মনে মনে। এভাবে কোন পুরুষ মানুষের সাথে একা যেতে ইচ্ছে করেনা। তবুও, অগত্যা শিক্ষক মানুষ বলে বাধ্য হয়ে রাজি হয়। সূর্য হেসে রিকশা ডাকে। রোদসী উঠে বসতেই ওর পাশে ধপ করে বসে। গায়ে ঘেঁষা লাগতেই সংকুচিত হয়ে চেপে যায় রোদসী৷ সূর্য কথার ঝুলি খুলে বসে। নিজের স্কুল লাইফ সম্পর্কে নানান কথা বলতে থাকে, কখনোবা রোদসীকেও জিজ্ঞেস করছে। রোদসী মাথা নাড়িয়ে শুধু হ্যা, না বলছে। বাসার কাছে আসতেই রোদসী হাফ ছাড়লো। দ্রুত পদে নেমে সালাম দিয়ে বাসায় চলে যায়। পেছনে থেকে সূর্য হয়তো আরও কিছু বলছিলো, কিন্তু রোদসী সেদিকে কর্ণপাত করেনি।

দেখতে দেখতে এসএসসির আর দুই দিন বাকী আছে। যে যেমন স্টুডেন্টই হোক, সারারাত দিন বই হাতেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিকেলের দিকে রোদসী ধ্যান জ্ঞানের সবটুকু দিয়ে বই পড়ছে। এমন সময় রিম্মি কল করে বলল,

‘রোদ, দুইদিন পরেই পরীক্ষা, চল আজকে অনেকক্ষণ পড়বো কোচিং-এ। ‘

রোদসী দোনোমোনো করে বলে,

‘বাসায় পড়ছি আমি, ভালো লাগছে না। তোরা যা। ‘

রিম্মি জেদ করে বলে,

‘দেখ, এভাবে বাসায় পড়লে আমরা কখনো ভালো রেজাল্ট করতে পারবো না। তুই চলতো। আমিও যাচ্ছি। ‘

‘সোহাও আসবে? ‘

‘হ্যারে বাবা হ্যা। ‘

‘আচ্ছা তাহলে আসছি আমি। তোরা আসিস কিন্তু। ‘

মোবাইল রেখে থম মেরে বসে কিছুক্ষণ। রোদসীর মন টানছেনা কেনো জানি। গত কয়েক দিন যাবৎ সূর্য স্যারের আচরণ ওর কাছে অন্য রকম লাগছিলো। কথায় কথায় হাত ধরা। অতিরিক্ত ভাব জমানোর চেষ্টা। তাই, সামনে পরীক্ষা হওয়া সত্ত্বেও বাসায় বসেই পড়াশোনা করছিলো। কিন্তু এখন না চাইতেও উঠে রেডি হয়। কোচিং এর ভেতর ঢুকে অনেকটাই চমকে উঠলো রোদসী। একটা মানুষও নেই। কী আশ্চর্য! সোহা, রিম্মি কেউই নেই। রোদসী বের হওয়ার জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু একজোড়া হাত তাঁকে পেছনে থেকে টেনে নিলো। কানের কাছে মুখ গুঁজে বলল,

‘জান, অবশেষে তুমি এলে। ‘

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here