মেঘের পরে রংধনু পর্ব-৬

0
1356

#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_৬
লিখা: Sidratul Muntaz

নাসির এক প্যাকেট টিস্যু এনে টেবিলে রাখলো। ইলহানের মুখে তীব্র বিষণ্নতার ছাপ দেখা যাচ্ছে। সে টেবিলে দুই হাত রেখে একদৃষ্টে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। নাসির বাঁকা হাসলো। চেয়ার টেনে একদম ইলহানের বরাবর বসলো। নাসির পুরোপুরি নিশ্চিত ইলহান তখন কাঁদছিল। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ভেতরে ভেতরে সে এখনও কাঁদছে। ইলহানের চেহারায় সেই কান্নার প্রভাব একদম স্পষ্ট। কষ্ট পেলে ইলহানের নাকের ডগা গোলাপী হয়ে যায়। চোখ ছোট ছোট দেখায়। এখনও তাই দেখাচ্ছে। নাসির আর ইলহান এসেছিল হাতিরঝিলের ভংচং নামক একটি ধাবায়। মূলত ওরা চাকরির বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছিল। ‘জেন্টালম্যান’ এর বসুন্ধরা আউটলেটে যদি ইলহানের এসিস্ট্যান্ট অফিসারের চাকরিটা হয়ে যায় তাহলে মাসিক বেতন হতে পারে সতেরো হাজার টাকা। ডিউটি দশ ঘণ্টার। বাকি সময় সে অন্যকাজ করতে পারবে। ইলহান বেতনের পরিমাণ শুনে খুবই খুশি। এতোটা আশাবাদী সে ছিল না। তাছাড়া ইংরেজির প্রোনান্সিয়েশনে ভালো হলে আর বিদেশী কাস্টমার হ্যান্ডেল করতে পারলে ওরা বোনাসও দিবে। প্রমোশন হতে পারে। ইলহান তো এই দুই কাজে একদম দক্ষ। নাসির নিজেও এই চাকরির জন্য আবেদন করেছিল কয়েকদিন আগে। ওর চাকরিটা হয়নি। কিন্তু ইলহানের নিশ্চয়ই হবে। কারণ ইলহানের ব্যাকগ্রাউন্ড ওর চেয়ে কয়েকগুণ ভালো। মানুষ তো ওকে বিদেশীই ভাবে। অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করা অবস্থায় কেউ যদি বাংলাদেশের শপিংমলে রিসেপশনিস্টের চাকরি করতে আসে তাহলে এর চেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার আর কিছু নেই। যদিও ইলহান তার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেনি। এর আগেই বাংলাদেশে চলে এসেছে। নাসির আর ইলহান স্কুল জীবনের বন্ধু। ইন্টার পর্যন্ত একসাথে পড়াশুনার পর হঠাৎ ইলহানের পরিবার ওকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিল। হয়তো বড় কোনো ঝামেলা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে ইলহানের মন সর্বদা খারাপ থাকতো। নাসিরও ইলহানের সাথে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ওর কোনো ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ হয়নি। পরে নাসির একটা সাধারণ কলেজ থেকেই অনার্সে ভর্তি হয়ে যায়। বর্তমানে নাসিরের জীবন চলছে এখানে-সেখানে চাকরি খুঁজতে খুঁজতে। চাকরি এখনও পায়নি। কিন্তু ওর কাছে চাকরির সমস্ত আপডেট থাকে।
ইলহানের দিকে টিস্যু বক্স এগিয়ে দিয়ে নাসির বললো,
” নে, চোখের পানি মোছ।”
ইলহান টিস্যু নিতে গিয়েও থেমে গেল। তারপর ভ্রু কুচকে চোখে হাত দিয়ে চেক করলো পানি আছে নাকি। তার চোখে কোনো পানি নেই। ইলহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নাসির হেসে বললো,
” এখন চোখে পানি নেই। তাও কেনো টিস্যু নিতে বলছি জানিস? কারণ তোর হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখনি ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিবি। কি হয়েছে বলতো?”
ইলহান দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টায় অন্যদিকে তাকালো। তার বুকে সত্যিই চিনচিন ব্যথা করছে। কাঁদতে পারলে হয়তো আসলেই ভালো লাগতো। টিস্যু দিয়ে চোখ-মুখ মুছতে মুছতে যদি প্রাণ খুলে একটু কাঁদা যেতো!অরিনের নাম্বারে আরও বেশ কয়েকবার ফোন করেও কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি। অরিন কি ইচ্ছে করেই এমন করছে? এতোটা অবহেলা কেউ কাউকে করে? নাসির আবার বললো,
” বল দোস্ত, কি সমস্যা?”
ইলহান মাথা নিচু করে বললো,” অরিনের সাথে আমার কথা হয় না তিনমাস চারদিন।”
নাসির অবাক হয়ে বললো,” কি বলিস? দেখা তো হয়ই না। এখন কথাও বন্ধ?”
ইলহান শান্ত গলায় জবাব দিল,” হুম।”
তারপর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। ওই হাসিতে গাঢ় বেদনার ছাপ স্পষ্ট টের পাওয়া গেল। ইলহান থেমে থেমে বললো,
” সেইরাতের ওই কিডন্যাপিং এর ঘটনাটার পর থেকে অরিন বলে দিয়েছিল আর কখনও আমার চেহারা দেখবে না। আমার কণ্ঠও শুনবে না। সে তার কথা রেখেছে, নাসির।”
নাসির এই কথা শুনে জিভে কামড় দিল। কারণ অরিনকে কিডন্যাপ করার আইডিয়াটা প্রথম তার মাথাতেই এসেছিল। সেদিনরাতে ইলহান, নাসির এবং ওদের আরও দুইজন বন্ধু মিলে হ্যাং আউটে বের হয়েছিল। ওদের বাসায় ফিরতে অনেকরাত হয়ে গেছিল। তখনি অরিনকে ওরা একা রাস্তায় দেখতে পেল। কোথায় যেনো যাচ্ছে অরিন। নাসির সঙ্গে সঙ্গেই চিনে ফেললো যে এটা অরিন। তারপর ইলহানকে দেখালো। তখনও অরিন ইলহানকে একইভাবে ইগনোর করতো। ফোন ধরতো না, মাঝে মাঝে ভুল করে ফোন ধরে ফেললেও দুইটা-একটা কথা বলে রেখে দিতো। ম্যাসেজের রিপ্লাইতে শুধু দুই-এক শব্দ লিখতো। যেমন- ওকে, ঠিকাছে, হুম অথবা থাম্বস আপ। ইলহান এতো অবহেলা সহ্য করতে পারছিল না। সে অরিনকে দেখামাত্রই গাড়ি থামিয়ে অরিনের কাছে ছুটে যেতে চাইল। কিন্তু নাসির ইলহানকে আটকে বললো,” এখন অরিনের সাথে কথা বলতে গেলে সে সিন ক্রিয়েট করবে। রাস্তার মাঝখানে চিল্লা-ফাল্লা করে লোক জড়ো করবে। তার চেয়ে যদি ওকে তুলে এনে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলা যায় তাহলে ভালো। ”
ইলহান ভ্রু কুচকে বললো,” কি বলতে চাস?”
নাসির তখন কিডন্যাপ করার আইডিয়াটা দিল। ইলহানকে গাড়ি থেকে বের করে অন্য রোডে নামিয়ে ওরা বাকি তিনজন অরিনকে কিডন্যাপ করতে গেল। কারণ ইলহানকে দেখলে অরিন নিশ্চিত ঝামেলা করতো। আর ওকে এতো সহজে উঠিয়ে আনাও যেতো না। যখন অরিনের চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তখন ইলহান নিজেও গাড়িতে এসে বসলো। অরিনের পাশেই বসেছিল। অরিনের হাত চেপে ধরে রেখেছিল। সেই হাতে খুব আলতো করে চুমুও দিয়েছিল। কিন্তু অরিন কিছুই বুঝেনি। গাড়ি থেকে নামার পর ইলহান খুব সাবধানে অরিনকে কোলে নিয়ে নাসিরের বাসায় ঢুকলো। বাকিরা বাহিরে অপেক্ষারত ছিল। নাসির ওর বাসায় একাই থাকে তাই কোনো ঝামেলা হয়নি। কিন্তু অরিন যখন বুঝতে পারলো ইলহান তাকে কিডন্যাপ করিয়েছে তখন সে নিজের মনেই পজিটিভ-নেগেটিভ অনেককিছু ভেবে নিল। আর হিতে বিপরীত হয়ে গেল। অরিনকে বুঝিয়ে কোনো লাভই হলো না। বরং ইলহান যখন অরিনকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়িতে তুলছিল তখন অরিন জানালো সে হসপিটালে যেতে চায়। মারিয়ার চাচ্চু এক্সিডেন্ট করেছে। ইলহানের তখন মাথায় বাজ পড়ে। এই অবস্থায় সে অরিনকে তুলে এনেছে? অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে তাহলে। চলে যাওয়ার সময় অরিন শুধু বলেছে, ” এতো জঘন্য কাজটা না করলেও পারতেন। আপনাকে ভালো ভেবেছিলাম।”
ইলহান কিছু বলতে নিচ্ছিল তখন অরিন বললো,
” প্লিজ, নো এনি এক্সপ্লেনেশন। আজকের পর থেকে না আমি আপনার মুখ দেখতে চাই আর না আপনার কণ্ঠ শুনতে চাই। আর কখনও আপনি আমাকে ফোন করবেন না।”
অরিন তার বক্তব্য শেষ করার পরমুহূর্তেই গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আর একবারও কথা হয়নি ওদের। দেখা হওয়া তো স্বপ্ন। ইলহান অরিনদের বাসার ঠিকানা জানে না। শুধু এলাকার নামটা জানে। যদি সরাসরি ঠিকানা জানতো, তাহলে এতোদিনে অরিনের বাসায় চলে যেতো। সে এই যন্ত্রণা নিয়ে আর থাকতে পারছে না। হঠাৎ নাসির বললো,
” আচ্ছা দোস্ত, অরিন এতো রেগে আছে কেনো? সেদিনরাতে কি এমন হয়েছিল?”
” তেমন কিছুই হয়নি। তবে ও আমাকে আবারও চড় মেরেছিল।”
” আবার চড়? এই মেয়ে কি চড় মারা ছাড়া আর কিছু জানে না? নাকি তুই-ই উল্টা-পাল্টা কিছু করেছিলি?”
” ছি, একদম না।”
” তাহলে চড় দিল কেনো?”
ইলহান একটু চুপ হয়ে গেল। তারপর নিম্ন কণ্ঠে বললো,” আসলে অনেকদিন পর দেখা হয়েছিল, তাই জোর করে একবার জড়িয়ে ধরেছিলাম শুধু। একটু, পাঁচসেকেন্ডের জন্য।”
নাসিরের মুখে কৌতুকের হাসি ফুটে উঠলো।
” জানতাম আমি। শুধু শুধু চড় মারেনি তাহলে..”
ইলহান কঠিন চোখে তাকাতেই নাসির থেমে গেল। একটু পর আবার বললো,
” তাই তো বলি, তোর গালে এতো ছোপ ছোপ দাগ কিসের? সব তাহলে অরিনের পাঁচ আঙুলের ছাপ! এতোক্ষণে বুঝলাম।”
ইলহান ভ্রু কুচকে নিজের গালে হাত দিয়ে বললো,” আমার গালে দাগ মানে?”
নাসির আবার হেসে দিল। ইলহানের খুব মেজাজ খারাপ লাগছে এসব রসিকতায়। সে কিটকিটে গলায় বললো,
” দ্যাখ ফাজলামি করবি না একদম।”
ইলহানকে থামতে হলো। কারণ ওয়েটার ওদের কাছে এসেছে খাবার সার্ভ করতে। ইলহান আবার জানালার দিকে ঘুরে তাকিয়ে রইল। তার কিছুই ভালো লাগছে না। ফোনের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে অরিনকে টেনে বের করে আনা যায় না? নাসির বললো,
” আচ্ছা দোস্ত, বুঝলাম তুই অনেক কষ্টে আছিস। এখন তাহলে খেয়ে নে। আগে পেটের কষ্ট কমুক। তারপর আমি তোর মনের কষ্ট কমাচ্ছি।”
ইলহান কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইল খাবারের দিকে। তারপর হঠাৎ শুকনা মরিচের গুঁড়ো নিয়ে খাবারে ছিটাতে লাগলো। নাসির বললো,
” হয়েছে, আর কত? বেশি হয়ে যাবে তো।”
” হোক বেশি।”
নাসির হতচকিত গলায় বললো,” আরে করছিসটা কি? চাউমিনে কেউ এতো ঝাল খায়?”
ইলহান জবাব না দিয়ে শুধু ঢেলেই যাচ্ছে। নাসির বললো,
” তুই শালা একটা কেলেংকারী বাঁধাবি।”
ইলহান মুখে আঙুল ঠেকিয়ে বললো,
” তুই নিজেরটা চুপ করে খা।”
নাসির চুপ করে খেতে যাচ্ছিল তারপর দেখলো ইলহান মরিচের গুঁড়োর কৌটার মুখ খুলে একদম পুরোটাই ঢেলে নিচ্ছে প্লেটে। নাসির দাঁড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললো,
” হায়হায়।”
ইলহান এবার কাটাচামচ তুলে খাওয়া শুরু করলো। সত্যি সত্যি ও খাচ্ছে। লাল হয়ে যাওয়া ঝাল চাউমিন শুধু গিলেই যাচ্ছে। ওর অবস্থা দেখে নাসির নিজেই ঘেমে গেল। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই ইলহানের চোখগুলো রক্তবর্ণ ধারণ করলো। তার ঠোঁটদ্বয় এমনিই লাল। এখন মনে হচ্ছে, কালচে রক্ত ঠোঁট চুঁইয়ে পড়ছে। নাকের ডগা ফুলে গোলাপী ঢোলের মতো হয়ে গেছে। নাসির টিস্যু নিয়ে নিজের কপালের ঘাম মুছল। তারপর পানি ঢেলে বললো,
” একটু পানি খা।”
ইলহান পানি খেল না। ঝাল চাউমিন অবিরত চিবিয়েই যাচ্ছিল। নাসির চূড়ান্ত অবাক হয়ে গেল। যে ছেলে মরিচের সবুজ অংশ দেখলেই সেই খাবার মুখে তোলে না সে এক কৌটা গুঁড়ো মরিচ মেশানো চাউমিন এক বসাতে খেয়ে নিল! ইলহান খাওয়া শেষ করে চুপচাপ বসে রইল। ওর ঠোঁট দুটো কাঁপছে। দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র কারো সাথে মারামারি করে এসেছে। ঠোঁট দিয়ে রক্ত পড়ছে, শরীর, নাক ঘেমে যা-তা অবস্থা। চোখের দিকে তো তাকানোই যায় না। নাসির বললো,
” দোস্ত,তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে? তুই হঠাৎ এমন কেনো করলি?”
ইলহান কম্পনরত কণ্ঠে বললো,
” মনের যন্ত্রণা কমানোর জন্য করলাম। দেখলাম, কোনটার শক্তি বেশি? মানসিক নাকি শারীরিক? এখনও আমার মনে হচ্ছে, মানসিক এই জ্বালার কাছে শারিরীক যন্ত্রণাটা কিছুই না। একেবারে ঠুনকো। তবুও, কিছুটা হলেও কাজে দিয়েছে। যতক্ষণ এই ঝালটা থাকবে ততক্ষণ অন্তত সবকিছু ভুলে থাকা যাবে। ভালো না?”
নাসির চেয়ারে বসে বললো,” ও মাই গড। ইটস হিলারিয়াস ইলহান। একটা সাধারণ মেয়ের জন্য তুই..”
ইলহান প্রতিউত্তরে প্রতিবাদ জানালো,” অরিন মোটেও কোনো সাধারণ মেয়ে না।”
নাসির আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো প্রায় সবাই ওদের দেখছে। নাসির যখন তাকালো তখন সবাই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে গেল। একটা চশমাওয়ালি মেয়ে উঠে এসে বললো,
” আপনি এতো ঝাল কেনো খেতে গেলেন ভাইয়া? নিন, লাড্ডু খান। ভালো লাগবে।”
মেয়েটা লাড্ডুর পুরো প্যাকেট নিয়ে এসেছে। নাসিরের বিরক্তির সীমা রইল না। ধমক দিয়ে বলতে ইচ্ছা করলো,
” এর চেয়েও বড় লাড্ডু আপনার মাথায় মারা উচিৎ। ফালতু মেয়ে।”
কিন্তু মেয়ে মানুষের সাথে এতো বেয়াদবি করে কথা বলা যায় না। নাসির মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
” ও লাড্ডু খাবে না আপু। আপনাকে থ্যাঙ্কিউ।”
মেয়েটা নাছোড়বান্দার মতো বললো,
” কিন্তু উনার তো খুব কষ্ট হচ্ছে। লাড্ডু খেলে ভালো লাগবে। মতিচূরের সেরা লাড্ডু এটা। ময়রা বলেছে, যে এই লাড্ডু না খাবে তার জন্য সমবেদনা।”
” আমাদের জীবনে এমনিতেই সমবেদনার শেষ নেই। আর সমবেদনা বাড়াবেন না প্লিজ। আপনি আপনার লাড্ডু নিয়ে চলে যান।”
মেয়েটা করুণ দৃষ্টিতে ইলহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
” উনার কিসের এতো বেদনা? কি হয়েছে?”
নাসির হেসে বললো,” এই বেদনার কথা কাউকে বলা যায় না আপু। এসব হচ্ছে লুকিয়ে রাখার জিনিস।”
মেয়েটা ইলহানের পাশে বসে গেল।
” থাক, বলতে হবে না। নিন আপনি বরং লাড্ডু খান। আমি খাইয়ে দিবো?”
ইলহান তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াল। নাসির মনে মনে হেসে বললো,
” সত্যিই লাড্ডু খাওয়াতে এসেছেন? নাকি ওকে দেখে আপনার মনেই লাড্ডু ফুটেছে?”
ইলহান টেবিল থেকে ওর মোবাইল আর ওয়ালেট নিয়ে চলে গেল। নাসির হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটাও দাঁড়িয়ে বললো,
” আরে, আরে, উনি চলে গেলেন কেনো? আমার কথায় কি কষ্ট পেয়েছেন?”
নাসির জবাব না দিয়ে হাসলো। মেয়েটা বললো,
” উনার যত্ন নিবেন প্লিজ। হয়তো অনেক বেশি রাগী উনি তাই না? রাগ করে এতো ঝাল খেয়েছেন।আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছে। চাইলে আমি ভিজিট,সিরিয়াল ছাড়াই আপনাদের নিয়ে যেতে পারি। যাবেন?”
নাসির মনে মনে বললো,” যার জন্য মরে তার কোনো খবর নাই এদিকে পাড়া-পড়শীর ঘুম নাই।”
মুখে বললো,” ডাক্তার দেখানোর মতো কিছু হয়নি।”
মেয়েটা আবারও বললো,” লাড্ডুর প্যাকেটটা নিয়ে যান সাথে করে?হয়তো উনি পরে খেতে রাজি হবে।”
নাসির বললো,” আচ্ছা দিন।”
নাসির সত্যি সত্যি লাড্ডু নিয়ে এলো। কারণ সে বুঝতে পেরেছিল লাড্ডু না নিলে এই লাড্ডুওয়ালীর পিছু ছাড়ানো যাবে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here