মেঘে ঢাকা চাঁদ পর্ব-২০

0
1061

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ২০)
সায়লা সুলতানা লাকী

লাবন্য রুশকে নিয়ে সকালে স্কুলের জন্য বের হয়ে গেল। ভাইকে স্কুলে দিয়েই এডভোকেট আন্টির বাসায় চলে গেল৷ কাগজপত্রগুলো তাকে দেখিয়ে আবার ফিরে আসল স্কুলে। সকাল থেকে অনেকেই কল দিচ্ছে কিন্তু ও কারো কলই ধরছে না। মনে মনে নিজেকে বোঝাতে লাগল “পুরো পৃথিবীর চোখে এখন আমি স্বার্থপর, কিন্তু আমি জানি আমি ভুল করিনি। আমি যা করেছি তা সম্পুর্নই আমাদের ভালোর জন্য করেছি। আমার ভাইটার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই করেছি। এই কাজের জন্য আমার একটুও অনুশোচনা নাই। যার যা খুশি বলুক তাতে কিছু যায় আসে না আমার, আমি আমাদেরটাই নিয়েছি অন্যেরটায় হাত দেয়নি। নিজের ভালো চাওয়ার অধিকার আমার আছে।”

স্কুল থেকে ফিরতেই সামনে পড়ল দোতলার আংকেল। লোকটার সাথে কখনও তেমন কোনো কথা হয়নি। এই এক দুইবার সালাম দিয়েছিলো ঠিক এত টুকুই। সে আজ নিজ থেকেই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন
“কি লাবন্য ইয়াং লেডি, তুমি কেমন আছো?”

“আসসালামু আলাইকুম আংকেল। জি ভালো আছি।”

“বেশ বেশ, তা এখনতো দেখি তুমি হুট করেই অনেক বড় হয়ে উঠলে। ভাইয়ের দায়িত্ব বুঝি এখন তুমি ই নিয়েছো বুঝে?”

“এইতো আংকেল, অনেকটা সেরকমই।”

“তা তোমার আব্বু কি এখন আর এখানে থাকেন না? তাকেতো আর ইদানীং এখানে দেখছি না।”

“দেখবেন না কেন? গতকালওতো এসেছিল। ফ্ল্যাটে যেহেতু ভাড়ায় থাকি না সেহেতু দেখাতো হবেই আংকেল, টেনশন কিসের ?”

“না মানে এখন শুনলাম তুমি একাই থাকো এখানে। তোমার আব্বু তার নতুন ওয়াইফ নিয়ে আলাদা হয়ে গেছেন নাকি! এতবড় ফ্ল্যাটে একা একটা মেয়ে মানুষ….”

“একা কোথায় আমার ভাই আছে সাথে আর….. ”

“আরে রৌশনতো ছোট বাচ্চা ও কি আর তেমন কেউ নাকি? বাবা মা হীন মেয়ে তুমি, কোন রকম গার্জিয়ান ছাড়া……..”
“আংকেল আমার আব্বু কিন্তু এখনও বেঁচে আছেন। আমার আম্মু মারা গেছেন আব্বু না। উনি এখনও আছেন আমাদের মাথার উপর, আমি এবং আমরা কিন্তু একা না। আপনি অযথা আমাদের নিয়ে এত টেনশন করছেন। আমাদের নিয়ে টেনশনের কোন কারন নাই। আচ্ছা আংকেল আসি। ” বলে লাবন্য আর দাঁড়ালো না, রুশের হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে শুনল ভদ্রলোক বলছেন।

“শোনো লাবন্য কখনও কিছু প্রয়োজন হলে দ্বিধা করো না সরাসরি আমকে নক দিও।ও কে! আমি আছি তোমার জন্য। ”

লাবন্যের কেন জানি কোন উত্তর দিতে ইচ্ছে করল না। এর আগে যখন দেখা হত তখন সালামের উত্তর দিতো মামনি বলে, অথচ আজ একবারের জন্যও মামনি বলেনি লোকটা। এটা মনে হতেই মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে গেল। উত্তররে জায়গায় একবার রুশের ব্যাগটা দিয়ে ব্যাটার মাথায় প্রচন্ড জোরে একটা বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছিল। খুব কষ্টে নিজেকে সংবরন করে। উপরে উঠতে লাগল। আর ভাবলো আম্মু মারা যাওয়ার পরওতো এই বদের সাথে দেখা হয়েছিল তখনতো এত খাতির দেখায় নাই তাহলে আজ কেন এত দরদ উতলায় উঠল ?
ভাবনার ছেদ পড়ল পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির ডাকে।তিনিও যেনো কেথায় যাবেন, ব্যাগ হাতে নিচে নামছিলেন। মাঝঘে আটকে জিজ্ঞেস করলেন

“এই লাবন্য, কেমন আছো?”
“জি আন্টি ভালো আছি।”
“আহা ভালো আর থাকো কীভাবে তাতো বুঝিই! তবুও জিজ্ঞেস করতে হয় বলেই করলাম। আহা বড় দুঃখ লাগল শুনে। সকালে সিকিউরিটি গার্ডটা যখন জানালো তখন একেকজনের একেক রকম প্রতিক্রিয়া দেখলাম। কি আজব মানুষ বলোতো এরা? আমিতো তোমার কোন দোষ দেখছি না। তুমি একেবারে ঠিক কাজটাই করছো। আমি তোমার পক্ষে আছি। আমি হলেও তাই করতাম বুঝছো!”

“জি আন্টি মানে আপনি কি বলছেন আমি ঠিক —–”

“ইশশশ কি শয়তান ব্যাটা একটা তোমার আব্বু, আগে দেখে একটুও বোঝা যায়নি। বৌটা মরছে মাস পার না হতেই আরেকটা বৌ নিয়ে আসছে ঘরে, এটা কি কেউ সহ্য করতে পারে? যে পারে সে মহান, আমি অত মহান না। তুমি ঠিক আমার মন মতোই কাজ করেছো।”

“আন্টি আসলে আমি এ বিষয়ে ঠিক……”
” এই মেয়ে তুমি ওই রাতে তাদের ঘরে ঢুকতে দিলা কেন? সে যে এমন কাজ করবে তা আগে আন্দাজ করতে পারো নাই? কত্তবড় সাহস নতুন বিয়ে করে বাসায় বৌ নিয়ে আসে। ব্যাটা শয়তান বদের হাড্ডি একটা। শুধু এই ব্যাটা না! আশেপাশে যা দেখো তাদের অধিকাংশ একই রকম। শোনো মেয়ে এখন তুমি একলা একা থাকবা এই ফ্ল্যাটে। খুব সাবধানে থাকবা। দিনে কিংবা রাতে কোন পুরুষ মানুষ নক করলে দরজা খুলবা না। তোমার একা থাকার সুযোগ নিতে কত কতজন আসবে শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে দেখবা! সবধান মেয়ে একটুও পাত্তা দিবা না কাউকে। আমি তোমার মায়ের খুব প্রিয় ছিলাম। কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাইও। আচ্ছা মেয়ে আমি যাই আমার একটু তাড়া আছে অনেক দেরি হয়ে গেল। বাই।” বলেই তিনি হনহন করে নিচে নামতে শুরু করলেন।

লাবন্য পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেল ওনার এমন আচরনে। উনি আসলে কি এত কথা বলে গেল তা মনে হয় সব একসাথে হজমও করতে পারল না ও। লাবন্যের কোন উত্তরও তিনি শোনার চেষ্টা করলেন না।বেশ আজব বলে মনে হল ওর হটাৎ করেই প্রতিবেশীদের এমন আচরন। দেরি না করে জলদি রুশকে নিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেল, মনে হল বাহিরে থাকাটাই এখন বিপদ।

গোসল করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চোখ পড়ল পাশের বিল্ডিংয়ের বারান্দার দিকে। মনে হল ওই বাসার আন্টিও ওকে কিছু বলতে চায়, ও আর দাঁড়াতে পারল দ্রুত রুমে ঢুকে গেল তার উৎসুক চোখ আর দাঁড়াতে দিলো না। গতরাতের ঘটনাটা সিকিউরিটি গার্ডের মাধ্যমে মনে হল আশেপাশে বেশ ভালোই ছড়িয়েছে, কিন্তু গার্ড ব্যাটা এত কিছু জানলো কীভাবে তাই ভাবতে ভাবতে
ডাইনিংএ এসে খুব বিরক্ত হয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল। তখনই বুয়া খালা ভাতের বোলটা টেবিলে রেখে বলল

“সকাল থেকে আশেপাশের কতজনের যে কত প্রশ্নের উত্তর দিলাম, ওরে আল্লাহ মাইনসের আর কোনো কাম নাই।অন্যের ঘরের খবর জানোনের লেইগ্যা মনে হয় কইলজাড ফাইট্যা যাইতাছে।”

“তাই নাকি খালা, তোমাকেও জ্বালাচ্ছে নাকি এরা?”

“হুমম, তাও কথার কি ধরন? ওগুলি শুনলে তোমার মাথা নষ্ট হইয়া যাইব।”
“তাইলে আর শোনার দরকার নাই। এসময়ে মাথাটা ঠিক রাখাই বেশি জরুরি। ”
“ভাইয়ের বড় বইনে ফোন দিছিলো, তোমারে চাইছিলো কথা কইতে। কইছি তুমি বাসায় নাই। হেয় তোমার উপর অনেক রাগ। হের ভাইয়ের বাড়ি তুমি বলে তোমগো নামে লেখাইয়া নিছো?”
“তার ভাইয়েরটা না, আমরা আমাদের আব্বুরটা যার ওয়ারিশ আমরা দুই ভাইবোন তাই লিখিয়ে নিয়েছি। উঁহু তাও নয় আব্বুই আমাদেরকে লিখে দিয়েছেন। কিন্তু বুঝলাম না তাতে তার সমস্যাটা কোথায়? তাদেরটাতো আর দেয়নাই। আশ্চর্য মানুষ। বাদ দাও খালা আসো খাই, ক্ষুধা লাগছে রুশও চলে আসছে আসো খাবার সামনে নিয়ে এসব আবোল তাবোল কথা বলে সময় নষ্ট নাই করি।”
বলে খাবার প্লেটে বাড়তে লাগল। রুশকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিতেই খেয়াল করল ও চুপচাপ প্লেটটা নিয়ে খাবারে হাত দিল। ইদানীং ভাইটা একবারের জন্যও বায়না করে না খাওয়ায় দিতে। নিজে নিজেই খেয়ে নিতে চেষ্টা করে। লাবন্য মনে মনে বলল “এভাবেই নিজেকে তৈরি করতে হবেরে ভাই। কারউ উপর নির্ভর হওয়ার মতে মানুষ আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে রাখেন নাই আমাদের জন্য। আমরা বড় একারে ভাই বড় একা।”

রাতে রুশকে পাশে বসিয়ে পড়াচ্ছিল তখনই কল দিল হিমেল। লাবন্য ইচ্ছে করেই ধরল না। কেন জানি ইদানীং হিমেলকেও ওর ভালো লাগে না। মনে হয় ও বুঝি লাবন্যকে পুরোপুরি বুঝে না। এই কঠিন সময়টাতে যতটুকু দায়িত্ব ওর নেওয়ার কথা ছিল ও ততটাই যেন গা বাঁচিয়ে চলেছে। এমনটাও কখনোই করেনি আগে। একটা সময় ওকে বিশ্বাস করে ওর হাতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে পথ চলতে পারতো। এখন কেন জানি বিশ্বাসটাকে একটু নড়বড়ে লাগে। রুশ কে পড়াতে পড়াতেই বুয়া খালা এসে পাশে দাঁড়িলো

“খালা কিছু বলবা?”
“হুমম, খালাম্মা মাসের বাজার সদাইতো কিছু কিছু শেষ।আগেতো ভাবিসাব আমারে নিয়া যাইতো মোড়ের ওই বড় দোকানে। ওইখান থাইক্যাই আনতাম যা যা দরকার। কিন্তু এহন কি করবা?”

“আমি আনবো।এত টেনশন করছো কেন? কি কি লাগবে তা বলো আমি লিস্ট করে নিচ্ছি। ”

“এহন কয়ডা কমু, আবার দুইদিন পর কয়ডা কমু, তারচেয়ে একলগই পুরা মাসের বাজার আনোনডাই সুবিধা। ”

“কিন্তু সব বাজার আনা….. “বলে থেমে গেল। এরপর বলল “আচ্ছা খালা তুমি যাও দেখি কি কর যায়।” বলে নিজের হাতে যে টাকা আছে তা দেখল একবার বের করে। এরপর পড়ে গেল চিন্তায়। হাতে যা আছে তা দিয়েতো এসব হবে না। আর এই মুহুর্তে ওর আব্বুও দিবে বলে মনে হয় না। ঠিক এই সময়টা চলবে কীভাবে? কোর্ট থেকে আদেশ আসগে যে সময়টা লাগবে সে সময়টা চলতে হবে। কিন্তু কীভাবে? কার কাছেইবা চাইবে? কি করবে ভাবতে ভাবতে মায়ের রুমে ঢুকে গেল।

লাবন্য রুম থেকে বের হতেই আবার হিমেল কল দিল আর সাথেই সাথেই রুশ কলটা রিসিভ করল
“হ্যালো, ভাইয়া।”
“হুমম রুশ, কেমন আছিস ভাই?”

“ভালো না। একেবারেই ভালো না।” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।

“রুশ ভাই আমার কাঁদিস না। মন খারাপ করিস না। আল্লাহ মাঝে মাঝে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন।
আমাদের ইমানের পরীক্ষা নেন। তখন নজেকে শক্ত রাখতে হয়।”
“ভাইয়া জানো নাতো আমাদের সাথে কি হয়েছে?”
“হুমম জানি, খালুজি বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাতে তোদের কি? তারাতো আর তোদের সাথে থাকছে না! তারা করুক যা খুশি তাই…”
“আরে ভাইয়া শোনো, জানো আজ আমরা যখন স্কুল থেকে ফিরছিলাম তখন… ”

“কি হয়েছে কোন সমস্যা? ”

হুমম, বলে রুশ ওই আংকেল আর পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির বলা কথাগুলো সব বলল। হিমেল চুপচাপ সবটা শুনে তারপর বলল
“তা এখন তোর আপু কোথায়? সে এখন কি করে?”

“আপু এখন আম্মুর রুমে গিয়েছে। বাসায় বাজার নাই। বুয়াখালা একটু আগে বলে গেল। আপু এখন বাজার নিয়ে বেশি ব্যস্ত।”

“বাজার? বন্য করবে বাজার? ইন্না-লিল্লাহ। শোন রুশ তুই মোবাইলটা তোর আপুকে দে। এখুনি দে।”

“আচ্ছা দিচ্ছি, বলে রুশ ওর আম্মুর রুমে গিয়ে লাবন্যকে মোবাইলটা ধরিয়ে দিল। বলল “কথা বল”।

“হ্যালো”
“হুমম, একা থাকাটা যে কতটা বিপদজনক তা বুঝতে পারছিস একদিনে কিছু?”
“কে বলল বিপদজনক? আমিতো তা মনে করছি না?”
“জেদ করিস না বন্য। সব কিছুতে জেদ চলে না। একটা বিপদ হলে পরে বুঝবি।”
“যা বোঝার তা আমি বুঝেই করি। আমাকে কিছু বোঝানোর দরকার নাই।”
“এখন কি তুই বাজার করবি?”
“হুমম।দরকার হলেতো করতেই হবে।”
“তুই বন্য বাজার করবি? তুই এসব কিছু বুঝিস?”

“মানুষ কিছু শিক্ষা লাভ করে জীবনে ঠেকে। আমিও না হয় ঠেকে ঠেকে শিখে নিব জীবন চালানো সব পদক্ষেপ ।”

“হইছে তোকে বোঝানো আমার সাধ্যে নাই। তুই আগামীকাল কিচ্ছু করবি না। আমি এসে বাজার করে দিয়ে যাব।”

“উঁহু, আমাদের বাসায় এখন থেকে তুমি আর আসবে না, আসলে প্রতিবেশীদের মুখরোচক গল্প বানাতে সুবিধা হবে।”
“তোর এত কিছু চিন্তা করতে হবে না। একটু মাথাটাকে শান্তি দে। আচ্ছা রাখি।” বলে কলটা কেটে দিল।

লাবন্য মোবাইলটা নামিয়ে রাখল বিছানার উপর। মনটা এখন এমনিতেই একটা ঘোরের মধ্যে আছে তার মধ্যে এখন এই সব বিষয় নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না। মায়ের আলমারি এই পার্টটা খুললেই মনটা কেমন জানি হয়ে যায়। কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে মায়ের গায়ের সুন্দর মিষ্টি ঘ্রানটা মনকে নাড়া দিয়ে যায়। কি সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো রয়েছে মায়ের শাড়িগুলো যা এতদিন ওর ধারনা দিতো মায়ের সুখের পরিমান, কিন্তু আজ সেই শাড়ি গুলোই মনে হয় ওর মায়ের প্রতিদিনকার একটু একটু প্রতারিত হওয়ার কষ্টটাই জানান দিতে চাইছে। নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়েই প্রথম পেলে শাড়ির ভাঁজে টাকার উপস্থিতি। অবাক হয়েগেল এক মুহুর্তের জন্য । মনে মনে বলল আম্মু তুমি এত এত ড্রয়ার থাকতে গোপনে শাড়ির ভাঁজে টাকা রাখতে? কিন্তু কেনো?
এর কেন উত্তর পাওয়া যাবে না। কে দিবে এমন রহস্যের উত্তর। আর ভেবে কি হবে, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন যে উদ্দেশ্যে আলমারি খোলা হয়েছে সেই হদিসে নামলো। তন্নতন্ন করে আলমারি চিপাচাপা সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা পাওয়া গেল। ওর আব্বুর ড্রয়ারের চাবিটা এখানে নাই। ওটা আটকানো। তারপরও ও পাশটা খুলে কোট, ব্লেজারগুলো সরিয়ে সরিয়ে একবার দেখে নিল কোথাও কিছু আছে কি না। কিন্তু তেমন কিছুই পেলো না। ড্রয়ারটা চাবি ছাড়া খোলা যাবে না। তাই বন্ধ করে দিল।
টাকাগুলো পেয়ে মনে একটু সাহস ফিরে এল। এই মুহুর্তে মনের সাহসটাই এক মাত্র হাতিয়ার জীবন যুদ্ধ চালানোর। খালা বুয়াকে ডেকে নিয়ে বসল বাজারের লিস্ট বানাতে।

চলবে

**** তিনদিনের ছুটির ধাক্কায় আমিও পড়ে ছিলাম তাই পর্বটা দিতে দেরি হল। সে জন্য দুঃখিত।
এবার আসি আরেকটা বিষয়ে। আমার গল্পের সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলি। আর তা হল- আমার গল্প যারা পড়েন তাদের কি কখনও মনে হয়েছে আমি অবাস্তব কিছু লিখি? কিংবা আমি কখনও পাঠক বাড়ানোর ধান্দায় লেখালেখি করি? মনে হলে দয়া করে জানাবেন। ইদানীং এমনিতেই আমার গল্পের পাঠক সংখ্যা খুব কম। যে কজন নিয়মিত পড়েন তারা কিন্তু সবাই বইও কিনেন না। খুব কম সংখ্যক পাঠকই বই কিনেন। তারপরও আমি শুনেছি আমি বইয়ের কাটতি বাড়াতে লিখি। দুঃখজনক অবশ্যই, কারন আমি পুরো গল্প পোস্ট করি। আমাকে বলা হয়েছিল পুরো গল্প না দিয়ে কয়েক পর্ব বাদ রেখে বইয়ের পান্ডুলিপি জমা দিতে। কিন্তু আমি তা করিনি। ধূসর সব পর্ব পোস্ট করেই বইয়ের জন্য জমা দিয়েছি। আগের গুলো “অতঃপর বিয়ে” ও “দ্বিজ”(অনুভবে আছো মিশে) ও তাই করেছিলাম তবে কেন এমন কথা শুনতে হবে আমাকে? আমি উত্তর জানি না।আমি কিন্তু কখনই মাথায় এসব চিন্তা নিয়ে লিখতে বসি না। আমার এই জীবনে যেসব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই চলমান জীবন ব্যবস্থাকে নিয়েই আমি গল্প লিখি। এবং আমি গল্পের প্লট যেভাবে সাজিয়েছি ঠিক সেভাবেই লিখি। কখনও কোনো পাঠকের কথা শুনে গল্পের প্লট ঘুরাই না। আর ধর্মীয় বিধিনিষেধ নিয়েও যদি কারউ কোন অবজেকশন থাকে তবে তা অবশ্যই তার নিজস্ব অভিমত। আমি কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ লিপিবদ্ধ করছি না। আমি শুধু চলমান জীবনে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন তাই ব্যবহার করি। একদম একশোতে একশো হতে হবে গল্পের চরিত্র গুলোকে তেমনটা কখনও মাথায় রাখি না। তাই তেমনটা আমার কাছে চাওয়াটাও মনে হয় হাস্যকর। যাক অনেক কথা বলে ফেললাম। আপনারা পাঠক পড়েন বলেই লিখি। আপনারা না পড়লে আমার লিখাটা জানতো কে? আপনাদের উৎসাহ পাই বলেই লিখি। ধন্যবাদ সবাইকে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here