#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_৪
লিখা: Sidratul Muntaz
সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসতেই অরিন একটা দারুণ চমক পেল। সুন্দর করে বাঁধা একটা সোনালী শপিং ব্যাগে ওর জন্য অনেকগুলো গিফট। অরিন খুলে দেখলো প্রায় দশটার মতো লিপস্টিক, আইশ্যাডো পেলেট, গোল্ডেন আর ব্লু আইলাইনার, প্রায় বিশ শেডের নেইল পলিশ, আরও অনেক কিছু। সবই মেকাপের জিনিস। অরিনের সবচেয়ে প্রিয় শখ হলো মেকাপ করা। ওর এই শখ শুধুমাত্র একজনই এপ্রিশিয়েট করে। সে হলো অরিনের বড়ভাই অর্ণভ। গতকালের আগের রাতেই ভাইয়া জিজ্ঞেস করছিল,
” বেতন পেয়েছি৷ তোর কিছু লাগবে?”
অরিন তখন ভাইয়ের হাতে কসমেটিকসের লিস্ট ধরিয়ে দিল। অর্ণভ কটাক্ষ করে বললো,
” ইশশ, এসব লাগালে কি তোর চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে? পেত্নী তো পেত্নীই থাকবি। তাহলে এসব লাগিয়ে লাভ কি?”
” লাভ-ক্ষতি বুঝি না। কিন্তু ভালো লাগে।”
” এসব ফালতু জিনিস কিনে পয়সা নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। কাজের জিনিস লাগলে বল। ”
” কাজের জিনিস লাগলে বাবার কাছেই চাইতে পারি। তোমার কাছে কেনো চাইবো? তোমার কাছে চাইবো শুধু অকাজের জিনিস।”
” তোর কি মনে হয়? আমার টাকা আকাশ থেকে টপকায়?”
অরিন হেসে বললো,” আমি কি জানি কোথ থেকে টপকায়?”
অর্ণভ লিস্টটা অরিনের টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,” কিচ্ছু আনতে পারবো না। এতো টাকা নেই আমার।”
অরিন তখন খুব ভালো করেই জানতো, তার ভাইয়া লিস্টের প্রত্যেকটা জিনিস মুখস্ত করে নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই অরিন তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলো পেয়ে যাবে। কিন্তু সেটা যে এতো জলদি পাবে তা ভাবেনি। ভাইয়া নির্ভুলভাবে সবকিছু কিনে এনেছে। একটা জিনিসও বাদ পড়েনি। মেকাপ স্পঞ্জটা পর্যন্ত কিনতে ভুলেনি।অরিন প্যাকেটটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো। ছোট্ট একটা চিরকুটও আছে সাথে। অর্ণভ ভাইয়া উপহার দিবে আর চিরকুট দিবে না এটা তো হতে পারে না।
” আচ্ছা অরিন, গোল্ডেন রোজ ব্র্যান্ডের সাথে কি তোর ব্যক্তিগত কোনো চুক্তি আছে? সবকিছু কেনো এখান থেকেই কিনতে হবে বলতো? যা দাম জিনিসের, বাবা শুনলে এতোক্ষণে হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে কোমায় চলে যেতেন। তোদের মেয়েদের পেছনে কি আসলেই এতো খরচ? আমি ভাই তাহলে বিয়েই করবো না। বোনের জিনিস কিনতে এসেই অর্ধেক সেলারি শেষ। তারপর বউ এলে তো একেবারে ফতুর হয়ে যাবো রে! আচ্ছা অরিন, তুই কি জানিস? তুই দেখতে একদম গোল্ডেন রোজের মতো।”
শেষ কথাটুকু পড়ে অরিনের চোখে জল চলে আসলো। সে চিঠিটা মুখে গুজে কাঁদতে শুরু করলো। ভাইয়া ছাড়া কেউ কখনও তার রূপের প্রশংসা করে না। এমনকি অরিনের যখন জন্ম হয়েছিল, তখনও কেউ তাকে কোলে নিতে চায়নি। মা পর্যন্ত অরিনকে দেখে বিরক্তিতে মুখ কুচকে রেখেছিলেন। কারণ অরিনের গায়ের রঙ ছিলো কালো। যেনো তেনো কালো নয়, একেবারে কুচকুচে কালো। কয়লা যেমন হয়, ঠিক তেমন। অরিনের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে অরিন তাদের পরিবারের মেয়ে। কারণ অরিনের পরিবারের প্রায় সব সদস্যই উজ্জ্বল বর্ণের অধিকারী। সেখানে অরিনই একমাত্র বাচ্চা যে পৃথিবী অন্ধকার করা রঙ নিয়ে জন্মেছে। অরিনের নানী অরিনকে দেখামাত্রই বারবার করে নার্সকে জিজ্ঞেস করছিলেন,
” বাচ্চা পালডাপালডি হইয়া যায় নাই তো? এডা কি আসলেই আমার নাতনি? মনে তো হয় না। এতো কালা ক্যা?”
নার্স বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন,” বাচ্চা রাখতে না চাইলে আমাদের কাছে বেঁচে দিন। অনেক আপা আছেন যারা মা হতে পারবেন না। তাদের কাজে লাগবে।”
অরিনের মা নাকি তাকে প্রথমে কোলেই নিতে চায়নি ওকে। কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন,
” এই মেয়ে আমার হতে পারে না। আমি ওকে জন্ম দেইনি।”
অরিন যখন তার নানীর কাছে প্রথম এই কথা জানতে পারলো তখন তার চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। একজন মা তার সদ্যজাত কন্যা সন্তানকে কোলে নিতে অস্বীকার করলেন শুধুমাত্র অসুন্দর বলে? অরিন সবকিছু মেনে নিলেও এই যন্ত্রণা মেনে নিতে পারে না। এই অসহ্য কষ্ট তাকে তেরো বছর ধরে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। অরিনের বয়স যখন সাত, তখন সে এসব ঘটনা প্রথম জানতে পারে। নানী মরার আগে অরিনের হাতে হাত রেখে সব বলে গেছেন। অরিন শুধু ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদেছে। একটা অসুন্দর শিশু কি মায়ের আদর থেকেও বঞ্চিত হয়? সেদিন কেউ অরিনকে কোলে পর্যন্ত নেয়নি। অর্ণভ এসে প্রথমবার তার নবজাতক ছোট্টবোনকে কোলে নিল। তখন অর্ণভের বয়স মাত্র নয় বছর। অরিনকে নিয়ে সে কি আনন্দ তার! একমাত্র ছোটবোন পেয়েছে। এই বোনকে নিয়ে সে কত জায়গায় ঘুরবে, কত আদর করবে, খেলবে, যত্ন করবে। অর্ণভ বায়না করতে লাগলো তাকে বোনের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে বোনকে এখনি দেখবে। কিন্তু কেউ অর্ণভকে অরিনের কাছে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিল না। সবার ধারণা অর্ণভ এতো কালো বাচ্চা দেখলে ভয় পাবে। কিন্তু ঘটনা একদম উল্টো হলো। যখন অরিনকে অর্ণভের কোলে দেওয়া হলো অর্ণভ তখন আনন্দিত হয়ে বললো,” কি সুন্দর বোন হয়েছে আমার। কি সুন্দর একটা বাবু। কত ছোট হাত-পা। আমি ধরলে কি ও ব্যথা পাবে?”
বোনকে নিয়ে অর্ণভের উচ্ছলতা দেখে সবাই অবাক। অর্ণভ আরও বললো,” বাবা, ওর নাম আমি রাখি? আমার নামের সাথে মিলিয়ে রাখবো কিন্তু। অরিন হবে ওর নাম। অর্ণভ আর অরিন দুই ভাই-বোন।”
অর্ণভের দাদী মুখ কালো করে বললেন,” তোর বোন কোনদিক দিয়ে সুন্দর হয়েছে রে পাগলা? ও তো কালো। পঁচা হয়েছে দেখতে।”
অর্ণভ দাদীর কথা শুনে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎ উত্তর দিল,” কালো বলে পঁচা হবে কেনো? কালো কি পঁচা? দাদু তুমি কালোগোলাপ দেখেছো জীবনে?চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর। একটা কালোগোলাপের কাছে একশোটা সাদা গোলাপ তো কিছুই না। আমার বোন একদম কালো গোলাপের মতো হয়েছে। ও সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে দামী!”
মায়ের কথা শুনে অরিন যতটুকু কষ্ট পেয়েছিল ভাইয়ের কথা শুনে তার চেয়েও দ্বিগুণ আনন্দে ওর বুক ফুলে উঠেছিল। অরিন পৃথিবীতে শুধু এই একটি মানুষকে অনেক বেশি ভালোবাসে। সেদিন অর্ণভের কথায় সবার হয়তো কিঞ্চিৎ বিবেকবোধ জাগ্রত হয়। একে একে প্রত্যেকেই অরিনকে কোলে নেয়। কিন্তু মন থেকে কেউ আদর করেনি। মা তো তিনবছর বয়সেও অরিনকে লিপস্টিক দেওয়ার জন্য মারতেন আর বলতেন,
” কালো হয়ে জন্মেছিস। তোর আবার এতো ঢং কিসের রে? এমনিই তো বিছরি দেখতে। লাল টকটকে লিপস্টিক দিলে তোকে আরও বিছরি লাগে। আর কখনও লিপস্টিক দিতে দেখলে থাপ্পড় মেরে গাল ফাটিয়ে ফেলবো৷ বেয়াদব মেয়ে!”
অরিন তখন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলতো। আর অর্ণভ অরিনকে কোলে নিয়ে চিলেকোঠার ঘরে চলে আসতো। মা যাতে না দেখতে না পায় এমনভাবে লুকিয়ে লিপস্টিক, কাজল দিয়ে নিজহাতে বোনকে সাজিয়ে দিতো। অরিনের সাজ-গোজের শখটা ছোটবেলা এভাবেই তৈরী হয়েছিল। অর্ণভ পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করতে পারে। কিন্তু অরিনের চোখের একফোঁটা পানি সে সহ্য করতে পারে না।
অরিন অর্ণভের উপহারের ব্যাগটা জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। তখনি হালিমা ডাকলেন,
” অরিন, কি করছিস মা? পড়তে বসেছিস নাকি?”
অরিন কেঁপে উঠলো। মা কি ওর ঘরের দিকেই আসছে? সে দ্রুত চোখের জল মুছে নিল। আর উপহারের ব্যাগটা লুকিয়ে ফেললো। হালিমা ঘরে ঢুকেই অস্থির হয়ে বললেন,
” এই শোন, তোর বাসন্তী খালামণি ফোন করেছিল। তোর সঙ্গে নাকি আর্জেন্ট কথা আছে। তোকে হোয়াটসঅ্যাপে এখনি ফোন করতে বলেছে। একটু ফোন করে দ্যাখ তো কি বলে?”
অরিন মায়ের দিকে ফিরে তাকালো না। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ ফুলে গেছে। মা দেখলে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলবে। অরিন শুধু বললো,
” ঠিকাছে মা, ফোন করছি।”
” আচ্ছা।”
হালিমা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। অরিন বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুঁয়ে ফ্রেশ হলো। তারপর তার বড়খালাকে ফোন করলো। অরিনের বড়খালার নাম শেহনাজ বাসন্তী। তিনি উত্তরার একটা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক। উত্তরা ছাড়াও তাঁর যে আরও কত জায়গায় কত বাড়ি আছে তা বোধহয় তিনি নিজেও গুণে শেষ করতে পারবেন না। বড়খালামণি ফোন রিসিভ করেই হুংকার ছাড়লেন,
” এতোক্ষণ লাগে তোর ফোন করতে? মানুষ মরে গেলেও তো তোরা খবর পাবি না। সারাদিন থাকিস কই? জলদি আমার বাসায় আয়। আগুন লেগেছে। বিরাট অগ্নিকুণ্ড। তোর ভাইটাকেও ঘাঁড় ধরে নিয়ে আয়।”
অরিন লাফিয়ে উঠলো,” কি বলছো খালা? সত্যি আগুন লেগেছে?”
” তো আমি কি তোর সঙ্গে ফাজলামি করছি নাকি?”
” আচ্ছা, আমি এখনি আসছি। নৌশিনকেও নিয়ে আসবো?”
” যাকে খুশি নিয়ে আয়। কিন্তু খবরদার তোর মাকে আনবি না।”
” ঠিকাছে খালা, তুমি টেনশন করো না।”
” আয় জলদি। অর্ণভও যেনো আসে।”
অরিন ফোন রেখে দিল। সে জানে না, বাসন্তী খালা তাকে এই সন্ধ্যাবেলা কেনো ডেকেছেন। তবে আপাতত অরিনের কাজ হচ্ছে সেজে-গুজে তৈরী হওয়া। তারপর অর্ণভ আর নৌশিনকে সাথে নিয়ে বাসন্তী খালার বাসায় যাওয়া। যতবার সে খালার বাসায় যায় ততবার তার মন ফুরফুরে হয়ে উঠে।
নৌশিন অরিনের সমবয়সী মামাতো বোন। ওরা পাশাপাশি ফ্ল্যাটেই থাকে। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে। স্কুল-কলেজ,ভার্সিটি সব একসঙ্গে। অরিনের ধারণা ওদের বিয়েটাও একসঙ্গেই হবে। অরিন বর্তমানে নৌশিনদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপছে। মামী দরজা খুলেই অরিনকে দেখে বললেন,
” কি ব্যাপার? সন্ধ্যাবেলায় সেজে-গুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
” বাসন্তী খালার বাসায় যাবো মামী। নৌশিন কোথায়? ওকেও নিয়ে যাবো।”
” নৌশিনের তো জ্বর। ও তোমার সঙ্গে কিভাবে যাবে?”
” জ্বর মানে? কিভাবে জ্বর এলো?”
অরিন একথা বলে আর উত্তরের অপেক্ষা করলো না। সোজা ঘরে ঢুকে গেল। নৌশিন বিছানায় শুয়ে আছে। অরিন বললো,
” কিরে নৌশিন, তোর জ্বর কিভাবে এলো?”
নৌশিন মলিন মুখে বললো,” আর বলিস না। আজকে যা ঘটনা ঘটেছে আমি তা আজীবনেও ভুলবো না।”
অরিন বসতে বসতে বললো,
” কি এমন ঘটনা শুনি?”
” আরে, সকালবেলা বাসন্তী খালার বাসায় যেতে নিয়েছিলাম। তখন মেইনরোডের সামনে একটা সুন্দর ছেলেকে দেখতে গিয়ে আমি ধপাশ করে ড্রেনে পড়ে গেছি।”
অরিন এই কথা শুনে খুব জোরে হেসে দিল। নৌশিন বললো,
” তুই হাসছিস? আমার যে কি অবস্থা হয়েছে তা শুধু আমিই জানি। লজ্জায় আমি রাস্তার কারো দিকে তাকাতে পারছিলাম না। তারপর বাসায় এসে তিনবার গোসল করেছি।”
” তিনবার গোসল করে জ্বর চলে এলো?”
” গোসলের জন্য জ্বর আসেনি। ড্রেনের ময়লা তো সেই কবেই ধুঁয়ে গেছে। কিন্তু ওই সুদর্শন পুরুষের ভূত আমার মন থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। তুই বিশ্বাস কর বোন, এত্তো সুন্দর ছেলে আমি আমার ইহজনমে কোনোদিন দেখিনি।”
” হুম। সেটা তো বুঝতেই পারছি। এতোই সুন্দর যে দেখতে দেখতে একদম ড্রেনে পড়ে গেলি। আচ্ছা তারপর কি হলো? ছেলেটা তোকে ড্রেন থেকে টেনে তোলেনি?”
নৌশিন মুখ বাঁকা করে বললো,
” ইশশ! সেই কপাল কি আর আছে? সে তো আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে সাইকেল নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ”
” আহারে!”
” তবে ছেলেটা মনে মনে কিছু একটা বলেছিল। হয়তো ইডিয়েট বা এমনকিছু। দারুণ লজ্জা পেয়েছি আমি।”
অরিন মুখ চেপে ধরে আবারও হাসতে লাগলো।
” তাহলে কি সেই সুদর্শন সাইকেলওয়ালার জন্যই তোর জ্বর এসেছে?”
নৌশিন মাথা নাড়লো। বললো,
” ছেলেটা হলুদ শার্ট পড়া ছিল। কি যে চমৎকার! শার্টে পিজ্জার লোগো ছিল। আমার মনে হয় সে পিজ্জা ডেলিভারি করে। এই ছেলেকে খুঁজে দিতে পারবি?”
” তুই এই ছেলেকে খুঁজে কি করবি?”
” লাফ মেরে বিয়ে করে ফেলবো।”
“এই কথা মামা জানলে তোকে লাফ মেরে বাসা থেকে বের করে দিবে। ডেলিভারি বয় দেখে ক্রাশ খাওয়া আবার ড্রেনে পড়ে যাওয়া, সেই ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে জ্বরও বাঁধিয়ে ফেলা? দাঁড়া না, মামানিকে বলছি আমি সব। এখনি তোর কীর্তি ফাস করছি।”
” আরে, আরে, তোকে আমি বিশ্বাস করে বললাম। আর তুই বেঈমানী করবি?”
” অসুস্থ না তুই? মেডিসিন নে। চুপচাপ শুয়ে থাক।আর ডেলিভারি ম্যানদের দেখে ক্রাশ খাওয়া বন্ধ কর। কয়দিন পর তো রিকশাওয়ালা দেখলেও ক্রাশ খাবি।”
” রিকশাওয়ালাও যদি এতো সুন্দর হয় আমার ক্রাশ খেতে আপত্তি নেই।”
অরিন নৌশিনদের বাসা থেকে বের হয়ে এলো। মেয়েটার মাথাখারাপ হয়ে গেছে। আচ্ছা, কি এমন সুন্দর ছেলে যাকে দেখে ড্রেনে পড়ে যেতে হবে? বাসায় এসে তার কথা ভাবতে ভাবতে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলতে হবে?
অরিন একাই বাসন্তী খালার বাসায় গেল। খালা বললেন,
” তুই একা কেনো? অর্ণভ আসেনি?”
” ভাইয়ার নাকি জরুরী কাজ আছে। তাই আসতে দেরি হবে। বলেছে এখানে এসেই ডিনার করবে।”
” তাহলে ঠিকাছে।”
” এখন বলো খালা, তোমার বিরাট অগ্নিকুণ্ডের কাহিনি কি?”
” কাহিনি হলো তোর বোন।”
” কি হয়েছে নিশুআপুর?”
” আমি তো বাসায় ছিলাম না। শপিং এ গেছিলাম। আগুনটা তখনি লেগেছে। নবাবকন্যা সকাল থেকে ঘরে দরজা দিয়ে বসে আছে। এখন পর্যন্ত একবারও বের হয়নি। লাঞ্চও করেনি। কারো সাথে কথাও বলছে না।”
” কিন্তু কেনো?”
” আমি কি জানি? এজন্যই তো তোকে ডেকে আনলাম। তুই একটু গিয়ে দ্যাখ, দরজা খুলাতে পারিস নাকি। তারপরই না জানা যাবে আসল কাহিনী।”
অরিন চিন্তিত মুখে নিশিতার বেডরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সুমনা ফ্রীজ থেকে সবজি বের করতে করতে অরিনকে বললো,
” ভালো আছেন আপা?”
” হ্যাঁ ভালো। নিশুআপুর কি হয়েছে রে সুমনা? তুই কিছু জানিস?”
সুমনা একবার এদিক-ওদিক তাকালো। তারপর ফিসফিস করে বললো,” জানি, আপনারেও কমু। কিন্তু খালাম্মারে কইয়েন না। তাইলে বাসাত আগুন লাগবো।”
” আচ্ছা বলবো না। তুই বল।”
” আজকা সকালে সেইরকম দেখতে একটা হ্যানসাম ডেলিভারিম্যান আইসিল। আপায় তার উপর কেরাশড।”
” হোয়াট? ক্রাশ খেয়েই এই অবস্থা? সকাল থেকে দরজা বন্ধ?”
” হো।”
অরিন হতবাক হয়ে গেল। এইখানেও ডেলিভারিম্যান! আজ-কালকের ডেলিভারিম্যানরা কি সব সুন্দর হয়ে যাচ্ছে?
চলবে