মেঘের পরে রংধনু পর্ব-৫

0
1470

#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_৫
লিখা: Sidratul Muntaz

প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে দরজা ধাক্কানোর পর দরজা খুললো। অরিন আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভেতরে দেখার চেষ্টা করলো। আসলে নিশিতাকে তার খুব ভয় লাগে। কাজিনদের মধ্যে সবচেয়ে ঘাড়ত্যাড়া সে। ওর হাব-ভাব দেখে মনে হয়, ওর কথায় দুনিয়া চলতে হবে। নয়তো ও সবকিছু ধ্বংস করে দিবে। বড়লোকের আদরের একমাত্র মহাসুন্দরী মেয়ে হলে যা হয় আর কি। অরিন ধীরপায়ে ভেতরে ঢুকলো। তার মনে কিঞ্চিৎ আশঙ্কা হচ্ছে, নিশিতা এখনই কিছু ছুঁড়ে দিয়ে বলবে,
” খবরদার, ভেতরে ঢুকবি না।”
মনের ভয়ানক চিন্তাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে অরিন ভেতরে ঢুকলো। দেখলো নিশিতা বিছানার এক কোণায় হাঁটু ভাজ করে তার মধ্যে মাথা গুজে বসে আছে। অরিনের নিশিতাকে ডাকতেও ভয় লাগছে। এতোক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কানোর কারণে সে যদি অরিনকে ধমক দেয়? অরিন বিছানায় বসতেই নিশিতা মাথা তুলে তাকালো৷ মৃদু কণ্ঠে বললো,
” অরিন, দরজাটা বন্ধ করে আমার সামনে এসে বোস।”
অরিন সঙ্গে সঙ্গে উঠে দরজা বন্ধ করলো। এখন আর তার ভয় লাগছে না। নিশিতার মেজাজ তো ঠান্ডাই মনে হচ্ছে। অরিন নিশিতার সামনে এসে বসলো। কৌতুহলে ভেতরটা কুটকুট করছে। কিন্তু অরিন কোনো প্রশ্ন করতে পারছে না। এখন প্রশ্ন করা মানেই ধমক খাওয়া। সে চুপচাপ বসে রইল। নিশিতা পায়ের নখ খুটতে খুটতে বললো,
” সত্যি করে একটা কথা বলতো অরিন।”
” কি কথা?”
” আমাকে দেখতে কেমন?”
অরিন অবাক হতে বাধ্য হলো। যে মেয়ে চব্বিশ ঘণ্টা নিজেই নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে সে কখনও এতোটা অসহায়ভাবে এমন প্রশ্ন করতে পারে? নিশিতাই অরিনের দেখা প্রথম মেয়ে, যে নিজের সৌন্দর্য্য নিয়ে খুব গর্বিত। আসলে নিশিতা দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু তার অহংকারটা অনেক বেশি। নিশিতার গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা হলেও যেকোনো ফরসা মেয়ের চেয়ে সে অধিক আকর্ষণীয়। কাটা কাটা চোখ, চিকন নাক, পাতলা ঠোঁট, ঘন চুল। সব মিলিয়ে মডেল টাইপ চেহারা। অরিন বললো,
” তুমি খুব সুন্দর দেখতে আপু। ”
” সত্যি বলছিস?”
” হ্যাঁ অবশ্যই। মিথ্যা কেনো বলবো? বিশ্বাস না হলে আয়নায় দেখো। কত সুন্দর মুখ তোমার।”
নিশিতা আয়নায় তাকিয়ে বললো,” কি হবে এতো সুন্দর চেহারা দিয়ে? যদি আসল মানুষটাই পাত্তা না দেয়?”
” কে তোমাকে পাত্তা দেয়নি?”
” একটা আশ্চর্য সুন্দর ছেলে। সে পিজ্জা ডেলিভারি করে জানিস? কিন্তু অদ্ভুত বিষয়টা হচ্ছে ওই ডেলিভারিম্যানের পোশাকেই তাকে এতো সুন্দর লাগে, মনে হয় যেনো তার জন্মই হয়েছে হলুদ শার্ট পড়ে পৃথিবীর সমস্ত মেয়ের হুশ উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ওর চোখের দৃষ্টি, যেনো কামানভর্তি গোলা। সে তাকালেই বুকের মধ্যে ঠাস ঠাস করে আওয়াজ হয়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। নয়তো জীবন দিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আর হাসলে যখন দুই গালে টোল পড়ে.. উফফ ওই দৃশ্য দেখে আমি হাজারটা কফি মগ ভাঙতে রাজি। ”
” শুধু শুধু কফি মগ ভাঙবে কেনো?”
” কারণ ওর হাসি যখন প্রথমবার দেখলাম তখন আমার হাতে কফি মগই ছিল। হাসি দেখে আমি এতোটাই আহত হলাম যে হাত থেকে মগটা পড়ে ভেঙে গেল।”
” বলো কি?”
” হুম। তারপর কি হলো জানিস? কিছুটা কফি ওর মুখে ছিটকে পড়লো। ও ভ্রু কুচকে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছল। বিশ্বাস কর, আমার হাত-পা তখন এমনভাবে কাঁপছিল মনে হলো আমি এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। নিজেকে সামলানোর জন্য দ্রুত নিচে বসে পড়লাম। ও যেনো না বুঝতে পারে তাই কাচের টুকরোগুলো তুলতে লাগলাম। কিন্তু চোখ দু’টো বারবার উপরে চলে যাচ্ছিল। ওকে দেখতে নিয়ে আমি হাতও কেটে ফেললাম।”
নিশিতা ওর কাটা হাতটা অরিনকে দেখালো। অরিন মনে মনে বললো,
” ইটস হিলারিয়াস!”
মুখে বললো,” তারপর?”
নিশিতা হাঁটুতে গাল ঠেকিয়ে বললো,
” তারপর আমি দৌড়ে ঘরে চলে এলাম। হাতে ব্যন্ডেজ লাগানোর বাহানায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ উরাধুরা নাচলাম। আল্লাহর কাছে হাজারবার থ্যাঙ্কিউ বললাম। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ছেলেটির সঙ্গে আমাকে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপর চুল ঠিক করে, একটু সেজে-গুজে আবার গেলাম। ও তখনও কি মিষ্টি করে হাসছিল। আমার ইচ্ছে করলো, একটানে ঘরে ঢুকিয়ে হাত-পা বেঁধে সোফায় বসিয়ে রাখি। আর সারাদিন চেয়ে চেয়ে দেখি।”
অরিন মনে মনে বললো,” হায় আল্লাহ! তুমি রক্ষা করো এই মেয়েকে।”
নিশিতার চোখ দু’টো চকচক করছে। সে মনে হয় এখন ওই ডেলিভারিম্যানের কথাই চিন্তা করছে। অরিন নিশিতার মুখের কাছে হাত নিয়ে তুরি বাজালো। নিশিতা কেঁপে উঠলো। অরিন বললো,
” তারপর কি হয়েছে আপু?”
” ও তারপর? তারপর আমি ওকে ঘরে আসতে বললাম। কিন্তু ও রাজী হলো না। আমার মনটা টুস করে ভেঙে গেল। কান্না পেয়ে গেল। আমি ওর কন্টাক্ট নাম্বার চাইলাম। তাও দিল না।”
” নাম জিজ্ঞেস করোনি?”
নিশিতা হাত দিয়ে কপালে বারি মেরে বললো,” ইশশ! ভুলেই গেছিলাম। তবে এড্রেস জিজ্ঞেস করেছি। সে বললো নাবিস্কো থাকে।”
” তাহলে উনাকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন হবে না। নাবিস্কো তো ছোট জায়গা।”
নিশিতা অরিনের দুইহাত ধরে বললো,” তুই সত্যি খুঁজে দিতে পারবি?”
” চেষ্টা করবো। ভাইয়াকে বলে দেখবো।”
” বিশ্বাস কর অরিন, ওকে না পেলে আমি বিষপান করে মরে যাবো।”
অরিন মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। বাসন্তী খালার সাথে কথা বলে নিশু আপুকে সাইক্রাটিস্টের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে এই মেয়ে সত্যি সত্যি সুইসাইড করতে পারে। দরজায় খটখট শব্দ হচ্ছে। কেউ বোধহয় এসেছে। নিশিতা অরিনের হাত ছেড়ে আবারও বিরহী ভঙ্গিতে হাঁটুর মাঝে মুখ গুজে বসলো। অরিন উঠে দরজা খুলে দেখলো অর্ণভ এসেছে। অরিন হেসে বললো,
” আরে ভাইয়া।”
অর্ণভ বললো,
” কিরে, দরজা আটকে কি করিস তোরা?”
অরিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,” তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। একজনকে খুঁজে বের করতে হবে।”
” কাকে?”
” ডেলিভারি বয়। নাবিস্কো থাকে। দেখতে অনেক সুন্দর। ”
নিশিতা বলে উঠলো,” শুধু সুন্দর না, অত্যাধিক সুন্দর। এক কথায় রাজপুত্র।”
অরিন বললো,” হ্যাঁ, অত্যাধিক সুন্দর। এক কথায় রাজপুত্র।”
নিশিতা আবারও বললো,” হাইট সাড়ে ছয়ফুটের কাছাকাছি। ”
অরিন বললো,” হাইট সাড়ে ছয়ফুটের কাছাকাছি। ”
অর্ণভ ধমক দিয়ে বললো,” তুই ওর কথা রিপিট করছিস কেনো? আমি কি কানে শুনতে পাই না? আর নিশি, তুই কি হাইট ফিতা দিয়ে মেপে দেখেছিস? এতো লম্বা ছেলে বাংলাদেশে থাকার কথা না।”
নিশিতা বললো,” শুধু বাংলাদেশ কেনো? এ পৃথিবীতেই থাকার কথা না। কিন্তু আমি দেখেছি।”
অর্ণভ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
” আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু ওই ডেলিভারিম্যানকে খুঁজে তোদের কাজ কি?”
অরিন বললো,” নিশি আপু ওই ডেলিভারি বয়ের প্রেমে পড়েছে।”
অর্ণভ দুই সেকেন্ড হা করে রইল। তারপর ফিক করে হাসলো। হাসতে হাসতে বললো,
” শেষ পর্যন্ত ডেলিভারিম্যান?”
নিশিতা ক্ষেপে উঠলো,” খবরদার। একদম এই বিষয় নিয়ে ফাজলামি করবে না। ও যদি রিকশাওয়ালাও হয় তাও আমি ওকেই বিয়ে করবো।”
অর্ণভ হাসতে হাসতে নিজের উরু চাপড়ে বললো,
” আমি তো আগেই জানতাম, তোর কপালে ডেলিভারিম্যান ছাড়া ভালো কিছু জুটবে না।”
এবার অরিন বললো,” বিষয়টা সেন্সিটিভ ভাইয়া। মজা করছো কেনো?”
” মজা করার বিষয় হলে মজা করবো না? খালুর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে। এতোবড় শিল্পপতির মেয়েজামাই নাকি ডেলিভারিম্যান! এইসব জানার পর খালু বেঁচে থাকবে তো?”
নিশিতা একটা খালি কলমদানি ছুঁড়ে মারলো অর্ণভের মুখে। অর্ণভ সেই কলমদানি হাতে নিয়েই হাসতে লাগলো। অরিন বললো,
” হয়েছে এবার থামো। নিশু আপু, তুমি বলো। ওই ডেলিভারিম্যান সম্পর্কে আর কোনো ইনফরমেশন দিতে পারবে?”
” আর তো কিছু জানি নারে।”
” আচ্ছা, সে কি সাইকেল নিয়ে এসেছিল?”
নিশিতা মনে করার চেষ্টা করলো। অর্ণভ তখন বললো,
” ওই, প্রেমে কে পড়েছে? তুই না নিশু? তোর এতো কৌতুহল কেনো?”
অরিন চুপ করে রইল। তার আসলে মনে হচ্ছে নৌশিন যে ডেলিভারিম্যানের কথা বলেছিল সে আর নিশিতার ক্রাশ একই মানুষ। কারণ নৌশিন তো তখন নিশিতাদের বাসাতেই আসতে নিচ্ছিল। হয়তো তার নিশিতার ডেলিভারিম্যানের সাথেই দেখা হয়েছে! নিশিতা বললো,
” মনে হয় সাইকেল নিয়ে এসেছিল। ফোনে কথা বলার সময় আমি সাইকেল বেলের আওয়াজ পাচ্ছিলাম।”
অরিন এবার নিশ্চিত হয়ে গেল। দুইবোনের ক্রাশ একজনই। কিন্তু এবার তো বিরাট ঝামেলা হয়ে গেল! অর্ণভ খুব আফসোস করে বললো,
” তোর মতো একটা অহংকারী মেয়ে কিভাবে সামান্য ডেলিভারি বয়ের প্রেমে পড়ে দেবদাসী হয়ে গেল আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, ছেলে কি জাদু-টাদু জানে?”
নিশিতা অন্যমনস্কভাবে বললো,” ওর মুখটাই তো সবচেয়ে বড় ম্যাজিক।”
অরিন বললো,” আচ্ছা কেমন দেখতে? একটু চেহারার বর্ণনা দাও তো।”
নিশিতা লাজুক মুখে বললো,
” উহুম। পারবো না। আমার লজ্জা লাগবে। তাছাড়া আমার মনে হয় এখন আমি বর্ণনা দিতে গেলে তুই সেই বর্ণনা শুনেই ওর প্রেমে পড়ে যাবি।”
অর্ণভ মুখ চেপে হেসে দিল। রসিকতার হাসি। নিশিতা আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো,
” তুমি এখনই এই ঘর থেকে বের হও। তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
অর্ণভ বললো,” আচ্ছা, তার আগে একটা বিষয় ক্লিয়ার কর। ছেলে কি আসলেই এতো সুন্দর? নাকি তুই স্বপ্ন দেখেছিস?”
” স্বপ্ন কেনো দেখবো? আমার সাথে সুমনাও দেখেছে। এমনকি সুমনা ওকে দেখে মাশাল্লাহ বলেছে। ওকে কপালে কাজল লাগিয়ে বের হতে বলেছে। যদি মানুষের নজর লাগে তাই। তাহলে বুঝো, সে কত সুন্দর! ”
অর্ণভ ভ্রু কুচকে বললো,” তাই নাকি?”
অরিন বললো,” ভাইয়া, তোমার সাথে আমার ইম্পোর্ট্যান্ট কথা আছে। একটু বাহিরে চলো তো।”
অর্ণভ বললো,” আরে দাঁড়া, বিষয়টা বুঝতে দে আগে।”
অরিন হাত ধরে টেনে অর্ণভকে বারান্দায় নিয়ে এলো। অর্ণভ বললো,
” কি হয়েছে?”
অরিন ভয়ে ভয়ে নৌশিনের ঘটনাও অর্ণভকে জানালো। অর্ণভ গ্রিল ধরে হাসতে হাসতে বললো,
” দারুণ তো। দুইবোন একইদিনে একই ছেলের উপর ক্রাশ খেয়ে চিতপটাং হয়ে গেল? কি এমন আছে মালটাতে? এইটা দেখার জন্য হলেও আমি তাকে খুঁজে বের করবো।”
” ভাইয়া, আমার তো এটা নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভয় লাগছে। যখন সত্যিই ছেলেটাকে খুঁজে পাওয়া যাবে তখন তো দুইবোন কাড়াকাড়ি লাগবে। একজন হাত টানবে, আরেকজন পা টানবে। ছেলেকে অর্ধেক কেটে ভাগ করে দু’জনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে। তারপর বিয়ে হবে।”
” ধূর, কি বলিস এসব? এটা কি কোরবানি নাকি? এমনভাবে বডি পার্টস ভাগ করার কথা বলছিস যেনো কোরবানিতে খাশি জবাই হচ্ছে! আরে এটা হলো তোর হবু দুলাভাই। তোর দুইবোনের এক স্বামী। ওরা বিয়ের পর হাত-পা ভাগ করবে না। ভাগ করবে রাত। সপ্তাহের তিনরাত নৌশিনের আর তিনরাত নিশুর। শুক্রবারটা ছুটি থাকবে। সেদিন আমি ওর কাছে মেয়ে পটানোর কালা জাদুটা শিখবো।”
অরিন চোখ-মুখ কুচকে বললো,” ছি ভাইয়া। আমি তোমার ছোটবোন। আমার সাথে এসব কি ধরণের কথা বলছো?”
অর্ণভ হাসতে লাগলো। অরিন বারান্দা থেকে বের হয়ে একদম ড্রয়িংরুমে চলে আসলো। সুমনা টেবিল মুছতে মুছতে বললো,
” আপা, আপনের ফোন আইসে।”
অরিন সেন্টার টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখলো ইলহানের ফোন। সাইকোটার কি সারাদিন কোনো কাজ নেই অরিনকে ফোন করা ছাড়া? দিনে কমপক্ষে দুইশোবার সে অরিনকে ফোন করে। এজন্য বিরক্ত হয়ে অরিন ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। এই নিয়ে কত ঝামেলা যে হয়! পরিচিত কেউ ফোন করলেও সাইলেন্ট থাকার কারণে অরিন ধরতে পারে না। বাবার কাছেও অনেক বকা খেতে হয়। মাঝে মাঝে অরিন ফোনের স্ক্রিন অন করলে দেখে ইলহানের একশো সাতান্নটা মিসডকল আর বাবার দুইটা মিসড কল। সেই দুইটা মিসডকলই অরিনের ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। উফফ, এতো অত্যাচার আর সহ্য হয় না। অরিন এবার ঠিক করেছে সে তার সিম চেঞ্জ করে ফেলবে। তারপর ইলহান তাকে কি করে জ্বালায় সেও দেখবে। অরিন আর কিছু না ভেবেই ফোন থেকে সিম কার্ডটা খুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। ওহহ, এখন একটু শান্তি লাগছে।

ইলহান প্রায় দশবারের মতো ফোন করলো। এখন অরিনের ফোনটা বন্ধ দেখাচ্ছে। ইলহানের মনে বিষাদের তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি হলো। অরিন কি এতোটাই বিরক্ত হয়েছে যে মোবাইলটাই বন্ধ করে দিল! নাসির কোল্ড ড্রিংকসের বোতল হাতে ইলহানের সামনে এসে দাঁড়ালো,
” দোস্ত, তোর জন্য..”
নাসিরের কথা থেমে গেল। ইলহানের চোখে জল। নাসির অবাক হয়ে বললো,
” কাঁদছিস কেনো?”
ইলহান চট করে চোখ মুছে বললো,” কোথায় কাঁদলাম? ধোঁয়ায় চোখ জ্বলছে। চল যাই এখান থেকে।”
নাসিরের বিশ্বাস হলো না কথাটা। সে নিশ্চিত, ইলহান কাঁদছিল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here