#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_৭
লিখা: Sidratul Muntaz
অরিন বেশ কিছুসময় আরাম করে সোফায় শুয়ে রইল। তার এখন ভীষণ শান্তি লাগছে। যেহেতু সে সিমকার্ড ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে সেহেতু ইলহানের ফোন কিংবা ম্যাসেজ আসার সুযোগ নেই। এর চেয়ে বড় শান্তি আর কিছুই হতে পারে না। এতোদিন যে কত অশান্তির মধ্যে থাকতে হয়েছে তা শুধু অরিনই জানে। ফোন সাইলেন্ট রাখার জন্য সে বাসায় অনেক বকা খেতো। আবার সাইলেন্ট না করলেও সারাক্ষণ ফোন, ম্যাসেজ আর জ্বালাতন সহ্য করতেই হতো। ইলহানের পাঠানো বেশিরভাগ ম্যাসেজ ছিল এমন,
” অরি, আমার পরী! প্লিজ একবার ফোনটা ধরো। অন্তত পাঁচমিনিটের জন্য?”
” অরি, তোমাদের এলাকায় আছি। একবার নিচে আসবে? আমি পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে। পানির ট্যাংকির সাথে যে পার্ক আছে, ওইটায়।”
” তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে অরি।”
অরিনের মাঝে মাঝে খুব হাসি পেতো। কারণ ইলহান বেশিরভাগ সময় তাদের এলাকায় এসে তাকে ফোন করে। অথচ সে এটাই জানে না, অরিন তাকে ভুল ঠিকানা দিয়ে রেখেছে। অরিন বাধ্য হয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রাখতো। তবুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইলহান ফোন করে যেতো। মানুষের এতো ধৈর্য্য কেনো? আচ্ছা এই ছেলেটার কি কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই? একটা মেয়ে দিনের পর দিন তাকে ইগনোর করে যাচ্ছে তবুও সে কেনো মেয়েটার পেছনে হ্যাঙলার মতো পড়ে আছে? এই ধরণের ছেলেরা ব্যক্তিত্বহীন। অরিন সোফা থেকে উঠে বসলো। সুমনাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। একটু আগেও তো সে এইখানে ছিল। এখন গেল কোথায়? নিশিতা আপুর সেই ডেলিভারি বয়কে খুঁজে বের করার একটা ভালো বুদ্ধি মাথায় এসেছে। একদম সিনেমাটিক বুদ্ধি! সুমনাকে বুদ্ধিটা বলতে পারলে ভালো হতো। অর্ণভ ভাইয়ার সাথেও বিষয়টা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। অরিনের খুব দেখার ইচ্ছা সেই ডেলিভারি বয়টিকে। নিশ্চয়ই কোনো বিরাট বিশেষত্ব আছে ওই ছেলের মধ্যে। নাহলে কি আর নিশিতা, নৌশিনের মতো নাকউঁচু মেয়েরা তার প্রেমে হাবুডুবু খায়? তাও যেনো তেনো প্রেম নয়। একদম প্রেমে আছাড় খেয়ে কফিমগ ভেঙে হাত-পা কেটে ফেলার মতো অবস্থা। আরেকজন তো স্বশরীরে ড্রেনেই পরে গেছে। বাপরে, একেক-জনের কি কঠিন প্রেম! ওই ছেলেকে খুঁজে পেলে অরিন সবার আগে তাকে স্যালুট জানাবে। তারপর জিজ্ঞেস করবে,” মেয়ে পটানোর এই নিঞ্জা টেকনিক আপনি কোথ থেকে শিখলেন ভাই? অসাধারণ টেকনিক! আচ্ছা, ছেলে পটানোর টেকনিক জানেন? তাহলে আমিও আপনার কাছে শিখতে চাই। তবে তার আগে ছেলেটাকে খুঁজে বের করতে হবে। মানুষ খুঁজে বের করার কোনো টেকনিক কি জানা আছে আপনার?”
অরিন মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রায়হানকে যদি শুধু একবার খুঁজে পাওয়া যেতো! অরিন অর্ণভকে খোঁজার জন্য ড্রয়িংরুম পেরিয়ে ডাইনিংরুমে এসেছে। এখানে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। বাসন্তী খালা তার বেডরুম থেকে হাত বের করে অরিনকে ডাকলেন।
” এই মেয়ে, এদিকে আয়।”
অরিন ঘরের দিকে হেঁটে গেল।
” কি হয়েছে খালা?”
বাসন্তী মিষ্টি হেসে বললেন,” একটা জরুরী বিষয় নিয়ে আজকে তোর সাথে ফাইনাল কথা বলবো। তোর মতামত দরকার। বোস তো আমার সামনে।”
খালার মুখের হাসিটা কেমন সন্দেহজনক দেখাচ্ছে। অরিন কুঞ্চিত চেহারায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর বসলো।
সুমনা দ্রুত বারান্দা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। অর্ণভ তার চেয়েও দ্রুত বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিল। সুমনা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বললো,
” কেউ দেইক্ষা লাইবো। দরজা খুলেন কইতাসি।”
অর্ণভ চোখ গরম করে বললো,” এখানে এখন কেউ নেই। শুদ্ধ ভাষায় কথা বল।”
” আচ্ছা বলেন, কি হয়েছে?”
” শুনলাম ডেলিভারিম্যানের উপর নাকি তুইও ক্রাশ খেয়েছিস?”
” আল্লাহ গো আল্লাহ, এত্তোবড় মিছা কথাডা আপনেরে কেডায় কইলো? আমারে খালি নামডা কন।”
” নিশিতা নিজেই বলেছে। খবরদার অস্বীকার করবি না। উরাধুরা চড় খাবি তাহলে।”
” নিশি আপায় এই কথা কইসে?”
” ডিরেক্ট এটা বলেনি। কিন্তু বলেছে তুই নাকি ডেলিভারিম্যানকে দেখেই বলেছিস কপালে কাজল লাগিয়ে ঘর থেকে বের হতে? নাহলে মানুষের নজর লেগে যাবে?”
” এইটা বলার মানেই কি আমি তার প্রেমে পরসি? এইটা তো আমি এমনিই বলসি।”
” কই আমাকে তো কখনও বললি না। তাহলে কি আমি সুন্দর না?”
” আপনেও সুন্দর। কিন্তু সে একটু বেশি সুন্দর। ”
” আর সেজন্য তোর তাকেই পছন্দ হয়ে গেল?”
” ছি ছি, ভাই বিশ্বাস করেন। আমি তার দিকে নজরই দেইনাই। ”
” এই, আমি তোর ভাই হলাম কবে?”
” স্যরি। সবার সামনে ডাকতে ডাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে।”
” অভ্যাস চেঞ্জ কর।”
” জ্বী।”
অর্ণভ রাগী দৃষ্টিতে বললো, “ডেলিভারিম্যানের উপর ক্রাশ খেয়ে আমাকে ভাই বানিয়ে দেওয়া? তোর ব্যবস্থা আমি কিভাবে করি দেখিস।”
সুমনা ভয়ে ভয়ে বললো,” যারে দেইক্ষা নিশি আপা নিজেই তব্দা খায়া গেসে তার উপরে আমি নতুন কইরা আবার কেমনে কেরাশ খাই কন?”
” কন না বলেন। আর কেরাশ না ক্রাশ। তোকে না শুদ্ধ ভাষা প্র্যাকটিস করতে বলেছি? আমার সামনে আরেকবার এভাবে কথা বললে কানের নিচে বারি খাবি।”
” আচ্ছা, শুদ্ধ ভাষাতেই বলছি। গরীব আর গরু একই জিনিস। এরা কখনও ক্রাশ খায় না। গরীবরা খায় ভাত আর গরুরা খায় ঘাস। ক্রাশ হইসে দামী জিনিস। বড়লোকেদের জিনিস। আমাদের সেই জিনিস হজম হয় না। তাই আমরা খাইও না।”
” ইশশ, খুব সেন্টি মারা কথা শিখা গেছিস না? তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস তুই ডেলিভারিম্যানকে দেখে ক্রাশ খাসনি?”
সুমনা মাথা নিচু করে বললো,
” উহুম। তওবা, তওবা।”
অর্ণভ মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তাহলে ওই ডেলিভারিম্যানকে খুঁজে লাভ নেই। কিন্তু সুমনার উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হতো তাহলে অর্ণভ এখনি তাকে খুঁজে এনে সুমনার সামনেই বেঁধে রেখে উদুম কেলানি দিতো। আর কেলানি দিবে না কেনো? যার জন্য অর্ণভ দুইবছর ধরে দিওয়ানা হয়ে ঘুরছে, এই বাড়িতে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছে যাকে একটি নজর দেখার জন্য, রাত-দিন পরিশ্রম করে টাকা জমাচ্ছে শুধু তাকে নিয়ে পালাবে বলে, সে কি-না কোথাকার কোন ডেলিভারিম্যানের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে থাকবে? তাই কি হয়?
অরিনের মাথা ভনভন করছে। বাসন্তী খালা তাকে এইমাত্র একটা দুঃসংবাদযুক্ত সুসংবাদ দিয়েছে। এমন ভয়ংকর সংবাদ সে আগে কখনও শুনেনি। অরিন এখন নিজেই বুঝতে পারছে না সে খুশি হবে নাকি ভয়ে অস্থির হবে? বাসন্তী খালা জানিয়েছেন, তিনি নিশিতার সঙ্গে অর্ণভের বিয়ে দিতে চান। অরিন এই কথা শুনে যখন অবাকের চরম সীমায় পতিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” মানে? কেনো খালা?” তখন তিনি বললেন,
” ওমা, বিয়ে দিতে হবে না? ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে না? আর তুই তো নিজেও ওদের সম্পর্কের কথা জানিস। এখন এতো ঢং করছিস কেন আমার সামনে? কি ভেবেছিস? খালা ভিলেন হবে?”
” তুমি কাদের সম্পর্কের কথা বলছো? নিশিতা আপু আর অর্ণভ ভাইয়া? ওদের আবার সম্পর্ক? ”
” দ্যাখ অরিন, একদম ঢং করবি না। তোকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি। সেদিনকার মেয়ে হয়ে আমার সাথে চালাকি করিস? কিছু বুঝিস না মনে হয়? আজকে অর্ণভ আসার পরেই তো নিশিতা কত হাসি-খুশি হয়ে গেল। সারাদিন ও ঘরে দরজা আটকে কেনো বসেছিল সেটা তো আমি জানি। নিশ্চয়ই দু’টো মিলে ঝগড়া করেছে। আর এখন তুই ওদের ঝগড়া মিট-মাট করে এলি। ঠিক বলেছি না?”
অরিনের সত্যিই মাথা ঘুরছে। খালা নিজে নিজে এতোকিছু ভেবে ফেললো? এখন সে খালাকে কি করে বুঝাবে, নিশিতা আসলে ডেলিভারি বয়ের প্রেমে মশগুল! তার ভাইয়ের প্রেমে না। তাছাড়া অর্ণভ আসার পর নিশিতার খুশি হওয়ার কারণ হচ্ছে, অর্ণভ বলেছে ডেলিভারি বয়কে খুঁজে বের করবে। খালা আবার বললেন,
” তোর ভাইয়ের হাব-ভাব আমার অনেক আগে থেকেই সন্দেহজনক লাগতো। আগে দেখতি না, সারাক্ষণ আমার বাসায় এসে বসে থাকতো? টুকটাক কাজে সুমনাকে সাহায্য করতো। বাসন ধুঁয়ে দেওয়া, টেবিল মোছা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া। আমি তখন অবাক হতাম। কিন্তু কিছু বুঝতে পারিনি। এখন বুঝি, তোর ভাই আসলে আমাকে মানে হবু শাশুড়ীকে পটানোর চেষ্টা করতো। আহারে, বেচারা। আরও ভালো করে বুঝলাম কখন জানিস? যেদিন চাকরি পেয়ে অর্ণভ আমার কাছে দোয়া নিতে এলো আর বললো, ওর যখন সময় হবে আমার কাছে স্পেশাল কিছু একটা চাইবে। এখন আর ওকে চাইতে হবে না। চাওয়ার আগেই আমি দিয়ে দিচ্ছি। ওর সাতাইশতম জন্মদিনে আমি উপহারটা দিবো। আরে আমার মেয়েকে উপহার দিবো। দু’টোকে একসঙ্গে বেঁধে একদম বিয়ে পড়িয়ে দিবো। আচ্ছা, অর্ণভের জন্মদিনে সারপ্রাইজ এংগেজমেন্টের আয়োজন করলে কেমন হয় বলতো? আমি নিশি আর অর্ণভকে আগে থেকে কিছু জানাতে চাই না। ওরা হঠাৎ করে জানবে। এখন শুধু জানবো তুই, আমি আর তোর মা-বাবা। তুই কি বলিস?”
অরিন কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। এখন কিছু বলা মানেই ঘাপলা বাড়ানো। ভাইয়ার সাথে আগে পরামর্শ করে নিতে হবে। তারপর খালাকে আসল বিষয় জানাতে হবে। অরিন বললো,” খালা, বিয়েটা তো অনেক বড় সিদ্ধান্তের বিষয়। আস্তে-ধীরে এগোনোই ভালো।”
” তুই এতো হাংকি-পাংকি করছিস কেনো? তোর কি ভাবী হিসেবে আমার মেয়েকে পছন্দ না?”
” ছি, ছি, তা কেনো হবে? নিশু আপু যদি আমার ভাবী হয় তাহলে এটা আমার জনম জনমের সৌভাগ্য!”
বাসন্তী একটা অহংকারী হাসি দিলেন। অরিন বললো,
” আচ্ছা খালা, আমি কালকে তোমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো।”
” ঠিকাছে৷ এখন তাহলে খেতে চল। অর্ণভকে ডাক, নিশুকেও ডাক। আর ওদের দু’জনকে পাশাপাশি চেয়ারে বসতে দিবি। তুই আবার হুট করে অর্ণভ আর নিশির মাঝখানে বসে পড়িস না। তুই বসবি আমার সাথে।এবার চল।”
অরিন দাঁড়াতে নিয়েও বসে পড়লো। আজকে গলা দিয়ে খাবার নামবে বলে মনে হয় না। এতো টেনশন কি নেওয়া যায়?
অরিন ভেবেছিল রিকশাতে বসেই অর্ণভকে সব বলবে। কিন্তু পরে চিন্তা করলো, বাসায় গিয়েই ঠান্ডা মাথায় সব বুঝিয়ে বললে ভালো হয়। তারপর দুই ভাই-বোন মিলে এমন একটা বুদ্ধি বের করবে যেনো খালাও মনখারাপ না করে আর বিয়েটাও ভেঙে যায়। কিন্তু বাসায় গিয়ে অরিন এই কথাটা বেমালুম ভুলে গেল। সেখানে তার জন্য আরও চমকপ্রদ খবর অপেক্ষা করছিল।
অরিন আর অর্ণভ বাসায় ফিরেছে রাত সাড়ে এগারোটায়। অর্ণভ ঘরে এসেই গোসলে ঢুকে গেছে। হালিমা অরিনের ঘরে এসে বললেন,
” শ্যানিন এসেছিল।”
অরিন একটু অবাক হলো। শ্যানিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় না বেশ কিছুদিন। নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুবাদে অরিনের ফ্রেন্ড সার্কেলের প্রায় সবাই আলাদা হয়ে গেছে। শুধু মারিয়া আর অরিন একই ইউনিভার্সিটিতে আছে। তাই ওদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়। আগে ছয়জন মিলে কত মজা করতো, কত জায়গায় ঘুরতো। এখন এসব কিছুই হয় না। আহা, স্কুল-কলেজ লাইফের দিনগুলো কতই না সুন্দর ছিল! অরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলো,
” কখন এসেছিল?”
” এইতো, কিছুক্ষণ আগেই মেয়েটা বের হলো। তুই আরেকটু আগে আসলেই দেখা হয়ে যেতো। তোর জন্য কি একটা উপহার এনেছে। আমি বসতে বললাম, কিন্তু ও বসলো না। তোকে তো ফোনেও পেলাম না। সমস্যা কি তোর? কখনও মোবাইল সাইলেন্ট থাকে, কখনও বন্ধ থাকে। এমনই যদি হয় তাহলে মোবাইল রেখে লাভ কি? আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেল।”
অরিন বকা খেয়ে চুপ করে রইল। তার অদ্ভুত লাগছে। শ্যানিন এতো রাতেরবেলা কেনো আসবে? আবার অপেক্ষা না করে চলে গেল কেনো? অরিন বললো,
” উপহারের কথা কি বললে?”
” তোর পড়ার টেবিলে আছে। খুঁজে দ্যাখ।”
হালিমা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। অরিন পড়ার টেবিলে এসে দেখলো একটা রেপিং পেপারে মোড়ানো বক্স। অরিন রেপিং পেপার খুলে আবিষ্কার করলো বক্সটা কালো রঙের। সেই বক্স খুলে দেখলো পুরো বক্স ফাঁকা। শুধু একটা চিঠির মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। অরিন চিঠিটা খুললো,
” শাকচুন্নি, ডাইনি, ফাজিল, বেয়াদব, সাপ, বিচ্ছু, তেলাপোকা, টিকটিকি, তুই নিজেকে কি মনে করিস? এতো অহংকার কিসের তোর? ভাই-বোন দু’জনই কি একরকম হয়েছিস? তোদের স্বভাবজাত ধর্মই হচ্ছে মানুষকে হয়রানি করা, কষ্ট দেওয়া, কাঁদানো, নারে? এই, তোকে চিঠি কেনো লিখেছি জানিস?কারণ এই কথাগুলো সামনা-সামনি বলতে গেলে প্রত্যেকটা লাইনের শেষে তোর একটা করে চড় পাওনা ছিল। এতো চড় মেরে এনার্জী ওয়েস্ট করতে চাই না। তাই চিঠিতেই বলি, আমি নিজেকে আর ঠান্ডা রাখতে পারছি না। এবার আমার ধৈর্য্যের বাঁধ সত্যিই ভেঙে গেছে। আমার ভাইটাকে পুতুল বানিয়ে নাচানোর অধিকার তোকে কে দিল? বিশ্ববাসীর যে কেউ বুঝবে ইলহান ভাইয়া তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আর তুই সব বুঝেও ন্যাকামি করছিস? লাথি চিনিস? আমার ভাইয়া জীবনে কখনও একটা মরিচ ঠোঁটে লাগিয়ে দেখেনি। সেখানে ও আজকে আধা কেজি মরিচ একাই সাবাড় করেছে। বাসায় এসে বরফশীতল পানি দিয়ে গোসল করতে করতে অবস্থা কাহিল। এখন জ্বর বাঁধিয়ে বসে আছে। মা কাঁদতে কাঁদতে হয়রান। বাবার প্রেশার বেড়ে গেছে। আমাদের বাড়িতে যে এতো অশান্তি, ঝামেলা হচ্ছে এই সবকিছুর উৎস তো তুই নিজেই। তোর কি একটু আফসোসও হয় না? যদি সত্যিই বেস্টফ্রেন্ড হয়ে থাকিস তাহলে এখনি আমার বাসায় আসবি। ভাইয়াকে স্যরি বলবি। নাহলে আমি তোকে খুন করবো। ”
অরিন চিঠিটা ভাজ করে বিছানায় বসে পড়লো। তার সত্যিই খারাপ লাগছে। সাইকোটা এমন পাগলামি কেনো করে? কেনো? অরিন কি সত্যিই একবার দেখতে যাবে ইলহানকে?
চলবে
(পাঠকরা কমেন্ট না করলে লিখে মজা নাই।😕)